০০৬. সূরাঃ আন’আম
আয়াত নং | অবতীর্ণঃ মক্কা আয়াত সংখ্যাঃ ১৬৫ রুকূঃ ২০ |
---|---|
১৫১ | قُلْ تَعَالَوْا أَتْلُ مَا حَرَّمَ رَبُّكُمْ عَلَيْكُمْ ۖ أَلَّا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا ۖ وَبِالْوَالِدَيْنِ إِحْسَانًا ۖ وَلَا تَقْتُلُوا أَوْلَادَكُم مِّنْ إِمْلَاقٍ ۖ نَّحْنُ نَرْزُقُكُمْ وَإِيَّاهُمْ ۖ وَلَا تَقْرَبُوا الْفَوَاحِشَ مَا ظَهَرَ مِنْهَا وَمَا بَطَنَ ۖ وَلَا تَقْتُلُوا النَّفْسَ الَّتِي حَرَّمَ اللَّهُ إِلَّا بِالْحَقِّ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَعْقِلُونَ
(হে মুহাম্মদ সঃ)! এ লোকদেরকে বলঃ তোমরা এসো! তোমাদের প্রতিপালক তোমাদের প্রতি কি কি হারাম করেছেন, তা আমি তোমাদেরকে পাঠ করে শুনাবো, আর তা এই যে, তোমরা তাঁর সাথে কাউকেও শরীক সদ্ব্যবহার করবে, দারিদ্রতার ভয়ে নিজেদের সন্তানদেরকে হত্যা করবে না, কেননা আমিই তোমাদেরকে ও তাদেরকে জীবিকা দিবো, আর অশ্লীল কাজ ও কথার নিকটেও যেও না, তা প্রকাশ্যই হোক বা গোপনীয়ই হোক, আর আল্লাহ যার হট্যা নিষিদ্ধ করেছেন; যথার্থ কারণ (অর্থাৎ যে কারণে হত্যা করা শরীয়তে অনুমোদিত তা) ছাড়া তাকে হত্যা করো না, এসব বিষয় আল্লাহ তোমাদেরকে নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা অনুধাবন করতে পার। |
১৫২ | وَلَا تَقْرَبُوا مَالَ الْيَتِيمِ إِلَّا بِالَّتِي هِيَ أَحْسَنُ حَتَّىٰ يَبْلُغَ أَشُدَّهُ ۖ وَأَوْفُوا الْكَيْلَ وَالْمِيزَانَ بِالْقِسْطِ ۖ لَا نُكَلِّفُ نَفْسًا إِلَّا وُسْعَهَا ۖ وَإِذَا قُلْتُمْ فَاعْدِلُوا وَلَوْ كَانَ ذَا قُرْبَىٰ ۖ وَبِعَهْدِ اللَّهِ أَوْفُوا ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَذَكَّرُونَ
আর ইয়াতীমদের বয়ঃপ্রাপ্ত না হওয়া পর্যন্ত সদুদ্দেশ্য ব্যতীত তাদের বিষয় সম্পত্তির কাছেও যেও না, আর আদান-প্রদানে পরিমাণ ও ওজন সঠিকভাবে করবে, আমি কারো ওপর তার সাধ্যাতীত ভার (দায়িত্ব-কর্তব্য) অর্পণ করি না, আর তোমরা যখন কথা বলবে তখন স্বজনের বিরুদ্ধে হলেও ন্যায়ানুগ কথা বলবে, আর আল্লাহর সাথে কৃত অঙ্গীকার পূরণ করবে, আল্লাহ তোমাদেরকে এসব বিষয় নির্দেশ দিয়েছেন, যেন তোমরা তাঁর এ নির্দেশ ও উপদেশ গ্রহণ কর। |
১৫৩ | وَأَنَّ هَـٰذَا صِرَاطِي مُسْتَقِيمًا فَاتَّبِعُوهُ ۖ وَلَا تَتَّبِعُوا السُّبُلَ فَتَفَرَّقَ بِكُمْ عَن سَبِيلِهِ ۚ ذَٰلِكُمْ وَصَّاكُم بِهِ لَعَلَّكُمْ تَتَّقُونَ
আর এ পথই আমার সরল পথ; সুতরাং তোমরা এ পথেরই অনুসরণ কর। এ পথ ছাড়া অন্যান্য কোন পথের অনুসরণ করো না, অন্যথায় তোমাদেরকে তাঁর পথ থেকে বিচ্ছিন্ন করে দূরে সরিয়ে দেবে, আল্লাহ তোমাদেরকে এই নির্দেশ দিলেন, যেন তোমরা বেঁচে থাকতে পার। |
১৫৪ | ثُمَّ آتَيْنَا مُوسَى الْكِتَابَ تَمَامًا عَلَى الَّذِي أَحْسَنَ وَتَفْصِيلًا لِّكُلِّ شَيْءٍ وَهُدًى وَرَحْمَةً لَّعَلَّهُم بِلِقَاءِ رَبِّهِمْ يُؤْمِنُونَ
অতঃপর (আবার বলছি) মূসা (আঃ)- কে আমি একখানা কিতাব প্রদান করেছিলাম, যাতে সৎ ও পুণ্য কর্মপরায়ণদের উপর আমার নেয়ামত পূর্ণাঙ্গ হয় এবং প্রত্যেকটি বস্তুর বিশদ বিবরণ হয়ে যায় এবং পথ নির্দেশ সম্বলিত ও রহমত হয়, (উদ্দেশ্য ছিল) যাতে তারা তাদের প্রতিপালকের সাথে সাক্ষাৎ হওয়া সম্বন্ধে পূর্ণ বিশ্বাস লাভ করতে পারে। |
১৫৫ | وَهَـٰذَا كِتَابٌ أَنزَلْنَاهُ مُبَارَكٌ فَاتَّبِعُوهُ وَاتَّقُوا لَعَلَّكُمْ تُرْحَمُونَ
আর (এমনিভাবে) আমি এই কিতাব (কুরআন) অবতীর্ণ করেছি যা বরকতময় ও কল্যাণময়! সুতরাং তোমরা এটার অনুসরণ করে চল এবং ভয় কর, যেন তোমাদের প্রতি দয়া ও অনুগ্রহ করা হয়। |
১৫৬ | أَن تَقُولُوا إِنَّمَا أُنزِلَ الْكِتَابُ عَلَىٰ طَائِفَتَيْنِ مِن قَبْلِنَا وَإِن كُنَّا عَن دِرَاسَتِهِمْ لَغَافِلِينَ
(এটা নাযিল করার কারণ হল এই যে,) যেন তোমরা না বলতে পার যে, সে কিতাব তো আমাদের পূর্ববর্তী দুই সম্প্রদায়ের প্রতি অবতীর্ণ করা হয়েছিল এবং আমরা তাদের শিক্ষা থেকে সম্পূর্ণ অমনোযোগী ছিলাম। |
১৫৭ | أَوْ تَقُولُوا لَوْ أَنَّا أُنزِلَ عَلَيْنَا الْكِتَابُ لَكُنَّا أَهْدَىٰ مِنْهُمْ ۚ فَقَدْ جَاءَكُم بَيِّنَةٌ مِّن رَّبِّكُمْ وَهُدًى وَرَحْمَةٌ ۚ فَمَنْ أَظْلَمُ مِمَّن كَذَّبَ بِآيَاتِ اللَّهِ وَصَدَفَ عَنْهَا ۗ سَنَجْزِي الَّذِينَ يَصْدِفُونَ عَنْ آيَاتِنَا سُوءَ الْعَذَابِ بِمَا كَانُوا يَصْدِفُونَ
অথবা তোমরা যেন এ কথাও বলতে না পার, আমাদের প্রতি কিতাব নাযিল করা হলে আমরা তাদের তুলনায় বেশি হিদায়াত লাভ করতাম; এখন তো তোমাদের কাছে তোমাদের প্রভুর পক্ষ থেকে এক সুস্পষ্ট দলীল এবং পথ পাবার দিক নির্দেশ ও রহমত সমাগত হয়েছে, অতএব (এরপর আল্লাহর) আয়াতকে যে মিথ্যা প্রতিপন্ন করবে এবং তা থেকে এড়িয়ে থাকবে তার চেয়ে বড় অত্যাচারী আর কে হতে পারে? যারা আমার আয়াতসমূহ এড়িয়ে চলবে তাদেরকে আমি এই এড়িয়ে চলার কারণে অতিসত্বর কঠিন শাস্তি দিব। |
১৫৮ | هَلْ يَنظُرُونَ إِلَّا أَن تَأْتِيَهُمُ الْمَلَائِكَةُ أَوْ يَأْتِيَ رَبُّكَ أَوْ يَأْتِيَ بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ ۗ يَوْمَ يَأْتِي بَعْضُ آيَاتِ رَبِّكَ لَا يَنفَعُ نَفْسًا إِيمَانُهَا لَمْ تَكُنْ آمَنَتْ مِن قَبْلُ أَوْ كَسَبَتْ فِي إِيمَانِهَا خَيْرًا ۗ قُلِ انتَظِرُوا إِنَّا مُنتَظِرُونَ
তারা কি শুধু প্রতীক্ষায় রয়েছে যে, তাদের কাছে ফেরেশতা আসবে? কিংবা স্বয়ং তোমার প্রতিপালক আসবেন? অথবা তোমার প্রতিপালকের কোন কোন নিদর্শন প্রকাশ হয়ে পড়বে? যেদিন তোমার প্রতিপালকের কতক নিদর্শন প্রকাশ হয়ে পড়বে, (পশ্চিম দিক থেকে যেদিন সূর্যোদয় ঘটবে) সেই দিনের পূর্বে যারা ঈমান আনেনি, তাদের ঈমান তখন কোন উপকারে আসবে না, অথবা যারা নিজেদের ঈমান দ্বারা কোন নেক কাজ করেনি (তখন নেক কাজ দ্বারা কোন ফলোদয় হবে না), তুমি এসব পাপিষ্ঠকে জানিয়ে দাও- তোমরা (এরূপ আশা নিয়ে) প্রতীক্ষা করতে থাক, আমিও প্রতীক্ষা করছি। |
১৫৯ | إِنَّ الَّذِينَ فَرَّقُوا دِينَهُمْ وَكَانُوا شِيَعًا لَّسْتَ مِنْهُمْ فِي شَيْءٍ ۚ إِنَّمَا أَمْرُهُمْ إِلَى اللَّهِ ثُمَّ يُنَبِّئُهُم بِمَا كَانُوا يَفْعَلُونَ
নিশ্চয়ই যারা নিজেদের দ্বীনকে খন্ড-বিখন্ড করেছে এবং বিভিন্ন দলে উপদলে বিভক্ত হয়ে পড়েছে, তাদের সাথে তোমার কোন সম্পর্ক নেই, তাদের বিষয়টি নিশ্চয়ই আল্লাহর হাওলায় রয়েছে, পরিশেষে তিনিই তাদেরকে তাদের কার্যকলাপ সম্পর্কে অবহিত করবেন। |
১৬০ | مَن جَاءَ بِالْحَسَنَةِ فَلَهُ عَشْرُ أَمْثَالِهَا ۖ وَمَن جَاءَ بِالسَّيِّئَةِ فَلَا يُجْزَىٰ إِلَّا مِثْلَهَا وَهُمْ لَا يُظْلَمُونَ
কেউ কোন ভাল কাজ করলে সে তার দশগুণ প্রতিদান পাবে, আর কেউ পাপ ও অসৎ কাজ করলে তাকে শুধু ততটুকুই প্রতিফল দেয়া হবে যতটুকু সে করেছে, আর তারা অত্যাচারিত হবে না (অর্থাৎ বেশি প্রতিফল ভোগ করিয়ে তাদের প্রতি অত্যাচার করা হবে না)। |
১৬১ | قُلْ إِنَّنِي هَدَانِي رَبِّي إِلَىٰ صِرَاطٍ مُّسْتَقِيمٍ دِينًا قِيَمًا مِّلَّةَ إِبْرَاهِيمَ حَنِيفًا ۚ وَمَا كَانَ مِنَ الْمُشْرِكِينَ
(হে মুহাম্মদ সঃ)! তুমি বলঃ নিঃসন্দেহে আমার প্রতিপালক আমাকে সঠিক ও নির্ভুল পথে পরিচালিত করেছেন, ওটাই সুপ্রতিষ্ঠিত দ্বীন এবং ইব্রাহীম (আঃ)- এর অবলম্বিত আদর্শ যা সে ঐকান্তিক নিষ্ঠার সাথে গ্রহণ করেছিল। আর সে মুশরিকদের অন্তর্ভুক্ত ছিল না। |
১৬২ | قُلْ إِنَّ صَلَاتِي وَنُسُكِي وَمَحْيَايَ وَمَمَاتِي لِلَّهِ رَبِّ الْعَالَمِينَ
তুমি বলে দাওঃ আমার নামায, আমার সকল ইবাদত, (কুরবানী ও হজ্জ) আমার জীবন ও আমার মরণ সব কিছু সারা জাহানের রব আল্লাহর জন্যে। |
১৬৩ | لَا شَرِيكَ لَهُ ۖ وَبِذَٰلِكَ أُمِرْتُ وَأَنَا أَوَّلُ الْمُسْلِمِينَ
তাঁর কোন শরীক নেই, আমি এর জন্যে আদিষ্ট হয়েছি, (অর্থাৎ আমি যেন তাঁর সাথে অন্য কাউকে শরীক স্থির না করি।) আর আত্মসমর্পণকারীদের মধ্যে আমিই হলাম প্রথম। |
১৬৪ | قُلْ أَغَيْرَ اللَّهِ أَبْغِي رَبًّا وَهُوَ رَبُّ كُلِّ شَيْءٍ ۚ وَلَا تَكْسِبُ كُلُّ نَفْسٍ إِلَّا عَلَيْهَا ۚ وَلَا تَزِرُ وَازِرَةٌ وِزْرَ أُخْرَىٰ ۚ ثُمَّ إِلَىٰ رَبِّكُم مَّرْجِعُكُمْ فَيُنَبِّئُكُم بِمَا كُنتُمْ فِيهِ تَخْتَلِفُونَ
(হে মুহাম্মদ সঃ)! তুমি জিজ্ঞেস করঃ আমি কি আল্লাহকে বাদ দিয়ে অন্য প্রতিপালকের সন্ধান করবো? অথচ তিনিই হচ্ছেন প্রতিটি বস্তুর প্রতিপালক! প্রত্যেক ব্যক্তিই স্বীয় কৃতকর্মের জন্যে দায়ী হবে, কোন বোঝা বহনকারীই অপর কারো বোঝা বহন করবে না, পরিশেষে তোমাদের প্রতিপালকের নিকট তোমাদেরকে প্রত্যাবর্তন করতে হবে, তৎপর তিনি তোমরা যে বিষয়ে মতবিরোধ করেছিলে সে বিষয়ে তোমাদেরকে অবহিত করবেন। |
১৬৫ | وَهُوَ الَّذِي جَعَلَكُمْ خَلَائِفَ الْأَرْضِ وَرَفَعَ بَعْضَكُمْ فَوْقَ بَعْضٍ دَرَجَاتٍ لِّيَبْلُوَكُمْ فِي مَا آتَاكُمْ ۗ إِنَّ رَبَّكَ سَرِيعُ الْعِقَابِ وَإِنَّهُ لَغَفُورٌ رَّحِيمٌ
আর তিনি এমন, যিনি তোমাদেরকে দুনিয়ার প্রতিনিধি করেছেন এবং তোমাদের কতককে কতকের উপর মর্যাদায় উন্নত করেছেন, উদ্দেশ্য হল তোমাদেরকে তিনি যা কিছু দিয়েছেন তাতে তোমাদের পরীক্ষা করবেন, নিঃসন্দেহে তোমার প্রতিপালক ত্বরিত শাস্তিদাতা, আর নিঃসন্দেহে তিনি ক্ষমাশীল ও কৃপানিধান। |