‘Paranoia’  কথাটির অভিধানগত অর্থ ‘বদ্ধমূল ভ্রান্তিজনিত মস্তিষ্ক বিকৃতি’। বাংলা প্রতিশব্দ সৃষ্টি করার চেষ্টা না করে একে আমরা সরল বাংলায় ‘প্যারানইয়া’ই বলি।

‘প্যারানইয়া’ রোগী delusion রোগীর মতোই অন্ধ ভ্রান্ত বিশ্বাসের দ্বারা পরিচালিত হয় বটে, কিন্তু প্যারানইয়া রোগী তাঁর বিশ্বাসের পেছনে এমন সুন্দর যুক্তি হাজির করতে থাকেন যে, একজন মনোরোগ বিশেষজ্ঞের পক্ষেও অনেক সময় বিচার করা কঠিন হয়ে পড়ে – উনি মানসিক রোগী অথবা বক্তব্যের যুক্তিগুলো সত্যি?

ধরুন, মধুবাবু একদিন আপনাকে বললেন, তাঁর স্ত্রী ব্যভিচারে লিপ্ত। শুধু এই কথাটাই বললেন না, তাঁর বক্তব্যের প্রমাণ হিসেবে যেসব ঘটনা ও যুক্তি হাজির করলেন তাতে আপনি প্রাথমিকভাবে হয়তো বিশ্বাসই করতে বাধ্য হবেন, মধুবাবুর স্ত্রী ব্যভিচারে লিপ্ত। মধুবাবুর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হওয়ার সুবাদে আপনি আপনার পরিচিত প্রায়ভেট গোয়েন্দা লাগালেন, নিজেও লেগে পড়লেন বন্ধুকে নষ্টা স্ত্রীর হাত থেকে বাঁচাতে। শেষপর্যন্ত আবিষ্কার করলেন বন্ধুর প্রতিটি সন্দেহ ভিত্তিহীন।

নিজের ভুল বিশ্বাসকে যুক্তিযুক্ত হাজির করার প্রচেষ্টাই প্যারানইয়া রোগীর বৈশিষ্ট্য। নিজের ওই বিশেষ ভ্রান্ত বদ্ধমূল বিশ্বাসের বাইরে প্যারানইয়া রোগীকে পুরোপুরি সুস্থ ও স্বাভাবিক মনে হয়।

এবার এক সুন্দরী রমণীর কথা বলছি। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক থাকায় এখানে তাঁর নাম দিলাম রাধা। রাধা শুধু সুন্দরীই নন, যথেষ্ট গুণীও, স্বামী, ধরা যাক নাম তার সত্য, সমাজে যথেষ্ট প্রতিষ্ঠিত। রাধার বদ্ধমূল ধারণা সত্যর চরিত্র ভাল নয়। সুযোগ পেলেই আত্মীয়া-অনাত্মীয়া, কুমারী, সধবা, বিধবা, যে কোন বয়সের মেয়ের সঙ্গেই ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে যান। এই বিষয়ে রাধা যেসব যুক্তি হাজির করেন, যেসব ঘটনার অবতারণা করেন, সেসব শোনার পর রাধার বান্ধবীদের অনেকেরই ধারণা সত্য একটি ‘প্লে-বয়’।

বেচারা সত্যকে রাধার তৈরি যুক্তি-তর্কের কালি মেখেই থাকতে হচ্ছে।

প্রখ্যাত মনোবিজ্ঞানী ম্যাকডুগালের মতে –প্যারানইয়া রোগীর গোপন মনে হীনমন্যতাবোধ বা পাপবোধ লুকিয়ে থাকার দরুন ভ্রান্ত বিশ্বাসকে আঁকড়ে ধরে এক ধরনের শান্তি পায়। নিজের অন্যায় কাজকে ‘জাস্টিফাই’ করে প্রশান্তি পায়।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x