১৩. সূরাঃ রা’দ

আয়াতঅবতীর্ণঃ মক্কা
আয়াত সংখ্যাঃ ৪৩
রুকূঃ ০৩
০১

المر ۚ تِلْكَ آيَاتُ الْكِتَابِ ۗ وَالَّذِي أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ الْحَقُّ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يُؤْمِنُونَ

আলিফ-লাম-মীম-রা; এগুলি কুরআনের আয়াত; যা তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তা-ই সত্য; কিন্তু অধিকাংশ মানুষ এতে বিশ্বাস করে না।

০২

اللَّهُ الَّذِي رَفَعَ السَّمَاوَاتِ بِغَيْرِ عَمَدٍ تَرَوْنَهَا ۖ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ ۖ وَسَخَّرَ الشَّمْسَ وَالْقَمَرَ ۖ كُلٌّ يَجْرِي لِأَجَلٍ مُّسَمًّى ۚ يُدَبِّرُ الْأَمْرَ يُفَصِّلُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُم بِلِقَاءِ رَبِّكُمْ تُوقِنُونَ

আল্লাহই ঊর্ধ্বদেশে আকাশমণ্ডলী স্থাপন করেছেন স্তম্ভ ব্যতীত, তোমরা এটা দেখছো; অতঃপর তিনি আরশে সমুন্নীত হলেন এবং সূর্য ও চন্দ্রকে নিয়মানুবর্তী করলেন; প্রত্যেক নির্দিষ্টকাল পর্যন্ত আবর্তন করে, তিনি সকল বিষয় নিয়ন্ত্রণ করেন এবং নিদর্শনসমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করেন, যাতে তোমরা তোমাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ সম্বন্ধে নিশ্চিত বিশ্বাস করতে পার।

০৩

وَهُوَ الَّذِي مَدَّ الْأَرْضَ وَجَعَلَ فِيهَا رَوَاسِيَ وَأَنْهَارًا ۖ وَمِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ جَعَلَ فِيهَا زَوْجَيْنِ اثْنَيْنِ ۖ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَتَفَكَّرُونَ

তিনিই ভূতলকে বিস্তৃত করেছেন এবং ওতে পর্বত ও নদী সৃষ্টি করেছেন এবং প্রত্যেক প্রকারের ফল সৃষ্টি করেছেন জোড়ায় জোড়ায়; তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন; এতে অবশ্যই নিদর্শন রয়েছে চিন্তাশীল সম্প্রদায়ের জন্যে।

০৪

وَفِي الْأَرْضِ قِطَعٌ مُّتَجَاوِرَاتٌ وَجَنَّاتٌ مِّنْ أَعْنَابٍ وَزَرْعٌ وَنَخِيلٌ صِنْوَانٌ وَغَيْرُ صِنْوَانٍ يُسْقَىٰ بِمَاءٍ وَاحِدٍ وَنُفَضِّلُ بَعْضَهَا عَلَىٰ بَعْضٍ فِي الْأُكُلِ ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَعْقِلُونَ

পৃথিবীতে রয়েছে পরস্পর সংলগ্ন ভূ-খন্ড; ওতে আছে আঙ্গুর-কানন, শস্যক্ষেত্র, একাধিক শীষ বিশিষ্ট অথবা এক শীষ বিশিষ্ট খেজুর বৃক্ষ, সিঞ্চিত একই পানিতে এবং স্বাদে ওগুলির কতককে কতকের উপর আমি শ্রেষ্ঠত্ব দিয়ে থাকি, অবশ্যই বোধশক্তি সম্পন্ন সম্প্রদায়ের জন্যে এতে রয়েছে নিদর্শন।

০৫

وَإِن تَعْجَبْ فَعَجَبٌ قَوْلُهُمْ أَإِذَا كُنَّا تُرَابًا أَإِنَّا لَفِي خَلْقٍ جَدِيدٍ ۗ أُولَـٰئِكَ الَّذِينَ كَفَرُوا بِرَبِّهِمْ ۖ وَأُولَـٰئِكَ الْأَغْلَالُ فِي أَعْنَاقِهِمْ ۖ وَأُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

যদি তুমি বিস্মিত হও, তবে বিস্ময়ের বিষয় তাদের কথাঃ (মৃত্যুর পর) মাটিতে পরিণত হওয়ার পরও কি আমরা নতুন জীবন লাভ করবো? ওরাই ওদের প্রতিপালকের অস্বীকার করে এবং ওদেরই গলদেশে থাকবে লৌহ শৃঙ্খল, ওরাই জাহান্নামী এবং সেখানে ওরা চিরস্থায়ীভাবে অবস্থানকারী।

০৬

وَيَسْتَعْجِلُونَكَ بِالسَّيِّئَةِ قَبْلَ الْحَسَنَةِ وَقَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهِمُ الْمَثُلَاتُ ۗ وَإِنَّ رَبَّكَ لَذُو مَغْفِرَةٍ لِّلنَّاسِ عَلَىٰ ظُلْمِهِمْ ۖ وَإِنَّ رَبَّكَ لَشَدِيدُ الْعِقَابِ

কোন কল্যাণের পূর্বে তারা তোমাকে শাস্তি ত্বরান্বিত করতে বলে, যদিও তাদের পূর্বে এর বহু দৃষ্টান্ত গত হয়েছে; মানুষের যুলুম-অত্যাচার সত্ত্বেও তোমার প্রতিপালক তো মানুষের প্রতি ক্ষমাশীল এবং তোমার প্রতিপালক তো শাস্তি দানেও কঠোর।

০৭

وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ ۗ إِنَّمَا أَنتَ مُنذِرٌ ۖ وَلِكُلِّ قَوْمٍ هَادٍ

যারা কুফরী করেছে তারা বলেঃ তার প্রতিপালকের নিকট হতে তার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয়না কেন? (হে নবী সঃ) (কথা এই যে,) তুমি তো শুধুমাত্র ভয় প্রদর্শনকারী এবং প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যেই পথ প্রদর্শক রয়েছে।

০৮

اللَّهُ يَعْلَمُ مَا تَحْمِلُ كُلُّ أُنثَىٰ وَمَا تَغِيضُ الْأَرْحَامُ وَمَا تَزْدَادُ ۖ وَكُلُّ شَيْءٍ عِندَهُ بِمِقْدَارٍ

প্রত্যেক নারী যা গর্ভে ধারণ করে এবং জরায়ুতে যা কিছু কমে ও বাড়ে আল্লাহ তা জানেন এবং তাঁর বিধানে প্রত্যেক বস্তুরই এক নির্দিষ্ট পরিমাণ আছে।

০৯

عَالِمُ الْغَيْبِ وَالشَّهَادَةِ الْكَبِيرُ الْمُتَعَالِ

যা অদৃশ্য ও যা দৃশ্যমান তিনি তা অবগত; তিনি মহান, সর্বোচ্চ মর্যাদাবান।

১০

سَوَاءٌ مِّنكُم مَّنْ أَسَرَّ الْقَوْلَ وَمَن جَهَرَ بِهِ وَمَنْ هُوَ مُسْتَخْفٍ بِاللَّيْلِ وَسَارِبٌ بِالنَّهَارِ

তোমাদের মধ্যে যে কথা গোপন রাখে এবং যে তা প্রকাশ করে, রাত্রে যে আত্মগোপন করে এবং দিবসে যে প্রকাশ্যে বিচরণ করে, তারা সমভাবেই আল্লাহর জ্ঞান গোচর (রয়েছে)।

১১

لَهُ مُعَقِّبَاتٌ مِّن بَيْنِ يَدَيْهِ وَمِنْ خَلْفِهِ يَحْفَظُونَهُ مِنْ أَمْرِ اللَّهِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَا يُغَيِّرُ مَا بِقَوْمٍ حَتَّىٰ يُغَيِّرُوا مَا بِأَنفُسِهِمْ ۗ وَإِذَا أَرَادَ اللَّهُ بِقَوْمٍ سُوءًا فَلَا مَرَدَّ لَهُ ۚ وَمَا لَهُم مِّن دُونِهِ مِن وَالٍ

মানুষের জন্যে তার সামনে ও পেছনে একের পর এক প্রহরী থাকে; ওরা আল্লাহর আদেশে তার রক্ষণাবেক্ষণ করে, নিশ্চয় আল্লাহ কোন সম্প্রদায়ের অবস্থা পরিবর্তন করেন না যতক্ষন না তারা নিজেদের অবস্থা নিজেরা পরিবর্তন করে, কোন সম্প্রদায়ের সম্পর্কে যদি আল্লাহ অশুভ কিছু ইচ্ছা করেন তবে তা রদ করবার কেউ নেই এবং তিনি ছাড়া তাদের কোন অভিভাবক নেই।

১২

هُوَ الَّذِي يُرِيكُمُ الْبَرْقَ خَوْفًا وَطَمَعًا وَيُنشِئُ السَّحَابَ الثِّقَالَ

তিনিই তোমাদেরকে দেখান বিজলী যা ভয় ও ভরসা সঞ্চার করে এবং তিনিই সৃষ্টি করেন ঘন মেঘ।

১৩

وَيُسَبِّحُ الرَّعْدُ بِحَمْدِهِ وَالْمَلَائِكَةُ مِنْ خِيفَتِهِ وَيُرْسِلُ الصَّوَاعِقَ فَيُصِيبُ بِهَا مَن يَشَاءُ وَهُمْ يُجَادِلُونَ فِي اللَّهِ وَهُوَ شَدِيدُ الْمِحَالِ

বজ্র ও নির্ঘোষ ও ফেরেশতাগণ স্বভয়ে তাঁর সপ্রশংসা মহিমা ও পবিত্রতা ঘোষণা করে এবং তিনি বজ্রপাত করেন এবং যাকে ইচ্ছা ওটা দ্বারা আঘাত করেন; তথাপি ওরা আল্লাহ সম্বন্ধে বিতণ্ডা করে; যদিও তিনি মহাশক্তিশালী।

১৪

لَهُ دَعْوَةُ الْحَقِّ ۖ وَالَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِهِ لَا يَسْتَجِيبُونَ لَهُم بِشَيْءٍ إِلَّا كَبَاسِطِ كَفَّيْهِ إِلَى الْمَاءِ لِيَبْلُغَ فَاهُ وَمَا هُوَ بِبَالِغِهِ ۚ وَمَا دُعَاءُ الْكَافِرِينَ إِلَّا فِي ضَلَالٍ

সত্যের আহ্বান তাঁরই; যারা তাঁকে ছাড়া আহ্বান করে অপরকে, তাদেরকে তারা কোনই সাড়া দেয় না; তাদের দৃষ্টান্ত সেই ব্যক্তির মত, যে তার মুখে পানি পৌঁছবে এই আশায় তার হস্তদ্বয় প্রসারিত প্রসারিত করে এমন পানির দিকে যা তার মুখে পৌঁছবার নয়, কাফিরদের আহ্বান নিস্ফল।

১৫

وَلِلَّهِ يَسْجُدُ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ طَوْعًا وَكَرْهًا وَظِلَالُهُم بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ ۩

আল্লাহ প্রতি সিজদাবনত হয় আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীতে যা কিছু আছে, ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায় এবং তাদের ছায়াগুলিও সকাল ও সন্ধ্যায়।

১৬

قُلْ مَن رَّبُّ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ قُلِ اللَّهُ ۚ قُلْ أَفَاتَّخَذْتُم مِّن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ لَا يَمْلِكُونَ لِأَنفُسِهِمْ نَفْعًا وَلَا ضَرًّا ۚ قُلْ هَلْ يَسْتَوِي الْأَعْمَىٰ وَالْبَصِيرُ أَمْ هَلْ تَسْتَوِي الظُّلُمَاتُ وَالنُّورُ ۗ أَمْ جَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ خَلَقُوا كَخَلْقِهِ فَتَشَابَهَ الْخَلْقُ عَلَيْهِمْ ۚ قُلِ اللَّهُ خَالِقُ كُلِّ شَيْءٍ وَهُوَ الْوَاحِدُ الْقَهَّارُ

বলঃ কে আকাশমণ্ডলী ও পৃথিবীর প্রতিপালক? বলঃ (তিনি) আল্লাহ; বলঃ তবে কি তোমরা অভিভাবকরূপে গ্রহণ করছো আল্লাহর পরিবর্তে অপরকে, যারা নিজেদের লাভ বা ক্ষতি সাধনে সক্ষম নয়? বলঃ অন্ধ ও চক্ষুষ্মান কি সমান অথবা অন্ধকার ও আলো কি এক? তবে কি তারা আল্লাহর এমন শরীক স্থাপন করেছে যারা তাঁর সৃষ্টির মত সৃষ্টি করেছে যে কারণে সৃষ্টি তাদের মধ্যে বিভ্রান্তি ঘটিয়েছে? বলঃ আল্লাহ সকল বস্তুর স্রষ্টা; তিনি এক, পরাক্রমশালী।

১৭

أَنزَلَ مِنَ السَّمَاءِ مَاءً فَسَالَتْ أَوْدِيَةٌ بِقَدَرِهَا فَاحْتَمَلَ السَّيْلُ زَبَدًا رَّابِيًا ۚ وَمِمَّا يُوقِدُونَ عَلَيْهِ فِي النَّارِ ابْتِغَاءَ حِلْيَةٍ أَوْ مَتَاعٍ زَبَدٌ مِّثْلُهُ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْحَقَّ وَالْبَاطِلَ ۚ فَأَمَّا الزَّبَدُ فَيَذْهَبُ جُفَاءً ۖ وَأَمَّا مَا يَنفَعُ النَّاسَ فَيَمْكُثُ فِي الْأَرْضِ ۚ كَذَٰلِكَ يَضْرِبُ اللَّهُ الْأَمْثَالَ

তিনি আকাশ হতে বৃষ্টি বর্ষণ করেন, ফলে উপত্যকাসমূহ ওদের পরিমাণ অনুযায়ী প্লাবিত হয় এবং প্লাবন তার উপরিস্থিত ফেনা বহন করে, এভাবে ফেনা উপরিভাগে আসে যখন অলংকার অথবা তৈজসপত্র নির্মাণ উদ্দেশ্যে কিছু অগ্নিতে উত্তপ্ত করা হয়; এভাবে আল্লাহ সত্য ও অসত্যের দৃষ্টান্ত দিয়ে থাকেন; যা আবর্জনা তা ফেলে দেয়া হয় এবং যা মানুষের উপকারে আসে তা জমিতে থেকে যায়, এভাবেই আল্লাহ উপমা দিয়ে থাকেন।

১৮

لِلَّذِينَ اسْتَجَابُوا لِرَبِّهِمُ الْحُسْنَىٰ ۚ وَالَّذِينَ لَمْ يَسْتَجِيبُوا لَهُ لَوْ أَنَّ لَهُم مَّا فِي الْأَرْضِ جَمِيعًا وَمِثْلَهُ مَعَهُ لَافْتَدَوْا بِهِ ۚ أُولَـٰئِكَ لَهُمْ سُوءُ الْحِسَابِ وَمَأْوَاهُمْ جَهَنَّمُ ۖ وَبِئْسَ الْمِهَادُ

মঙ্গল তাদের যারা তাদের প্রতিপালকের আহ্বানে সাড়া দেয় এবং যারা তাঁর ডাকে সাড়া দেয় না, তাদের যদি পৃথিবীতে যা কিছু আছে তা সমস্তই থাকতো এবং তার সাথে সমপরিমাণ আরো থাকতো তবে অবশ্যই তারা মুক্তিপণ স্বরূপ তা প্রদান করতো; তাদের হিসাব হবে কঠোর এবং জাহান্নাম হবে তাদের আবাস, ওটা কত নিকৃষ্ট আশ্রয়স্থল।

১৯

أَفَمَن يَعْلَمُ أَنَّمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ مِن رَّبِّكَ الْحَقُّ كَمَنْ هُوَ أَعْمَىٰ ۚ إِنَّمَا يَتَذَكَّرُ أُولُو الْأَلْبَابِ

তোমার প্রতিপালক হতে তোমার প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা যে ব্যক্তি সত্য বলে জানে সে আর অন্ধ কি সমান? উপদেশ গ্রহণ করে শুধু বিবেক শক্তিসম্পন্ন ব্যক্তিরাই।

২০

الَّذِينَ يُوفُونَ بِعَهْدِ اللَّهِ وَلَا يَنقُضُونَ الْمِيثَاقَ

যারা আল্লাহকে প্রদত্ত অঙ্গীকার রক্ষা করে এবং প্রতিজ্ঞা ভঙ্গ করে না।

২১

وَالَّذِينَ يَصِلُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيَخْشَوْنَ رَبَّهُمْ وَيَخَافُونَ سُوءَ الْحِسَابِ

আর আল্লাহ যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আদেশ করেছেন যারা তা অক্ষুন্ন রাখে, ভয় করে তাদের প্রতিপালককে এবং ভয় করে কঠোর হিসাবকে।

২২

وَالَّذِينَ صَبَرُوا ابْتِغَاءَ وَجْهِ رَبِّهِمْ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَأَنفَقُوا مِمَّا رَزَقْنَاهُمْ سِرًّا وَعَلَانِيَةً وَيَدْرَءُونَ بِالْحَسَنَةِ السَّيِّئَةَ أُولَـٰئِكَ لَهُمْ عُقْبَى الدَّارِ

আর যারা তাদের প্রতিপালকের সন্তুষ্টি লাভের জন্যে ধৈর্যধারণ করে, নামায সুপ্রতিষ্ঠিত করে এবং আমি তাদেরকে যে রুযা দিয়েছি তা হতে গোপনে ও প্রকাশ্যে ব্যয় করে আর যারা ভাল দ্বারা মন্দ দূরীভুত করে, তাদের জন্যে শুভ পরিণাম।

২৩

جَنَّاتُ عَدْنٍ يَدْخُلُونَهَا وَمَن صَلَحَ مِنْ آبَائِهِمْ وَأَزْوَاجِهِمْ وَذُرِّيَّاتِهِمْ ۖ وَالْمَلَائِكَةُ يَدْخُلُونَ عَلَيْهِم مِّن كُلِّ بَابٍ

স্থায়ী জান্নাত, যাতে তারা প্রবেশ করবে এবং তাদের পিতা-মাতা, পতি-পত্নী ও সন্তান-সন্ততিদের মধ্যে যারা সৎকর্ম করেছে তারাও এবং ফেরেশতাগণ তাদের কাছে হাজির হবে প্রত্যেক দরজা দিয়ে।

২৪

سَلَامٌ عَلَيْكُم بِمَا صَبَرْتُمْ ۚ فَنِعْمَ عُقْبَى الدَّارِ

(এবং বলবেন) তোমরা ধৈর্যধারণ করেছো বলে তোমাদের প্রতি শান্তি! কতই না ভাল এই পরিণাম।

২৫

وَالَّذِينَ يَنقُضُونَ عَهْدَ اللَّهِ مِن بَعْدِ مِيثَاقِهِ وَيَقْطَعُونَ مَا أَمَرَ اللَّهُ بِهِ أَن يُوصَلَ وَيُفْسِدُونَ فِي الْأَرْضِ ۙ أُولَـٰئِكَ لَهُمُ اللَّعْنَةُ وَلَهُمْ سُوءُ الدَّارِ

যারা আল্লাহর সাথে দৃঢ় অঙ্গীকারে আবদ্ধ হওয়ার পর তা ভঙ্গ করে, যে সম্পর্ক অক্ষুন্ন রাখতে আল্লাহ আদেশ করেছেন, তা ছিন্ন করে এবং পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করে বেড়ায়, তাদের জন্যে আছে অভিসম্পাত এবং তাদের জন্যে আছে মন্দ আবাস।

২৬

اللَّهُ يَبْسُطُ الرِّزْقَ لِمَن يَشَاءُ وَيَقْدِرُ ۚ وَفَرِحُوا بِالْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَا الْحَيَاةُ الدُّنْيَا فِي الْآخِرَةِ إِلَّا مَتَاعٌ

আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা তার রুযী বর্ধিত করেন এবং সংকুচিত করেন; কিন্তু তারা পার্থিব জীবন নিয়েই উল্লসিত, অথচ ইহজীবন তো পরজীবনের তুলনায় ক্ষণস্থায়ী ভোগ মাত্র।

২৭

وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَوْلَا أُنزِلَ عَلَيْهِ آيَةٌ مِّن رَّبِّهِ ۗ قُلْ إِنَّ اللَّهَ يُضِلُّ مَن يَشَاءُ وَيَهْدِي إِلَيْهِ مَنْ أَنَابَ

যারা কুফরী করেছে, তারা বলেঃ তার প্রতিপালকের নিকট হতে তার নিকট কোন নিদর্শন অবতীর্ণ হয় না কেন? তুমি বলঃ আল্লাহ যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং তিনি তাদেরকেই তাঁর পথ দেখান যারা তাঁর অভিমুখী।

২৮

الَّذِينَ آمَنُوا وَتَطْمَئِنُّ قُلُوبُهُم بِذِكْرِ اللَّهِ ۗ أَلَا بِذِكْرِ اللَّهِ تَطْمَئِنُّ الْقُلُوبُ

ওরা যারা ঈমান আনে এবং আল্লাহর যিকিরে তাদের অন্তর প্রশান্ত হয়; জেনে রাখো, আল্লাহর জিকিরেই অন্তর প্রশান্ত হয়।

২৯

الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ طُوبَىٰ لَهُمْ وَحُسْنُ مَآبٍ

যারা ঈমান আনে ও সৎকর্ম করে, কল্যাণ ও শুভ পরিণাম তাদেরই।

৩০

كَذَٰلِكَ أَرْسَلْنَاكَ فِي أُمَّةٍ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِهَا أُمَمٌ لِّتَتْلُوَ عَلَيْهِمُ الَّذِي أَوْحَيْنَا إِلَيْكَ وَهُمْ يَكْفُرُونَ بِالرَّحْمَـٰنِ ۚ قُلْ هُوَ رَبِّي لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ عَلَيْهِ تَوَكَّلْتُ وَإِلَيْهِ مَتَابِ

এইভাবে আমি তোমাকে পাঠিয়েছি এমন এক জাতির নিকট যার পূর্বে বহুজাতি গত হয়েছে, তাদের নিকট আবৃত্তি করার জন্যে, যা আমি তোমার প্রতি প্রত্যাদেশ করেছি; তথাপি তারা দয়াময়কে অস্বীকার করে; তুমি বল তিনিই আমার প্রতিপালক; তিনি ছাড়া অন্য কোন (সত্য) মা’বূদ নেই, তাঁরই উপর আমি নির্ভর করি এবং আমার প্রত্যাবর্তন তাঁরই কাছে।

৩১

وَلَوْ أَنَّ قُرْآنًا سُيِّرَتْ بِهِ الْجِبَالُ أَوْ قُطِّعَتْ بِهِ الْأَرْضُ أَوْ كُلِّمَ بِهِ الْمَوْتَىٰ ۗ بَل لِّلَّهِ الْأَمْرُ جَمِيعًا ۗ أَفَلَمْ يَيْأَسِ الَّذِينَ آمَنُوا أَن لَّوْ يَشَاءُ اللَّهُ لَهَدَى النَّاسَ جَمِيعًا ۗ وَلَا يَزَالُ الَّذِينَ كَفَرُوا تُصِيبُهُم بِمَا صَنَعُوا قَارِعَةٌ أَوْ تَحُلُّ قَرِيبًا مِّن دَارِهِمْ حَتَّىٰ يَأْتِيَ وَعْدُ اللَّهِ ۚ إِنَّ اللَّهَ لَا يُخْلِفُ الْمِيعَادَ

যদি কোন কুরআন এমন হতো যার দ্বারা পর্বতকে গতিশীল করা যেতো অথবা পৃথিবীকে বিদীর্ণ করা যেতো অথবা মৃতের সাথে কথা বলা যেতো, (তবুও তারা তাতে বিশ্বাস করতো না;) কিন্তু সমস্ত বিষয়ই আল্লাহর ইখতিয়ারভুক্ত; তবে কি যারা ঈমান এনেছে তারা নিরাশ হয়ে পড়েনি যে, আল্লাহ ইচ্ছা করলে নিশ্চয় সকলকে সৎপথে পরিচালিত করতে পারতেন; যারা কুফরী করেছে তাদের কর্মফলের জন্যে তাদের বিপর্যয় ঘটতেই থাকবে, অথবা বিপর্যয় তাদের আশে পাশে আপতিত হতেই থাকবে, যতক্ষণ পর্যন্ত না আল্লাহর প্রতিশ্রুতি ঘটবে, নিশ্চয় আল্লাহ প্রতিশ্রুতির ব্যতিক্রম করেন না।

৩২

وَلَقَدِ اسْتُهْزِئَ بِرُسُلٍ مِّن قَبْلِكَ فَأَمْلَيْتُ لِلَّذِينَ كَفَرُوا ثُمَّ أَخَذْتُهُمْ ۖ فَكَيْفَ كَانَ عِقَابِ

তোমার পূর্বেও অনেক রাসূলের সাথে ঠাট্টা বিদ্রুপ করা হয়েছে, যারা কুফরী করেছে তাদেরকে কিছু অবকাশ দিয়েছিলাম, তারপর তাদেরকে পাকড়াও করেছিলাম; কেমন ছিল আমার পাকড়াও!

৩৩

أَفَمَنْ هُوَ قَائِمٌ عَلَىٰ كُلِّ نَفْسٍ بِمَا كَسَبَتْ ۗ وَجَعَلُوا لِلَّهِ شُرَكَاءَ قُلْ سَمُّوهُمْ ۚ أَمْ تُنَبِّئُونَهُ بِمَا لَا يَعْلَمُ فِي الْأَرْضِ أَم بِظَاهِرٍ مِّنَ الْقَوْلِ ۗ بَلْ زُيِّنَ لِلَّذِينَ كَفَرُوا مَكْرُهُمْ وَصُدُّوا عَنِ السَّبِيلِ ۗ وَمَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَمَا لَهُ مِنْ هَادٍ

তবে কি প্রত্যেক মানুষ যা করে তার যিনি পর্যবেক্ষক তিনি এদের অক্ষম উপাস্যগুলির মত? (আল্লাহর পর্যবেক্ষণ সত্ত্বেও) অথচ তারা আল্লাহর বহু শরীক করেছে, তুমি বলঃ তোমরা তাদের পরিচয় দাও; তোমরা কি পৃথিবীর মধ্যে অথবা প্রকাশ্য বর্ণনা হতে এমন কিছুর সংবাদ তাঁকে দিতে চাও যা তিনি জানেন না? না, বরং কাফিরদের প্রতারণা তাদের নিকট শোভন প্রতীয়মান হয় এবং তারা সৎপথ হতে নিবৃত্ত হয়; আল্লাহ যাকে বিভ্রান্ত করেন তার কোন পথ প্রদর্শক নেই।

৩৪

لَّهُمْ عَذَابٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۖ وَلَعَذَابُ الْآخِرَةِ أَشَقُّ ۖ وَمَا لَهُم مِّنَ اللَّهِ مِن وَاقٍ

তাদের জন্যে পার্থিব জীবনে আছে শাস্তি এবং পরকালের শাস্তি তো আরো কঠোর এবং আল্লাহর শাস্তি হতে রক্ষা করার তাদের কেউ নেই।

৩৫

مَّثَلُ الْجَنَّةِ الَّتِي وُعِدَ الْمُتَّقُونَ ۖ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ ۖ أُكُلُهَا دَائِمٌ وَظِلُّهَا ۚ تِلْكَ عُقْبَى الَّذِينَ اتَّقَوا ۖ وَّعُقْبَى الْكَافِرِينَ النَّارُ

মুত্তাকীদেরকে যে জান্নাতের প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে, তার উপমা এইরূপঃ ওর পাদদেশে নদী প্রবাহিত, ওর ফলসমূহ ও ছায়া চিরস্থায়ীঃ যারা মুত্তাকী এটা তাদের কর্মফল এবং কাফিরদের কর্মফল জাহান্নাম।

৩৬

وَالَّذِينَ آتَيْنَاهُمُ الْكِتَابَ يَفْرَحُونَ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْكَ ۖ وَمِنَ الْأَحْزَابِ مَن يُنكِرُ بَعْضَهُ ۚ قُلْ إِنَّمَا أُمِرْتُ أَنْ أَعْبُدَ اللَّهَ وَلَا أُشْرِكَ بِهِ ۚ إِلَيْهِ أَدْعُو وَإِلَيْهِ مَآبِ

আমি যাদেরকে কিতাব দিয়েছি তারা যা তোমার প্রতি অবতীর্ণ হয়েছে তাতে আনন্দ পায়, তবে কোন কোন দল ওর কতক অংশ অস্বীকার করে; তুমি বলঃ আমি তো আল্লাহরই ইবাদত করতে ও তাঁর কোন শরীক না করতে আদিষ্ট হয়েছি; আমি তাঁরই প্রতি আহ্বান করি এবং তাঁরই নিকট আমার প্রত্যাবর্তন।

৩৭

وَكَذَٰلِكَ أَنزَلْنَاهُ حُكْمًا عَرَبِيًّا ۚ وَلَئِنِ اتَّبَعْتَ أَهْوَاءَهُم بَعْدَ مَا جَاءَكَ مِنَ الْعِلْمِ مَا لَكَ مِنَ اللَّهِ مِن وَلِيٍّ وَلَا وَاقٍ

আর এভাবে আমি ওটা (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি এক নির্দেশ, আরবী ভাষায়; জ্ঞান প্রাপ্তির পর তুমি যদি তাদের খেয়াল-খুশীর অনুসরণ কর তবে আল্লাহর বিরুদ্ধে তোমার কোন অভিভাবক ও রক্ষক থাকবে না।

৩৮

وَلَقَدْ أَرْسَلْنَا رُسُلًا مِّن قَبْلِكَ وَجَعَلْنَا لَهُمْ أَزْوَاجًا وَذُرِّيَّةً ۚ وَمَا كَانَ لِرَسُولٍ أَن يَأْتِيَ بِآيَةٍ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۗ لِكُلِّ أَجَلٍ كِتَابٌ

তোমার পূর্বেও আমি অনেক রাসূল প্রেরণ করেছিলাম এবং তাদেরকে স্ত্রী ও সন্তান-সন্ততি দিয়েছিলাম; আল্লাহর অনুমতি ছাড়া কোন নিদর্শন উপস্থিত করা কোন রাসূলের কাজ নয়; প্রত্যেক বিষয়ের নির্ধারিত কাল লিপিবদ্ধ।

৩৯

يَمْحُو اللَّهُ مَا يَشَاءُ وَيُثْبِتُ ۖ وَعِندَهُ أُمُّ الْكِتَابِ

আল্লাহ যা ইচ্ছা তা নিশ্চিহ্ন করেন এবং প্রতিষ্ঠিত রাখেন এবং তাঁরই নিকট আছে মূল গ্রন্থ।

৪০

وَإِن مَّا نُرِيَنَّكَ بَعْضَ الَّذِي نَعِدُهُمْ أَوْ نَتَوَفَّيَنَّكَ فَإِنَّمَا عَلَيْكَ الْبَلَاغُ وَعَلَيْنَا الْحِسَابُ

আমি তাদেরকে যে শাস্তির কথা বলি, তার কিছু যদি তোমাকে দেখিয়ে দিই অথবা যদি এর পূর্বে তোমার মৃত্যু ঘটিয়েই দিই (সর্বাবস্থায়) তোমার কর্তব্য তো শুধু প্রচার করা, আর হিসাব-নিকাশ তো আমার কাজ।

৪১

أَوَلَمْ يَرَوْا أَنَّا نَأْتِي الْأَرْضَ نَنقُصُهَا مِنْ أَطْرَافِهَا ۚ وَاللَّهُ يَحْكُمُ لَا مُعَقِّبَ لِحُكْمِهِ ۚ وَهُوَ سَرِيعُ الْحِسَابِ

তারা কি দেখে না যে, আমি তাদের যমীনকে (দেশকে) চারদিক হতে সংকুচিত করে আনছি? আল্লাহ আদেশ করেন, তাঁর আদেশ রদ করার কেউ নেই এবং তিনি হিসাব গ্রহণে তৎপর।

৪২

وَقَدْ مَكَرَ الَّذِينَ مِن قَبْلِهِمْ فَلِلَّهِ الْمَكْرُ جَمِيعًا ۖ يَعْلَمُ مَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ ۗ وَسَيَعْلَمُ الْكُفَّارُ لِمَنْ عُقْبَى الدَّارِ

তাদের পূর্বে যারা ছিল তারাও চক্রান্ত করেছিল, কিন্তু সমস্ত চক্রান্ত আল্লাহর ইখতিয়ারে; প্রত্যেক ব্যক্তি যা করে তা তিনি জানেন এবং কাফিররা শীঘ্রই জানবে শুভ পরিণাম কাদের জন্যে।

৪৩

وَيَقُولُ الَّذِينَ كَفَرُوا لَسْتَ مُرْسَلًا ۚ قُلْ كَفَىٰ بِاللَّهِ شَهِيدًا بَيْنِي وَبَيْنَكُمْ وَمَنْ عِندَهُ عِلْمُ الْكِتَابِ

যারা কুফরী করেছে তারা বলেঃ তুমি আল্লাহর প্রেরিত নও; তুমি বলঃ আল্লাহ এবং যাদের নিকট কিতাবের জ্ঞান আছে, (যেমন আব্দুল্লাহ ইবনে সালাম) তারা আমার ও তোমাদের মধ্যে সাক্ষী হিসেবে যথেষ্ট।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x