সূচীঃ
১। কবিতা–১০ : নেপেলিয়ান ৷
২। কবিতা-৭৪ : অলিম্পিক গেমস ।
৩। কবিতা—৮৪ : এলিজাবেথ-১ ।
৪। কবিতা- ১০০ : গ্রেট ব্রিটেন।
কবিতা-১০ (সেঃ- ১0 )
Tasche de murdre enormes adulteres,
Grand ennemi de tout le genre humain
Que sera pire qu’ayeulx, oncles ne peres
En, fer, feu, eau, sanguin & inhumain.
অর্থ হলঃ
খুন, ব্যাভিচাবে জড়িয়ে থাকা এই মানুষ
গোটা মানুষ-জাতের শত্রু
এ-হবে পূর্বপুরুষ বাবা-কাকাদের চেয়েও খারাপ
ইস্পাত, আগুন, জল; বদমায়েশ আর অমানবিক
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যাঃ নেপোলিয়ান
ভেনিসের বাসিন্দা এক অ্যাম্বাস্যাডর, মিঃ মোরেনিগো এই কবিতার ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বলেছেন, এই কবিতাতে ভবিষ্যদ্বাণী করা হয়েছে, নেপোলিয়ান বোনাপার্টের কথা। দ্বিতীয় লাইনটা পড়লেই নাকি তা বোঝা যাচ্ছে। ব্যাস, আর এর বেশি কিছু ব্যাখ্যা করেন নি।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণঃ
এ কবিতাতে স্পষ্ট করে না বলা হয়েছে কোনো স্থানের নাম, না কোনো মানুষের নাম । তাহলে কি করে মোরেনিগো বললেন নেপোলিয়ানের আগমন সম্পর্কে নস্ট্রাডামুস আগেই ভবিষ্যদ্বাণী করে গিয়েছিলেন ? এমন এক ‘ধরি মাছ, না ছুঁই পানি’ গোছের ধোঁয়াশা ব্যাখ্যার সঙ্গে পৃথিবীর শতাধিক মানুষের জীবনকে মিলিয়ে দেওয়া মোটেই কঠিন নয়। কবিতাটা সেভাবেই লেখা। আমি যদি দাবি করি, এই কবিতাতে নস্ট্রাডামুস সাহেব ঔরঙ্গজেব বা হিটলার অথবা সাদ্দাম হুসেনের কথা বলে গেছেন, সেটাই বা কী এমন মন্দ ব্যাখ্যা হবে ? অন্তত মোরেনিগোর ব্যাখ্যাকে গ্রহণযোগ্য মনে হলে আমার ব্যাখ্যাকে ওই একই যুক্তিতে গ্রহণ করতেই হবে।
কবিতা-৭৪ (সেঃ-১০)
An revolu du grand nombre septiesme
Apparoistra au temps Jeux d’Hecatombe,
Non esloigne du grand eage milliesme
Que les entres soruront de leur tombe
মানেঃ
যে বছর পা দেবে সাত-এ
একে দেখা যাবে হত্যার খেলার মাঝে,
নতুন হাজার বছরের কাছাকছি
যখন মৃতরা উঠে আসবে কবর থেকে।
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যাঃ অলিম্পিক গেমস।
এরিকা ইতস্তত ভাবের সঙ্গে মতপ্রকাশ করেছেন, এটা ১৯৭৬এর অলিম্পিক সম্বন্ধে ভবিষ্যদ্বাণী হ’তে পারে। ১৯৭৬-অলিম্পিকে কয়েকজন ইসরায়েলী খেলোয়াড় খুন হয়েছিলেন। এখানে হয়ত সেই ‘হত্যার খেলা’র কথাই বলতে চাওয়া হয়েছে। ‘নতুন হাজার- বছরের’ মানে ২০০০ সাল থেকে ২৯৯৯ সাল অবধি। ‘নতুন হাজার বছরের কাছাকছি’ নামে ২০০০ সালের কাছাকাছি ঘটবে ঘটনাটা। ১৯৭৬ সালটা নতুন হাজার বছরের কাছাকাছি নয় কী ?
‘যে বছর পা দেবে সাত’এ–এর মানে এই হতে পারে যে, ১৯৭৬-এ ‘৭’ সংখ্যাটা রয়েছে ।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণঃ
আমার ধারণা কবিতাটা ‘থার্ড অ্যান্টিখ্রাইস্ট’ সংক্রান্ত। ১৯৮৬এর অলিম্পিক ছিল ২১ তম অলিম্পিক; ফলে যে বছর পা দেবে সাত-‘এ-এই বাক্যটা তো মোটেই খাটবে না। ‘একে দেখা যাবে’—’এ’ কে ? ‘হত্যার খেলা’ মানেই অলিম্পিক ? অলিম্পিকে কি শুধু হত্যাই হয় ? ‘নতুন হাজার বছর’—কথাটাও পরিস্কার নয়। ৩০০০ সালের কাছাকাছিও তো নতুন হাজার বছরের কাছাকাছি।
আচ্ছা, ব্যাখ্যাটা যদি এমনভাবে করি—’নতুন হাজার বছরের কাছাকছি’ ‘যে বছর পা দেবে সাত’এ—এ’কথার অর্থ ১৯৯৭। সে-বছর মানুষ হত্যার খেলায় মেতে উঠে নিজেদের করবে ধ্বংস। আসবে ‘ডুমস্ ডে’। মৃতেরা উঠে আসবে কবর থেকে।
ধর্মভীরু খ্রিস্টানরা বিশ্বাস করেন, একদিন পৃথিবী ধ্বংস হয়ে যাবে। আসবে ‘ডুমস্ ডে, যেদিন করব ফুঁড়ে সমস্ত আত্মারা উঠে আসবে, এবং তাদের প্রত্যেকের বিচার হবে ঈশ্বরের (?) দরবারে, সেদিনই ঠিক হবে কারা স্বর্গে যাবে, আর কারাই বা যাবে নরকে। নস্ট্রাডামুস হয়ত ‘ডুমস্ ডে’ এবং পৃথিবী ধ্বংস হওয়ার বছরটি ‘কবে, সে বিষয়েই ভবিষ্যদ্বাণী করেছিলেন? কিন্তু আমার মত ব্যাখ্যাকারের বদলে ফালতু ব্যাখ্যাকারের হাতে পড়ে ভুমস ডে’ হয়ে গেছে ‘অলিম্পিক’।
আর একটা কথা চুপি চুপি বলছি- ‘ওটা ১৯৯৭-এর বদলে ২৯৯৭ বা ৩৯৯৭ নয় কেন?’ এ কথা আমাকে জিজ্ঞেস করবেন না। আমিও ওদের মত ফেঁসে যাব ।
কবিতা-৮৪ (সে:- ১০)
La naturelle a si hault hault non bas
Le tard retour fera martis contens,
Le Recloing ne sera sans debatz
En empliant & pendant tous son temps
অর্থাৎঃ
জারজ কন্যাটির স্থান হবে উঁচুতে, নিচে নয় মোটেই,
দেরিতে তার প্রত্যাবর্তন আনন্দিত করবে দুঃখীদের,
প্রত্যাবর্তিতাকে নিয়ে সমালোচনা হবে প্রচুর
অঢেল চাকরি দেওয়া, ও সময় নষ্ট করার জন্য।
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যাঃ এলিজাবেথ-১
এরিকা বলেছেন, কিছু লোকের ধারণা, এই কবিতা এলিজাবেথ-১ সম্পর্কে। কেননা পোপ চতুর্থ পল তাঁকে জারজ সন্তান বলে ঘোষণা করেছিলেন।
ব্যাস, এর বেশি যুক্তি দেননি এরিকা ।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণঃ
এলিজাবেথ-১ আদৌ জারজ ছিলেন কিনা এ ব্যাপারে বিতর্ক রয়েছে। কেউ কেউ বলেন, তাঁর মা প্রথাগত বিয়ে করেন নি। তাই তাঁর বিয়েটা আইনসম্মত নয়, ফলে প্রথম এলিজাবেথ জারজ সন্তান ছাড়া আর কিছুই নন।
এ সম্পর্কে বলি, আমরা যুক্তিবাদীরাও প্রথাগতভাবে ঈশ্বরকে সাক্ষী রেখে বিয়ে করি না, বিয়ে করি না মন্ত্র উচ্চারণের মধ্য দিয়ে। তাহলে তো আমাদের সন্তানরাও ‘জারজ’ ? কবিতার পরবর্তী তিন লাইনের ব্যাখ্যা ব্যাখ্যাকাররা দেননি। কারণটা বোধহয়, পরবর্তী তিনটি লাইন ইতিহাসের সঙ্গে বড় একটা মেলে না। অর্থাৎ শুধুমাত্র প্রথম লাইনের ওপর নির্ভর করেই ব্যাখ্যাকার ব্যাখ্যা করেছেন এই কবিতার। এ হেন ব্যাখ্যা কি গ্রহণযোগ্য ? পাঠকরা কী বলেন ?
কবিতা-১০০ (সেঃ-১0 )
Le grand empire sera par Angleterre,
Le pempotam des ans plus de trois cens:
Grandes copies passer par mer & terre,
Les Lusitains n’en seront pas contens
এর অনুবাদ করলে দাঁড়ায়ঃ
ইংল্যান্ডের জন্য এক বিশাল সাম্রাজ্য,
তিনশো বছরের অধিক সময় ধরে শক্তিশালীঃ
বিশাল বাহিনী হেঁটে যাবে স্থল, আর সমুদ্রের ওপর দিয়ে,
পর্তুগিজরা হবে না সন্তুষ্ট।
ব্যাখ্যাকারের ব্যাখ্যাঃ গ্রেট ব্রিটেন
এরিকা মনে করেন, নস্ট্রাডামুস ইংল্যান্ডের ভবিষ্যৎ দেখতে পেয়েছিলেন তাঁর অতিন্দ্রীয় দৃষ্টিতে। এ কবিতাতে ইংল্যান্ডের তিনশো বছরব্যাপী ভবিষ্যতের কথা লেখা আছে। বর্ণিত এই তিনশো বছর, এরিকার মতে, এলিজাবেথের সময় থেকে ভিকটোরিয়ার সময় অবধি।
এরিকা অবশ্য আবার পুরো কবিতার একটা জুৎসই ব্যাখ্যা খাড়া করতে অক্ষম হয়েছেন। তৃতীয় আর চতুর্থ লাইনের ব্যাখ্যা করতে গিয়ে বেজায় লেজেগোবরে হয়েছেন। বলেছেন তৃতীয় লাইনটা বেশ চালাকিতে ভরা। ‘বিশাল বাহিনী’ মানে হয়ত ব্রিটিশ ফৌজ, অথবা তাদের ফৌজ, যারা ব্রিটেনকে শেষ করবে। আর পর্তুগিজদের কথা এ কবিতায় কেন এল, বুঝতে পারেন নি এরিকা। অর্থাৎ এলিজাবেথের সময় থেকে ভিকটোরিয়ার সময় অবধি যে ব্রিটেনের ভালো সময় যাবে, সেকথাই আগেভাগে এই কবিতায় বলে রেখেছেন নস্ট্রাডামুস।
যুক্তিবাদী বিশ্লেষণঃ
একটা মস্ত ভুল লক্ষ্য করুন। প্রথম দু’লাইন আবার পড়ুন। লাইন দুটোর মানে কী দাঁড়াচ্ছে বলুন তো ? মানে দাঁড়াচ্ছে এই যে, ইংল্যান্ডের জন্য অন্য কোনো এক বিশাল দেশ তিনশোর বেশি বছরের জন্য শক্তিশালী হয়ে উঠবে। অর্থাৎ ইংল্যান্ডের মদত পেয়ে দেশটির শক্তি বৃদ্ধি পাবে। ইংল্যান্ড শক্তিশালী হয়ে উঠবে; এমন কিন্তু মানে দাঁড়াচ্ছে না ।
এলিজাবেথের সময় থেকে ভিকটোরিয়ার সময়—মানে সাড়ে তিনশো বছর । তিনশো বছরের অধিক সময়’; ঠিক। কিন্তু সময়কালটা গুনতে আরম্ভ করতে হবে এলিজাবেথ থেকে, এবং গোনা শেষ করতে হবে ভিকটোরিয়াতে; এ সিদ্ধান্তে ব্যাখ্যাকার এলেন কিভাবে ? কবিতায় তো এমন কোনো ইঙ্গিত নেই ? অর্থাৎ এই তিনশো বছরটা কবে থেকে কবে অবধি—তা বোঝার কোনো উপায় নেই। তাই ব্যাখ্যাকারী তাঁর সুবিধামতো ব্যাখ্যা করে পাঠকদের মগজধোলাই করার চেষ্টা করেছেন।
তৃতীয় লাইনের ব্যাখ্যা করতে পারেননি এরিকা। পারেন নি চতুর্থ লাইনেরও। অতএব ব্যাখ্যার সমস্তটাই বিরাট গোঁজামিলে ভরা।
নস্ট্রাডামুখের দশ সেঞ্চুরি পর্যন্ত কবিতাগুলো পড়ে এবং সে-সব কবিতার ব্যাখ্যাগুলো শুনে এ-কথা আমরা প্রতিটি যুক্তিবাদী মানুষ অবশ্যই বলতে পারি—নস্ট্রাডামুস ছিলেন ছোট- মাপের এক বুজবুক, আর তাঁর কবিতার ব্যাখ্যাকাররা এক একটি বিশাল বিশাল বুজরুক, এক একটি ধাড়ি ধাড়ি ধান্দাবাজ, এক একটি সমাজবিরোধী ।
কিছু কথা
♦ শোষণ ব্যবস্থাকে কায়েম রাখতেই মগজ ধোলাই চলছে
♦ দেশপ্রেম নিয়ে ভুল ধারনা সৃষ্টির চেষ্টা চলছে
♦ গণতন্ত্র যেখানে বর্বর রসিকতা
♦ জনসেবা নিয়ে স্বচ্ছতা থাকা অতি প্রয়োজনীয়
♦ যুক্তিবাদের আগ্রাসন প্রতিরোধে কাগুজে যুক্তিবাদীর সৃষ্টি
♦ যুক্তিবাদবিরোধী অমোঘ অস্ত্র ‘ধর্ম’
♦ যুক্তিবাদী আন্দোলন নিয়ে প্রহসন কতদিন চলবে?
♦ আন্দোলনে জোয়ার আনতে একটু সচেতনতা, আন্তরিকতা
অধ্যায়ঃ এক
♦ পত্র-পত্রিকায় সাড়া জাগানো কিছু ভবিষ্যদ্বাণী প্রসঙ্গে
অধ্যায়ঃ দুই- অশিক্ষা, পদে পদে অনিশ্চয়তা এবং পরিবেশ মানুষকে ভাগ্য নির্ভর করে
♦ অদৃষ্টবাদ যেখানে অশিক্ষা থেকে উঠে আসে
♦ অনিশ্চয়তা আনে ভাগ্য নির্ভরতা
♦ পরিবেশ আমাদের জ্যোতিষ বিশ্বাসী করেছে
♦ মানব জীবনে দোষ-গুণ প্রকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্যোতির্বিজ্ঞান ও জ্যোতিষশাস্ত্রের পার্থক্য
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦জ্যোতিষশাস্ত্রের বিচার পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
♦ জ্যোতিষীরা জ্যোতিষশাস্ত্রের পক্ষে যে-সব যুক্তি হাজির করেন
অধ্যায়ঃ আট
♦ জ্যোতিষশাস্ত্রের বিরুদ্ধে বিজ্ঞানের যুক্তি
অধ্যায়ঃ নয়
♦ মানব শরীরে রত্ন ও ধাতুর প্রভাব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ জ্যোতিষচর্চা প্রথম যেদিন নাড়া খেল
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ কিভাবে বার-বার মেলান যায় জ্যোতিষ না পড়েই
অধ্যায়ঃ বারো
♦ জ্যোতিষী ও অলৌকিক ক্ষমতার দাবিদারদের প্রতি চ্যালেঞ্জ
২য় পর্বঃ কিছু কথা
অধ্যায়- একঃ নস্ট্রাডামুসের সঙ্গে পরিচয়
♦ নস্ট্রাডামুসের ‘আশ্চর্য’ ভবিষ্যদ্বাণী কতটা ‘আশ্চর্যজনক’?
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
অধ্যায়ঃ বারো
♦ এ-দেশের পত্র-পত্রিকায় নস্ট্রাডামুস নিয়ে গাল-গপ্পো বা গুল-গপ্পো
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ৩য় খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ