কে সবচেয়ে বড় যোগী? উত্তর সোজা—যার প্রচার সবচেয়ে বেশি। তুমুল প্রচার যে কোনও প্রোডাক্টকে-ই বিশাল জনপ্রিয়তা দিতে পারে। বিজ্ঞাপন বন্ধ করে শুধুমাত্র ভাল জিনিস তৈরির উপর নির্ভর করলে লাক্স থেকে ক্যাডবেরি, স্যামসুং থেকে মারুতি—সবার-ই বিক্রি পড়বে। ‘বিজ্ঞাপন’-এর শক্তি বিষয়ে খুব ভাল বোঝেন সন্ন্যাসী যোগী রামদেব। তিনি আধ্যাত্মিক

শক্তির আধার, জাগতিক বিষয় আসয় থেকে দূরের মানুষ (যেহেতু সন্ন্যাসী)। আবার এক-ই সঙ্গে তুখোড় ব্যাবসায়িক বুদ্ধির অধিকারী। মাত্র কয়েক বছরে তাঁর প্রতিষ্ঠিত ‘দিব্য যোগ মন্দির ট্রাস্ট’ ভারতের আঙ্গুলে গোনা ধনী ট্রাস্টগুলোর অন্যতম। আজকাল জ্যোতিষীরা পর্যন্ত ট্রাস্ট তৈরি শুরু করেছে। ট্রাস্টের মালিকানা আঙুলে গোনা আপনজনদের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখলে টাকা আঙুলে গোনাদের হাতের মুঠোয় রইল, ইনকাম ট্যাক্স ইত্যাদির বালাই নেই ।

শুধুমাত্র ফলাহারী এই যোগী সন্ন্যাসী সর্বযোগ সিদ্ধ। অতএব
স্বামী রামদেব অবশ্যই কোনও দিন-ই মারা যাবেন না।
কারণ প্রাচীন যোগশাস্ত্রগুলোতে বলা আছে—
খেচরী মুদ্রা যোগসাধনে পারদর্শী
হলে তাঁর মৃত্যু নেই।

রামদেবের মৃত্যু হলে এটাই প্রমাণিত হবে— হয় রামদেবের দাবি মিথ্যে, নতুবা যোগের কার্যকারীতার কথা মিথ্যে। কিন্তু আরও একটা অপ্রিয় প্রশ্ন থেকে-ই যায়, স্বামী রামদেব ফল আহার করেন কেন? খেচরী মুদ্রা আয়ত্বে থাকলে তাঁর তো খিদে, তেষ্টা পাওয়ার কথা নয় । তিনি কি জল পান করেন? যদি করেন, তবে প্রশ্নটা উঠে আসেই—খেচরী মুদ্রা জানা যোগীর তো খাওয়া ও পান করার প্রয়োজন থাকার কথা নয়! তবে? এই ‘তবে’র উত্তর তো রামদেবকেই দিতে হবে। সোজাসুজি জানতে হবে—সত্যিটা কী?

সন্ন্যাসী যোগী স্বামী রামদেব ‘হঠযোগ’ সিদ্ধ ; তার লিখিত গ্রন্থ এ’কথাই বলে। হঠযোগে উড্ডীয়ানবন্ধঃ করে পাখির মতো শূন্যে ওড়া যায়। বয়সে বৃদ্ধ হলেও ‘তরুণবয়স্কবৎ’ থাকেন। মৃত্যুঞ্জয়ী হন—এতে কোনও সন্দেহ নেই।

স্বামী রামদেব পরম করুণা করে আমাদের যদি উড়ে দেখান, তবে আমরা যুক্তিবাদী সমিতির সমস্ত সদস্যরা তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করে ধন্য হই। স্বামীজী কি এই অভাজনদের প্রতি কৃপা করবেন? নাকি তিনি এড়িয়ে যাবেন—কারণ যা বলেন তা করার ক্ষমতা নেই বলে?

স্বামীজি, আমরা কিন্তু লক্ষ্য রাখছি, আপনাকে বার্ধক্য স্পর্শ করে কি না দেখব। (হঠযোগে কী আছে জানতে পড়তে পারেন, ‘হঠযোগ-প্রদীপিকা’, শ্রীমৎ স্বাত্মারামযোগীন্দ্র ; বসুমতী সাহিত্য মন্দির, ১৬৬ বিপিন বিহারী গাঙ্গুলি স্ট্রিট। কলকাতা-১২)

 

যোগের সংজ্ঞা কী দিলেন রামদেব?

রামদেব জানাচ্ছেন, “যোগ দর্শনের উপদেষ্টা মহর্ষি পতঞ্জলী যোগ শব্দের অর্থ করেছেন বৃত্তিনিরোধ।” ‘বৃত্তি’ শব্দের অর্থ প্রবৃত্তি, স্বভাব। অর্থাৎ সহজাত প্রবৃত্তি (instinct) নিরোধ ।

কিন্তু গোলমালটা পাকালেন রামদেব। তিনি লিখলেন, ‘পতাঞ্জলী’র মতে (এই বানানটাই রামদেব লেখেন) বৃত্তি বা প্রবৃত্তি পাঁচটি—প্রমাণ, বিপর্যয়, বিকল্প, নিদ্রা এবং স্মৃতি। বৈরাগ্যাদি সাধনা দ্বারা যখন এই পাঁচ প্রবৃত্তি মনে লয় প্রাপ্ত হয় তখন যোগ হয় ।

অর্থাৎ রামদেবের কথা মতো, স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণ অবদমিত করে রাখাই ‘যোগ’। মনোবিদ্যা বলে, স্বাভাবিক প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণ অবদমিত করে রাখলে মানসিক রোগী হওয়া কে আটকায়। স্বাভাবিক প্রবৃত্তির অবদমন থেকে-ই তৈরি হয় ‘সাইকো-সোমাটিক ডিসঅর্ডার’ বা মানসিক কারণে শারীরিক অসুখ।

সুন্দরী নারী ও সুন্দর পুরুষ দেখে বহু পুরুষ ও নারী স্বাভাবিক যৌনপ্রবৃত্তির কারণে উত্তেজিত হতে পারে। যারা ওই উত্তেজনা রুচিবোধ ও মূল্যবোধ দ্বারা নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না, তাদের বলে কামুক। আবার অনেকেই আছেন, যাঁরা চেহারার সৌন্দর্শের চেরো আগে, মা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট হন বেশি। এও রুচিবোধ ও মূল্যবোধের ব্যাপার। কিন্তু যারা মাস্তানি প্রবৃত্তিকে সম্পূর্ণ দমনের উপদেশ দেন, তাঁরা অবশ্যই একটা সামাজিক অপরাধ করে চলেছেন।

স্বামী রামদেবের কথা অনুসারে মহর্ষি ব্যাস ‘যোগ’ বলতে সমাধিকে বুঝিয়েছিলেন। সংযমের সঙ্গে সাধনা করে আত্মাকে পরমাত্মার সঙ্গে যুক্ত করে সমাধির আনন্দে ডুবে যাওয়াই হলো যোগ। অর্থাৎ ‘যোগ’-এর অস্তিত্ব ঈশ্বরের অস্তিত্বের উপর নির্ভরশীল। ঈশ্বর বা পরমাত্মার অস্তিত্ব না থাকলে যোগও নেই। ঈশ্বরীক ক্ষমতা থাকার অর্থ ঈশ্বর আছেন। সন্ন্যাসী রামদেব কি প্রেসকনফারেন্সে আমাদের সামনে তাঁর ঈশ্বরীক ক্ষমতা প্রমাণ করতে পারবেন? জানি, পারবেন না। অজুহাত দিয়ে এড়াবেন।

গীতাতে শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, অনুকূলতা—প্রতিকূলতা, সিদ্ধি-অসিদ্ধি, সফলতা- বিফলতা, জয়-পরাজয়…এই সমস্ত অবস্থাকে আত্মস্থ করে এক-ই রকম থাকাকেই যোগ বলে। স্বামী রামদেব-ই তাঁর ‘যোগ সাধনা…’ গ্রন্থে একথা লিখেছেন ।

রামদেব আমাদের তিনটি যোগ সংজ্ঞার সঙ্গে পরিচয় করিয়ে দিলেন। (এক) সহজাত প্রবৃত্তিকে লয় করাকে পতঞ্জলী যোগ বলেছেন। (দুই) মহর্ষি ব্যাসের মতে আত্মার সঙ্গে পরমাত্মার যুক্ত হওয়া-ই যোগ। (তিন) জয়ের আনন্দে উচ্ছ্বসিত না হওয়া, পরাজয়ে ভেঙে না পড়া, প্রতিকূল ও অনুকূল পরিস্থিতিতে একই রকম স্থির থাকাই যোগ। এটা শ্রীকৃষ্ণের মত।

তিন মত তিন রকম। আমরা কোনটি গ্রহণ করব? রামদেব এবিষয়ে একদম চুপ ।

 

যোগ কয় প্রকার

স্বামী রামদেব যখন তাঁর গ্রন্থে লিখছেন—’যোগের প্রকার’, এখানেও শুধুই দ্বিধা। গ্রন্থে তিনটি পরস্পর বিরোধী মতামত তুলে দিয়েছেন। (১) যোগরাজ উপনিষদে বলা হয়েছে, যোগ চার প্রকার। মন্ত্রযোগ, লয়যোগ, হঠযোগ, রাজযোগ। (২) গীতায় তিন প্রকারের যোগ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা আছে। ধ্যানযোগ, সাংখ্যযোগ এবং কর্মযোগ। আবার গীতায় পঞ্চম খণ্ডে আরও একটি যোগের কথা বলা হয়েছে। সন্ন্যাসযোগ। (৩) মহর্ষি পতঞ্জলী অষ্টাঙ্গ যোগ বা আট প্রকার যোগ নিয়ে বিস্তৃত আলোচনা করেছেন। যেমন : যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান, সমাধি।

তার মানে—উপনিষদে, গীতায় ও পতঞ্জলীর কথায় যোগের প্রকার ভেদ নিয়ে রয়েছে বিস্তর ফারাক, আমরা কোন্ দুটি মতকে ভুল বলে বর্জন করবো, এবং কোটিকে ঠিক বলে গ্রহণ করবো? রামদেব কী বলেন?

না, কিছুই বলেন না। নানা মুনির নানা মত তুলে দিয়েই খালাস।

 

শরীরে যোগের প্রভাব এবং জীবনযাপনের কিছু বিধি

‘যোগ সাধনা এবং চিকিৎসা রহস্য’ গ্রন্থ থেকে সন্ন্যাসী স্বামী রামদেবের কিছু অমৃতবাণীর সারসংক্ষেপ তুলে দিচ্ছি।

জৈন মতে আত্মার সিদ্ধি ও মোক্ষ প্রাপ্তি হচ্ছে যোগ। আবার একইসঙ্গে জৈন মতে মন, বাণী এবং শরীরের বৃত্তিগুলোকে-ই বলে কর্মযোগ। (পৃষ্ঠা ১)

■ সকালের খাবার গ্রহণের আদর্শ সময়, আটটা থেকে ন’টার মধ্যে। খাদ্য হিসেবে ফল ও হালকা পানীয় গ্রহণ ভালো। (পৃষ্ঠা ৫) পঞ্চাশ বছরের বেশি বয়সের লোকদের সকালে না খাওয়া-ই ভালো।

মধ্যাহ্নভোজের উত্তম সময় এগারোটা থেকে বারোটার মধ্যে। বারোটা থেকে একটা পর্যন্ত সময় মধ্যম। তারপর নিকৃষ্ট সময় ।

■ রাতের খাবার গ্রহণের উত্তম সময় সাতটা থেকে আটটা পর্যন্ত। আটটা থেকে ন’টা পর্যন্ত মধ্যম সময়। তারপর নিকৃষ্ট সময় ।

(গত শতকের মাঝামাঝি সময়ে ভারতীয়দের গড় আয়ু যেখানে ছিল ৫০ বছরের কাছাকাছি, আজকে তা পৌঁছেছে ৭০ বছরের কাছাকাছি। চিকিৎসা-বিজ্ঞান এগিয়েছে, লাইফ-স্টাইল পাল্টেছে, স্বাস্থ্য-রক্ষার পদ্ধতি পাল্টেছে, এখন বহু রাজনীতিক, বুদ্ধিজীবী ৭০ বছর, ৮০ বছর অতিক্রম করেও সক্ষম চিন্তাশীল। এবং তাঁরা ব্রেক ফাস্ট নিচ্ছেন। তারপরও তাঁদের প্রবল উপস্থিতি প্রমাণ করে—সকালের খাবার খাওয়াটা আদৌ খারাপ নয়।

দুপুরের ও রাতের খাবার খাওয়ার নির্দ্দিষ্ট সময়ে বেঁধে দেওয়ার মধ্যে কোনও শারীর-বিজ্ঞানের সম্পর্ক খোঁজার চেষ্টা করলে ভুল হবে। গ্রামীণ সভ্যতার যুগে, প্রদীপ ও লম্প ছিল রাতের অন্ধকার কাটাবার বলতে গেলে একমাত্র সম্বল। অতএব তাড়াতাড়ি খাওয়া-দাওয়া সেরে ঘুমিয়ে পড়াই ছিল প্রথা। এখন মানুষের জীবন প্রচণ্ড-গতিশীল। দিন-রাতের পার্থক্য প্রায় ঘুচতে বসেছে। খাওয়া ও ঘুমের অভ্যেস গেছে পাল্টে। রাতের পর রাত স্যুটিং, বেলা পর্যন্ত ঘুম, জিম, সুষম খাওয়া। তারপরও দারুণ চেহারা নিয়ে বলিউডের নায়করা রামদেবের যোগতত্ত্বের ‘মু-তোড়’ জবাব হয়ে দাঁড়িয়ে আছেন। পাশ্চাত্যের মানুষরা অনেকেই সকালে হেভি ব্রেকফাস্ট নেন। তারপরও তাঁদের শরীর স্বাস্থ্য গড় ভারতীর তুলনায় অনেক বেশি ভালো, অনেক নীরোগ এরপরও কি রামদেব কুয়োর ব্যাঙ হয়ে তাঁর কথাগুলোকেই আঁকড়ে থাকবেন?

খাওয়ার সময় মৌন থেকে ঈশ্বরের নাম স্মরণ করতে করতে ভালো করে চিবিয়ে খাওয়া উচিত। (পৃষ্ঠা ২২)

(বড় রাজনৈতিক নেতারা বা বড়-বড় শিল্পপতিরা’ ডিনারে আমন্ত্রণ জানান অনেক জরুরি বিষয় নিয়ে আলোচনার জন্যেও। সৌজন্য-মূলক ডিনারেও ডাকা হয় অনেক বিশিষ্ট ব্যক্তিকে। সেখানে খাওয়ার চেয়ে আলোচনা অনেক সংয মুখ্য হয়ে দাঁড়ায়। রামদেব বোধহয় মধ্যবিত্ত মানসিকতার জন্য এমন সব প্রেসক্রিপশন দিয়েছেন। উচ্চবিত্ত ও উচ্চমেধার মানুষরা সকলে মিলে রামদেবের উপদেশ মেনে ভগবান ভরসা রে চলতে গেলে পৃথিবী স্থবির হবে, তারপর পিছোতে থাকবে। ভগবান ভরসায় শিল্প-বাণিজ্য থেকে শিল্প-কলা কোনও কিছুই এক পা’ও এগোবে না।)

এক গ্রাস খাবারকে কম করে কুড়ি বার চিবোন উচিত। ভাল করে চিবিয়ে খেলে মন থেকে হিংসার ভাব নিবৃত্ত হয়।

(হিংসা যে চিবিয়ে খেয়ে শেষ করা যায়, এটা কোনও মনোবিজ্ঞানীর জানা ছিল না। অবশ্যই নতুন তথ্য জানলেন যোগী সন্ন্যাসীর কৃপায়।)

■ ভোজনের শুরুতে ‘ওম্’-য়ের স্মরণ বা গায়ত্রী মন্ত্র জপের সাথে তিনবার আচমন করা উচিত। কেন? জানাননি রামদেব।

(পরমেশ্বর খাবারটা জুটিয়ে দিলেন, যাঁর কৃপাতে খাচ্ছি, তাঁকে স্মরণ ও নিবেদন করে খাবার গ্রহণ করা উচিত—এমন ভাবনা থেকে ধর্মগুরুরা এমন শেখান। তাঁরা মনে করেন, ‘পরমেশ্বর ই সমস্ত কিছুর নিয়ন্তা। তাঁর ইচ্ছে ছাড়া গাছের একটা পাতা পর্যন্ত পড়ে না। যে মানুষ মনে করে, তার প্রয়াসে কোনও কিছু ঘটছে, সে মূর্খ। মানুষ যন্ত্র, পরমেশ্বর যন্ত্রী। তিনি যেমন বাজান, আমরা তেমন বাজি ।

‘মানুষের প্রয়াসের কোনও দাম নেই’—এমন বোকা-বোকা ভাবনার কথা যে সাধু-সন্ন্যাসীরা মানুষের মগজে ঢোকাবার চেষ্টা করে, তারা নিজেরা কিন্তু আখের গোছাবার সমস্ত রকম চেষ্টা চালিয়ে যায়।)

■ মাংস খেলে দয়া, করুণা, প্রেম ইত্যাদি গুণ ধ্বংস হয়। মানব তখন দানব হয়ে ওঠে। (পৃষ্ঠা ৫)

(গুজরাট দাঙ্গায় নিরামিষাশী মানবরা কী করে দানব হয়ে উঠে মুসলিম ধর্মের মানুষদের জ্যান্ত পোরালো, ধর্ষণ করলো, লুঠ করল? নিরামিষ বা আমিষ খাদ্য গ্রহণের সঙ্গে মানবিকগুণের বিকাশ নির্ভর করে না। সুস্থ সাংস্কৃতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক পরিবেশ, শিক্ষা, জ্ঞান ইত্যাদি একজন মানুষকে মানবিকগুণে সমৃদ্ধ করে। রামদেবজি ভুল শিখিয়েছেন, একথা আমাদের বলতে-ই হবে।)

■ পেঁচা আর বাদুড় ছাড়া সব পাখিরা ব্রহ্মমুহূর্তে ঘুম থেকে উঠে পরমেশ্বরকে স্মরণ করে নিজের নিজের কাজে লেগে পড়ে। পাখিরা ভোরে ভগবানের স্তব গান গায়

(এবার রামদেব বড়-ই কাঁচা কাজ করে ফেললেন। গল্পের গরুকে গাছে তোলার চেয়েও বড় মাপের গপ্পো ফেঁদেছেন। জীববিজ্ঞানী বা পক্ষিবিশারদরা এ গপ্পো শুনলে রামদেবের মস্তিষ্কের সুস্থতা নিয়ে-ই সন্দেহ প্রকাশ করতে পারেন। কেউ কেউ অবশ্য তাঁকে ‘ধর্ম-ব্যবসায়ী’ বিবেচনায় পাত্তা না দিয়ে নীরব থাকতে পারেন। )

■ রোগীকে বাদ দিয়ে ঠাণ্ডাজলে স্নান করা উচিত। গরম জলে স্নান করলে ক্ষুধামান্দ্য, দৃষ্টি-দুর্বলতা দেখা দেয়, চুল পড়ে, অকালে চুল পাকে, বীর্য-কমে যায়

(শীত-প্রধান দেশের অধিবাসীরা ঈষৎ গরম জলে স্নান করেন। তাঁরা সবাই ক্ষুধামন্দে ভোগেন, দৃষ্টি-দুর্বল, টেকো এবং বীর্য কম—এমন ভাবলে ‘পাগল’ বা মূর্খ বলতে-ই হয়। পাশ্চাত্যের অধিবাসীরা শুধু নন, প্রাচীন সোভিয়েত রাশিয়া ভেঙে গড়ে ওঠা দেশের অধিবাসীরা, চিন, জাপান, কোরিয়ার মতো শীতপ্রধান দেশের অধিবাসীরা ঈষৎ গরম জলে স্নান করেও গড় ভারতীয় তুলনায় অনেক বেশি স্বাস্থ্যবান, ক্ষুধামন্দ ভোগেন না, দৃষ্টিশক্তি ভালো এবং অবশ্যই অনেক বেশি বীর্যবান । অতএব রামদেবের এই গরমজলে স্নানের অপকারিতার তত্ত্ব সম্পূর্ণ বাজে কথা।)

■ শরীর খাদির তোয়ালে দিয়ে মোছা উচিত। এতে কান্তি বাড়ে। (পৃষ্ঠা-৭) (সৌন্দর্য বৃদ্ধির এমন প্রেসক্রিপশন নিয়ে বলার কিছু নেই।)

 

যোগ নিয়ে আরও কিছু…

যোগ পথকে অবলম্বন করে ঈশ্বরের সাক্ষাৎ পাওয়া যায়। (পৃষ্ঠা-৩) বিনা ব্রহ্মচর্য-পালনে কেউ যোগী হতে পারে না। (পৃষ্ঠা-১৭)

■ কমনা-বাসনাকে উত্তেজিত করে তোলে এমন কিছু দেখবে না, শুনবে না, খাবে না, শৃঙ্গার করবে না। সর্বদা বীর্য রক্ষা করবে।

(আর টিভি দেখা নয়। টিভিতে নাচ-গান-সিনেমা তো নয়-ই, এমনকী খেলা দেখতে দেখতে নিজের প্রিয় দলের জয় কামনা করাও চলবে না। বীর্য রক্ষাকে যারা ব্রত করতে চায়, তাদের বিয়ে করে আর একটা জীবন নষ্ট করার কোনও অধিকার নেই। রামদেবের মতো এমন জ্ঞানীদের দেওয়া জ্ঞানের চোটেই ভারতে মানসিক কারণে পুরুষত্বহীনের সংখ্যা প্রচুর।)

■ ব্রহ্মচারী হতে গেলে আটটি বিষয় থেকে নিজেকে দূরে রাখতে হয়। যথা ঃ– খোলাধুলা, একান্তে খাওয়া, বিষয়-আসয় নিয়ে কথা বলা, ভাষণ, মৈথুন-বাসনার দৃষ্টিতে দেখা, স্পর্শ করা এবং মৈথুন করা। এগুলোকে আট প্রকার মৈথুন বলে বর্ণনা করেছেন রামদেব।

(সব্বাই পরমাত্মা পেতে খেলাধুলো ছেড়ে ব্রহ্মচর্য পালন করলে পৃথিবীর খেলার জগতের কী হবে—ভাবতেই শিউরে উঠছি। পৃথিবী তো মানব শূন্যে হলো বলে !)

■ কাম ও ক্রোধ অল্প সময়ের মধ্যেই আমাদের শরীরকে শক্তিহীন এবং কান্তিহীন করে দেয়। (ঠিক কথা। এইজন্যেই সিনেমাস্টার ও মডেল পেশার ছেলে-মেয়েদের অমন বিশ্রী দেখতে, অমন কান্তিহীন! আর বক্সার থেকে রেসলার, প্রতেকেই ক্রোধের কারণে কী ভয়ংকর রকমের শক্তিহীন, ল্যাগব্যাগে প্যাকাটি, তা তো টিভির কল্যাণে কোলের শিশুটি পর্যন্ত জেনে গেছে।) জীবনের মুখ্য লক্ষ্য ঈশ্বর আরাধনা।

(রবীন্দ্রনাথ থেকে আইনস্টাইন, প্রত্যেক স্রষ্টাই সৃষ্টিকে সাধনার অঙ্গ করে ভুল করেছিলেন, বুঝলাম।)

■ মিথ্যা কখন বলবে, তার একটা সুনির্দিষ্ট নীতি আছে। কোনও ব্রাহ্মণ গরু ইত্যাদি রক্ষার জন্য মিথ্যা বলবে। এটা হলো ‘জাতি পরক’ মিথ্যা। হরিদ্বার ইত্যাদি তীর্থে বা গুরুকুলে, মঠে বা মন্দিরে, গুরুদ্বারে, মসজিদে এবং গীর্জায় সত্য বলবে। ব্যবসায়ী কাজে এবং আদালতের কাজে অসত্যও বলবে। (পৃষ্ঠা-১২)

(গুরু, তোমার নীতিবোধ—‘লা-জবাব !’ )

■ মন, বুদ্ধি এবং আত্মার শুদ্ধির জন্য ঋষিদের বলা উপদেশ গ্রহণ করতেই হবে। (“গ্রহণ করতেই হবে” অর্থে বিনা প্রশ্নে গ্রহণ করতে হবে। স্বামী রামদেবের উপদেশবলী বা কথিত বাণীকেও যে মনের, বুদ্ধির ও আত্মার শুদ্ধির জন্য বিনা প্রশ্নে গ্রহণ করতে হবে—সে কথাই স্পষ্ট করে দিয়েছেন রামদেব।)

■ ঈশ্বর সর্বদাই আমাদের প্রয়োজনের বেশি-ই রূপ, যৌবন, ধন, সমৃদ্ধি এবং সমস্ত বৈভব প্রদান করেন। (পৃষ্ঠা ১৩)

(ভারতের শতকরা ৭০ ভাগের বেশি লোক গরিব। শতকরা ৩০ ভাগের বেশি আছেন দরিদ্রসীমার নীচে। এঁদের না আছে মাথা গোঁজার ঠাঁই, পানীয় জল, পরনের কাপড়, চিকিৎসার সুযোগ, শিক্ষালাভের সুযোগ এবং দু-বেলা ভাত-রুটির সংস্থান। অপুষ্টিতে ভোগা রুগ্‌ণ, রুক্ষ্ম মানুষগুলোকে ঈশ্বর তাদের প্রয়োজনের বেশি-ই দিয়েছেন যাঁরা বলেন, তাঁরা অবশ্যই সমাজের শত্রু।)

 

তপ বা তপস্যা

নিজের সৎ উদ্দেশ্যে সিদ্ধিতে যে কষ্ট, বাধা, প্রতিকূলতা আসবে, তাকে সহজ ও অবিচল ভাবে গ্রহণ করাই ‘তপ’ বা ‘তপস্যা’। এই সংজ্ঞা দিয়েছেন মহর্ষি ব্যাস।

মহাভারতেও ‘তপ’ বা ‘তপস্যার সংজ্ঞা দেওয়া আছে। যক্ষ যুধিষ্ঠিরকে জিজ্ঞেস করেছিলেন। ‘তপ’ কী? উত্তরে যুধিষ্ঠির বলেছিলেন, সমস্ত বাধা-বিঘ্নকে সহ্য করে স্বধর্ম পালন-ই তপ। ক্ষুধা-তৃষ্ণা, ঠাণ্ডা-গরম, সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, মান-অপমান, স্তুতি-নিন্দা, জয়-পরাজয় ইত্যাদিকে যে সহজভাবে গ্রহণ করে নিরন্তন স্বধর্ম পালন করে, সেই প্রকৃত তপস্বী। এক পায়ে দিনের পর দিন দাঁড়িয়ে থাকা বা শরীরকে কষ্ট দেওয়া তপস্যা নয় ।

যোগীর সান্নিধ্যে সাপ, বাঘও হিংসা ভোলে

যোগী পুরুষ কখনই কারও প্রতি হিংসাভাব বা শত্রু ভাব বজায় রাখে না। সে সমস্ত প্রাণীর প্রতি-ই প্রেমময়। যোগী পুরুষের সান্নিধ্যে এলে শুধু মানুষ নয়, বিছে, সাপ, বাঘ ইত্যাদি হিংস্র প্রাণীরাও হিংসা ত্যাগ করে।

সত্যাচরণ করা যোগী বাকসিদ্ধ হন

সত্যাচরণ করা যোগী বাকসিদ্ধ হন। যে ব্যক্তি সত্য বলে, সত্য আচরণ করে, তাঁর কথা অমোঘ হয়ে ওঠে। সত্যবাদী যোগীদের মধ্যে বিরাট বড় শক্তি হল এই যে, যা বলেন তা-ই ফলে, সত্যি হয়ে যায় ।

প্রাণায়াম

আসনে সিদ্ধ হয়ে উঠলে শ্বাস-প্রশ্বাসের গতিকে নিয়ন্ত্রণ করাকে প্রাণায়াম বলে। প্রাণয়াম চার প্রকার। (১) বাহ্যবৃত্তি, (২) আভ্যন্তরবৃত্তি (৩) স্তম্ভবৃত্তি (৪) বাহ্যভ্যন্তর বিষয়াক্ষেপী।

বাহ্যবৃত্তি প্রাণায়াম

আসনে বসে শ্বাস বের করে শ্বাসকে যথাশক্তি বাইরে আটকে রাখুন। প্রশ্বাস ভিতরে নিয়ে সেটাকে আটকে না রেখে বের করে দিন এবং আবার শ্বাসকে বাইরে আটকে রাখুন ।

এভাবে ৩ থেকে ৪ বার করুন। এতে মনের চঞ্চলতা দূর হয়। পেট ভাল থাকে। খিদে ভাল হয়। বুদ্ধি সূক্ষ্ম ও তীব্র হয়।

আভ্যন্তরবৃত্তি প্রাণায়াম

আসনে বসে শ্বাসকে বাইরে বের করে আবার যতটা পারেন প্রশ্বাসের সঙ্গে বায়ু টেনে নিন। বুক ফুলে উঠবে এবং পেট ভেতরের দিকে সঙ্কুচিত থাকবে।

যতক্ষণ সম্ভব বায়ুকে ভেতরে আটকে রাখুন। ধীরে ধীরে শ্বাস ছাড়ুন।

এতে ফুসফুসের সব রোগের আরোগ্য হয়। হাঁপানি ভালো হয়। শরীরের শক্তি, তেজ ও কান্তি বৃদ্ধি হয়।

স্তম্ভবৃত্তি

শ্বাস নিয়ে কিছুক্ষণ আটকে রেখে তারপর বের করে দিন। এভাবে কয়েকবার করুন। এই প্রাণায়ামে কী ফল লাভ করা যাবে, লেখেননি রামদেব ।

বাহ্যভ্যন্তর বিষয়ক্ষেপী

যখন শ্বাস ভিতর থেকে বাইরে আসবে, তখন একটু একটু করে আটকে আটকে ছাড়ুন। আবার বায়ু যখন ভিতরে টানবেন, তখনও একটু একটু করে আটকে আটকে টানুন। এতে বীর্যবৃদ্ধি হয়, পরাক্রমী ও জিতেন্দ্রিয় হয়। শাস্ত্র খুব কম সময়ের ভিতর বুঝতে পারে।

 

প্রাণায়ামের ‘শ্বাস-নিয়ন্ত্রণ’ : বিরাট ধাপ্পা

নিশ্বাস-প্রশ্বাসের গতিকে যথাসাধ্য নিয়ন্ত্রিত করাকে ‘প্রাণায়াম’ বলে—এটা রামদেব থেকে সব যোগীদেবদের-ই কথা। নিশ্বাস-প্রশ্বাসের গতি নিয়ন্ত্রণ করার পদ্ধতি হিসেবে রামদেব থেকে ব্যারামদেব প্রায় প্রত্যেকেই এক-ই পদ্ধতি শেখান। একটি নাসারন্ধ্র বা ‘ন্যাসেল প্যাসেস’ আঙুল চেপে বন্ধ করে খোলা নাসারন্ধ নিয়ে প্রশ্বাস নিন ও নিশ্বাস ছাড়ুন। এমন কিছুক্ষণ করার পর (মিনিট পাঁচেক) অন্য নাসারন্ধ্র আঙুল চেপে বন্ধ করুন এবং খোলা নাসারন্ধ দিয়ে প্রশ্বাস নিন, নিশ্বাস ছাড়ুন। এমনি চালান মিনিট পাঁচেক

নিশ্বাস-প্রশ্বাসের এই নিয়ন্ত্রণ বা ‘প্রাণায়াম’ হলো ‘সোনার পাথরবাটি’। কেন ‘সোনার পাথরবাটি’? বুঝতে আমাদের ‘অ্যানাটামি’ বা মানবদেহের গঠনতন্ত্রকে বুঝতে হবে।

নাসিকা-পথ বা ‘ন্যাসেল প্যাসেস’ দিয়ে প্রশ্বাস শেষ পর্যন্ত শ্বাসনালী বা ‘ল্যারিংস্‌’-এ যায়। শ্বাসনালী দিয়ে প্রশ্বাস যায় ফুসফুসে। এবং ফুসফুস থেকে ‘ল্যারিংস্‌’ হয়ে নিশ্বাস নাসিকাপথ দিয়ে বের হয়।

নাকের ফুটো বন্ধ করে শ্বাসনালী দিয়ে শ্বাস নিয়ন্ত্রণ অর্থাৎ
নিশ্বাস-প্রশ্বাসের গতিপথ নিয়ন্ত্রণ করা যায়, এমন চিন্তা
চূড়ান্ত মূর্খতা। কারণ দুটি নাসিকা-পথ এসে মিশেছে
শ্বাসনালীতে। শ্বাসনালী একটা; দুটো নয়। সুতরাং
কোনও নাসারন্ধ্র টিপে বন্ধ করে একদিকের
শ্বাসনালী বন্ধ করে দেওয়ার চিন্তার মধ্যে
অজ্ঞতা ছাড়া আর কিছু-ই নেই।

শেষ পর্যন্ত প্রাণায়ামের ‘শ্বাস-নিয়ন্ত্রণ’ এক বিরাট ধাপ্পা, যা বোকাদের বাজারে ভালো-ই বিকোচ্ছে।

ধ্যান

নাভিচক্রে, ভ্রুমধ্যে, হৃদয়ে ইত্যাদিতে প্রত্যয়ের সঙ্গে পরমেশ্বরকে ধারণা করাই ‘ধ্যান’। ধ্যানের আগে প্রাণায়াম অতি অবশ্যই করুন। কারণ প্রাণায়াম মনকে একাগ্র ও শান্ত করে। প্রাণায়াম নিয়মমত করলে মূলাধার চক্রে ব্রহ্মের দিব্যশক্তি জাগ্রত হয়ে ওঠে, ঊর্ধ্বগামী হয়, সমস্ত চক্র ও নাড়ির শোধন হয়। আজ্ঞাচক্রে মন অবস্থিত হতে থাকে।

ধ্যানের সময় শুভ কাজ গুরু সেবা এবং গরু সেবাতেও মন দেবেন না। ধ্যানের সময় মন দেবেন শুধু ঈশ্বর চিন্তায়।

ধ্যানের আগে মনে মনে এমন ভাবুন যে, ধন, ঐশ্বর্য, সম্পত্তি, ভার্যা, পুত্র, আত্মীয় ইত্যাদির রূপ নেই। আমার শরীরের সমস্ত ইন্দ্রিয় রহিত হয়েছে।

সাধকের মনে থাকবে বৈরাগ্য। শুভ কাজকে ভগবানের সেবা মনে করবে। ফলের প্রত্যাশা করবে না।

বাহ্য-সুখ হলো দুঃখরূপ। যতক্ষণ সংসার সুখে মগ্ন থাকবে, ততক্ষণ সমাধিতে পৌছানো সম্ভব নয়।

সাধককে ঘুমোবার সময় ধ্যান করে ঘুমনো উচিত। এমন করলে নিদ্রাও যোগময় হয়ে ওঠে ; যাকে বলে যোগনিদ্ৰা ।

প্রত্যেক সাধকের প্রতিদিন কমপক্ষে এক ঘন্টা জপ, ধ্যান এবং উপাসনা অবশ্যই করা উচিত।

সমাধি

পরমেশ্বরের ধ্যান করতে করতে সাধক ওম্‌কার ব্রহ্ম পরমেশ্বরের সঙ্গে তন্ময় হয়ে যান। ভুলে যান নিজের অস্তিত্ব। ডুবে যান দিব্য আনন্দের অনুভবে। এটাই স্বরূপ শূন্যতা। এটাই সমাধি । প্রাচীন শবাসন + স্বসম্মোহন দ্বারা রিল্যাকসেশন = রামদেবের শবাসন।

যোগের আকর গ্রন্থগুলোতে ‘শবাসনম্’ বলতে যা বোঝায় তা এখানে তুলে দিলাম : “উত্তানং শববদ ভূমৌ শয়নং তচ্ছবাসনম্ ।

শবাসনং শ্রান্তিহরং চিত্তবিশ্রান্তিকারকম্॥” (শ্লোক ৩৫)৷৷

বঙ্গার্থ। ঊর্ধ্বমুখ (চিত) হইয়া শবের ন্যায় ভূমিতে শয়ন করিয়া থাকিলেই শবাসন হয়। এই শবাসন দৈহিক যোগশ্রম হরণ করে এবং চিত্তের বিশ্রামসুখ জন্মায় ৷৷ ৩৫ ৷৷

(হটযোগ-প্রদীপিকা)

এখানে বঙ্গার্থ যা তুলে দেওয়া আছে, তা ‘হটযোগ-প্রদীপিকা’ থেকে অর্থ স্পষ্ট। তাই ‘শবাসন’-এর অংশটিকে টেনে বাড়াতে ভাবসম্প্রসারণে নামার একটুও ইচ্ছে হলো না ।

কেউ কেউ যোগের ‘শবাসন’ শেখাতে গিয়ে তার সঙ্গে মনোবিজ্ঞানের ‘রিল্যাকসেশন’ বা ‘মেডিটেশন’ পদ্ধতি জুড়ে দিতে চাইছেন। তবে ভুল ভাবে। এই যেমন বাবা রামদেব? তাঁর শেখান ‘শবাসন’ পদ্ধতি না প্রাচীন যোগের শবাসন পদ্ধতি না প্রাচীন যোগের শবাসন, না আধুনিক ‘রিল্যাকসেশন’। দু’য়ে মিলে এক হাঁসজারু ।

স্বামী রামদেবের যোগের বইটিতে প্রচুর বিচ্ছুতি আছে। ‘চাপা ও ছাপা’ মুন্সিয়ানায় হলদে সাংবাদিকতা মত বদ-গন্ধ আছে। তবু আসুন দেখি রামদেব শবাসন বলতে কী বলেছেন।

 

রামদেবের শবাসন পদ্ধতি

মেঝেতে চিত হয়ে শুয়ে পড়ুন। দু’পায়ের পাতার মাঝে এক ফুট ফাঁক রাখুন। হাত দুটো শরীরের সঙ্গে ছুঁইয়ে না রেখে একটু দূরে রাখুন। হাতের পাতা রাখবেন উপরের দিকে খুলে। চোখ বন্ধ করুন। ঘাড় সোজা রাখুন। গোটা শরীর শিথিল অবস্থায় থাকবে। এবার ধীরে ধীরে লম্বা-লম্বা প্রশ্বাস নিন এবং শ্বাস ছাড়ুন ।

মনে মনে চিন্তা করতে থাকুন আপনার দু’পায়ের বুড়ো আঙুলের কথা। ভাবতে থাকুন বুড়ো আঙুল দুটো শিথিল অবস্থায় পড়ে আছে। এরপর ভাবতে থাকুন পায়ের পাতা ও গোড়ালির কথা। অনুভব করতে থাকুন, পায়ের পাতা ও গোড়ালি দুটো শিথিল হয়ে যাচ্ছে। একই ভাবে শিথিল হয়ে যাচ্ছে বলে পরপর ভাবতে থাকুন পায়ের ডিম, পায়ের হাঁটু, উরু, কোমর, পেট, পিঠ, হৃদয়, ফুসফুস, বাহু, কনুই, কব্জি, দু’হাতের আঙুল। এবার ভাবুন নিজের মুখ নিয়ে। ভাবুন, আমার মুখে কোনও টেনশন নেই, নিরাশা নেই। মুখে ছড়িয়ে পড়েছে প্রসন্নতা ও আনন্দের ভাব। আমি শুদ্ধ নির্মল, আনন্দময়, আমি অমৃত-পুত্র আত্মা। আমার আত্মা পরিপূর্ণ বিশ্রাম নিচ্ছে । এবার চিন্তা করুন, আপনার আত্মা শরীর থেকে বাইরে বেরিয়ে এসেছে। আর শরীরটা শব হয়ে শুয়ে আছে। “এজন্য এই স্থিতিকে শবাসন বলে।”

আবার ভাবতে শুরু করুন, আত্মা শরীরে প্রবেশ করছে। শ্বাস-প্রশ্বাস চলছে।

শবাসনে লাভ

১. মানসিক টেনশন, উচ্চ রক্তচাপ দূর হয়। অনিদ্রা দূর করতে সেরা আসন। হৃদরোগীদের পক্ষে ভালো।

২. ক্লান্তি ও স্নায়ু-দুর্বলতা দূর হয়।

৩. শরীর মন, মস্তিষ্ক, আত্মা পূর্ণ বিশ্রাম লাভ করে।

স্বামী রামদেব কি সত্যি-ই যোগ-সমাধি-মুদ্রা ইত্যাদির কার্যকারিতায় বিশ্বাস করেন? তিনি নিজে যদি ‘প্রাণ মুদ্রা’ করে নিজের বাঁ চোখের অসুখ সারিয়ে তুলতেন, তবে তাঁর অন্ধভক্তরা স্বস্তি পেতেন।

দুষ্টু পাবলিকের তো অভাব নেই। তাঁরা বলছেন, যে সবার সব রোগ যোগে-মুদ্রায় সারিয়ে দেবে বলে দাবি করে, আর নিজেই রোগে ভোগে, তার কথায় কে বিশ্বাস করবে?

 

হাতের তালু, পায়ের তালু টিপে যে কোনও রোগ সারান

হ্যা শুনতে অদ্ভুত লাগলেও এমনটা-ই বলেছেন স্বামী রামদেব। তাঁর বইয়ে লেখা আছে, হাতের এবং পায়ের বিভিন্ন অংশ আসলে শরীরের ভিতরের লিভার, হার্ট, কিডনি, লাং, স্টমাক, নাক, কান, গলা, ঘাড়, চোখ, মস্তিষ্ক ইত্যাদির প্রতিনিধিত্ব করছে। রোগীর চোখ, কিডনি বা মস্তিক ইত্যাদি যে অংশে রোগ বিস্তার করেছে, সেই অংশের প্রতিনিধি বিন্দুগুলোতে ৩০ সেকেন্ড থেকে

২ মিনিট পর্যন্ত চাপ দিতে হবে। চাপ এমনভাবে দিতে হবে যাতে রোগী চাপ অনুভব করবে, কিন্তু ব্যথা অনুভব করবে না।
এ তো দেখি—‘পায়ে মারলো লাথি, চোখ হল কানা' গল্পের মতো ব্যাপার।
NDTV ইন্ডিয়া’র ‘মুকাবলা’ অনুষ্ঠানে রামদেব ও আমি

৭ জানুয়ারি ২০০৬, রাত ১০ টা থেকে ১১-৩০ পর্যন্ত পাক্কা দেড় ঘন্টা চললো ‘মুকাবলা’। চ্যানেলের নাম— ‘NDTV ইন্ডিয়া’। মুখ্য চরিত্রে বাবা রামদেব এবং আমি। আমাকে কয়েক ঘন্টার নোটিসে প্লেনে উড়িয়ে নিয়ে গিয়েছিল NDTV ইন্ডিয়া। অনুষ্ঠানের আগের দিন সকাল থেকে অনুষ্ঠানের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত টিভি স্ক্রিনের তলায় বিজ্ঞাপন চলেছে ‘মুকাবলা’র।

অনুষ্ঠানে শ’খানেক দর্শক। সঞ্চালক ছিলেন দেবাং। চার রাউন্ডের অনুষ্ঠান। আলোচক আমরা দু’জন ছাড়াও ছিলেন আরও ছ’জন। সঞ্চালক ছাড়া সব্বাই রামদেবের পক্ষে। আমার পক্ষে একজনকে পেলাম। তাও শুধু প্রথম রাউন্ডে। তিনি হলেন সুহেল শেঠ।

আমার আক্রমণ বা বক্তব্য ছিল যোগ’কে কেন্দ্র করে। রামদেবের লেখা বই ‘যোগ সাধনা…’ দেখিয়ে বলেছি, এটা আপনার লেখা, প্রকাশকও আপনি। এই বইতে বিভিন্ন আঙুলের মুদ্রার ছবি দেখিয়ে জানিয়েছেন, এইসব মুদ্রায় কী কী অসুখ সারে।

আপনি জানিয়েছিল, প্রাণ মুদ্রায় চোখের অসুখ সারে। আপনার বাঁ চোখের অসুখ কেন ‘প্ৰাণ মুদ্রা’ করে সারাচ্ছেন না?

হলের শ্রোতারা হাসিতে ফেটে পড়লেন। আর রাগে ফেটে পড়লেন রামদেব। আমাকে চোখা চোখা ভাষায় গাল-মন্দ-অপমান শুরু করলেন।

আমি বললাম, রামদেবজী, আপনি আপনার বইতেই লিখেছেন, সেই যোগী যে জয়-পরাজয়, সিদ্ধি অসিদ্ধি, সফলতা-বিফলতা, আনন্দ-শোকে অচঞ্চল থাকে। আপনি যে ভাবে রেগে গেলেন, ভাতে প্রমাণ হল, আপনি. যোগী নন।

আলোচনা আর টেনে লম্বা করব না। শুধু বইটি থেকে দুটি হাত আর পায়ের ছবি দেখিয়ে বলেছিলাম, এটা কখনও হতে পারে যে, হার্টের অসুখে বা হার্ট স্ট্রোকে রোগীর পায়ের আঙুলের গোড়া টিপলে রোগী ভাল হয়ে যাবে ?

রামদেব বললেন, তাঁর কাছে নাকি দশ হাজার রোগীর তালিকা আছে, যাদের খেলাগ মুক্ত করেছেন। নখে নখ ঘষে টাকে চুল গজান যায়—ইত্যাদি ।

এরপর একটা সোজাসাপটা চ্যালেঞ্জ রাখি। একজন রোগী দেবো, যে মানসিক কারণে শারীরিক অসুখে ভুগছে না। তাঁকে রামদেব নিজের আশ্রমে রেখে যোগে সারিয়ে দিন। আর দিল্লির একজন টেকো মানুষ ওঁর কাছে তুলে দেবো। ওর টাকে চুল গজিয়ে দিন গ্রাফটিং না করে।

সঞ্চালক দেবাং বার বার আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে টেনে আনলেন আমার চ্যালেঞ্জ। বললেন, প্রবীরজি আপনার দেওয়া সংখ্যাতত্ত্বে সন্তুষ্ট নন। উনি বলছেন, তান্ত্রিক থেকে জ্যোতিষীরাও এমন হাজার হাজার রোগী সারাবার দাবি করেন। কথা না বাড়িয়ে বলুন, আপনি কি প্রবীরজির দেওয়া একজন রোগীকে আপনার আশ্রমে রেখে সারিয়ে তুলবেন? একজন টেকো লোকের মাথায় চুল গজিয়ে দেবেন ?

না। কিছুতেই চ্যালেঞ্জ নিতে রাজি হলেন না রামদেব।

পরের দিনও দুপুর ২-৩০ থেকে বিকেল ৪টে পর্যন্ত ‘মুকাবলা’ আবার দেখানো হয়।

‘আজতক’ নিউজ চ্যানেলে আবার চ্যালেঞ্জ

৯ জানুয়ারি ২০০৬। ‘আজতক’ নিউজ চ্যানেল এক বিরাট বিস্ফোরণ ঘটাল। হাজির করল আমার চ্যালেঞ্জ। বিশিষ্ট্য যোগবিশেষজ্ঞ হিমাদ্রি সমাদ্দার আমার প্রশ্নের উত্তরে জানালেন, যোগাসন বা যোগব্যায়ামে শরীর সুস্থ থাকে; এই পর্যন্ত। কিন্তু কেউ যদি যোগে গ্যারান্টি দিয়ে যে কোনও রোগ সারিয়ে দেওয়ার কথা বলে থাকেন, তো বলব ঠিক কথা বলেননি। তারপর শুধু ‘নৌলি’ বা পেটের পেশীর যা সঞ্চালন করে দেখালেন হিমাদ্রি তা রামদেবের পক্ষে অসম্ভব ।

বিশিষ্ট চিকিৎসক সুনীল ঠাকুরকে জিজ্ঞেস করলাম, রামদেব জানিয়েছেন, শুধুমাত্র বিভিন্ন হাতের মুদ্রায় নানা জটিল রোগ সারানো যায়, নখে নখ ঘষে টাকে চুল গজানো যায়, হাতের বা পায়ের তালুর বিভিন্ন অংশ টিপে যে কোনও রোগ সারানো যায়। আপনি কী বলেন?

ডাক্তার ঠাকুর রামদেবের এমন দাবিকে ফুৎকারে উড়িয়ে দিলেন। আমার দেওয়া একজন রোগী একজন টেকোকে ঠিক করার চ্যালেঞ্জ ছুঁড়ে দিল ‘আজতক’। রামদেব একদম চুপ !

১০ জানুয়ারি খড়গপুর বইমেলায় যেতে-যেতেই শুনলাম, এই শহরে প্রায় সবাই নাকি রামদেবের যোগ দেখেন টিভি খুলে। অনুষ্ঠানের শুরুতেই দর্শকদের বেশির ভাগই চাইলেন ‘রামদেব কিস্সা’ শুনতে।

মজা করে বলছিলাম। দেখলাম কী বিপুল ভাবে উল্লাস প্রকাশ করে আমাকে সমর্থন জানাচ্ছেন হাজার হাজার দর্শক ।

বুঝলাম, এখনও মানুষ যুক্তির দিকেই ঝোঁকেন। আশার আলো দেখলাম, এখনও পাল্টা প্রোগ্রামিং করা যায় মানুষের মস্তিষ্কে।

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!