ঘটনাস্থল নিউ ইয়র্ক। কাল- ১৯৯৯ সালের ৫ আগস্ট। সকাল ১০টা। প্ল্যানচেটের আসর। মিডিয়াম মিস্টার কিলার। মুখোমুখি দুটি চেয়ার অভেদানন্দ ও কিলার। মাঝখানে একটা ছোট টেবিল। কিলার দুটি শ্লেট বার করলেন। অভেদানন্দ নিজের হাতে শ্লেট দুটির দু-পিঠই মুছে দিলেন। কিলার এবার একটা শ্লেটের ওপর আর একটা শ্লেট রেখে তার ওপর রাখলেন একটা চক। অভেদানন্দকে অনুরোধ করলেন, যার আত্মাকে আনতে চান, তাঁর নাম এক টুকরো কাগজে লিখে শ্লেটের ওপর রাখতে। অভেদানন্দ লিখলেন, স্বামী যোগানন্দজির নাম। এবার কিলার একটা রুমাল দিয়ে আলগা করে জড়ালেন শ্লেট দুটি। রুমালের আড়ালে ঢাকা পড়ল চক ও কাগজের টুকরোটা। কিলার ও অভেদানন্দ দু’হাত দিয়ে শ্লেট ছুঁয়ে রেখে টেবিল থেকে কিছুটা ওপরে তুলে রাখলেন শ্লেট জোড়াকে। কিলার বললেন, আপনি যাকে চান তাঁকে হয়তো আনতে পারব না। তবু চেষ্টা করছি। এক সময় শ্লেট চক দিয়ে লেখার খস-খস শব্দ শোনা গেল। কিলার বললেন, চকের আওয়াজ শুনতে পাচ্ছেন? অভেদানন্দ বললেন, হ্যাঁ। তারপরই এক সময় রুমাল সরিয়ে শ্লেট খুলতেই দেখা গেল শ্লেট লেখায় ভর্তি, সঙ্গে যোগানন্দজির নাম, অভেদানন্দ বিস্ময়ে বাক্যহারা। পরে জেনেছিলেন, শ্লেটে গ্রিক ভাষাও লেখা হয়েছে। গ্রিক লেখা এলো কি করে? যোগেন তো গ্রিক জানতেন না? বিস্মিত অভেদানন্দের প্রশ্নের উত্তরে কিলার জানালেন অন্য কোনও আত্মা লিখে গেছে। কিলারের কথায় অবিশ্বাস করার মতো কিছুই পাননি অভেদানন্দ।
অনেক আলোচনাচক্রে শ্রোতা-দর্শকরা এই ঘটনাটির উল্লেখ করে ব্যাখ্যা চেয়েছেন। মুখের কথায় বোঝানোর চেয়ে হাতে-কলমে দেখালে যে শ্রোতা-দর্শকদের মাথায় বিষয়টা বেশি ভালোমতো প্রবিষ্ট হবে, এই কথাটা চিন্তা করে স্বামী অভেদানন্দের পদ্ধতিতেই দর্শকদের নির্বাচিত তথাকথিত আত্মাকে এনে শূন্য শ্লেট লেখায় ভরিয়েছি, নাম লিখিয়েছি। প্রতিটি ক্ষেত্রে শ্লেট ধরার সঙ্গী হয়েছেন দর্শকদেরই একজন। হ্যাঁ, শ্লেটে লেখার খস-খস আওয়াজ শুনেছেন। শূন্য শ্লেটে দাবিমতো আত্মার স্বাক্ষর দেখে প্রতিটি ক্ষেত্রেই শ্রোতা-দর্শকরা অভেদানন্দের মতোই বিস্ময়ে বাক্যহারা হয়েছেন। তবে পার্থক্যটুকু এই, অভেদানন্দ বিস্মিত হয়েছিলেন আত্মাকে লিখতে দেখে, আর দর্শকরা বিস্মিত হয়েছেন, এমন অসাধারণ ঘটনাও সামান্য লৌকিক কৌশলের সাহায্যেই করা সম্ভব জেনে।
এমন একটা অসাধারণ প্ল্যানচেট করার জন্য প্রয়োজন একটি শ্লেট। টিনের শ্লেট হলেই ভাল হয়। ফ্রেমে আটকানো কালো টিনটার মাপের দু-পিঠ কালী একটা টিনের শিট। টিন-শিটের একটা কোনা ছবির মতো করে কেটে রাখুন। একটু টুকরো চক। একটা রুমাল বা খাম। যিনি আত্মা আনবেন, তাঁর হাতের একটা আঙ্গুলের নখ রাখতে হবে একটু বড়। নখটা সামান্য ফাড়া থাকলে আরও ভাল হয়।
শ্লেটে আগে থেকেই একজন সম্ভাব্য আত্মার নাম চক দিয়ে লিখে রাখতে হবে। আমি বিভিন্ন অনুষ্ঠানে পরিবেশ অনুসারে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়, ইন্দিরা গান্ধী, কার্ল মার্কস, লেনিন বা অন্য কারো নাম স্বাক্ষর করে রাখি। এ-বার লেখার ওপর চাপিয়ে রাখি কালো টিনের শিট। লেখাটা শিটের তলায় চাপা পড়ে যায়। দর্শকরা দেখেন শ্লেটের পরিষ্কার দুটি দিক। এরপর শ্লেটটা চাপিয়ে রাখি অন্য একটা শ্লেটের ওপর। এমনভাবে চাপাই, আলগা টিনের শিটটা তলার শ্লেটের ওপরে গিয়ে পড়ে। এ-বার ওপরের শ্লেটটা তুললেই দর্শকরা দেখতে পান, আত্মার লেখা। খস-খস আওয়াজটা করি ফাড়া নখ শ্লেটে ঘষে।
যা লিখেছি সে নাম যদি দর্শকরা না চান? শত শত অনুষ্ঠানে শ্লেট-লিখন দেখিয়েছি। প্রতিটি ক্ষেত্রেই দেখেছি আমার লেখা নামটি দর্শকদের মধ্যে কেউ না কেউ চেয়েছেন। প্রয়োজনে লটারি করে নাম নির্বাচন করেছি। কাগজের টুকরোয় দর্শকরাই নাম লিখেছেন, পাত্রে নাম লেখা কাগজ ফেলে নিজেরাই লটারি করে নাম তুলেছেন। এটুকু দর্শকরা বুঝতে পারেননি হাতের কৌশলে তাদের কাগজগুলো পাল্টে গিয়ে আমরাই লেখা কতকগুলো কাগজের টুকরো সেখানে এসে গেছে। ফলে, আমার নির্বাচিত নামই তুলতে বাধ্য হয়েছেন দর্শক।
স্বামী অভেদানন্দ যে যোগানন্দেরই নাম লিখবেন সেটা কিলার জানলেন কি করে? এ প্রশ্ন নিশ্চয়ই অনেকের মধ্যে উঁকি-ঝুঁকি দিচ্ছে। উত্তরে জানাই- অভেদানন্দ ও কিলার এই প্ল্যানচেটে বসার আগের দিন অর্থাৎ ৪ আগস্ট আর এক প্ল্যানচেটের আসরেও অভেদানন্দ তাঁর গুরুভাই যোগানন্দর আত্মাকে আনতে অনুরোধ করেছিলেন। যোগানন্দের নাম শ্লেটে লিখে রেখেও কিলার ঝুঁকি নিতে চাননি বলেই অভেদানন্দকে বলেছিলেন- আপনি যাকে চান তাঁকে হয়তো আনতে পারব না।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ৪র্থ খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
♦ আত্মার রূপ নিয়ে বার রাজপুত্তুরের তের হাঁড়ি
অধ্যায়ঃ চার
♦ এ’দেশের কিছু আদিবাসী ও বিদেশের কিছু অধিবাসীদের আত্মা-চিন্তা
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ ‘সানন্দা’র দপ্তরে প্ল্যানচেটের আসর
♦ ঘাড়ে চাপল প্ল্যানচেটের আত্মা
♦ রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চর্চা
♦ স্বামী অভেদানন্দের সামনে আত্মা লিখল শ্লেটে
♦ ভূতের ভরে পটকা মেয়েও পেয়ে যায় হাজার হাতির বল
♦ চিকিৎসা বিজ্ঞানের মতে ভূতে পাওয়া কি
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ ভিড় করে আসা প্রশ্নমালার উৎপত্তি
♦ থিওজফিক্যাল সোসাইটির প্রেতচর্চা
♦ উনিশ শতকের সেরা মিডিয়ামদ্বয় ও দুই শৌখিন জাদুকর
♦ থিওজফস্টদের ওপর আঘাত হেনেছিল যে বই
♦ থিওজফিস্টদের প্রতি লেখা বিজ্ঞানী হাক্সলের মজার চিঠি
অধ্যায়ঃ সাত
♦ যুক্তির নিরিখে ‘আত্মা’ কি অমর?
অধ্যায়ঃ আট
♦ অসাম্যের বিষবৃক্ষের মূল শিকড় অধ্যাত্মবাদ অধ্যাত্মবাদের মূল শিকড় আত্মা
অধ্যায়ঃ নয়
♦ সিস্টেম’কে পুষ্ট করতেই টিনের তলোয়ার ঝন-ঝন বাজে “আত্মা থাক, কুসংস্কার দূর হোক”
♦ সমাজ কাঠামোর সিংহাসনের চারটি পায়া কারা
অধ্যায়ঃ দশ
♦ হিন্দু ছাড়া কেউ জন্মান্তর মানে না
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ আত্মার অস্তিত্বে বিশাল আঘাত হেনেছিল চার্বাক দর্শন
অধ্যায়ঃ বারো
অধ্যায়ঃ তেরো
♦ তবু জাতিস্মর বার বার ঘুরে ফিরে আসে
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
♦ জাতিস্মর কাহিনীর প্রথম পর্যায়
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ২ : চাকদার অগ্নিশিখা
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ৩ : সুনীল সাক্সেনা
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ৪ : যমজ জাতিস্মর রামু ও রাজু
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ৫ : পুঁটি পাত্র
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ৬ : গুজরাটের রাজুল
অধ্যায়ঃ পনের- জাতিস্মর কাহিনীর দ্বিতীয় পর্যায়
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ৭ : জ্ঞানতিলক
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ৯ : ত্রিশের দশকে কলকাতায় জাতিস্মর
অধ্যায়ঃ ষোল- অবতারদের পুনর্জন্ম
♦ জাতিস্মর তদন্ত-১০ : সত্য সাঁইবাবা
♦ জাতিস্মর তদন্ত- ১১ : দলাই লামা
অধ্যায়ঃ সতের
♦ জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার দাবীদারদের প্রতি ১৫০,০০০ টাকার চ্যালেঞ্জ