০৭. সূরাঃ আল আ’রাফ

আয়াতঅবতীর্ণঃ মক্কা
আয়াত সংখ্যাঃ ২০৬
রুকূঃ ২৪
০১
المص

আলিফ-লাম-মীম-সুয়াদ।
০২
كِتَابٌ أُنزِلَ إِلَيْكَ فَلَا يَكُن فِي صَدْرِكَ حَرَجٌ مِّنْهُ لِتُنذِرَ بِهِ وَذِكْرَىٰ لِلْمُؤْمِنِينَ

(হে মুহাম্মদ সঃ)! তোমার নিকট এ জন্যে কুরআন অবতীর্ণ করা হয়েছে যাতে তুমি এর দ্বারা মানুষকে সতর্ক করতে পার, আর এটা মুমিনদের জন্যে উপদেশ (ভান্ডার), অতএব, তোমার মনে যেন এটা সম্পর্কে কোনরূপ দ্বিধা-সন্দেহ না থাকে (বা তা প্রচার করতে যেন তোমার অন্তর সংকীর্ণ না হয়)।
০৩
اتَّبِعُوا مَا أُنزِلَ إِلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ وَلَا تَتَّبِعُوا مِن دُونِهِ أَوْلِيَاءَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَذَكَّرُونَ

তোমাদের নিকট তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে যা অবতীর্ণ করা হয়েছে, তোমরা তার অনুসরণ কর, আর তোমরা আল্লাহকে ছেড়ে অন্য কোন বন্ধু ও অভিভাবকের অনুসরণ করো না, তোমরা খুব অল্পই উপদেশ গ্রহণ করে থাক।
০৪
وَكَم مِّن قَرْيَةٍ أَهْلَكْنَاهَا فَجَاءَهَا بَأْسُنَا بَيَاتًا أَوْ هُمْ قَائِلُونَ

আর কত জনপদকেই না আমি ধ্বংস করেছি। ফলে আমার শাস্তি তাদের উপর রাত্রিকালে ঘুমন্ত অবস্থায় অথবা দ্বিপ্রহরে যখন তারা বিশ্রামরত ছিল তখনই আপতিত হয়েছে।
০৫
فَمَا كَانَ دَعْوَاهُمْ إِذْ جَاءَهُم بَأْسُنَا إِلَّا أَن قَالُوا إِنَّا كُنَّا ظَالِمِينَ

আমার শাস্তি যখন তাদের কাছে এসে পড়েছিল, তখন তাদের মুখে ‘বাস্তবিকই আমরা অত্যাচারী ছিলাম’ এই কথা ছাড়া আর কিছুই ছিল না।
০৬
فَلَنَسْأَلَنَّ الَّذِينَ أُرْسِلَ إِلَيْهِمْ وَلَنَسْأَلَنَّ الْمُرْسَلِينَ

অতঃপর আমি (কিয়ামতের দিন) যাদের কাছে রাসূল প্রেরণ করা হয়েছিল তাদেরকে এবং রাসূলদেরকেও অবশ্যই জিজ্ঞাসাবাদ করবো।
০৭
فَلَنَقُصَّنَّ عَلَيْهِم بِعِلْمٍ ۖ وَمَا كُنَّا غَائِبِينَ

তখন আমি তাদের সমস্ত বিবরণ পূর্ণজ্ঞান অনুযায়ী প্রকাশ করে দেবো, আর আমি তো বে-খবর ছিলাম না।
০৮
وَالْوَزْنُ يَوْمَئِذٍ الْحَقُّ ۚ فَمَن ثَقُلَتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

আর সেই দিনের ওজন হবে সঠিক। সুতরাং যাদের (পুণ্যের) পাল্লা ভারী হবে তারাই হবে কৃতকার্য ও সফলকাম।
০৯
وَمَنْ خَفَّتْ مَوَازِينُهُ فَأُولَـٰئِكَ الَّذِينَ خَسِرُوا أَنفُسَهُم بِمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَظْلِمُونَ

আর যাদের (পুণ্যের) পাল্লা হালকা হবে, তারা হবে সেসব লোক যারা নিজেদের ধ্বংস ও ক্ষতি নিজেরাই করেছে, কেননা, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে (বাণীকে) প্রত্যাখ্যান করতো।
১০
وَلَقَدْ مَكَّنَّاكُمْ فِي الْأَرْضِ وَجَعَلْنَا لَكُمْ فِيهَا مَعَايِشَ ۗ قَلِيلًا مَّا تَشْكُرُونَ

আর নিশ্চয়ই আমি তোমাদেরকে ভূ-পৃষ্ঠে থাকবার জায়গা দিয়েছি এবং আমি তোমাদের জন্যে ওতে জীবিকা নির্বাহের উপকরণগুলো সৃষ্টি করেছি, তোমরা খুব কমই কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে থাকো।
১১
وَلَقَدْ خَلَقْنَاكُمْ ثُمَّ صَوَّرْنَاكُمْ ثُمَّ قُلْنَا لِلْمَلَائِكَةِ اسْجُدُوا لِآدَمَ فَسَجَدُوا إِلَّا إِبْلِيسَ لَمْ يَكُن مِّنَ السَّاجِدِينَ

আমিই তোমাদেরকে সৃষ্টি করেছি, অতঃপর তোমাদেরকে রূপ দান করেছি, তারপর আমি ফেরেস্তাদেরকে নির্দেশ দিয়েছি, তোমরা আদম (আঃ)-কে সিজদা কর, তখন ইবলিস ছাড়া সবাই সিজদা করলো, সে সিজদাকারীদের অন্তর্ভুক্ত হল না।
১২
قَالَ مَا مَنَعَكَ أَلَّا تَسْجُدَ إِذْ أَمَرْتُكَ ۖ قَالَ أَنَا خَيْرٌ مِّنْهُ خَلَقْتَنِي مِن نَّارٍ وَخَلَقْتَهُ مِن طِينٍ

তিনি (আল্লাহ) তাকে (ইবলিসকে) জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি যখন তোমাকে আদমকে সেজদা করতে আদেশ করলাম, তখন কোন বস্তু তোমাকে সেজদা করা যেতে হতে নিবৃত্ত করলো? সে উত্তরে বললঃ আমি তার চেয়ে শ্রেষ্ঠ, আপনি আমাকে আগুন দ্বারা সৃষ্টি করেছেন, আর তাকে সৃষ্টি করেছেন কাদামাটি হতে।
১৩
قَالَ فَاهْبِطْ مِنْهَا فَمَا يَكُونُ لَكَ أَن تَتَكَبَّرَ فِيهَا فَاخْرُجْ إِنَّكَ مِنَ الصَّاغِرِينَ

আল্লাহ বললেনঃ এ স্থান থেকে নেমে যাও, এখানে থেকে তুমি অহংকার করবে তা হতে পারে না; সুতরাং বের হয়ে যাও, নিশ্চয়ই তুমি নীচ ও লাঞ্ছিতদের অন্তর্ভুক্ত।
১৪

قَالَ أَنظِرْنِي إِلَىٰ يَوْمِ يُبْعَثُونَ

সে বললঃ (হে আল্লাহ!) আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত (বেঁচে থাকার) অবকাশ দিন।

১৫

قَالَ إِنَّكَ مِنَ الْمُنظَرِينَ

আল্লাহ বললেনঃ (ঠিক আছে) তোমাকে অবকাশ দেয়া হল।

১৬

قَالَ فَبِمَا أَغْوَيْتَنِي لَأَقْعُدَنَّ لَهُمْ صِرَاطَكَ الْمُسْتَقِيمَ

(ইবলিশ) বললঃ আপনি যে আমাকে পথভ্রষ্ট করলেন এ কারণে আমিও শপথ করে বলছিঃ আমি (বানী আদমকে) তাদের (বিভ্রান্ত করার) জন্যে সরল পথের (মাথায়) অবশ্যই ওঁৎ পেতে বসে থাকবো।

১৭

ثُمَّ لَآتِيَنَّهُم مِّن بَيْنِ أَيْدِيهِمْ وَمِنْ خَلْفِهِمْ وَعَنْ أَيْمَانِهِمْ وَعَن شَمَائِلِهِمْ ۖ وَلَا تَجِدُ أَكْثَرَهُمْ شَاكِرِينَ

অতঃপর আমি (পথভ্রষ্ট করার উদ্দেশ্যে) তাদের সম্মুখ দিয়ে, পিছন দিয়ে, ডান দিক দিয়ে এবং বাম দিক দিয়ে তাদের কাছে আসবো, আপনি তাদের অধিকাংশকেই কৃতজ্ঞরূপে পাবেন না।

১৮

قَالَ اخْرُجْ مِنْهَا مَذْءُومًا مَّدْحُورًا ۖ لَّمَن تَبِعَكَ مِنْهُمْ لَأَمْلَأَنَّ جَهَنَّمَ مِنكُمْ أَجْمَعِينَ

তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ তুমি এখান থেকে লাঞ্ছিত ও বিতাড়িত অবস্থায় বের হ্যে যাও, তাদের (বানী আদমের) মধ্যে যারা তোমার অনুসরণ করবে, নিশ্চয়ই আমি তোমাদের সকলের দ্বারা জাহান্নাম পূর্ণ করবো।

১৯

وَيَا آدَمُ اسْكُنْ أَنتَ وَزَوْجُكَ الْجَنَّةَ فَكُلَا مِنْ حَيْثُ شِئْتُمَا وَلَا تَقْرَبَا هَـٰذِهِ الشَّجَرَةَ فَتَكُونَا مِنَ الظَّالِمِينَ

আর হে আদম! তুমি এবং তোমার স্ত্রী জান্নাতে বসবাস কর এবং এখানে তোমাদের মনে যা চায় তাই খাও; কিন্তু এই বৃক্ষের নিকটবর্তী হয়ো না, অন্যথায় অত্যাচারীদের মধ্যে গণ্য হয়ে পড়বে।

২০

فَوَسْوَسَ لَهُمَا الشَّيْطَانُ لِيُبْدِيَ لَهُمَا مَا وُورِيَ عَنْهُمَا مِن سَوْآتِهِمَا وَقَالَ مَا نَهَاكُمَا رَبُّكُمَا عَنْ هَـٰذِهِ الشَّجَرَةِ إِلَّا أَن تَكُونَا مَلَكَيْنِ أَوْ تَكُونَا مِنَ الْخَالِدِينَ

অতঃপর তাদের লজ্জাস্থান যা পরস্পরের কাছে গোপন রাখা হয়েছিল তা প্রকাশ করার জন্যে শয়তান তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিলো, আর বললঃ তোমাদের প্রতিপালক এই বৃক্ষের কাছে যেতে নিষেধ করেছেন এর কারণ এ ছাড়া কিছুই নয় যে, তোমরা যেন ফেরেস্তা হয়ে না যাও অথবা (এই জান্নাতে) চিরন্তন জীবন লাভ করতে না পার।

২১

وَقَاسَمَهُمَا إِنِّي لَكُمَا لَمِنَ النَّاصِحِينَ

সে তাদের উভয়ের নিকট শপথ করে বললঃ আমি তোমাদের হিতাকাঙ্ক্ষী অন্যতম।

২২

فَدَلَّاهُمَا بِغُرُورٍ ۚ فَلَمَّا ذَاقَا الشَّجَرَةَ بَدَتْ لَهُمَا سَوْآتُهُمَا وَطَفِقَا يَخْصِفَانِ عَلَيْهِمَا مِن وَرَقِ الْجَنَّةِ ۖ وَنَادَاهُمَا رَبُّهُمَا أَلَمْ أَنْهَكُمَا عَن تِلْكُمَا الشَّجَرَةِ وَأَقُل لَّكُمَا إِنَّ الشَّيْطَانَ لَكُمَا عَدُوٌّ مُّبِينٌ

সুতরাং সে (ইবলিস) তাঁদের উভয়কে প্রতারণা ও ছলনা দ্বারা নীচে নিয়ে আসল (অর্থাৎ বিভ্রান্ত করলো)। ফলে যখন তারা সেই নিষিদ্ধ গাছের স্বাদ গ্রহণ করে ফেললো, তখন তাদের লজ্জাস্থান তাদের কাছে প্রকাশ হয়ে পড়লো এবং জান্নাতের গাছের পাতা দ্বারা নিজেদেরকে আবৃত করতে লাগলো, এ সময় তাদের প্রতিপালক তাদেরকে সম্বোধন করে বললেনঃ আমি কি এ বৃক্ষ সম্পর্কে তোমাদেরকে নিষেধ করি নি? আর শয়তান যে তোমাদের প্রকাশ্য শত্রু তা কি আমি তোমাদেরকে বলি নি?

২৩

قَالَا رَبَّنَا ظَلَمْنَا أَنفُسَنَا وَإِن لَّمْ تَغْفِرْ لَنَا وَتَرْحَمْنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

তখন তারা বললঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আমরা নিজেদের প্রতি অন্যায় করেছি, আপনি যদি আমাদেরকে দয়া না করেন তবে অবশ্যই আমরা ক্ষতিগ্রস্থদের অন্তর্ভুক্ত হয়ে পড়বো।

২৪

قَالَ اهْبِطُوا بَعْضُكُمْ لِبَعْضٍ عَدُوٌّ ۖ وَلَكُمْ فِي الْأَرْضِ مُسْتَقَرٌّ وَمَتَاعٌ إِلَىٰ حِينٍ

তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ তোমরা একে অন্যের শত্রুরূপে এখান থেকে নেমে যাও, তোমাদের জন্যে পৃথিবীতে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বসবাস করা এবং তথায় জীবন ধারণের উপযোগী সামগ্রীর ব্যবস্থা রয়েছে।

২৫

قَالَ فِيهَا تَحْيَوْنَ وَفِيهَا تَمُوتُونَ وَمِنْهَا تُخْرَجُونَ

তিনি আরও বললেনঃ সেই পৃথিবীতেই তোমরা জীবন-যাপন করবে, সেখানেই তোমাদের মৃত্যু সংঘটিত হবে এবং তথা হতেই তোমাদেরকে বের করা হবে।

২৬

يَا بَنِي آدَمَ قَدْ أَنزَلْنَا عَلَيْكُمْ لِبَاسًا يُوَارِي سَوْآتِكُمْ وَرِيشًا ۖ وَلِبَاسُ التَّقْوَىٰ ذَٰلِكَ خَيْرٌ ۚ ذَٰلِكَ مِنْ آيَاتِ اللَّهِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ

হে বানী আদম! আমি তোমাদেরকে লজ্জাস্থান আবৃত করার ও বেশভুষার জন্যে তোমাদের পোশাক পরিচ্ছদের উপকরণ অবতীর্ণ করেছি (বেশভুষার তুলনায়) আল্লাহ-ভীতি পরিচ্ছদই সর্বোত্তম পরিচ্ছদ এটা আল্লাহর নিদর্শন সমূহের অন্যতম নিদর্শন, সম্ভবতঃ মানুষ এটা হতে উপদেশ গ্রহণ করবে।

২৭

يَا بَنِي آدَمَ لَا يَفْتِنَنَّكُمُ الشَّيْطَانُ كَمَا أَخْرَجَ أَبَوَيْكُم مِّنَ الْجَنَّةِ يَنزِعُ عَنْهُمَا لِبَاسَهُمَا لِيُرِيَهُمَا سَوْآتِهِمَا ۗ إِنَّهُ يَرَاكُمْ هُوَ وَقَبِيلُهُ مِنْ حَيْثُ لَا تَرَوْنَهُمْ ۗ إِنَّا جَعَلْنَا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ لِلَّذِينَ لَا يُؤْمِنُونَ

হে আদম সন্তানগণ! শয়তান যেন তোমাদেরকে সেরূপ ফিতনায় জড়িয়ে ফেলতে না পারে যেরূপ তোমাদের পিতা-মাতাকে (ফিতনায় জড়িয়ে ফেলে) জান্নাত হতে বহিষ্কৃত করেছিল এবং তাদেরকে তাদের লজ্জাস্থান দেখাবার জন্যে বিবস্ত্র করেছিল, সে নিজে এবং তার দল তোমাদেরকে দেখতে পাও না, নিঃসন্দেহে শয়তানকে আমি বেঈমান লোকদের বন্ধু ও অভিভাবক বানিয়ে দিয়েছে।

২৮

وَإِذَا فَعَلُوا فَاحِشَةً قَالُوا وَجَدْنَا عَلَيْهَا آبَاءَنَا وَاللَّهُ أَمَرَنَا بِهَا ۗ قُلْ إِنَّ اللَّهَ لَا يَأْمُرُ بِالْفَحْشَاءِ ۖ أَتَقُولُونَ عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ

যখন তারা কোন নিকৃষ্ট ও অশ্লীল কর্ম করে, তখন তারা বলেঃ আমরা আমাদের পূর্বপুরুষদেরকে এসব কাজ করতে পেয়েছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এটা করতে নির্দেশ দিয়েছেন, হে মুহাম্মদ (সঃ)! তুমি ঘোষণা করে দাও যে, আল্লাহ অশ্লীল ও নিকৃষ্ট কর্মের নির্দেশ দেন না, তোমরা কি আল্লাহ সম্পর্কে এমন সব কথা বলছ যে বিষয়ে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই?

২৯

قُلْ أَمَرَ رَبِّي بِالْقِسْطِ ۖ وَأَقِيمُوا وُجُوهَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَادْعُوهُ مُخْلِصِينَ لَهُ الدِّينَ ۚ كَمَا بَدَأَكُمْ تَعُودُونَ

তুমি ঘোষণা করে দাওঃ আমার প্রতিপালক ন্যায়ের নির্দেশ দিয়েছেন এবং (আরও নির্দেশ দিয়েছেন যে,) তোমরা প্রত্যেক নামাযের সময় তোমাদের মুখমণ্ডলকে (কিবলার দিকে) স্থির রাখ ও তাঁরই আনুগত্যে বিশুদ্ধ মনে একনিষ্ঠভাবে তাঁকেই ডাক, তোমাদেরকে প্রথমে যেভাবে সৃষ্টি করা হয়েছে, তোমরা তেমনিভাবে ফিরে আসবে।

৩০

فَرِيقًا هَدَىٰ وَفَرِيقًا حَقَّ عَلَيْهِمُ الضَّلَالَةُ ۗ إِنَّهُمُ اتَّخَذُوا الشَّيَاطِينَ أَوْلِيَاءَ مِن دُونِ اللَّهِ وَيَحْسَبُونَ أَنَّهُم مُّهْتَدُونَ

এক দলকে আল্লাহ হেদায়েত দান করেছেন এবং অপর দলের জন্যে ভ্রান্তি স্থির হয়েছে, কারণ তারা আল্লাহকে ছেড়ে শয়তানকে অভিভাবক ও বন্ধু বানিয়েছিল এবং নিজেদেরকে হেদায়েতপ্রাপ্ত মনে করত।

৩১

يَا بَنِي آدَمَ خُذُوا زِينَتَكُمْ عِندَ كُلِّ مَسْجِدٍ وَكُلُوا وَاشْرَبُوا وَلَا تُسْرِفُوا ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُسْرِفِينَ

হে আদম সন্তানগণ! প্রত্যেক নামাযের সময় সুন্দর পোশাক-পরিচ্ছদ গ্রহণ কর, আর খাও এবং পান কর, (তবে পরিচ্ছদ ও পানাহারে) অপব্যয় ও অমিতাচার করবে না, কেননা, আল্লাহ অপব্যয় কারীদের ভালোবাসেন না।

৩২

قُلْ مَنْ حَرَّمَ زِينَةَ اللَّهِ الَّتِي أَخْرَجَ لِعِبَادِهِ وَالطَّيِّبَاتِ مِنَ الرِّزْقِ ۚ قُلْ هِيَ لِلَّذِينَ آمَنُوا فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا خَالِصَةً يَوْمَ الْقِيَامَةِ ۗ كَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَعْلَمُونَ

(হে মুহাম্মদ সঃ)! তুমি জিজ্ঞেস কর যেঃ আল্লাহ তাঁর বান্দাদের জন্যে যেসব শোভনীয় বস্তু ও পবিত্র জীবিকা সৃষ্টি করেছেন, তা কে নিষিদ্ধ করেছে? তুমি ঘোষণা করে দাওঃ এ সব বস্তু পার্থিব জীবনে, বিশেষ করে কিয়ামতের দিনে ঐসব লোকের জন্যে যারা মুমিন হবে, এমনিভাবে আমি জ্ঞানী সম্প্রদায়ের জন্যে নিদর্শন সমূহ বিশদভাবে বর্ণনা করে থাকি।

৩৩

قُلْ إِنَّمَا حَرَّمَ رَبِّيَ الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ وَالْإِثْمَ وَالْبَغْيَ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَأَن تُشْرِكُوا بِاللَّهِ مَا لَمْ يُنَزِّلْ بِهِ سُلْطَانًا وَأَن تَقُولُوا عَلَى اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ

(হে মুহাম্মদ সঃ)! তুমি ঘোষণা করে দাওঃ আমার প্রতিপালক প্রকাশ্য ও অপ্রকাশ্য অশ্লীলতা, পাপকাজ, অসংগত ও অত্যাচার ও বাড়াবাড়ি এবং আল্লাহর সাথে কোন কিছুকে শরীক করা যার পক্ষে আল্লাহ কোন দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নি, আর আল্লাহ সম্বন্ধে এমন কিছু বলা যে সম্বন্ধে তোমাদের কোন জ্ঞান নেই; (ইত্যাদি কাজ ও বিষয়সমূহ) নিষিদ্ধ করেছেন।

৩৪

وَلِكُلِّ أُمَّةٍ أَجَلٌ ۖ فَإِذَا جَاءَ أَجَلُهُمْ لَا يَسْتَأْخِرُونَ سَاعَةً ۖ وَلَا يَسْتَقْدِمُونَ

প্রত্যেক জাতির জন্যে একটি নির্দিষ্ট সময় রয়েছে। সুতরাং যখন সেই নির্দিষ্ট সময় উপস্থিত হবে তখন তা এক মুহূর্তকালও আগে এবং পরে হবে না।

৩৫

يَا بَنِي آدَمَ إِمَّا يَأْتِيَنَّكُمْ رُسُلٌ مِّنكُمْ يَقُصُّونَ عَلَيْكُمْ آيَاتِي ۙ فَمَنِ اتَّقَىٰ وَأَصْلَحَ فَلَا خَوْفٌ عَلَيْهِمْ وَلَا هُمْ يَحْزَنُونَ

হে আদম সন্তান! স্মরণ রাখ, তোমাদের মধ্য হতে যদি এমন কোন রাসূল তোমাদের নিকট আসে এবং আমার বাণী ও নিদর্শন তোমাদের কাছে বর্ণনা করে; তখন যারা (আল্লাহকে) ভয় করবে এবং নিজেদেরকে সংশোধন করে নেবে, তাদের কোন ভয়-ভীতি থাকবে না এবং তারা দুঃখিত ও চিন্তিত হবে না।

৩৬

وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ النَّارِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

আর যারা আমার বাণী ও বিধানকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং অহংকার করে তা হতে দূরে সরে রয়েছে, তারাই হবে জাহান্নামী, সেখানে তারা চিরকাল অবস্থান করবে।

৩৭

فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّنِ افْتَرَىٰ عَلَى اللَّهِ كَذِبًا أَوْ كَذَّبَ بِآيَاتِهِ ۚ أُولَـٰئِكَ يَنَالُهُمْ نَصِيبُهُم مِّنَ الْكِتَابِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا جَاءَتْهُمْ رُسُلُنَا يَتَوَفَّوْنَهُمْ قَالُوا أَيْنَ مَا كُنتُمْ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ ۖ قَالُوا ضَلُّوا عَنَّا وَشَهِدُوا عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ أَنَّهُمْ كَانُوا كَافِرِينَ

যে ব্যক্তি আল্লাহর উপর মিথ্যা আরোপ করে এবং তাঁর বাণী ও নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে; তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে হতে পারে? তাদের ভাগ্যলিপিতে লিখিত নির্ধারিত অংশ তাদের নিকট পৌঁছবেই, পরিশেষে যখন আমার প্রেরিত ফেরেস্তা তাদের প্রাণ হরণের জন্যে তাদের নিকট আসবে, তখন ফেরেস্তারা জিজ্ঞেস করবেঃ আল্লাহকে বাদ দিয়ে যাদেরকে তোমরা ডাকতে তারা কোথায়? তখন তারা উত্তরে বলবেঃ আমাদের হতে তারা অদৃশ্য হয়ে গেছে, আর নিজেরাই স্বীকারোক্তি করবে যে, তারা কাফির বা সত্য প্রত্যাখ্যানকারী ছিল।

৩৮

قَالَ ادْخُلُوا فِي أُمَمٍ قَدْ خَلَتْ مِن قَبْلِكُم مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ فِي النَّارِ ۖ كُلَّمَا دَخَلَتْ أُمَّةٌ لَّعَنَتْ أُخْتَهَا ۖ حَتَّىٰ إِذَا ادَّارَكُوا فِيهَا جَمِيعًا قَالَتْ أُخْرَاهُمْ لِأُولَاهُمْ رَبَّنَا هَـٰؤُلَاءِ أَضَلُّونَا فَآتِهِمْ عَذَابًا ضِعْفًا مِّنَ النَّارِ ۖ قَالَ لِكُلٍّ ضِعْفٌ وَلَـٰكِن لَّا تَعْلَمُونَ

আল্লাহ বলবেনঃ তোমাদের পূর্বে মানুষ ও জিন হতে যেসব সম্প্রদায় গত হয়েছে, তাদের সাথে তোমরাও জাহান্নামে প্রবেশ কর, যখনই কোন দল তাতে প্রবেশ করবে তখনই অপর দলকে তারা অভিসম্পাত করবে, পরিশেষে যখন তাতে সকলে জামায়েত হবে, তখন পরবর্তীগণ পূর্ববর্তীদের সম্পর্কে বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! এরাই আমাদেরকে বিভ্রান্ত করেছে, সুতরাং আপনি এদের জাহান্নামের শাস্তি দ্বিগুণ দিন তখন আল্লাহ বলবেনঃ প্রত্যেকের জন্যেই দ্বিগুণ রয়েছে; কিন্তু তোমরা তা জ্ঞাত নও।

৩৯

وَقَالَتْ أُولَاهُمْ لِأُخْرَاهُمْ فَمَا كَانَ لَكُمْ عَلَيْنَا مِن فَضْلٍ فَذُوقُوا الْعَذَابَ بِمَا كُنتُمْ تَكْسِبُونَ

আর পূর্ববর্তী লোকেরা পরবর্তী লোকদের উদ্দেশ্যে বলবেঃ আমাদের উপর তোমাদের কোন শ্রেষ্ঠত্ব নেই, সুতরাং তোমরা তোমাদের কৃতকর্মের ফলস্বরূপ শাস্তি ভোগ করতে থাক।

৪০

إِنَّ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَاسْتَكْبَرُوا عَنْهَا لَا تُفَتَّحُ لَهُمْ أَبْوَابُ السَّمَاءِ وَلَا يَدْخُلُونَ الْجَنَّةَ حَتَّىٰ يَلِجَ الْجَمَلُ فِي سَمِّ الْخِيَاطِ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُجْرِمِينَ

নিশ্চয় যারা আমার আয়াতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে এবং অহংকার বশতঃ তা থেকে ফিরে থাকে, তাদের জন্যে আকাশের দ্বার উন্মুক্ত করা হবে না এবং তারা জান্নাতেও প্রবেশ করতে পারবে না, যতক্ষণ না সূচের ছিদ্র পথে উষ্ট্র প্রবেশ করে, এমনিভাবেই আমি অপরাধীদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।

৪১

لَهُم مِّن جَهَنَّمَ مِهَادٌ وَمِن فَوْقِهِمْ غَوَاشٍ ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الظَّالِمِينَ

তাদের জন্যে হবে জাহান্নামের (আগুনের) বিছানা এবং তাদের উপরে হবে আগুনের চাদর (যা তাদেরকে আচ্ছাদন করে নেবে)। এমনিভাবেই আমি যালিমদেরকে প্রতিফল দিয়ে থাকি।

৪২

وَالَّذِينَ آمَنُوا وَعَمِلُوا الصَّالِحَاتِ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا أُولَـٰئِكَ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ ۖ هُمْ فِيهَا خَالِدُونَ

আর যারা ঈমান এনেছে ও ভাল কাজ করেছে এমন কোন ব্যক্তিকে আমি তার সাধ্যাতীত দায়িত্ব অর্পণ করি না; তারাই হবে জান্নাতবাসী, এবং তারাই হবে সেখানে চিরকাল অবস্থানকারী।

৪৩

وَنَزَعْنَا مَا فِي صُدُورِهِم مِّنْ غِلٍّ تَجْرِي مِن تَحْتِهِمُ الْأَنْهَارُ ۖ وَقَالُوا الْحَمْدُ لِلَّهِ الَّذِي هَدَانَا لِهَـٰذَا وَمَا كُنَّا لِنَهْتَدِيَ لَوْلَا أَنْ هَدَانَا اللَّهُ ۖ لَقَدْ جَاءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ ۖ وَنُودُوا أَن تِلْكُمُ الْجَنَّةُ أُورِثْتُمُوهَا بِمَا كُنتُمْ تَعْمَلُونَ

আর তাদের অন্তরে যা কিছু ঈর্ষা ও বিদ্বেষ রয়েছে তা আমি দূর করে দেবো, তাদের নিম্নদেশ দিয়ে নদীসমূহ প্রবাহিত হবে, তখন তারা বলবেঃ সমস্ত প্রশংসা সেই আল্লাহর জন্যে যিনি আমাদেরকে হেদায়েতপ্রাপ্ত হতাম না, আমাদের প্রতিপালকের প্রেরিত রাসূলগণ সত্যবাণী নিয়ে এসেছিলেন, আর তাদেরকে সম্বোধন করে বলা হবে, তোমরা যে (ভাল) আমল করতে তারই জন্যে তোমাদেরকে এই জান্নাতের উত্তরাধিকারী বানানো হয়েছে।

৪৪

وَنَادَىٰ أَصْحَابُ الْجَنَّةِ أَصْحَابَ النَّارِ أَن قَدْ وَجَدْنَا مَا وَعَدَنَا رَبُّنَا حَقًّا فَهَلْ وَجَدتُّم مَّا وَعَدَ رَبُّكُمْ حَقًّا ۖ قَالُوا نَعَمْ ۚ فَأَذَّنَ مُؤَذِّنٌ بَيْنَهُمْ أَن لَّعْنَةُ اللَّهِ عَلَى الظَّالِمِينَ

আর তখন জান্নাতবাসীরা জাহান্নাম বাসীদেরকে (উপহাস করে) বলবেঃ আমাদের প্রতিপালক যেসব অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি আমাদেরকে দিয়েছিলেন, আমরা তা বাস্তবভাবে পেয়েছি; কিন্তু তোমাদের প্রতিপালক যে প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন তা কি তোমরা সত্য ও বাস্তবরূপে পেয়েছো? তখন তারা বলবে হ্যাঁ, পেয়েছি, (এ সময়) তাদের মধ্যে জনৈক ঘোষক ঘোষণা করে দেবেন যে, যালিমদের উপর আল্লাহর অভিসম্পাত।

৪৫

الَّذِينَ يَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ وَيَبْغُونَهَا عِوَجًا وَهُم بِالْآخِرَةِ كَافِرُونَ

যারা আল্লাহর পথে চলতে (মানুষকে) বাধা দিতো এবং ওতে বক্রতা অনুসন্ধান করতো, আর তারা পরকালকেও অস্বীকার করতো।

৪৬

وَبَيْنَهُمَا حِجَابٌ ۚ وَعَلَى الْأَعْرَافِ رِجَالٌ يَعْرِفُونَ كُلًّا بِسِيمَاهُمْ ۚ وَنَادَوْا أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَن سَلَامٌ عَلَيْكُمْ ۚ لَمْ يَدْخُلُوهَا وَهُمْ يَطْمَعُونَ

এই উভয় শ্রেণীর লোকদের মাঝে পার্থক্যকারী একটি পর্দা রয়েছে, আর আ’রাফে (জান্নাত ও জাহান্নামের মধ্যবর্তী স্থানে অবস্থিত উঁচু দেয়ালের উপরে) অনেক লোক থাকবে, তারা প্রত্যেককে তাদের লক্ষণ ও চিহ্ন দ্বারা চিনতে পারবে, আর জান্নাত বাসীদেরকে ডেকে বলবেঃ তোমাদের প্রতি শান্তি বর্ষিত হোক, তখনো এরা (আ’রাফবাসীরা) জান্নাতে প্রবেশ করেনি বটে; কিন্তু ওর আকাঙ্ক্ষা করে।

৪৭

وَإِذَا صُرِفَتْ أَبْصَارُهُمْ تِلْقَاءَ أَصْحَابِ النَّارِ قَالُوا رَبَّنَا لَا تَجْعَلْنَا مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

আর যখন জাহান্নাম বাসীদের প্রতি তাদের দৃষ্টি ফিরিয়ে দেয়া হবে, তখন তারা (আ’রাফবাসীরা) বলবেঃ হে আমাদের প্রতিপালক! আপনি আমাদেরকে যালিম সম্প্রদায়ের সঙ্গী করবেন না।

৪৮

وَنَادَىٰ أَصْحَابُ الْأَعْرَافِ رِجَالًا يَعْرِفُونَهُم بِسِيمَاهُمْ قَالُوا مَا أَغْنَىٰ عَنكُمْ جَمْعُكُمْ وَمَا كُنتُمْ تَسْتَكْبِرُونَ

আ’রাফবাসীরা যেসব জাহান্নামী লোককে তাদের লক্ষণ দ্বারা চিনতে পারবে তাদেরকে ডাক দিয়ে বলবেঃ তোমাদের বাহিনী (ও পার্থিব জীবনের ধন-সম্পদ) এবং তোমাদের গর্ব-অহংকার তোমাদের কোনই উপকারে আসল না।

৪৯

أَهَـٰؤُلَاءِ الَّذِينَ أَقْسَمْتُمْ لَا يَنَالُهُمُ اللَّهُ بِرَحْمَةٍ ۚ ادْخُلُوا الْجَنَّةَ لَا خَوْفٌ عَلَيْكُمْ وَلَا أَنتُمْ تَحْزَنُونَ

আর সেই জান্নাতবাসীরা কি সে সমস্ত লোক যাদের সম্পর্কে তোমরা কসম করে বলতে যে, এদের প্রতি আল্লাহ দয়া করবেন না? (অথচ তাদের জন্যে এই ফরমান জারী হল যে,) তোমরা জান্নাতে প্রবেশ কর, তোমাদের কোন ভয় নেই এবং তোমরা চিন্তিত ও দুঃখিত হবে না।

৫০

وَنَادَىٰ أَصْحَابُ النَّارِ أَصْحَابَ الْجَنَّةِ أَنْ أَفِيضُوا عَلَيْنَا مِنَ الْمَاءِ أَوْ مِمَّا رَزَقَكُمُ اللَّهُ ۚ قَالُوا إِنَّ اللَّهَ حَرَّمَهُمَا عَلَى الْكَافِرِينَ

আর জাহান্নামবাসীরা জান্নাতবাসীদেরকে ডেকে বলবেঃ আমাদের উপর কিছু পানি ঢেলে দাও অথবা তোমাদের আল্লাহ প্রদত্ত জীবিকা হতে কিছু প্রদান কর, তারা বলবেঃ আল্লাহ এসব জিনিষ কাফেরদের প্রতি হারাম করে দিয়েছেন।

০৭. সূরাঃ আল আ’রাফ

আয়াত নংঅবতীর্ণঃ মক্কা
আয়াত সংখ্যাঃ ২০৬
রুকূঃ ২৪
৫১

الَّذِينَ اتَّخَذُوا دِينَهُمْ لَهْوًا وَلَعِبًا وَغَرَّتْهُمُ الْحَيَاةُ الدُّنْيَا ۚ فَالْيَوْمَ نَنسَاهُمْ كَمَا نَسُوا لِقَاءَ يَوْمِهِمْ هَـٰذَا وَمَا كَانُوا بِآيَاتِنَا يَجْحَدُونَ

যারা নিজেদের দ্বীনকে খেল তামাশার বস্তুতে পরিণত করেছিল এবং পার্থিব জীবন যাদেরকে প্রতারণা ও গোলক ধাঁধায় নিমজ্জিত করে রেখেছিল, সুতরাং আজকের দিনে আমি তাদেরকে তেমনিভাবে ভুলে থাকবো যেমনিভাবে তারা এ দিনের সাক্ষাতের কথা ভুলে গিয়েছিল এবং যেমন তারা আমার নিদর্শন ও আয়াতসমূহকে অস্বীকার করছিল।

৫২

وَلَقَدْ جِئْنَاهُم بِكِتَابٍ فَصَّلْنَاهُ عَلَىٰ عِلْمٍ هُدًى وَرَحْمَةً لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

আর আমি তাদের নিকট এমন একখানা কিতাব পৌঁছিয়ে ছিলাম যাকে আমি জ্ঞান তথ্যে সমৃদ্ধ ও সুবিস্তৃত করেছিলাম এবং যা ছিল ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে হেদায়েত ও রহমতের প্রতীক।

৫৩

هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا تَأْوِيلَهُ ۚ يَوْمَ يَأْتِي تَأْوِيلُهُ يَقُولُ الَّذِينَ نَسُوهُ مِن قَبْلُ قَدْ جَاءَتْ رُسُلُ رَبِّنَا بِالْحَقِّ فَهَل لَّنَا مِن شُفَعَاءَ فَيَشْفَعُوا لَنَا أَوْ نُرَدُّ فَنَعْمَلَ غَيْرَ الَّذِي كُنَّا نَعْمَلُ ۚ قَدْ خَسِرُوا أَنفُسَهُمْ وَضَلَّ عَنْهُم مَّا كَانُوا يَفْتَرُونَ

তারা আর কোন কিছুর অপেক্ষা করছে না, শুধুমাত্র ওর সর্বশেষ পরিণতির অপেক্ষায় রয়েছে, যেদিন এর সর্বশেষ পরিণতি এসে সমুপস্থিত হবে এবং সে দিন যারা এর আগমনের কথা ভুলে গিয়েছিল তারা বলবেঃ বাস্তবিকই আমাদের প্রতিপালকের রাসূলগণ সত্য কথা এনেছিলেন, সুতরাং (এখন) এমন কোন সুপারিশকারী আছে কি যারা আমাদের জন্যে সুপারিশ করবে? অথবা আমাদেরকে কি পুনরায় দুনিয়ায় পাঠানো যেতে পারে যাতে আমরা পূর্বের কৃতকর্মের তুলনায় ভিন্ন কিছু করতে পারি? নিঃসন্দেহে তারা নিজেরাই নিজেদের ক্ষতি করেছে, আর তারা যেসব মিথ্যা (মা’বূদ ও রসম-রেওয়াজ) রচনা করেছিল, তাও তাদের হতে অদৃশ্য হয়েছে।

৫৪

إِنَّ رَبَّكُمُ اللَّهُ الَّذِي خَلَقَ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضَ فِي سِتَّةِ أَيَّامٍ ثُمَّ اسْتَوَىٰ عَلَى الْعَرْشِ يُغْشِي اللَّيْلَ النَّهَارَ يَطْلُبُهُ حَثِيثًا وَالشَّمْسَ وَالْقَمَرَ وَالنُّجُومَ مُسَخَّرَاتٍ بِأَمْرِهِ ۗ أَلَا لَهُ الْخَلْقُ وَالْأَمْرُ ۗ تَبَارَكَ اللَّهُ رَبُّ الْعَالَمِينَ

নিশ্চয়ই তোমাদের প্রতিপালক হচ্ছেন সে আল্লাহ যিনি আসমান ও যমীনকে ছয়দিনে সৃষ্টি করেছেন, অতঃপর তিনি স্বীয় আরশের উপর সমুন্নীত হন, তিনি দিবসকে রাত্রি দ্বারা আচ্ছাদিত করেন, এমন ভাবে যে রাত্রি ও দিবস একে অন্যকে অনুসরণ করে চলে ত্বরিত গতিতে; সূর্য, চন্দ্র ও নক্ষত্ররাজী সবই তাঁর হুকুমের অনুগত, জেনে রাখো, সৃষ্টির একমাত্র কর্তা তিনিই আর হুকুমের একমাত্র মালিক তিনিই, সারা জাহানের প্রতিপালক আল্লাহ হলেন বরকতময়।

৫৫

ادْعُوا رَبَّكُمْ تَضَرُّعًا وَخُفْيَةً ۚ إِنَّهُ لَا يُحِبُّ الْمُعْتَدِينَ

তোমরা বিনীতভাবে ও সঙ্গোপনে তোমাদের প্রতিপালককে ডাকবে, তিনি সীমালঙ্ঘনকারীকে ভালোবাসেন না।

৫৬

وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا وَادْعُوهُ خَوْفًا وَطَمَعًا ۚ إِنَّ رَحْمَتَ اللَّهِ قَرِيبٌ مِّنَ الْمُحْسِنِينَ

দুনিয়ার শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনের পর ওতে বিপর্যয় ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করো না, আর আল্লাহকে ভয়-ভীতি ও আশা-আকাঙ্ক্ষার সাথে ডাক, নিঃসন্দেহে আল্লাহর রহমত সৎকর্মশীলদের অতি সন্নিকটে।

৫৭

وَهُوَ الَّذِي يُرْسِلُ الرِّيَاحَ بُشْرًا بَيْنَ يَدَيْ رَحْمَتِهِ ۖ حَتَّىٰ إِذَا أَقَلَّتْ سَحَابًا ثِقَالًا سُقْنَاهُ لِبَلَدٍ مَّيِّتٍ فَأَنزَلْنَا بِهِ الْمَاءَ فَأَخْرَجْنَا بِهِ مِن كُلِّ الثَّمَرَاتِ ۚ كَذَٰلِكَ نُخْرِجُ الْمَوْتَىٰ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ

সেই আল্লাহই স্বীয় রহমতের (বৃষ্টির) আগে আগে বাতাসকে সুসংবাদ রূপে প্রেরণ করেন, অবশেষে যখন ঐ বাতাস ভারী মেঘমালাকে বহন করে, তখন আমি এই মেঘমালাকে কোন নির্জীব ভূ-খন্ডের দিকে প্রেরণ করি, অতঃপর ওটা হতে বারিধারা বর্ষণ করি, তারপর সেই পানির সাহায্যে সেখানে সর্বপ্রকার ফল-ফলাদি উৎপাদন করি, এমনভাবেই আমি (কিয়ামতের দিন) মৃতকে জীবিত করবো, সম্ভবত তোমরা এটা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করবে।

৫৮

وَالْبَلَدُ الطَّيِّبُ يَخْرُجُ نَبَاتُهُ بِإِذْنِ رَبِّهِ ۖ وَالَّذِي خَبُثَ لَا يَخْرُجُ إِلَّا نَكِدًا ۚ كَذَٰلِكَ نُصَرِّفُ الْآيَاتِ لِقَوْمٍ يَشْكُرُونَ

আর ভাল উৎকৃষ্ট ভূমি ওর প্রতিপালকের নির্দেশক্রমে খুব ভাল ফল ফলায়, আর যা নিকৃষ্ট ভূমি, তাতে খুব কমই ফসল ফলে থাকে, এমনিভাবেই আমি কৃতজ্ঞতা পরায়ণদের জন্যে আমার নিদর্শন বিবৃত করে থাকি।

৫৯

لَقَدْ أَرْسَلْنَا نُوحًا إِلَىٰ قَوْمِهِ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُ إِنِّي أَخَافُ عَلَيْكُمْ عَذَابَ يَوْمٍ عَظِيمٍ

আমি নূহ (আঃ)-কে তার জাতির নিকট প্রেরণ করেছিলাম, সুতরাং সে তাদেরকে সম্বোধন করে বলেছিলঃ হে আমার জাতি! তোমরা শুধু আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন সত্য মাবূদ নেই, আমি তোমাদের প্রতি এক মহা দিবসের শাস্তি আশঙ্কা করছি।

৬০

قَالَ الْمَلَأُ مِن قَوْمِهِ إِنَّا لَنَرَاكَ فِي ضَلَالٍ مُّبِينٍ

তখন তার জাতির প্রধান ও নেতাগণ বললঃ নিশ্চয়ই আমরা তোমাকে স্পষ্ট বিভ্রান্তির মধ্যে দেখছি।

৬১

قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ بِي ضَلَالَةٌ وَلَـٰكِنِّي رَسُولٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ

তিনি বললেনঃ হে আমার জাতি! আমি কোন ভুল-ভ্রান্তি ও গুমরাহীর মধ্যে লিপ্ত নই; বরং আমি সারা জাহানের প্রতিপালকের (প্রেরিত) একজন রাসূল।

৬২

أُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّي وَأَنصَحُ لَكُمْ وَأَعْلَمُ مِنَ اللَّهِ مَا لَا تَعْلَمُونَ

আমি আমার প্রতিপালকের পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিচ্ছি, আর আমি তোমাদেরকে হিতোপদেশ দিচ্ছি, আর তোমরা যা জান না আমি তা আল্লাহর নিকট থেকে জেনে থাকি।

৬৩

أَوَعَجِبْتُمْ أَن جَاءَكُمْ ذِكْرٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ وَلِتَتَّقُوا وَلَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

তোমাদের মধ্যকার একজন লোকের মারফত তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে উপদেশ বাণী আসায় কি তোমরা বিস্মিত হয়েছো? যাতে তিনি তোমাদেরকে সতর্ক ও হুঁশিয়ার করতে পারেন এবং যাতে (তোমরা সাবধান হও,) তাকওয়া অবলম্বন করতে পার, হয়তো তোমাদের প্রতি অনুগ্রহ করা হবে।

৬৪

فَكَذَّبُوهُ فَأَنجَيْنَاهُ وَالَّذِينَ مَعَهُ فِي الْفُلْكِ وَأَغْرَقْنَا الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۚ إِنَّهُمْ كَانُوا قَوْمًا عَمِينَ

কিন্তু তারা তাঁকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করলো, ফলে তাকে এবং তাঁর সাথে নৌকায় যারা ছিল তাদেরকে (আযাব হতে) রক্ষা করলাম, আর যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল, তাদেরকে (প্লাবনের পানিতে) ডুবিয়ে মারলাম, বস্তুতঃ নিঃসন্দেহে তারা ছিল এক অজ্ঞ ও ভ্রান্ত সম্প্রদায়।

৬৫

وَإِلَىٰ عَادٍ أَخَاهُمْ هُودًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُ ۚ أَفَلَا تَتَّقُونَ

আর আমি আ’দ জাতির নিকট তাদের ভাই হূদ (আঃ)-কে (নবীরূপে) পাঠিয়েছিয়াম, সে বললঃ হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর, আল্লাহ ছাড়া তোমাদের আর সত্য মা’বূদ নেই, তোমরা কি (এখনো) সাবধান হবে না? (আল্লাহভীতি অর্জন করবে না?)

৬৬

قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن قَوْمِهِ إِنَّا لَنَرَاكَ فِي سَفَاهَةٍ وَإِنَّا لَنَظُنُّكَ مِنَ الْكَاذِبِينَ

তখন তার জাতির কাফির লোকদের নেতাগণ বললঃ অবশ্যই আমরা তোমাকে নির্বোধ দেখছি এবং আমরা তো তোমাকে নিশ্চিতরূপে মিথ্যাবাদীদের অন্তর্গত ধারণা করছি।

৬৭

قَالَ يَا قَوْمِ لَيْسَ بِي سَفَاهَةٌ وَلَـٰكِنِّي رَسُولٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ

হে (হূদ আঃ) বললঃ হে আমার জাত! আমি নির্বোধ নই; বরং আমি হলাম সারা জাহানের প্রতিপালকের প্রেরিত রাসূল।

৬৮

أُبَلِّغُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّي وَأَنَا لَكُمْ نَاصِحٌ أَمِينٌ

আমি আমার প্রতিপালকের পয়গাম তোমাদের নিকট পৌঁছিয়ে দিচ্ছি, আর আমি তোমাদের একজন বিশ্বস্ত হিতাকাঙ্ক্ষী।

৬৯

أَوَعَجِبْتُمْ أَن جَاءَكُمْ ذِكْرٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَلَىٰ رَجُلٍ مِّنكُمْ لِيُنذِرَكُمْ ۚ وَاذْكُرُوا إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَاءَ مِن بَعْدِ قَوْمِ نُوحٍ وَزَادَكُمْ فِي الْخَلْقِ بَسْطَةً ۖ فَاذْكُرُوا آلَاءَ اللَّهِ لَعَلَّكُمْ تُفْلِحُونَ

তোমরা কি এতে বিস্মিত হচ্ছো যে, তোমাদের জাতিরই একটি লোকের মাধ্যমে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তাঁর বিধান ও উপদেশ তোমাদেরকে সতর্ক করার উদ্দেশ্যে তোমাদের কাছে এসেছে, তোমরা সেই অবস্থার কথা স্মরণ কর, যখন নূহের (আঃ) সম্প্রদায়ের পর আল্লাহ তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছেন এবং তোমাদের আকার-আকৃতি অন্যদের অপেক্ষা শক্তিতে অধিকতর সমৃদ্ধ করেছেন। সুতরাং তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহ স্মরণ কর, হয়তো তোমরা সফলকাম হবে।

৭০

قَالُوا أَجِئْتَنَا لِنَعْبُدَ اللَّهَ وَحْدَهُ وَنَذَرَ مَا كَانَ يَعْبُدُ آبَاؤُنَا ۖ فَأْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ

তারা বললঃ তুমি কি আমাদের নিকট শুধু এই উদ্দেশ্যে এসেছো, যেন আমরা একমাত্র আল্লাহরই ইবাদত করি এবং আমাদের পূর্বপুরুষগণ যাদের ইবাদত করতো তাদেরকে বর্জন করি? তাহলে তুমি তোমার কথা ও দাবীতে সত্যবাদী হলে আমাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন কর।

৭১

قَالَ قَدْ وَقَعَ عَلَيْكُم مِّن رَّبِّكُمْ رِجْسٌ وَغَضَبٌ ۖ أَتُجَادِلُونَنِي فِي أَسْمَاءٍ سَمَّيْتُمُوهَا أَنتُمْ وَآبَاؤُكُم مَّا نَزَّلَ اللَّهُ بِهَا مِن سُلْطَانٍ ۚ فَانتَظِرُوا إِنِّي مَعَكُم مِّنَ الْمُنتَظِرِينَ

সে বললঃ তোমাদের প্রতিপালকের শাস্তি ও ক্রোধ তোমাদের উপর এসেই পড়বে, তোমরা কি আমার সাথে এমন কতগুলো নাম সম্বন্ধে বিতর্ক করছো যার নামকরণ করেছো তোমরা এবং তোমাদের বাপ-দারারা, যে বিষয়ে আল্লাহ কোন দলীল-প্রমাণ অবতীর্ণ করেন নই? সুতরাং তোমরা (শাস্তির জন্যে) অপেক্ষা করতে থাক, আমিও তোমাদের সাথে অপেক্ষা করছি।

৭২

فَأَنجَيْنَاهُ وَالَّذِينَ مَعَهُ بِرَحْمَةٍ مِّنَّا وَقَطَعْنَا دَابِرَ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۖ وَمَا كَانُوا مُؤْمِنِينَ

অতঃপর আমি তাঁকে (হূদকে) এবং তার সঙ্গী-সাথীদেরকে (শাস্তি হতে) আমার অনুগ্রহে রক্ষা করলাম, আর যারা আমার নিদর্শনকে (বিধানকে) মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল এবং যারা ঈমানদার ছিল না তাদের মূলোৎপাটন করে ছাড়লাম।

৭৩

وَإِلَىٰ ثَمُودَ أَخَاهُمْ صَالِحًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُ ۖ قَدْ جَاءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ هَـٰذِهِ نَاقَةُ اللَّهِ لَكُمْ آيَةً ۖ فَذَرُوهَا تَأْكُلْ فِي أَرْضِ اللَّهِ ۖ وَلَا تَمَسُّوهَا بِسُوءٍ فَيَأْخُذَكُمْ عَذَابٌ أَلِيمٌ

আর আমি সামূদ জাতির নিকট তাদের ভ্রাতা সালেহ (আঃ)-কে প্রেরণ করেছিলাম, সে বললঃ হে আমার জাতি! তোমরা আল্লাহর ইবাদত ছাড়া তোমাদের আর কোন সত্য মা’বূদ নেই, তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক স্পষ্ট নিদর্শন তোমাদের নিকট এসেছে, এই আল্লাহর (নামে উৎসর্গিত) উষ্ট্রী তোমাদের জন্যে একটি নিদর্শন স্বরূপ। সুতরাং তোমরা একে ছেড়ে দাও – আল্লাহর যমীনে চরে খাবে, ওকে খারাপ উদ্দেশ্যে স্পর্শ করো না, (ওকে কোন কষ্ট দিলে) এক যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি তোমাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে।

৭৪

وَاذْكُرُوا إِذْ جَعَلَكُمْ خُلَفَاءَ مِن بَعْدِ عَادٍ وَبَوَّأَكُمْ فِي الْأَرْضِ تَتَّخِذُونَ مِن سُهُولِهَا قُصُورًا وَتَنْحِتُونَ الْجِبَالَ بُيُوتًا ۖ فَاذْكُرُوا آلَاءَ اللَّهِ وَلَا تَعْثَوْا فِي الْأَرْضِ مُفْسِدِينَ

তোমরা স্মরণ কর সেই বিষয়টি যখন তিনি আ’দ জাতির পর তোমাদেরকে তাদের স্থলাভিষিক্ত করেছিলেন, আর তিনি তোমাদেরকে পৃথিবীতে এমনভাবে প্রতিষ্ঠিত করেছেন যে, তোমরা সমতল ভূমিতে প্রাসাদ ও পাহাড় কেটে আবাস গৃহ নির্মাণ করেছো। সুতরাং তোমরা আল্লাহর অনুগ্রহের কথা স্মরণ কর এবং পৃথিবীতে বিপর্যয় ছড়িয়ে দিয়ো না।

৭৫

قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا مِن قَوْمِهِ لِلَّذِينَ اسْتُضْعِفُوا لِمَنْ آمَنَ مِنْهُمْ أَتَعْلَمُونَ أَنَّ صَالِحًا مُّرْسَلٌ مِّن رَّبِّهِ ۚ قَالُوا إِنَّا بِمَا أُرْسِلَ بِهِ مُؤْمِنُونَ

(অতঃপর) তার সম্প্রদায়ের অহংকারী প্রধানরা তখন তাদের মধ্যকার দুর্বল ও উৎপীড়িত মুমিনদেরকে বললঃ তোমরা কি বিশ্বাস কর যে, সালেহ (আঃ) তার প্রতিপালক কর্তৃক প্রেরিত হয়েছেন? তারা উত্তরে বললঃ নিশ্চয়ই যে পয়গামসহ তিনি প্রেরিত হয়েছেন, আমরা তা বিশ্বাস করি।

৭৬

قَالَ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا إِنَّا بِالَّذِي آمَنتُم بِهِ كَافِرُونَ

তখন অহংকারীরা বললঃ তোমরা যা বিশ্বাস কর আমরা তা অবিশ্বাস করি।

৭৭

فَعَقَرُوا النَّاقَةَ وَعَتَوْا عَنْ أَمْرِ رَبِّهِمْ وَقَالُوا يَا صَالِحُ ائْتِنَا بِمَا تَعِدُنَا إِن كُنتَ مِنَ الْمُرْسَلِينَ

অতঃপর তারা সেই উষ্ট্রীটিকে মেরে ফেললো এবং (গর্ব ও দাম্ভিকতার সাথে) তাদের প্রতি-পালকের নির্দেশের বিরুদ্ধাচরণ করে চলতে লাগলো এবং বললঃ হে সালেহ! তুমি সত্য রাসূল হয়ে থাকলে আমাদেরকে যে শাস্তির ভয় দেখাচ্ছ তা আনয়ন কর।

৭৮

فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ

সুতরাং তাদেরকে একটি প্রলয়ংকরী ভূমিকম্প এসে গ্রাস করে নিলো, ফলে তারা নিজেদের গৃহের মধ্যেই (মৃত্যু অবস্থায়) উপুর (অধোমুখী) হ্যে পড়ে গেল।

৭৯

فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَةَ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ وَلَـٰكِن لَّا تُحِبُّونَ النَّاصِحِينَ

অতঃপর তিনি (সালেহ আঃ) একথা বলে তাদের জনপদ হতে বের হয়ে গেলেনঃ হে আমার সম্প্রদায়! আমি আমার প্রতিপালকের পয়গাম তোমাদের কাছে পৌঁছিয়ে দিয়েছি, আর আমি তোমাদেরকে উপদেশ দিয়েছি; কিন্তু তোমরা তো উপদেশ দাতাদেরকে পছন্দ কর না।

৮০

وَلُوطًا إِذْ قَالَ لِقَوْمِهِ أَتَأْتُونَ الْفَاحِشَةَ مَا سَبَقَكُم بِهَا مِنْ أَحَدٍ مِّنَ الْعَالَمِينَ

আর আমি লূত (আঃ)-কে নবুওয়াত দান করে পাঠিয়েছিলাম, যখন তিনি তাঁর সম্প্রদায়কে বলেছিলেনঃ তোমরা এমন অশ্লীল ও কুকর্ম করছো; যা তোমাদের পূর্বে বিশ্বে আর কেউই করেনি।

৮১

إِنَّكُمْ لَتَأْتُونَ الرِّجَالَ شَهْوَةً مِّن دُونِ النِّسَاءِ ۚ بَلْ أَنتُمْ قَوْمٌ مُّسْرِفُونَ

তোমরা স্ত্রীলোকদের বাদ দিয়ে পুরুষদের সাথে নিজেদের যৌন ইচ্ছা নিবারণ করে নিচ্ছো। প্রকৃতপক্ষে তোমরা হচ্ছো সীমালঙ্ঘনকারী সম্প্রদায়।

৮২

وَمَا كَانَ جَوَابَ قَوْمِهِ إِلَّا أَن قَالُوا أَخْرِجُوهُم مِّن قَرْيَتِكُمْ ۖ إِنَّهُمْ أُنَاسٌ يَتَطَهَّرُونَ

কিন্তু তার জাতির লোকদের এটা ছাড়া আর কোন উত্তরই ছিল না যে, এদেরকে তোমাদের জনপদ থেকে বের করে দাও, এরা নিজেদেরকে বড় পবিত্র লোক বলে প্রকাশ করছে।

৮৩

فَأَنجَيْنَاهُ وَأَهْلَهُ إِلَّا امْرَأَتَهُ كَانَتْ مِنَ الْغَابِرِينَ

পরিশেষে, আমি লূত (আঃ)-কে এবং তার পরিবারের লোকদেরকে শুধুমাত্র তার স্ত্রী ছাড়া শাস্তি হতে রক্ষা করেছিলাম, তার স্ত্রী ছিল ধ্বংসপ্রাপ্ত লোকদের অন্তর্ভুক্ত।

৮৪

وَأَمْطَرْنَا عَلَيْهِم مَّطَرًا ۖ فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُجْرِمِينَ

অতঃপর আমি তাদের উপর মুষলধারে (পাথরের) বৃষ্টি বর্ষণ করেছিলাম। সুতরাং অপরাধী লোকদের পরিণাম কি হয়েছিল তা লক্ষ্য কর।

৮৫

وَإِلَىٰ مَدْيَنَ أَخَاهُمْ شُعَيْبًا ۗ قَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَـٰهٍ غَيْرُهُ ۖ قَدْ جَاءَتْكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ ۖ فَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ وَلَا تَبْخَسُوا النَّاسَ أَشْيَاءَهُمْ وَلَا تُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ بَعْدَ إِصْلَاحِهَا ۚ ذَٰلِكُمْ خَيْرٌ لَّكُمْ إِن كُنتُم مُّؤْمِنِينَ

আর আমি মাদিয়ানবাসীদের কাছে তাদেরই ভাই শু’আইব (আঃ)-কে পাঠিয়েছিলাম, সে তার স্বজাতিকে সম্বোধন করে বলেছিলোঃ হে আমার জাতি! তোমরা (শিরক বর্জন করে) একমাত্র আল্লাহর ইবাদত কর, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন সত্য মা’বূদ নেই, তোমাদের প্রভুর পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট দলীল এসে গেছে। সুতরাং তোমরা ওজন ও পরিমাপ পূর্ণ মাত্রায় দেবে, মানুষকে তাদের প্রাপ্য বস্তু কম দিয়ে ক্ষতিগ্রস্থ করবে না, আর দুনিয়ায় শান্তি-শৃঙ্খলা স্থাপনের পর ঝগড়া-ফাসাদ ও বিপর্যয় ঘটাবে না, তোমরা বাস্তবিক পক্ষে ঈমানদার হলে এই পথই হল তোমাদের জন্যে কল্যাণকর।

৮৬

وَلَا تَقْعُدُوا بِكُلِّ صِرَاطٍ تُوعِدُونَ وَتَصُدُّونَ عَن سَبِيلِ اللَّهِ مَنْ آمَنَ بِهِ وَتَبْغُونَهَا عِوَجًا ۚ وَاذْكُرُوا إِذْ كُنتُمْ قَلِيلًا فَكَثَّرَكُمْ ۖ وَانظُرُوا كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِينَ

আর তোমরা প্রতিটি পথে এই উদ্দেশ্যে বসে থেকো না যে, ঈমানদার লোকদেরকে ভয়-ভীতি প্রদর্শন করবে ও আল্লাহর পথ হতে বিরত রাখবে এবং সহজ-সরল পথকে ছেড়ে দিয়ে বক্রতা অন্বেষণে ব্যস্ত থাকবে। আর ঐ অবস্থাটির কথা স্মরণ কর, যখন তোমরা সংখ্যায় স্বল্প ছিলে, অতঃপর তিনি (আল্লাহ) তোমাদের সংখ্যা বেশি করে দিলেন, আর এ জগতে বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণতি কি হয়েছে তা লক্ষ্য কর।

৮৭

وَإِن كَانَ طَائِفَةٌ مِّنكُمْ آمَنُوا بِالَّذِي أُرْسِلْتُ بِهِ وَطَائِفَةٌ لَّمْ يُؤْمِنُوا فَاصْبِرُوا حَتَّىٰ يَحْكُمَ اللَّهُ بَيْنَنَا ۚ وَهُوَ خَيْرُ الْحَاكِمِينَ

আমার নিকট যা (আল্লাহর পক্ষ হতে) প্রেরিত হয়েছে তা যদি তোমাদের কোন দল বিশ্বাস করে এবং কোন দল অবিশ্বাস করে তবে (সেই পর্যন্ত) ধৈর্যধারণ কর যতক্ষন না আল্লাহ আমাদের মধ্যে চূড়ান্ত ফায়সালা করে দেন, কারণ তিনিই হলেন উত্তম ফায়সালাকারী।

৮৮

قَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ اسْتَكْبَرُوا مِن قَوْمِهِ لَنُخْرِجَنَّكَ يَا شُعَيْبُ وَالَّذِينَ آمَنُوا مَعَكَ مِن قَرْيَتِنَا أَوْ لَتَعُودُنَّ فِي مِلَّتِنَا ۚ قَالَ أَوَلَوْ كُنَّا كَارِهِينَ

আর তাঁর সম্প্রদায়ের দাম্ভিক ও অহংকারী প্রধানরা বলেছিলঃ হে শো’আইব (আঃ)! আমরা অবশ্যই তোমাকে ও তোমার সঙ্গী-সাথী মুমিনদেরকে আমাদের জনপদ হতে বহিষ্কার করবো অথবা তোমরা আমাদের দলে (দ্বীনে) ফিরে আসবে, তখন তিনি বললেনঃ আমরা যদি তাতে রাযী না হই (তবুও কি জোর করে ফিরিয়ে দিবে)?

৮৯

قَدِ افْتَرَيْنَا عَلَى اللَّهِ كَذِبًا إِنْ عُدْنَا فِي مِلَّتِكُم بَعْدَ إِذْ نَجَّانَا اللَّهُ مِنْهَا ۚ وَمَا يَكُونُ لَنَا أَن نَّعُودَ فِيهَا إِلَّا أَن يَشَاءَ اللَّهُ رَبُّنَا ۚ وَسِعَ رَبُّنَا كُلَّ شَيْءٍ عِلْمًا ۚ عَلَى اللَّهِ تَوَكَّلْنَا ۚ رَبَّنَا افْتَحْ بَيْنَنَا وَبَيْنَ قَوْمِنَا بِالْحَقِّ وَأَنتَ خَيْرُ الْفَاتِحِينَ

তোমাদের দল বা দ্বীন হতে আল্লাহ আমাদেরকে মুক্তি দেয়ার পর আমরা যদি তাতে আবার ফিরে যাই তবে নিশ্চিতভাবে আল্লাহর প্রতি মিথ্যা আরোপকারী হবো, আমাদের প্রতিপালক আল্লাহ না চাইলে ওতে আবার ফিরে যাওয়া আমাদের পক্ষে কোনক্রমেই সম্ভব নয়, প্রতিটি বস্তুই আমাদের প্রতিপালকের জ্ঞানায়ত্তে, আমরা আল্লাহর উপরই নির্ভর করছি, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদের ও আমাদের সম্প্রদায়ের মধ্যে সঠিকভাবে ফায়সালা করে দিন, আপনিই তো সর্বোত্তম ফায়সালাকারী।

৯০

وَقَالَ الْمَلَأُ الَّذِينَ كَفَرُوا مِن قَوْمِهِ لَئِنِ اتَّبَعْتُمْ شُعَيْبًا إِنَّكُمْ إِذًا لَّخَاسِرُونَ

আর তাদের সম্প্রদায়ের কাফির লোকদের প্রধানগণ (সর্বসাধারণকে) বলেছিলঃ তোমরা যদি শোআ’ইব (আঃ)-কে অনুসরণ করে চল, তবে তোমরা অবশ্যই ক্ষতিগ্রস্থ হবে।

৯১

فَأَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ فَأَصْبَحُوا فِي دَارِهِمْ جَاثِمِينَ

অতঃপর ভূ-কম্পন তাদেরকে গ্রাস করে ফেললো, ফলে তারা নিজেদের গৃহেই (মৃত্যু অবস্থায়) উপুর হয়ে পড়ে রইলো।

৯২

الَّذِينَ كَذَّبُوا شُعَيْبًا كَأَن لَّمْ يَغْنَوْا فِيهَا ۚ الَّذِينَ كَذَّبُوا شُعَيْبًا كَانُوا هُمُ الْخَاسِرِينَ

(অবস্থা দেখে মনে হল) যারা শোআ’ইব (আঃ)-কে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছিল, তারা যেন কখনো সেখানে বসবাস করেনি, শো’আইব (আঃ)-কে মিথ্যা প্রতিপন্নকারী লোকেরাই শেষ পর্যন্ত ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছিল।

৯৩

فَتَوَلَّىٰ عَنْهُمْ وَقَالَ يَا قَوْمِ لَقَدْ أَبْلَغْتُكُمْ رِسَالَاتِ رَبِّي وَنَصَحْتُ لَكُمْ ۖ فَكَيْفَ آسَىٰ عَلَىٰ قَوْمٍ كَافِرِينَ

তিনি (শো’আইব আঃ) তাদের নিকট হতে এ কথা বলে বেরিয়ে আসলেন- হে আমার জাতি! আমি আমার প্রভুর পয়গাম তোমাদের নিকট পৌঁছিয়েছি, আর আমি তোমাদেরকে উপদেশ প্রদান করেছি, সুতরাং আমি কাফির সম্প্রদায়ের জন্যে কি করে আক্ষেপ করতে পার!

৯৪

وَمَا أَرْسَلْنَا فِي قَرْيَةٍ مِّن نَّبِيٍّ إِلَّا أَخَذْنَا أَهْلَهَا بِالْبَأْسَاءِ وَالضَّرَّاءِ لَعَلَّهُمْ يَضَّرَّعُونَ

আমি কোন জনপদ নবী-রাসূল পাঠালে, ওর অধিবাসীদেরকে দুঃখ-কষ্ট ও বিপদে আক্রান্ত করে থাকি, উদ্দেশ্য হলঃ তারা যেন নম্র ও বিনয়ী হয়।

৯৫

ثُمَّ بَدَّلْنَا مَكَانَ السَّيِّئَةِ الْحَسَنَةَ حَتَّىٰ عَفَوا وَّقَالُوا قَدْ مَسَّ آبَاءَنَا الضَّرَّاءُ وَالسَّرَّاءُ فَأَخَذْنَاهُم بَغْتَةً وَهُمْ لَا يَشْعُرُونَ

অতঃপর আমি তাদের দুরবস্থাকে সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য দ্বারা পরিবর্তন করে দিয়েছি, অবেশেষে তারা খুব প্রাচুর্যের অধিকারী হয়, আর তারা (অকৃতজ্ঞ স্বরে) বলেঃ আমাদের পূর্ব পুরুষরাও এইভাবে সুখ-দুঃখ ভোগ করেছে (এটাই প্রাকৃতিক নিয়ম), অতঃপর অকস্মাৎ আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম কিন্তু তারা কিছুই বুঝতে পারলো না।

৯৬

وَلَوْ أَنَّ أَهْلَ الْقُرَىٰ آمَنُوا وَاتَّقَوْا لَفَتَحْنَا عَلَيْهِم بَرَكَاتٍ مِّنَ السَّمَاءِ وَالْأَرْضِ وَلَـٰكِن كَذَّبُوا فَأَخَذْنَاهُم بِمَا كَانُوا يَكْسِبُونَ

জনপদের অধিবাসীগণ যদি ঈমান আনতো এবং তাকওয়া অবলম্বন করতো, তবে আমি তাদের জন্যে আকাশ ও পৃথিবীর বরকতের দ্বার খুলে দিতাম; কিন্তু তারা নবী-রাসূলদেরকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, ফলে তাদের কৃতকর্মের জন্যে আমি তাদেরকে পাকড়াও করলাম।

৯৭

أَفَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَىٰ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا بَيَاتًا وَهُمْ نَائِمُونَ

জনপদের লোকেরা কি এটা থেকে নির্ভয় হয়ে মনে করছে যে, রাত্রিকালে ঘুমন্ত থাকা অবস্থায় আমার শাস্তি তাদেরকে গ্রাস করে ফেলবে না?

৯৮

أَوَأَمِنَ أَهْلُ الْقُرَىٰ أَن يَأْتِيَهُم بَأْسُنَا ضُحًى وَهُمْ يَلْعَبُونَ

অথবা জনপদের লোকেরা কি এই ভয় রাখে না যে, আমার শাস্তি তাদের উপর তখন আপতিত হবে যখন তারা পূর্বাহ্ণে আমোদ-প্রমোদে রত থাকবে?

৯৯

أَفَأَمِنُوا مَكْرَ اللَّهِ ۚ فَلَا يَأْمَنُ مَكْرَ اللَّهِ إِلَّا الْقَوْمُ الْخَاسِرُونَ

তারা কি আল্লাহর পাকাড়াও ও শাস্তি থেকে নিরাপদ হয়ে গেছে? ক্ষতিগ্রস্থ সম্প্রদায় ছাড়া আল্লাহর শাস্তি থেকে কেউই নিঃশঙ্ক বোধ করতে (নিরাপদ হতে) পারে না।

১০০

أَوَلَمْ يَهْدِ لِلَّذِينَ يَرِثُونَ الْأَرْضَ مِن بَعْدِ أَهْلِهَا أَن لَّوْ نَشَاءُ أَصَبْنَاهُم بِذُنُوبِهِمْ ۚ وَنَطْبَعُ عَلَىٰ قُلُوبِهِمْ فَهُمْ لَا يَسْمَعُونَ

কোন এলাকার অধিবাসী ধ্বংস হওয়ার পর সেই এলাকার যারা উত্তরাধিকারী হয়, তাদের কাছে কি এই পথ নির্দেশ দেয়া হয়নি যে, আমি ইচ্ছা ক্রলে তাদের পাপের কারণে তাদেরকে শাস্তি দিতে পারি? আর তাদের অন্তঃকরণের উপর মোহর মেরে দিতে পারি অবশেষে তারা কিছুই শুনতে পাবে না?

০৭. সূরাঃ আল আ’রাফ

আয়াতঅবতীর্ণঃ মক্কা
আয়াত সংখ্যাঃ ২০৬
রুকূঃ ২৪
১০১

تِلْكَ الْقُرَىٰ نَقُصُّ عَلَيْكَ مِنْ أَنبَائِهَا ۚ وَلَقَدْ جَاءَتْهُمْ رُسُلُهُم بِالْبَيِّنَاتِ فَمَا كَانُوا لِيُؤْمِنُوا بِمَا كَذَّبُوا مِن قَبْلُ ۚ كَذَٰلِكَ يَطْبَعُ اللَّهُ عَلَىٰ قُلُوبِ الْكَافِرِينَ

ঐ জনপদগুলোর কিছু বৃত্তান্ত আমি তোমার নিকট বর্ণনা করছি, তাদের কাছে রাসূলগণ সুস্পষ্ট দলীল প্রমাণসহ এসেছিল; কিন্তু পূর্বে তারা যা প্রত্যাখ্যান করেছিল তার প্রতি তারা ঈমান আনবার ছিল না, এমনিভাবেই আল্লাহ অবিশ্বাসীদের অন্তঃকরণের উপর মোহর মেরে দেন।

১০২

وَمَا وَجَدْنَا لِأَكْثَرِهِم مِّنْ عَهْدٍ ۖ وَإِن وَجَدْنَا أَكْثَرَهُمْ لَفَاسِقِينَ

আমি তাদের অধিকাংশকে অঙ্গীকার ও প্রতিশ্রুতি রক্ষাকারীরূপে পাইনি, তবে তাদের অধিকাংশকে আমি ফাসেক (সত্যত্যাগী) পেয়েছি।

১০৩

ثُمَّ بَعَثْنَا مِن بَعْدِهِم مُّوسَىٰ بِآيَاتِنَا إِلَىٰ فِرْعَوْنَ وَمَلَئِهِ فَظَلَمُوا بِهَا ۖ فَانظُرْ كَيْفَ كَانَ عَاقِبَةُ الْمُفْسِدِينَ

অতঃপর আমি মূসা (আঃ)-কে তাদের পর আমার আয়াত ও নিদর্শনসহ ফিরাউন ও তার পরিষদবর্গের নিকট পাঠালাম; কিন্তু তারা যুলুম করলো (অর্থাৎ আমার নিদর্শন অস্বীকার করলো), সুতরাং এই বিপর্যয় সৃষ্টিকারীদের পরিণাম কি হয়েছিল তা তুমি লক্ষ্য কর।

১০৪

وَقَالَ مُوسَىٰ يَا فِرْعَوْنُ إِنِّي رَسُولٌ مِّن رَّبِّ الْعَالَمِينَ

মূসা (আঃ) বললেনঃ হে ফিরাউন! আমি বিশ্ব-প্রতিপালকের পক্ষ হতে একজন রাসূল।

১০৫

حَقِيقٌ عَلَىٰ أَن لَّا أَقُولَ عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ ۚ قَدْ جِئْتُكُم بِبَيِّنَةٍ مِّن رَّبِّكُمْ فَأَرْسِلْ مَعِيَ بَنِي إِسْرَائِيلَ

আমার জন্য এটাই উপযুক্ত যে, আমি আল্লাহ সম্বন্ধে সত্য কথা ছাড়া আর কিছু বলবো না (অর্থাৎ আল্লাহ সম্পর্কে সত্য কথা বলতে আমি দৃঢ় প্রতিজ্ঞ) আমি তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে তোমাদের কাছে সুস্পষ্ট দলীল ও প্রমাণ নিয়ে এসেছি, সুতরাং বানী ইসরাঈলকে আমার সাথে পাঠিয়ে দাও।

১০৬

قَالَ إِن كُنتَ جِئْتَ بِآيَةٍ فَأْتِ بِهَا إِن كُنتَ مِنَ الصَّادِقِينَ

তখন ফিরাউন বললঃ তুমি যদি বাস্তবিকই (আল্লাহর পক্ষ হতে) স্পষ্ট দলীল ও নিদর্শন এনে থাক তবে তুমি সত্যবাদী হলে তা উপস্থিত কর।

১০৭

فَأَلْقَىٰ عَصَاهُ فَإِذَا هِيَ ثُعْبَانٌ مُّبِينٌ

তখন মূসা (আঃ) তাঁর লাঠি নিক্ষেপ করলেন এবং সহসাই ওটা এক প্রকাশ্য (জীবিত) সাপে পরিণত হলো।

১০৮

وَنَزَعَ يَدَهُ فَإِذَا هِيَ بَيْضَاءُ لِلنَّاظِرِينَ

আর তিনি তার হাত বের করলেন, তৎক্ষণাৎ ওটা দর্শকদের দৃষ্টিতে শুভ্র ও উজ্জ্বল আলোকময় প্রতিভাত হল।

১০৯

قَالَ الْمَلَأُ مِن قَوْمِ فِرْعَوْنَ إِنَّ هَـٰذَا لَسَاحِرٌ عَلِيمٌ

এ দেখে ফিরাউন সম্প্রদায়ের প্রধানরা বললঃ নিঃসন্দেহে এ ব্যক্তি বড় সুদক্ষ যাদুকর।

১১০

يُرِيدُ أَن يُخْرِجَكُم مِّنْ أَرْضِكُمْ ۖ فَمَاذَا تَأْمُرُونَ

তিনি তোমাদেরকে তোমাদের জমি-জায়গা থেকে বের করে দিতে চান, এখন তোমাদের পরামর্শ কি?

১১১

قَالُوا أَرْجِهْ وَأَخَاهُ وَأَرْسِلْ فِي الْمَدَائِنِ حَاشِرِينَ

তারা বললঃ তাকে এবং তার ভাই (হারূন)-কে কিছুদিনের অবকাশ দাও, আর শহরে শহরে সংগ্রাহক পাঠিয়ে দাও।

১১২

يَأْتُوكَ بِكُلِّ سَاحِرٍ عَلِيمٍ

যেন তারা তোমার (ফিরাউন) নিকট প্রত্যেক সুদক্ষ যাদুকরকে উপস্থিত করে।

১১৩

وَجَاءَ السَّحَرَةُ فِرْعَوْنَ قَالُوا إِنَّ لَنَا لَأَجْرًا إِن كُنَّا نَحْنُ الْغَالِبِينَ

যাদুকররা ফিরাউনের কাছে এসে বললঃ আমরা যদি বিজয় লাভ করতে পারি তবে আমাদের জন্যে পুরস্কার থাকবে তো?

১১৪

قَالَ نَعَمْ وَإِنَّكُمْ لَمِنَ الْمُقَرَّبِينَ

সে উত্তরে বললঃ হ্যাঁ, অবশ্যই তোমরাই হবে আমার দরবারের নিকটতম ব্যক্তি।

১১৫

قَالُوا يَا مُوسَىٰ إِمَّا أَن تُلْقِيَ وَإِمَّا أَن نَّكُونَ نَحْنُ الْمُلْقِينَ

অতঃপর যাদুকরগণ বললঃ হে মূসা (আঃ)! (প্রথমে) তুমিই কি তোমার লাঠি নিক্ষেপ করবে, না আমরাই (প্রথমে) নিক্ষেপ করবো?

১১৬

قَالَ أَلْقُوا ۖ فَلَمَّا أَلْقَوْا سَحَرُوا أَعْيُنَ النَّاسِ وَاسْتَرْهَبُوهُمْ وَجَاءُوا بِسِحْرٍ عَظِيمٍ

তিনি (মূসা আঃ) উত্তরে বললেনঃ প্রথমতঃ তোমরাই নিক্ষেপ কর, সুতরাং যখন তারা নিক্ষেপ করলো তখন লোকের চোখে যাদু করলো এবং তাদেরকে ভয় দেখালো ও আতঙ্কিত করলো, তারা খুব বড় রকমের যাদু দেখালো।

১১৭

وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ أَنْ أَلْقِ عَصَاكَ ۖ فَإِذَا هِيَ تَلْقَفُ مَا يَأْفِكُونَ

তখন আমি মূসা-এর নিকট এই প্রত্যাদেশ পাঠালামঃ তুমি তোমার লাঠিখানা নিক্ষেপ কর, মূসা (আঃ) তা নিক্ষেপ করলে ওটা একটা বিরাট সাপ হয়ে সহসা ওদের অলীক (মিথ্যা) সৃষ্টিগুলোকে গিলে ফেলল।

১১৮

فَوَقَعَ الْحَقُّ وَبَطَلَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

পরিশেষে যা হক ছিল তা সত্য প্রমাণিত হল, আর যা কিছু বানানো হয়েছিল তা বাতিল প্রতিপন্ন হল।

১১৯

فَغُلِبُوا هُنَالِكَ وَانقَلَبُوا صَاغِرِينَ

আর ফিরাউন ও তার দলবলের লোকেরা মুকাবিলার ময়দানে পরাজিত হল এবং লাঞ্ছিত ও অপমানিত হয়ে গেল।

১২০

وَأُلْقِيَ السَّحَرَةُ سَاجِدِينَ

যাদুকরগণ তখন সিজদায় পড়ে গেল।

১২১

قَالُوا آمَنَّا بِرَبِّ الْعَالَمِينَ

তারা পরিষ্কার ভাষায় বললঃ আমরা বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি অকপটে ঈমান আনলাম।

১২২

رَبِّ مُوسَىٰ وَهَارُونَ

(জিজ্ঞেস করা হল- কোন বিশ্ব প্রতিপালকের প্রতি? তারা উত্তরে বলল) মূসা ও হারূনের প্রতিপালকের প্রতি।

১২৩

قَالَ فِرْعَوْنُ آمَنتُم بِهِ قَبْلَ أَنْ آذَنَ لَكُمْ ۖ إِنَّ هَـٰذَا لَمَكْرٌ مَّكَرْتُمُوهُ فِي الْمَدِينَةِ لِتُخْرِجُوا مِنْهَا أَهْلَهَا ۖ فَسَوْفَ تَعْلَمُونَ

ফিরাউন বলল অনুমতি দেয়ার আগেই তোমরা তার উপর ঈমান আনলে? এটা অবশ্যই একটা চক্রান্ত আর তোমরা এ চক্রান্ত পাকিয়েছ শহরবাসীদের সেখান থেকে তাড়িয়ে দেয়ার জন্যে? সত্বরই তোমরা এর পরিণাম জানতে পারবে।

১২৪

لَأُقَطِّعَنَّ أَيْدِيَكُمْ وَأَرْجُلَكُم مِّنْ خِلَافٍ ثُمَّ لَأُصَلِّبَنَّكُمْ أَجْمَعِينَ

অবশ্যই আমি তোমাদের হাত ও পা উল্টোভাবে কেটে ফেলবে, তারপর তোমাদের সবাইকে আমি শূলে চড়াবো।

১২৫

قَالُوا إِنَّا إِلَىٰ رَبِّنَا مُنقَلِبُونَ

তারা (যাদুকররা) বললঃ নিশ্চয়ই আমরা আমাদের প্রতিপালকের নিকটে ফিরে যাবো।

১২৬

وَمَا تَنقِمُ مِنَّا إِلَّا أَنْ آمَنَّا بِآيَاتِ رَبِّنَا لَمَّا جَاءَتْنَا ۚ رَبَّنَا أَفْرِغْ عَلَيْنَا صَبْرًا وَتَوَفَّنَا مُسْلِمِينَ

তুমি আমাদের সাথে শত্রুতা করছো এই কারণে যে, আমাদের কাছে যখন আমাদের প্রতিপালকের নিদর্শনাবলী এসেছে তখন আমরা ওগুলোর উপর ঈমান এনেছি, হে আমাদের প্রতিপালক! আমাদেরকে ধৈর্য দান করুন এবং মুসলমানরূপে আমাদের মৃত্যু দান করুন!

১২৭

وَقَالَ الْمَلَأُ مِن قَوْمِ فِرْعَوْنَ أَتَذَرُ مُوسَىٰ وَقَوْمَهُ لِيُفْسِدُوا فِي الْأَرْضِ وَيَذَرَكَ وَآلِهَتَكَ ۚ قَالَ سَنُقَتِّلُ أَبْنَاءَهُمْ وَنَسْتَحْيِي نِسَاءَهُمْ وَإِنَّا فَوْقَهُمْ قَاهِرُونَ

ফিরাউন সম্প্রদায়ের সরদারগণ তাকে বললঃ তুমি কি মূসা (আঃ) ও তার সম্প্রদায়কে রাজ্যে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টির জন্যে মুক্ত ছেড়ে দিবে এবং তোমাকে ও তোমার দেবতাগণকে বর্জন করে চলার সুযোগ দিবে? সে উত্তরে বললঃ আমি তাদের ছেলে সন্তানদের হত্যা করবো এবং তাদের নারীদেরকে জীবিত রাখবো, নিশ্চয় আমরা পরাক্রমশালী।

১২৮

قَالَ مُوسَىٰ لِقَوْمِهِ اسْتَعِينُوا بِاللَّهِ وَاصْبِرُوا ۖ إِنَّ الْأَرْضَ لِلَّهِ يُورِثُهَا مَن يَشَاءُ مِنْ عِبَادِهِ ۖ وَالْعَاقِبَةُ لِلْمُتَّقِينَ

মূসা (আঃ) তার সম্প্রদায়কে বললেনঃ তোমরা আল্লাহর নিকট সাহায্য প্রার্থনা কর এবং ধৈর্য অবলম্বন কর, এই পৃথিবীর সার্বভৌম মালিক আল্লাহ, তিনি তাঁর বান্দাদের মধ্যে যাকে ইচ্ছা ওর উত্তরাধিকারী করে থাকেন, শুভ পরিণাম ও শেষ সাফল্য তো মুত্তাকী বান্দাদেরই জন্যে।

১২৯

قَالُوا أُوذِينَا مِن قَبْلِ أَن تَأْتِيَنَا وَمِن بَعْدِ مَا جِئْتَنَا ۚ قَالَ عَسَىٰ رَبُّكُمْ أَن يُهْلِكَ عَدُوَّكُمْ وَيَسْتَخْلِفَكُمْ فِي الْأَرْضِ فَيَنظُرَ كَيْفَ تَعْمَلُونَ

তারা (মূসা আঃ- এর কওম) তাঁকে বললেনঃ আপনি আমাদের নিকট (নবীরূপে) আগমনের পূর্বেও আমরা (ফিরাউন কর্তৃক) নির্যাতিত হয়েছি এবং আপনার আগমনের পরও নির্যাতিত হচ্ছি, তখন তিনি (মূসা আঃ) বললেনঃ শীঘ্রই তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের শত্রুকে ধ্বংস করবেন এবং তোমাদেরকে রাজ্যে তাদের স্থলাভিষিক্ত করবেন, অতঃপর তোমরা কিরূপ কাজ কর তা তিনি দেখবেন।

১৩০

وَلَقَدْ أَخَذْنَا آلَ فِرْعَوْنَ بِالسِّنِينَ وَنَقْصٍ مِّنَ الثَّمَرَاتِ لَعَلَّهُمْ يَذَّكَّرُونَ

আমি ফিরাউনের অনুসারীদেরকে কয়েক বছর পর্যন্ত দুর্ভিক্ষ ও ফসলহানির মধ্যে বিপন্ন রেখেছিলাম, উদ্দেশ্য ছিল, তারা হয়তো উপদেশ গ্রহণ করে ঈমান আনবে।

১৩১

فَإِذَا جَاءَتْهُمُ الْحَسَنَةُ قَالُوا لَنَا هَـٰذِهِ ۖ وَإِن تُصِبْهُمْ سَيِّئَةٌ يَطَّيَّرُوا بِمُوسَىٰ وَمَن مَّعَهُ ۗ أَلَا إِنَّمَا طَائِرُهُمْ عِندَ اللَّهِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَهُمْ لَا يَعْلَمُونَ

যখন তাদের সুখ-শান্তি ও কল্যাণ হতো তখন তারা বলতোঃ এটা তো আমাদের জন্য, আর যদি তাদের দুঃখ, দৈন্য ও বিপদ-আপদ হতো তখন তারা ওটাকে মূসা (আঃ) ও তার সঙ্গী-সাথীদের মন্দভাগ্যের কারণরূপে নিরূপণ করতো, তোমরা জেনে রেখো যে, তাদের অকল্যাণ আল্লাহরই নিয়ন্ত্রণাধীন; কিন্তু তাদের অধিকাংশ সে সম্পর্কে কোন জ্ঞান রাখে না।

১৩২

وَقَالُوا مَهْمَا تَأْتِنَا بِهِ مِنْ آيَةٍ لِّتَسْحَرَنَا بِهَا فَمَا نَحْنُ لَكَ بِمُؤْمِنِينَ

তারা বললঃ আমাদেরকে যাদু করবার জন্যে যে কোন নিদর্শনই পেশ কর না কেন আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনবো না।

১৩৩

فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمُ الطُّوفَانَ وَالْجَرَادَ وَالْقُمَّلَ وَالضَّفَادِعَ وَالدَّمَ آيَاتٍ مُّفَصَّلَاتٍ فَاسْتَكْبَرُوا وَكَانُوا قَوْمًا مُّجْرِمِينَ

শেষ পর্যন্ত আমি তাদের উপর প্লাবন, পঙ্গপাল, উকুন, ব্যাঙ ও রক্তধারার শাস্তি পাঠিয়ে কষ্ট দেই, এগুলো ছিল আমার সুস্পষ্ট নিদর্শন; কিন্তু তারা শেষ পর্যন্ত দাম্ভিকতা ও অহংকারেই মেতে রইলো, তারা ছিল একটি অপরাধী জাতি।

১৩৪/td>

وَلَمَّا وَقَعَ عَلَيْهِمُ الرِّجْزُ قَالُوا يَا مُوسَى ادْعُ لَنَا رَبَّكَ بِمَا عَهِدَ عِندَكَ ۖ لَئِن كَشَفْتَ عَنَّا الرِّجْزَ لَنُؤْمِنَنَّ لَكَ وَلَنُرْسِلَنَّ مَعَكَ بَنِي إِسْرَائِيلَ

তাদের উপর কোন বালা-মুসিবত ও বিপদ-আপদ আপতিত হলে তারা বলতোঃ হে মূসা (আঃ) আমাদের এই বিপদ দূর হওয়ার নিমিত্তে তোমার প্রতিপালকের নিকট দু’আ কর, যার প্রতিশ্রুতি তিনি তোমার সাথে করেছেন, যদি আমাদের বিপদ দূর করে দিতে পার তবে আমরা তোমার প্রতি ঈমান আনবো এবং তোমার সাথে বানী ইসরাঈলগণকে পাঠিয়ে দেবো।

১৩৫

فَلَمَّا كَشَفْنَا عَنْهُمُ الرِّجْزَ إِلَىٰ أَجَلٍ هُم بَالِغُوهُ إِذَا هُمْ يَنكُثُونَ

অতঃপর যখনই আমি তাদের হতে সেই আযাবকে এক নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত অপসারিত করতাম যাতে তারা উপনীত হতো, তখনই আবার তারা প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করতো।

১৩৬

فَانتَقَمْنَا مِنْهُمْ فَأَغْرَقْنَاهُمْ فِي الْيَمِّ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا عَنْهَا غَافِلِينَ

সুতরাং আমি (এই প্রতিশ্রুতি ভঙ্গের জন্যে) তাদের হতে প্রতিশোধ নিলাম এবং তাদেরকে অতল সমুদ্রে ডুবিয়ে মারলাম, কেননা তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে, আর এই ব্যাপারে তারা ছিল সম্পূর্ণ গাফিল বা উদাসীন।

১৩৭

وَأَوْرَثْنَا الْقَوْمَ الَّذِينَ كَانُوا يُسْتَضْعَفُونَ مَشَارِقَ الْأَرْضِ وَمَغَارِبَهَا الَّتِي بَارَكْنَا فِيهَا ۖ وَتَمَّتْ كَلِمَتُ رَبِّكَ الْحُسْنَىٰ عَلَىٰ بَنِي إِسْرَائِيلَ بِمَا صَبَرُوا ۖ وَدَمَّرْنَا مَا كَانَ يَصْنَعُ فِرْعَوْنُ وَقَوْمُهُ وَمَا كَانُوا يَعْرِشُونَ

যে জাতিকে দুর্বল ভাবা হতো আমি তাদেরকে আমার কল্যাণপ্রাপ্ত রাজ্যের পূর্ব ও পশ্চিমের উত্তরাধিকারী বানাই, আর বানী ইসবাঈল জাতি সম্পর্কে তোমার প্রতিপালকের শুভ ও কল্যাণময় বাণী (প্রতিশ্রুতি) পূর্ণ হল, কেননা তারা ধৈর্যধারণ করেছিল, আর ফিরাউন ও তার সম্প্রদায়ের নির্মিত কীর্তিকলাপ ও উচ্চ প্রাসাদসমূহকে আমি ধ্বংস করেছি।

১৩৮

وَجَاوَزْنَا بِبَنِي إِسْرَائِيلَ الْبَحْرَ فَأَتَوْا عَلَىٰ قَوْمٍ يَعْكُفُونَ عَلَىٰ أَصْنَامٍ لَّهُمْ ۚ قَالُوا يَا مُوسَى اجْعَل لَّنَا إِلَـٰهًا كَمَا لَهُمْ آلِهَةٌ ۚ قَالَ إِنَّكُمْ قَوْمٌ تَجْهَلُونَ

আমি বানী ইসরাঈলকে সমুদ্র পার করিয়ে দিলাম, অতঃপর তারা প্রতিমা পূজায় রত এক জাতির সংস্পর্শে আসলো, তখন তারা বললঃ হে মূসা (আঃ)! তাদের যেরূপ মা’বূদ রয়েছে, আমাদের জন্যেও ঐরূপ মা’বূদ বানিয়ে দিন, তখন মূসা বললেনঃ তোমরা একটি গণ্ডমূর্খ জাতি।

১৩৯

إِنَّ هَـٰؤُلَاءِ مُتَبَّرٌ مَّا هُمْ فِيهِ وَبَاطِلٌ مَّا كَانُوا يَعْمَلُونَ

এসব লোক যে কাজে লিপ্ত রয়েছে, তা তো ধ্বংস করা হবে, আর তারা যা করছে তা অমূলক ও বাতিল বিষয়।

১৪০

قَالَ أَغَيْرَ اللَّهِ أَبْغِيكُمْ إِلَـٰهًا وَهُوَ فَضَّلَكُمْ عَلَى الْعَالَمِينَ

তিনি (মূসা আঃ) আরও বললেনঃ আমি কি আল্লাহকে ছেড়ে তোমাদের জন্যে অন্য কোন মা’বূদের সন্ধান করবো? অথচ তিনিই হলেন একমাত্র আল্লাহ যিনি তোমাদেরকে বিশ্বজগতে শ্রেষ্ঠত্ব দান করেছেন!

১৪১

وَإِذْ أَنجَيْنَاكُم مِّنْ آلِ فِرْعَوْنَ يَسُومُونَكُمْ سُوءَ الْعَذَابِ ۖ يُقَتِّلُونَ أَبْنَاءَكُمْ وَيَسْتَحْيُونَ نِسَاءَكُمْ ۚ وَفِي ذَٰلِكُم بَلَاءٌ مِّن رَّبِّكُمْ عَظِيمٌ

স্মরণ কর সেই সময়টির কথা, যখন আমি তোমাদেরকে ফিরাউনের অনুসারীদের (দাসত্ব) হতে মুক্তি দিয়েছি, তারা তোমাদেরকে অতিশয় মর্মান্তিক কষ্টদায়ক ও ন্যাক্কারজনক শাস্তি দিতো, তোমাদের পুত্রদেরকে হত্যা করতো এবং নারীদেরকে জীবিত রাখতো, এটা ছিল তোমাদের জন্যে তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ থেকে এক বিরাট পরীক্ষা।

১৪২

وَوَاعَدْنَا مُوسَىٰ ثَلَاثِينَ لَيْلَةً وَأَتْمَمْنَاهَا بِعَشْرٍ فَتَمَّ مِيقَاتُ رَبِّهِ أَرْبَعِينَ لَيْلَةً ۚ وَقَالَ مُوسَىٰ لِأَخِيهِ هَارُونَ اخْلُفْنِي فِي قَوْمِي وَأَصْلِحْ وَلَا تَتَّبِعْ سَبِيلَ الْمُفْسِدِينَ

আর আমি মূসা (আঃ)- কে ওয়াদা দিয়েছিলাম ত্রিশ রাত্রের (সীনাই পর্বতের উপর অবস্থান করার) জন্যে, পরে আরও দশদিন দ্বারা ওটা পূর্ণ করেছিলাম, ফলে তার প্রতিপালকের নির্ধারিত সময়টি চল্লিশ দিন দ্বারা পূর্ণতা লাভ করে, (রওয়ানা হবার সময়) মূসা (আঃ) তার ভাই হারূনকে বলেছিলেনঃ আমার অনুপস্থিতিতে আমার সম্প্রদায়ের মধ্যে তুমি আমার প্রতিনিধিত্ব করবে এবং তাদেরকে সংশোধন করার কাজ করতে থাকবে, (সাবধান!) বিপর্যয় ও ফাসাদ সৃষ্টিকারীদের অনুসরণ করবে না।

১৪৩

وَلَمَّا جَاءَ مُوسَىٰ لِمِيقَاتِنَا وَكَلَّمَهُ رَبُّهُ قَالَ رَبِّ أَرِنِي أَنظُرْ إِلَيْكَ ۚ قَالَ لَن تَرَانِي وَلَـٰكِنِ انظُرْ إِلَى الْجَبَلِ فَإِنِ اسْتَقَرَّ مَكَانَهُ فَسَوْفَ تَرَانِي ۚ فَلَمَّا تَجَلَّىٰ رَبُّهُ لِلْجَبَلِ جَعَلَهُ دَكًّا وَخَرَّ مُوسَىٰ صَعِقًا ۚ فَلَمَّا أَفَاقَ قَالَ سُبْحَانَكَ تُبْتُ إِلَيْكَ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُؤْمِنِينَ

এবং মূসা (আঃ) যখন নির্ধারিত সময়ে উপস্থিত হলেন এবং তাঁর প্রতিপালক তাঁর সাথে কথা বললেন, তখন তিনি নিবেদন করলেন, হে আমার প্রতিপালক! আমাকে অনুমতি দিন, আমি আপনাকে দেখবো, তখন আল্লাহ বললেনঃ তুমি আমাকে আদৌ দেখতে পারবে না, তবে তুমি ঐ পাহাড়ের দিকে তাকাও, যদি ঐ পাহাড় স্বস্থানে স্থির থাকে তবে তুমি আমাকে দেখতে পারবে, অতঃপর তার প্রতিপালক যখন পাহাড়ের উপর আলোক সম্পাত করলেন, তখন তা পাহাড়কে চূর্ণ-বিচূর্ণ করে দিলো, আর মূসা গেলেন, অতঃপর যখন তার চেতনা ফিরে আসলো, তখন তিনি বললেনঃ আপনি মহিমাময়, আপনি পবিত্র সত্তা, আমি তাওবা করছি, আর আমিই মু’মিনদের সর্বপ্রথম।

১৪৪

قَالَ يَا مُوسَىٰ إِنِّي اصْطَفَيْتُكَ عَلَى النَّاسِ بِرِسَالَاتِي وَبِكَلَامِي فَخُذْ مَا آتَيْتُكَ وَكُن مِّنَ الشَّاكِرِينَ

তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ হে মূসা (আঃ)! আমি তোমাকেই আমার রিসালাত ও আমার সাথে বাক্যালাপের জন্য লোকদের মধ্য হতে মনোনীত করেছি, অতএব, এখন আমি তোমাকে যা কিছু দেই তা তুমি গ্রহণ কর এবং কৃতজ্ঞতা প্রকাশকারীদের অন্তর্ভুক্ত হও।

১৪৫

وَكَتَبْنَا لَهُ فِي الْأَلْوَاحِ مِن كُلِّ شَيْءٍ مَّوْعِظَةً وَتَفْصِيلًا لِّكُلِّ شَيْءٍ فَخُذْهَا بِقُوَّةٍ وَأْمُرْ قَوْمَكَ يَأْخُذُوا بِأَحْسَنِهَا ۚ سَأُرِيكُمْ دَارَ الْفَاسِقِينَ

অতঃপর আমি মূসা (আঃ)-কে ফলকের উপর প্রত্যেক প্রকারের উপদেশ এবং সর্ববিষয়ের সুস্পষ্ট ব্যাখ্যা লিখে দিয়েছি, (অতঃপর তাকে বললাম) তুমি ওকে দৃঢ় ও শক্তভাবে গ্রহণ কর এবং তোমার সম্প্রদায়কে-এর সুন্দর সুন্দর বিধানগুলো মেনে চলতে আদেশ কর, আমি ফাসেক বা সত্যত্যাগীদের আবাসস্থল শীঘ্রই তোমাদেরকে প্রদর্শন করবো।

১৪৬

سَأَصْرِفُ عَنْ آيَاتِيَ الَّذِينَ يَتَكَبَّرُونَ فِي الْأَرْضِ بِغَيْرِ الْحَقِّ وَإِن يَرَوْا كُلَّ آيَةٍ لَّا يُؤْمِنُوا بِهَا وَإِن يَرَوْا سَبِيلَ الرُّشْدِ لَا يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا وَإِن يَرَوْا سَبِيلَ الْغَيِّ يَتَّخِذُوهُ سَبِيلًا ۚ ذَٰلِكَ بِأَنَّهُمْ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَكَانُوا عَنْهَا غَافِلِينَ

এই ধরণীর বুকে যারা অন্যায়ভাবে গর্ব অহংকার করে বেড়ায় আমি তাদেরকে আমার নিদর্শনসমূহ হতে ফিরিয়ে রাখবো, প্রত্যেকটি নিদর্শন দেখলেও তারা তাতে ঈমান আনবে না, তারা যদি হেদায়েতের পথও দেখতে পায় তবুও সেই পথকে তারা নিজেদের পথরূপে গ্রহণ করবে না; কিন্তু তারা ভ্রান্ত ও গোমরাহীর পথ দেখলে তাকেই তারা নিজেদের জীবনপথ রূপে গ্রহণ করবে, এর কারণ হল, তারা আমার নিদর্শনসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করেছে এবং তারা তা থেকে সম্পূর্ণরূপে অমনোযোগী ছিল।

১৪৭

وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَلِقَاءِ الْآخِرَةِ حَبِطَتْ أَعْمَالُهُمْ ۚ هَلْ يُجْزَوْنَ إِلَّا مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

যারা আমার নিদর্শনসমূহ ও পরকালের সাক্ষাতকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে তাদের সমুদয় আমল বিনষ্ট হয়ে যায়, তারা যা করে থাকে তদানুযায়ী তাদেরকে প্রতিফল দেয়া হবে।

১৪৮

وَاتَّخَذَ قَوْمُ مُوسَىٰ مِن بَعْدِهِ مِنْ حُلِيِّهِمْ عِجْلًا جَسَدًا لَّهُ خُوَارٌ ۚ أَلَمْ يَرَوْا أَنَّهُ لَا يُكَلِّمُهُمْ وَلَا يَهْدِيهِمْ سَبِيلًا ۘ اتَّخَذُوهُ وَكَانُوا ظَالِمِينَ

মূসা (আঃ)-এর সম্প্রদায় তাঁর চলে যাবার পর নিজেদের অলংকার দ্বারা একটি বাছুরের (মত) দেহ তৈরি করে তাকে মা’বূদরূপে গ্রহণ করলো, ওটা হতে (গরুর মত শব্দ) হাম্বারব বের হতো, তারা কি দেখেনি যে, ওটা তাদের সাথে কথা বলে না এবং তাদেরকে কোন পথও দেখিয়ে দেয় না? তবুও তারা ওটাকে মা’বূদরূপে গ্রহণ করলো; বস্তুতঃ তারা ছিল বড় অত্যাচারী।

১৪৯

وَلَمَّا سُقِطَ فِي أَيْدِيهِمْ وَرَأَوْا أَنَّهُمْ قَدْ ضَلُّوا قَالُوا لَئِن لَّمْ يَرْحَمْنَا رَبُّنَا وَيَغْفِرْ لَنَا لَنَكُونَنَّ مِنَ الْخَاسِرِينَ

আর যখন তারা তাদের কৃতকর্মের উপর লজ্জিত হল এবং দেখল যে, (প্রকৃতপক্ষ) তারা বিভ্রান্ত হয়েছে, তখন তারা বললঃ আমাদের প্রভু যদি আমাদের প্রতি অনুগ্রহ না করেন এবং আমাদেরকে ক্ষমা না করেন তবে তো আমরা ক্ষতিগ্রস্থ হয়ে যাবো।

১৫০

وَلَمَّا رَجَعَ مُوسَىٰ إِلَىٰ قَوْمِهِ غَضْبَانَ أَسِفًا قَالَ بِئْسَمَا خَلَفْتُمُونِي مِن بَعْدِي ۖ أَعَجِلْتُمْ أَمْرَ رَبِّكُمْ ۖ وَأَلْقَى الْأَلْوَاحَ وَأَخَذَ بِرَأْسِ أَخِيهِ يَجُرُّهُ إِلَيْهِ ۚ قَالَ ابْنَ أُمَّ إِنَّ الْقَوْمَ اسْتَضْعَفُونِي وَكَادُوا يَقْتُلُونَنِي فَلَا تُشْمِتْ بِيَ الْأَعْدَاءَ وَلَا تَجْعَلْنِي مَعَ الْقَوْمِ الظَّالِمِينَ

আর যখন মূসা (আঃ) রাগান্বিত ও মনক্ষুন্ন অবস্থায় নিজ জাতির নিকট ফিরে এসে বললেনঃ আমার চলে যাওয়ার পর তোমরা খুব খারাপভাবে আমার প্রতিনিধিত্ব করেছো, তোমরা তোমাদের প্রভুর নির্দেশের পূর্বেই কেন তাড়াহুড়া করতে গেলে? অতঃপর তিনি ফলকগুলো ফেলে দিলেন এবং স্বীয় ভাইয়ের মস্তক (চুল) ধরে নিজের দিকে টানতে লাগলেন, উনি (ভাই হারূন) বললেনঃ হে আমার মাতার পুত্র! এই লোকগুলো আমাকে দুর্বল করে ফেলেছিল এবং আমাকে মেরে ফেলতে উদ্যত হয়েছিল, অতএব তুমি আমাকে শত্রু সমক্ষে হাস্যস্পদ করো না, আর এই যালিম লোকদের মাধ্যে আমাকে গণ্য করো না।

০৭. সূরাঃ আল আ’রাফ

আয়াত নংঅবতীর্ণঃ মক্কা
আয়াত সংখ্যাঃ ২০৬
রুকূঃ ২৪
১৫১

قَالَ رَبِّ اغْفِرْ لِي وَلِأَخِي وَأَدْخِلْنَا فِي رَحْمَتِكَ ۖ وَأَنتَ أَرْحَمُ الرَّاحِمِينَ

তখন মূসা (আঃ) বললেনঃ হে আমার প্রভু! আমাকে ও আমার ভাইকে ক্ষমা করুন! আর আমাদেরকে আপনার রহমতের মধ্যে প্রবেশ করান! আপনি সবচেয়ে বড় দয়াবান।

১৫২

إِنَّ الَّذِينَ اتَّخَذُوا الْعِجْلَ سَيَنَالُهُمْ غَضَبٌ مِّن رَّبِّهِمْ وَذِلَّةٌ فِي الْحَيَاةِ الدُّنْيَا ۚ وَكَذَٰلِكَ نَجْزِي الْمُفْتَرِينَ

(উত্তরে বলা হল) নিশ্চয়ই যারা গো-বৎসকে উপাস্যরূপে গ্রহণ করেছে, অবশ্যই তারা এই পার্থিব জীবনে তাদের প্রতিপালকের গযব ও লাঞ্চনায় নিপতিত হবে, মিথ্যা রচনাকারীদেরকে আমি এভাবেই প্রতিফল দিয়ে থাকি।

১৫৩

وَالَّذِينَ عَمِلُوا السَّيِّئَاتِ ثُمَّ تَابُوا مِن بَعْدِهَا وَآمَنُوا إِنَّ رَبَّكَ مِن بَعْدِهَا لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

আর যারা খারাপ কাজ করে, অতঃপর তাওবা করে ও ঈমান আনে তবে নিশ্চয়ই তোমার প্রতিপালক আল্লাহ এর পরেও ক্ষমাশীল ও দয়াময়।

১৫৪

وَلَمَّا سَكَتَ عَن مُّوسَى الْغَضَبُ أَخَذَ الْأَلْوَاحَ ۖ وَفِي نُسْخَتِهَا هُدًى وَرَحْمَةٌ لِّلَّذِينَ هُمْ لِرَبِّهِمْ يَرْهَبُونَ

মূসা (আঃ)-এর ক্রোধ যখন প্রশমিত হল তখন তিনি ফলকগুলো তুলে নিলেন, যারা তাদের প্রতিপালকের ভয় করে তাদের জন্যে তাতে যা লিখিত ছিল তা ছিল হেদায়েত ও রহমত।

১৫৫

وَاخْتَارَ مُوسَىٰ قَوْمَهُ سَبْعِينَ رَجُلًا لِّمِيقَاتِنَا ۖ فَلَمَّا أَخَذَتْهُمُ الرَّجْفَةُ قَالَ رَبِّ لَوْ شِئْتَ أَهْلَكْتَهُم مِّن قَبْلُ وَإِيَّايَ ۖ أَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ السُّفَهَاءُ مِنَّا ۖ إِنْ هِيَ إِلَّا فِتْنَتُكَ تُضِلُّ بِهَا مَن تَشَاءُ وَتَهْدِي مَن تَشَاءُ ۖ أَنتَ وَلِيُّنَا فَاغْفِرْ لَنَا وَارْحَمْنَا ۖ وَأَنتَ خَيْرُ الْغَافِرِينَ

মূসা (আঃ) তার সম্প্রদায় হতে সত্তরজন নেতৃস্থানীয় লোক আমার নির্ধারিত সময়ে সমবেত হওয়ার জন্যে নির্বাচন করে নিলেন, অতঃপর যখন এই লোকগুলো একটি কঠিন ভূকম্পনে আক্রান্ত হল তখন মূসা (আঃ) বললেনঃ হে আমার প্রতিপালক! আপনি ইচ্ছা করলে এর পূর্বেও ওদেরকে ও আমাকে নিপাত করতে পারতেন, আমাদের মধ্যকার কতক নির্বোধ লোকের অন্যায়ের কারণে কি আপনি আমাদেরকে নিপাত করবেন? সেই ঘটনা তো ছিল আপনার পরীক্ষা, যা দ্বারা আপনি যাকে ইচ্ছা বিভ্রান্ত করেন এবং যাকে ইচ্ছা সৎপথে পরিচালিত করেন, আপনিই তো আমাদের অভিভাবক, সুতরাং আপনি আমাদেরকে ক্ষমাকরুন এবং আমাদের প্রতি অনুগ্রহ করুন, ক্ষমাশীলদের মধ্যে আপনিই তো উত্তম ক্ষমাশীল।

১৫৬

وَاكْتُبْ لَنَا فِي هَـٰذِهِ الدُّنْيَا حَسَنَةً وَفِي الْآخِرَةِ إِنَّا هُدْنَا إِلَيْكَ ۚ قَالَ عَذَابِي أُصِيبُ بِهِ مَنْ أَشَاءُ ۖ وَرَحْمَتِي وَسِعَتْ كُلَّ شَيْءٍ ۚ فَسَأَكْتُبُهَا لِلَّذِينَ يَتَّقُونَ وَيُؤْتُونَ الزَّكَاةَ وَالَّذِينَ هُم بِآيَاتِنَا يُؤْمِنُونَ

অতএব আমাদের জন্যে এই দুনিয়ায় ও পরকালে কল্যাণ লিখে দিন, আমরা আপনার নিকটই প্রত্যাবর্তন করেছি। তিনি (আল্লাহ) বললেনঃ যাকে ইচ্ছা আমি আমার শাস্তি দিয়ে থাকি, আর আমার করুণা ও দয়া প্রতিটি জিনিসকেই পরিব্যপ্ত করে দিয়েছে, সুতরাং কল্যাণ আমি তাদের জন্যেই লিখবো যারা পাপাচার হতে বিরত থাকে, (তাকওয়া অবলম্বন করে) যাকাত দেয় এবং আমার নিদর্শনসমূহের প্রতি ঈমান আনয়ন করে।

১৫৭

الَّذِينَ يَتَّبِعُونَ الرَّسُولَ النَّبِيَّ الْأُمِّيَّ الَّذِي يَجِدُونَهُ مَكْتُوبًا عِندَهُمْ فِي التَّوْرَاةِ وَالْإِنجِيلِ يَأْمُرُهُم بِالْمَعْرُوفِ وَيَنْهَاهُمْ عَنِ الْمُنكَرِ وَيُحِلُّ لَهُمُ الطَّيِّبَاتِ وَيُحَرِّمُ عَلَيْهِمُ الْخَبَائِثَ وَيَضَعُ عَنْهُمْ إِصْرَهُمْ وَالْأَغْلَالَ الَّتِي كَانَتْ عَلَيْهِمْ ۚ فَالَّذِينَ آمَنُوا بِهِ وَعَزَّرُوهُ وَنَصَرُوهُ وَاتَّبَعُوا النُّورَ الَّذِي أُنزِلَ مَعَهُ ۙ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْمُفْلِحُونَ

(এই কল্যাণ তাদেরই প্রাপ্য) যারা সেই নিরক্ষর রাসূল নবী (সঃ)-এর অনুসরণ করে চলে, যার কথা তারা তাদের নিকট রক্ষিত তাওরাত ও ইঞ্জিল কিতাবে লিখিত পায় (সেই নিরক্ষর নবী সঃ) মানুষকে সৎকাজের নির্দেশ দেয় ও অন্যায় কাজ করতে নিষেধ করে, আর তিনি তাদের জন্যে পবিত্র বস্তুসমূহ বৈধ করে দেন এবং অপবিত্র ও খারাপ বস্তুকে তাদের প্রতি অবৈধ করেন, আর তাদের উপর চাপানো বোঝা ও বন্ধন হতে তাদেরকে মুক্ত করেন, সুতরাং তাঁর প্রতি যারা ঈমান রাখে, তাকে সম্মান করে ও সাহায্য সহানুভূতি করে, আর সেই আলোককে (কুরআনকে) অনুসরণ করে চলে যা তার সাথে অবতীর্ণ করা হয়েছে, তারাই (ইহকাল ও পরকালে) সাফল্য লাভ করবে।

১৫৮

قُلْ يَا أَيُّهَا النَّاسُ إِنِّي رَسُولُ اللَّهِ إِلَيْكُمْ جَمِيعًا الَّذِي لَهُ مُلْكُ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۖ لَا إِلَـٰهَ إِلَّا هُوَ يُحْيِي وَيُمِيتُ ۖ فَآمِنُوا بِاللَّهِ وَرَسُولِهِ النَّبِيِّ الْأُمِّيِّ الَّذِي يُؤْمِنُ بِاللَّهِ وَكَلِمَاتِهِ وَاتَّبِعُوهُ لَعَلَّكُمْ تَهْتَدُونَ

(হে মুহাম্মদ সঃ)! তুমি ঘোষণা করে দাওঃ হে মানবমণ্ডলী! আমি তোমাদের সকলের জন্যে সেই আল্লাহর রাসূলরূপে প্রেরিত হয়েছি, যিনি আকাশমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের সার্বভৌম একচ্ছত্র মালিক তিনি ছাড়া আর কোন (সত্য) মা’বূদ নেই, তিনি জীবিত করেন ও মৃত্যু ঘটান, সুতরাং আল্লাহর প্রতি এবং তাঁর সেই বার্তাবাহক নিরক্ষর নবী (সঃ)-এর প্রতি ঈমান আনয়ন কর, যে আল্লাহতে ও তাঁর কালামে বিশ্বাস স্থাপন করে থাকে, তোমরা তারই অনুসরণ কর, আশা করা যায় তোমরা সরল সঠিক পথের সন্ধান পাবে।

১৫৯

وَمِن قَوْمِ مُوسَىٰ أُمَّةٌ يَهْدُونَ بِالْحَقِّ وَبِهِ يَعْدِلُونَ

মূসা (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের মধ্যে এমন একদল লোক রয়েছে যারা সঠিক ও নির্ভুল পথ-প্রদর্শন করে এবং ন্যায় বিচার করে।

১৬০

وَقَطَّعْنَاهُمُ اثْنَتَيْ عَشْرَةَ أَسْبَاطًا أُمَمًا ۚ وَأَوْحَيْنَا إِلَىٰ مُوسَىٰ إِذِ اسْتَسْقَاهُ قَوْمُهُ أَنِ اضْرِب بِّعَصَاكَ الْحَجَرَ ۖ فَانبَجَسَتْ مِنْهُ اثْنَتَا عَشْرَةَ عَيْنًا ۖ قَدْ عَلِمَ كُلُّ أُنَاسٍ مَّشْرَبَهُمْ ۚ وَظَلَّلْنَا عَلَيْهِمُ الْغَمَامَ وَأَنزَلْنَا عَلَيْهِمُ الْمَنَّ وَالسَّلْوَىٰ ۖ كُلُوا مِن طَيِّبَاتِ مَا رَزَقْنَاكُمْ ۚ وَمَا ظَلَمُونَا وَلَـٰكِن كَانُوا أَنفُسَهُمْ يَظْلِمُونَ

আর আমি বানী ইসরাঈলকে বারটি বংশে বিভক্ত করে প্রত্যেককে আলাদা আলাদা গোত্রে স্থির করেছি, মূসা (আঃ)-এর সম্প্রদায়ের লোকেরা যখন তার কাছে পানি দাবী করলো, তখন আমি মূসা (আঃ)- এর কাছে প্রত্যাদেশ পাঠালামঃ তোমার লাঠি দ্বারা পাথরে আঘাত কর, ফলে সাথে সাথে ওটা হতে বারটি ঝরণা উৎসারিত হল, আর প্রত্যেক গোত্র নিজ নিজ পান-স্থান জেনে নিলো, আর আমি তাদের উপর মেঘ দ্বারা ছায়া বিস্তার করলাম, আর তাদের জন্যে (আকাশ হতে) ‘মান্না’ ও ‘সালওয়া’ খাদ্যরূপী নিয়ামত অবতীর্ণ করলাম, সুতরাং (আমি বললাম) তোমাদেরকে যা কিছু পবিত্র জীবিকা দান করা হয়েছে তা আহার কর, (কিন্তু ওরা আমার শর্ত উপেক্ষা করে জুলুম করলো) তারা আমার উপর কোন জুলুম করেনি; বরং তারা তাদের নিজেদের উপরই জুলুম করেছে।

১৬১

وَإِذْ قِيلَ لَهُمُ اسْكُنُوا هَـٰذِهِ الْقَرْيَةَ وَكُلُوا مِنْهَا حَيْثُ شِئْتُمْ وَقُولُوا حِطَّةٌ وَادْخُلُوا الْبَابَ سُجَّدًا نَّغْفِرْ لَكُمْ خَطِيئَاتِكُمْ ۚ سَنَزِيدُ الْمُحْسِنِينَ

(স্মরণ কর সেই সময়টির কথা) যখন তাদেরকে বলা হয়েছিল এই (ফিলিস্তিন ও তৎসংশ্লিষ্ট) জনপদে বসবাস কর এবং যথা ইচ্ছা আহার কর, আর তোমরা বলঃ (হে প্রভু!) ক্ষমা চাই, আর (শহরের) দ্বারদেশ দিয়ে নতশিরে প্রবেশ কর, (তাহলে) আমি তোমাদের অপরাধ ক্ষমা করবো এবং সৎকর্মশীল লোকদের জন্যে আমার দান বৃদ্ধি করবো।

১৬২

فَبَدَّلَ الَّذِينَ ظَلَمُوا مِنْهُمْ قَوْلًا غَيْرَ الَّذِي قِيلَ لَهُمْ فَأَرْسَلْنَا عَلَيْهِمْ رِجْزًا مِّنَ السَّمَاءِ بِمَا كَانُوا يَظْلِمُونَ

কিন্তু তাদের মধ্যে যারা যালিম ও সীমালঙ্ঘনকারী ছিল, তারা সেই কথা পরিবর্তন করে ফেললো যা তাদেরকে (বলতে) বলা হয়েছিল, সুতরাং তাদের সেই সীমালঙ্ঘনের কারণে আমি আসমান হতে তাদের উপর শাস্তি প্রেরণ করলাম।

১৬৩

وَاسْأَلْهُمْ عَنِ الْقَرْيَةِ الَّتِي كَانَتْ حَاضِرَةَ الْبَحْرِ إِذْ يَعْدُونَ فِي السَّبْتِ إِذْ تَأْتِيهِمْ حِيتَانُهُمْ يَوْمَ سَبْتِهِمْ شُرَّعًا وَيَوْمَ لَا يَسْبِتُونَ ۙ لَا تَأْتِيهِمْ ۚ كَذَٰلِكَ نَبْلُوهُم بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ

আর তাদেরকে সেই জনপদের অবস্থাও জিজ্ঞেস কর যা সমুদ্রের তীরে অবস্থিত ছিল, (স্মরণ কর সেই ঘটনার কথা) যখন তারা শনিবারের ব্যাপারে সীমা লঙ্ঘন করেছিল, শনিবারের দিন মাছ পানিতে ভেসে তাদের নিকট আসতো; কিন্তু যেদিন তারা শনিবার উদযাপন করতো না (অর্থাৎ শনিবার ছাড়া বাকি অন্য দিন) সেদিন ওগুলো তাদের কাছে আসতো না, এইভাবে আমি তাদের নাফরমানীর কারণে তাদেরকে পরীক্ষা করছিলাম।

১৬৪

وَإِذْ قَالَتْ أُمَّةٌ مِّنْهُمْ لِمَ تَعِظُونَ قَوْمًا ۙ اللَّهُ مُهْلِكُهُمْ أَوْ مُعَذِّبُهُمْ عَذَابًا شَدِيدًا ۖ قَالُوا مَعْذِرَةً إِلَىٰ رَبِّكُمْ وَلَعَلَّهُمْ يَتَّقُونَ

(স্মরণ কর সেই সময়টির কথা) যখন তাদের একদল লোক অপর দলের নিকট বলেছিলঃ ঐ জাতিকে তোমরা কেন উপদেশ দিচ্ছ যাদেরকে আল্লাহ ধ্বংস করবেন অথবা কঠিন শাস্তি দিবেন? তারা উত্তরে বললঃ তোমাদের প্রতিপালকের নিকট দোষ মুক্তির জন্যে ও অক্ষমতা পেশ করার জন্যে, এবং এই জন্যে যে হয়তো বা এই লোকেরা তাঁর নাফরমানী হতে বেঁচে থাকবে।

১৬৫

فَلَمَّا نَسُوا مَا ذُكِّرُوا بِهِ أَنجَيْنَا الَّذِينَ يَنْهَوْنَ عَنِ السُّوءِ وَأَخَذْنَا الَّذِينَ ظَلَمُوا بِعَذَابٍ بَئِيسٍ بِمَا كَانُوا يَفْسُقُونَ

সুতরাং তাদেরকে যে উপদেশ দেয়া হয়েছিল তা যখন তারা ভুলে গেল, তখন যারা অসৎ কাজ থেকে নিষেধ করতো তাদেরকে তো আমি বাঁচিয়ে নিলাম, আর যালিমদেরকে তাদের অসৎ কর্মপরায়ণতার কারণে কঠোর শাস্তি দ্বারা পাকড়াও করলাম।

১৬৬

فَلَمَّا عَتَوْا عَن مَّا نُهُوا عَنْهُ قُلْنَا لَهُمْ كُونُوا قِرَدَةً خَاسِئِينَ

অতঃপর যখন তারা অবাধ্য হয়ে নিষিদ্ধ কাজগুলো করতে থাকলো যেগুলো থেকে তাদেরকে নিষেধ করা হয়েছিল তখন আমি বললামঃ তোমরা ঘৃণিত ও নিকৃষ্ট বানর হয়ে যাও।

১৬৭

وَإِذْ تَأَذَّنَ رَبُّكَ لَيَبْعَثَنَّ عَلَيْهِمْ إِلَىٰ يَوْمِ الْقِيَامَةِ مَن يَسُومُهُمْ سُوءَ الْعَذَابِ ۗ إِنَّ رَبَّكَ لَسَرِيعُ الْعِقَابِ ۖ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ

(এবং ঐ সময়ের কথা স্মরণ কর) যখন তোমার প্রতিপালক ঘোষণা করলেন যে, তিনি তাদের (ইয়াহূদীদের) উপর কিয়ামত পর্যন্ত এমন সব লোককে (শক্তিশালী করে) প্রেরণ করতে থাকবেন, যারা তাদেরকে কঠিনতর শাস্তি দিতে থাকবে (এবং তারা সর্বত্র নির্যাতিত ও নিপীড়িত হবে), নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক শাস্তি দানে ক্ষীপ্রহস্ত, আর নিশ্চয়ই তিনি ক্ষমাশীল ও অনুগ্রহশীল।

১৬৮

وَقَطَّعْنَاهُمْ فِي الْأَرْضِ أُمَمًا ۖ مِّنْهُمُ الصَّالِحُونَ وَمِنْهُمْ دُونَ ذَٰلِكَ ۖ وَبَلَوْنَاهُم بِالْحَسَنَاتِ وَالسَّيِّئَاتِ لَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

(অতঃপর) আমি তাদেরকে খন্ড খন্ড করে বিভিন্ন দলে-উপদলে দুনিয়ায় বিস্তৃত করেছি, তাদের কতক লোক সদাচারী আর কিছু লোক ভিন্নতর (অনাচারী), আর আমি ভাল ও মন্দের মধ্যে নিপতিত করে তাদেরকে পরীক্ষা করে থাকি, যাতে তারা আমার পথে ফিরে আসে।

১৬৯

فَخَلَفَ مِن بَعْدِهِمْ خَلْفٌ وَرِثُوا الْكِتَابَ يَأْخُذُونَ عَرَضَ هَـٰذَا الْأَدْنَىٰ وَيَقُولُونَ سَيُغْفَرُ لَنَا وَإِن يَأْتِهِمْ عَرَضٌ مِّثْلُهُ يَأْخُذُوهُ ۚ أَلَمْ يُؤْخَذْ عَلَيْهِم مِّيثَاقُ الْكِتَابِ أَن لَّا يَقُولُوا عَلَى اللَّهِ إِلَّا الْحَقَّ وَدَرَسُوا مَا فِيهِ ۗ وَالدَّارُ الْآخِرَةُ خَيْرٌ لِّلَّذِينَ يَتَّقُونَ ۗ أَفَلَا تَعْقِلُونَ

অতঃপর তাদের পর এমন অযোগ্য লোক তাদের স্থলাভিষিক্ত হয় যে তারা কিতাবেরও উত্তরাধিকারী হয় তারা এই নিকৃষ্ট দুনিয়ার মাল-সম্পদ নিয়ে নেয় আর বলে আমাদেরকে ক্ষমা করা হবে; এমনকি যদি ওর অনুরূপ মাল-সম্পদ তাদের নিকট আসে তবে তারা ওগুলোও নিয়ে নেবে, তাদের নিকট হতে কি কিতাবের প্রতিশ্রুতি নেয়া হয়নি যে, তারা আল্লাহর নামে সত্য ছাড়া কিছুই বলবে না? আর কিতাবে যা রয়েছে তা তো তারা অধ্যায়নও করেছে, আর মুত্তাকী লোকদের জন্যে পরকালের ঘরই উত্তম, তোমরা কি এতটুকু কথাও অনুধাবন করতে পার না।

১৭০

وَالَّذِينَ يُمَسِّكُونَ بِالْكِتَابِ وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ إِنَّا لَا نُضِيعُ أَجْرَ الْمُصْلِحِينَ

যারা আল্লাহর কিতাবকে দৃঢ়ভাবে ধারণ করে (অর্থাৎ আনুগত্য করে) এবং নামায কায়েম করে (তারা অবশ্যই তার প্রতিদান পাবে), আমি তো সৎকর্মশীলদের কর্মফল নষ্ট করি না।

১৭১

وَإِذْ نَتَقْنَا الْجَبَلَ فَوْقَهُمْ كَأَنَّهُ ظُلَّةٌ وَظَنُّوا أَنَّهُ وَاقِعٌ بِهِمْ خُذُوا مَا آتَيْنَاكُم بِقُوَّةٍ وَاذْكُرُوا مَا فِيهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ

(ঐ সময়টিও স্মরণযোগ্য) যখন আমি পাহাড়কে উঠিয়ে নিয়ে ছায়ার ন্যায় তাদের (বানী ইসরাঈলের) মাথার উপর তুলে ধরি তখন তারা মনে করছিল যে, ওটা তাদের মাথার উপর পড়ে যাবে, (এমতাবস্থায় আমি বললাম) তোমাদেরকে যা (যে কিতাব) দিয়েছি তা দৃঢ়ভাবে শক্ত হাতে ধারণ কর এবং ওতে যা রয়েছে তা স্মরণ রাখো, আশা করা যায় যে, তোমরা মুত্তাকী হয়ে যাবে।

১৭২

وَإِذْ أَخَذَ رَبُّكَ مِن بَنِي آدَمَ مِن ظُهُورِهِمْ ذُرِّيَّتَهُمْ وَأَشْهَدَهُمْ عَلَىٰ أَنفُسِهِمْ أَلَسْتُ بِرَبِّكُمْ ۖ قَالُوا بَلَىٰ ۛ شَهِدْنَا ۛ أَن تَقُولُوا يَوْمَ الْقِيَامَةِ إِنَّا كُنَّا عَنْ هَـٰذَا غَافِلِينَ

(হে নবী সঃ)! যখন তোমার প্রতিপালক বানী আদমের পৃষ্ঠদেশ হতে তাদের সন্তানদেরকে তাদের উপর সাক্ষী বানিয়ে জিজ্ঞেস করলেনঃ আমি কি তোমাদের প্রতিপালক নই? তারা সমস্বরে উত্তর দিলো হ্যাঁ। আমরা সাক্ষী থাকলাম; (এই স্বীকৃতি ও সাক্ষী বানানো এই জন্যে যে,) যাতে তোমরা কিয়ামতের দিন বলতে না পার- আমরা এ বিষয়ে সম্পূর্ণ অনবহিত ছিলাম।

১৭৩

أَوْ تَقُولُوا إِنَّمَا أَشْرَكَ آبَاؤُنَا مِن قَبْلُ وَكُنَّا ذُرِّيَّةً مِّن بَعْدِهِمْ ۖ أَفَتُهْلِكُنَا بِمَا فَعَلَ الْمُبْطِلُونَ

অথবা তোমরা যেন কিয়ামতের দিন এ কথা বলতে না পার, আমাদের পূর্ব পুরুষরাই তো আমাদের পূর্বে শিরক করেছিল, আমরা ছিলাম তাদের পরবর্তী বংশধর, সুতরাং আপনি কি আমাদেরকে সেই ভ্রান্ত ও বাতিলদের কৃতকর্মের দরুন ধ্বংস করবেন।

১৭৪

وَكَذَٰلِكَ نُفَصِّلُ الْآيَاتِ وَلَعَلَّهُمْ يَرْجِعُونَ

এভাবেই আমি বাণী সমূহকে ও নিদর্শনাবলীকে বিশদভাবে বিবৃত করে থাকি, যাতে তারা (কুফরী হতে তাওহীদের দিকে) ফিরে আসে।

১৭৫

وَاتْلُ عَلَيْهِمْ نَبَأَ الَّذِي آتَيْنَاهُ آيَاتِنَا فَانسَلَخَ مِنْهَا فَأَتْبَعَهُ الشَّيْطَانُ فَكَانَ مِنَ الْغَاوِينَ

(হে মুহাম্মদ সঃ)! তুমি এদেরকে সেই ব্যক্তির বৃত্তান্ত পড়ে শুনিয়ে দাও, যাকে আমি আমার নিদর্শন দান করেছিলাম; কিন্তু সে (এর দায়িত্ব পালন করা হতে) সম্পূর্ণ বেরিয়ে আসে, ফলে শয়তান তার পিছনে লেগে যায়, আর সে পথভ্রষ্টদের মধ্যে শামিল হয়ে যায়।

১৭৬

وَلَوْ شِئْنَا لَرَفَعْنَاهُ بِهَا وَلَـٰكِنَّهُ أَخْلَدَ إِلَى الْأَرْضِ وَاتَّبَعَ هَوَاهُ ۚ فَمَثَلُهُ كَمَثَلِ الْكَلْبِ إِن تَحْمِلْ عَلَيْهِ يَلْهَثْ أَوْ تَتْرُكْهُ يَلْهَث ۚ ذَّٰلِكَ مَثَلُ الْقَوْمِ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا ۚ فَاقْصُصِ الْقَصَصَ لَعَلَّهُمْ يَتَفَكَّرُونَ

আর আমি ইচ্ছা করলে তাকে এই আয়াতসমূহের সাহায্যে উন্নত করতাম; কিন্তু সে দুনিয়ার প্রতি অধিক ঝুঁকে পড়ে এবং স্বীয় কামনা-বাসনার অনুসরণ করতে থাকে, তার উদাহরণ একটি কুকুরের ন্যায়, ওকে যদি তুমি ধমক বা কিছু দ্বারা আঘাত করে তাড়িয়ে দাও, তবে জিহ্বা বের করে হাঁপায়, আবার যদি ওকে কিছু না করে ছেড়ে দাও তবুও জিহ্বা বের করে হাঁপাতে থাকে, যারা আমার আয়াতসমূহে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, এই উদাহরণ হল সেই সম্প্রদায়ের তুমি কাহিনী বর্ণনা করে শুনাতে থাকো, হয়তো তারা এটা চিন্তা-ভাবনা করবে।

১৭৭

سَاءَ مَثَلًا الْقَوْمُ الَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا وَأَنفُسَهُمْ كَانُوا يَظْلِمُونَ

এই উদাহরণটি সেই সম্প্রদায়ের জন্যে কতই না মন্দ উদাহরণ যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা মনে করে থাকে এবং তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করতে থাকে।

১৭৮

مَن يَهْدِ اللَّهُ فَهُوَ الْمُهْتَدِي ۖ وَمَن يُضْلِلْ فَأُولَـٰئِكَ هُمُ الْخَاسِرُونَ

আল্লাহ যাকে হেদায়েত করেন সে-ই হেদায়েতপ্রাপ্ত হন, আর যাকে তিনি বিভ্রান্ত করেন সে ব্যর্থ ও ক্ষতিগ্রস্থ হয়।

১৭৯

وَلَقَدْ ذَرَأْنَا لِجَهَنَّمَ كَثِيرًا مِّنَ الْجِنِّ وَالْإِنسِ ۖ لَهُمْ قُلُوبٌ لَّا يَفْقَهُونَ بِهَا وَلَهُمْ أَعْيُنٌ لَّا يُبْصِرُونَ بِهَا وَلَهُمْ آذَانٌ لَّا يَسْمَعُونَ بِهَا ۚ أُولَـٰئِكَ كَالْأَنْعَامِ بَلْ هُمْ أَضَلُّ ۚ أُولَـٰئِكَ هُمُ الْغَافِلُونَ

আমি বহু জিন ও মানুষকে জাহান্নামের জন্যে সৃষ্টি করেছি, তাদের হৃদয় রয়েছে; কিন্তু তারা তা দ্বারা উপলব্ধি করে না, তাদের চক্ষু রয়েছে; কিন্তু তারা তা দ্বারা দেখে না, তাদের কর্ণ রয়েছে; কিন্তু তা দ্বারা তারা শোনে না, তারাই হল পশুর ন্যায়; বরং তা অপেক্ষাও অধিক বিভ্রান্ত, তারাই হল গাফিল বা অমনোযোগী।

১৮০

وَلِلَّهِ الْأَسْمَاءُ الْحُسْنَىٰ فَادْعُوهُ بِهَا ۖ وَذَرُوا الَّذِينَ يُلْحِدُونَ فِي أَسْمَائِهِ ۚ سَيُجْزَوْنَ مَا كَانُوا يَعْمَلُونَ

আর আল্লাহর অসংখ্য সুন্দর সুন্দর ও ভাল নাম রয়েছে, সুতরাং তোমরা তাঁকে সেসব নামেই ডাকবে, আর তাদেরকে বর্জন কর যারা তাঁর নাম বিকৃত করে, সত্বরই তাদেরকে তাদের কৃতকর্মের প্রতিফল দেয়া হবে।

১৮১

وَمِمَّنْ خَلَقْنَا أُمَّةٌ يَهْدُونَ بِالْحَقِّ وَبِهِ يَعْدِلُونَ

আর আমি যাদেরকে সৃষ্টি করেছি তাদের মধ্যে এমন একটি দলও রয়েছে যারা সত্য (অর্থাৎ দ্বীন ইসলাম)- এর অনুরূপ হিদায়াত করে এবং ওরই অনুরূপ ইনসাফও করে।

১৮২

وَالَّذِينَ كَذَّبُوا بِآيَاتِنَا سَنَسْتَدْرِجُهُم مِّنْ حَيْثُ لَا يَعْلَمُونَ

যারা আমার আয়াতসমূহকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করে, আমি তাদের অজ্ঞাতে তাদেরকে ধীরে ধীরে পাকড়াও করবো।

১৮৩

وَأُمْلِي لَهُمْ ۚ إِنَّ كَيْدِي مَتِينٌ

আমি তাদেরকে অবকাশ দিচ্ছি, নিশ্চয় আমার কৌশল বা ষড়যন্ত্র অতি শক্ত।

১৮৪

أَوَلَمْ يَتَفَكَّرُوا ۗ مَا بِصَاحِبِهِم مِّن جِنَّةٍ ۚ إِنْ هُوَ إِلَّا نَذِيرٌ مُّبِينٌ

তারা কি এটা চিন্তা করে না যে, তাদের সঙ্গী পাগল নয়? তিনি তো একজন সুস্পষ্ট সতর্ককারী!

১৮৫

أَوَلَمْ يَنظُرُوا فِي مَلَكُوتِ السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ وَمَا خَلَقَ اللَّهُ مِن شَيْءٍ وَأَنْ عَسَىٰ أَن يَكُونَ قَدِ اقْتَرَبَ أَجَلُهُمْ ۖ فَبِأَيِّ حَدِيثٍ بَعْدَهُ يُؤْمِنُونَ

তারা কি আকাশসমূহও পৃথিবীর রাজত্ব সম্পর্কে কোন গভীর চিন্তা করে না? আর আল্লাহ যা কিছু সৃষ্টি করেছেন এবং তাদের জীবনের নির্দিষ্ট মেয়াদটি পূর্ণ হবার সময়টি হয়তো বা নিকটে এসে পড়েছে তারা কি এটাও চিন্তা করে না? সুতরাং কুরআনের পর তারা কোন কথায় ঈমান আনবে?

১৮৬

مَن يُضْلِلِ اللَّهُ فَلَا هَادِيَ لَهُ ۚ وَيَذَرُهُمْ فِي طُغْيَانِهِمْ يَعْمَهُونَ

যাদেরকে আল্লাহ বিপদগামী করেন, তাদের কোন পথ প্রদর্শক নেই, আর আলাহ তাদেরকে তাদেরই বিভ্রান্তির মধ্যে দিশেহারার (বিভ্রান্তির) ন্যায় ঘুরে বেড়াতে ছেড়ে দেন।

১৮৭

يَسْأَلُونَكَ عَنِ السَّاعَةِ أَيَّانَ مُرْسَاهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ رَبِّي ۖ لَا يُجَلِّيهَا لِوَقْتِهَا إِلَّا هُوَ ۚ ثَقُلَتْ فِي السَّمَاوَاتِ وَالْأَرْضِ ۚ لَا تَأْتِيكُمْ إِلَّا بَغْتَةً ۗ يَسْأَلُونَكَ كَأَنَّكَ حَفِيٌّ عَنْهَا ۖ قُلْ إِنَّمَا عِلْمُهَا عِندَ اللَّهِ وَلَـٰكِنَّ أَكْثَرَ النَّاسِ لَا يَعْلَمُونَ

(হে মুহাম্মদ সঃ)! তারা তোমাকে জিজ্ঞেস করছে যে, কিয়ামত কখন সংঘটিত হবে? তুমি বলে দাওঃ এই বিষয়ে আমার প্রতিপালকই একমাত্র জ্ঞানের অধিকারী, শুধু তিনিই এর নির্ধারিত সময়ে প্রকাশ করবেন, তা হবে আকাশ রাজ্য ও পৃথিবীতে একটি ভয়ংকর ঘটনা, তোমাদের উপর তা আকস্মিকভাবেই আসবে, তুমি যেন এ বিষয়ে পুরোপুরি অবগত, এটা ভেবে তারা তোমাকে এ সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছে, তুমি বলে দাওঃ এর সম্পর্কে জ্ঞান একমাত্র আল্লাহর কাছেই রয়েছে; কিন্তু অধিকাংশ লোকই এ সম্পর্কে কোনই জ্ঞান রাখে না।

১৮৮

قُل لَّا أَمْلِكُ لِنَفْسِي نَفْعًا وَلَا ضَرًّا إِلَّا مَا شَاءَ اللَّهُ ۚ وَلَوْ كُنتُ أَعْلَمُ الْغَيْبَ لَاسْتَكْثَرْتُ مِنَ الْخَيْرِ وَمَا مَسَّنِيَ السُّوءُ ۚ إِنْ أَنَا إِلَّا نَذِيرٌ وَبَشِيرٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

(হে মুহাম্মদ সঃ)! তুমি ঘোষণা দিয়ে দাওঃ আল্লাহ যা ইচ্ছা করেন তা ছাড়া আমার নিজের ভাল-মন্দ, লাভ-ক্ষতি ইত্যাদি বিষয়ে আমার কোন অধিকার নেই, আমি যদি অদৃশ্য তত্ত্ব ও খবর জানতাম তবে আমি অনেক কল্যাণ লাভ করতে পারতাম আর কোন অমঙ্গল ও অকল্যাণই তোমাকে স্পর্শ করতে পারতো না। (অতএব অদৃশ্যের কোন খবরই আমি রাখি না,) আমি শুধু মু’মিন সম্প্রদায়ের জন্যে একজন সতর্ককারী ও সুসংবাদবাহী।

১৮৯

هُوَ الَّذِي خَلَقَكُم مِّن نَّفْسٍ وَاحِدَةٍ وَجَعَلَ مِنْهَا زَوْجَهَا لِيَسْكُنَ إِلَيْهَا ۖ فَلَمَّا تَغَشَّاهَا حَمَلَتْ حَمْلًا خَفِيفًا فَمَرَّتْ بِهِ ۖ فَلَمَّا أَثْقَلَت دَّعَوَا اللَّهَ رَبَّهُمَا لَئِنْ آتَيْتَنَا صَالِحًا لَّنَكُونَنَّ مِنَ الشَّاكِرِينَ

তিনিই আলাহ যিনি তোমাদেরকে এক ব্যক্তি (আদম আঃ) হতে সৃষ্টি করেছেন এবং সেই ব্যক্তি হতেই তাঁর সঙ্গিনী (হাওয়া আঃ)-কে সৃষ্টি করেছেন যেম তিনি তার নিকট থেকে প্রশান্তি লাভ করতে পারেন, অতঃপর যখন সে তার (স্ত্রীর) সাথে মিলনে প্রবৃত্ত হয় তখন সেই মহিলাটি এক গোপন ও লঘু গর্ভধারণ করে, আর (এই অবস্থায় সে দিন কাটাতে থাকে এবং) তা নিয়ে চলাফেরা করতে থাকে, অতঃপর যখন তার গর্ভ গুরুভার হয় তখন তারা উভয়েই তাদের প্রতিপালকের কাছে দু’আ করেঃ যদি আপনি আমাদেরকে সৎ সন্তান দান করেন তবে আমরা আপনার কৃতজ্ঞ বান্দা হবো।

১৯০

فَلَمَّا آتَاهُمَا صَالِحًا جَعَلَا لَهُ شُرَكَاءَ فِيمَا آتَاهُمَا ۚ فَتَعَالَى اللَّهُ عَمَّا يُشْرِكُونَ

অতঃপর তিনি যখন তাদেরকে সৎ ও সুস্থ সন্তান দান করেন তখন তারা আল্লাহর দেয়া এই দানে অংশী স্থাপন করে; কিন্তু তারা যাকে অংশী করে আল্লাহ তা অপেক্ষা অনেক উন্নত ও মহান।

১৯১

أَيُشْرِكُونَ مَا لَا يَخْلُقُ شَيْئًا وَهُمْ يُخْلَقُونَ

তারা কি এমন বস্তুকে (আল্লাহর সাথে) অংশী করে থাকে যারা কোন বস্তুই সৃষ্টি করে না বরং তারা নিজেরাই (আল্লাহর দ্বারা) সৃষ্টিকৃত?

১৯২

وَلَا يَسْتَطِيعُونَ لَهُمْ نَصْرًا وَلَا أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ

এই শরীরকৃত জিনিসসমূহ যেমন তাদের কোন সাহায্য করার ক্ষমতা রাখে না, তেমনি নিজেদেরকেও কোন সাহায্য করতে পারে না।

১৯৩

وَإِن تَدْعُوهُمْ إِلَى الْهُدَىٰ لَا يَتَّبِعُوكُمْ ۚ سَوَاءٌ عَلَيْكُمْ أَدَعَوْتُمُوهُمْ أَمْ أَنتُمْ صَامِتُونَ

তোমরা যদি ওদেরকে সৎপথে ডাকো তবে তারা তোমাদের অনুসরণ করবে না। তাদেরকে ডাকতে থাকা অথবা তোমাদের চুপ করে থাকা উভয়ই তোমাদের পক্ষে সমান।

১৯৪

إِنَّ الَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِ اللَّهِ عِبَادٌ أَمْثَالُكُمْ ۖ فَادْعُوهُمْ فَلْيَسْتَجِيبُوا لَكُمْ إِن كُنتُمْ صَادِقِينَ

আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে ডাকো, তারা তো তোমাদেরই ন্যায় বান্দা, সুতরাং তোমরা তাদেরকে ডাকতে থাকো, যদি তোমরা সত্যবাদী হও তবে তারা তোমাদের ডাকে সাড়া দেবে।

১৯৫

أَلَهُمْ أَرْجُلٌ يَمْشُونَ بِهَا ۖ أَمْ لَهُمْ أَيْدٍ يَبْطِشُونَ بِهَا ۖ أَمْ لَهُمْ أَعْيُنٌ يُبْصِرُونَ بِهَا ۖ أَمْ لَهُمْ آذَانٌ يَسْمَعُونَ بِهَا ۗ قُلِ ادْعُوا شُرَكَاءَكُمْ ثُمَّ كِيدُونِ فَلَا تُنظِرُونِ

তাদের কি পা আছে যা দ্বারা তারা চলছে? তাদের কি হাত আছে যা দ্বারা কোন কিছু ধরে থাকে? তাদের কি চক্ষু আছে যা দ্বারা দেখতে পারে? তাদের কি কর্ণ আছে যা দ্বারা শুনে থাকে? (হে নবী সঃ)! তুমি বলে দাওঃ আল্লাহর সাথে তোমরা যাদেরকে অংশী করেছো, তাদেরকে ডাকো, তারপর (সকলে একত্রিত হয়ে) আমার বিরুদ্ধে চক্রান্ত করতে থাকো, আমাকে আদৌ কোন অবকাশ দিও না।

১৯৬

إِنَّ وَلِيِّيَ اللَّهُ الَّذِي نَزَّلَ الْكِتَابَ ۖ وَهُوَ يَتَوَلَّى الصَّالِحِينَ

আমার অভিভাবক হলেন সেই আল্লাহ যিনি কিতাব অবতীর্ণ করেছেন, আর তিনিই সৎকর্মশীলদের অভভাবকত্ব করে থাকেন।

১৯৭

وَالَّذِينَ تَدْعُونَ مِن دُونِهِ لَا يَسْتَطِيعُونَ نَصْرَكُمْ وَلَا أَنفُسَهُمْ يَنصُرُونَ

আল্লাহ ছাড়া তোমরা যাদেরকে ডাকো, তারা তোমাদের সাহায্য করার কোন ক্ষমতা রাখে না এবং তারা নিজেদেরকেও সাহায্য করতে পারে না।

১৯৮

وَإِن تَدْعُوهُمْ إِلَى الْهُدَىٰ لَا يَسْمَعُوا ۖ وَتَرَاهُمْ يَنظُرُونَ إِلَيْكَ وَهُمْ لَا يُبْصِرُونَ

যদি তুমি তাদেরকে হিদায়াতের পথে ডাকো, তবে সে ডাক তারা শুনবে না, আর তুমি দেখবে যে, তারা তোমার দিকে তাকিয়ে রয়েছে, আসলে তারা কিছুই দেখছে না।

১৯৯

خُذِ الْعَفْوَ وَأْمُرْ بِالْعُرْفِ وَأَعْرِضْ عَنِ الْجَاهِلِينَ

(হে নবী সঃ)! তুমি বিনয় ও ক্ষমা পরায়ণতার নীতি গ্রহণ কর এবং লোকদেরকে সৎকাজে নির্দেশ দাও, আর মূর্খদেরকে এড়িয়ে চল।

২০০

وَإِمَّا يَنزَغَنَّكَ مِنَ الشَّيْطَانِ نَزْغٌ فَاسْتَعِذْ بِاللَّهِ ۚ إِنَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ

শয়তানের কুমন্ত্রণা যদি তোমাকে প্ররোচিত করে তবে তুমি আল্লাহর আশ্রয় প্রার্থনা কর, তিনি সর্বশ্রোতা ও সর্বজ্ঞ।

০৭. সূরাঃ আল আ’রাফ

আয়াত নংঅবতীর্ণঃ মক্কা
আয়াত সংখ্যাঃ ২০৬
রুকূঃ ২৪
২০১

إِنَّ الَّذِينَ اتَّقَوْا إِذَا مَسَّهُمْ طَائِفٌ مِّنَ الشَّيْطَانِ تَذَكَّرُوا فَإِذَا هُم مُّبْصِرُونَ

যারা মুত্তাকী, শয়তান যখন তাদেরকে কুমন্ত্রণা দিয়ে খারাপ কাজে নিমগ্ন করে, সাথে সাথে তারা আত্মসচেতন হয়ে আল্লাহকে স্মরণ করে ফলে তৎক্ষণাৎ তাদের (জ্ঞান) চক্ষু খুলে যায়।

২০২

وَإِخْوَانُهُمْ يَمُدُّونَهُمْ فِي الْغَيِّ ثُمَّ لَا يُقْصِرُونَ

শয়তানের যারা অনুগত ভ্রাতা, তারা তাদেরকে বিভ্রান্তি ও গোমরাহীর মধ্যে টেনে নেয়, এ ব্যাপারে তারা আদৌ কোন ত্রুটি করে না।

২০৩

وَإِذَا لَمْ تَأْتِهِم بِآيَةٍ قَالُوا لَوْلَا اجْتَبَيْتَهَا ۚ قُلْ إِنَّمَا أَتَّبِعُ مَا يُوحَىٰ إِلَيَّ مِن رَّبِّي ۚ هَـٰذَا بَصَائِرُ مِن رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ لِّقَوْمٍ يُؤْمِنُونَ

(হে নবী সঃ)! তুমি যখন কোন নিদর্শন ও মু’জিযা তাদের কাছে পেশ কর না, তখন তারা বলেঃ আনি এসব মু’জিযা কেন পেশ করেন না? তুমি তাদেরকে জানিয়ে দাও? আমার প্রতিপালকের নিকট থেকে আমার কাছে যা কিছু প্রত্যাদেশ পাঠানো হয়, আমি শুধুমাত্র তারই অনুসরণ করি, এই কুরআন তোমাদের প্রতিপালকের পক্ষ হতে এক বিরাট দলীল ও নিদর্শন এবং ঈমানদার সম্প্রদায়ের জন্যে হিদায়াত ও অনুগ্রহের প্রতীক।

২০৪

وَإِذَا قُرِئَ الْقُرْآنُ فَاسْتَمِعُوا لَهُ وَأَنصِتُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ

যখন কুরআন পাঠ করা হয়, তখন তোমরা মনোযোগের সাথে তা শ্রবণ করবে এবং নীরব নিশ্চুপ হয়ে থাকবে, হয়তো তোমাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করা হবে।

২০৫

وَاذْكُر رَّبَّكَ فِي نَفْسِكَ تَضَرُّعًا وَخِيفَةً وَدُونَ الْجَهْرِ مِنَ الْقَوْلِ بِالْغُدُوِّ وَالْآصَالِ وَلَا تَكُن مِّنَ الْغَافِلِينَ

তোমার প্রতিপালককে মনে মনে বিনয় নম্র ও ভয়-ভীতি সহকারে অনুচ্চস্বরে সকাল ও সন্ধ্যায় স্মরণ করবে, আর (হে নবী সঃ!) তুমি এই ব্যাপারে গাফিল ও উদাসীন হবে না।

২০৬

إِنَّ الَّذِينَ عِندَ رَبِّكَ لَا يَسْتَكْبِرُونَ عَنْ عِبَادَتِهِ وَيُسَبِّحُونَهُ وَلَهُ يَسْجُدُونَ ۩

যারা তোমাদের প্রভুর সান্নিধ্যে থাকেন (অর্থাৎ ফেরেস্তারা) তাঁরা অহংকারে তাঁর ইবাদত হতে বিমুখ হয় না, তাঁরা তাঁরই গুণাগুণ ও মহিমা প্রকাশ করেন এবং তাঁরা তাকেই সিজদা করেন।

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x