জাদুকর দীপক রায়ের একটা লেখায় একবার পড়েছিলাম জাদু সম্রাট পি.সি. সরকার একবার স্টিমার বন্ধ করেছিলেন। শ্রীসরকার কয়েকজন সঙ্গীর সঙ্গে স্টিমারে গোয়ালন্দ আসছিলেন নারায়ণগঞ্জ থেকে। তখন তিনি জাদুচর্চার সঙ্গে যুক্ত থাকলেও তত নাম ছড়ায়নি।
রেলিং এর ধারে ডেকে বসে শ্রীসরকার তাঁর বন্ধুদের সঙ্গে আড্ডা দিতে দিতে নানা রকমের হাত সাফাইয়ের খেলা দেখাতে মেতে উঠলেন। ম্যাজিক দেখতে ডেকে ভিড় জমে উঠল, একটুক্ষণের মধ্যেই। শ্রীসরকারের হাতের কৌশলে সকলেই অবাক, ঘন-ঘন হাততালি পড়ছে। এরই মধ্যে একজন দর্শক ফুট কাটলেন, “এ আর কি এমন দেখালেন? এসব হাতসাফাই তো রাস্তার বেদেরাও দেখায়। অন্য কিছু দেখান না।“
“সব কিছু কি আর সব জায়গায় দেখানো যায়? তারও একটা পরিবেশ আছে! এখানে এই পরিবেশে দেখানো সম্ভব এমন কোনও কিছু দেখাতে বললে নিশ্চয়ই দেখাব।“
“বেশ তো, আমরা যে স্টিমারে যাচ্ছি, সেটাকেই এই মাঝনদীতে বন্ধ করে দিন না। দেখি আপনার কেরামতি।“
শ্রীসরকার কিন্তু এতে দমলেন না। বললেন, “যোগের সাহায্যে মানসিক শক্তি প্রয়োগ করে এটা অবশ্য করা সম্ভব। আমি একবার কুম্ভক যোগ করে চেষ্টা করে দেখতে পারি। তবে পারব কি না জানি না। আপনারা কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে আমার মনসংযোগে সাহায্য করুন।
সমস্ত দর্শক রুদ্ধশ্বাসে শ্রীসরকারের যোগের প্রয়োগ দেখার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলেন। পি.সি. সরকার চোখ বুজে বসলেন যোগে। তারপরে যা ঘটে গেল বুদ্ধিতে তার ব্যাখ্যা মেলা ভার। স্টিমারে গতি কমল। তারপর পুরোপুরি থেমে গেল। সারেঙ্গ, খালাসিদের মধ্যে হইচই পড়ে গেল, মাঝনদীতে স্টিমার থামল না?
ইতিমধ্যে সারা স্টিমারে খবর ছড়িয়ে পড়েছে, এক জাদুকর যোগের শক্তিতে স্টিমার চলা বন্ধ করে দিয়েছেন।
সারেঙ্গের অনুরোধে পি.সি. সরকার আবার স্টিমার চলার আদেশ দিতেই, বাধ্য ছেলের মতোই স্টিমার আবার চলতে শুরু করল।
পি.সি. সরকারের এই অতীন্দ্রিয় শক্তি দেখে দর্শকদের চক্ষু চড়কগাছ হলেও, তাঁর এই ক্ষমতার চাবিকাঠিটি ছিল সারেঙ্গের সহযোগিতা। জাদুকর আগেই স্টিমারে উঠে নিজের পরিচয় দিয়ে সারেঙ্গের সঙ্গে আলাপ জমিয়ে নিয়েছিলেন। যাত্রীদের সঙ্গে একটু মজা করতে জাদুকরের সঙ্গে সারেঙ্গও রাজি হয়ে গিয়েছিল। কি ধরনের ইশারা পেলে স্টিমার থামবে এবং কি ধরনের ইশারা পেলে স্টিমার ফের চালু হবে, সব দু’জনে মিলে ঠিক হয়ে গেল। তারপর জাদুকরেরই এক নিজের লোক জাদুকরকে উসকে দিয়ে মাঝনদীতে স্টিমার বন্ধ করে কেরামতি দেখাতে বলেছিলেন।