যেখানে সেখানে বসে যখন তখন ছোট ছোট কবিতা লেখাটা আমার পুরোনো অভ্যাস। অবসর সময়ে হাতের কাছে একটা কলম আর একটুকরা কাগজ পেলে হয়ত দু-চার চরনে একটা কবিতা লেখতাম। ও গুলো ফেলে দিতাম না, ঘরে জমিয়ে রাখতাম। ওর বেশি ছিল নীতিমূলক কবিতা। দুটো নমুনা দিচ্ছি-

১। (কবিতাটির নাম “কাজের সময়” রচনা ৭/১/৪০ বাং)

দ্বীপ নিভিয়ে গেলে আর লাভ কি আছে তৈল দানে?

চোর পালিয়ে গেলে আর লাভ কি আছে সাবধানে?

চলে গেলে জীবন পাখী বৈদ্য ডেকে হয় কি ফল?

ফল কি-রে বাঁধিলে আলী চলে গেলে ক্ষেতের জল?

সময় মত কর্ম কর রেখনা কখন ফেলিয়ে,

কর্ম বিফল হবে গেলে কাজের সময় চালিয়ে।

অর্থের অভাবে লোক কেহ নহে কা’র

সুখের সংসার হয় দুঃখের সংসার।

মাতা করে নিন্দা আর পিতা হল রুষ্ঠ।

দাস-দাসী ক্রুদ্ধ হয় ভ্রাতা হনু দুষ্ট।

সন্তান অবাধ্য হয় না লয় বচন।

প্রিয়সী রমণী করে রুক্ষ্ম সম্ভাষণ।

আত্মীয় কুটুম্বগণ নিকটে না যায়

কেননা নিকটে গেলে যদি কিছু চায়?”

স্কুলে শিক্ষকতা করবার সময় ছাত্রদের অনুরোধে- তাঁদের মেজাজ চরিত্র ও রুচি অনুযায়ী বিষয় নির্বাচন করে ছোট ছোট কবিতা লিখে দিতাম। ছাত্ররা ওগুলো মুখস্ত করত ও উৎসাহের সহিত আওড়াত। কবিতা গুলোর প্রতি ছাত্ররা বেশি রকম আকৃষ্ট হয় এ জন্য যে, ওর প্রতি চরণের নির্দিষ্ট একটা বর্ণ ওপর হতে নীচে যোগ করে পড়লে প্রার্থী ছাত্রটির নাম পাওয়া যেত। দুটো নমুনা দিচ্ছি-

১। (কবিতাটির নাম “উপদেশ” রচনা ১/৬/৩৯ বাং)

হাতে, মুখে, কাজে যেন থাকে এক যোগ।

সহসা না হয় যেন ‘কটুভাষী’ রোগ।

মন দিয়ে লেখা পড়া করিও যতনে।

তৎপর থাকিও মাতা পিতার বচনে।

আদরে তুষিও তব প্রিত বন্ধু গনে।

লিখিত বচন গুলো রেখ সদা মনে।

(কোন শব্দের আদ্যাক্ষর “লী” দুষ্প্রাপ্য)

মুখের শ্রী চোখের শ্রী বৃথা অহংকার।

সে অধম রূপবান গুণ নাই যার।

শত জন রূপবান এক গুনবান।

দুহাজার তারা যেন এক গোটা চান (চাঁদ)।

পুঞ্জ-পুঞ্জ তারকারা অন্ধকারে হাসে

কত জন থাকে তার বিধু যদি আসে?

কবিতাগুলো একত্র করে সাজিয়ে গুছিয়ে এক খানা খাতায় লিখতে এ সময় আমার ইচ্ছে হল, লেখা শুরু করলাম এবং শেষ করলাম ১৩৪০ সালের ১৫ই চৈত্র তারিখে। খাতাটার নাম রাখলাম “সীজের ফুল” (“সীজ” একটি গাছের নাম। অঞ্চল বিশেষে উহাকে “সেউজ” গাছও বলা হয়। এ গাছটির- চেহারা কদর্য, রস বিষাক্ত; বিশেষত; কখনো ফুল ধরে না। বলা যায় এটা একটা নির্গুণ উদ্ভিদ। লেখক নিজেকে ঐ গাছটির সহিত তুলনা করে তার রচিত কবিতা (=পদ্ম=ফুল) গুলোর নাম রেখেছে “সীজের ফুল”। অর্থাৎ নির্গুনীর কবিতা)

এ সময় আমার বন্ধু বান্ধবদের মধ্যে ফজলুর রহমান (আঃ রহিম মৃধার পুত্র) ছাড়া উচ্চ শিক্ষিত লোক অপর কেউ ছিল না। তাই সীজের ফুল এর পান্ডুলিপি খানা ভ্রমাদি সংশোধনের জন্য ফজলু মিঞার কাছে দিলাম। তখন তার একজন সহপাঠী বন্ধু ছিলেন মোঃ কোব্বাত আলী মিঞা (চাঁদপুর নিবাসী আনরদ্দিন শরীফের পুত্র)। তিনি ফজলু মিঞার নিকট চেয়ে (আমার সম্মতি নিয়ে) পান্ডুলিপি খানা পড়তে নিয়ে আর ফেরত দেননি।

গত হল প্রায় তেইশ বছর। ১৩৬৩ সালে মনে পড়ল সেই প্নাডুলিপি খানার কথা, কবিতা গুলোর কথা। আর একখানা পান্ডুলিপি তৈরি করা যায়-কি না, তা চেষ্টা করে দেখবার ইচ্ছা হল এবং সচেষ্ট হলাম। অনেক খোঁজাখুঁজি করে উহার কিছু সংখ্যক কবিতার টুকরো কাগজ পাওয়া গেল অনেকগুলোই পাওয়া গেল না। যেগুলো পাওয়া গেল, সেগুলো সাজিয়ে-গুছিয়ে আবার একখানা খাতায় লিখতে শুরু করলাম এবং লেখা শেষ করলাম ১৯শে ভাদ্র (১৩৬৩) তারিখে। এ খাতাখানায়ে “অভিনন্দন পত্র” নামে একটা কবিতা গুচ্ছ যোগ করা হ’ল, যা আগের খাতাটিতে ছিল না। পদ্ম ছন্দে লিখিত এ অভিনন্দন পত্রটি প্রদান করা হচ্ছিল লাখুটিয়ার বাবু সুরেন্দ্র কুমার রায় চৌধুরীকে, তার আঃ রহিম মৃধা সাবের বাড়িতে আগমন উপলক্ষে। “সীজের ফুল” এর প্রায় সমস্ত কবিতাই ১৩৩৯ ও ১৩৪০ সালের রচিত। কিন্তু “অভিনন্দন পত্র”টির রচনাকাল ১৬ই বৈশাখ, ১৩৪৩।

শেষোক্ত পান্ডুলিপি খানা আজও সযত্নে রক্ষিত আছে। কিন্তু উহা প্রকাশের চেষ্টা কখনো করিনি। যেহেতু- কবিতাগুলোর রচনা রীতি সেকেলে, ভাব, ভাষা ও ছন্দ, এর কোনটাই ত্রুটিমুক্ত নয়। বিশেষতঃ উহা কাব্যরসের অভাব হেতু কাব্যামোদী সমাজে সমাদৃত হবে না। বলে আমার মনে হয়।

কিছু স্মৃতি, কিছু কথা

নিবেদন

ভিখারীর আত্মকাহিনী- প্রথম খন্ড

চর পূর্বাভাস ও জন্ম (১১৫৮-১৩০৭)

ছবি ও জলের কল (১৩২২)

মুন্সি আহম্মদ দেওয়ান (১৩২৩

পলায়ন (১৩২৪)

মুন্সি আপছার উদ্দিন (১৩২৫)

আরবী শিক্ষায় উদ্যোগ (১৩২৬)

চিকিৎসা শিক্ষা (১৩৩০)

জীবন প্রবাহের গতি (১৩৩১)

ছুতার কাজ শিক্ষা (১৩৩১)

জরীপ কাজ শিক্ষা (১৩৩৩)

বস্ত্র বয়ন শিক্ষা (১৩৩৫)

উচ্চ শিক্ষার প্রচেষ্টা (১৩৩৫)

জাল বুনা শিক্ষা (১৩৩৬)

ভিখারীর আত্মকাহিনী- দ্বিতীয় খন্ড

জাল বোনা ও মৎস্য শিকার

মোসলেম সমিতিঃ স্কুল প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষকতা (১৩৩৬-১৩৪১)

মোসলেম সমিতিরঃ ভাঙ্গন

পাঠাগার স্থাপন (১৩৩৭)

পাখা তৈয়ার (১৩৩৯)

ইঞ্জিনিয়ারিং শিখার উদ্যোগ ও মাতৃবিয়োগ (১৩৩৯)

সীজের ফুল রচনা (১৩৪০)

বিশ্বাসের বিবর্তন (১৩৪১)

ডাইনামো তৈয়ার (১৩৪১)

ভিখারীর আত্মকাহিনী- তৃতীয় খন্ড

কৃষি বিদ্যা শিক্ষা 

জলঘড়ী তৈয়ার

বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীর শিক্ষা 

সাইক্লোন

দুর্ভিক্ষ

অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদিরের সান্নিধ্যে

লাল গোলা যাতায়াত

ভিখারীর আত্মকাহিনী- পঞ্চম খন্ড

“ক্ষেত্র-ফল” রচনা

স্টেট বাটারা

আদেশাবলী

“সৃষ্টি – রহস্য” রচনা

“সত্যের সন্ধান” এর পান্ডুলিপ

সত্যের সন্ধান প্রকাশ

সন্তান-সন্ততি

ভূসম্পত্তি

দেশ সেবা

খোরাক-পোসাক

জীবন বাণী

“আরজ আলী মাতুব্বর” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒অভিযোগ বা মন্তব্য⇐

 

error: Content is protected !!
0
Would love your thoughts, please comment.x
()
x