Delusion কথার অর্থ যে মোহ তা আমরা আগেই আলোচনা করেছি। Illusion ও hallucination এর সঙ্গে Delusion এর অনুভূতি পার্থক্য রয়েছে।

Delusion রোগীর মধ্যে বদ্ধমূল কিছু ভ্রান্ত ধারণা থাকে। এই যুক্তিহীন ভ্রান্ত ধারণা অসুস্থ মস্তিষ্কেরই ফল। Delusion রোগী ভাবল, সে এমন একটা মন্ত্র পেয়ে গিয়েছে, যার সাহায্যে দূরের যে কোন লোকের মৃত্যু ঘটাতে পারে।

কেউ হয়তো ভাবতে শুরু করল শ্রীকৃষ্ণের সঙ্গে তার বিয়ে হয়ে গিয়েছে, শ্রীকৃষ্ণ তার স্বামী। যে যখন রাতে শোয়, তখন শ্রীকৃষ্ণ তার শয্যায় নেমে আসে।

আমাদের পরিবারের সঙ্গে পরিচিত একটি মেয়ের কথা বলছি। মেয়েটির নাম প্রকাশে অসুবিধা থাকায় ধরে নিলাম তার নাম শ্রী। বয়েস বছর ষোলো। দেখতে যথেষ্ট সুন্দরী। মেয়েটির মা আরও অনেক বেশি সুন্দরী। মেয়েটির হঠাৎ বদ্ধমূল ধারণা হল মা ওর বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করছেন, জলে বিষ মিশিয়ে খাইয়ে ওকে মেরে ফেলার চেষ্টা করছেন। ও বাড়ির জল খায় না, আশেপাশের বাড়িতে গিয়ে জল খেয়ে আসে।

আমার এক বন্ধুর স্ত্রীর অন্ধ-বিশ্বাস তার শ্বশুরমশাই পূর্বজন্মে তার ওপর পাশবিক অত্যাচার করেছিলেন। বন্ধুর সংসার বলতে নিজে, স্ত্রী, একটি ছোট্ট মেয়ে ও বাবা। বন্ধু অফিসে বেরোলেই ওর স্ত্রী ভয়ে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিত। বাড়িতে সব সময়ই কাজের জন্য একটি মেয়ে ছিল, মেয়েটি কখনো দু-চার দিনের ছুটি নিয়ে বাড়ি চলে গেলে বন্ধু-পত্নীও মেয়েকে নিয়ে চলে যেত বাপের বাড়ি। বন্ধু-পত্নীর সঙ্গে কথা বলে দেখেছি, ওর বদ্ধমূল ধারণা পূর্বজন্মে ওর শ্বশুর ছিলেন আকবর, আর ও ছিল আনারকলি।

রামকৃষ্ণদেব, রামপ্রসাদ, বামাক্ষাপা গভীর ভাবে বিশ্বাস করতেন  মা কালী বা মা তারা তাঁদের সঙ্গে সব সময় কথা বলছেন, ঘুরছেন, ফিরছেন, দৈনন্দিন কাজকর্মে সাহায্য করছেন। দীর্ঘকাল ধরে লালিত বিশ্বাসই এক সময় বদ্ধমূল ভ্রান্ত বিশ্বাস বা delusion –এ পরিণত হয়েছে।

আমার এক মধ্যবয়সী সহকর্মী ছিলেন, যিনি delusion –এর রোগী। নাম প্রকাশে অসুবিধে থাকায় ধরে নিচ্ছি তাঁর নাম যদুবাবু। যদুবাবুর দৃঢ় ধারণা সহকর্মীরা তাঁর প্রতি সহানুভূতিহীন, হীনচরিত্র ও দুষ্টপ্রকৃতির। সহকর্মীরা নিজেদের মধ্যে কথা বললে নযদুবাবু ধরে নেন ওরা তাঁর সম্বন্ধেই কথা বলছে। কোন দুই সহকর্মী নিজেদের দিকে তাকালে যদুবাবু ধরে নেন, তাঁকে উদ্দেশ্য করেই ওরা অর্থপূর্ণ দৃষ্টি বিনিময় করল। ও কেন আমার কাছ দিয়ে যাবার সময় সিগারেটের প্যাকেট বের করল? আমার টেবিলের সামনে দাঁড়িয়ে কেন আমজাদ খাঁর গল্প করল এরা? আমি কি ভিলেন? অফিসের বিবেক ঘোষ কেন আমাকে হেমামালিনীর ছবিওয়ালা ক্যালেন্ডার দিল? আমি কি লম্পট? আমি সেকশনে ঢুকতেই ওরা সকলে হেঁসে উঠল। আমি কি ওদের হাঁসির রশদ? এই রকম নানা ধরনের আত্মপ্রাসঙ্গিক ভ্রান্তি নিজের সঙ্গে জুড়ে বিকৃতভাবে ব্যাখ্যা করে রোগী। নির্যাতনমূলক এক delusion রোগী কিন্তু নিজের প্রতিটি ধারণা ও ব্যাখ্যাকে অভ্রান্ত বলে মনে করে।

পাভলভের মতে Delusion –এর উৎপত্তির মূলে রয়েছে প্রথমত মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের বিকারগত অনড়ত্ব, আর দ্বিতীয় কারণ হল, অতি স্ববিরোধী মানসিক অবস্থা। এই দুটি ব্যাপারই এক সঙ্গে বা পরপর ঘটতে পারে। সেই অনুসারে delusion রোগীর উপসর্গেরও কিছু হেরফের হয়।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x