মাভৈঃ! মাভৈঃ! এতদিনে বুঝি জাগিল ভারতে প্রাণ

সজীব হইয়া উঠিয়াছে আজ শ্মশান গোরস্থান !

ছিল যারা চির- মরণ – আহত,

উঠিয়াছে জাগি’ ব্যথা-জাগ্রত,

‘খালেদ’ আবার ধরিয়াছে অসি, ‘অর্জুন’ ছোঁড়ে বাণ।

জেগেছে ভারত, ধরিয়াছে লাঠি হিন্দু-মুসলমান !

 

মরিছে হিন্দু, মরে মুসলিম এ উহার ঘায়ে আজ,

বেঁচে আছে যারা মরিতেছে তারা, এ-মরণে নাহি লাজ।

জেগেছে শক্তি তাই হানাহানি,

অস্ত্রে অস্ত্রে নব জানাজানি।

আজি পরীক্ষা-কাহার দস্ত হয়েছে কত দারাজ !

কে মরিবে কাল সম্মুখে-রণে, মরিতে কা’রা নারাজ।

 

মূৰ্চ্ছাতুরের কন্ঠে শুনে যা জীবনের কোলাহল,

উঠবে অমৃত, দেরি নাই আর, উঠিয়াছে হলাহল।

থামিসনে তোরা, চালা মন্থন !

উঠেছে কাফের, উঠেছে যবন ;

উঠিবে এবার সত্য হিন্দু-মুসলিম মহাবল।

জেগেছিস তোরা, জেগেছে বিধাতা, ন’ড়েছে খোদার কল।

 

আজি ওস্তাদে-শাগরেদে যেন শক্তির পরিচয়।

মেরে মেরে কাল করিতেছে ভীরু ভারতের নির্ভয়।

হেরিতেছে কাল,-কবজি কি মুঠি

ঈষৎ আঘাতে পড়ে কি-না টুটি’,

মারিতে মারিতে কে হ’ল যোগ্য, কে করিবে রণ- জয় !

এ ‘মক ফাইটে’ কোন সেনানীর বুদ্ধি হয়নি লয় !

 

ক’ ফোঁটা রক্ত দেখিয়া কে বীর টানিতেছে লেপ-কাঁথা !

ফেলে রেখে অসি মাখিয়াছে মসি, বকিছে প্ৰলাপ যা-তা !

হায়, এই সব দুর্বল-চেতা

হবে অনাগত বিপ্লব-নেতা !

ঝড় সাইক্লোনে কি করিবে এরা ! ঘূর্ণিতে ঘোরে মাখা?

রক্ত-সিন্ধু সাঁতরিবে কা’রা-করে পরীক্ষা ধাতা।

 

তোদেরি আঘাতে টুটেছে তোদের মন্দির মসজিদ,

পরাধীনদের কলুষিত ক’রে উঠেছিল যার ভিত !

খোদা খোদ যেন করিতেছে লয়

পরাধীনদের উপাসনালয় !

স্বাধীন হাতের পূত মাটি দিয়া রচিবে বেদী শহীদ।

টুটিয়াছে চূড়া? ওরে ঐ সাথে টুটিছে তোদের নিঁদ !

 

কে কাহারে মারে, ঘোচেনি ধন্দ, টুটেনি অন্ধকার,

জানে না আঁধারে শত্ৰু ভাবিয়া আত্মীয়ে হানে মার !

উদিবে অরুণ,ঘুচিবে ধন্দ,

ফুটিবে দৃষ্টি, টুটিবে বন্ধ,

হেরিবে মেরেছে আপনার ভায়ে বদ্ধ করিয়া দ্বার !

ভারত-ভাগ্য ক’রেছে আহত ত্রিশূল ও তরবার !

 

যে-লাঠিতে আজ টুটে গম্বুজ, পড়ে মন্দির-চূড়া,

সেই লাঠি কালি প্রভাতে করিবে শত্রু-দুর্গ গুঁড়া !

প্রভাতে হবে না ভায়ে-ভায়ে রণ,

চিনিবে শত্রু, চিনিবে স্বজন।

করুক কলহ-জেগেছে তো তবু-বিজয়-কেতন উড়া !

ল্যাজে তোর যদি লেগেছে আগুন, স্বর্ণলঙ্কা পুড়া !

error: Content is protected !!