০০২. সূরাঃ বাকারাহ

আয়াত নং অবতীর্ণঃ মদিনা
আয়াত সংখ্যাঃ ২৮৬
রুকু ৪০
২৫১ فَهَزَمُوهُم بِإِذْنِ اللَّهِ وَقَتَلَ دَاوُودُ جَالُوتَ وَآتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ وَالْحِكْمَةَ وَعَلَّمَهُ مِمَّا يَشَاءُ ۗ وَلَوْلَا دَفْعُ اللَّهِ النَّاسَ بَعْضَهُم بِبَعْضٍ لَّفَسَدَتِ الْأَرْضُ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ ذُو فَضْلٍ عَلَى الْعَالَمِينَ
তখন তারা আল্লাহর হুকুমে জালূতের সৈন্যদেরকে পরাজিত করে দিল এবং দাউদ জালূতকে নিহত করে ফেললেন এবং আল্লাহ দাউদকে রাজ্য ও প্রজ্ঞা দান করলেন এবং তাকে ইচ্ছানুযায়ী শিক্ষা দান করলেন, আর যদি আল্লাহ এক দলকে অপর দলের দ্বারা প্রতিহত না করতেন তবে নিশ্চয় পৃথিবী অশান্তি পূর্ণ হতো; কিন্তু আল্লাহ বিশ্বজগতের প্রতি অনুগ্রহকারী।
২৫২ تِلْكَ آيَاتُ اللَّهِ نَتْلُوهَا عَلَيْكَ بِالْحَقِّ ۚ وَإِنَّكَ لَمِنَ الْمُرْسَلِينَ
এগুলো আল্লাহর নিদর্শন- তোমার নিকট এগুলো সত্যরূপে পাঠ করছি এবং নিশ্চয়ই তুমি রাসূলগণের অন্তর্গত।
২৫৩ تِلْكَ الرُّسُلُ فَضَّلْنَا بَعْضَهُمْ عَلَىٰ بَعْضٍ ۘ مِّنْهُم مَّن كَلَّمَ اللَّهُ ۖ وَرَفَعَ بَعْضَهُمْ دَرَجَاتٍ ۚ وَآتَيْنَا عِيسَى ابْنَ مَرْيَمَ الْبَيِّنَاتِ وَأَيَّدْنَاهُ بِرُوحِ الْقُدُسِ ۗ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلَ الَّذِينَ مِن بَعْدِهِم مِّن بَعْدِ مَا جَاءَتْهُمُ الْبَيِّنَاتُ وَلَـٰكِنِ اخْتَلَفُوا فَمِنْهُم مَّنْ آمَنَ وَمِنْهُم مَّن كَفَرَ ۚ وَلَوْ شَاءَ اللَّهُ مَا اقْتَتَلُوا وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يَفْعَلُ مَا يُرِيدُ
এই সকল রাসূল, আমি যাদের কারো উপর কাউকে শ্রেষ্ঠত্ব প্রদান করেছি, তাদের মধ্যে কারো সাথে আল্লাহ কথা বলেছেন এবং কাউকে পদমর্যাদায় সমুন্নত করেছেন, আর মরিয়ম পুত্র ঈসাকে প্রকাশ্যে নিদর্শনাবলী দান করেছি এবং তাকে পবিত্রাত্মাযোগে (জিবরাঈল দ্বারা) সাহায্য করেছি, তার আল্লাহ ইচ্ছা করলে, নবীগণের পরবর্তী লোকেরা তাদের নিকট স্পষ্ট প্রমাণপুঞ্জ সমাগত হওয়ার পর পরস্পরের সাথে যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতো না; কিন্তু তারা পরস্পর মতবিরোধ করেছিল ফলে তাদের কতক হল মু’মিন আর কতক হল কাফির। বস্তুতঃ আল্লাহ ইচ্ছে করলে তারা পরস্পর যুদ্ধ বিগ্রহে লিপ্ত হতো না; কিন্তু আল্লাহ যা ইচ্ছে করেন তাই সম্পন্ন করে থাকেন।
২৫৪ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِمَّا رَزَقْنَاكُم مِّن قَبْلِ أَن يَأْتِيَ يَوْمٌ لَّا بَيْعٌ فِيهِ وَلَا خُلَّةٌ وَلَا شَفَاعَةٌ ۗ وَالْكَافِرُونَ هُمُ الظَّالِمُونَ
হে বিশ্বাসীগণ! আমি তোমাদেরকে যে উপজীবিকা দান করেছি, তা হতে সেদিন সমাগত হওয়ার পূর্বেই ব্যয় কর যাতে ক্রয়-বিক্রয়, বন্ধুত্ব ও সুপারিশ নেই, আর অবিশ্বাসীরাই অত্যাচারী।
২৫৫ اللَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ الْحَيُّ الْقَيُّومُ ۚ لَا تَأْخُذُهُ سِنَةٌ وَلَا نَوْمٌ ۚ لَّهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ مَن ذَا الَّذِي يَشْفَعُ عِندَهُ إِلَّا بِإِذْنِهِ ۚ يَعْلَمُ مَا بَيْنَ أَيْدِيهِمْ وَمَا خَلْفَهُمْ ۖ وَلَا يُحِيطُونَ بِشَيْءٍ مِّنْ عِلْمِهِ إِلَّا بِمَا شَاءَ ۚ وَسِعَ كُرْسِيُّهُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ ۖ وَلَا يَئُودُهُ حِفْظُهُمَا ۚ وَهُوَ الْعَلِيُّ الْعَظِيمُ
আল্লাহ তিনি ব্যতীত অন্য কো সত্য উপাস্য নেই, তিনি চিরজীবন্ত ও সবার রক্ষণাবেক্ষণকারী, তন্দ্রা ও নিদ্রা তাঁকে স্পর্শ করে না, নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু রয়েছে সব তাঁরই; এমন কে আছে যে তাঁর অনুমতি ব্যতীত তাঁর নিকট সুপারিশ করতে পারে? তাদের সম্মুখের ও পশ্চাতের সবই তিনি অবগত আছেন; তিনি যা ইচ্ছা করেন তা ব্যতীত তাঁর অনন্ত জ্ঞানের কোন বিষয়ই কেউ আয়ত্ব করতে পারে না। তাঁর কুরসী নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডল পরিব্যাপ্ত হয়ে আছে এবং এতদুভয়ের সংরক্ষণে তাঁকে পরিশ্রান্ত করে না এবং তিনি সমুন্নত, মহীয়ান!
২৫৬ لَا إِكْرَاهَ فِي الدِّينِ ۖ قَد تَّبَيَّنَ الرُّشْدُ مِنَ الْغَيِّ ۚ فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ
ধর্ম (দ্বীন গ্রহণে) সম্বন্ধে বল প্রয়োগ নেই; নিশ্চয় ভ্রান্তি হতে সুপথ প্রকাশিত হয়েছে; অতএব, যে ব্যক্তি আল্লাহ ব্যতীত অন্য মা’বূদকে অবিশ্বাস করে এবং আল্লাহর প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করে সে দৃঢ়তর রজ্জুকে আঁকড়িয়ে ধরলো যা কখনো ছিন্ন হওয়ার নয় এবং আল্লাহ শ্রবণকারী মহাজ্ঞানী।
২৫৭ اللَّهُ وَلِيُّ الَّذِينَ آمَنُوا يُخْرِجُهُم مِّنَ الظُّلُمَاتِ إِلَى النُّورِ ۖ وَالَّذِينَ كَفَرُوا أَوْلِيَاؤُهُمُ الطَّاغُوتُ يُخْرِجُونَهُم مِّنَ النُّورِ إِلَى الظُّلُمَاتِ ۗ أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
আল্লাহই হচ্ছেন মু’মিনদের অভিভাবক। তিনি তাদেরকে অন্ধকার হতে আলোর দিকে নিয়ে যান; আর যারা অবিশ্বাস করেছে শয়তান তাদের পৃষ্ঠপোষক, সে তাদেরকে আলোক হতে অন্ধকারের দিকে নিয়ে যায়, তারাই জাহান্নামের অধিবাসী ও এর মধ্যে তারা চিরকাল অবস্থানকারী।
২৫৮ أَلَمْ تَرَ إِلَى الَّذِي حَاجَّ إِبْرَاهِيمَ فِي رَبِّهِ أَنْ آتَاهُ اللَّهُ الْمُلْكَ إِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّيَ الَّذِي يُحْيِي وَيُمِيتُ قَالَ أَنَا أُحْيِي وَأُمِيتُ ۖ قَالَ إِبْرَاهِيمُ فَإِنَّ اللَّهَ يَأْتِي بِالشَّمْسِ مِنَ الْمَشْرِقِ فَأْتِ بِهَا مِنَ الْمَغْرِبِ فَبُهِتَ الَّذِي كَفَرَ ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الظَّالِمِينَ
তুমি কি তার প্রতি লক্ষ্য করনি, যে ইব্রাহীমের সাথে তার প্রতিপালক সম্বন্ধে বিতর্ক করেছিল, যেহেতু আল্লাহ তাঁকে রাজত্ব প্রদান করেছিলেন। যখন ইব্রাহীম বলেছিলেন আমার প্রভু তিনি যিনি জীবিত করেন ও মৃত্যু দান করেন; সে বলেছিলঃ আমিই জীবন দান করি ও মৃত্যু দান করি; ইব্রাহীম বলেছিলেন নিশ্চয় আল্লাহ সূর্যকে পূর্বদিক হতে আনয়ন করেন; কিন্তু তুমি ওকে পশ্চিম দিক হতে আনয়ন কর; এতে সেই অবিশ্বাসী হতবুদ্ধি হয়ে পড়েছিল এবং আল্লাহ অত্যাচারী সম্প্রদায়কে পথ প্রদর্শন করেন না।
২৫৯ أَوْ كَالَّذِي مَرَّ عَلَىٰ قَرْيَةٍ وَهِيَ خَاوِيَةٌ عَلَىٰ عُرُوشِهَا قَالَ أَنَّىٰ يُحْيِي هَـٰذِهِ اللَّهُ بَعْدَ مَوْتِهَا ۖ فَأَمَاتَهُ اللَّهُ مِائَةَ عَامٍ ثُمَّ بَعَثَهُ ۖ قَالَ كَمْ لَبِثْتَ ۖ قَالَ لَبِثْتُ يَوْمًا أَوْ بَعْضَ يَوْمٍ ۖ قَالَ بَل لَّبِثْتَ مِائَةَ عَامٍ فَانظُرْ إِلَىٰ طَعَامِكَ وَشَرَابِكَ لَمْ يَتَسَنَّهْ ۖ وَانظُرْ إِلَىٰ حِمَارِكَ وَلِنَجْعَلَكَ آيَةً لِّلنَّاسِ ۖ وَانظُرْ إِلَى الْعِظَامِ كَيْفَ نُنشِزُهَا ثُمَّ نَكْسُوهَا لَحْمًا ۚ فَلَمَّا تَبَيَّنَ لَهُ قَالَ أَعْلَمُ أَنَّ اللَّهَ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
অথবা ঐ ব্যক্তির অনুরূপ যে এমন কোন জনপদ অতিক্রম করছিল যা মুখ থুবরে নিজ ভিত্তির ওপর পড়েছিল। তিনি বললেন এই নগরের মৃত্যুর পর আল্লাহ আবার তাকে জীবন দান করবেন কিরূপে? অনন্তর আল্লাহ তাকে একশো বছরের জন্যে মৃত্যু দান করলেন, তৎপর তাঁকে পুনর্জীবিত করলেন, তিনি বললেনঃ এ অবস্থায় তুমি কতক্ষণ অতিবাহিত করেছো? তিনি বললেনঃ একদিন অথবা একদিনের কিয়দাংশ অতিবাহিত করেছি; তিনি বললেনঃ বরং তুমি একশত বর্ষ অতিবাহিত করেছো; অতএব তোমার খাদ্য পানীয়ের প্রতি লক্ষ্য কর, ওটা বিকৃত হয়নি এবং তোমার গাধার প্রতি দৃষ্টিপাত কর এবং যেহেতু আমি তোমাকে মানুষের জন্যে নিদর্শন করতে চাই – আরও দর্শন কর হাড়গুলির পানে, ওকে কিরূপে আমি সংযুক্ত করি; তৎপর ওকে মাংসাবৃত করি। অনন্তর যখন ওটা তাঁর নিকট স্পষ্ট হয়ে গেল তখন তিনি বললেনঃ আমি জানি যে, আল্লাহ সকল বিষয়ে সর্বশক্তিমান।
২৬০ وَإِذْ قَالَ إِبْرَاهِيمُ رَبِّ أَرِنِي كَيْفَ تُحْيِي الْمَوْتَىٰ ۖ قَالَ أَوَلَمْ تُؤْمِن ۖ قَالَ بَلَىٰ وَلَـٰكِن لِّيَطْمَئِنَّ قَلْبِي ۖ قَالَ فَخُذْ أَرْبَعَةً مِّنَ الطَّيْرِ فَصُرْهُنَّ إِلَيْكَ ثُمَّ اجْعَلْ عَلَىٰ كُلِّ جَبَلٍ مِّنْهُنَّ جُزْءًا ثُمَّ ادْعُهُنَّ يَأْتِينَكَ سَعْيًا ۚ وَاعْلَمْ أَنَّ اللَّهَ عَزِيزٌ حَكِيمٌ
এবং যখন ইব্রাহীম বলেছিলেন হে আমার প্রভু! আপনি কিরূপে মৃতকে জীবিত করেন তা আমাকে প্রদর্শন করুন; তিনি বললেনঃ তবে কি তুমি বিশ্বাস কর না? তিনি বললেন হ্যাঁ; কিন্তু তাতে আমার অন্তর পরিতৃপ্ত হবে; তিনি বললেনঃ তা হলে চারটা পাখি গ্রহণ কর, তারপর সেগুলোকে তোমার পোষ মানিয়ে নাও, অনন্তর প্রত্যেক পাহাড়ের উপর ওদের এক এক খন্ড রেখে দাও; তারপর ওদেরকে আহ্বান কর, ওরা তোমার নিকট দৌড়ে আসবে; এবং জেনে রেখো যে, নিশ্চয় আল্লাহ মহা পরাক্রান্ত, মহা প্রজ্ঞাময়।
২৬১ مَّثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ كَمَثَلِ حَبَّةٍ أَنبَتَتْ سَبْعَ سَنَابِلَ فِي كُلِّ سُنبُلَةٍ مِّائَةُ حَبَّةٍ ۗ وَاللَّهُ يُضَاعِفُ لِمَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
যারা আল্লাহর পথে স্বীয় ধন-সম্পদ ব্যয় করে তাদের উপমা যেমন একটি শস্য বীজ, তা হতে উৎপন্ন হল সাতটি বীজ, প্রত্যেক শীষে (উৎপন্ন হল) একশত শস্য দানা এবং আল্লাহ যার জন্যে ইচ্ছা করেন আরো বর্ধিত করে দেন, বস্তুতঃ আল্লাহ হচ্ছেন মহাদাতা, মহাজ্ঞানী।
২৬২ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ ثُمَّ لَا يُتْبِعُونَ مَا أَنفَقُوا مَنًّا وَلَا أَذًى ۙ لَّهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
যারা আল্লাহর পথে নিজেদের ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তৎপর যা ব্যয় করে তার জন্য কৃপা প্রকাশও করে না, কষ্ট দানও করে না, তাদের জন্যে তাদের প্রভুর নিকট পুরস্কার রয়েছে, বস্তুতঃ তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা দুর্ভাবনাগ্রস্থও হবে না।
২৬৩ قَوْلٌ مَّعْرُوفٌ وَمَغْفِرَةٌ خَيْرٌ مِّن صَدَقَةٍ يَتْبَعُهَا أَذًى ۗ وَاللَّهُ غَنِيٌّ حَلِيمٌ
যে দানের পরে কষ্ট দেয়া হয়, সে দান অপেক্ষা উত্তম ভালো কথা বলা ও ক্ষমা প্রদর্শন করা এবং আল্লাহ মহা সম্পদশালী, সম্মানী।
২৬৪ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا لَا تُبْطِلُوا صَدَقَاتِكُم بِالْمَنِّ وَالْأَذَىٰ كَالَّذِي يُنفِقُ مَالَهُ رِئَاءَ النَّاسِ وَلَا يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَالْيَوْمِ الْآخِرِ ۖ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ صَفْوَانٍ عَلَيْهِ تُرَابٌ فَأَصَابَهُ وَابِلٌ فَتَرَكَهُ صَلْدًا ۖ لَّا يَقْدِرُونَ عَلَىٰ شَيْءٍ مِّمَّا كَسَبُوا ۗ وَاللَّهُ لَا يَهْدِي الْقَوْمَ الْكَافِرِينَ
হে মু’মিনগণ! কৃপা প্রকাশ ও কষ্ট দিয়ে নিজেদের দানগুলো ব্যর্থ করে ফেলো না, সে ব্যক্তির ন্যায় যে নিজের ধন ব্যয় করে লোক দেখানোর জন্যে অথচ আল্লাহ ও পরকালে সে বিশ্বাস করে না; ফলতঃ তার উপমা যেমন এক বৃহৎ মসৃণ পাথর খন্ড, যার উপর কতকটা মাটি (জমে) আছে, এ অবস্থায় বর্ষিত হল তাতে প্রবল বর্ষা, যা তাকে পরিষ্কার করে দিল; তারা যা অর্জন করেছে তন্মধ্য হতে কোন বিষয়েই তারা সুফল পাবে না এবং আল্লাহ অবিশ্বাসী সম্প্রদায়কে পথ-প্রদর্শন করেন না।
২৬৫ وَمَثَلُ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُمُ ابْتِغَاءَ مَرْضَاتِ اللَّهِ وَتَثْبِيتًا مِّنْ أَنفُسِهِمْ كَمَثَلِ جَنَّةٍ بِرَبْوَةٍ أَصَابَهَا وَابِلٌ فَآتَتْ أُكُلَهَا ضِعْفَيْنِ فَإِن لَّمْ يُصِبْهَا وَابِلٌ فَطَلٌّ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ بَصِيرٌ
এবং যারা আল্লাহর সন্তুষ্টি সাধন ও স্বীয় জীবনের প্রতিষ্ঠার জন্যে ধন-সম্পদ ব্যয় করে, তাদের উপমা- যেমন উর্বর ভূভাগে অবস্থিত একটি উদ্যান, তাতে প্রবল বৃষ্টিধারা পতিত হয়, ফলে সেই উদ্যান দ্বিগুণ খাদ্যশস্য দান করে; কিন্তু যদি তাতে প্রবল বৃষ্টিপাত না হয় তবে অল্প বৃষ্টিধারাই যথেষ্ট এবং তোমরা যা করছ আল্লাহ তা প্রত্যক্ষকারী।
২৬৬ أَيَوَدُّ أَحَدُكُمْ أَن تَكُونَ لَهُ جَنَّةٌ مِّن نَّخِيلٍ وَأَعْنَابٍ تَجْرِي مِن تَحْتِهَا الْأَنْهَارُ لَهُ فِيهَا مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ وَأَصَابَهُ الْكِبَرُ وَلَهُ ذُرِّيَّةٌ ضُعَفَاءُ فَأَصَابَهَا إِعْصَارٌ فِيهِ نَارٌ فَاحْتَرَقَتْ ۗ كَذَٰلِكَ يُبَيِّنُ اللَّهُ لَكُمُ الْآيَاتِ لَعَلَّكُمْ تَتَفَكَّرُونَ
তোমাদের কেউ কি এমনটা পছন্দ করবে? যে তার একটি খেজুর ও আঙ্গুরের বাগান থাক, যার তলদেশ দিয়ে নদী-নালা প্রবাহিত, তথায় সর্বপ্রকার ফলের সংস্থান তার রয়েছে, আর সে বার্ধক্যে উপনীত হল, এদিকে তার কতকগুলো দুর্বল (অপ্রাপ্ত বয়স্ক) সন্তান-সন্ততি আছে- এ অবস্থায় সেই বাগানে অগ্নিসহ এক ঘূর্ণিবায়ু আসলো আর তা পুড়ে ভস্মিভুত হয়ে গেল। এরূপে আল্লাহ তোমাদের জন্যে নিদর্শনাবলী ব্যক্ত করেন যেন তোমরা চিন্তা কর।
২৬৭ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا أَنفِقُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا كَسَبْتُمْ وَمِمَّا أَخْرَجْنَا لَكُم مِّنَ الْأَرْضِ ۖ وَلَا تَيَمَّمُوا الْخَبِيثَ مِنْهُ تُنفِقُونَ وَلَسْتُم بِآخِذِيهِ إِلَّا أَن تُغْمِضُوا فِيهِ ۚ وَاعْلَمُوا أَنَّ اللَّهَ غَنِيٌّ حَمِيدٌ
হে মু’মিনগণ! তোমরা যা উপার্জন করেছো এবং আমি যা তোমাদের জন্যে ভূমি হতে উৎপন্ন করেছি, সেই পবিত্র বিষয় হতে খরচ কর এবং তা হতে এরূপ কলুষিত বস্তু ব্যয় করতে মনস্থ কর না যা তোমরা মুদিত চক্ষু ব্যতীত গ্রহণ কর না; এবং তোমরা জেনে রাখো যে, আল্লাহ মহা সম্পদশালী, প্রশংসিত।
২৬৮ الشَّيْطَانُ يَعِدُكُمُ الْفَقْرَ وَيَأْمُرُكُم بِالْفَحْشَاءِ ۖ وَاللَّهُ يَعِدُكُم مَّغْفِرَةً مِّنْهُ وَفَضْلًا ۗ وَاللَّهُ وَاسِعٌ عَلِيمٌ
শয়তান তোমাদেরকে অভাবের ভীতি প্রদর্শন করে এবং তোমাদেরকে অশ্লীল বিষয়ের আদেশ করে আর আল্লাহ তোমাদেরকে তার নিকট হতে ক্ষমা ও দয়ার অঙ্গীকার করেন আর আল্লাহ হচ্ছেন অসীম করুণাময়, সর্বজ্ঞ।
২৬৯ يُؤْتِي الْحِكْمَةَ مَن يَشَاءُ ۚ وَمَن يُؤْتَ الْحِكْمَةَ فَقَدْ أُوتِيَ خَيْرًا كَثِيرًا ۗ وَمَا يَذَّكَّرُ إِلَّا أُولُو الْأَلْبَابِ
তিনি যাকে ইচ্ছা হিকমত ও প্রজ্ঞা দান করেন এবং যাকে প্রজ্ঞা দান করা হয় ফলতঃ নিশ্চয়ই সে প্রচুর কল্যাণ লাভ করে বস্তুতঃ জ্ঞানবান ব্যক্তিগণ ব্যতীত কেউই শিক্ষা গ্রহণ করতে পারে না।
২৭০ وَمَا أَنفَقْتُم مِّن نَّفَقَةٍ أَوْ نَذَرْتُم مِّن نَّذْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ يَعْلَمُهُ ۗ وَمَا لِلظَّالِمِينَ مِنْ أَنصَارٍ
এবং যে কোন বস্তু তোমরা ব্যয় কর না কেন, অথবা যে কোন প্রতিজ্ঞা (নযর) তোমরা গ্রহণ কর না কেন, আল্লাহ নিশ্চয়ই তা অবগত হন; আর অত্যাচারীগণের কোনই সাহায্যকারী নেই।
২৭১ إِن تُبْدُوا الصَّدَقَاتِ فَنِعِمَّا هِيَ ۖ وَإِن تُخْفُوهَا وَتُؤْتُوهَا الْفُقَرَاءَ فَهُوَ خَيْرٌ لَّكُمْ ۚ وَيُكَفِّرُ عَنكُم مِّن سَيِّئَاتِكُمْ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ خَبِيرٌ
যদি তোমরা প্রকাশ্যভাবে দান কর তবে তা উৎকৃষ্ট এবং যদি তোমরা তা গোপন কর ও দরিদ্রদেরকে প্রদান কর তবে তাও তোমাদের জন্যে উত্তম এবং (এ দ্বারা) তিনি তোমাদের কিছু পাপ মোচন করবেন। বস্তুতঃ তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে আল্লাহ সর্বজ্ঞ।
২৭২ لَّيْسَ عَلَيْكَ هُدَاهُمْ وَلَـٰكِنَّ اللَّهَ يَهْدِي مَن يَشَاءُ ۗ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَلِأَنفُسِكُمْ ۚ وَمَا تُنفِقُونَ إِلَّا ابْتِغَاءَ وَجْهِ اللَّهِ ۚ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ يُوَفَّ إِلَيْكُمْ وَأَنتُمْ لَا تُظْلَمُونَ
তাদেরকে সুপথ প্রদর্শনের দায়িত্ব তোমার উপর নেই; বরং আল্লাহ যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন এবং তোমরা ধন-সম্পদ হতে যা ব্যয় কর বস্তুতঃ তা তোমাদের নিজেদের জন্যে; আর একমাত্র আল্লাহর সন্তোষ লাভের চেষ্টায় ব্যতীত (অন্য কোন উদ্দেশ্যে) অর্থ ব্যয় করো না এবং তোমরা উত্তম সম্পদ হতে যা ব্যয় করবে তার পুরস্কার পুরোপুরি তোমরা পেয়ে যাবে। আর তোমাদের প্রতি অন্যায় করা হবে না।
২৭৩ لِلْفُقَرَاءِ الَّذِينَ أُحْصِرُوا فِي سَبِيلِ اللَّهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ ضَرْبًا فِي الْأَرْضِ يَحْسَبُهُمُ الْجَاهِلُ أَغْنِيَاءَ مِنَ التَّعَفُّفِ تَعْرِفُهُم بِسِيمَاهُمْ لَا يَسْأَلُونَ النَّاسَ إِلْحَافًا ۗ وَمَا تُنفِقُوا مِنْ خَيْرٍ فَإِنَّ اللَّهَ بِهِ عَلِيمٌ
যারা আল্লাহর পথে অবরুদ্ধ রয়েছে বলে ভূ-পৃষ্ঠে গমনাগমনে অপারগ সেই সব দরিদ্রের জন্যে ব্যয় কর; (ভিক্ষা হতে) নিবৃত্ত থাকার কারণে অজ্ঞ লোকেরা তাদেরকে অবস্থাপন্ন বলে মনে করে, তুমি তাদেরকে তাদের লক্ষণের দ্বারা চিনতে পার, তারা লোকের নিকট ব্যাকুলভাবে যাঞ্ছা (ভিক্ষা করে না) করে না এবং তোমরা শুদ্ধ সম্পদ হতে যা ব্যয় কর বস্তুতঃ সে সমস্ত বিষয় আল্লাহ সম্যকরূপে অবগত।
২৭৪ الَّذِينَ يُنفِقُونَ أَمْوَالَهُم بِاللَّيْلِ وَالنَّهَارِ سِرًّا وَعَلَانِيَةً فَلَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
যারা রাতে ও দিনে, গোপনে ও প্রকাশ্যে নিজেদের ধন-সম্পদগুলো ব্যয় করে, তাদের প্রভুর নিকট তাদের পুরস্কার রয়েছে, তাদের কোন ভয় নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না।
২৭৫ الَّذِينَ يَأْكُلُونَ الرِّبَا لَا يَقُومُونَ إِلَّا كَمَا يَقُومُ الَّذِي يَتَخَبَّطُهُ الشَّيْطَانُ مِنَ الْمَسِّ ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ قَالُوا إِنَّمَا الْبَيْعُ مِثْلُ الرِّبَا ۗ وَأَحَلَّ اللَّهُ الْبَيْعَ وَحَرَّمَ الرِّبَا ۚ فَمَن جَاءَهُ مَوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّهِ فَانتَهَىٰ فَلَهُ مَا سَلَفَ وَأَمْرُهُ إِلَى اللَّهِ ۖ وَمَنْ عَادَ فَأُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ
যারা সুদ ভক্ষণ করে, তারা শয়তানের স্পর্শে মোহাবিষ্ট ব্যক্তির দন্ডায়মান হওয়ার অনুরূপ ব্যতীত দন্ডায়মান হবে না; এর কারণ এই যে, তারা বলেঃ ক্রয়-বিক্রয় তো সুদের অনুরূপ। অথচ আল্লাহ তা’আলা ব্যবসা হালাল করেছেন এবং সুদকে হারাম করেছেন; অতঃপর যার নিকট তার প্রভুর পক্ষ হতে উপদেশ সমাগত হয়, ফলে সে নিবৃত্ত হয়, সুতরাং যা অতীত হয়েছে; তার কৃতকার্য আল্লাহর প্রতি নির্ভর; এবং যারা পুনঃগ্রহণ করবে, তারাই হচ্ছে জাহান্নামের অধিবাসী, সেখানেই তারা চিরকাল অবস্থান করবে।
২৭৬ يَمْحَقُ اللَّهُ الرِّبَا وَيُرْبِي الصَّدَقَاتِ ۗ وَاللَّهُ لَا يُحِبُّ كُلَّ كَفَّارٍ أَثِيمٍ
সুদকে আল্লাহ ক্ষয় করেন এবং দানকে বর্ধিত করেন, বস্তুতঃ আল্লাহ অতি অকৃতজ্ঞ পাপাচারীদেরকে ভালোবাসেন না।
২৭৭ إِنَّ الَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ لَهُمْ أَجْرُهُمْ عِندَ رَبِّهِمْ وَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
নিশ্চয় যারা ঈমান আনয়ন করে এবং সৎকার্যাবলী সম্পাদন করে, নামাযকে প্রতিষ্ঠিত রাখে ও যাকাত প্রদান করে, তাদের জন্যে তাদের প্রতিপালকের নিকট পুরস্কার রয়েছে এবং তাদের জন্যে আশঙ্কা নেই এবং তারা চিন্তিত হবে না।
২৭৮ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اتَّقُوا اللَّهَ وَذَرُوا مَا بَقِيَ مِنَ الرِّبَا إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ
হে বিশ্বাসস্থাপনকারীগণ! আল্লাহকে ভয় কর এবং যদি তোমরা মু’মিন হও, তবে সুদের মধ্যে যা বকেয়া রয়েছে তা বর্জ কর।
২৭৯ فَإِن لَّمْ تَفْعَلُوا فَأْذَنُوا بِحَرْبٍ مِّنَ اللَّهِ وَرَسُولِهِ ۖ وَإِن تُبْتُمْ فَلَكُمْ رُءُوسُ أَمْوَالِكُمْ لَا تَظْلِمُونَ وَلَا تُظْلَمُونَ
কিন্তু যদি তা না কর তাহলে আল্লাহ ও তাঁর রাসূলের পক্ষ হতে তোমাদের বিরুদ্ধে যুদ্ধের জন্য প্রস্তুত হয়ে যাও। যদি তোমরা ক্ষমা প্রার্থনা কর তবে তোমাদের জন্যে তোমাদের মূলধন রয়েছে এবং তোমরা অত্যাচার করবে না ও তোমরাও অত্যাচারীত হবে না।
২৮০ وَإِن كَانَ ذُو عُسْرَةٍ فَنَظِرَةٌ إِلَىٰ مَيْسَرَةٍ ۚ وَأَن تَصَدَّقُوا خَيْرٌ لَّكُمْ ۖ إِن كُنتُمْ تَعْلَمُونَ
আর যদি সে অভাবগ্রস্থ হয় তবে স্বচ্ছলতা আসা পর্যন্ত তাকে সময় দেয়া উচিত। আর যদি তোমরা বুঝে থাক তবে তোমাদের জন্যে দান করাই উত্তম।
২৮১ وَاتَّقُوا يَوْمًا تُرْجَعُونَ فِيهِ إِلَى اللَّهِ ۖ ثُمَّ تُوَفَّىٰ كُلُّ نَفْسٍ مَّا كَسَبَتْ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
আর তোমরা সেই দিনের ভয় কর, যেদিন তোমরা আল্লাহর পানে প্রত্যাবর্তিত হবে, তখন যে যা অর্জন করেছে তা সম্পূর্ণরূপে প্রদত্ত হবে এবং তারা অত্যাচারিত হবে না।
২৮২ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا تَدَايَنتُم بِدَيْنٍ إِلَىٰ أَجَلٍ مُّسَمًّى فَاكْتُبُوهُ ۚ وَلْيَكْتُب بَّيْنَكُمْ كَاتِبٌ بِالْعَدْلِ ۚ وَلَا يَأْبَ كَاتِبٌ أَن يَكْتُبَ كَمَا عَلَّمَهُ اللَّهُ ۚ فَلْيَكْتُبْ وَلْيُمْلِلِ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ وَلَا يَبْخَسْ مِنْهُ شَيْئًا ۚ فَإِن كَانَ الَّذِي عَلَيْهِ الْحَقُّ سَفِيهًا أَوْ ضَعِيفًا أَوْ لَا يَسْتَطِيعُ أَن يُمِلَّ هُوَ فَلْيُمْلِلْ وَلِيُّهُ بِالْعَدْلِ ۚ وَاسْتَشْهِدُوا شَهِيدَيْنِ مِن رِّجَالِكُمْ ۖ فَإِن لَّمْ يَكُونَا رَجُلَيْنِ فَرَجُلٌ وَامْرَأَتَانِ مِمَّن تَرْضَوْنَ مِنَ الشُّهَدَاءِ أَن تَضِلَّ إِحْدَاهُمَا فَتُذَكِّرَ إِحْدَاهُمَا الْأُخْرَىٰ ۚ وَلَا يَأْبَ الشُّهَدَاءُ إِذَا مَا دُعُوا ۚ وَلَا تَسْأَمُوا أَن تَكْتُبُوهُ صَغِيرًا أَوْ كَبِيرًا إِلَىٰ أَجَلِهِ ۚ ذَٰلِكُمْ أَقْسَطُ عِندَ اللَّهِ وَأَقْوَمُ لِلشَّهَادَةِ وَأَدْنَىٰ أَلَّا تَرْتَابُوا ۖ إِلَّا أَن تَكُونَ تِجَارَةً حَاضِرَةً تُدِيرُونَهَا بَيْنَكُمْ فَلَيْسَ عَلَيْكُمْ جُنَاحٌ أَلَّا تَكْتُبُوهَا ۗ وَأَشْهِدُوا إِذَا تَبَايَعْتُمْ ۚ وَلَا يُضَارَّ كَاتِبٌ وَلَا شَهِيدٌ ۚ وَإِن تَفْعَلُوا فَإِنَّهُ فُسُوقٌ بِكُمْ ۗ وَاتَّقُوا اللَّهَ ۖ وَيُعَلِّمُكُمُ اللَّهُ ۗ وَاللَّهُ بِكُلِّ شَيْءٍ عَلِيمٌ
হে বিশ্বাসস্থাপনকারীগণ, যখন তোমরা কোন নির্দিষ্টকালের জন্যে ঋণ আদান-প্রদান করবে, তখন তা লিখে নাও; মার কোন একজন লেখক যেন ন্যায্যভাবে তোমাদের মধ্যে (ঐ আদান-প্রদানের দলিল) লিখে দেয়, আর কোন লেখক যেন (দলিল) লিখে দিতে অস্বীকার না করে, আল্লাহ তাকে যেরূপ শিক্ষা দিয়েছেন, তার লিখে দেয়া উচিত এবং যে ব্যক্তির উপর দায়িত্ব সেও লিখিয়ে নেবে এবং তার উচিত যে, স্বীয় প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করা ও এর মধ্যে কিছুমাত্র ব্যতিক্রম না করা; অনন্তর যার উপর দায়িত্ব সে যদি নির্বোধ বা অযোগ্য অথবা লিখিয়ে নিতে অসমর্থ হয় তবে তার অভিভাবকেরা ন্যায়সঙ্গতভাবে লিখিয়ে নেবে এবং তোমাদের মধ্যে দু’জন পুরুষ সাক্ষীকে সাক্ষী করবে; কিন্তু যদি দু’জন পুরুষ না পাওয়া যায় তবে সাক্ষীগণের মধ্যে তোমরা একজন পুরুষ ও দু’জন নারী মনোনীত করবে, যদি নারীদ্বয়ের একজন ভুলে যায় তবে উভয়ের একজন অপর জনকে স্মরণ করিয়ে দেবে এবং যখন আহ্বান করা হয় তখন সাক্ষীগণের অস্বীকার না করা উচিত এবং ক্ষুদ্র অথবা বৃহৎ বিষয়ের নির্দিষ্ট সময় লিখে নিতে তোমরা অবহেলা করো না, এটা আল্লাহর নিকট অতি সঙ্গত এবং সাক্ষ্যের জন্যে এটাই দৃঢ়তা ও সন্দেহে পতিত না হওয়ার নিকটতর; কিন্তু যদি তোমরা কারবারে পরস্পরে হাতে হাতে আদান-প্রদান কর, তবে তা লিপিবদ্ধ না করলে তোমাদের পক্ষে দোষ নেই এবং পরস্পর ক্রয়-বিক্রয় করার সময় সাক্ষী রাখবে, এবং লেখককে ও সাক্ষীকে যেন ক্ষতিগ্রস্থ না করা হয়ার যদি কর তবে তা নিশ্চয় তোমাদের পক্ষে অনাচার এবং আল্লাহকে ভয় কর ও আল্লাহই তোমাদেরকে শিক্ষা প্রদান করেন এবং আল্লাহ সর্ববিষয়ে মহাজ্ঞানী।
২৮৩ وَإِن كُنتُمْ عَلَىٰ سَفَرٍ وَلَمْ تَجِدُوا كَاتِبًا فَرِهَانٌ مَّقْبُوضَةٌ ۖ فَإِنْ أَمِنَ بَعْضُكُم بَعْضًا فَلْيُؤَدِّ الَّذِي اؤْتُمِنَ أَمَانَتَهُ وَلْيَتَّقِ اللَّهَ رَبَّهُ ۗ وَلَا تَكْتُمُوا الشَّهَادَةَ ۚ وَمَن يَكْتُمْهَا فَإِنَّهُ آثِمٌ قَلْبُهُ ۗ وَاللَّهُ بِمَا تَعْمَلُونَ عَلِيمٌ
এবং যদি তোমরা সফরে থাক এবং লেখক না পাও, তবে হস্তান্তরকৃত বন্ধক রাখা বিধেয়। অনন্তর কেউ যদি কাউকে বিশ্বাস করে তবে যাকে বিশ্বাস করা হয়েছে তার পক্ষে গচ্ছিত দ্রব্য প্রত্যর্পণ করা উচিত এবং স্বীয় প্রতিপালক আল্লাহকে ভয় করা ও সাক্ষ্যে গোপন না করা উচিত এবং যে কেউ তা গোপন করবে, নিশ্চয় তার মন পাপাচারী; বস্তুতঃ আল্লাহ তোমাদের কার্যকলাপ সম্বন্ধে সম্যক জ্ঞাতা।
২৮৪ لِّلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۗ وَإِن تُبْدُوا مَا فِي أَنفُسِكُمْ أَوْ تُخْفُوهُ يُحَاسِبْكُم بِهِ اللَّهُ ۖ فَيَغْفِرُ لِمَن يَشَاءُ وَيُعَذِّبُ مَن يَشَاءُ ۗ وَاللَّهُ عَلَىٰ كُلِّ شَيْءٍ قَدِيرٌ
নভোমণ্ডলে ও ভূমণ্ডলে যা কিছু রয়েছে সবই আল্লাহর এবং তোমাদের অন্তরে যা রয়েছে, তা প্রকাশ কর বা গোপন রাখ, আল্লাহর তার হিসাব তোমাদের নিকট হতে গ্রহণ করবেন, অতঃপর তিনি যাকে ইচ্ছা ক্ষমা করবেন এবং যাকে ইচ্ছা শাস্তি দিবেন এবং আল্লাহ সর্ব বিষয়ে শক্তিমান।
২৮৫ آمَنَ الرَّسُولُ بِمَا أُنزِلَ إِلَيْهِ مِن رَّبِّهِ وَالْمُؤْمِنُونَ ۚ كُلٌّ آمَنَ بِاللَّهِ وَمَلَائِكَتِهِ وَكُتُبِهِ وَرُسُلِهِ لَا نُفَرِّقُ بَيْنَ أَحَدٍ مِّن رُّسُلِهِ ۚ وَقَالُوا سَمِعْنَا وَأَطَعْنَا ۖ غُفْرَانَكَ رَبَّنَا وَإِلَيْكَ الْمَصِيرُ
রাসূল তাঁর প্রতিপালক হতে তাঁর প্রতি যা অবতীর্ণ হয়েছে তা বিশ্বাস করেন এবং মু’মিনগণও (বিশ্বাস করেন); তাঁরা সবাই ঈমান এনেছে আল্লাহর উপর, তাঁর ফেরেস্তাগণের উপর, তাঁর গ্রন্থসমূহের উপর এবং তাঁর রাসূলগণের উপর। আমরা তাঁর রাসূলগণের মধ্যে কাউকেও পার্থক্য করিনা, তারা বলে, আমরা শ্রবন করলাম ও স্বীকার করলাম, হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা আপনারই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করছি এবং আপনারই দিকে চূড়ান্ত প্রত্যাবর্তন।
২৮৬ لَا يُكَلِّفُ اللَّهُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۚ لَهَا مَا كَسَبَتْ وَعَلَيْهَا مَا اكْتَسَبَتْ ۗ رَبَّنَا لَا تُؤَاخِذْنَا إِن نَّسِينَا أَوْ أَخْطَأْنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تَحْمِلْ عَلَيْنَا إِصْرًا كَمَا حَمَلْتَهُ عَلَى الَّذِينَ مِن قَبْلِنَا ۚ رَبَّنَا وَلَا تُحَمِّلْنَا مَا لَا طَاقَةَ لَنَا بِهِ ۖ وَاعْفُ عَنَّا وَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۚ أَنتَ مَوْلَانَا فَانصُرْنَا عَلَى الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
কোন ব্যক্তিকেই আল্লাহ তার সাধ্যের অতিরিক্ত কর্তব্য পালনে বাধ্য করেন না; কারণ সে যা উপার্জন করেছে তা তারই জন্যে এবং সে যা (অন্যায়) করেছে তা তারই উপর বর্তায়। হে আমাদের প্রতিপালক! যদি আমরা ভুলে যাই অথবা না জেনে ভুল করি তজ্জন্যে আমাদেরকে দোষারোপ করবেন না, হে আমাদের প্রতিপালক, আমাদের পূর্ববর্তীগণের উপর যেরূপ ভার অর্পণ করেছিলেন, আমাদের উপর তদ্রুপ ভার অর্পণ করবেন না; হে আমাদের প্রভু, যা আমাদের শক্তির অতীত ঐরূপ ভার বহনে আমাদেরকে বাধ্য করবেন না এবং আমাদেরকে ক্ষমা করুন ও আমাদেরকে মার্জনা করুন এবং আমাদেরকে দয়া করুন; আপনিই আমাদের অভিভাবক। অতএব কাফির সম্প্রদায়ের বিরূদ্ধে আমাদেরকে সাহায্য করুন।
error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x