“নানা মুনির নানা মত”, এটা শুধু প্রবাদ বাক্য নয়, প্রত্যক্ষ সত্য। কিন্তু উহা কেন। কেন কেন ধর্মে ধর্মে মতানৈক্য চিরকাল। হজরত ঈসা বললেন- কেহ তোমার এক গালে চড় মারলে তুমি তাকে অন্য গালও পেতে দাও, হজরত মুসা বললেন- চোখের বদলে চোখ, দাঁতের বদলে দাঁত, জীবনের বদলে জীবন লও। ইসলাম ধর্ম পরমেশ্বরের গুনকীর্তনে মুখর, আবার বৌদ্ধ ধর্মে ঈশ্বরের নাম গন্ধও নাই। দার্শনিকরাও দু শ্রেণীতে বিভক্ত- আস্তিক ও নাস্তিক। আবার কেউ বলেন- জগত সত্য এবং কেউ বলেন- জগত অলিক বা মায়া। বিজ্ঞানী নিউটনের মতে- জগতের সর্বত্র বিরাজ করে এক মহাকর্ষ শাক্তি। কিন্তু পরম বিজ্ঞানী আইনস্টাইন বলেন- “মহাকর্ষ” কোন একটা শক্তিই নয়।
বিভিন্ন কালে, বিভিন্ন দেশে, একই বিষয় সম্বন্ধে ভিন্ন ভিন্ন মতের প্রচার করে গেছেন মনিষীরা, যাতে সাধারণ মানুষ হয়ে পড়ে বিভ্রান্ত, সত্যাসত্য নির্ণয় করা হয় দুরুহ। কিন্তু একই বিষয়ে মতবাদের সংখ্যা যতটাই হোক না কেন, উহার মধ্যে সত্য কিন্তু একটাই। মানুষ চায় সেই “এক” এর সন্ধান। অর্থাৎ “সত্যের সন্ধান”। সেই একের সন্ধান করতে গিয়ে আমার মনে উদয় হচ্ছে কতগুলো প্রশ্ন। কিন্তু তাতে শান্তি পাই নাই। কেননা শান্তি প্রশ্নে থাকে না, থাকে উত্তরে। অর্থাৎ প্রশ্নে থাকে উৎকণ্ঠা, উত্তরে স্বস্তি।
আমি স্বস্তি লাভের আশায় চিন্তা করতে গিয়ে দেখেছি যে, কোন বিষয়ের সত্যাসত্য যাচাই করতে হলে তার মূল তত্ত্ব অর্থাৎ সৃষ্টি তত্ত্ব জানা আবশ্যক। আবার কোন “একটা” বিশেষ বিষয় সৃষ্টি পুরাপুরি তত্ত্ব জানা সম্ভব নয়। কেননা জগতের প্রত্যেকটি বিষয়ই একে অন্যের সাথে সম্বন্ধযুক্ত। তাও সামগ্রিক ভাবে সত্যের সন্ধান করতে হলে জানবার আবশ্যক হয়- বিশ্ব-সৃষ্টি-তত্ত্ব। তাই আমি উহা জানবার চেষ্টা করতে লাগলাম। কিন্তু সেখানেও সেই একই অবস্থা। অর্থাৎ সৃষ্টি তত্ত্ব সম্বন্ধে মতবাদের বাহুল্য। সত্যাসত্য মানব গোষ্ঠির মধ্যে সৃষ্টি-তত্ত্ব সম্বন্ধে নানাবিধ মতের এতই ছড়াছড়ি যে, তার কোনটাকেই “সৃষ্টি তত্ত্ব” বলে গ্রহণ করা যায় না- সব মিলে হয়ে পড়ে একটা “সৃষ্টি রহস্য”। “সত্যের সন্ধান” এর পরিপ্রেক্ষিতে সৃষ্টি- তত্ত্ব স্মব্দনহে এক খানা পুস্তক লেখবার ইচ্ছা আমার বহুদিন থেকে ছিল এবং ঐ সম্বন্ধে কত গুলো মতবাদ জানবার সুযোগও পেয়েছিলাম। সে সমস্ত সংযোজিত করে এক খানা পুস্তক লেখলাম। কিন্তু উহা সামগ্রিকভাবে “সৃষ্টি-তত্ত্ব” নয়, “সৃষ্টি-রহস্য”। তবে উহাতে আলোচিত মতবাদগুলো মনোনিবেশ পূর্বক পাঠ করলে সুধী পাঠক কৃতদয়ের কাছে “সৃষ্টি-তত্ত্ব”টা অবোধ্য থাকবার কথা নয়।
“সৃষ্টি-রহস্য” পুস্তকখানা বিগত ১৯/৪/৭২ তারিখে রচনা শুরু করে শেষ করেছি ২৫/৪/৭৭ তারিখে। উহার পান্ডুলিপি খানা বরিশাল ব্রজ মোহন কলেজের অধ্যাপক শ্রদ্ধেয় কাজী গোলাম কাদির সাহেব ও মাননীয় অধ্যাপক শামসুল হক সাহেব পান্ডুলিপি খানার যাবতীয় ভ্রম সংশোধনের প্রয়াস পেয়েছেন। বাংলা একাডেমীর প্রাক্তন মহাপরিচালক জনাব কবির চৌধুরী এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল বিভাগের অধ্যাপক ডঃ মনিরুজ্জামান মিঞা পান্ডুলিপি খানা পাঠ করেছেন এবং স্ব সাব অভিমত প্রদান করেছে। প্রকাশক অভাবে পুস্তক খানা এখনো প্রকাশ করা সম্ভব হয় নাই। উহার তিন খানা কপি আমার “গ্রন্থমালা” এ রক্ষিত আছে।
ভিখারীর আত্মকাহিনী- প্রথম খন্ড
♦ চর পূর্বাভাস ও জন্ম (১১৫৮-১৩০৭)
♦ উচ্চ শিক্ষার প্রচেষ্টা (১৩৩৫)
ভিখারীর আত্মকাহিনী- দ্বিতীয় খন্ড
♦ মোসলেম সমিতিঃ স্কুল প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষকতা (১৩৩৬-১৩৪১)
♦ ইঞ্জিনিয়ারিং শিখার উদ্যোগ ও মাতৃবিয়োগ (১৩৩৯)
♦ ভিখারীর আত্মকাহিনী- তৃতীয় খন্ড
♦ বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীর শিক্ষা
♦ অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদিরের সান্নিধ্যে
♦ ভিখারীর আত্মকাহিনী- পঞ্চম খন্ড
“আরজ আলী মাতুব্বর” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ