০১০. সূরাঃ ইউনুস

আয়াতঅবতীর্ণঃ মক্কা
আয়াত সংখ্যাঃ ১০৯
রুকূঃ ১১
০৫১أَثُمَّ إِذَا مَا وَقَعَ آمَنتُم بِهِ ۚ آلْآنَ وَقَدْ كُنتُم بِهِ تَسْتَعْجِلُونَ
তবে ওটা যখন এসে পড়বে, তখন কে ওটা বিশ্বাস করবে? (বলা হবে) হ্যাঁ এখন মানলে, অথচ তোমরা ওর জন্যে তাড়াহুড়া করছিলে।
০৫২ثُمَّ قِيلَ لِلَّذِينَ ظَلَمُوا ذُوقُوا عَذَابَ الْخُلْدِ هَلْ تُجْزَوْنَ إِلَّا بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ
অতঃপর যালিমদেরকে বলা হবেঃ চিরস্থায়ী শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করতে থাকো, তোমরা তো তোমাদেরই কৃতকর্মের ফল পাচ্ছ।
০৫৩وَيَسْتَنبِئُونَكَ أَحَقٌّ هُوَ ۖ قُلْ إِي وَرَبِّي إِنَّهُ لَحَقٌّ ۖ وَمَا أَنتُم بِمُعْجِزِينَ
তারা তোমাকে জিজ্ঞেস ক্রেঃ ওটা (শাস্তি) কি যথার্থ বিষয়? তুমি বলে দাওঃ হ্যাঁ আমার প্রতিপালকের কসম। ওটা নিশ্চিত সত্য; আর তোমরা কিছুতেই আল্লাহকে অপারগ করতে পারবে না।
০৫৪وَلَوْ أَنَّ لِكُلِّ نَفْسٍ ظَلَمَتْ مَا فِي الْأَرْضِ لَافْتَدَتْ بِهِ ۗ وَأَسَرُّوا النَّدَامَةَ لَمَّا رَأَوُا الْعَذَابَ ۖ وَقُضِيَ بَيْنَهُم بِالْقِسْطِ ۚ وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
আর যদি প্রত্যেক (মুশরিকের) জুলুমকারীর কাছে দুনিয়া ভরা সম্পদও থাকে, তবে সে তা দান করেও নিজের প্রাণ রক্ষা করতে উদ্যত হবে এবং যখন তারা আযাব দেখতে পাবে, তখন অনুতাপকে গোপন রাখবে, আর তাদের ফায়সালা করা হবে ন্যায়ভাবে এবং তাদের প্রতি অবিচার করা হবে না।
০৫৫أَلَا إِنَّ لِلَّهِ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۗ أَلَا إِنَّ وَعْدَ اللَّهِ حَقٌّ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ
স্মরণ রাখো যে, সবই আল্লাহর স্বত্ব যা কিছু আকাশসমূহকে এবং যমীনে রয়েছে; স্মরণ রাখো যে, আল্লাহর অঙ্গীকার সত্য; কিন্তু তাদের অধিকাংশই তা জানে না।
০৫৬هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ وَإِلَيْهِ تُرْجَعُونَ
তিনিই জীবন দান করেন এবং তিনিই মৃত্যু ঘটান, আর তোমরা সবাই তাঁরই পানে প্রত্যাবর্তিত হবে।
০৫৭يَا أَيُّهَا النَّاسُ قَدْ جَاءَتْكُم مَّوْعِظَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَشِفَاءٌ لِّمَا فِي الصُّدُورِ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلْمُؤْمِنِينَ
হে মানব জাতি! তোমাদের কাছে তোমাদের প্রতিপালকের তরফ হতে সমাগত হয়েছে এক নসীহত এবং অন্তরসমূহের সকল রোগের আরোগ্যকারী, আর মু’মিনদের জন্যে পথ প্রদর্শক ও রহমত।
০৫৮قُلْ بِفَضْلِ اللَّهِ وَبِرَحْمَتِهِ فَبِذَٰلِكَ فَلْيَفْرَحُوا هُوَ خَيْرٌ مِّمَّا يَجْمَعُونَ
তুমি বলে দাওঃ আল্লাহর এই দান ও রহমতের (কুরআনের) প্রতি সকলেরই আনন্দিত হওয়া উচিত; এটা (পার্থিব সম্পদ) হতে বহুগুণ উত্তম যা তারা সঞ্চয় করছে।
০৫৯قُلْ أَرَأَيْتُم مَّا أَنزَلَ اللَّهُ لَكُم مِّن رِّزْقٍ فَجَعَلْتُم مِّنْهُ حَرَامًا وَحَلَالًا قُلْ آللَّهُ أَذِنَ لَكُمْ ۖ أَمْ عَلَى اللَّهِ تَفْتَرُونَ
তুমি বলঃ আচ্ছা বলতো, আলাহ তোমাদের জন্যে যা কিছু রিযিক পাঠিয়েছেন, অতঃপর তোমরা ওর কতক অংশ হারাম এবং কতক অংশ হালাল সাব্যস্ত করে নিলে; তুমি জিজ্ঞেস করঃ আল্লাহ কি তোমাদেরকে অনুমতি দিয়েছেন, নাকি তোমরা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করছো?
০৬০وَمَا ظَنُّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ إِنَّ اللَّهَ لَذُو فَضْلٍ عَلَى النَّاسِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَشْكُرُونَ
আর যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে, তাদের কিয়ামত দিবস সম্বন্ধে কি ধারণা? বাস্তবিক, মানুষের উপর আল্লাহর খুবই অনুগ্রহ রয়েছে; কিন্তু অধিকাংশ লোকই অকৃতজ্ঞ।
০৬১وَمَا تَكُونُ فِي شَأْنٍ وَمَا تَتْلُو مِنْهُ مِن قُرْآنٍ وَلَا تَعْمَلُونَ مِنْ عَمَلٍ إِلَّا كُنَّا عَلَيْكُمْ شُهُودًا إِذْ تُفِيضُونَ فِيهِ ۚ وَمَا يَعْزُبُ عَن رَّبِّكَ مِن مِّثْقَالِ ذَرَّةٍ فِي الْأَرْضِ وَلَا فِي السَّمَاءِ وَلَا أَصْغَرَ مِن ذَٰلِكَ وَلَا أَكْبَرَ إِلَّا فِي كِتَابٍ مُّبِينٍ
আর তুমি যে অবস্থাতেই থাক না কেন? আর তুমি (নবী সঃ) যে কোন স্থান হতে কুরআন পাঠ কর এবং তোমরা (অন্যান্য লোক) যে কাজই কর, আমার সব কিছুরই খবর থাকে, যখন তোমরা সেই কাজ করতে শুরু কর; কণা পরিমাণও কোন বস্তু তোমার প্রতিপালকের (জ্ঞানের) অগোচরে নয়ঃ না যমীনে, না আসমানে, আর না কোন বস্তু তা হতে ক্ষুদ্রতর, না তা হতে বৃহত্তর; কিন্তু এই সমস্তই স্পষ্ট কিতাবে (লাওহে মাহফুজে) লিপিবদ্ধ রয়েছে।
০৬২أَلَا إِنَّ أَوْلِيَاءَ اللَّهِ لَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ
মনে রেখো যে, আল্লাহর বন্ধুদের না কোন আশঙ্কা আছে, আর না তারা বিষণ্ণ হবে।
০৬৩الَّذِينَ آمَنُوا وَكَانُوا يَتَّقُونَ
তারা হচ্ছে সেই লোক যারা ঈমান এনেছে এবং (গুনাহ হতে) পরহেয করে থাকে।
০৬৪لَهُمُ الْبُشْرَىٰ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَفِي الْآخِرَةِ ۚ لَا تَبْدِيلَ لِكَلِمَاتِ اللَّهِ ۚ ذَٰلِكَ هُوَ الْفَوْزُ الْعَظِيمُ
তাদের জন্যে সুসংবাদ রয়েছে পার্থিব জীবনে এবং পরকালেও; আল্লাহর থাকায় কোন পরিবর্তন হয় না; এটা হচ্ছে বিরাট সফলতা।
০৬৫وَلَا يَحْزُنكَ قَوْلُهُمْ ۘ إِنَّ الْعِزَّةَ لِلَّهِ جَمِيعًا ۚ هُوَ السَّمِيعُ الْعَلِيمُ
আর তোমাকে যেন তাদের উক্তিগুলো বিষণ্ণ না করে, সকল ইজ্জত-সম্মান আল্লাহরই জন্যে রয়েছে; তিনি শুনেন, জানেন।
০৬৬أَلَا إِنَّ لِلَّهِ مَن فِي السَّمَاوَاتِ وَمَن فِي الْأَرْضِ ۗ وَمَا يَتَّبِعُ الَّذِينَ يَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ شُرَكَاءَ ۚ إِن يَتَّبِعُونَ إِلَّا الظَّنَّ وَإِنْ هُمْ إِلَّا يَخْرُصُونَ
মনে রাখো, যত কিছু আসমানসমূহে আছে এবং যত কিছু যমীনে আছে, এই সমস্তই আল্লাহরই; আর যারা আল্লাহকে ছেড়ে অন্য শরীকদের অনুসরণ করে, তারা কোন বস্তুর অনুসরণ করছে? তারা শুধু অবাস্তব খেয়ালের তাবেদারী করে চলছে এবং শুধু অনুমানপ্রসূত (মিথ্যা) বলা বলছে।
০৬৭هُوَ الَّذِي جَعَلَ لَكُمُ اللَّيْلَ لِتَسْكُنُوا فِيهِ وَالنَّهَارَ مُبْصِرًا ۚ إِنَّ فِي ذَٰلِكَ لَآيَاتٍ لِّقَوْمٍ يَسْمَعُونَ
তিনি এমন, যিনি তোমাদের জন্যে রাত্রি বানিয়েছেন, যেন তোমরা তাতে স্বস্তি লাভ কর, আর দিবসকেও সৃষ্টি করেছেন যে, তা হচ্ছে দেখাশুনার উপকরণ; ওতে নিদর্শনাবলী রয়েছে তাদের জন্যে যারা শোনে।
০৬৮قَالُوا اتَّخَذَ اللَّهُ وَلَدًا ۗ سُبْحَانَهُ ۖ هُوَ الْغَنِيُّ ۖ لَهُ مَا فِي السَّمَاوَاتِ وَمَا فِي الْأَرْضِ ۚ إِنْ عِندَكُم مِّن سُلْطَانٍ بِهَـٰذَا ۚ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ
তারা বলেঃ আল্লাহর সন্তান আছে, তিনি পবিত্র! তিনি তো কারো মুখাপেক্ষী নন; তাঁরই স্বত্বে রয়েছে যা কিছু আসমানসমূহে আছে এবং যা কিছু যমীনে আছে; তোমাদের কাছে এর (উক্তি দাবীর) কোন প্রমাণও নেই; আল্লাহ সম্বন্ধে কি তোমরা এমন কথা আরোপ করছো যা তোমাদের জানা নেই?
০৬৯قُلْ إِنَّ الَّذِينَ يَفْتَرُونَ عَلَى اللَّهِ الْكَذِبَ لَا يُفْلِحُونَ
তুমি বলে দাওঃ যারা আল্লাহর উপর মিথ্যা রচনা করে তারা সফলকাম হবে না।
০৭০مَتَاعٌ فِي الدُّنْيَا ثُمَّ إِلَيْنَا مَرْجِعُهُمْ ثُمَّ نُذِيقُهُمُ الْعَذَابَ الشَّدِيدَ بِمَا كَانُوا يَكْفُرُونَ
এটা দুনিয়ার সামান্য আরাম-আয়েশ মাত্র, তৎপর আমারই দিকে তাদের ফিরে আসতে হবে, তখন আমি তাদেরকে তাদের কুফরীর বিনিময়ে কঠিন শাস্তির স্বাদ গ্রহণ করাবো।
০৭১وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ نُوحٍ إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ يَا قَوْمِ إِن كَانَ كَبُرَ عَلَيْكُم مَّقَامِي وَتَذْكِيرِي بِآيَاتِ اللَّهِ فَعَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْتُ فَأَجْمِعُوا أَمْرَكُمْ وَشُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ لَا يَكُنْ أَمْرُكُمْ عَلَيْكُمْ غُمَّةً ثُمَّ اقْضُوا إِلَيَّ وَلَا تُنظِرُونِ
আর তুমি তাদেরকে নূহের ইতিবৃত্ত পড়ে শোনাও, যখন তিনি নিজের কওমকে বললেনঃ হে আমার কওম! যদি তোমাদের কাছে কঠিন মনে হয় আমার লজ্জাস্থান এবং আল্লাহর আদেশাবলী নসিহত করা, তবে আমার তো আল্লাহরই উপর ভরসা, সুতরাং তোমরা তোমাদের (কল্পিত) শরীকদেরকে সঙ্গে নিয়ে নিজেদের তদবীর মজবুত করে নাও, অতঃপর তোমাদের সেই তদবীর (গোপন ষড়যন্ত্র) যেন তোমাদের দুশ্চিন্তার কারণ না হয়, তারপর আমার সাথে (যা করতে চাও) করে ফেলো, আর আমাকে মোটেই অবকাশ দিও না।
০৭২فَإِن تَوَلَّيْتُمْ فَمَا سَأَلْتُكُم مِّنْ أَجْرٍ ۖ إِنْ أَجْرِيَ إِلَّا عَلَى اللَّهِ ۖ وَأُمِرْتُ أَنْ أَكُونَ مِنَ الْمُسْلِمِينَ
এরপরও যদি তোমরা মুখ ফিরিয়ে নাও, তবে আমি তো তোমাদের কাছে কোন পারিশ্রমিক চাই (না, আমার পারিশ্রমিক তো শুধু আল্লাহরই যিম্মায় রয়েছে, আর আমাকে হুকুম করা হয়েছে যে, আমি যেন অনুগতদের অন্তর্ভুক্ত থাকি।
০৭৩فَكَذَّبُوهُ فَنَجَّيْنَاهُ وَمَن مَّعَهُ فِي الْفُلْكِ وَجَعَلْنَاهُمْ خَلَائِفَ وَأَغْرَقْنَا الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۖ فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُنذَرِينَ
অনন্তর তারা তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো, অতএব আমি তাঁকে এবং যারা তাঁর সাথে নৌকায় ছিল তাদেরকে নাজাত দিলাম ও তাদেরকে আবাদ করলাম, আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল, তাদেরকে নিমজ্জিত করে দিলাম, সুতরাং দেখো কি পরিণাম হয়েছিল তাদের, যাদেরকে ভীতি প্রদর্শন করা হয়েছিল।
০৭৪ثُمَّ بَعَثْنَا مِن بَعْدِهِ رُسُلًا إِلَىٰ قَوْمِهِمْ فَجَاءُوهُم بِالْبَيِّنَاتِ فَمَا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا بِمَا كَذَّبُوا بِهِ مِن قَبْلُ ۚ كَذَٰلِكَ نَطْبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِ الْمُعْتَدِينَ
আবার আমি তার (নূহ আঃ এর পরে) অপর নবীদেরকে তাদের কওমের নিকট প্রেরণ করলাম, সুতরাং তারা তাদের নিকট মু’জিযাসমূহ নিয়ে আসলো, এতদসত্ত্বেও তারা যে বস্তুকে পূর্বে মিথ্যা সাব্যস্ত করেছিল, পরেও তা মেনে নেয়নি। এভাবেই আমি সীমালঙ্ঘনকারীদের অন্তরসমূহের উপর মোহর লাগিয়ে দেই।
০৭৫ثُمَّ بَعَثْنَا مِن بَعْدِهِم مُّوسَىٰ وَهَارُونَ إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ بِآيَاتِنَا فَاسْتَكْبَرُوا وَكَانُوا قَوْمًا مُّجْرِمِينَ
অতঃপর আমি তাদের পর মূসা ও হারূনকে আমার মু’জিযাসমূহ সহকারে ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট পাঠালাম, অনন্তর তারা অহংকার করলো, আর সেই লোকগুলো ছিল পাপাচারী সম্প্রদায়।
০৭৬فَلَمَّا جَاءَهُمُ الْحَقُّ مِنْ عِندِنَا قَالُوا إِنَّ هَـٰذَا لَسِحْرٌ مُّبِينٌ
অতঃপর যখন তাদের প্রতি আমার পক্ষ হতে প্রমাণ পৌঁছলো, তখন তারা বলতে লাগলো, নিশ্চয়ই এটা সুস্পষ্ট যাদু।
০৭৭قَالَ مُوسَىٰ أَتَقُولُونَ لِلْحَقِّ لَمَّا جَاءَكُمْ ۖ أَسِحْرٌ هَـٰذَا وَلَا يُفْلِحُ السَّاحِرُونَ
মূসা বললেনঃ তোমরা কি এ হক সম্পর্কে এমন কথা বলছো, যখন ওটা তোমাদের নিকট পৌঁছলো? এটা কি যাদু? অথচ যাদুকররা তো সফলকাম হয় না!
০৭৮قَالُوا أَجِئْتَنَا لِتَلْفِتَنَا عَمَّا وَجَدْنَا عَلَيْهِ آبَاءَنَا وَتَكُونَ لَكُمَا الْكِبْرِيَاءُ فِي الْأَرْضِ وَمَا نَحْنُ لَكُمَا بِمُؤْمِنِينَ
তারা বলতে লাগলোঃ তুমি কি আমাদের নিকট এই জন্যে এসেছো যে, আমাদেরকে সরিয়ে দিবে সেই তরীকা হতে, যাতে আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদের পেয়েছি, আর পৃথিবীতে তোমাদের দু’জনের আধিপত্য স্থাপিত হয়ে যায়? আর আমরা তোমাদের দু’জনের প্রতি কখনো ঈমান আনব না।
০৭৯وَقَالَ فِرْعَوْنُ ائْتُونِي بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ
এবং ফিরাউন বললোঃ আমার কাছে সমস্ত সুদক্ষ যাদুকরকে উপস্থিত কর।
০৮০فَلَمَّا جَاءَ السَّحَرَةُ قَالَ لَهُم مُّوسَىٰ أَلْقُوا مَا أَنتُم مُّلْقُونَ
অনন্তর যখন যাদুকররা আসলো, তখন মূসা (আঃ) তাদেরকে বললেনঃ নিক্ষেপ কর যা কিছু তোমরা নিক্ষেপ করতে চাও।
০৮১فَلَمَّا أَلْقَوْا قَالَ مُوسَىٰ مَا جِئْتُم بِهِ السِّحْرُ ۖ إِنَّ اللَّهَ سَيُبْطِلُهُ ۖ إِنَّ اللَّهَ لَا يُصْلِحُ عَمَلَ الْمُفْسِدِينَ
অতঃপর যখন তারা নিক্ষেপ করলো, তখন মূসা (আঃ) বললেনঃ যাদু এটাই; নিশ্চয়ই আল্লাহ এখনই এটাকে বানচাল করে দিবেন; (কেননা) আল্লাহ এমন বিপর্যয় সৃষ্টিকারী কাজ সম্পন্ন হতে দেন না।
০৮২وَيُحِقُّ اللَّهُ الْحَقَّ بِكَلِمَاتِهِ وَلَوْ كَرِهَ الْمُجْرِمُونَ
আর আল্লাহ স্বীয় অঙ্গীকার অনুযায়ী হক প্রতিষ্ঠিত করে দেন, যদিও পাপাচারীরা তা অপ্রীতিকর মনে করে।
০৮৩فَمَا آمَنَ لِمُوسَىٰ إِلَّا ذُرِّيَّةٌ مِّن قَوْمِهِ عَلَىٰ خَوْفٍ مِّن فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِمْ أَن يَفْتِنَهُمْ ۚ وَإِنَّ فِرْعَوْنَ لَعَالٍ فِي الْأَرْضِ وَإِنَّهُ لَمِنَ الْمُسْرِفِينَ
বস্তুতঃ মূসা (আঃ)-এর প্রতি তার স্বগোত্রীয় লোকদের মধ্যে (প্রথমে) শুধু অল্প সংখ্যক লোকই ঈমান আনলো, ভীত-সন্ত্রস্ত অবস্থায় ফিরাউন ও তার প্রধানবর্গের ভয়ে যে, তারা তাদেরকে নির্যাতন করবে; আর বাস্তবিক পক্ষে ফিরাউন সেই দেশে ক্ষমতাবান ছিল, আর সে ছিল সীমাতিক্রম কারীদের অন্তর্ভুক্ত।
০৮৪وَقَالَ مُوسَىٰ يَا قَوْمِ إِن كُنتُمْ آمَنتُم بِاللَّهِ فَعَلَيْهِ تَوَكَّلُوا إِن كُنتُم مُّسْلِمِينَ
আর মূসা (আঃ) বললেনঃ হে আমার সম্প্রদায়! যদি তোমরা আল্লাহর উপর ঈমান রাখো, তবে তাঁরই উপর ভরসা কর, যদি তোমরা মুসলিম হও।
০৮৫فَقَالُوا عَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْنَا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا فِتْنَةً لِّلْقَوْمِ الظَّالِمِينَ
তারা বললঃ আমরা আল্লাহরই উপর ভরসা করলাম, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে এই যালিমদের লক্ষ্যস্থল বানাবেন না।
০৮৬وَنَجِّنَا بِرَحْمَتِكَ مِنَ الْقَوْمِ الْكَافِرِينَ
আর আমাদেরকে তোমার নিজ রহমতে এই কাফিরদের (কবল) হতে মুক্তি দিন।
০৮৭وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ وَأَخِيهِ أَن تَبَوَّآ لِقَوْمِكُمَا بِمِصْرَ بُيُوتًا وَاجْعَلُوا بُيُوتَكُمْ قِبْلَةً وَأَقِيمُوا الصَّلَاةَ ۗ وَبَشِّرِ الْمُؤْمِنِينَ
আর আমি মূসা ও তার ভ্রাতার প্রতি ওহী পাঠালাম- তোমরা উভয়ে তোমাদের এই লোকদের জন্যে মিসরে(ই) বাসস্থান বহাল রাখো, আর তোমরা সবাই নিজেদের সেই গৃহগুলোকে নামায পড়ার স্থানরূপে গণ্য কর এবং নামায কায়েম কর, আর মু’মিনদেরকে শুভ সংবাদ জানিয়ে দাও।
০৮৮وَقَالَ مُوسَىٰ رَبَّنَا إِنَّكَ آتَيْتَ فِرْعَوْنَ وَمَلَأَهُ زِينَةً وَأَمْوَالًا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا رَبَّنَا لِيُضِلُّوا عَن سَبِيلِكَ ۖ رَبَّنَا اطْمِسْ عَلَىٰ أَمْوَالِهِمْ وَاشْدُدْ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَلَا يُؤْمِنُوا حَتَّىٰ يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ
আর মূসা (আঃ) বললেনঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গকে দান করেছেন জাঁকজমকের সামগ্রী এবং বিভিন্ন রকমের সম্পদ পার্থিব জীবনে, হে আমাদের রব! যার কারণে তারা আপনার পথ হতে (মানবমণ্ডলীকে) বিভ্রান্ত করে, হে আমাদের প্রতিপালক! তাদের সম্পদগুলোকে নিশ্চিহ্ন করে দিন এবং তাদের অন্তরসমূহকে কঠিন করুন, যাতে তারা ঈমান না আনতে পারে যতক্ষণ, তারা যন্ত্রণাময় আযাবকে দেখে নেয়।
০৮৯قَالَ قَدْ أُجِيبَت دَّعْوَتُكُمَا فَاسْتَقِيمَا وَلَا تَتَّبِعَانِّ سَبِيلَ الَّذِينَ لَا يَعْلَمُونَ
তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ তোমাদের উভয়ের দুআ’ কবুল করা হল, অতএব তোমরা দৃঢ় থাকো, আর তাদের পথ অনুসরণ করো না যাদের জ্ঞান নেই।
০৯০وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتْبَعَهُمْ فِرْعَوْنُ وَجُنُودُهُ بَغْيًا وَعَدْوًا ۖ حَتَّىٰ إِذَا أَدْرَكَهُ الْغَرَقُ قَالَ آمَنتُ أَنَّهُ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا الَّذِي آمَنَتْ بِهِ بَنُو إِسْرَائِيلَ وَأَنَا مِنَ الْمُسْلِمِينَ
আর আমি বানী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করে দিলাম, অতঃপর ফিরাউন তার সৈন্যদলসহ তাদের পশ্চাদনুসরণ করলো যুলুম ও নির্যাতনের উদ্দেশ্যে, এমন কি যখন সে নিমজ্জিত হতে লাগলো, তখন বলতে লাগলোঃ আমি ঈমান আনছি বানী ইসরাঈল যার উপর ঈমান এনেছে, তিনি ছাড়া অন্য কোন সত্য মা’বূদ নেই এবং আমি মুসলিমদের অন্তর্ভুক্ত হচ্ছি।
০৯১آلْآنَ وَقَدْ عَصَيْتَ قَبْلُ وَكُنتَ مِنَ الْمُفْسِدِينَ
এখন ঈমান আনছো? অথচ পূর্ব (মুহূর্ত) পর্যন্ত তুমি নাফরমানী করছিলে এবং ফাসাদীদের অন্তর্ভুক্ত ছিলে।
০৯২فَالْيَوْمَ نُنَجِّيكَ بِبَدَنِكَ لِتَكُونَ لِمَنْ خَلْفَكَ آيَةً ۚ وَإِنَّ كَثِيرًا مِّنَ النَّاسِ عَنْ آيَاتِنَا لَغَافِلُونَ
অতএব, আমি আজ বাঁচিয়ে দিচ্ছি তোমার দেহকে যেন তুমি তোমার পরবর্তী লোকদের জন্যে উপদেশ গ্রহণের উপকরণ হয়ে থাকো; আর প্রকৃতপক্ষে অনেক লোক আমার উপদেশাবলী হতে উদাসীন রয়েছে।
০৯৩وَلَقَدْ بَوَّأْنَا بَنِي إِسْرَائِيلَ مُبَوَّأَ صِدْقٍ وَرَزَقْنَاهُم مِّنَ الطَّيِّبَاتِ فَمَا اخْتَلَفُوا حَتَّىٰ جَاءَهُمُ الْعِلْمُ ۚ إِنَّ رَبَّكَ يَقْضِي بَيْنَهُمْ يَوْمَ الْقِيَامَةِ فِيمَا كَانُوا فِيهِ يَخْتَلِفُونَ
আর আমি বানী ইসরাঈলকে থাকবার জন্য অতি উত্তম বাসস্থান প্রদান করলাম, আর আমি তাদেরকে আহার করবার জন্যে উৎকৃষ্ট বস্তুসমূহ দান করলাম, সুতরাং তারা মতভেদ করেনি এই পর্যন্ত যে, তাদের নিকট (আহকামের) জ্ঞান পৌঁছলো; নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক কিয়ামত দিবসে তাদের মধ্যে সেই সব বিষয়ের মীমাংসা করবেন, যাতে তারা মতভেদ করছিল।
০৯৪فَإِن كُنتَ فِي شَكٍّ مِّمَّا أَنزَلْنَا إِلَيْكَ فَاسْأَلِ الَّذِينَ يَقْرَءُونَ الْكِتَابَ مِن قَبْلِكَ ۚ لَقَدْ جَاءَكَ الْحَقُّ مِن رَّبِّكَ فَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الْمُمْتَرِينَ
অতঃপর (হে নবী সঃ)! যদি তুমি এই (কিতাব) সম্পর্কে সন্দিহান হও, যা আমি তোমার নিকট পাঠিয়েছি, তবে তুমি তাদেরকে জিজ্ঞেস করে দেখো, যারা তোমার পূর্বেকার কিতাবসমূহ পাঠ করে, নিঃসন্দেহে তোমার নিকট এসেছে তোমার প্রতিপালকের পক্ষ হতে সত্য কিতাব, সুতরাং তুমি কখনই সংশয়ীদের অন্তর্ভুক্ত হয়ো না।
০৯৫وَلَا تَكُونَنَّ مِنَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِ اللَّهِ فَتَكُونَ مِنَ الْخَاسِرِينَ
আর ঐসব লোকেরও অন্তর্ভুক্ত হয়ো না, যারা আল্লাহর আয়াতগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, যেন তুমি ধ্বংস হয়ে না যাও
০৯৬إِنَّ الَّذِينَ حَقَّتْ عَلَيْهِمْ كَلِمَتُ رَبِّكَ لَا يُؤْمِنُونَ
নিঃসন্দেহে যাদের সম্বন্ধে তোমার প্রতিপালকের কথা সাব্যস্ত হয়ে গিয়েছে, তারা কখনো ঈমান আনবে না।
০৯৭وَلَوْ جَاءَتْهُمْ كُلُّ آيَةٍ حَتَّىٰ يَرَوُا الْعَذَابَ الْأَلِيمَ
যদিও তাদের নিকট সমস্ত প্রমাণ পৌঁছে যায়, যে পর্যন্ত না তারা যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি দেখে নেয় (কিন্তু তখন ঈমান আনা বৃথা)।
০৯৮فَلَوْلَا كَانَتْ قَرْيَةٌ آمَنَتْ فَنَفَعَهَا إِيمَانُهَا إِلَّا قَوْمَ يُونُسَ لَمَّا آمَنُوا كَشَفْنَا عَنْهُمْ عَذَابَ الْخِزْيِ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا وَمَتَّعْنَاهُمْ إِلَىٰ حِينٍ
সুতরাং এমন কোন জনপদই ঈমান আনেনি যে, তাদের ঈমান আনয়ন উপকারী হয়েছে, ইউনুসের কওম ছাড়া, যখন তারা ঈমান আনলো, তখন আমি তাদের থেকে পার্থিব জীবনে অপমানজনক শাস্তি বিদূরিত করে দিলাম এবং তাদেরকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্যে থাকতে দিলাম এক নির্ধারিত কাল পর্যন্ত।
০৯৯وَلَوْ شَاءَ رَبُّكَ لَآمَنَ مَن فِي الْأَرْضِ كُلُّهُمْ جَمِيعًا ۚ أَفَأَنتَ تُكْرِهُ النَّاسَ حَتَّىٰ يَكُونُوا مُؤْمِنِينَ
আর যদি তোমারত প্রতিপালক ইচ্ছা করতেন তাহলে বিশ্বের সকল লোকই ঈমান আনত; তবে তুমি কি মানুষের উপর জবরদস্তি করতে পার, যাতে তারা ঈমান আনয়ন করে?
১০০وَمَا كَانَ لِنَفْسٍ أَن تُؤْمِنَ إِلَّا بِإِذْنِ اللَّهِ ۚ وَيَجْعَلُ الرِّجْسَ عَلَى الَّذِينَ لَا يَعْقِلُونَ
অথচ আল্লাহর হুকুম ছাড়া কারো ঈমান আনা সম্ভব নয়; আর আল্লাহ নির্বোধ লোকদের উপর (কুফরীর) অপবিত্রতা স্থাপন করে দেন।
error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x