শ্লোকঃ ১৬
নাসতো বিদ্যতে ভাবো নাভাবো বিদ্যতে সতঃ।
উভয়োরপি দৃষ্টোহন্তস্তনয়োস্তত্বদর্শিভিঃ ।। ১৬ ।।
ন- না; অসতঃ- অনিত্য বস্তুর; বিদ্যতে- হয়; ভাবঃ- স্থায়িত্ব; ন- না; অভাবঃ- বিনাশ; বিদ্যতে- হয়; সতঃ- নিত্য বস্তুর; উভয়োঃ- উভয়ের; অপি- যথার্থই; দৃষ্টঃ- দর্শন করে; অন্তঃ- সিদ্ধান্ত; তু- কিন্তু; অনয়োঃ- তাদের; তত্ত্ব- সত্য; দর্শিভিঃ- দ্রষ্টাদের দ্বারা।
গীতার গান
অসৎ শরীর এই সত্তা নাহি তার।
নিত্যসত্য জীব হয় মৃত্যু নাহি যার।।
উভয় বিচার করি করিল নিশ্চিত।
তত্ত্বদর্শী সেই কহে যেই হয় হিত।।
অনুবাদঃ যারা তত্ত্বদ্রষ্টা তাঁরা সিদ্ধান্ত করেছেন যে অনিত্য জড় বস্তুর স্থায়িত্ব নেই এবং নিত্য বস্তু আত্মার কখনো বিনাশ হয় না। তাঁরা উভয় প্রকৃতির যথার্থ স্বরূপ উপলব্ধি করে এই সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন।
তাৎপর্যঃ প্রতি মুহূর্তে এই জড় দেহের পরিবর্তন হচ্ছে- এই দেহের কোনই স্থায়িত্ব নেই। আধুনিক চিকিৎসা-বিজ্ঞানের সাহায্যেও জানা যায়, বিভিন্ন জীবকোষের ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়ার ফলে প্রতি মুহূর্তে জীবদেহের অবিরাম পরিবর্তন হচ্ছে, তার ফলে জীবদেহ শিশু অবস্থা থেকে ক্রমে ক্রমে পূর্ণ যৌবনে বিকশিত হয় এবং অবশেষে বৃদ্ধ অবস্থায় উপনীত হয়। কিন্তু দেহ ও মনের সব রকম পরিবর্তন হওয়া সত্ত্বেও জীবের প্রকৃত সত্তা আত্মার কোন পরিবর্তন হয় না। জড় দেহ ও সনাতন আত্মার মধ্যে এটিই হচ্ছে পার্থক্য। দেহের প্রকৃতিই হচ্ছে চির-পরিবর্তনশীল আর আত্মা হচ্ছে চিরশাশ্বত-সনাতন। এই সিদ্ধান্ত নির্বিশেষবাদী ও সবিশেষবাদী উভয় শ্রেণীর তত্ত্বদ্রষ্টারা স্বীকার করেছেন। বিষ্ণু পুরাণে (২/১২/৩৮) বলা হয়েছে, শ্রীবিষ্ণু ও তাঁর ধামসকল স্বতঃস্ফূর্ত চিন্ময় জ্যোতির দ্বারা উদ্ভাসিত (জ্যোতীংষি বিষ্ণুর্ভুবনানি বিষ্ণুঃ)। তত্ত্বদর্শী মহাজনেরা যথাক্রমে সৎ, অসৎ- নিত্য ও অনিত্য বলতে চেতন ও জড় বস্তুকেই উল্লেখ করেন।
মায়ার দ্বারা মোহাচ্ছন্ন বদ্ধ জীবের প্রতি ভগবান শ্রীকৃষ্ণের এটিই হচ্ছে সর্বপ্রথম উপদেশ। জীব হচ্ছে ভগবানের অবিচ্ছেদ্য অংশ, তাই সে ভগবানের নিত্যদাস। এই জ্ঞান উপলব্ধি করা হলেই অজ্ঞানতার আবরণ উন্মোচিত হয় এবং সে তখন ভগবানের সঙ্গে উপাস্য আর উপাসকের সম্পর্কের পুনঃপ্রতিষ্ঠা করে। পূর্ণের সঙ্গে অংশের যে সম্পর্ক, ভগবানের সঙ্গে জীবের সেই সম্পর্ক- ভগবান হচ্ছেন পূর্ণ, আর জীব তাঁর অংশ। বেদান্তসূত্র ও শ্রীমদ্ভাগবতে বলা হয়েছে, ভগবান হচ্ছেন সব কিছুর উৎস- সব কিছুই উদ্ভূত হয়েছে ভগবানের থেকে। ভগবানের থেকে উদ্ভূত এই প্রকৃতিতে পরা ও অপরা এই দুটি স্তর আছে। জীব ভগবানের পরা প্রকৃতির অন্তর্গত। সপ্তম অধ্যায়ে এই সম্বন্ধে বিশদভাবে আলোচনা করা হয়েছে। শক্তি ও শক্তিমানের মধ্যে যদিও কোন ভেদ নেই, তবুও শক্তিমান হচ্ছেন শক্তির নিয়ন্তা। পরমেশ্বর ভগবান হচ্ছেন শক্তিমান এবং শক্তি বা প্রকৃতি সর্ব অবস্থাতেই তাঁর নিয়ন্ত্রণাধীন। তাই, প্রভু ও ভৃত্য অথবা গুরু ও শিষ্যের সম্পর্কের মতো জীবসমূহ পরমেশ্বর ভগবানের অধীন। মায়ার অন্ধকারে যখন জীব আচ্ছন্ন থাকে, তখন সে ভগবৎ-তত্ত্ব উপলব্ধি করতে পারে না। ভগবান তাই জীবকে মায়ান্ধকার থেকে মুক্ত হয়ে সত্য দর্শন করবার জন্যে এই ভগবদগীতার শিক্ষা দান করেছেন।
শ্লোকঃ ১৭
অবিনাশি তু তদ্ধিদ্ধি যেন সর্বমিদং ততম।
বিনাশমব্যয়স্যাস্য ন কশ্চিৎ কর্তুমরহতি ।। ১৭ ।।
অবিনাশি- বিনাশ রহিত; তু- কিন্তু; তৎ- তা; বিদ্ধি- জানবে; যেন- যার দ্বারা; সর্বম- সমগ্র শরীর; ইদম- এই; ততম- ব্যাপ্ত; বিনাশম- বিনাশ; অব্যয়স্য- অক্ষয়ের; অস্য- এই; ন কশ্চিৎ- কেউ নয়; কর্তুম- করতে; অরহতি- সমর্থ।
গীতার গান
অবিনাশী সেই বুঝ সর্বত্র বিস্তার।
যাহার অভাবে হয় দেহ মহাভার।।
ক্ষয়ব্যয় নাহি যার কে মারিতে পারে।
অমরের মার কিবা করহ বিচার।।
অনুবাদঃ যা সমগ্র শরীরে পরিব্যাপ্ত হয়ে রয়েছে, তাকে তুমি অবিনাশী বলে জানবে। সেই অব্যয় আত্মাকে কেউ বিনাশ করতে সক্ষম নয়।
তাৎপর্যঃ এই শ্লোকে আরও স্পষ্টভাবে আত্মার প্রকৃত স্বরূপ ব্যাখ্যা করা হয়েছে। এই আত্মা সারা দেহ জুড়ে বিস্তৃত রয়েছে। যে-কেউ হৃদয়ঙ্গম করতে পারে, সমগ্র দেহ জুড়ে কি বিস্তৃত হয়ে আছে- সেটি হচ্ছে চেতনা। প্রত্যেকেই তার দেহের সুখ ও বেদনা সম্বন্ধে সচেতন। চেতনার এই বিস্তার প্রত্যেকের তার নিজের দেহেই সীমাবদ্ধ। কিন্তু একজনের দেহের অনুভূতি অন্য আর কেউ অনুভব করতে পারে না। এর থেকে বোঝা যায়, এক-একটি দেহ হচ্ছে এক-একটি স্বতন্ত্র আত্মার মূর্তরূপ এবং স্বতন্ত্র চেতনার মাধ্যমে আত্মার উপস্থিতির লক্ষণ অনুভূত হয়। এই আত্মার আয়তন কেশাগ্রের দশ সহস্র ভাগের একভাগের সমান বলে বর্ণনা করা হয়েছে। শ্বেতাশ্বতর উপনিষদে (৫/৯) প্রতিপন্ন করা হয়েছে-
বালাগ্রশতভাগস্য শতধা কল্পিতস্য চ।
ভাগো জীবঃ স বিজ্ঞেয়ঃ স চানন্ত্যায় কল্পতে।।
“কেশাগ্রকে শতভাগে ভাগ করে তাকে আবার শতভাগে ভাগ করলে তার যে আয়তন হয়, আত্মার আয়তনও ততখানি।“ সেই রকম অনুরূপ একটি শ্লোকে বলা হয়েছে-
কেশাগ্রশতভাগস্য শতাংশসদৃশাত্মকঃ।
জীবঃ সূক্ষ্মস্বরূপোহয়ং সংখ্যাতীতো হি চিৎকণঃ।।
“অসংখ্য যে চিকিৎসা রয়েছে, তার আয়তন কেশাগ্রের দশ সহস্র ভাগের এক ভাগের সমান।“
সুতরাং এর থেকে আমরা বুঝতে পারি, জীবাত্মা হচ্ছে এক-একটি চিৎকণা, যার আয়তন পরমাণুর থেকেও অনেক ছোট এবং এই জীবাত্মা বা চিৎকণা সংখ্যাতীত। এই অতি সূক্ষ্ম চিৎকণাগুলি জড় দেহের ও চেতনার মূল তত্ত্ব। কোন ওষুধের প্রভাব যেমন দেহের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়ে, এই চিৎ-স্ফুলিঙ্গের প্রভাবও তেমনই সারা দেহ জুড়ে বিস্তৃত থাকে। আত্মার এই প্রবাহ চেতনারূপে সমগ্র দেহে অনুভুত হয় এবং সেটিই হচ্ছে আত্মার উপস্থিতির প্রমাণ। সাধারণ মানুষও বুঝতে পারে, জড় দেহে যখন চেতনা থাকে না, তখন তা মৃত দেহে পরিণত হয় এবং কোন রকম জড় প্রচেষ্টার দ্বারাই আর সেই দেহে চেতনা ফিরিয়ে আনা যায় না। এর থেকে বোঝা যায়, চেতনার উদ্ভব জড় পদার্থের সংমিশ্রণের ফলে হয় না, তা হয় আত্মার থেকে। চেতনা হচ্ছে আত্মার স্বাভাবিক প্রকাশ। আত্মার পারমাণবিক পরিমাপ সম্বন্ধে মুন্ডক উপনিষদে (৩/১/৯) বলা হয়েছে-
এষোহণুরাত্মা চেতসা বেদিতব্যো যস্মিন প্রাণঃ পঞ্চধা সংবিবেশ।
প্রাণৈশ্চিত্তং সর্বমোতং প্রজানাং যস্মিন বিশুদ্ধে বিভবত্যেষ আত্মা।।
“আত্মা পরমাণুসদৃশ এবং শুদ্ধ বুদ্ধিমত্তার দ্বারা তাকে অনুভব করা যায়। পরমাণুসদৃশ এই আত্মা পঞ্চবিধ বায়ুতে (প্রাণ, অপান, সমান, ব্যান ও উদান) ভাসমান থেকে হৃদয়ে অবস্থান করে এবং জীবাত্মার সমগ্র দেহে তার প্রভাব বিস্তার করে। আত্মা যখন এই পঞ্চবিধ জড় বায়ুর কলুষিত প্রভাব থেকে পবিত্র হয়, তখন তার অপ্রাকৃত গুণাবলীর প্রকাশ হয়।“
হঠযোগের প্রকৃত উদ্দেশ্য হচ্ছে বিভিন্ন আসন প্রণালী অভ্যাস করার মাধ্যমে জড় পরিবেশের বন্ধন থেকে ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র আত্মাকে মুক্ত করার জন্য আত্মার চারদিকে পরিবেষ্টিত পঞ্চবিধ বায়ুকে নিয়ন্ত্রন করা। কিন্তু দুর্ভাগ্যবশত, দেহতত্ত্বের এই অতি উন্নত বিজ্ঞানকে তথাকথিত হঠযোগীরা এক অতি বিকৃত রূপ দান করে জাগতিক সুখভোগ ও ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির বাসনায় প্রয়োগ করছে।
সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রেই বলা হয়েছে, জীবাত্মা পরমাণুসদৃশ। সুস্থ বুদ্ধি-মত্তা সম্পন্ন যে কোন মানুষই উপলব্ধি করতে পারে যে, আত্মা হচ্ছে পরমাণুসদৃশ চিৎকণা। যারা বলে থাকে যে, জীবাত্মাই হচ্ছে সর্বব্যাপ্ত বিষ্ণুতত্ত্ব, অতি সহজেই বোঝা যায় যে, তারা বিকৃত মস্তিষ্কসম্পন্ন- অপ্রকৃতস্থ মানুষ।
পরমাণু চৈতন্যবিশিষ্ট জীবাত্মা কোন একটি বিশেষ দেহের সর্বত্র পরিব্যাপ্ত হতে পারে, কিন্তু জীবাত্মা কোন অবস্থাতেই সর্বব্যাপ্ত বিষ্ণুতত্ত্ব হতে পারে না। মুন্ডক উপনিষদে বলা হয়েছে, প্রতিটি জীবের হৃদয়ে জীবাত্মা বর্তমান থাকে, কিন্তু এই আত্মা এত সূক্ষ্ম যে, জড় ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে তা দেখা যায় না। বর্তমান যুগে অণুবীক্ষণ যন্ত্রের সাহায্যেও এই অতি সূক্ষ্ম আত্মা মানুষের ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য হয় না। তাই আধুনিক যুগের তথাকথিত বৈজ্ঞানিকেরা হঠকারিতা করে আত্মার অস্তিত্বকে অস্বীকার করে। কিন্তু একটু সুস্থ মস্তিষ্কে চিন্তা করলেই আত্মার অস্তিত্ব সম্বন্ধে সমস্ত সন্দেহের নিরসন হয়। কারণ জীবের হৃদয়ে আত্মার সঙ্গে একসাথে অধিষ্ঠিত থেকে পরমাত্মাই জীবকে পরিচালিত করেন। তাই আপাতদৃষ্টিতে দেখা যায়, জীবদেহের সমস্ত কার্যকলাপ হৃদয়ের দ্বারা পরিচালিত হয়। যে সমস্ত রক্তকণিকা ফুসফুস থেকে অক্সিজেন বহন করে, তারা তাদের শক্তি আহরণ করে আত্মা থেকে। আত্মা যখন জড় দেহ ত্যাগ করে চলে যায়, তখন রক্ত সঞ্চালন, শ্বাস-প্রশ্বাস আদি দেহের সমস্ত ক্রিয়াগুলিই বন্ধ হয়ে যায়। চিকিৎসা বিজ্ঞানীরা রক্তকণিকার এই গুরুত্ব স্বীকার করে থাকে, কিন্তু সমস্ত শক্তির উৎস যে আত্মা, তা তারা বুঝতে পারে না। কিন্তু তা হলেও তারা স্বীকার করে যে, হৃদয়ই হচ্ছে দেহের সমস্ত শক্তির কেন্দ্রস্থল।
আত্মার এই পারমানবিক চিৎকণাগুলিকে সূর্য কিরণের অণুর সঙ্গে তুলনা করা হয়ে থাকে। সূর্যকিরণের মধ্যে অসংখ্য প্রভাময় অণু আছে। সেই রকম, কণাস্বরূপ- যাকে বলা হয় প্রভা অর্থাৎ উৎকৃষ্টা শক্তি। সুতরাং, বৈদিক তত্ত্ববিজ্ঞান কিংবা আধুনিক বিজ্ঞান, যা কিছুই অনুসরণ করা যাক, দেহের মধ্যে আত্মার অস্তিত্ব কেউ অস্বীকার করতে পারে না। আত্মা সম্পর্কিত এই বৈজ্ঞানিক তথ্য পরম পুরুষোত্তম ভগবান স্বয়ং ভগবদগীতায় সুস্পষ্টভাবে বর্ণনা করেছেন।
শ্লোকঃ ১৮
অন্তবন্ত ইমে দেহা নিত্যস্যোক্তাঃ শরীরিণঃ।
অনাশিনোহপ্রমেয়স্য তস্মাদ যুধ্যস্ব ভারত ।। ১৮ ।।
অন্তবন্তঃ- বিনাশশীল; ইমে- এই সমস্ত; দেহাঃ- জড় দেহসকল; নিত্যস্য- নিত্যস্থায়ী; উক্তাঃ- বলা হয়; শরীরিণঃ- দেহী আত্মার; অনাশিনঃ- অবিনাশী; অপ্রমেয়স্য- অপরিমেয়; তস্মাৎ- অতএব; যুধ্যস্থ- যুদ্ধ কর; ভারত- হে ভরত-বংশীয়।
গীতার গান
নিঃশেষ হইয়া যাবে এই জড় দেহ।
নিত্য আত্মা জান ভাল না মরিবে কেহ।।
বিনাশি প্রমেয় নহে আত্মা ভাল মতে।
সত্য বুঝি দৃঢ়ব্রত হও ৎ যুদ্ধেতে।।
অনুবাদঃ অবিনাশী, অপরিমেয় ও শাশ্বত আত্মার জড় দেহ নিঃসন্দেহে বিনাশশীল। অতএব হে ভারত। তুমি শাস্ত্রবিহিত স্বধর্ম পরিত্যাগ না করে যুদ্ধ কর।
তাৎপর্যঃ জড় দেহের ধর্মই হচ্ছে বিনাশ প্রাপ্ত হওয়া। জড় দেহ এই মুহূর্তে ধ্বংস হয়ে যেতে পারে, নয়তো একশ বছর পরে ধ্বংস হতে পারে, কিন্তু একদিন না একদিন এর ধ্বংস হবেই। অনির্দিষ্ট কাল পর্যন্ত আত্মাকে টিকিয়ে রাখার কোন সুযোগ নেই। কিন্তু আত্মা এত সূক্ষ্ম যে, তাকে দেখাই যায় না, সুতরাং কোন শত্রুই তাকে হত্যা করতে পারে না। পূর্ববর্তী শ্লোকে বর্ণনা করা হয়েছে, আত্মা এত সূক্ষ্ম যে, তাকে পরিমাপ করাও অসম্ভব। সুতরাং দেহ ও আত্মা এই দুই তত্ত্বের পরিপ্রেক্ষিতে জীবের স্বরূপ বিচার করলে তখন আর কোন অনুশোচনা থাকতে পারে না, কারণ মানুষের প্রকৃত স্বরূপ আত্মা চিরশাশ্বত এবং কোন অবস্থাতেই তার বিনাশ হয় না, আর জড় দেহ হচ্ছে অনিত্য, একদিন না একদিন যখন তার ধ্বংস হবেই, তখন কোনভাবেই অনির্দিষ্ট কালের জন্য অথবা চিরকালের জন্য দেহটিকে বাঁচিয়ে রাখা যায় না। পূর্বকৃত কর্ম অনুসারে সমগ্র আত্মার ক্ষুদ্রাতিক্ষুদ্র অংশ এক-একটি জড় দেহ প্রাপ্ত হয়। সেই জন্যই শাস্ত্রের নির্দেশ অনুসারে জীবনযাপন করা উচিত। শাস্ত্রের নির্দেশ অনুসারে কর্তব্যকর্ম অনুষ্ঠান করার ফলে উপযুক্ত দেহ প্রাপ্ত হয়ে জীবাত্মা জড় বন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারে। বেদান্ত-সূত্রে আত্মাকে আলোক বলে সম্বোধন করা হয়েছে, কারণ সে হচ্ছে পরম আলোকের অংশ। সূর্যের আলোক যেমন সমস্ত ব্রক্ষ্মান্ডকে প্রতিপালন করে, তেমনই আত্মার আলোকও জড় দেহকে প্রতিপালন করে। যে মুহূর্তে আত্মা তার দেহটি পরিত্যাগ করে, তখন থেকেই সেই দেহটি পচতে শুরু করে। এর থেকে বোঝা যায়, আত্মাই এই দেহটিকে প্রতিপালন করে। দেহে আত্মা থাকে বলেই দেহটিকে এত সুন্দর বলে মনে হয়, কিন্তু আত্মা ব্যতীত দেহের কোনই গুরুত্ব নেই। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাই অর্জুনকে উপদেশ দিয়েছিলেন, দেহাত্মবুদ্ধি পরিত্যাগ করে ধর্ম সংস্থাপনের জন্য যুদ্ধ করতে।
৯. পঞ্চম অধ্যায়ঃ কর্মসন্ন্যাস-যোগ
১২. অষ্টম অধ্যায়ঃ অক্ষরব্রক্ষ্ম-যোগ
১৫. একাদশ অধ্যায়ঃ বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ
১৭. ত্রয়োদশ অধ্যায়ঃ প্রকৃতি-পুরুষ-বিবেকযোগ
১৮. চতুর্দশ অধ্যায়ঃ গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ
১৯. পঞ্চদশ অধ্যায়ঃ পুরুষত্তম-যোগ
২০. ষোড়শ অধ্যায়ঃ দৈবাসুর- সম্পদ-বিভাগযোগ
২১. সপ্তদশ অধ্যায়ঃ শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ
২৪. বর্তমান সংস্করণ সম্পর্কে টীকা
শ্রীমদ্ভগভদ গীতা সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ