শ্লোকঃ ৩৪
অকীর্তি চাপি ভূতানি কথয়িষ্যন্তি তেহব্যয়াম।
সম্ভাবিতস্য চাকীর্তির্মরণাদতিরিচ্যতে ।। ৩৪ ।।
অকীর্তিম- কীর্তিহীনতা; চ- এবং; অপি- তা ছাড়া; ভূতানি- সমস্ত লোক; কথয়িষ্যন্তি- বলবে; তে- তোমার সম্পর্কে; অব্যয়াম- চিরকাল; সম্ভাবিতস্য- কোনও মর্যাদাবান লোকের পক্ষে; চ- আরও; অকীর্তিঃ- অসম্মান; মরণাৎ- মৃত্যু অপেক্ষা; অতিরিচ্যতে- অধিক হয়।
গীতার গান
তোমার অকীর্তি লোক নিশ্চয়ই গাহিবে।
বাঁচিয়া মরণ তব বিঘোষিত হবে।।
অনুবাদঃ সমস্ত লোক তোমার কীর্তিহীনতার কথা বলবে এবং যে-কোন মর্যাদাবান লোকের পক্ষেই এই অসম্মান মৃত্যু অপেক্ষাও অধিকতর মন্দ।
তাৎপর্যঃ অর্জুনের বন্ধু ও উপদেষ্টারূপে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ তাঁকে জানিয়ে দিচ্ছেন, যুদ্ধ না করলে তার ফলাফল কি হবে। ভগবান বলেছেন, “অর্জুন! যুদ্ধ শুরু হওয়ার পূর্বেই যদি তুমি যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ কর, তবে সকলে বলবে- তুমি কাপুরুষ। তোমার মতো যশস্বী ও মহানুভব বীরের পক্ষে এই কুখ্যাতির চাইতে মৃত্যুবরণ করা শ্রেয়। তাই, প্রাণরক্ষার জন্য যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করার চাইতে যুদ্ধে প্রাণ ত্যাগ করা অনেক ভাল। তার ফলে, তুমি আমার বন্ধুত্বের মর্যাদা রক্ষা করবে এবং সমাজে তোমার সুনামও অক্ষুণ্ণ থাকবে।“
এভাবেই ভগবান অর্জুনকে বোঝালেন, যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করার চাইতে যুদ্ধক্ষেত্রে প্রাণ ত্যাগ করা অনেক শ্রেয়।
শ্লোকঃ ৩৫
ভয়াদ রণাদুপরতং মংস্যন্তে ত্বাং মহারথাঃ।
যেষাং চ ত্বং বহুমতো ভূত্বা যাস্যসি লাঘবম ।। ৩৫ ।।
ভয়াৎ- ভয়বশত; রণাৎ- রণক্ষেত্র থেকে; উপরতম- নিবৃত্ত; মংস্যন্তে- মনে করবে; ত্বাম- তোমাকে; মহারথাঃ- মহারথীরা; যেষাম- যাদের কাছে; চ- এবং; ত্বম- তুমি; বহুমতঃ- অত্যন্ত সম্মানিত; ভূত্বা- হয়ে; যাস্যসি- প্রাপ্ত হবে; লাঘবম- লঘুতা।
গীতার গান
মহারথ যারা সব নিন্দা যে করিবে।
ভয় পেয়ে ছাড়ে রণ তারা যে বলিবে।।
যাহাদের গণ্যমান্য তুমি যে এখন।
সকলের চক্ষে ছোট হইবে তখন।।
অনুবাদঃ সমস্ত মহারথীরা মনে করবেন যে, তুমি ভয় পেয়ে যুদ্ধক্ষেত্র পরিত্যাগ করেছ এবং তুমি যাদের কাছে সম্মানিত ছিলে, তারাই তোমাকে তুচ্ছতাচ্ছিল্য জ্ঞান করবে।
তাৎপর্যঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনকে তাঁর মতামত ব্যক্ত করে বললেন, “অর্জুন। তুমি মনে করো না যে, দুর্যোধন, কর্ণ আদি রথী-মহারথীরা মনে করবে, তুমি করুণার বশবর্তী হয়ে যুদ্ধ করতে বিমুখ হয়েছ। তারা বলবে, তুমি প্রাণভয়ে ভীত হয়ে যুদ্ধক্ষেত্র থেকে পলায়ন করেছ। ফলে, তোমার প্রতি তাদের যে উচ্চ ধারণা আছে, তা নস্যাৎ হবে।“
শ্লোকঃ ৩৬
অবাচ্যবাদাংশ্চ বহূন বদিষ্যন্তি তবাহিতাঃ।
নিন্দস্তস্তব সামর্থ্যং ততো দুঃখতরং নু কিম ।। ৩৬ ।।
অবাচ্য- অকথ্য; বাদান- বাক্য; চ- এবং; বহূন- বহু; বদিষ্যন্তি- বলবে; তব- তোমার; অহিতাঃ- শত্রুরা; নিন্দস্তঃ- নিন্দা করে; তব- তোমার; সামর্থ্যম- সামর্থ্য; ততঃ- তার চেয়ে; দুঃখতরম- অধিক দুঃখদায়ক; নু- অবশ্য; কিম- আর কি আছে।
গীতার গান
কত গালাগালি দিবে অকথ্য কথন।
ভাবি দেখ তবে হিত কি হবে তখন।।
নিজ নিন্দা শুনি তুমি নীরবে রহিবে।
বল পার্থ সেই নিন্দা কেমনে সহিবে।।
অনুবাদঃ তোমার শত্রুরা তোমার সামর্থ্যের নিন্দা করে বহু অকথ্য কথা বলিবে। তার চেয়ে অধিকতর দুঃখদায়ক তোমার পক্ষে আর কি হতে পারে?
তাৎপর্যঃ ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের অভাবনীয় হৃদয়-দৌর্বল্য দেখে আশ্চর্যান্বিত হয়েছিলেন এবং বলেছিলেন, এই ধরনের মনোভাব কেবল অনার্যদেই শোভা পায়। অর্জুনের মতো ক্ষত্রিয় বীরের পক্ষে তা সম্পূর্ণ অসঙ্গত। তাই তিনি বিশদভাবে ব্যাখ্যা করে অর্জুনকে বোঝালেন, অর্জুনের মতো ক্ষত্রিয়ের হৃদয়ে এই অনার্যচিত দৌর্বল্যের কোন স্থান নেই।
৯. পঞ্চম অধ্যায়ঃ কর্মসন্ন্যাস-যোগ
১২. অষ্টম অধ্যায়ঃ অক্ষরব্রক্ষ্ম-যোগ
১৫. একাদশ অধ্যায়ঃ বিশ্বরূপ-দর্শন-যোগ
১৭. ত্রয়োদশ অধ্যায়ঃ প্রকৃতি-পুরুষ-বিবেকযোগ
১৮. চতুর্দশ অধ্যায়ঃ গুণত্রয়-বিভাগ-যোগ
১৯. পঞ্চদশ অধ্যায়ঃ পুরুষত্তম-যোগ
২০. ষোড়শ অধ্যায়ঃ দৈবাসুর- সম্পদ-বিভাগযোগ
২১. সপ্তদশ অধ্যায়ঃ শ্রদ্ধাত্রয়-বিভাগ-যোগ
২৪. বর্তমান সংস্করণ সম্পর্কে টীকা
শ্রীমদ্ভগভদ গীতা সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ