সাধারণ নির্বাচন ২০০৯-এ প্রধান কয়েকটি দল কতগুলো আসন পাবে— জ্যোতিষীদের ভবিষ্যৎবাণী করতে সমিতির তরফ থেকে আবেদন জানানো হয়েছিল। সঙ্গে কয়েকটি নাম দিয়ে জানতে চাওয়া হয়েছিল, এঁরা নির্বাচনে কত ভোটে জিতবেন বা হারবেন। ওই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বদের মধ্যে ছিলেন ডঃ মনমোহন সিং, সোনিয়া গান্ধি, লালকৃষ্ণ আদবানি, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়, লালুপ্রসাদ যাদব এবং রামবিলাস পাসোয়ান। জয়ী জ্যোতিষীকে দেওয়া হবে ২৫ লক্ষ টাকা। ১১ মে ২০০৯ খবরটা ইমেলে বিভিন্ন মিডিয়াকে জানান হয়। এবং বলা হয় ১৫ মে ২০০৯ রাত ১২ টার মধ্যে ই-মেলে বা লিখিতভাবে নীচের তালিকার যে কোনও একটি
সংস্থার কাছে জানাতে হবে। সংস্থাগুলো হলো পি টি আই, ইউ এন আই, এ পি, বি বি সি, আজতক, এন ডি টি ভি ২৪ × ৭, টাইমস অফ ইন্ডিয়া, দ্য স্টেটসম্যান, আনন্দবাজার, স্টার আনন্দ ও কলকাতা টিভি।
১৫ তারিখ রাতে ১২টা স্থির করার কারণ ১৬ তারিখ ভোটগণনা।
এই চ্যালেঞ্জের খবরটি সংবাদ সংস্থাগুলোর কারণে গোটা দেশের কয়েক শত খবরের কাগজে প্রকাশিত হল। কয়েকটির নাম এখানে উল্লেখ করছি। দ্য ইকনমিক টাইমস, মুম্বাই মিরর, দ্য স্টেটসম্যান, বর্তমান, প্রতিদিন, একদিন, সংবাদ ইত্যাদি।
আমাদের চ্যালেঞ্জ জানাবার কারণ হিসেবে জানিয়েছিলাম, নির্বাচনের পর অনেক জ্যোতিষীই বিজ্ঞাপন দিয়ে জানান— তিনি নির্বাচন নিয়ে আগাম সঠিক ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন। যাঁরা এইসব মিডিয়ার কাছে আগাম ভবিষ্যৎবাণী না করে পরে বিজ্ঞাপন দিয়ে বাজারমাত করতে চাইবেন, তাঁরা স্রেফ প্রতারক। তাঁদের প্রতারণা বন্ধ করতেই এই চ্যালেঞ্জ।
সাড়া পেলাম। তবে বুঝলাম জ্যোতিষীদের সম্রাট সম্রাজ্ঞী-বাঘ-সিংহরা ভবিষ্যৎবাণী করে ডুবতে বিলকুল রাজি নন। ১৫ জন জ্যোতিষী চ্যালেঞ্জ নিলেন। তাঁদের মধ্যে দুটি নাম পরিচিত। শ্রীগৌতম ও শ্রীভৃগু।
শ্রীগৌতম জানালেন কংগ্রেস ১৫৩, বিজেপি ১৪৩, তৃণমূল কংগ্রেস ১২, সিপিএম ২৫। মনমোহন সিং জিতবেন ১ লক্ষ ৩০ হাজার ভোটে।
শ্রীভৃগু জানালেন কংগ্রেস ২০১, বিজেপি ১২২, তৃণমুল কংগ্রেস ১৬, সিপিএম ২৫। দুজনেই প্রতিটি উত্তরই ভুল দিয়েছিলেন। নির্বাচনের ফল প্রকাশ হতে দেখা গেল কংগ্রেস ২০৬, বিজেপি ১১৬, তৃণমূল কংগ্রেস ১৯, সিপিএম ১৬।
মজার কথা— শ্রীগৌতম নামধারী জানতেই না যে মনমোহন সিং নির্বাচনে দাঁড়াননি। তিনি আগেই রাজ্যসভা থেকে নির্বাচিত সাংসদ ।
জ্যোতিষীদের তলিয়ে যাওয়ার খবরও রমরম করে প্রকাশিত হলে কয়েক শত পত্রিকায়। অভিনন্দন জানালেন জেমস র্যান্ডি-সহ দেশ-বিদেশের বহু যুক্তিবাদী ব্যক্তিত্ব।
এর পরও কারও কারও মনে হতেই পারে জ্যোতিষ পেশাটা যদি বেআইনি হয়, তবে কেন জ্যোতিষীদের গ্রেপ্তার করা হচ্ছে না?
খুবই খাঁটি কথা। আরও একটা খাঁটি কথা কী জানেন— কালো টাকা রাখা বেআইনি। কিন্তু কোনও মন্ত্রী বা বৃহৎ শিল্পপতি কি এই আর্থিক অপরাধের জন্য গ্রেপ্তার হন? পতিতা ব্যবসা বেআইনি অথচ রমরমিয়ে এই ব্যবসা চলছে। মধুচক্র চালাবার জন্য কখনওসখনও গ্রেপ্তার করা হয় বটে কিন্তু সেসব ক্ষেত্রে হিস্যা নিয়ে পুলিশ প্রশাসনের গোলমালের কারণেই ওরা ধরা পড়ে। জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে এবং তাদের বিজ্ঞাপন প্রচারমাধ্যমের বিরুদ্ধে রয়েছে ‘দ্য ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস্’ অ্যাক্ট, ১৯৪০। এই আইনের অ্যামেন্ডমেন্ট ১৯৫৫, ১৯৫৭, ১৯৬২, ১৯৬৩, ১৯৬৪ ইত্যাদি। এবং শেষ অ্যামেন্ডমেন্ট ২০০৯ সালে।
এই আইনে বলা আছে— যে কোনও রোগ সারাবার জন্য বিজ্ঞাপিত তাবিজ কবচ, মাদুলি, গ্রহরত্ন, তন্ত্র-মন্ত্র ইত্যাদি ‘ওষুধ’ বা ‘ড্রাগস’ হিসেবে বিবেচিত হবে। এইসব ‘ওষুধ’ বিক্রির জন্য ড্রাগ কন্ট্রোল ডিপার্টমেন্ট এর কাছ থেকে লাইসেন্স নিতে হবে। ড্রাগ লাইসেন্স ছাড়া এই সব ওষুধ বিক্রি ও এসবের বিজ্ঞাপন প্রকাশক আইনভঙ্গকারী হিসেবে গণ্য হবে।
তারপরও প্রশাসন ও পুলিশের অপদার্থতায় জ্যোতিষী ও বড় বড় পত্রিকাগুলো পর্যন্ত এই আইনকে বুড়ো আঙুল দেখিয়ে চলেছে।
যুক্তিবাদী সমিতি কী করতে পারে? জনসচেতনতা তৈরি করতে সচেষ্ট হতে পারে। এর বেশি কিছু নয়। জ্যোতিষী ব্যবসাটা টিকে আছে শক্তিশালী এক দুর্নীতির চক্রের মাধ্যমে। এই চক্র ভাঙতে পারে জনসচেতনতাই ।
এবার তাত্ত্বিকভাবে দেখি আসুন
জ্যোতিষীরা কী করে মানুষের অতীত বর্তমান ভবিষ্যৎ বলতে পারেন ?
এ বিষয়ে শুকদেব গোস্বামী ওরফে ভৃগু আচার্যের উত্তর। ভাগ্য পূর্বনির্ধারিত। তাই গণনা করে অতীত-বর্তমান-ভবিষ্যৎ সবই বলা যায়।
এই মত A to Z সব জ্যোতিষীদেরই। পূর্বনির্ধারিত ভাগ্য মানে— কোনও ভাবেই যে ভাগ্যকে পাল্টানো সম্ভব নয়। তাহলে কেন স্টোন, যন্ত্রম, তাবিজ, কবজ ইত্যাদি প্রেসক্রাইব করেন জ্যোতিষীরা, এ তো স্ববিরোধী কথাবার্তা।
জ্যোতিষীদের কথা মানলে প্রচেষ্টার ভূমিকা শূন্য হতে বাধ্য। বাস্তবে যা হওয়ার তা হবেই বলে হাত গুটিয়ে বসে থাকলেও শেষ পর্যন্ত কিছুই হয় না।
জ্যোতিষ শাস্ত্রকে অভ্রান্ত বলে মেনে নিলে ডাক্তারের প্রয়োজন থাকে না। রোগ সারার হলে এমনিই সারবে।
পুলিশ রেখে পূর্বনির্ধারিত অপরাধ যখন ঠেকানো যাবে না, তখন পুলিশের প্রয়োজন কোথায়? ভাগ্য বিশ্বাসী হলে সেনাদের জন্য আধুনিক সমরাস্ত্র কেনার প্রয়োজন থাকে না। যুদ্ধে জয় যদি ভাগ্যে লেখা থাকে তবে যে অস্ত্র দিয়েই লড়ি, জয় হবেই, তা সে পেঁপের ডাঁটা নিয়ে পারমানবিক রোমা, লেজার গানের বিরুদ্ধে লড়লেও জয় আসবে।
এভাবে আপনারাই জ্যোতিষীদের বিরুদ্ধে অসারতার তালিকা বাড়াতে পারেন।
প্রথম খন্ড
অধ্যায়ঃ এক
♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস
অধ্যায়ঃ দুই
♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !
অধ্যায়ঃ তিন
♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা
অধ্যায়ঃ নয়
অধ্যায়ঃ দশ
♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !
অধ্যায়ঃ বারো
♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়
অধ্যায়ঃ তেরো
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !
অধ্যায়ঃ পনেরো
♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !
অধ্যায়ঃ ষোলো
অধ্যায়ঃ সতেরো
♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন
দ্বিতীয় খন্ড
অধ্যায়ঃ এক
♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !
অধ্যায়ঃ চার
♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…
অধ্যায়ঃ দশ
♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর
অধ্যায়ঃ বারো
♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা
অধ্যায়ঃ তেরো
তৃতীয় খন্ড
অধ্যায়ঃ এক
♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ
অধ্যায়ঃ দুই
♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা
অধ্যায়ঃ তিন
♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন
চতুর্থ খন্ড
অধ্যায়ঃ এক
♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা
অধ্যায়ঃ দুই
♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা
অধ্যায়ঃ তিন
♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল
অধ্যায়ঃ চার
♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি
অধ্যায়ঃ আট
♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন
অধ্যায়ঃ নয়
♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’
অধ্যায়ঃ দশ
“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ