বর্তমান যুগ বিজ্ঞান ও টেকনোলজির যুগ। সেই সাথে ইন্টারনেট নামক এক অদৃশ্য জাল যুক্ত হয়ে আমাদের এই চিরচেনা বাস্তব জগতের ন্যায় আরেকটি অদৃশ্য ও রহস্যপূর্ণ জগত তৈরি হয়ে গেছে, যেখানে প্রায় সমস্ত মানুষই বাস্তব জগতের তুলনায় একটু বেশিই বিচরণ করে। আমাদের সুখ-দুঃখ, এমনকি যাবতীয় ফিলিংস পর্যন্ত শেয়ার করে। এমনকি যে বিষয়গুলো আমরা বাস্তব জগতের কোন বন্ধু-বান্ধব কিংবা আপনজন প্রিয়জনদের নিকট হতেও গোপন রাখি, সেসব বিষয় পর্যন্ত আমরা সেই অদৃশ্য জগতে শেয়ার করে থাকি। সমস্ত কিছু বিবেচনায় হিসেব করলে দেখা যাবে, আমরা বাস্তব জগতের তুলনায় কাল্পনিক ও রহস্যময় সেই জগতেই একটু বেশিই নির্ভরশীল। আমরা সাধারণ মানুষগুলোই যখন সেই জগতে নির্ভরশীল হয়ে যাচ্ছি, সেখানে চোরেরই বা পদার্পণ বাদ যায় কেন? এই জগতেও যেমন চোরের জন্ম হয়েছে, জন্ম হয়েছে লুটেরাদের, অদৃশ্য জগতেও তার ব্যতিক্রম নয় মোটেও। সেখানেও চোরেরা ঘাপটি মেরে বসে আছে সুযোগের অপেক্ষায়। এই জগতে যেমন আপনার ধন-সম্পদের নিরাপত্তার জন্য নানা রকম ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকেন, অদৃশ্য সেই জগতেও আপনার নিরাপত্তার জন্য নানা রকম ব্যবস্থা নিতে হবে, নয়তো সেই সুযোগ সন্ধানী চোরেরা আপনার সর্বনাশ করতে দ্বিধা করবে না। কথায় রয়েছে, চোর না শুনে ধর্মের বাণী।
দুঃখের বিষয় হল, আমরা প্রায় সবাই অদৃশ্য সেই জগতের সহিত ওতপ্রোত ভাবে জড়িত থাকলেও সেখানে আমাদের নিরাপত্তার জন্য কোন রকম ব্যবস্থাই গ্রহণ করিনা। করিনা বললে ভুল হবে, আমরা সেখানে নিরাপত্তার ব্যাপারে বড়ই উদাসীন। যার কারণে হ্যাকার নামক সেই গুপ্ত চোরেরা আমাদের সকল রকম প্রাইভেসি একটু চেষ্টাতেই চুরি করে নিয়ে পালায়, আর আমরা কেবল হায় হায় করি।
হ্যাকিং হচ্ছে সেই প্রক্রিয়া, যে প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আপনার অনুমতির তোয়াক্কা না করেই আপনার স্মার্ট ফোন বা ফোন নেটওয়ার্ক কিংবা আপনার কম্পিউটার বা কম্পিউটার নেটওয়ার্কে প্রবেশ করে আপনার যাবতীয় পারসোনাল ডকুমেন্ট দেখা কিংবা আপনার ফোন, কম্পিউটার বা অন্যান্য ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস নিয়ন্ত্রনে নেয়া। যে কোন ইলেকট্রনিক্স ডিভাইস-ই আপনার অসতর্কতায় হ্যাক হতে পারে। আপনার ব্যবহৃত স্মার্ট ফোন, কম্পিউটার, আপনার বাসার ওয়াইফাই রাউটার, আপনার পারসোনাল ওয়েবসাইটসহ যে কোন ইলেক্ট্রনিক্স ডিভাইস।
হ্যাঁ, এটিই হচ্ছে হ্যাকিং। আর এ কাজ যারা করে, তাদের বলা হয় হ্যাকার।
আশ্চর্যের বিষয় হল, হ্যাকিং এর উদ্দেশ্য কিন্তু এভাবে অন্যের ক্ষতি করা নয়। এই প্রক্রিয়ার উদ্দেশ্য ছিল মূলত ইলেকট্রনিক্স ডিভাইসের দুর্বলতা খুঁজে বের করে তার সমাধান করা। কিন্তু এই প্রক্রিয়াটাকেই হ্যাকারের একটা দল মানুষের ক্ষতিসাধনে ব্যবহার করছে। বলতে পারেন বিজ্ঞানের অপপ্রয়োগ। আপনার হাতের মুঠোফোন কিংবা আপনার বাসার ল্যাপটপ বা ডেক্সটপ কম্পিউটার বা বাসার পার্সোনাল ওয়াইফাই রাউটার যে হ্যাকারের নিয়ন্ত্রনে নেই, তা কিন্তু আপনি নিশ্চিত ভাবে বলতে পারেন না, যতক্ষন পর্যন্ত আপনি নিজে পরীক্ষা করে না দেখবেন। হতেই পারে আপনার ফোন বা ল্যাপটপের যাবতীয় এক্টিভিটি হ্যাকার দূরে বসেই পর্যবেক্ষণ করছে। আপনি আপনার ব্যাংক একাউন্টে লগইন করলেন, ব্যস, ওমনি হ্যাকার পেয়ে গেল আপনার একান্টের ইউজার নাম ও পাসওয়ার্ড। মুহূর্তেই ফাঁকা হয়ে গেল একাউন্ট। আপনি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখতেই পারবেন, আর কিছুই করতে পারেবেন না।
তাহলে প্রশ্ন হচ্ছে, সব হ্যাকাররাই কি শুধু অন্যের ক্ষতিই করে? তারা তো ইচ্ছা করলে এই প্রক্রিয়ার সাহায্যে আমাদের উপকারও করতে পারে।
আমরা তো আর অন্যের ক্ষতি করতে যাবো না, তাহলে আমাদের হ্যাকার হওয়াটা জরুরী কেন?