শ্লোকঃ ৩৭
হতো বা প্রাপ্স্যসি স্বর্গং জিত্বা বা ভোক্ষ্যসে মহীম।
তস্মাদুত্তিষ্ঠ কৌন্তেয় যুদ্ধায় কৃতনিশ্চয়ঃ ।। ৩৭ ।।
হতঃ- নিহত হলে; বা- অথবা; প্রাপ্স্যসি- লাভ করবে; স্বর্গম- স্বর্গ; জিত্বা- জয় লাভ করলে; বা- অথবা; ভোক্ষ্যসে- ভোগ করবে; মহীম- পৃথিবী; তস্মাৎ- অতএব; উত্তীষ্ঠ- উত্থিত হও; কৌন্তেয়- হে কুন্তীপুত্র; যুদ্ধায়- যুদ্ধের জন্য; কৃত- দৃঢ়সংকল্প; নিশ্চয়ঃ- নিশ্চিত হয়ে।
গীতার গান
মরে যদি স্বর্গ পাও সেও ভাল কথা।
বাঁচিয়া পাইবে ভোগ নহে সে অন্যথা।।
বাঁচা মরা দুই ভাল যুদ্ধেতে নিশ্চয়।
হেন যুদ্ধ ছাড় তুমি আশ্চর্য বিষয়।।
হে কৌন্তেয় উঠ তুমি নাহি কর হেলা।
যুদ্ধ করিবারে নিশ্চয় কর এই বেলা।।
অনুবাদঃ হে কুন্তীপুত্র। এই যুদ্ধে নিহত হলে তুমি স্বর্গলাভ করবে, আর জয়ী হলে পৃথিবী ভোগ করবে। অতএব যুদ্ধের জন্য দৃঢ়সংকল্প হয়ে উত্থিত হও।
তাৎপর্যঃ যুদ্ধে যদি অর্জুনের জয় সুনিশ্চিত না-ও হত, তবু সেই যুদ্ধ তাঁকে করতেই হত। কারণ, সেই যুদ্ধক্ষেত্রে নিহত হলেও, তিনি স্বর্গলোকেই উন্নীত হতেন।
শ্লোকঃ ৩৮
সুখদুঃখে সমে কৃত্বা লাভালাভৌ জয়াজয়ৌ।
ততো যুদ্ধায় যুজ্যস্ব নৈবং পাপমবাপ্স্যসি ।। ৩৮ ।।
সুখ- সুখ; দুঃখে- দুঃখে; সমে- সমানভাবে; কৃত্বা করে; লাভালাভৌ- লাভ ও ক্ষতিকে; জয়াজয়ৌ- জয় ও পরাজয়কে; ততঃ- তারপর; যুদ্ধায়- যুদ্ধার্থে; যুজ্যস্ব- যুদ্ধ কর; ন- না; এবম- এভাবে; পাপম- পাপ; অবাপ্স্যসি- লাভ হবে।
গীতার গান
সুখদুঃখ সমকর নাহি লাভ সব।
জয়াজয় নাহি ভয় কর্তব্য বলিব।।
যুদ্ধের লাগিয়া তুমি শুধু যুদ্ধ কর।
নাহি তাতে পাপ ভয় এই সত্য বড়।।
অনুবাদঃ সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি ও জয়-পরাজয়কে সমান জ্ঞান করে তুমি যুদ্ধের নিমিত্ত যুদ্ধ কর, তা হলে তোমাকে পাপভাগী হতে হবে না।
তাৎপর্যঃ ভগবান এখানে স্পষ্টভাবে অর্জুনকে বলেছেন, জয়-পরাজয়ের বিবেচনা না করে কেবল কর্তব্যের খাতিরে যুদ্ধ করার জন্য যুদ্ধ করতে হবে। কারণ, ভগবানের ইচ্ছানুসারেই এই যুদ্ধ আয়োজিত হয়েছে। কৃষ্ণভাবনাময় কার্যকলাপের সময় সুখ-দুঃখ, লাভ-ক্ষতি, জয়-পরাজয় আদি জাগতিক ফলাফলের বিবেচনা করা নিরর্থক। কারণ, ভগবান শ্রীকৃষ্ণের জন্য যে কর্মই করা হোক না কেন, তা জাগতিক ফলাফলের অতীত- সে সমস্ত কর্মই অপ্রাকৃত কর্ম। যে মানুষ তার ইন্দ্রিয়ের তৃপ্তি সাধন করার জন্য কর্ম করে, তার সেই কর্মের জন্য তাকে শুভ অথবা অশুভ ফল ভোগ করতে হয়। কিন্তু যে মানুষ ভগবানের সেবায় নিজেকে সর্বতোভাবে উৎসর্গ করেছেন, তাঁর কারও প্রতি কোন কর্তব্য আর বাঁকি থাকে না এবং কারও প্রতি তাঁর আর কোন ঋণও থাকে না। সাধারণ অবস্থায় প্রতিটি কর্মের জন্য মানুষকে কারও না কারও কাছে কৈফিয়ত দিতে হয়, কিন্তু ভগবানের সেবায় নিজেকে উৎসর্গ করলে আর সেই সমস্ত বন্ধন থাকে না। শ্রীমদ্ভগবতে বলা হয়েছে-
দেবর্ষিভূতাপ্তনৃণাং পিতৃণাং
ন কিঙ্করো নায়মৃণী চ রাজন।
সর্বাত্মনা যঃ শরণং শরণ্যং
গতো মুকুন্দং পরিহৃত্য কর্তম।।
“যিনি শ্রীকৃষ্ণ বা মুকুন্দের চরণে নিজেকে উৎসর্গ করেছেন, অন্যান্য সমস্ত কর্তব্যকর্ম পরিত্যাগ করলেও তিনি দেবতা, ঋষি, জনসাধারণ, আত্মীয়স্বজন বা পিতৃপুরুষ, কারও কাছেই ঋণী নন।“ (ভাঃ ১১/৫/৪১) কোন রকম ফলাফলের বিচার না করে শ্রীকৃষ্ণের চরণে আত্মনিবেদন করাটাই যে মানব-জীবনের পরম কর্তব্য, সেই কথা ভগবান সংক্ষেপে অর্জুনকে জানিয়ে দিলেন। এই শ্লোকে অর্জুনের প্রতি এটিই পরোক্ষ ইঙ্গিত এবং পরবর্তী শ্লোকে ভগবান এই বিষয়ে বিশদভাবে ব্যাখ্যা করবেন।
শ্লোকঃ ৩৯
এষা তেহভিহিতা সাংখ্যে বুদ্ধির্যোগে ত্বিমাং শৃণু।
বুদ্ধ্যা যুক্তো যয়া পার্থ কর্মবন্ধং প্রহাস্যসি ।। ৩৯ ।।
এষা- এই সমস্ত; তে- তোমাকে; অভিহিতা- বলা হল; সাংখ্যে- বিশ্লেষণ মূলক জ্ঞান বিষয়ে; বুদ্ধিঃ- বুদ্ধি; যোগে- নিষ্কাম কর্মে; তু- কিন্তু; ইমাম- এই; শৃণু- শ্রবন কর; বুদ্ধ্যা- বুদ্ধির দ্বারা; যুক্তঃ- যুক্ত হলে; যয়া- যার দ্বারা; পার্থ- হে পৃথাপুত্র; কর্মবন্ধম- কর্মের বন্ধন; প্রহাস্যসি- তুমি মুক্ত হতে পারবে।
গীতার গান
জ্ঞানের বিচারে সব বলিনু তোমাকে।
এবে শুন বুদ্ধিযোগে জ্ঞান পরিপাক।।
জ্ঞানীর যোগ্যতা যদি পরিপাক হয়।
ভক্তি দ্বারা বুদ্ধিযোগ তবে সে বুঝয়।।
ভক্তিযুক্ত কর্ম হয় কর্মযোগ নাম।
যাহার সাধনে কর্ম বন্ধন বিরাম।।
অনুবাদঃ হে পার্থ। আমি তোমাকে সাংখ্য যোগের কথা বললাম। এখন ভক্তিযোগ সম্বন্ধিনী বুদ্ধির কথা শ্রবণ কর, যার দ্বারা তুমি কর্মবন্ধন থেকে মুক্ত হতে পারবে।
তাৎপর্যঃ নিরুক্তি বা বৈদিক অভিধান অনুযায়ী সংখ্যা কথাটির অর্থ হচ্ছে, যা কোন কিছুর বিশদ বিবরণ দেয় এবং সাংখ্য বলতে সেই দর্শনকে বোঝায় যা আত্মার স্বরূপ বর্ণনা করে। আর ‘যোগ’ হচ্ছে ইন্দ্রিয়গুলিকে দমন করার পন্থা। অর্জুনের যুদ্ধ না করার কারণ ছিল ইন্দ্রিয়সুখ ভোগের ইচ্ছা। তাঁর পরম কর্তব্যের কথা ভুলে গিয়ে অর্জুন যুদ্ধ করতে নারাজ হলেন, কারণ তিনি মনে করছিলেন , ধৃতরাষ্ট্রের সন্তান এবং অন্যান্য আত্মীয়-স্বজনদের হত্যা করে রাজ্যসুখ ভোগ করার চাইতে অহিংসার পথ অবলম্বন করা অধিকতর সুখদায়ক হবে। উভয়ক্ষেত্রেই অন্তর্নিহিত উদ্দেশ্য ছিল ইন্দ্রিয় সুখ ভোগের ইচ্ছা। আত্মীয়- স্বজনদের পরাজিত করে রাজ্যসুখ ভোগ করা এবং তাদের জীবিত দেখে তাদের সান্নিধ্যে সুখ লাভ করা , এই দুই ক্ষেত্রেই ইন্দ্রিয়ের সুখভোগই হচ্ছে একমাত্র কারণ। এভাবেই অর্জুন তাঁর জ্ঞান ও কর্তব্যবুদ্ধি বিসর্জন দিয়ে এই চিন্তাধারা অবলম্বন করেছিলেন। শ্রীকৃষ্ণ তাই অর্জুনকে বুঝাতে চেয়েছিলেন, তাঁর পিতামহকে হত্যা করলেও, তিনি তাঁর পিতামহের আত্মাকে কখনোই বিনাশ করতে পারবেন না, প্রতিটি জীব ও ভগবান সনাতন ও স্বতন্ত্র। পূর্বেও এরা সকলেই এদের স্বতন্ত্র সত্তা নিয়ে বর্তমান ছিল, বর্তমানেও এরা আছে এবং ভবিষ্যতেও এরা থাকবে। প্রতিটি স্বতন্ত্র জীবের স্বরূপ হচ্ছে তাঁর চিরশাশ্বত আত্মা। বিভিন্ন সময়ে সে ভিন্ন ভিন্ন ধরণের দেহ ধারণ করে, যা হচ্ছে পোশাকের মতো। তাই, জড় দেহের বন্ধন থেকে মুক্ত হবার পরেও জীবের স্বাতন্ত্র্য বর্তমান থাকে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এখানে আত্মা ও দেহ সম্বন্ধে পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে স্পষ্ট ব্যাখ্যা করেছেন। বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গির পরিপ্রেক্ষিতে আত্মা ও দেহ সম্বন্ধে এই বর্ণনামূলক জ্ঞানকে নিরুক্তি অভিধান অনুসারে সাংখ্য নামে অভিহিত করা হয়েছে। এই সাংখ্যের সঙ্গে নিরীশ্বরবাদী কপিলের সাংখ্য-দর্শনের কোন যোগাযোগ নেই। ভন্ড কপিলের সাংখ্য-দর্শনের বহু পূর্বে শ্রীমদ্ভগবতে প্রকৃত সাংখ্য-দর্শনের ব্যাখ্যা করা হয়েছে। ভগবানের অবতার কপিলদেব (ইনি নিরীশ্বরবাদী কপিল নন) তাঁর মাতা দেবহূতিকে এই দর্শনের ব্যাখ্যা করে শোনান। তিনি স্পষ্টভাবে বলেছেন, পুরুষ অথবা পরমেশ্বর ভগবান সক্রিয় এবং প্রকৃতির প্রতি তাঁর দৃষ্টিপাতের ফলে জড় জগতের উদ্ভব হয়। বেদে এবং ভগবদগীতাতেও এই কথা স্বীকৃত হয়েছে। বেদে বলা হয়েছে, ভগবান যখন প্রকৃতির প্রতি দৃষ্টিপাত করেন, তখন তাঁর সেই দৃষ্টিপাতের ফলে প্রকৃতিতে অসংখ্য পারমানবিক আত্মার সঞ্চার হয়। জড়া প্রকৃতিতে এই সমস্ত আত্মা তাদের ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধন করার জন্য আপ্রাণ চেষ্টা করে চলেছে এবং মায়ার প্রভাবের ফলে তারা মনে করছে, তারা ভোক্তা। এই বিকৃত মনোবৃত্তির সবচেয়ে অধঃপতিত অবস্থার প্রকাশ হয়, যখন তারা ভগবানের সঙ্গে এক হয়ে যাবার বাসনায় মুক্তি কামনা করে এবং তার পরিনিতে নিজেদেরই ভগবান বলে জাহির করতে চেষ্টা করে। এটিই হচ্ছে মায়ার সবচেয়ে কঠিন ফাঁদ, কারণ তথাকথিত মুক্তিকামীরা মায়ামুক্ত হতে গিয়ে মায়ার সবচেয়ে জটিল ফাঁদে আটকে যায়। বহু বহু জন্ম এভাবে ইন্দ্রিয়সুখ ভোগ করবার বাসনায় মায়ার দ্বারা ভবসমুদ্রে নাকানি-চোবানি খাবার পর, যখন জীবের অন্তরে শুভ বুদ্ধির উদয় হয়, তখন সে বুঝতে পারে, বাসুদেব বা শ্রীকৃষ্ণের চরণে আত্মসমর্পণ করাই হচ্ছে জীবের চরম উদ্দেশ্য এবং ভবসমুদ্র থেকে উদ্ধার পাবার একমাত্র পথ। তখন সে পরম সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে।
অর্জুন ভগবান শ্রীকৃষ্ণের চরণে আত্মসমর্পণ করে তাঁকে গুরূরূপে গ্রহণ করেছেন- শিষ্যস্তেহহং শাধি ত্বাং প্রপন্নম। ফলস্বরূপ শ্রীকৃষ্ণ এখন তাঁকে ‘বুদ্ধিযোগ’ বা ‘কর্মযোগ’ অথবা নিজের ইন্দ্রিয়তৃপ্তি সাধন করার পরিবর্তে ভগবানের ইন্দ্রিয়-তৃপ্তির জন্য ভক্তিযোগ অনুশীলনের পন্থা বর্ণনা করবেন। এই বুদ্ধিযোগকে দশম অধ্যায়ের দশম শ্লোকে সম্পূর্ণভাবে ব্যাখ্যা করে বলা হয়েছে , ভগবানের সঙ্গে সরাসরি যোগাযোগ স্থাপন, যিনি পরমাত্মারূপে সকলের অন্তরেই বিরাজ করছেন। কিন্তু ভগবদ্ভক্তি ব্যতিত সেই রকম যোগাযোগ স্থাপন হয় না। তাই যিনি ভগবানে অপ্রাকৃত প্রেমভক্তির স্তরে অবস্থিত, পক্ষান্তরে যিনি কৃষ্ণভাবনাময়, তিনিই ভগবানের বিশেষ কৃপায় এই বুদ্ধিযোগের স্তর লাভ করেন। তাই ভগবান বলেছেন যে, যারা প্রীতিপূর্বক ভগবৎ-সেবায় নিয়োজিত, কেবল তাঁদেরই তিনি প্রেমভক্তির শুদ্ধ জ্ঞান প্রদান করবেন। এভাবে ভগবদ্ভক্ত চির-আনন্দময় ভগবানের রাজ্যে তাঁর কাছে পৌঁছাতে পারেন।
এভাবে এই শ্লোকে বুদ্ধিযোগ বলতে ভক্তিযোগকে বুঝানো হয়েছে এবং এখানে সাংখ্য অর্থে নিরীশ্বরবাদী কপিলের ‘সাংখ্য-যোগ’কে বোঝানো হয়নি। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যেসময়ে ভগবদগীতা বলেছিলেন, তখন সেই সাংখ্য যোগের কোন প্রভাব ছিল না, আর তা ছাড়া কপিলের মতো নাস্তিকের কল্পনাপ্রসূত এই ভ্রান্তিবিলাস নিয়ে মাথা ঘামাবার কোন প্রয়োজনই ভগবানের ছিল না। পূর্বেই বলা হয়েছে, ভগবানের অবতার কপিলদের প্রকৃত সাংখ্য শ্রীমদ্ভগবতে ব্যাখ্যা করে গেছেন। কিন্তু এখানে সেই সাংখ্যের কথাও ভগবান বলেন নি। সাংখ্য বলতে এখানে দেহ ও আত্মার পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে বিশ্লেষণের বিবরণের কথা বলা হয়েছে। ভগবান শ্রীকৃষ্ণ এখানে অর্জুনকে আত্মার স্বরূপ সম্বন্ধে বিশদভাবে বর্ণনা করে শোনালেন যাতে তিনি বুদ্ধিযোগ বা ভক্তিযোগের মাহাত্ম্য উপলব্ধি করতে পারেন। সেদিক দিয়ে দেখতে গেলে, ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যে সাংখ্যের কথা বলেছেন এবং শ্রীমদ্ভাগবতে বর্ণিত ভগবান কপিলদেবের সাংখ্যের মধ্যে কোন প্রভেদ নেই, কারণ উভয় সাংখ্যই হচ্ছে ভক্তিযোগ। তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বলেছেন, অল্পবুদ্ধি সম্পন্ন মানুষেরাই কেবল সাংখ্য-যোগ ও ভক্তিযোগকে ভিন্ন বলে মনে করে (সাংখ্যযোগৌ পৃথগ বালাঃ প্রবদন্তি ন পণ্ডিতাঃ)।
নাস্তিক কপিলের যে সাংখ্য-যোগ তার সঙ্গে ভক্তিযোগের অবশ্যই কোন সম্পর্ক নেই, তবুও কিছু বুদ্ধিহীন লোক দাবী করে থাকে, ভগবদগীতায় নাকি নাস্তিক সাংখ্য-যোগের উল্লেখ আছে।
ভগবদগীতার মূল তত্ত্ব এখানে উদঘাটিত হয়েছে। এই শ্লোকের মাধ্যমে আমরা বুঝতে পারি, বুদ্ধিযোগের অর্থ হচ্ছে কৃষ্ণভাবনাময় মগ্ন হয়ে ভগবানের সেবা করা। ভগবানের তৃপ্তিসাধন করার জন্য ভগবদ্ভক্ত যখন বুদ্ধিযোগের মাধ্যমে কর্তব্যকর্ম সম্পাদন করেন, সেই কর্তব্যকর্ম যতই কষ্টকর হোক না কেন, ভগবৎ-ভাবনায় মগ্ন হয়ে থাকার ফলে সে তখন অপ্রাকৃত আনন্দে মগ্ন থাকেন। ভগবানের এই সেবার ফলে অনায়াসে অপ্রাকৃত অনুভূতির আস্বাদ পাওয়া যায় এবং ভগবানের কৃপার ফলে কোন রকম বাহ্যিক প্রচেষ্টা ছাড়াই হৃদয়ে দিব্যজ্ঞানের প্রকাশ হয় এবং এভাবে তিনি মুক্তিলাভ করে পূর্ণতা প্রাপ্ত হন। কৃষ্ণভাবনাময় কর্ম ও সকাম কর্মের মধ্যে যথেষ্ট প্রভেদ রয়েছে, বিশেষ করে পারিবারিক ও জাগতিক সুখলাভের নিমিত্ত ইন্দ্রিয়-তর্পণের বিষয়ে। তাই বুদ্ধিযোগ হচ্ছে অপ্রাকৃত গুণসম্পন্ন কর্ম, যা আমাদের দ্বারা অনুষ্ঠিত হচ্ছে।
৯. পঞ্চম অধ্যায়ঃ কর্মসন্ন্যাস-যোগ
১২. অষ্টম অধ্যায়ঃ অক্ষরব্রক্ষ্ম-যোগ
১৫. একাদশ অধ্যায়ঃ বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ
১৭. ত্রয়োদশ অধ্যায়ঃ প্রকৃতি-পুরুষ-বিবেকযোগ
১৮. চতুর্দশ অধ্যায়ঃ গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ
১৯. পঞ্চদশ অধ্যায়ঃ পুরুষত্তম-যোগ
২০. ষোড়শ অধ্যায়ঃ দৈবাসুর- সম্পদ-বিভাগযোগ
২১. সপ্তদশ অধ্যায়ঃ শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ
২৪. বর্তমান সংস্করণ সম্পর্কে টীকা
শ্রীমদ্ভগভদ গীতা সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ