তুমি তো জানোই ভালো করে আমাদের অশ্লীল সমাজে
এক রকম সামরিক আইন চিরকালই আছে।
দ্বাদশ শতকে ছিলো, আছে আজো, হয়তো থাকবে আগামী শতকে।
এতে কিন্তু আসলে সুবিধা সকলেরই–অর্থাৎ দালাল ও সুবিধাবাদীরা
অর্থাৎ সমস্ত বাঙালি এতে খুবই সুবিধা বোধ করে। শুধু অসুবিধা
তোমার আমার, প্রিয়তমা। আমরা কি তিলে তিলে বুঝতে পারছি না
সামরিক শাসনে সিদ্ধ সব কিছু; নিষিদ্ধ শুধু আমাদের প্রেম?
তাই প্রেমের নামেই বিভিন্ন পদ্ধতিতে আমাদেরই ভাঙতে হবে
সামরিক সমস্ত বিধান।
সামরিক আইন ভাঙার প্রথম পদ্ধতিটি এতোই নির্দোষ
যে কারোই মনেও হবে না আমরা দুজনে মিলে একটা হিংস্র আইন
অমান্য করেছি। তুমি চৌরাস্তায় বর্বর সব মানুষের সামনে
সভ্যতার প্রথম দীপের মতো তুলে ধরতে পারো তোমার অমল মুখ
আমার সামনে। আমি তার দুর্লভ আলোতে আলোকিত হয়ে
উঠতে পারি সমসাময়িক প্রচণ্ড আঁধারে। এভাবেই
আমরা দুজনে প্রকাশ্যে ভাঙতে পারি সামরিক কয়েকটি বিধান।
সামরিক আইন ভাঙার দ্বিতীয় পদ্ধতিটি আরেকটু স্পষ্ট আর
দৃষ্টিগ্রাহ্য। তুমি আর আমি এইসব প্রেমহীন প্রাণীর জঙ্গলে সব কিছু
অবহেলা করে হাতে রাখতে পারি হাত। প্রকাশ্য রাস্তায় হাতে হাত ধরে
আমরা দুজনে ভাঙতে পারি সামরিক সমস্ত বিধি ও বিধান।
সামরিক আইন ভাঙার তৃতীয় পদ্ধতিটি একটু তীব্র, কিছুটা মারাত্মক।
আমার উদ্দেশে তুমি দৌড়ে আসতে পারো মালিবাগ থেকে আর
তোমার উদ্দেশে আমি ছুটে আসতে পারি সমস্ত বস্তি আর
কলোনি পেরিয়ে। পিজি হাসপাতালের চৌরাস্তায় কোটি কোটি
চোখের সামনে আমরা তীব্র আলিঙ্গনে বাঁধতে পারি পরস্পরকে।
আলিঙ্গনে জ্বলে উঠে অত্যন্ত প্রকাশ্যে আমরা ভাঙতে পারি ১৭৪
নম্বর সামরিক নির্দেশ।
সামরিক আইন ভাঙার চতুর্থ পদ্ধতিটি ওইসব মিছিল, শ্লোগান, পোস্টার,
বক্তৃতার চেয়ে বহুগুণে কার্যকর। আমরা দুজনে সমস্ত কামানবন্দুক
অবহেলা করে ময়লার মতো বয়ে যাওয়া মানুষ আর যানবাহনের
মধ্যে দাঁড়িয়ে পরস্পরকে জড়িয়ে ধরে সুদীর্ঘ চুম্বনে রঙিন করে
তুলতে পারি সমগ্র বাঙলাকে। একটি প্রকাশ্য চুম্বনে আমরা খান খান
করে ভেঙে দিতে পারি হাজার বছর বয়স্ক বাঙলার
সামরিক আইন ও বিধান।
সামরিক আইন ভাঙার পঞ্চম পদ্ধতিটি বিপ্লবের চেয়েও তীব্র, ও অত্যন্ত গোপন।
তোমাকে তো শেখাতে পারি নিভৃতে গোপনে। প্রকাশ্যে কী করে শেখাই,
তাতে শুধু সামরিক আইন নয়, অসামরিক আইনও ক্ষেপে উঠবে
ভয়ঙ্করভাবে। দুপুরে আমার ঘরে এসো তুমি–আমরা দুজনে সমস্ত দুপুর ভরে
অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে চর্চা করবো গণতন্ত্র। আমাদের রক্তমাংস জপবে।
এমন মন্ত্র, যাতে বাঙলার অঙ্গপ্রত্যঙ্গ থেকে খসে পড়বে সামরিক শৃঙ্খল।
সবাই বিস্মিত হয়ে দেখতে পাবে বাঙলায় একটিও শিরস্ত্রাণ নেই।
আমরা দুজনে অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ হয়ে এক দুপুরেই এমনভাবে ভাঙতে পারি
সামরিক বিধি ও বিধান যে বাঙলায় আর কখনো সামরিক
অভ্যুত্থানের সম্ভাবনা থাকবে না।
“যতোই গভীরে যাই মধু, যতোই ওপরে যাই নীল” কবিতা সমগ্র সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
♦ নষ্ট হৃৎপিণ্ডের মতো বাংলাদেশ
♦ পুত্রকন্যাদের প্রতি, মনে মনে
♦ যদি ওর মতো আমারও সব কিছু ভালো লাগতো