পৌরাণিক মতবাদ

আনুষঙ্গিকভাবে সূর্য সম্বন্ধে এযাবত বিজ্ঞানসম্মত কিছু কিছু তথ্য আলোচিত হইয়াছে। কিন্তু বিশেষভাবে উহা সম্বন্ধে কোনো আলোচনা করা হয় নাই। এখন সূর্য সম্বন্ধে কথঞ্চিৎ আলোচনা করা হইবে।

হিন্দুদের পুরাণে বর্ণিত আছে যে, কশ্যপ মুনির ঔরসে তৎপত্নী অদিতির গর্ভে সূর্যের জন্য হয়। সেইজন্য উহার আর এক নাম আদিত্য। ইনি রথে আরোহণ করিয়া আকাশ ভ্রমণ করেন এবং রথটিকে সাতটি ঘোড়া টানিয়া লয়। রথের সারথির নাম অরুণ।

পৌরাণিকেরা আরও বলেন যে, সূর্যদেব বিশ্বকর্মার কন্যা সংজ্ঞাকে বিবাহ করেন। তাহার গর্ভে ইহার বৈবশ্বতমনু ও যম নামে দুই পুত্র এবং যমুনা নাম্নী এক কন্যা জন্মে। অতঃপর সংজ্ঞা স্বামীর তেজ সহ্য করিতে না পারিয়া ছায়া নাম্নী এক রমণীর সৃজন করেন এবং তাহাকে স্বামীর নিকট রাখিয়া নিজে পলায়ন করেন। সূর্যের ঔরসে ছায়ার গর্ভে শনি নামে এক পুত্র ও তপতী নাম্নী এক কন্যা জন্মে। অতঃপর সূর্য প্রকৃত ঘটনা জানিতে পারিয়া সংজ্ঞার অন্বেষণে বাহির হন এবং উত্তর কুরুবর্ষে তাহাকে অশ্বিনীরূপে দেখিতে পান এবং সূর্য নিজেও অশ্বরূপ ধারণ করিয়া তাহার সহিত মিলিত হন (তিব্বতের উত্তর-পশ্চিমাংশ বা ইরান দেশকে অতিপূর্বকালে উত্তর কুরুবর্ষ বলা হইত)। সেই সময় হঁহার অশ্বিনীকুমার নামে দুই পুত্র জন্মে (ইহারা নাকি উভয়ে চিকিৎসাবিদ্যায় পারদর্শী ছিলেন)। অতঃপর বিশ্বকর্মা ঘঁহার তেজোহ্ৰাস করিয়া দিলে সংজ্ঞা পতিসহ সুখে বাস করিতে থাকেন। এতদ্ভিন্ন বানররাজ বালী ও সুগ্রীব এবং কুন্তির গর্ভজাত কর্ণও নাকি সূর্যের ঔরসজাত পুত্র।

শাস্ত্রোক্ত সূর্যদেবের স্ত্রী-পুত্ররা বোধ হয় যে, যমভিন্ন বুড়া হইয়া সকলেই মারা গিয়াছে। কিন্তু তাঁহার নিজের আজও যৌবনকাল।

হিন্দু মতে, লক্ষ্মী ও সরস্বতীর মতো সূর্যও একজন দেবতা। লক্ষ্মী দেবী মানুষকে ধনরত্ন, সরস্বতী বিদ্যা-বুদ্ধি এবং সূর্যদেব তাপ ও আলো দান করিয়া থাকেন। লক্ষ্মী বা সরস্বতী দেবী কাহাকে কি পরিমাণ ধনরত্ন বা বিদ্যা-বুদ্ধি দান করিয়াছেন, কোনো ব্যক্তি তাহা পরিমাপ করিয়া দেখিতে পারে নাই। কিন্তু সূর্যদেব যে তাপ ও আলো দান করিতেছেন, তাহা পরিমাপ করা হইয়াছে; তবে তাহার উপকারিতা অপরিমেয়। তাই হিন্দুগণ অন্যান্য দেব-দেবীর পূজা করেন। বৎসরে মাত্র একদিন, আর সূর্যদেবের পূজা করেন সংবৎসর, প্রতিদিন। এই পরমপূজ্য সূর্যদেবেরও সময় সময় একটি বিপদ আসে, তাহা হইল রাহুর গ্রাস বা গ্রহণ।

সূর্যগ্রহণ সম্বন্ধে হিন্দুদের পৌরাণিক আখ্যান এইরূপ — সমুদ্রমন্থনকালে রাহু ও কেতু নামক দৈত্যদ্বয় উপস্থিত না থাকায় উহারা সমুদ্রোখিত অমৃত-এর অংশ পায় নাই। যখন উহারা উপস্থিত হইল, তখন সমস্ত অমৃত দেবগণ বণ্টন করিয়া নিয়াছিলেন। অমৃতের অংশ না পাইয়া রাগান্ধ হইয়া কেতু চন্দ্রকে ও রাহু সূর্যকে গ্রাস করিয়া থাকে এবং কিয়ৎক্ষণ পরে আবার উদগীরণ করিয়া দেয়।

গ্রহণের সময় ইষ্টদেবের দুর্দশা দেখিয়া কিছুটা ভীত ও সন্ত্রস্ত হইয়া হিন্দুগণ উঁহার বিপদ ও দুর্দশা মোচনের জন্য নানারূপ কোশেশ করিয়া থাকেন। আর্যরা হয়তো মনে করিতেন যে, রাহুর গ্রাসে পতিত হইয়া সূর্যদেব অতিশয় কষ্ট ভোগ করিতেছেন। অচিরে তাহাকে গ্রহণমুক্ত করিতে না পারিলে হয়তো তিনি মারাও যাইতে পারেন এবং তৎফলে বিশ্বজীবের বিশেষত মানব জাতির অমঙ্গল ঘটিতে পারে। তাই মানবকল্যাণ ও সূর্যদেবের আশুমুক্তির উদ্দেশ্যে আর্যরা করিয়াছেন হুলুধ্বনি, ঘণ্টা ও কাঁসর বাদন, গঙ্গাস্নান এবং কুম্ভমেলায় যাওয়ার ব্যবস্থা। আর তাহাদের এক সারিতে দাঁড়াইয়া মুসলমানগণ করিয়াছেন কসুফ ও খসুফ নামক নামাজ আদায়ের ব্যবস্থা।

প্রাচীন মিশরীয়রা যখন নীলনদে নৌবিহার করিত, তখন আকাশের নীল রং দেখিয়া তাহারা ভাবিত –আকাশ যখন নীলবর্ণ, তখন উহাও হইবে একটি নদী বা সমুদ্র। কিন্তু ঐ নীল সাগরে সূর্যদেব চলে কি রকম? অত বড় সমুদ্র প্রত্যহ সঁতরাইয়া পার হওয়া সম্ভব নহে। বোধ হয় সূর্যদেব আমাদের মতোই রোজ রোজ নৌকায় ভ্রমণ করেন।

মুসলমানগণ বলিয়া থাকেন যে, সুর্যের বাহন নৌকা (বোধ হয় যে, ইহা প্রাচীন মিশরীয়দেরই অনুকরণ)। মুসলমানগণ আরও বলিয়া থাকেন যে, চতুর্থ আসমানে একখানা সোনার নৌকায় সূর্যকে রাখিয়া ৭০ হাজার ফেরেশতা সূর্যসহ নৌকাখানা টানিয়া পুর্ব হইতে পশ্চিম দিকে লইয়া যায়। সারারাত সুর্য আরশের নিচে বসিয়া আল্লাহর এবাদত করে এবং প্রাতে পুনরায় পূর্ব দিকে হাজির হয়।

এককালে মানুষের ধারণা ছিল যে, আকাশ একটি ছাদের মতো এবং চন্দ্র-সূর্য ও তারকারা তাহার গায়ে লটকানো আছে। তখন প্রশ্ন হইল, উহারা চলিতেছে কিভাবে? উত্তরে সেকালের পণ্ডিতগণ বলিলেন, আকাশ ঘোরে। আবার প্রশ্ন হইল, কেন ঘোরে? উত্তর হইল, বাতাসে। এই সম্বন্ধে আমাদের অঞ্চলে একটি পল্লীগীতি আছে। উহার ধূয়াটি এইরূপ —

হাওয়ার জোরে আসমান ঘোরে।
 সঙ্গে লইয়া শেতারা,
গুরুর বাক্য শুনিয়া লও তোরা।

ইহার পর আবার প্রশ্ন উঠিল, আকাশ ঘুরিলে, চন্দ্র, সূর্য ও তারকারা একই গতিতে চলিত, উহারা ভিন্ন ভিন্ন গতিতে চলে কেন? ইহার উত্তর দিলেন ধর্মগুরুরা, বলিলেন –উহাদিগকে স্বর্গদূতেরা টানে।

পরবর্তীকালের যুক্তিবাদীরা সাব্যস্ত করিলেন যে, আকাশ ঘোরে বটে, তবে উহা সংখ্যায় একটি নহে, কয়েকটি। তাহারা দেখিলেন যে, চন্দ্র, সূর্য ও তারাদের চলিবার গতি ভিন্ন ভিন্ন, সুতরাং উহারা ভিন্ন ভিন্ন তিন আকাশে অবস্থিত। আবার তারাদের মধ্যে চারিটি বিশেষ তারা (গ্রহ) যথা–শুক্র, মঙ্গল, বৃহস্পতি ও শনি– ইহাদের চলিবার গতি ভিন্ন ভিন্ন। সুতরাং উহারাও ভিন্ন ভিন্ন চারি। আকাশে অবস্থিত। কাজেই আকাশ সাতটি। বোধহয় যে, এইরূপ ধারণার ফলেই ‘সপ্ত আকাশ’ কথাটির উৎপত্তি হইয়াছিল। বলা বাহুল্য যে, তখনকার লোকে বুধ বা অন্যান্য গ্রহদের বিষয়ে কিছুই জানিতেন না।

আধুনিক মতবাদ

পুরানো ধারণা ও ধর্মীয় মতবাদের মূলে ছিল অলীক কল্পনা ও অন্ধবিশ্বাস। অন্ধবিশ্বাসের মূলে প্রথম আঘাত দিলেন পিথাগোরাস নামক একজন গণিতজ্ঞ প্রায় আড়াই হাজার বৎসর আগে। তিনি বলিলেন, সূর্য পৃথিবীকে আবর্তন করে না, সূর্যকে আবর্তন করে পৃথিবী। প্রায় চারিশত বৎসর পূর্বে পুরানো ভ্রান্ত মতবাদের অপনোদন করিয়া বহুল খাঁটি সত্যের সন্ধান দেন রোম বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কোপারনিকাস। ইহার একশত বৎসর পরে গ্যালিলিও দূরবীন আবিষ্কার করিয়া জ্যোতিষ্কলোকের জটিল রহস্যোদঘাটনের দ্বার খুলিয়া দেন। ধর্মীয় কোনো মতবাদের বিরুদ্ধে সত্যের সন্ধান করা ছিল তখন গুরুতর অপরাধ (কতকটা আজও)। কিন্তু সত্যের সন্ধানী গ্যালিলিও মানুষের জ্ঞানসমুদ্রে যে ঢেউ তুলিয়া গিয়াছেন, তাহা আজ বিরাট আকার ধারণ করিয়াছে এবং সেই আঘাতে আজ অন্ধবিশ্বাসের বেলাভূমিতে গুরুতর ভাঙ্গন ধরিয়াছে।

আধুনিক সৌরবিজ্ঞানীগণ সূর্য সম্বন্ধে এত অধিক তথ্য সংগ্রহ করিয়াছেন যে, এই ক্ষুদ্র পুস্তকে সেই সব আলোচনা করা অসম্ভব। এইখানে মাত্র গুটিকতক তথ্যের সারাংশের সংক্ষিপ্ত বিবরণ প্রদত্ত হইল।

আকার- আপাতদৃষ্টিতে সূর্যকে একখানা থালার মতো চ্যাপ্টা-গোল দেখা যায়। কিন্তু আসলে সূর্য থালাকৃতি নহে, ফুটবলের মতো গোল। তবে আয়তনে বৃহৎ এক অগ্নিপিণ্ড।

আয়তন- আমাদের পৃথিবীর তুলনায় সূর্য আয়তনে প্রায় ১৩ লক্ষ গুণ বড়। সূর্যের ব্যাস প্রায় ৮ লক্ষ ৬৪ হাজার মাইল। ইহা পৃথিবীর ব্যাসের প্রায় ১০৮ গুণ। পৃথিবী হইতে সূর্য আয়তনে যত বড়, ওজনে তত বেশি নহে। ইহার কারণ এই যে, যে বাষ্পরাশি দ্বারা সূর্যের দেহ গঠিত, তাহার ওজন পৃথিবীর মাটির ওজনের ১ অংশ মাত্র। তথাপি সূর্যের ওজন প্রায় ২ x ১০২৭ টন। অর্থাৎ দুই-এর ডাহিনে সাতাশটি শূন্য।

আমাদের পৃথিবীর পরিধি প্রায় ২৫ হাজার মাইল। ঘণ্টায় ৫০ মাইল বেগবিশিষ্ট কোনো যানে আরোহণ করিয়া একবার ইহাকে প্রদক্ষিণ করিতে সময় লাগে প্রায় ২১ দিন। কিন্তু ঐরকম বেগবিশিষ্ট কোনো যানে আরোহণ করিয়া সূর্যকে প্রদক্ষিণ করিতে চাহিলে সময় লাগিবার কথা প্রায় ৭ বৎসর। কিন্তু এত বড় বস্তুটিকেও দেখা যায় একখানা থালার মতো। ইহার কারণ এই যে, সূর্য বহুদূরে অবস্থিত।

দূরত্ব- পৃথিবী হইতে সূর্যের মোটামুটি দূরত্ব ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল। এই দূরত্বটি লিখিতে বা পড়িতে সময় লাগে দুই-এক সেকেণ্ড মাত্র। কিন্তু পূর্বোক্ত বেগবিশিষ্ট কোনো যানে আরোহণ করিয়া পৃথিবী হইতে সূর্যে পৌঁছিতে সময় লাগিবে প্রায় ২১৩ বৎসর। অর্থাৎ পলাশীর যুদ্ধের সময় (১৭৫৭) পৃথিবী হইতে যাত্রা করিতে পারিলে সূর্যে পৌঁছান যাইত বাংলাদেশ স্বাধীন হইবার আগের বৎসর (১৯৭০)।

অবস্থা- সাধারণভাবে সূর্যকে একটি উজ্জ্বল নিরেট পদার্থ বলিয়া মনে হয়। কিন্তু সূর্য একটি নিরেট পদার্থ নহে, উহার সমস্তটিই জ্বলন্ত বাম্প। সৌরবিজ্ঞানীগণ বলেন যে, সূর্যের আসল দেহটি সম্ভবত তরল বা ঘন বাষ্প দিয়া গড়া এবং উহা অনুজ্জ্বল। কিন্তু সাধারণত উহা আমাদের নজরে পড়ে না। আমাদের পৃথিবীকে ঘিরিয়া যেমন একটি বায়ুমণ্ডল আছে, সূর্যকে ঘিরিয়া সেইরূপ তিনটি বাষ্পীয় আবরণ আছে। যথা –আলোকমণ্ডল (Photosphere), বর্ণমণ্ডল (Chromosphere) ও ছটামণ্ডল (Corona)।

আলোকমণ্ডল- পৃথিবীর নদী-সমুদ্ৰাদির জল যেমন বাষ্প হইয়া আকাশে উঠিয়া ঠাণ্ডা হইয়া মেঘে রূপান্তরিত হয়, সূর্যের আলোকমণ্ডল এইরকম মেঘের মতোই কিছু। তবে উহা পৃথিবীর মেঘের মতো ঠাণ্ডা ও অনুজ্জ্বল নহে। উহা সর্বদা জ্বলিয়া-পুড়িয়া প্রচণ্ড তাপ দেয়। সূর্য হইতে আমরা যে তাপ ও আলো পাইয়া থাকি, তাহা এই আলোকমণ্ডল হইতেই আসে। এই তাপ সম্বন্ধে কোনো একজন বিজ্ঞানী বলিয়াছেন যে, যদি সমস্ত সূর্যটিকে ৭০ ফুট গভীর বরফ দ্বারা মোড়া হয়, তবে সূর্যের তাপে তাহা এক মিনিটে গলিয়া যাইতে পারে। আর একজন বিজ্ঞানী বলিয়াছেন যে, সূর্যপৃষ্ঠের ৩ x ৩ ফুট জায়গা হইতে এক ঘণ্টায় যে পরিমাণ তাপ নির্গত হয়, পৃথিবীতে ঐ পরিমাণ তাপ উৎপন্ন করিতে হইলে কয়লা পোড়াইতে হইবে ১৭০ মণ।

উনুনের আগুনের তাপ সাধারণত গজখানেকের বেশি দূরে ছড়ায় না এবং শহর-বন্দরে যে সব বড় বড় অগ্নিকাণ্ড ঘটিয়া থাকে, তাহার তাপও দুই-একশত গজের বেশি দূরে অনুভূত হয় না। জাপানের নাগাসাকি ও হিরোশিমায় পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরণের ফলে যে অভূতপূর্ব উত্তাপের সৃষ্টি হইয়াছিল, তাহার রেশও বাংলাদেশে আসিয়া পৌঁছে নাই। কিন্তু নয় কোটি ত্রিশ লক্ষ মাইল দূর হইতে আসিয়া সূর্যোত্তাপ আমাদের অতিষ্ঠ করিয়া তোলে। বিজ্ঞানীগণ বলেন যে, আলোকমণ্ডলের তাপ অর্থাৎ সূর্যের পৃষ্ঠের তাপের পরিমাপ ৬ হাজার ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড এবং কেন্দ্রপ্রদেশের তাপ ৪ কোটি ডিগ্রী সেন্টিগ্রেড।

কোনোরূপ তৈলাক্ত পদার্থ বা কাষ্ঠাদি জ্বালাইয়া আমরা অগ্নি উৎপাদনপূর্বক তাহার আলো ব্যবহার করিয়া থাকি এবং বিজ্ঞানীগণ বৈদ্যুতিক আলো, গ্যাসবাতির আলো ইত্যাদি অনেক রকম আলো উৎপন্ন করেন। কিন্তু সূর্যালোকের সমকক্ষ আলো আজ পর্যন্ত কেহই সৃষ্টি করিতে পারেন নাই। কেহ কেহ বলেন যে, সূর্যের আলো ছয় লক্ষ পূর্ণচন্দ্রের আলোকের সমান।

সৌরকলঙ্ক— চন্দ্রের কলকের ন্যায় সূর্যেরও কলঙ্ক আছে। এ সম্বন্ধে জ্যোতির্বিদগণ বলেন যে, সূর্যের আলোকমণ্ডলে সর্বদা আগুনের ঝড় হয় এবং সেই ঝড়ের তাণ্ডবে আলোকমণ্ডলের কোনো কোনো স্থান ছিন্ন-বিচ্ছিন্ন হইয়া যায়। সেই বিচ্ছিন্ন স্থান বা ফাঁক দিয়া সময়ে সময়ে সূর্যের অনুজ্জ্বল আসল দেহ দৃষ্টিগোচর হয়। ইহাই সূর্যের কলক। চন্দ্রের কলঙ্কের ন্যায় সূর্যের কোনো কলক চিরস্থায়ী নহে। সূর্যপৃষ্ঠে কোথাও কোনো কলঙ্ক দেখা দিলে উহা কয়েক দিন বা কয়েক মাস থাকিয়া মিলাইয়া যায়, আবার কোথায়ও নূতন কলঙ্ক দেখা দেয়। এগারো বৎসর পর পর সৌরকলক বৃদ্ধি পাইয়া থাকে। কিন্তু কেন যে এগারো বৎসরে একবার সৌরকলঙ্ক বাড়ে, তাহা এখনও অজ্ঞাত।

স্বাভাবিক অবস্থায় সূর্যের আলোকমণ্ডল হইতে যে পরিমাণ তাপ ও আলো বিকীর্ণ হইয়া থাকে, সৌরকলঙ্ক বৃদ্ধি পাইলে তখন আর সেই পরিমাণ তাপ ও আলো বিকীর্ণ হইতে পারে না, কিছুটা ব্যতিক্রম ঘটিয়া থাকে। শোনা যায় যে, কোনো একজন বিজ্ঞানী একটি গাছের গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করিবার সময়ে দেখিলেন যে, খুঁড়িটির কেন্দ্র হইতে স্তরে স্তরে তাহার আয়তন বৃদ্ধি পাইয়াছে। স্তরগুলি সম্ভবত খুঁড়িটির বার্ষিক বৃদ্ধির চিহ্ন। তিনি আরও দেখিলেন যে, প্রতি এগারোটি স্তরের পর এমন একটি বিশেষ স্তর দৃষ্ট হয়, যাহা অন্য সকল স্তর হইতে ভিন্ন ধরণের। তিনি জানিতেন যে, প্রতি এগারো বৎসর পর পর সৌরকলঙ্ক বাড়ে। তাই তিনি সিদ্ধান্ত করিলেন যে, সেই গুঁড়িটির ঐ বিশেষ স্তরগুলি হয়তো সৌরকলঙ্কেরই প্রতিক্রিয়ার ফল। সৌরকলঙ্ক পৃথিবীর আবহাওয়ার উপর প্রভাব বিস্তার করিয়া থাকে।

বিজ্ঞানীগণ দেখিয়াছেন যে, যে সকল কলঙ্ক মাসাধিককাল স্থায়ী হইয়া থাকে, উহারা সূর্যের এক প্রান্ত হইতে উদিত হইয়া অপর প্রান্তে অস্ত যায়। তাহারা আরও লক্ষ্য করিয়াছেন যে, কোনো একটি বিশেষ কলক একবার সূর্যকে আবর্তন করিয়া ২৭ দিনে পুনঃ স্বস্থানে ফিরিয়া আসে। তাই তাঁহারা বলেন যে, পৃথিবীর আহ্নিক গতির ন্যায় সূর্যেরও একটি গতি আছে। নিজ মেরুদণ্ডের উপর একবার আবর্তিত হইতে যেমন পৃথিবীর সময় লাগে ২৪ ঘণ্টা, তেমন সূর্যের লাগে ২৭ দিন। আপাতদৃষ্টিতে স্থির দেখা গেলেও আসলে সূর্য আবর্তনশীল।

বর্ণমণ্ডল ও ছটামণ্ডল- আমরা সূর্যের যে চেহারা দেখিতে পাই, তাহা হইল তাহার আসল দেহের উপর আলোকমণ্ডলের আচ্ছাদন। ইহার উপর তাহার আরও দুইটি আবরণ আছে। কিন্তু আলোকমণ্ডলের প্রচণ্ডতায় তাহা আমাদের নজরে পড়ে না। সূর্যগ্রহণের সময়ে যখন আলোকমণ্ডল ঢাকা পড়ে, তখন অল্প সময়ের জন্য বর্ণমণ্ডল ও ছটামণ্ডলকে দূরবীক্ষণ দ্বারা স্পষ্ট দেখা যায়। বর্ণমণ্ডলের গভীরতা ৩–১০ হাজার মাইল। দাউদাউ করিয়া সেখানে আগুন জ্বলে। সময়ে সময়ে তাহার কোনো কোনো শিখা সূর্যের আকাশে ৫০ হাজার মাইল পর্যন্ত উর্ধে উঠিয়া থাকে। ১৮৯২ খ্রীস্টাব্দে যে সূর্যগ্রহণটি হইয়াছিল, তখন বিজ্ঞানীগণ একটি শিখাকে প্রায় আড়াই লক্ষ মাইল উঁচু হইতে দেখিয়াছিলেন। বাস্তবিকই সূর্যের দেহটি আগুন দিয়া গড়া এবং সেখানে নিয়ত চলিতেছে আগুনের প্রবল বন্যা।

বর্ণমণ্ডলের পরে আছে ছটামণ্ডল। এইখানেও নানাবিধ বাষ্প জ্বলিয়া থাকে। তবে ইহার তাপ অপেক্ষাকৃত মৃদু। অন্য দুই মণ্ডলের ন্যায় এই মণ্ডলের গভীরতা পাঁচ-দশ হাজার মাইল নহে, লক্ষ লক্ষ মাইল ইহার গভীরতা। ১৮৭৮ সালে বিজ্ঞানীরা সূর্যগ্রহণের সময়ে সূর্যের এক কোটি মাইল দূরে ছটামণ্ডল দেখিয়াছিলেন।

উপকারিতা

বিজ্ঞানীদের মতে, সৌররাজ্যের বস্তুসমূহের বৃহত্তম গ্রহ-উপগ্রহ হইতে ক্ষুদ্রতম অণু-পরমাণু পর্যন্ত, সবই সূর্য হইতে উদ্ভূত, এমনকি প্রাণও। সৌরশক্তির প্রভাবে আবহাওয়ার বিবর্তনের ফলে এককালে পৃথিবীতে এমন একটি অবস্থার সৃষ্টি হইয়াছিল, যখন সাগরজলে সৃষ্টি হইয়াছিল কলয়ডাল সলিউশন নামক আদিম জৈব পদার্থের। সেই জৈব পদার্থটি হইতে ধাপে ধাপে নানাবিধ জীবের উৎপত্তি হইয়াছে এবং কিভাবে হইয়াছে, তাহার কিছু আলোচনা করা হইবে পরবর্তী এক পরিচ্ছেদে। কিন্তু শুধু জীবন উৎপত্তির জন্যই নহে, জীবনের রক্ষার জন্যও সৌরশক্তি অপরিহার্য।

প্রত্যক্ষভাবে সূর্য আমাদের দুইটি বস্তু দান করিয়া থাকে –তাপ ও আলো। এই আলোই জীবের চক্ষু দান করিয়াছে, আবার সেই চক্ষু আলোর মাধ্যমে জগত প্রত্যক্ষ করিতেছে। এই বিষয়টি বোধ হয় আর একটু বাড়াইয়া বলা আবশ্যক। অ্যামিবা বা স্পঞ্জের মতো ইন্দ্রিয়বিহীন জীবের পর্যায় পার হইয়া যে সকল জীব আলোর সংস্পর্শে বাস করিতেছিল, তাহাদের দেহের এক শ্রেণীর কোষ (cell) আলোক গ্রহণে উন্মুখ হয় এবং লক্ষ লক্ষ বৎসর সমবেত চেষ্টার ফলে দুর্শনেন্দ্রিয়ের উৎপত্তি হয়। পক্ষান্তরে যাহারা আলোর সংস্পর্শলাভে বঞ্চিত হইয়াছিল, তাহারা হয় চক্ষুহীন বা অন্ধ। যেমন কেঁচো, উইপোকা ইত্যাদি। এই দর্শনেন্দ্রিয়ের দ্বারা আলোর মাধ্যমে জীব বিশেষত মানুষ উপভোগ করিতেছে জগতের যত সব রূপমাধুরী। হীরকের ঔজ্জ্বল্য, স্বর্ণের চাকচিক্য, পুষ্পের সৌন্দর্য ও রমণীর কান্তি –আলোকের অভাবে সমস্তই মিশিয়া যাইত এক অব্যক্ত অন্ধকারে। পক্ষান্তরে সে অন্ধকার উপভোগ করিবার মতো একটি প্রাণীও থাকিত না পৃথিবীতে, যদি সূর্য তাপ বিতরণ না করিত।

সূর্যের তাপে সমুদ্ৰাদির জল বাষ্পে পরিণত হইয়া আকাশে উঠিয়া মেঘ হয় এবং সূর্যের তাপে বায়ু গতিশীল হয়। তাই বায়ুপ্রবাহের দ্বারা জলভাগের উপরিস্থিত মেঘরাশি স্থলভাগে নীত হয় এবং বৃষ্টিপাত হয়। সেই বৃষ্টিপাতের ফলে ভূপৃষ্ঠে নানারূপ তরু-তৃণ জন্মায় এবং সূর্যালোকপ্রাপ্তির ফলে বৃক্ষপত্রে ক্লোরোফিল জন্মিয়া উদ্ভিদের খোরাকি জোগায় ও দেহ পুষ্ট করে (পরবর্তীতে ক্লোরোফিল সম্বন্ধেও আলোচনা করা হইবে)। নিরামিষভোজী জীবেরা সেই তরুরাজির পাতা-পল্লব ও ফলমূলাদি ভক্ষণ করিয়া জীবন ধারণ করে এবং আমিষভোজী জীবেরা নিরামিষভোজীদের মাংস ভক্ষণ করিয়া বাঁচিয়া থাকে। মূলত পৃথিবীকে সজীব করিয়া রাখিয়াছে একমাত্র সূর্য।

শক্তি

সূর্য নিয়ন্ত্রণ করে গ্রহজগতের বিশেষত পৃথিবীর সব কিছু –প্রত্যক্ষ বা অপ্রত্যক্ষভাবে, মুখ্য বা গৌণভাবে। বলা যায় যে, সৌরজগতের পার্থিব বা অপার্থিব যাবতীয় শক্তির উৎসই হইল সূর্য। শক্তি বিকাশের কয়েকটি বিশেষ রূপ আছে। যেমন –তাপশক্তি, আলোকশক্তি, বিদ্যুৎশক্তি, মহাকর্ষশক্তি ইত্যাদি। এইখানে সূর্যের মহাকর্ষশক্তি সম্বন্ধে কিছু আলোচনা করা যাইতেছে।

মহাকর্ষের নিয়ম মাফিক জগতের প্রতিটি বস্তু একে অন্যকে আকর্ষণ করে। আকর্ষণী শক্তির ন্যূনাধিক্য নির্ভর করে বস্তুদ্বয়ের ওজন ও দূরত্বের উপর। যে বস্তুর ওজন যত বেশি, তাহার আকর্ষণী শক্তি তত অধিক। পক্ষান্তরে বস্তুদ্বয়ের দূরত্ব বৃদ্ধি পাইলে আকর্ষণী শক্তি কমিয়া যায়। ভূপৃষ্ঠের যাবতীয় বস্তুর চেয়ে পৃথিবী ওজনে ভারি। তাই ভূপৃষ্ঠের সকল বস্তুকে সে নিজের কোলের দিকে টানিয়া রাখিতেছে, এমনকি বাতাসকেও। তাই সম্ভব হইয়াছে ভূপৃষ্ঠে জীবাদি বস্তুসমূহের স্থিতি। পৃথিবী যদি টানিয়া না রাখিত, তবে বায়ুসমেত মানুষ, পশু-পাখি ও বৃক্ষাদি নিমেষে মহাশূন্যে উড়িয়া যাইত, এমনকি বালুকণাও। আর যদি বায়ু থাকিত আকর্ষণমুক্ত, তবে পৃথিবীর আহ্নিকগতির ফলে ভূপৃষ্ঠে প্রতি ঘণ্টায় ১,০৪১২ মাইল বেগে পশ্চিম দিকগামী ঝড় বহিত। কেননা পৃথিবীর আহ্নিকগতি বা আবর্তনের ফলে ভূপৃষ্ঠ উক্ত বেগে পূর্বদিকে সরিয়া যাইতেছে। সেই প্রলয়ঙকরী ঝড়ের মুখে ভূপৃষ্ঠে টিকিয়া থাকিত না কোনো পর্বতও। বস্তুত পৃথিবীর সমস্ত সৌরভ-গৌরবের মূলে নিহিত রহিয়াছে তাহার মহাকর্ষশক্তি। অনুরূপভাবে সূর্য স্বীয় আকর্ষণে বাঁধিয়া তাহার চতুর্দিকে পৃথিবীকে ঘুরাইতেছে। আর তাহারই ফলে হইতেছে দিন রাত্রি, ঋতু-বৎসর এবং বজায় থাকিতেছে পৃথিবীতে জীববাসের অনুকূল আবহাওয়া। যদি সূর্যের আকর্ষণ না থাকিত, তবে পৃথিবী ছুটিয়া চলিত অনির্দিষ্ট মহাশূন্যে। সেখানে পৃথিবী হইত অন্ধকার শৈত্যরাজ্যে জনপ্রাণীহীন একটি বস্তুপিণ্ড।

বলিতে শুরু করিয়াছিলাম সূর্যের আকর্ষণশক্তির কথা। কোনো ব্যক্তি এক পোয়া বা এক সের ওজনের কোনো একটি পদার্থে রশি বাঁধিয়া নিজের চারিপার্শ্বে উহাকে চক্রাকারে ঘুরাইতে পারে, কিন্তু সেই ব্যক্তি নিজের বা তাহার চেয়ে বেশি ওজনের কোনো পদার্থকে ঐরূপ ঘুরাইতে পারিবে না, ঘুরাইতে চাহিলে সে নিজেই স্থানচ্যুত হইবে। সূর্য একস্থানে দাঁড়াইয়া তাহার আকর্ষণের রশিতে বাধিয়া গোটা এগারো গ্রহকে প্রতিনিয়ত ঘুরাইতেছে। ইহা সহজ ব্যাপার নহে। কোলের কাছে যে বুধ গ্রহটি আছে, তাহাকে ঘুরানো সহজ হইলেও প্রায় ২৮০ কোটি মাইল দূরে অবস্থিত ১৭টি পৃথিবীর সমান ওজনের নেপচুন গ্রহটিকে ঘুরাইতে যে কতটুকু শক্তির দরকার, তাহা ভাবিলে বিস্ময়ে অভিভূত হইতে হয়। সূর্যের শক্তি কম্পনার অতীত। কিন্তু সূর্যগ্রহণের ব্যাখ্যাকম্পে পৌরাণিকগণ এত অধিক শক্তিশালী সূর্যটিরও রাহুর হস্তে পরাজয় ঘটাইয়াছেন। বস্তুত সূর্যগ্রহণের আধুনিক তথ্য নিম্নরূপ।

আকাশ বিজ্ঞানীগণ বলেন যে, সূর্যকে কেন্দ্র করিয়া প্রায় ৯ কোটি ৩০ লক্ষ মাইল দূরে থাকিয়া ৩৬৫ দিন ৬ ১/৪ ঘণ্টায় পৃথিবী একবার সূর্যকে প্রদক্ষিণ করিতেছে এবং পৃথিবীকে কেন্দ্রে রাখিয়া প্রায় ২ লক্ষ ৩৯ হাজার মাইল দূরে থাকিয়া প্রায় ২৯ ১/২ দিনে চন্দ্র একবার পৃথিবীকে প্রদক্ষিণ করিতেছে। এই ঘোরাফেরায় কোনো কোনো সময়ে চন্দ্র, সূর্য ও পৃথিবী এক সরলরেখায় দাঁড়ায়। সেই সময়ে পূর্ণিমা তিথি হইলে চন্দ্র ও সূর্যের মাঝখানে পৃথিবী অবস্থান করার ফলে পৃথিবীর ছায়া চন্দ্রে পতিত হইয়া চন্দ্রকে ঢাকিয়া ফেলে, আমরা উহাকে চন্দ্রগ্রহণ বলি এবং ঐ সময়ে অমাবস্যা তিথি হইলে পৃথিবী ও সূর্যের মাঝখানে চন্দ্র দাঁড়াইয়া সূর্যকে ঢাকিয়া রাখে, আমরা উহাকে সূর্যগ্রহণ বলি। আসলে চন্দ্র ও সূর্যগ্রহণ হইল পৃথিবী ও চন্দ্রের ছায়ামাত্র; রাহু, কেতু বা অন্য কিছু নহে।

মৃত্যু

পৌরাণিকগণ বলেন –ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, কার্তিক, গণেশ, ইন্দ্র, চন্দ্র, সূর্য এবং লক্ষ্মী, সরস্বতী, কালী, দুর্গা ইত্যাদি দেব-দেবীগণ সকলেই অমৃত পান করিয়া অমর হইয়াছিলেন। কিন্তু চন্দ্র ও সূর্যদেব ছাড়া বিশ্বের কোথায়ও উহাদের অন্য কাহারও কোনো খোঁজ-খবর মিলিতেছে না। সম্ভবত উহাদের সকলেরই তিরোধান ঘটিয়াছে। তবে কি চন্দ্র ও সূর্যদেব বাস্তবিকই অমর?

আকাশ বিজ্ঞানীগণ বলেন যে, চন্দ্রদেবের মৃত্যু ঘটিয়াছে লক্ষ লক্ষ বৎসর পূর্বে। আমরা এখন দেখিতেছি মৃত চন্দ্রের ককাল। চন্দ্রদেবের গায়ে এখন তাপ নাই, রক্ত (জল) নাই; অধিকন্তু তাহার শ্বাস-প্রশ্বাস (বায়ু) নাই। আর জল, বায়ু ও তাপ নাই বলিয়া চন্দ্রদেবের মরদেহে একটি কীটও (প্রাণী) নাই। চন্দ্রদেব এখন বাস্তবিকই নির্জীব। সূর্যদেবের মৃত্যু সম্বন্ধে বিজ্ঞানভিত্তিক আলোচনা রহিয়াছে ‘প্রলয়’ পরিচ্ছেদে।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x