‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’ ভারতের সবচেয়ে বড়ো পত্রিকা গোষ্ঠীর ইংরেজি দৈনিক। ৩০ আগস্ট ২০০৩, শনিবার। টাইমস-এর কলকাতা সংস্করণে একটা বিস্ফোরক খবর প্রকাশিত হল। পত্রিকার পৃষ্ঠায় থাকে মোট আটটি কলাম। তার ছ’কলাম জুড়েই ক্লাইভ হ্যারিসের অলৌকিক ক্ষমতার ‘আঁখো দেখা হাল’। সঙ্গে ছবি।

ক্লাইভ হ্যারিস একজন স্পর্শ চিকিৎসক। তবু পৃথিবীর তাবৎ স্পর্শ চিকিৎসকদের চেয়ে সম্পূর্ণ আলাদা। তাঁর চার থেকে দশ সেকেন্ড হাতের ছোঁয়ায় সম্পূর্ণ সেরে ওঠে লিউকোমিয়া থেকে ক্যানসার রোগী। শেষ অবস্থা না হলে এডস রোগীকেও সারিয়ে তোলেন। কতটুকু বয়স থেকে হাতের ছোঁয়ায় রোগী সারাচ্ছেন? মাত্র দু’বছরের শিশুকাল থেকে। যিশু থেকে কৃষ্ণ— কেউই দু’বছর বয়স থেকে মুহূর্তের স্পর্শে রোগীকে আরোগ্য করেছেন, এমন কাহিনি আমাদের জানা নেই। বাস্তব অনেক সময় কাহিনিকে ছাড়িয়ে যায়—এ কথা কে যেন লিখে গেছেন। তাই টাইমস- এর কথাকে স্বীকার করলে এই সত্যকেও স্বীকার করতে হয় যে, ক্লাইভ হ্যারিসের ‘অলৌকিক’ ক্ষমতা অভূতপূর্ব। অর্থাৎ আগে কখনও ঘটেনি। রেইকি সায়েব এখনও পর্যন্ত ১২ কোটি রোগীকে সারিয়ে তুলেছেন। ভাবা যায় ?

মাদার টেরিজাকে ‘সেন্টহুড’ দিতে যাচ্ছেন পোপ। কারণ—মাদার নাকি তাঁর অলৌকিক ক্ষমতায় একজন না দু-জনের অসুখ সারিয়েছিলেন। সে গল্পের দুধে অনেক জল। অথচ হাতের সামনে হ্যারিস থাকতে পোপ তাঁকে পাত্তাই দিচ্ছেন না। সাহেবদের কাছেও কী তবে ‘ঘর কা মুরগী দাল বরাবর?’ না কী মরা মানুষকে ‘অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী’ বলে ঘোষণা করায় অনেক সুবিধে আছে? দুষ্টু লোকেরা বলে, তা আছে। কারণ মরা মানুষকে অলৌকিক ক্ষমতার প্রমাণ দিতে হয় না ।

তিন মাসের ভারত সফরে এসেছেন হ্যারিস। ৩০ লক্ষ রোগী পাবেন বলে আশা করা যাচ্ছে। মুম্বাইতে অসাধারণ সাফল্যের পর হ্যারিস কলকাতায় আসছেন ২ সেপ্টেম্বর ২০০৩, মঙ্গলবার।

আমরা, যুক্তিবাদী সমিতির কেন্দ্রীয় কমিটির সভ্যরা শনিবারই ঠিক করে ফেললাম, খোলা মনে হ্যারিসকে নেড়ে চেড়ে দেখব। তাঁর ক্ষমতার কথা টাইমসের বানানো না হলে, আমরা হ্যারিসকে নোবেল পুরস্কার দেওয়ার জন্য আন্দোলনে নামব। নোবেল পুরস্কার তাঁকে দিতেই হবে, তা সে চিকিৎসাবিজ্ঞানে অবদানের জন্য দেওয়া হোক, বা নোবেল শান্তি পুরস্কার দেওয়া হোক। কিন্তু দিতে হবে।

পোল্যান্ডের মানুষ ক্লাইভ হ্যারিস। কানাডায় তিনি জীবনের দীর্ঘ সময় কাটিয়েছেন। দুটো দেশ হ্যারিসের নাম কেন যে নোবেল পুরস্কারের জন্য পাঠাচ্ছে না কে জানে! দেশ দুটো কী তবে ভারতের চেয়েও দুর্নীতিতে এগিয়ে? তেমন হলে হ্যারিসকে ভারতের নাগরিকত্ব দেওয়ার দাবি জানাব আমরা। আধ্যাত্মিকতার দেশ ভারতে তিনি স্বাগত। ভারতীয় জনতা পার্টি ” লিখ হিন্দু পরিষদ হ্যারিসকে নাগরিকত্ব দেওয়ার ব্যাপারে এক পায়ে খাড়া থাকবে আগাম ঘোষगा রাখছি। হ্যারিসের ব্যাপারে বিদেশি ছুঁত মার্গের কোনও ব্যাপার থাকতে পারে না। কারণ আমরা যে বিদেশি—এ’কথা মুরলীমনোহর যোশী থেকে প্রবীণ তোগাড়িয়া প্রত্যেকেই জানেন। সোনিয়া গান্ধিকে ‘বিদেশিনী’ বলে চেঁচানোটা অবশ্য একেবারেই অন্য ব্যাপার। প্রধান প্রতিপক্ষ সোনিয়াকে ক্ষমতার গদি থেকে দূরে রাখতে এই নখরাবাজি। হ্যারিসকে ভারতীয় বানাতে পারলে বিজেপি ও ভি এইচ পি’র লাভ-ই লাভ। লাভ একঃ ভারতীয় নোবেল প্রাপ্তি। লাভ দুইঃ বৈদিক স্পর্শচিকিৎসাকে বিশ্বের দরবারে তুলে ধরার চেষ্টা। লাভ তিন : ভারতীয় বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্পর্শচিকিৎসাকে পাঠ্যভুক্ত করে হিন্দু জাতীয়তাবাদকে উন্নত করা

জ্যোতিষশাস্ত্রকে বিশ্ববিদ্যালয়ের পাঠ্যভুক্ত করার জোরালো চেষ্টা বিজেপি সরকারের তরফে ছিল। যুক্তিবাদী সমিতির চেষ্টায় জ্যোতিষী পেশাটাই-বেআইনি হয়ে যাওয়ায় বিজেপি সরকারের সে পরিকল্পনা ধাক্কা খেয়েছে। এখন ফেং শ্যুই পড়াবার পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। বর্ধমান বিশ্ববিদ্যালয় জানিয়ে দিয়েছে, ফেং শ্যুই পড়াবে।

এর পরে আসবে রেইকি। কেন্দ্রীয় শিক্ষা দপ্তরের এক সচিব এ’কথা আমাকে বলেছিলেন। এখন মনে হচ্ছে খবরটায় ‘দম’ ছিল। তা’হলে হ্যারিসের পিছনে শুধু দেশের বৃহত্তম পত্রিকাগোষ্ঠী নেই। তারও পিছনে বি জে পি, ভি এইচ পি আছে। রাজনৈতিক দলের সঙ্গে পত্রিকাগোষ্ঠীর গাঁটছড়ার ঐতিহ্য এদেশে অতি প্রাচীন ।

হ্যারিসের আগমন-বার্তায় কলকাতার রেইকিওয়ালারা খুব খুশি। ধস নামা বাজার আবার উঠবে। কলকাতার প্রায় চ্যানেল-ই জ্যোতিষ, তন্ত্র, ফেং শ্যুই ও রেইকি নির্ভর। ওদের টাকায় চ্যানেল মাজা সোজা রেখেছে। যুক্তিবাদীরা ওইসব বুজরুকদের একটা করে ধরে, অমনি মার্কেটে ধস নামে। চ্যানেলওয়ালাদের বুকে গুড়গুড়িয়ে ভয় নামে। হ্যারিসের খবরে ওরাও দারুণ উল্লসিত।

আরে বাবা, এতো আর এলেবেলে বাংলা পত্রিকার খবর নয়। এ’হল খোদ সাহেবদের ভাষায় লেখা জবরদস্ত পত্রিকার খবর। অতএব ‘বুজরুকি’ বলে এক ফুঁয়ে উড়িয়ে দেবার উপায় নেই। ইংরেজি খবরের কাগজের বিশ্বাসযোগ্যতা নিয়ে প্রশ্ন তোলা মানে, বাঙালি হীনম্মন্যতাবোধকে বে-আব্রু করা। কলকাতার সভ্রান্ত মানুষগুলো ‘ছ্যা ছ্যা’ করবেন।

ক্লাইভ হ্যারিস বিষয়ে একটা জিনিস পরিষ্কার করে নেওয়া ভালো। হ্যারিস এলেবেলে নন। তাঁর নামে একটা বিশাল সংস্থা গড়ে উঠেছে। ‘দ্য ক্লাইভ হ্যারিস ফাউন্ডেশন’। ঠিকানা : বক্স ২৩। ৬৪-৪১০ সাইরাকো, পোল্যান্ড। ফাউন্ডেশনের সম্পত্তির পরিমাণ ৬০ হাজার কোটি স্টারলিং পাউন্ড। ভারতীয় টাকায় পরিমাণটা বুঝতে ৬০,০০০ কোটিকে ৭২ দিয়ে গুণ করতে হবে।

কী? মাথা ঘুরছে? আমাদের চিন্তার দৌড় টাটা, বিড়লা, আম্বানি পর্যন্ত। এদের সব্বাইকে বান্ডিল করলেও হ্যারিস ফাউন্ডেশনকে ছোঁয়া যাবে না। এমন ধনীর হাত বিশাল লম্বা হবে— এটা এখন শিশুও বোঝে। হ্যারিসের ভারত পর্যটনের পরিকল্পনার বিশালতা বুঝতে গেলে দু- একটি তথ্যই যথেষ্ট। ভারতের বিশাল পত্রিকাগোষ্ঠী হ্যারিসকে স্পনসর করতে এগিয়ে এসেছে। গড়ে উঠেছে একটি সংস্থা ‘হ্যারিস এশিয়া ফাউন্ডেশন’। যোগাযোগের ঠিকানা : মেহতা মহল, ১৫ মাথ্যু রোড, অপেরা হাউজ, মুম্বাই। cliveharrisasia @ indiatimes.com হল e- mail যোগাযোগের ঠিকানা।

রোগী দেখতে হ্যারিস সাহেব কোনও ফি নেন না। তবে ডোনেশন দিতে হয় অন্তত দু’হাজার টাকা। মুম্বাইতে ৪০ হাজার রোগী দেখেছেন। অসাধারণ সাফল্য এসেছে। এমনটাই শুনেছি।

২ সেপ্টেম্বর ২০০৩। দক্ষিণ কলকাতায় সাদার্ন প্লাজায় আমন্ত্রিত সাংবাদিকদের এমনই সব তথ্য দিচ্ছিলেন ‘হ্যারিস এশিয়া’ ও ‘ইন্ডিয়া টাইমস’-এর প্রতিনিধিরা। অসাধারণ টিমওয়ার্ক। যেসব সাংবাদিকরা ওঁদের কাছে ‘পিওর ফর সিওর’ নন, তাঁদের কাছে ওঁরা বিনয়ের সুখতলা । অনুরোধ—একটু দেখবেন। ‘দেখা-দেখি’র হিসেবটা অনেক জায়গায় নাকি ব্রহ্মাস্ত্র। শুনছিলাম, দেখছিলাম, বোঝার চেষ্টা করছিলাম। আমার উপরও নজর ছিল সাংবাদিক বন্ধুদের। এমন পরিস্থিতিতে আমার হাজির থাকা মানেই খবর তৈরির সম্ভাবনা ।

ভারতের বিজনেস ক্যাপিট্যাল মুম্বাইতে রেইকি সাহেব ৪০ হাজার রোগী দেখেছেন, আমরা জেনেছি। কিন্তু একজন ‘আমআদমি’ হিসেবে আরও কিছু জানার ইচ্ছে হচ্ছে। ইচ্ছে না বলে এটাকে আমাদের অধিকারও বলতে পারি। মুম্বাইতে কী ডোনেশনের সর্বনিম্ন পরিমাণ ২ হাজারে বেঁধে দেওয়া হয়েছিল? মনে হয় না। ৫-১০ হাজার না করে কলকাতার লেভেলে নামিয়ে আনলে ওঁদের দস্তুর মতো অসম্মান করা হয়। যদি ধরে নিই মুম্বাইয়ের রোগীরা ২ হাজার টাকা করে দিয়েছেন, তা হলেও হ্যারিস সাহেব রোজগার করেছেন কম করে ৮ কোটি টাকা। ইনকাম ট্যাক্স ডিপার্টমেন্টকে একটি টাকাও ট্যাক্স না দিয়ে পুরোটাই পকেটে পুরেছেন। ধূর্ততার সঙ্গে নিজের রোজগার ‘দ্য ক্লাইভ হ্যারিস ফাউন্ডেশন’-এর নামে দেখিয়েছেন। ফাউন্ডেশনের পাওয়া ডোনেশন। অতএব আয়কর দেবার প্রশ্ন নেই। আমাদের দেশ থেকে এভাবে লুটে নিয়ে চলে যাবে, আর আমাদের দেশের সরকার নিদ্রা যাবে? এইসব বুজরুক অলৌকিক চিকিৎসকের বিরুদ্ধে আমাদের দেশে কড়া আইন আছে—‘দ্য ড্রাগস অ্যান্ড ম্যাজিক রেমেডিস (অবজেকশনাবেল অ্যাডভারটাইজমেন্ট) অ্যাক্ট, ১৯৫৪’। ব্যবস্থা নিতে পারে রাজ্য সরকার ও কেন্দ্রীয় সরকার। অলৌকিক চিকিৎসায় রোগী সুস্থ হয় কি না, এটা আদৌ আইনের বিবেচনার বিষয় নয়। কেউ এই ধরনের প্রচার করলে প্রচারক। প্রকাশক ও অলৌকিক চিকিৎসক দু-জনেই একই অপরাধের জন্য অভিযুক্ত হবে এবং অভিযোগ প্রমাণিত হলে শাস্তি পাবে। আইন আছে, কিন্তু প্ৰয়োগ নেই। প্রয়োগ করতে পারে কেন্দ্রীয় সরকার ও রাজ্য সরকার। কিন্তু প্রয়োগ করবে, এমন মাজার জোর কোনও সরকারের-ই নেই। এইসব মাজা ভাঙা খাজা সরকারকে মান্য করেই আমাদের চলতে হবে। আমাদের মানে—আপনার আমার মতো ‘আমআদমি’কে ।

২ সেপ্টেম্বর, ২০০৩, মঙ্গলবার, দুপুর ১১টা ৩০ মিনিট। আমরা এখন সাদার্ন প্লাজার চারতলায়। আঙুলে গোনা কয়েকটি পত্রিকার সাংবাদিক ও আলোকচিত্রী এবং বৈদ্যুতিন মাধ্যমের মধ্যে একমাত্র ই টিভির টিম হাজির। যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয় ও যাদবপুরের এপিসি রায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের কিছু ছাত্র আমাদের সমিতির সদস্য। প্রণব দত্তের নেতৃত্বে তাদের কয়েকজন ছদ্ম সাংবাদিক হিসেবে ঢুকে পড়েছিল। তাদের উপর দায়িত্ব ছিল দুটি প্রধান ইংরেজি পত্রিকার সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের কাজকর্মের উপর নজর রাখা। আমার সঙ্গী দুজন। একজন যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ের ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র গৌতম রায়। গৌতম সাইনাসের রোগী। এক্সরের রিপোর্ট ও প্লেট, ডাক্তারের প্রেসক্রিপশন সবই সঙ্গে আছে। দ্বিতীয়জন রানা প্রতাপ হাজরা। এপিসি রায় ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র, সাত বছর বয়স থেকে তোতলামিতে ভুগছে। ওর সঙ্গে আছে ই এন টি স্পেশালিস্টের প্রেসক্রিপশন ও রিপোর্ট। আজকের অনুষ্ঠান-সুচি নিয়ে গতকাল রাত পর্যন্ত চলেছে অনেক চোর-পুলিশ খেলা। কয়েকটি প্রচারমাধ্যম শেষ মুহূর্তে জেনেছে রেইকি সাহেবের কর্মসূচি। মুম্বাইতে রেইকি সাহেব বসেছিলেন হেঁকে-ডেকে। মাফিয়ার স্বর্গরাজ্যে বুক ফুলিয়ে। কলকাতায় এমন চুপসে কেন? কোন্ জুজুর ভয়ে? সে জুজু যুক্তিবাদী সমিতি নয় তো? কলকাতায় আসার আগে প্রাথমিক হোম ওয়ার্কে বসলে এমন ভয় স্বাভাবিক। অন্তত যাঁদের ভরসায় আসা, তাঁরা কিন্তু আমাদের ভালোই চেনেন।

আমি চারতলায় পা দেওয়ার আগেই সেল ফোনে খবরটা পেয়েছি—আমার ছবিসহ ভিজিটিং কার্ড ব্যবস্থাপকদের এক প্রতিনিধির হাতে তুলে দিয়েছেন এক সাংবাদিক। বিষয়টা আমার কাছে আদৌ অপ্রত্যাশিত ছিল না। অথচ ওই সাংবাদিক-ই দু’দিনে বহুবার আমাকে ফোন করেছেন। জানতে চেয়েছেন, আমি যাচ্ছি কি না? কীভাবে অ্যাকশন করব? ইত্যাদি অনেক কিছু। এও জানিয়েছেন, আমি বললে তিনি একজন হাত ভাঙা রোগী নিয়ে যেতে পারেন। তাঁর কথা শুনলে মনে হতে পারে, হ্যারিসের বুজরুকি ধরতে তিনি উত্তেজনায় ফুটছেন। সুদীর্ঘকাল ধরে মিডিয়ার সঙ্গে ঘর করছি। অভিজ্ঞতা অনেক কিছু শিখিয়েছে। বোধ বলল—এটা ফাঁদ হতেই পারে। সুস্থ মানুষের হাতে প্লাস্টার করিয়ে নিয়ে যেতে পারেন। ওই রোগীকে আমার স্বীকৃতি নিয়ে একবার হাজির করতে পারলেই কেল্লা ফতে। রেইকির পর হাতের এক্সরে করালে প্রমাণিত হবে, হাতের হাড় আর ভাঙা নেই। পরের দিনই প্রথম পৃষ্ঠার খবর হবে—“পৃথিবী কাঁপানো যুক্তিবাদী সমিতি হ্যারিসের অলৌকিক ক্ষমতার কাছে হার মানল।”

সাংবাদিকদের খুশি করতে হ্যারিস ও ইন্ডিয়া টাইমস-এর তরফ থেকে একটা পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছিল। সাংবাদিকরা একজন করে রোগী আনতে পারবেন। নো ফি। নো ডোনেশন । হ্যারিসের সিডিউল এই—১১-৩০ থেকে ১২ পর্যন্ত সাংবাদিকদের রোগী দেখবেন। ১২টা থেকে সাংবাদিক সম্মেলন। ৩ তারিখ থেকে ৬ তারিখ গোর্কি সদনে রোগী দেখবেন ।

দুই সাংবাদিক বন্ধুর সাহায্যে গৌতম রায় ও রানাপ্রতাপ হাজরার নাম রোগী হিসেবে নথিভুক্ত করিয়েছি। আমার নামও নথিভুক্ত করিয়েছি। রোগটা ব্লাডসুগার। কতকালই ‘ব্লাড পি পি করিয়েছি। রিপোর্ট আমার পকেটে।

আমার ছবিসহ ভিজিটিং কার্ড হ্যারিস অ্যান্ড কোম্পানির হাতে। আমি রেজিস্ট্রেশন কাউন্টারে হাজির হলাম। হাত ভাঙা রোগী আনতে চাওয়া সাংবাদিক ছটফট করছেন। তিনি স্বভাব ছটফটে বলে ইতিপূর্বে কখনই আমার মনে হয়নি। তিনি এগোলেন এক ব্যবস্থাপকের সঙ্গে কথা বলতে। তাঁর সঙ্গে সঙ্গে এগোল কড়া নজর রাখা ছেলেটি। সাংবাদিক পিছোলেন। কারণ তিনি বোধহয় বুঝে গেছেন, নজর রাখা হয়েছে। তিনি মোবাইল খুললেন। কথা বলা হল না। পাশে কড়া মার্কিং। শেষে এটুকু বলি—আমার শরীরী ভাষা কাউন্টারের মানুষদের বিভ্রান্ত করেছিল। তাঁরা বুঝেছিলেন, আমি যুক্তিবাদী প্রবীর নই। বিভ্রান্ত করার কৌশল ফাঁস করতে চাই না, ভবিষ্যতের কথা ভেবে। আমার কাছের মানুষরা জানেন। এটা প্রয়োজন। এতেই খুশি।

বিশাল ফ্ল্যাটের দরজায় ও দেয়ালে নানা পোস্টার। কোনওটায় নীরব থাকার অনুরোধ, কোনওটায় মোবাইল ফোনের সুইচ অফ রাখার কঠোর নির্দেশ। ভিতর দিকের একটা হলে সাংবাদিক সম্মেলন হবে। সামনের হলে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকরা। ইতিউতি

ফিসফিস। একটা দরজা বন্ধ ঘরের সামনে উর্দি পরা স্মার্ট গার্ড। ও-ঘরেই আছেন হ্যারিস। ‘মেহেতা টাইমস’-এর এক কর্মকর্তা ঠিক করে দিচ্ছিলেন, কার পর কে ও-ঘরে ঢুকবেন। গৌতমের সুযোগ মিলল। ঢুকতে ও বের হতে মিনিট দেড়-দুই বড় জোর। আমি আর রানাপ্রতাপই শেষ । আমার ডাক পড়তে রানাকেও ডেকে নিলাম। দুজনে একসঙ্গে ঢুকলাম। দুটো চেয়ার পাতা। ঘরে কোনও আসবাব নেই। আমি ও রানা বসলাম। আমি যে সাংবাদিক, সে কথা কর্মকর্তাটি জানিয়ে দিয়ে গেলেন হ্যারিসকে। আমার অনুরোধে রানাকে প্রথম শুরু করলেন। রোগটা কী জেনে নিলেন। ‘তোতলামো’ শোনার পর হ্যারিসের দু’হাতের আঙুল রানার গলা কপাল ও মাথায় নৃত্য করতে লাগল। রানাকে শেষ করে আমাকে ধরলেন। আমার পেট থেকে মাথা পর্যন্ত তাঁর আঙুলগুলো খেলা করে বেড়াতে লাগল। আমাকে সময় দিলেন এক মিনিটের বেশি। সাংবাদিক বলে হয়তো খাতিরটা বেশি।

হ্যারিসকে বললাম, “আমার একটা অনুরোধ। প্রচারের এমন সুযোগ ছাড়বেন না। আমাকে রেইকি করছেন, এটা আজকের টিভি আর কালকের পত্রিকায় বেরিয়ে গেলে ভালো প্রচার পাবেন। কারণ, আমি তো ‘আমআদমি’ নই। আমি সাংবাদিক।”

আমার কথাটা সাহেব ও কর্মকর্তার মাথায় ধরল। দু’জন এ নিয়ে কী করবেন যখন আলোচনা করছেন, তখন আবার মুখ খুললাম, “শুধু ফোটোগ্রাফারদের ডেকে আনছি।”

বেরিয়ে গেলাম। ডেকে নিলাম শুধু ফটোগ্রাফারদের। আমার অনুরোধে হ্যারিস প্রথমে রানাকে, পরে আমাকে রেইকি দিলেন। প্রচুর ছবি উঠল।

ফোটো সেশন শেষ করে হ্যারিস ঘর ছেড়ে বের হলেন। ঢুকলেন পাশের ছোট হল ঘরে। শুরু হল সাংবাদিক সম্মেলন, প্রশ্ন করলেন ই টি ভি-র পারিজাত। প্রায় একাই প্রশ্ন করে যাচ্ছিলেন। একটি প্রশ্নের উত্তরে হ্যারিস জানালেন, শতকরা ৮৭ ভাগ রোগীকে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ করে তুলেছেন। হ্যাঁ, তার মধ্যে ক্যানসার, লিউকোমিয়া, ম্যানিনজাইটিস ম্যালেরিয়া, এডস রোগীও আছেন। পারিজাতের আরও একটি প্রশ্ন ছিল, কত দিনের মধ্যে রোগী সুস্থ হয়ে ওঠেন? হ্যারিসের দ্বিধাহীন উত্তর—কয়েক সেকেন্ড থেকে দু-এক মিনিটের মধ্যেই রোগী সুস্থ হয়ে যান ।

গৌতমকে ডেকে হ্যারিসের পাশে দাঁড়াতে বললাম। গৌতমকে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি যে সব সময় প্রবল মাথা ব্যথা অনুভব কর, সেটা কি এখন কিছুটা কমেছে?”

—“না। একই রকম আছে।”

গৌতমের এক্সরে ফিল্ম ও রিপোর্ট দেখিয়ে বললাম, “এটা দু-এক দিন আগের রিপোর্ট । আমরা আজই ‘রায়-ত্রিবেদী’ এবং ‘সুরক্ষা’ থেকে এক্সরে করাতে পারি। সেই রিপোর্ট আমাদের বুঝিয়ে দেবে রেইকির পর গৌতমের সাইনাস প্রবলেম একই আছে, না কমেছে, অথবা সেরে গেছে।”

“আসুন রানা।” রানাকে ডেকে নিলাম ।

পারিজাত-ই রানাকে প্রশ্নটা করলেন, “আপনি কি সুস্থ হয়ে গেছেন?” রানা জানালেন, তিনি সামান্যতম উন্নতি অনুভব করছেন না। রানার কথাও সেটাই বুঝিয়ে দিল।

রানার ‘হাতে গরম’ উদাহরণ সাংবাদিকদের মধ্যে চাঞ্চল্য এনে দিল। শুধু একটি পত্রিকার দুই সাংবাদিককে দেখা গেল ‘প্যাঁচাপানা মুখখানা’ করে শেষ পঙ্ক্তির দুটি চেয়ারে পাশাপাশি

এসে।

আমি উঠে দাঁড়ালাম। বললাম, “আগামীকাল আমার ব্লাড পি পি টেস্ট করাব। টেস্ট রিপোর্টই

বলে দেবে। ক্লাইভ হ্যারিস ব্লাডসুগার আদৌ কমাতে পারেন কি না?”

পকেট থেকে একটা চিঠি বের করে ক্লাইভ হ্যারিসের হাতে ধরিয়ে দিয়ে অনুরোধ করলাম, “পড়ন এবং আপনার প্রতিক্রিয়া জানান। খুব খুশি হব যদি চিঠিটি জোরে জোরে পড়েন।” হ্যারিস জোরে পড়া শুরু করলেন। প্রথম প্যারার পর-ই তার মুখে সাইলেন্সার। উত্তেজনায় টগবগে সাংবাদিকদের হাতে ধরিয়ে দিলাম চিঠির প্রতিলিপি। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্যাডে লেখা হয়েছেঃ—

সরল চিঠি। মিস্টার ক্লাইভ হ্যারিস। তোমার দাবি, তুমি কঠিন ক্যানসারও হাতের জাদু ছোঁয়ায় ঠিক করতে পার। শুনেছি, অনেক রোগীকে সুস্থ করেছ। প্রথম অবস্থায় এস রোগী এলেও সুস্থ করো। আমাদের কাছে কিছু রোগী আছে। অনুরোধ, তোমার অলৌকিক স্পর্শে তাদের সমস্যা মেটাও। তুমি কৃতকার্য হলে প্রণামী দেব ২০ লক্ষ টাকা। আমাদের সমিতির সদস্যরা তোমার হয়ে প্রচারে নামবে। আশা করছি তুমি এই চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবে ও তোমার ক্ষমতা প্রমাণ করবে। তোমার অক্ষমতা এটাই প্রমাণ করবে, তুমি একজন প্রতারক এবং সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করছ। চিঠি পড়ে স্থায়েব রাগে কাঁপছেন। কাঁপারই কথা। যাঁর ঐশ্বর্যের কাছে দুনিয়া নতজানু, তাঁর কাছে এক তুচ্ছ বঙ্গভাষী….সহ্য হবে কেন? ‘হ্যারিস’ ব্র্যান্ডের সঙ্গে নাম জড়াতে যখন ভারতের পত্রিকা জগতের সম্রাট ঝাঁপিয়ে পড়ছে, তখন হ্যারিসের সঙ্গে টক্কর দিতে এলে সহ্য হবে কেন ?

ই টি ভি’র লোগো লাগানো বুমটা পারিজাত এগিয়ে দিলেন হ্যারিসের সামনে, “আপনি কি চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছেন ?”

“না। আমি বলিনি শতকরা একশো ভাগ রোগীকেই ঠিক করে দেব। চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছি না।”

বুম এবার আমার মুখের কাছে। বললাম, “১০ জন রোগী আনব। ৫ জনকে সুস্থ করে দিলেই হার মানব। ২০ লক্ষ টাকা দেব। কথা দিচ্ছি, হেরে গেলে যুক্তিবাদী সমিতি ভেঙে দেব।” “মিস্টার হ্যারিস, আপনি তো শুনলেন। এ’বার গ্রহণ করছেন?” পারিজাতের প্রশ্ন । জোর মাথা ঝাঁকালেন হ্যারিস। বুঝিয়ে দিলেন চ্যালেঞ্জ নিচ্ছেন না। ইতিমধ্যে ব্যবস্থাপকদের একজন মোবাইলে কারও সঙ্গে কথা বলতে বলতে আমাকে জিজ্ঞেস করলেন, ‘আপনার নাম?” জানালাম, “প্রবীর ঘোষ।” ওই মহিলা মোবাইলে কাউকে জানালেন, প্রবীর ঘোষ এসে পড়েছে। এমন উত্তেজিত ভাবে বলছিলেন, যেন ডাকাত পড়েছে। ডাকাতের ঘরে ডাকাতি কি সত্যিই অপ্রত্যাশিত ছিল?

“প্রবীরবাবু, উনি আপনার প্রশ্ন চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করছেন না। আপনি কিছু বলবেন?” পারিজাতের প্রশ্ন।

“১০ জন রোগীর মধ্যে ৪ জনকে সুস্থ করলেই হার স্বীকার করে নেব।”

“হ্যারিস এবার চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার সুবর্ণ সুযোগ আপনার কাছে।”

ধূর্ত হ্যারিস তাতেও রাজি নন। আমি ১০-এ ৩ এবং অবশেষে ২-এ পর্যন্ত নামলাম। অর্থাৎ ১০ জন রোগী দেব। ২ জনকে সুস্থ করে দিলেই হারবে যুক্তিবাদী সমিতি।

না, হ্যারিস তাতেও রাজি হলেন না। হ্যারিসকে উদ্ধার করতে ঝাঁপালেন ব্যবস্থাপকরা। এক মহিলা ও এক পুরুষ তারস্বরে চেঁচাতে লাগলেন—প্রমাণ চাইলে মুম্বাই থেকে রোগীদের চিঠি এনে দেখাতে পারেন। তাহলেই প্রমাণ হয়ে যাবে ক্যানসার রোগীও হ্যারিসের স্পর্শ চিকিৎসায় সুস্থ হয়েছেন।

ই টি ভি-র ক্যামেরা এ’সব উত্তেজিত চিৎকার তৎপরতার সঙ্গে ধরে রাখছিল। আমাকে বলতেই হল—অমন চিঠি দেখিয়ে কিছুই প্রমাণ করা যায় না। সাজানো রোগীর চিঠি এনে দেখানো খুব সোজা। এই শহরটার নাম কলকাতা। এখানে এসে সব সাংবাদিকদের বোকা বানাবেন অথবা কিনে ফেলবেন ভাবলে ভুল করেছেন। সামান্য সততা থাকলে আমাদের চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করবেন। রোগী ও তাঁদের চিকিৎসকদের হাজির করে দেব।

হ্যারিস তখন উঠে দাঁড়িয়ে গুটিগুটি পায়ে সাংবাদিক সম্মেলন ছেড়ে বাইরে।

তলায় নামতেই অন্য সাংবাদিকদের সামনেই আক্রান্ত হলাম। আক্রমণটা খিস্তি-খেউড়ের। এক ইংরেজি পত্রিকার চিত্র-সাংবাদিক ‘শ’কার ‘ব’কার তুলে বললেন, হ্যারিস রোজগার করছে তো আমার কেন জ্বালা ধরছে? আমার হিম্মত নেহ, তাই নাকি রোজগার করছি না। অবতার সাজার মতো ক্ষমতা থাকলে আমিও নাকি লোক ঠকাতে নামতাম।

এই খেউড়ের মধ্যেই তলায় নেমে এসেছেন ব্যবস্থাপকদের দুই কেন্দ্রীয় নেতা, এক নারী ও এক পুরুষ। নারীটি মুখ নর্দমা করলেন। পুরুষটি চিৎকার করে হুমকি দিলেন, এঁদের ক্ষমতার সম্বন্ধে নাকি কোনও অনুমানই আমার নেই। আমার পিছনে ইনকাম ট্যাক্স লাগিয়ে দিয়ে ‘লাইফ হেল’ করে দেবেন। আমাকে জেলে পুরে ছাড়বেন ইত্যাদি ইত্যাদি।

‘বড়’দের শত্রুতা কী ভয়ংকর রূপ নিতে পারে, তা আমি দীর্ঘ বছর ধরে দেখে আসছি। ওদের আঘাত হানলে ওরা নির্দয় প্রত্যাঘাত হানে। সে অতি ভয়ংকর নির্দয় প্রত্যাঘাত। বারবার চড়া মাশুল গুনতে হয়েছে আমাকে। তারপরও এইসব বুজরুকদের দেখলেই ‘বোকা বুড়ো’ বা ‘পাগলা জগাই’ হয়ে যাই। যত দিন আছি, এ ভাবেই লড়ব। হয় মারব, নয় মরব। বোকা বলেই ফেললাম, “যা পারবেন, করবেন।”

সে দিন-ই ‘ই টিভি বাংলা’ তাদের খবরে হ্যারিস-কিস্সা দেখাল। তাও আবার দীর্ঘ ৪ মিনিট ধরে। খবরে ৩০ সেকেন্ডই যখন যথেষ্ট, তখন ৪ মিনিট! যা যা ক্যামেরায় ধরেছিলেন, তার সব কিছু নিয়ে একটা কোলাজ।

সে রাতেই দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ফোন পেলাম শ’খানেক। সবই অভিনন্দন জানিয়ে। আপ্লুত হলাম।

আমজনতাকে সাথী পাওয়ার আনন্দ ও তৃপ্তিই আলাদা।

পরের দিনের ‘আজকাল’ ও ‘সংবাদ প্রতিদিন’-এর ছবিসহ প্রতিবেদন আমাদের কাছে বয়ে আনল খুশির হাওয়া। দুই ইংরেজি পত্রিকা একদম চুপ। তাদের যে ভূমিকা দেখেছি, তাতে এটা প্রত্যাশিত ছিল। এখন ক্ষমতাবানদের কাছ থেকে প্রত্যাঘাতের প্রত্যাশায় আছি। প্রত্যাঘাত এলে আপনাদের সঙ্গে পাব—এই বিশ্বাস নিয়ে আপনাদের সবাইকে আগাম সেলাম জানাই ।

 

কলকাতার রেইকি চিত্র

কলকাতার রেইকি সম্রাজ্ঞী যাজ্ঞসেনী মিত্রের মোবাইলে ফোনটা আমিই করেছিলাম । সময়টা হ্যারিস পদার্পণের বছরখানেক আগে। যাজ্ঞসেনী আমার নাম ও পরিচয় শুনে এত ঘাবড়ে যাবেন, ভাবিনি। তবে সেটা সাময়িক। আমার সঙ্গে মিনিট দু’য়েক কথা বলে বোধহয় বুঝে নিলেন— লোকটা গাঁইয়া ও সরল। ভয়ের কিছু নেই। বরং অজগরের মতো একটু একটু করে গিলে ফেলা যায়।

আমাকে উদার আমন্ত্রণ জানালেন— গড়িয়াহাট নার্সিংহোমে আজই বিকেল সাড়ে চারটে চলে আসুন। অপেক্ষায় থাকব। কলেজে পড়তে আপনার লেখার সঙ্গে প্রথম পরিচয়। তার পর থেকেই আপনি আমার হিরো। আপনার ফোন পেয়ে প্রথমটা খুবই ঘাবড়ে গিয়েছিলাম ।

গেলাম। যাজ্ঞসেনী ও নার্সিংহোমের দুই পার্টনার তলা থেকে অভ্যর্থনা জানিয়ে ওপরে নিয়ে গেলেন। এই নার্সিংহোমে যাজ্ঞসেনী বসেন। রোগী দেখেন। যাজ্ঞসেনীর চেম্বারে বসেই কথা হচ্ছিল। আমার কিছু প্রশ্ন ছিল। জিজ্ঞেস করলাম, যাজ্ঞসেনী তাঁর নামের আগে যে ‘ডাক্তার’ লেখেন, তার আইনি বৈধতা কতটুকু? অ্যালোপ্যাথি নার্সিংহোমে তাঁকে দিয়ে রোগীদের চিকিৎসা করা হচ্ছে, নার্সিংহোম কি আইন ভাঙছে না? আমার প্রশ্নগুলোতে এতটাই নরম ছোঁয়া দিয়েছিলাম, যাতে তিনজনই মনে করেন, আমি শত্রু নই, শুভানুধ্যায়ী। তবু এমন প্রশ্ন যে তিনজনকে যথেষ্ট নাড়া দিয়েছে, ওর বুঝতে অসুবিধে হয়নি ।

যাজ্ঞসেনী নিজের আকর্ষণী ক্ষমতার উপর অগাধ আস্থা রাখেন। তিনিই অনুরোধ করলেন, তাঁর রেইকি ক্ষমতা একবার দেখে যেতে। আমার কোনও শারীরিক অসুবিধে আছে কি না, দেখতে একটা ফুল রেইকি দেবেন।

নিয়ে গেলেন অবজারভেশন চেম্বারে। ধবধবে বেড। আমাকে ঘড়ি থেকে শার্টটার্ট সব খুলে শুয়ে পড়তে বললেন। শরীরে কোনও বন্ধন থাকলে না কি রেইকি শক্তি পুরোপুরি গ্রহণ করা যায় না। শুলাম। তবে ঘড়ি ও শার্ট খুলে, প্যান্টের কোমর ঢিলে করে।

মানব শরীরে মস্তিষ্ক থেকে মূলাধার চক্র পর্যন্ত নাকি সাতটি চক্র আছে। সাতটি চক্রের আবার একুশটি পয়েন্ট আছে। এই প্রতিটি পয়েন্ট যদি স্পর্শ করেন রেইকি বিশেষজ্ঞ, তবে তাকে বলে ফুল রেইকি। আমাকে ফুল রেইকি দিলেন কুড়ি থেকে পঁচিশ মিনিট। তারপর জানালেন, আমার যৌনক্ষমতা খুবই দুর্বল। সবল করতে বার কয়েক সিটিং দিতে হবে।

এখানে যাজ্ঞসেনীর রেইকি বিদ্যে ডাহা ফেল। যাজ্ঞীসেনী ভাবতেই পারেননি, এমন অতিসক্ষম মানুষও থাকতে পারেন, যাঁর বিশেষ একজনের স্পর্শ ছাড়া ঘুম ভাঙে না। তবে এটা বুঝলাম, কিছু ম্যাসেজ পার্লারের মতোই রেইকি সেন্টারের ব্যবসায়িক সম্ভাবনা খুবই উজ্জ্বল।

 

রেইকির ক্রেজ চলছে

রেইকি বা স্পর্শ চিকিৎসার একটা ‘ক্রেজ’ চলছে। মুম্বাইয়ের সিনেমা জগতের অনেক তারকাই রেইকি শিখছেন ‘সেল্ফ রেইকি’ করে অসুখ-বিসুখ ও বার্ধক্যকে দূরে রাখতে। মুম্বাই ও দিল্লির টপ ইন্ডাস্ট্রিয়ালিস্ট, টপ একজিকিউটিভরা ‘সেল্ফ রেইকি’তে সময় দিচ্ছেন। এটা নাকি মেডিটেশনেরই এক উন্নত প্রয়োগ বিজ্ঞান। এতে নাকি মেন্টাল ও স্পিরিচুয়াল ডেভেলপমেন্ট হয়। যাঁদের ‘সেল্ফ রেইকি’ শেখার মতো সময় নেই, তাঁরা রেইকি নিতে সেন্টার বা ইনস্টিটিউটগুলোতে ভিড় জমাচ্ছেন।

রেইকি মাস্টার, গ্রান্ড মাস্টাররা স্পর্শের দ্বারা তাঁদের নিয়ে যাচ্ছেন নতুন এক জগতে। আনন্দের জগতে। উত্তেজনার জগতে ৷

কলকাতায় রেইকি তেমনভাবে জাতে ওঠেনি। তবে কলকাতায় রেইকির হুজুগ শুরু হয়ে গেছে। দৈনিক পত্রিকাগুলোয় রেইকি শেখাবার বিজ্ঞাপন বেরুচ্ছে প্রায়ই। পত্র-পত্রিকায় রেইকি নিয়ে ছবি-টবি সাজিয়ে প্রচার-সর্বস্ব বড়ো-বড়ো লেখা প্রকাশিত হচ্ছে। ‘ড্যাডি-মাম্মি’দের স্নেহচ্ছায়ায় রেইকি দ্রুত বাড়ছে।

 

রেইকি এল কোথা থেকে

কলকাতার অন্যতম রেইকি সুপারস্টার পারুল দত্তের কথায়, রেইকির উৎপত্তি এই ভারতবর্ষ। বশিষ্ঠ মুনি স্পর্শের মাধ্যমে অসুস্থদের সুস্থ করতেন। বুদ্ধদেবও স্পর্শ দ্বারা রোগ সারাতে পারতেন । এরপর রেইকি বিদ্যা বিদেশেও ছড়িয়ে পড়েছিল। যিশু রেইকি জানতেন। তাঁর ছোঁয়ায় কুষ্ঠ রোগীরাও ভালো হয়েছে। তার পর যা হয় ; মানুষ চর্চার অভাবে রেইকি চিকিৎসা প্রায় ভুলতে বসেছিল। নতুন করে রেইকিকে আধুনিক মানুষদের কাছে তুলে আনলেন জাপানি অধ্যাপক মিকাও উসুই। ২১ দিন ধরে ধ্যানযোগে থাকার পর তিনি রেইকি নতুন করে আবিষ্কার করলেন। মিকা – এর শিষ্য-শিষ্যাদের হাত ঘুরে রেইকি একসময় ভারতে এল। এখন রেইকি শেখাচ্ছেন অনেকেই। প্রায় সকলেই ফার্স্ট ডিগ্রি রেইকি শেখান এক বা দু’দিনে। তারপর চলে ২১ দিনের “পিউরিফিকেশন পিরিয়ড’। তখন শিক্ষার্থীকে শুধু নিরামিষ খেতে হবে। মদ, সিগারেট এমনকী কফি পর্যন্ত চলবে না। তারপর আবার দু দিনের ডিগ্রি কোর্স। সঙ্গে শেখানো হয় কিছু মন্ত্র ও সিম্বল। রোগীকে ফুল বডি রেইকি দিতে লাগে ২১ মিনিট সময়। শরীরের সাতটি চক্রের ২১ পয়েন্ট রেইকি দেওয়াকে বলে ফুল বডি রেইকি। আমাদের কাছে ২১ সংখ্যাটা খুব পবিত্র।

কলকাতায় আর এক রেইকি সুপারস্টার কে. মুরলিধরন। তাঁর গুরু হলেন মিকাও উসুই তাঁর গল্পটা একটু ডিটেলে বলি। মিকাও উসুই ছিলেন জাপানের কয়োটা শহরের এক ক্রিশ্চান ইউনিভার্সিটির প্রেসিডেন্ট। এক রবিবার যিশুর প্রার্থনা শেষে এক ছাত্র মিকাও উসুইকে জিজ্ঞাসা করেছিল, আপনি কি সত্যি বাইবেলের প্রতিটি কথায় বিশ্বাস করেন? উসুই উত্তর দিয়েছিলেন, নিশ্চয়ই। ছাত্রটি বলল, আপনি কি সত্যিই বিশ্বাস করেন যে যিশু তাঁর হাতের ছোঁয়ায় রোগমুক্তি ঘটাতে পারতেন? উসুই বলেছিলেন, হ্যাঁ বিশ্বাস করি। ছাত্রটি বলেছিল, আপনি অন্ধভাবে যুক্তিহীন এ’সব কথায় বিশ্বাস করতেই পারেন। আপনার সে স্বাধীনতা আছে। কিন্তু আমরা প্রমাণহীন একটা গল্পকথায় কীভাবে বিশ্বাস করব?

উসুইয়ের কাছে এমন যুক্তির বিরুদ্ধে বলার মতো কোনও উত্তর ছিল না। উত্তর খুঁজতে শুরু করলেন তিনি। প্রেসিডেন্ট পদে ইস্তফা দিয়ে পাড়ি জমালেন আমেরিকায়। সেখানে শিকাগো ইউনিভার্সিটিতে গবেষণা শুরু করলেন। বিষয়—যিশু কীভাবে শুধুমাত্র স্পর্শ করে রোগ সারাতেন। কিন্তু সেই গবেষণা তাঁকে চূড়ান্ত প্রত্যয় দিতে পারল না। ফিরে এলেন জাপানে।

উসুই এবার বুদ্ধের উপর গবেষণার কাজে ঝুঁকলেন। কারণ বুদ্ধদেবও স্পর্শের দ্বারা রোগ সারাতে পারতেন। গবেষণার স্বার্থে চিনা ও সংস্কৃত ভাষা শিখলেন। শেষ পর্যন্ত তাঁর পরিশ্রম সার্থক হল। বিভিন্ন পুঁথি থেকে নতুন করে আবিষ্কার কলেন স্পর্শ চিকিৎসার নানা সূত্র।

এসব সূত্রের প্রয়োগ শিখতে তিনি যোগ সাধনায় বসলেন। ২১ দিন যোগ সাধনার পর তাঁর বোধদয় হল। আকাশ থেকে নেমে এলো আলোর মালায় সাজানো সূত্র ব্যবহারের সংকেত। উসুই’য়ের স্পর্শ চিকিৎসার এই আবিষ্কারই অলৌকিকের অস্তিত্বের প্রমাণ। বলতে পারেন, রেইকি এক অলৌকিক চিকিৎসা পদ্ধতি। রেইকি প্রয়োগে সব অসুখ সারে। ফ্রম কমন কোল্ড টু ক্যানসার—এনি ডিজিজ। নো সার্জারি। নো মেডিসিন। শুধু রেইকি-ই পারে প্রতিটি কঠিন রোগের ক্ষেত্রে এমন মিরাকেল ঘটাতে। পুরুষ ও নারীর ইনফার্টিলিটির ক্ষেত্রে অসাধারণ কাজ করে রেইকি ।

এই লেখকের মতোই যাঁরা মনে করেন অলৌকিক বলে কিছু নেই ; সবের পিছনেই রয়েছে লৌকিক কারণ—তাঁরা রেইকি মাস্টার গ্রান্ড মাস্টারদের নেড়ে চেড়ে দেখতে পারেন। খুলতে পারে রহস্যের ভাঁজ। আসলে রেইকি এলো অজ্ঞানতা থেকে অথবা ধূর্ততা থেকে।

 

রেইকি কী?

রেইকি শব্দটা জাপানি শব্দ যুগল। কথাটা আসলে ‘রেই-কি’। ইংরেজি হরফে Rei-Ki লিখলে ঠিক হত। যদিও Reiki-ই আমাদের কাছে বহুল প্রচারিত। ‘Rai’ শব্দের অর্থ ‘universal’, বাংলায় বলতে পারি মহাজাগতিক। ‘Ki’ শব্দের অর্থ ‘vital life force energy’ অথবা ‘cosmic energy’, বাংলায় বলা যেতে পারে ‘প্রধান জীবনীশক্তি’ অথবা ‘মহাজাগতিক শক্তি’।

রেইকিতে বিশ্বাসীরা মনে করে, আমাদের শরীরে রয়েছে প্রধান সাতটি শক্তিচক্র। এই শক্তিচক্রগুলো নিরন্তন cosmic energy বা মহাজাগতিক রশ্মি আহরণ বা শোষণ করে চলেছে। আমরা যে সুস্থ থাকি, শক্তিতে ভরপুর থাকি, তার কারণ সাতটা শক্তিচক্রে মহাজাগতিক রশ্মির নিরন্তন প্রবাহ বা continious flow of energy। যখনই কোনও শক্তিচক্রে রশ্মির প্রবাহ ঠিকমত ঢুকতে পারে না, তখনই সেই বিশেষ শক্তিচক্রের সঙ্গে যুক্ত গ্ল্যান্ড বা গ্রন্থি অকার্যকর হয়ে পড়ে। তার ফলে আমরা অসুস্থ হয়ে পড়ি। যাঁরা রেইকি প্রয়োগ করতে জানেন তাঁরা হাতের স্পর্শ দ্বারা রোগীর শক্তিচক্রে মহাজাগতিক রশ্মি প্রবাহ বাড়িয়ে রোগীকে সুস্থ করে তোলেন।

এটা একটা ধারণা। এমন ধারণার পিছনে কোনও সত্য আছে কিনা, জানাটা অবশ্যই জরুরি। তা না হলে তো পাগলা দাশুর পাগলামোতেও বিশ্বাস রাখার মতো আহাম্মক হতে হয় আমাদের।

 

রেইকির কসমিক রে নিয়ে ধারণার সত্যাসত্য

‘Cosmic energy’ বা মহাজাগতিক রশ্মি বিষয়ে রেইকির জ্ঞানটাই আগাপাশতলা ভুলে ভরা। Cosmic energy মানুষের শরীরে শোষিত হয় না। Cosmic energy থাকে cosmic ray-র ভিতর। Cosmic ray হল একটা electro magnative wave। এই wave-এর উৎপত্তি universe বা মহাজগৎ। Cosmic ray আমাদের চারপাশেই রয়েছে। আমার যে চা পান করছি, সেই চায়ের পেয়ালাকেও ঘিরে রয়েছে Cosmic ray বা electro magnative wave। Cosmic ray-র কোনও রং নেই ।

অতএব আমাদের শরীরে সাতটি শক্তিচক্রের যদি বাস্তবিক অস্তিত্ব থাকত (এ বিষয়ে পরে আমরা আলোচনায় যাব), তবুও শরীরের সেই শক্তিচক্রের Cosmic ray শোষণ করার কোনও প্রশ্নই উঠত না। শুধু এই কারণেই আমরা রেইকি তত্ত্বকে স্রেফ ‘আবর্জনা’ বলে বাতিল করতে পারি।

 

রেইকি এবং হাতের অলৌকিক খেলা

রেইকি শাস্ত্র বিশ্বাস করে, হাতের তালু হচ্ছে হৃদয়েরই প্রসারিত অঙ্গ। মহাবিশ্বের থেকে আসা কসমিক রে আমাদের শরীরে শোষিত হয়ে হাতের তালুতে এবং আঙুলগুলোতে জমা হয়। সেই হাত যদি রোগীর শরীরের নানা শক্তিচক্রে আলতোভাবে রাখা যায় তাহলে হাতের তালু থেকে কসমিক রে সরাসরি শক্তিচক্রের মধ্যে দিয়ে রোগীর শরীরে ঢুকে পড়ে। এতে কসমিক রে বা কসমিক এনার্জির ফ্লো আবার ঠিকমতো হতে শুরু করে। ফলে রোগীও সুস্থ হয়ে ওঠে।

রেইকির আরো কয়েকটি জরুরি তত্ত্ব হল : (১) শরীর অসুস্থ হয়ে পড়ার একমাত্র কারণ শরীরের কোনও শক্তিচক্রে কসমিক এনার্জি প্রবাহের ঘাটতি, তা সে যে রোগই হোক না কেন । (২) কসমিক এনার্জি হাতের তালুতে এসে জমা হয়। (৩) রেইকি মাস্টাররা তাঁদের হাতের আঙুল রোগীর শক্তিচক্রে ছোঁয়ালে কসমিক এনার্জির ফ্লো রেইকি মাস্টারের হাত থেকে রোগীর শক্তিচক্রে সঞ্চারিত হয়।

ভেবে দেখি আসুন

একসময় ভাবা হত পাপ থেকেই রোগ। এখন এক নতুন ভাবনা

এসেছে— রোগের কারণ ভাইরাস নয়। কারণ হল

শক্তিচক্রে কসমিক এনার্জি প্রবাহের ঘাটতি,

তা সে যে রোগ-ই হোক না কেন।

কিন্তু কসমিক এনার্জির সঙ্গে রোগের সম্পর্ক কী? তাত্ত্বিকভাবে রেইকি শাস্ত্র তা যুক্তিগ্রাহ্য ভাবে হাজির করতে পারেনি। কসমিক এনার্জির ফ্লোর ঘাটতিকে রোগের একমাত্র কারণ বলে ধরে নিলে জীবাণু থেকে অসুখ হয়, এই তত্ত্বকে বাতিল করতে হয়। রেইকিতে বিশ্বাস রাখলে ‘অ্যানথ্রাকস জীবাণু ছড়ানো সম্ভব’—এমন সম্ভাবনাকে এক ফুঁ-য়ে বাতিল করতে হয় । বাতিল করতে হয় জীবাণু-যুদ্ধের তত্ত্বকে।

আরও একটা প্রশ্ন উঠে আসে। রেইকির তত্ত্ব সত্যি হলে জীবাণু থেকে আদৌ কি রোগ হওয়া সম্ভব?

 

রেইকির শক্তিচক্র

“হিন্দুশাস্ত্রে বলে মানব শরীরে সাতটি চক্র আছে। এই সাতটি চক্র কোনও না কোনও গ্রন্থির সঙ্গে যুক্ত থাকে। সাতটি চক্র দিয়ে কসমিক এনার্জি শরীরে ঢোকে এবং প্রবাহিত হয়।”—এটা রেইকি সুপারস্টার পুতুল রায়ের কথা।

আরও দুই সুপারস্টার পারুল দত্ত, কে. মুরলীধরণ এবং স্টার রেইকি মাস্টার ডাঃ যাজ্ঞসেনী মিত্রের মূল বক্তব্য একই। ওঁরাও মনে করেন, হিন্দু যোগ দর্শনে মানবদেহের অ্যানাটমি বিশ্লেষণে শরীরে সাতটি চক্রের অবস্থান ও তাদের কাজকর্ম নিয়ে যা বলা হয়েছে, রেইকি সেই কথাই বলে।

 

রেইকির বিশ্বাস অনুসারে চক্রগুলো ও তার কাজকর্মঃ

(১) সহস্ৰচক্র (Crown chakra) : এটি মস্তিষ্কের উপরিভাগ, ডান চোখ ইত্যাদির কাজ নিয়ন্ত্ৰণ করে। এটি স্পিরিচুয়ালিটি বা আধ্যাত্মিকতার ক্ষেত্রেও বিশেষ ভূমিকা নেয়।

অবস্থানঃ মস্তিষ্কে।

(২) আস্তাচক্র (Third Eye chakra ) : নার্ভাস সিস্টেমকে পরিচালিত করে। ইনটিউসান পাওয়ার বা বিশেষ অনুমান ক্ষমতা ও ইচ্ছাশক্তির কারক ।

অবস্থানঃ ভ্রু-যুগলের মধ্যে।

(৩) বিশুদ্ধ চক্র (Throat chakra ) : গলা, ফুসফুস, থাইরয়েড গ্রন্থি ইত্যাদির কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। মানুষের সঙ্গে যোগাযোগ গড়ে তোলার ক্ষমতা ও সেল্ফ এক্সপ্রেশনের নিয়ন্তা।

অবস্থানঃ কণ্ঠে।

(৪) অনাহত চক্ৰ (Heart chakra ) : হৃৎপিণ্ড, ফুসফুস, যকৃত, সার্কুলেটারি সিস্টেমকে নিয়ন্ত্রণ করে। প্রেম, ভালোবাসা, স্নেহ ইত্যাদি চিন্তা হৃদয় থেকে উৎসারিত হয়। সুকোমল বিষয়গুলোকে এই চক্র পরিচালিত করে।

অবস্থানঃ বক্ষের মধ্যস্থলে।

(৫) মণিপুর চক্র (Solar Plexus chakra) : পাকস্থলী, যকৃত, গলব্লাডার ইত্যাদি পরিপাক তন্ত্রের কাজ দেখাশোনা করে। এটি ক্ষমতা ও জ্ঞানের নিয়ন্ত্রণ চক্র।

অবস্থানঃ বক্ষ ও নাভির মাঝামাঝি।

(৬) অধিষ্ঠান চক্ৰ (Sacral chakra) : এটি জননতন্ত্রের কাজ দেখাশোনা করে। নারী পুরুষের ইনফার্টিলিটি, মাসিক ঋতু, যৌন ক্ষমতা, যৌন অনুভূতি

ও আবেগকে পরিচালিত করে।

অবস্থান : শরীরের যেখান থেকে যোনি ও লিঙ্গের উৎপত্তি হয়েছে।

(৭) মূলাধার চক্র (Root chakra) : এটি রেচনতন্ত্র অর্থাৎ কিডনি, ব্লাডার ও শিরদাঁড়ার কাজ নিয়ন্ত্রণ করে। এই চক্র সৃষ্টি, সৃজনশীলতা ও

শারীরিক সক্ষমতার উৎস।

অবস্থান : গুহ্যে।

 

রেইকি, হিন্দু ও বৌদ্ধ তন্ত্রের চক্র চিন্তায় মিল-অমিল

হিন্দু তন্ত্রশাস্ত্র বিশ্বাস করে, মানুষের শরীরের ভিতরে রয়েছে ছ’টা চক্র, মাথার খুলির নীচে রয়েছে সহস্রদল পদ্ম কুঁড়ি। আর রয়েছে একটা সাপ। এই চক্রগুলো ও সাপকে বাইরে থেকে

রেইকির শক্তিচক্র

দেখা যায় না। কুঁড়ির ওপর ফণা মেলে রয়েছে সাপ। ফণা মেলে থাকার জন্যই নাকি পদ্ম কুঁড়ি হাজার পাপড়ি মেলে ফুটে উঠতে পারছে না। অন্তত এমনটাই বিশ্বাস করে তন্ত্রশাস্ত্র ও যোগশাস্ত্র। শরীরের ভিতরে অবস্থান করা এই সাপটির লেজ রয়েছে গুহ্যে।

যোগ সাধনা বা তন্ত্র সাধনা হল একটা প্রক্রিয়া, যার সাহায্যে চিন্তাকে একটু একটু করে তলার থেকে একটার পর একটা চক্র ভেদ করে ওপরে ওঠানো যায়। ‘ষটচক্র’ বা ছটি চক্র ভেদ করে মনকে সহস্রচক্রে নিয়ে যেতে পারলে সাপ তার ফণা গুটিয়ে নেয়। তারপর মস্তিষ্কের পদ্ম কুঁড়ি হাজারটা পাঁপড়ি মেলে ফুটে ওঠে। এই পদ্ম ফুটলে নাকি ঘটে ব্রহ্ম দর্শন, ঘটে যোগ সিদ্ধি। পতঞ্জলি তাঁর সূত্রে বলেছেন, এই সিদ্ধির ফলে পৃথিবীর সমস্ত প্রাণীর ভাষা-জ্ঞান লাভ করা যায়, আকাশে ভ্রমণ করা যায়, অন্যের দেহে প্রবিষ্ট হওয়া যায়, ইষ্ট দেবতার সঙ্গে মিলিত হওয়া যায়। তন্ত্রের বিশ্বাস ছটি চক্রে ও হাজার পাপড়ির পদ্মে অবস্থান করছেন নানা দেব-দেবী।

এমন বিজ্ঞান বিরোধী বোকা-বোকা কথায় কেউ যদি বিশ্বাস করে, করতেই পারে। তাদের আমরা ‘বোকা’ বলতেই পারি। অথবা একটু শোভন করে ‘সহজ-সরল’ বলতে পারি ।

একটা সময় মানুষের কাছে মানুষের দেহ ছিল পরম বিস্ময়। এক অজানা বিস্ময়। তখন শব দাহ করার পর বা নদীতে ভাসিয়ে দেওয়ার পর শবদেহের সংস্পর্শে আসা মানব শরীরকে পবিত্র ও শুদ্ধ করার নানা পদ্ধতি, প্রকরণ, সংস্কার ছিল। এখনও যার তলানি হিন্দুধর্মে বিশ্বাসীদের মধ্যে বহমান। সে সময় শবদেহ দাহ করত অস্পৃশ্য শ্রেণির মানুষ। শবব্যবচ্ছেদ করে মানব শরীরের আ্যনাটমি বা শরীরের গঠনতন্ত্র জানার কথা মানুষ ভাবতে পারত না। মানবদেহের অ্যানাটমি বর্ণনার দায়িত্ব নিয়েছিলেন ঋষি ও যোগীরা। তাঁরা নাকি যোগ বলে মানব শরীরের ভিতরে ঢুকে অ্যানাটমি দেখে এসে, শরীরে চক্রগুলির অবস্থান ও সেই চক্রগুলির মধ্যে নানা দেবদেবীর অবস্থান, মাথার খুলির নীচে হাজার পাপড়ির পদ্মফুল ও মস্তিষ্ক থেকে গুহ্য পর্যন্ত একটা সাপের অবস্থান বর্ণনা করেছিলেন ।

কেউ এই অ্যানাটমি বর্ণনার মধ্যে রূপক আবিষ্কারের চেষ্টা করলে তাকে আমরা অবশ্যই যোগের অ-আ-ক-খ না জানা মূর্খ বলে চিহ্নিত করতে পারি। কারণ তন্ত্র শাস্ত্রের যে কোনও বই গভীরভাবে পড়লে দেখা যাবে, মানব শরীরে অ্যানাটমি বলে তাঁরা যা বলে গেছেন বা লিখেছিলেন, সেগুলো সত্যি বলেই বিশ্বাস করতেন এবং এখনও করেন। এর মধ্যে রূপক সৃষ্টির কোনও চেষ্টা আদৌ ছিল না। তাঁদের এই বিশ্বাস এসেছিল অজ্ঞতা থেকে। তাঁরা হয়তো বা কোনওভাবে মানুষের মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষ বা ঘিলু দেখে হাজার পাপড়ির পদ্মের ‘অস্তিত্ব’ খুঁজে পেয়েছিলেন। তাঁরা হয়তো মৃত মানুষের অস্ত্র নিয়ে কুকুর বা শিয়ালের টানাটানি দেখেছিলেন। অন্ত্রের সঙ্গে সাপের চেহারাগত মিল থাকায় মানবদেহে সাপের অবস্থান আছে—এমনটাই বিশ্বাস করেছিলেন। অথবা শিড়দাঁড়াকেই সাপ বলে মনে করেছিলেন।

‘যোগ’ দর্শনটাই দাঁড়িয়ে আছে মানবদেহের সম্পূর্ণ ভুল অ্যানাটমি জ্ঞানের উপর ভিত্তি করে । নারী-পুরুষের দীর্ঘ দেহ মিলনের মধ্যে দিয়ে মোক্ষ বা সাধনসিদ্ধি ঘটার অদ্ভুতুড়ে কল্পনা তন্ত্রে আছে। তন্ত্র মানুষকে চূড়ান্ত যৌনভোগের নেশা ধরাতে পারে, কিন্তু কোনও অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী করতে পারে না।

বৌদ্ধতন্ত্র নিয়ে সামান্যতম আলোচনার আগে বলে নেওয়া ভালো, বুদ্ধের মৃত্যুর পর বৌদ্ধধর্ম দুটি ভাগে ভাগ হল। হীনযান’ ও ‘মহাযান’। হীনযানপন্থীরা বুদ্ধের পঞ্চশীল বা পাঁচটা নীতিতে বিশ্বাস নিয়ে রইলেন। ‘মহাযান’ হিন্দুতন্ত্রের সংস্পর্শে এসে পড়েছিল। মহাযান-ই নিয়ে এলো বৌদ্ধতন্ত্র। বৌদ্ধতন্ত্রে মানব শরীরে চক্রের অবস্থানের কথা আছে। বৌদ্ধ তন্ত্র বিশ্বাস করে মানুষের শরীরের ভিতর তিনটি চক্র আছে। চক্রগুলো হল—নাভিমূলে ‘নির্মাণচক্র’, হৃদপিন্ডে ‘ধনচক্র’ ও গ্রীবার নীচে ‘সম্ভোগচক্র’। খুলির নীচে রয়েছে উষ্ণীষ কমল বা পদ্ম।

হিন্দু ধর্ম ও বৌদ্ধধর্মের মহাযানপন্থীরাই ধর্মীয় গোষ্ঠী হিসাবে মানুষের শরীরের চক্রের ও সাপের উপস্থিতিতে বিশ্বাস করে। আর কোনও ধর্ম এমন অদ্ভুতুড়ে চিন্তাকে আমল দেখনি। চক্র নিয়ে হিন্দু ও মহাযানপন্থীদের মধ্যে বিবাদও প্রবল ।

হিন্দুরা মনে করে মানব শরীরে চক্রের মোট সংখ্যা সাত।

বৌদ্ধরা মনে করে সংখ্যাটা অবশ্যই তিন ।

খুলির নীচের পদ্মকে চক্র

মনে করে না।

রেইকি কেন হিন্দুদের বিশ্বাসকে গ্রহণ করল? বৌদ্ধদের বিশ্বাসকে গ্রহণ করল না কেন? শরীর বিজ্ঞানের অ্যানাটমির জ্ঞানকে গ্রহণ করল না কেন? উত্তর বোধহয়—“আমরা যা খুশি তাই ভাবব । তাতে কার কী বলার আছে?” বিজ্ঞান বিরোধী, সত্য বিরোধী কথা বলার মতো পাগল, অথবা কূটবুদ্ধির মানুষ যেমন আছে, তেমনই আছে এইসব আবোল-তাবোল কথায় বিশ্বাস করার মতো ‘সহজ-সরল’ মানুষ। শিক্ষিতদের মধ্যেও এমন ‘সহজ-সরল’ মানুষের খুব একটা অভাব নেই ।

 

জড় পদার্থে মানসিক শক্তি প্রয়োগ করতে পরে রেইকি

রেইকি মাস্টার থেকে গ্রান্ডমাস্টার অনেকেই রেইকির ক্ষমতা নিয়ে অদ্ভুত সব দাবি করেন । রেইকি শক্তির সাহায্যে তালা খোলা যায়, পেট্রোল ফুরিয়ে যাওয়ার পরও শুধু রেইকি শক্তির জোরে গাড়ি চালানো যায়, খারাপ টেপ, খারাপ ট্রানজিস্টার চালু রাখা যায়, ব্যাটারিকে চার্জ করা যায় ইত্যাদি ইত্যাদি। কলকাতার রেইকি মাস্টারদের কেউ কেউ এইসব ক্ষমতার অধিকারী বলে দাবি করেন।

এই দাবির বিরুদ্ধে একটা জোরালো পালটা দাবি রাখছি। ওপরে উল্লিখিত দাবির কোনও একটি প্রকাশ্যে আমার ও সাংবাদিকদের সামনে দেখাতে পারলে দেব ২০ লক্ষ টাকা।

আমজনতার কাছে একটি জরুরি অনুরোধ—আপনারা রেইকি-দিদিমণি ও দাদাদের ওপর প্রবল চাপ সৃষ্টি করুন, যাতে ওঁরা চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করতে অথবা রেইকির পক্ষে মিথ্যে প্রচার বন্ধে বাধ্য হয় ৷

জড় পদার্থের ওপর শক্তি প্রয়োগ সম্ভব বলে মনে করে পরমনোবিদ্যা অর্থাৎ Parapsychology নামের একটি অদ্ভুত শাস্ত্র। স্পষ্ট বলে রাখা ভালো— পরামনোবিদ্যার সঙ্গে মনোবিদ্যার কোনও সম্পর্ক নেই; যেমনটি নেই জ্যোতির্বিজ্ঞানের সঙ্গে জ্যোতিষশাস্ত্রের সম্পর্ক। পরামনোবিদ্যা স্পষ্টই বিজ্ঞান বিরোধী নানা চিন্তার ডাস্টবিন

পরামনোবিদ্যা নিয়ে যারা চর্চা করে, তাদের বলা হয় পরামনোবিজ্ঞান

বা Parasychologist. পরামনোবিজ্ঞানীদের কাজ

হল লোককে বোকা বানানো, অন্ধ বিশ্বাসের

সুযোগ নিয়ে আজেবাজে বোঝানো

ও প্রতারিত করা।

রামনোবিজ্ঞানীরা দাবি করে থাকে— জড় পদার্থের উপর মানসিক শক্তি প্রয়োগ করা সম্ভব। তারা এই ধরনের শক্তি প্রয়োগের নাম দিয়েছে psycho-kinesis বা Pk ।

চিন্তা হল মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের ক্রিয়ার ফল। চিন্তার ফলে রক্তচাপ বাড়তে পারে, ব্লাড সুগার বাড়তে পারে, স্ট্রোক হতে পারে, হজমে গোলমাল হতে পারে, মাথা ধরতে পারে, মানসিক কারণে শারীরিক অসুখ অর্থাৎ psycho-somaic disease হতে পারে। কিন্তু এই চিন্তা কোনও ভাবেই জড় কোনও কিছুকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারে না। মানসিক শক্তি দিয়ে নিজের নিজের শরীর- মনের অনেক কিছুকে প্রভাবিত করতে পারলেও এই শক্তি বিদ্যুৎ শক্তি, চুম্বক শক্তি বা শব্দ শক্তির মতো কোনও শক্তি নয়।

জড় পদার্থের উপর রেইকির শক্তি প্রয়োগের দাবি একেবারে অসার বা ডাহা মিথ্যে

 

রেইকির থার্ড-আই ও সিক্‌সথ সেন্স

রেইকি আরও অদ্ভুত অদ্ভুত অনেক কিছুই দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করে এবং দাবি করে। রেইকির সাহায্যে নাকি তৃতীয় চোখ বা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের ক্ষমতায় অনেক কিছুই দেখতে পায়, বুঝতে পারে । একজন মানুষকে দেখেই নাকি মানুষটির শরীরের বিভিন্ন অসুখ ও মানসিক স্বভাবের হদিশ পাওয়া যায়। বিখ্যাত একটি বাংলা পাক্ষিকের সাংবাদিক কলকাতার এক রেইকি স্টার ডাঃ মুরলিধরণ সম্পর্কে লিখেছেন, প্রথম দেখার পর মুরলিধরণ বললেন “আজ আপনাকে প্রথম দেখছি। আপনার নাম ছাড়া কিছুই আমি জানি না। তবু আপনার শরীরের ভিতরটায় কী অসুস্থতা আছে তার কিছুটা আমি জানি। যেমন, আপনার মাথার ডানদিকে একটা সমস্যা আছে। সম্ভবত মাইগ্রেন জাতীয় যন্ত্রণায় আপনি মাঝে-মধ্যেই কাতর হন। এ-ছাড়া আপনার প্রবলেম প্যানক্রিয়াস এবং লিভারে। একটা ব্যথা, মাঝেমধ্যেই বাঁ দিক থেকে ডান দিকে যায়। তাড়াতাড়ি সারিয়ে নিন। তবে চিন্তার কোনো কারণ নেই। দুটোই ওষুধ খেলে সেরে যেতে পারে। যাইহোক, এবার বলুন ঠিক বললাম কি না? ভদ্রলোকের টানা কথায় আমি যেন একটু ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলুম। বললুম, প্রায় ঠিকই বলেছেন। এই দুটোই আমার সমস্যা।”

পরামনোবিদ্যার পরিভাষায় এই ধরনের ক্ষমতাকে বলে ‘অতীন্দ্রিয় অনুভূতি’ (clairvoyance)। এমন ক্ষমতার বাস্তব অস্তিত্ব নেই। এ শুধুই কল্পনা নির্ভর এক অলীক চিন্তা। অথবা মিথ্যে প্রচারের মিথ। নিরপেক্ষভাবে ডাঃ মুরলিধরণের এই ক্ষমতার পরীক্ষা নিতে আগ্রহী। মুরলিধরণ পরীক্ষায় মানতে রাজি আছেন কি?

 

ফোটো রেইকি

ফোটো সম্মোহনের দাবিদার তান্ত্রিক গৌতম ভারতী ও হাওড়ার জানবাড়ির পীর যেমন ফোটো সম্মোহনে ব্যর্থ প্রেমিক-প্রেমিকাদের মুশকিল আসানের স্বপ্ন ফেরি করত, তেমনই আর এক ধরনের স্বপ্নের ফেরিওয়ালা রেইকি মাস্টাররা। ওঁরা দাবি করেন, দিল্লি, মুম্বাই বা লন্ডনে বসেও কলকাতার রোগীকে রেইকির সাহায্যে সারিয়ে তোলা সম্ভব। স্পর্শ ছাড়াই দূর থেকে কসমিক এনার্জি রোগীর শক্তিচক্রে ট্রান্সফার করার বিজ্ঞান নাকি রেইকির আয়ত্তে। এ’সবই গল্পের গরু গাছে ওঠার মতো বোকা বোকা বিশ্বাস ।

 

রেইকি দিয়ে কি অসুখ সারানো যায় না?

রেইকিতে শুধুমাত্র সে’সব অসুখই সারতে পারে, যেগুলো মানসিক কারণে শারীরিক অসুখ। আমাদের শরীরের অনেক অসুখই মানসিক কারণে হতে পারে। মানসিক কারণে যে সব অসুখ হতে পারে তার মধ্যে রয়েছে—ব্লাডপ্রেসার, ব্লাডসুগার, হাঁপানি, মাথায় যন্ত্রণা, শরীরের বিভিন্ন স্থানে ব্যথা, বাত, শরীরের কোনও অংশে অবশতা, কামশীতলতা, পুরুষত্বহীনতা, পেটের গোলমাল, বুক ধড়ফড়, ক্লান্তি, অবসাদ, পেটের আলসার, গ্যাসট্রিকের অসুখ, কাশি, মাসিক ঋতু জনিত অসুস্থতা ইত্যাদি অনেক কিছুই। নামী ডাক্তার দ্বারা ঔষধি মূল্যহীন ট্যাবলেট, ক্যাপসুল, ইনজেকশন ইত্যাদি প্রয়োগে মানসিক কারণে শারীরিক অসুখের ক্ষেত্রে অনেক সময়ই খুব ভালো ফল পাওয়া যায়। এই ধরনের বিশ্বাস-নির্ভর চিকিৎসা পদ্ধতিকে বলে ‘প্ল্যাসিবো’ Placebo | কথার অর্থ হল, ‘I will please’। বাংলায় অনুবাদ করে বলতে পারি, ‘আমি খুশি করব’। ভাবানুবাদ করলে হওয়া উচিত, ‘আমি সেরে উঠব’। ‘প্লাসিবো’তে সেরে ওঠার ক্ষেত্রে ডাক্তারের ওপর রোগীর বিশ্বাসই আসল কথা ।

কোনও সাইকো-সোমাটিক ডিজিজের পেসেন্ট রেইকি, তেলপড়া বা জলপড়া ইত্যাদিতে পুরোপুরি বিশ্বাসী হলে রেইকি, তেলপড়া বা জলপড়ায় ভালো হয়ে উঠতেই পারে। এই সুস্থ হয়ে ওঠার পিছনে কিন্তু রেইকি থেকে জলপড়ার মতো কোনও কিছুর অবদান একেবারে শূন্য। এখানে রোগীর বিশ্বাসই একমাত্র ফ্যাক্টর বা গুণ। রোগীর অন্ধ-বিশ্বাস না থাকলে রেইকির মতো অন্ধ-বিশ্বাস নির্ভর বুজরুকির সাধ্য নেই রোগমুক্তি ঘটায়। সাধ্য থাকলে ২০ লক্ষ টাকার ছুঁড়ে দেওয়া চ্যালেঞ্জটা গ্রহণ করুন। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পক্ষ থেকে দেব তিনজন রোগী। দেব ৬ মাস সময়। সারিয়ে তুলতেই পারলেই ২০ লক্ষ টাকা। না পারলে বা রোগীদের ওই রোগেই মৃত্যু হলে দায়িত্ব নিতে হবে রেইকি চিকিৎসককে। অথবা ইনফার্টিলিটি আছে এমন নারী তুলে দেব। তাঁকে ১ বছরে সন্তানসম্ভবা করতে পারলে হেরে যাব চ্যালেঞ্জ।

চ্যালেঞ্জ গ্রহণ করার হিম্মত দেখালে প্রমাণ করে দেবই—রেইকি

বুজরুকি চিকিৎসা ছাড়া আরও কিছুই নয়। নেহাৎ আকাট

বোকা না হলে এই চ্যালেঞ্জ ওদের পেশার কেউ গ্রহণ

করবে না। কারণ ওঁরা খুব ভালোরকম জানেন—

ভাইরাস ধ্বংস করার ক্ষমতা রেইকির নেই।

তাই ভাইরাস থেকে হওয়া অসুখ

সারাবার চ্যালেঞ্জ নেওয়া

মানেই ভরাডুবি।

 

রেইকি ও সম্মোহনের মিল-অমিল

রেইকির সঙ্গে সম্মোহনের বা hypnotism-এর কিছুটা মিল আছে। আবার অমিলও আছে। সম্মোহনের বেলায় মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষে ধারণা সঞ্চারিত করে অর্থাৎ suggestion পাঠিয়ে পাঁচটা ইন্দ্রিয়ের প্রত্যেকটিকেই প্রভাবিত করা যেতে পারে। রেইকি মাস্টাররাও আসলে রোগীর মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষে কিছু ধারণা পাঠাতে থাকেন। যদিও তাঁরা মনে করেন, বা বলেন, স্পর্শের দ্বারা রোগীর চক্রগুলোতে কসমিক এনার্জি সঞ্চারিত করছেন।

 

রেইকি ও সম্মোহনের পরিবেশগত মিল

রেইকি চিকিৎসা কেন্দ্রগুলোর পরিবেশ রোগীকে আবিষ্ট করে রাখার মতো করেই তৈরি। হালকা আলো, মৃদু বাজনা, ধূপের গন্ধ। দুধসাদা ফরাস পাতা। মিকাও উসুই-এর ছবি আর কিছু রেইকি মুদ্রার নামে হিজিবিজি ছবি দেওয়ালে সুন্দরভাবে প্লেস করা। উসুই-এর ছবির তলায় পিতলের সুদৃশ্য প্রদীপ অথবা বিদেশি মোম। প্রদীপ বা মোমের শিখা নিষ্কম্প—এয়ার কন্ডিশনারের কল্যাণে।

এই পরিবেশ সম্মোহনের পক্ষে আদর্শ। রোগী ধবধবে সাদা ফরাসে শুয়ে পড়েন, মাথার তলায় সাদা ঢাকনা পরানো বালিশ। রেইকি মাস্টার এসে চোখের সামনে বসলেন। সফল রেইকি মাস্টার মানেই সৌম্যদর্শন পুরুষ বা ব্যক্তিত্ব-সম্পন্না সুন্দরী। দু’চোখ বন্ধ করলেন। প্রণামের ভঙ্গিতে দু-হাত জড়ো করলেন নিজের বুকের সামনে। এইভাবেই থাকলেন দু-পাঁচ মিনিট। স্বপ্নময় পরিবেশে এ’সব দেখতে দেখতে রোগীর ঘোর লেগে যায়।

রেইকি মাস্টার তাঁর দশটা আঙুল ছোঁয়ালেন রোগীর কপালে। অদ্ভুত এক অভিজ্ঞতা। অদ্ভুত এক শান্তি। অথবা উত্তেজনার শান্তি। কিংবা নেশার বিস্ফোরণ।

এমন অবস্থায় রেইকি মাস্টার যদি suggestion দিতে থাকেন, “আমার আঙুল থেকে কসমিক এনার্জি আপনার চক্র দিয়ে শরীরে ঢুকছে। আমার হাতে স্পর্শ যেখানে রয়েছে, সেখানটা একটু একটু করে গরম হয়ে উঠছে….”। এমন সাজেশন শুনে রোগীর মনে হতেই পারে তালুর স্পর্শে শরীর উত্তপ্ত হচ্ছে। এটা শুধুই মনে হওয়া। রেইকি মানসিকভাবে একজন রোগীকে উদ্দীপিত করতে পারে ।

চিকিৎসা বিজ্ঞান অনেক এগিয়েছে। কিন্তু তারপরও আমাদের দেশের চিকিৎসকরা নানা ল্যাব থেকে নানা রকমের পরীক্ষা করিয়েও কখনও-সখনও রোগটিকে ঠিকমতো চিহ্নিত করতে পারেন না। এই অক্ষমতার পিছনে ল্যাব বা ডাক্তারের গাফিলতি বা অন্য বহুতর কারণ থাকতে পারে। এটা অ্যালাপ্যাথি চিকিৎসার একটা সমস্যা। কিন্তু এটা রেইকির কাছে কোনও সমস্যাই নয়।

যেখানে রোগ ঠিকমতো চিহ্নিত করা সম্ভব হয় না, সেখানে রেইকি ‘ফুল বডি ট্রিটমেন্ট’ করে। ‘ফুল বডি ট্রিটমেন্ট’ মানে শরীরের সাতটি চক্রের ২১টি পয়েন্ট স্পর্শ করে রেইকির সাহায্যে কসমিক রে নাকি পাঠানো হয়। একে রেইকি চার্জও বলে।

কোনও কোনও রোগী বিশেষ চক্রের স্পর্শে চার্জড হতেই পারেন। স্পর্শকাতর চক্রগুলোর বিপরীত লিঙ্গের করস্পর্শে উত্তেজিত হওয়ার সম্ভাবনা প্রচুর। এই বিশাল সম্ভাবনাই আয়ের একটা দিক খুলে দিতে পারে, যেটা অবশ্যই অন্ধকার একটা দিক।

সম্মোহন চিকিৎসা কখনও সব রোগ সারিয়ে তোলার দাবি করে না। মানসিক বা শারীরিক কারণে মানসিক রোগের ক্ষেত্রে সম্মোহনকে কাজে লাগানো যেতে পারে।

 

ডিসট্যান্ট হিলিং-এ অমিল

রেইকি মাস্টারদের দাবি—বহুদূর থেকেও রেইকি দেওয়া সম্ভব। এবং তাতে খুব ভালো কাজও হয়। রোগও সারে। এই ডিসট্যান্ট হিলিং-এর জন্য কোনও স্পর্শ বা ফোন জাতীয় কোনও মাধ্যমের প্রয়োজন হয় না।

কোনও বাচ্চা হয়তো লেখাপড়ায় ভালো। কিন্তু পরীক্ষা এলেই নার্ভাস হয়ে পড়ে। সেই বাচ্চার মা যদি রেইকি শিখে নেন, তাতে তিনি বাড়িতে বসেই ডিসট্যান্ট হিলিং দিয়ে বাচ্চার নার্ভাসনেসকে কাটিয়ে তুলতে পারেন

একজনের মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষে suggestion বা ধারণা সঞ্চারিত করতে পারা না পারার উপর সম্মোহনের কার্যকারিতা বা ব্যর্থতা নির্ভর করে। চিন্তার বা brain-এ যেহেতু কোনও তরঙ্গ নেই, তাই এই suggestion বা ধারণা চিন্তাতরঙ্গের সাহায্যে একজনের কাছে পাঠিয়ে দেওয়া আদো সম্ভব নয়। বহু দূরে বসে সম্মোহন করতে হলে suggestion পাঠানোর জন্য একটা মাধ্যমের প্রয়োজন হয়, সে মাধ্যম ফোন, রেডিও বা টেলিভিশন হতে পারে।

রেইকির ‘ডিসট্যান্ট হিলিং’ তত্ত্ব দাঁড়িয়ে আছে চিন্তা তরঙ্গের থিওরির ওপর। শব্দ ও আলোক তরঙ্গের কথা বিজ্ঞান জানে। শব্দ ও আলোক তরঙ্গ নির্দিষ্ট কম্পাঙ্ক, গতি ও মাত্রায় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, এটা বৈজ্ঞানিকভাবে প্রমাণিত ।

রেডিও এবং টেলিভিশন এই শব্দ তরঙ্গ ও আলোক তরঙ্গকে ধরে শব্দ ও আলোক দৃশ্যকে আমাদের সামনে হাজির করে।

যেহেতু চিন্তাতরঙ্গের অস্তিত্ব শুধু কল্পনাতেই রয়ে গেছে, বাস্তবে প্রমাণিত হয়নি, তাই এই চিন্তাতরঙ্গ ধরা নেহাতই অবাস্তব কল্পনা মাত্র। চিন্তা মস্তিষ্ক-স্নায়ুকোষের ক্রিয়ার ফল। অতএব এ’কথা আমরা দ্বিধাহীন বলতে পারি যে, রেইকি চিন্তা শক্তির তত্ত্বের উপর দাঁড়িয়ে থাকা ‘ডিসট্যান্ট হিলিং’ শেষ পর্যন্ত একটি বিজ্ঞান-বিরোধী তত্ত্ব।

 

উপসংহার

রেইকি নিয়ে এতক্ষণ আলোচনার পর আমরা নিশ্চিন্তে এই সিদ্ধান্তে পৌঁছে যাই যে— রেইকি একটা হুজুগ। আগাপাশতলা বিজ্ঞানবিরোধী চিন্তার আজগুবি তত্ত্ব। আজগুবি অধ্যাত্মবাদ ও অন্ধবিশ্বাসের সুযোগ নিয়ে লোককে আজেবাজে বোঝানোর কুচেষ্টা। রেইকির প্রচার ও প্রসার বন্ধ হওয়া উচিত। স্পর্শ দ্বারা রোগ সারাবার সোচ্চার দাবি বিভিন্ন প্রচার মাধ্যমে প্রকাশিত হচ্ছে। এই প্রতিটি প্রচার করার সঙ্গে রেইকি মাস্টার ও প্রচার মাধ্যমগুলো ভাঙছে The Drugs & Magic Remedies (Objectionable Advertisement) Act. 1954.

সরকার আর কতদিন নীরব থেকে রেইকিওয়ালাদের মানুষের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলতে দেবে?

 

রেইকিওয়ালাদের বিরুদ্ধে স্বাস্থ্যমন্ত্রক

২২ জুন ২০০৩ কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রক জানিয়ে দিল—রেইকি বা স্পর্শ চিকিৎসা যাঁরা করেন, তাঁরা নামের আগে ‘ডাক্তার’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারবেন না। কারণ এই চিকিৎসা পদ্ধতির কোনও সরকারি স্বীকৃতি নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রক স্পষ্ট করে এ’কথাও জানিয়েছে—ম্যাগনেটোথেরাপি, অ্যারোমা থেরাপি, জেম থেরাপি, মিউজিক থেরাপি ইত্যাদি তথাকথিত প্রতিটি চিকিৎসা পদ্ধতিই বে-আইনি এবং এইসব তথাকথিত চিকিৎসকরা কোনওভাবেই নামের আগে ‘ডাক্তার’ শব্দটি ব্যবহার করতে পারবেন না।

ভালো সিদ্ধান্ত। শুধু কথায় চিঁড়ে ভেজে না। আমরা প্রয়োগ দেখতে চাই। আমরা চাই, এইসব বে-আইনি ডাক্তার ও তাদের প্রচারের আলোয় তুলে ধরা চ্যানেল, পত্র-পত্রিকার বিরুদ্ধে সরকার কড়া গ্রহণ করুন ।

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!