অশান্ত পৃথিবী
পৃথিবীটা বড্ড বেশি অশান্ত, অশান্ত হয়ে উঠছে ক্রমশই। মানুষ হয়ে মানুষকে হত্যা, অর্থ-সম্পদের লোভ আর ক্ষমতার দাপটে ক্রমশই অশান্ত হয়ে উঠছে পৃথিবী। সামান্য লোভ, হিংসা কিংবা ক্ষমতার দাপটে নিজ জাতিকে হত্যা ও ধ্বংসের মতো জঘন্য কাজ মনে হয় এই সর্বশ্রেষ্ঠ জাতি মানুষই করে থাকে। মানুষকে হত্যার যে বিশাল আয়োজন, তা জানলে সত্যিই শিহরিত হতে হয়। প্রাচীন মানুষেরা হিংস্র জন্তুর আক্রমণ থেকে রক্ষা ও পশু শিকার করে আহারের জন্য যে তীর ধনুকের আবিষ্কার করেছিল, ক্রমান্বয়ে তা নিজ জাতির উপর আক্রমণের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে থাকে। সেই তখন থেকেই শুরু, বর্তমানে তা পরিবর্তিত ও পরিবর্ধিত হয়ে রূপান্তরিত হয়ে পারমাণবিক বোমায়। সূদুর থেকে তীর ধনুক থেকে পারমাণবিক বোমা পর্যন্ত পৌঁছাতে এর মাঝখানে যে কত শত অস্ত্রের পরিবর্তন আর পরিবর্ধন হয়েছে, তার অন্ত নেই। এতো সব বিশাল আয়োজনের উদ্দেশ্য একটাই, মানুষ হত্যা।
প্রাচীনকালে মানুষ ভিন্ন ভিন্ন গোত্র বা জাতিতে পৃথক ছিল। এক জাতি অন্য জাতির উপরে হামলা চালিয়ে তাদেরকে বন্দি করতো তাদের দিয়ে কাজ করিয়ে নেয়ার জন্য। অর্থাৎ গোলাম বানানোর উদ্দেশ্যে। সেই প্রাচীন কাল থেকে বর্তমান অধবী পৃথিবী এবং পৃথিবীর মানুষের আমূল পরিবর্তন হলেও, এই মানসিকতার পরিবর্তন মোটেও হয়নি।
প্রাচীন যুগের মানুষ অন্য জাতির উপরে হামলা চালিয়ে তাদেরকে পরাজিত করত কর্তৃত্ব গ্রহণ করতো। এরপরের যুগে যখন শত শত ধর্মের উদয় হল, তখন মানুষ ধর্মভিত্তিক ভাবে জাতিতে পৃথক হয়ে গেল। যেমন, মুসলিম জাতি, সনাতন জাতি, খৃষ্টান জাতি, বৌদ্ধ জাতি, নাস্তিক জাতি ইত্যাদি। এখন মানুষ অন্য জাতির মানুষদের গোলাম করার জন্য হামলা চালিয়ে তাদের উপর কর্তৃত্ব করে না। তবে প্রত্যেক জাতিই তাদের নিজের ধর্মের আওতায় পুরো পৃথিবীটাকে নিয়ে আসতে হামলা চালায়। কিন্তু এই ধাপটা অতিক্রমের পরে বর্তমান আধুনিক বিশ্বে কোন একটি রাষ্ট্র পুরো পৃথিবীর সকল রাষ্ট্রের উপরই কর্তৃত্ব করতে চায়। যদি এটা সহজ হতো, তবে অনেক পূর্বেই পুরো পৃথিবীটা একটা রাষ্ট্রের আওতায় চলে যেত।
যদি আমার অনুমান মিথ্যে না হয়, তবে পুরো পৃথিবীর সকল উন্নতমানের অস্ত্র যে কোন একটি দেশকে উপহার হিসেবে দেওয়া হোক, তাহলেই বুঝতে পারবেন আমার অনুমানের সত্যতা।
ভাবতে অবাক লাগে, সুদূর সেই প্রাচীন থেকে শুরু করে ধারবাহিক ভাবে মানুষ হয়ে মানুষকে হত্যার জন্য অস্ত্রের যে উন্নতি সাধন করা হয়েছে, মানুষকে বাঁচানোর জন্য মেডিকেল সায়েন্সের কি সেই পরিমাণ উন্নতি সাধিত হয়েছে? খুব সরল ভাবেই উত্তর দেয়া যায়, না। বর্তমান বিশ্বের মানুষও প্রতি বছর যে পরিমাণ অর্থ ব্যয় করে মানুষকে হত্যার প্রস্তুতির জন্য, তার অর্ধেক পরিমাণ অর্থও মানুষকে বাঁচানোর জন্য মেডিকেল সায়েন্সে ব্যয় করা হয় না। যদি হতো তবে মানুষ হয়তো এতোদিনে অমরত্ব অর্জন করে ফেলতো এবং পৃথিবীটা হতো এক টুকরো স্বর্গ।
বর্তমান বিশ্বে অস্ত্রের প্রতিযোগিতায় যে পরিমাণ অস্ত্র মজুত রয়েছে, তা দিয়ে এই সুন্দর পৃথিবীটাকে অনায়াসেই সতেরো বার ধ্বংস করা সম্ভব। আর একেকটা অস্ত্রের ভয়াবহতা জানলে শরীরের রক্ত যেন হিম হয়ে যায়। হিরোশিমা নাগাসাকি তার ছোট্ট একটি উদাহরণ। যদি ভবিষ্যতে কোনদিন তৃতীয় বিশ্বযুদ্ধ বেঁধে যায়, আমি অনেকটাই নিশ্চিত হয়ে বলতে পারি, সেই যুদ্ধের ইতিহাস লেখার জন্য কোন মানুষ আর অবশিষ্ট থাকবে না। আমার এই ক্ষুদ্র মগজের ছোট্ট অনুমান হয়তো অনেক পূর্বেই বিশ্বের ক্ষমতাধর রাষ্ট্রগুলো বুঝতে পেরেছে। তাই বুঝি নিজেদের পৃথিবীর সীমানা ছাড়িয়ে প্রথমে চাঁদ, ও পরে মঙ্গল গ্রহে বসতি স্থাপনের জন্য উঠেপড়ে লেগেছে।
আমি দৃঢ় প্রত্যয়ে বলতে পারি, যেদিন মানুষ পৃথিবী ছেড়ে অন্য গ্রহে পার্মানেন্ট ভাবে বসতি স্থাপন করতে শুরু করবে, সেদিন থেকেই পৃথিবীর অন্তিম কাল গণনা শুরু হয়ে যাবে। যে দেশ সর্ব প্রথম এই মিশনে সাফল্য অর্জন করবে, সেই দেশই চেষ্টা করবে পুরো পৃথিবীকে শাসন করার। এতে বেঁধে যাবে তৃতীয় বিশ্ব। ধ্বংস হবে পৃথিবী, গুটি কতক মানুষ শুধু বসত করবে ভিন্ন কোন গ্রহে বা উপগ্রহে।