কাশী থেকে ভাটপাড়া সর্বত্রই টোলে গেলে দেখা মিলবে বহু শ্রুতিধরের। ছাত্র জীবনেও অনেককে দেখেছি, যারা দারুণ মুখস্ত করতে পারতো। পরীক্ষার খাতায় সেসব উগরে দিয়ে আসতো। টোল থেকে কলেজ জীবনে দেখা এদের ‘স্মৃতিধর’ বলে মেনে নিতে অসুবিধে নেই। কিন্তু ‘প্রতিভাধর’ বলে মেনে নিতে অসুবিধে আছে। একজন স্মৃতিশক্তির অধিকারী ছাত্র যখন তার লেখায় মৌলিকত্ব হাজির করতে পারে, নতুন দৃষ্টিভঙ্গির পরিচয় দিতে পারে, এগিয়ে থাকা চিন্তাশক্তির পরিচয় দিতে পারে, তখন তাকে প্রতিভার অধিকারী বলা যায় ।

আবার অসাধারণ স্মৃতিশক্তির অধিকারী না হয়েও চিন্তাবিদ, প্রতিভাধর হিসেবে পরিচিত হতে পারেন। সমরেশ বসু থেকে ডাঃ বিধানচন্দ্র রায় কেউ-ই অসাধারণ স্মৃতিধর ছিলেন না। ডাঃ রায় তো পরিচিত জনদেরও নাম ভুল করতেন। তারপরও তাঁদের প্রতিভা ছিল প্রশ্নাতীত।

আমাদের আলোচনার প্রসঙ্গটা বেঁধে রেখেছি বিদ্যা সংক্রান্ত প্রতিভা ও স্মৃতিশক্তির উপর। আলোচনা যদি আরও একটু ছড়িয়ে দিই, তাহলে ব্যাপারটা কেমন দাঁড়ায়?

মারাদোনার ফুটবল প্রতিভা, উত্তমকুমারের অভিনয় প্রতিভা, লতাজির সংগীত প্রতিভা, গণেশ পাইনের পেইন্টিং প্রতিভাকে মুখস্ত বিদ্যার সঙ্গে জুড়বেন কেমন ভাবে?

শুধু মুখস্থ বিদ্যার উপর নির্ভর করে স্কুল-কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডির মধ্যেও বেশি দূর এগোনো অসম্ভব। প্রচলিত শিক্ষার ক্ষেত্রেও কৃতী হতে গেলে বইয়ের লেখা ও নোটকে আত্মস্থ করার দরকার হয়। মৌলিক দৃষ্টিকোণ থেকে দেখার মতো চিন্তা শক্তির অধিকারী হতে মনযোগ ও বোঝার ক্ষমতাই হল প্রথাগত শিক্ষা থেকে জ্ঞানার্জনের পথ।

 

প্রতিভা বিকাশে মনযোগ, বোধ ও প্রেরণার ভূমিকা

মনযোগ ও বোঝার ক্ষমতা-এর সঙ্গে প্রেরণা ( motivation) প্রতিভা তৈরিতে বড় ভূমিকা নেয়। এই তিনটি ক্ষেত্রেই প্রধানত অনেকগুলো বিষয় বা factor কাজ করে। যেমনঃ মনযোগ আসে ভালোলাগা এবং গভীরতর ভালোলাগা ও মানুষের প্রেরণা থেকে। আমার জন্ম সংগীত পরিবারে হলে সংগীতে আগ্রহ উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাওয়া স্বাভাবিক। সচিনকে সচিন বানাবার জন্য ক্রিকেট গুরু রমাকান্ত আচরেকরের অবদান অনস্বীকার্য। সচিনের ক্রিকেটের প্রতি প্রেমের অন্যতম কারণ যদি হয় মুম্বাইবাসী হওয়া, প্রতিদিন ক্রিকেট প্র্যাকটিশ দেখার সুযোগ পাওয়া, তবে আরও একটি অন্যতম কারণ অবশ্যই গুরু রমাকান্ত আচরেকর। সঙ্গে মোটিভেশন তাঁকে এই জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে। আপনি ইংরাজি সাহিত্যে অনার্স নিয়েছেন। ক্লাশের লোকচার শুনে আপনি নিরাশ। অধ্যাপক যা পড়াচ্ছেন, সে বিষয়ে তাঁর নিজের বিদ্যে-বুদ্ধি আদৌ পরিষ্কার নয়। প্রাইভেট টিউটরও তথৈবচ। ওঁদের বিদ্যে-বুদ্ধির উপর আপনি আস্থা রাখতে পারছেন না। ওঁদের মুখস্থ করে পড়ানো আপনার মনযোগ টানতে পারছে না। আবার কোনও কোনও শিক্ষক বা অধ্যাপক বিষয়কে এমন প্রাঞ্জল করে, আকর্ষণীয় করে বোঝান যে ছাত্রদের মনযোগ আকর্ষণ করেন।

মোটিভেশন বা প্রেরণা এমন একটা বিষয় যার অনুপস্থিতে প্রতিভার বিকাশ অসম্ভব। উদাহরণ হিসেবে আমরা কয়েকটি বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বকে বেছে নিতে পারি 1 শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী। রাজনৈতিক জীবনে তিনি ছিলেন একজন ‘ডিক্টেটর’। দলে ও সরকারে তাঁর ইচ্ছে-ই ছিল শেষ কথা। শ্রীমতি গান্ধী গ্রাজুয়েটও ছিলেন না। কিন্তু রাজনীতিতে ‘ডিক্টেটর’ হয়ে ওঠার মোটিভেশন তাকে স্বজনপোষণ বা চাটুকার পোষণের দিকে ঠেলে দিয়েছে। দলের ভিতর কোনও সৎ বা ব্যক্তিত্বপূর্ণ রাজনীতিকের উত্থান দেখলে তাঁদের ডানা হেঁটেছেন নির্দয়ভাবে। এইগুলো করতে পেরেছেন সমস্ত ক্ষমতা কুক্ষিগত করার মোটিভেশন থেকে।

২২ অক্টোবর ২০০৫। বিহারে লালু সাম্রাজ্যের পতন হলো। জাল ভোটার লিস্ট, ছাপ্পা ভোট-ভোট কেন্দ্রে বাহুবলীদের দাপাদাপি—বুথ জ্যাম যুগের পতন ঘটলো। বিহারের মানুষ দীর্ঘ বছরের পর এই প্রথম স্বাধীনভাবে গণতান্ত্রিক অধিকার প্রয়োগ করলেন। জয়ী নীতিশ কুমারকে নিয়ে বিহার-জনতা যতটা উচ্ছসিত, তারচেয়েও উচ্ছসিত নির্বাচনের স্পেশাল অফিসার কে জি রাও-কে নিয়ে। বিহারের আকাশ-বাতাস সবচেয়ে বেশি মুখরিত হয়েছে কে জি রাও-এর জয়ধ্বনিতে। জনাদেশের সঠিক প্রতিফলনের রূপকার কে জি রাও না থাকলে দুর্নীতি ও গণতন্ত্র লুটেরাদের রাজত্ব-ই চেপে বসে থাকতো বিহারে-এমনটাই বিশ্বাস আমবিহারীদের।

কে এই কে জি রাও? নির্বাচন কমিশনের বিশেষ পরামর্শদাতা। বৃদ্ধ। বিহারে গণতন্ত্র ফিরিয়ে আনতে যা করেছেন, তাকে অসাধ্য সাধন বললে একটুও বাড়াবাড়ি হয় না। রাত-দিন এক করে দিয়ে খেটেছেন। ১৮ লক্ষ জাল ভোটারের নাম বাতিল করেছেন। লালু-রাবড়ির ক্রীতদাস আমলাদের রাতের ঘুম কেড়ে নিয়েছিলেন। লালু-রাবড়ির অনুগত বিহার পুলিশের হাত থেকে বুথ পাহারার দায়িত্ব কেড়ে নিয়ে তা দিয়েছেন আধা সামরিক বাহিনীকে। পুলিশ ও প্রশাসনের খামতি দেখলে কড়া পদক্ষেপ নিয়ে বুঝিয়ে দিয়েছেন দুর্নীতি আর বাহুবলীদের যুগ শেষ করতে চলেছেন। নির্বাচনের আগে বিহারের প্রচার-মাধ্যমগুলো সশস্ত্র ভোটলুটেরাদের ব্যাপক প্রস্তুতির ছবি দেখিয়েছে। কিন্তু দেড় মাস ধরে ভাগে ভাগে চলা ভোটে ভোটলুটেরারা গর্তে ঢুকে গেছে কে জি রাওয়ের ভয়ে। হেলিকপ্টারে আধা-সামরিক বাহিনী নিয়ে চক্কর কেটেছেন বিভিন্ন বুথে। হেলিকপ্টার থেকে নেমেই দৌড়েছেন বুথে। এলাকার বাসিন্দারাই ‘হিরো’-কে মোটর বাইকের পিছনে বসিয়ে পৌঁছে দিয়েছেন গন্তব্যস্থলে।

বৃদ্ধ বয়সে এমন অসম্ভব সম্ভব করলেন কী করে? মোটিভেশন। দুঃশাসনের রাজত্বেও গণতন্ত্র আনতে হবে—এই মোটিভেশন।

অপরাধী মানসিকতার কেউ পৃথিবী কাঁপানো অপরাধী যখন হয়ে ওঠেন তখন তার পিছনেও এক বা একাধিক মোটিভেশন থাকে।

রবীন্দ্রনাথের জীবনে অনেক নারী-ই তাঁর বিভিন্ন সৃষ্টির প্রেরণা ছিলেন।

নারী অনেকের জীবনেই প্রেরণা হয়েছেন। প্রেরণা হয়েছেন পুরুষ। প্রেম অনেককেই মোটিভেট করেছে; তাঁরা শিল্পী, লেখক, চিন্তাবিদ, সমাজবিজ্ঞানী থেকে বিপ্লবী—সব-ই হতে পারেন।

প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে

অধ্যায়ঃ দুই

♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়

অধ্যায়ঃ চার

♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আচরণগত সমস্যা

অধ্যায়ঃ আট

♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়

অধ্যায়ঃ নয়

♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘আই কিউ’ কি বাড়ানো যায়?

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?

অধ্যায়ঃ বারো

♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ মগজ কম্পিউটারে প্রোগ্রামিং

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে

দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন

অধ্যায়ঃ এক

♦ যোগ নিয়ে যোগ বিয়োগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগ কি? যোগ নিয়ে গুলগপ্পো

অধ্যায়ঃ তিন

♦ যোগ

অধ্যায়ঃ চার

♦ যোগের সে’কাল এ’কাল

অধ্যায়ঃ পাঁচ

‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ সাত

♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ

অধ্যায়ঃ আট

♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক

অধ্যায়ঃ নয়

♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব

অধ্যায়ঃ দশ

♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ বিশ লক্ষ টাকার চ্যালেঞ্জ

“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!