এক অদ্ভুত চ্যালেঞ্জের মুখে পড়লাম। এমন চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ার বিচিত্র অভিজ্ঞতা এই প্রথম। রেজেস্ট্রি ডাকে চিঠিটি পাঠিয়েছেন শ্রীসত্যসাইবাবার চরণাশ্রিত ‘শিক্ষা আশ্রম ইন্টারন্যাশনাল’-এর ভাইসচেন্সেলারের সেক্রেটারী অগ্নিকা বসাক। প্যাডের কোনায় লেখা Ref. No. 710 / 88. 10th April 1988. চিঠিটি এখানে তুলে দিলাম-

মহাশয়,

৩০ শে মার্চ ৫ই এপ্রিল ১৯৮৮-এর সংখ্যায় ‘পরিবর্তন’-এ আপনার (অ)লৌকিক অভিজ্ঞতার কথা পড়ে আমাদেরও অভিজ্ঞতা হোল।

আমাদের আশ্রমের উপাচার্য শ্রী বিভাস বসাকের নির্দেশক্রমে এক (অ) সত্য ঘটনা আপনাকে জানানো যাইতেছে, ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে পরীক্ষা করা আপনার ইচ্ছাধীন। উনার কাছে শ্রীসত্যসাঁইবাবার সৃষ্টি করা কিছু বিভূতি (ছাই) আছে যে কেউ রবিবার সকাল ৯টা থেকে ১১টা পর্যন্ত আসতে পারে পরীক্ষা করার জন্য। সম্পূর্ণ খালি পেটে আসতে হবে- সঙ্গে একজন মাত্র দর্শক বা সাক্ষী থাকতে পারে।

বিভূতি জলে গুলে খাইয়ে দেওয়া হবে। সন্দেহ নিবারণের জন্য গোলা বিভূতি- খানিকটা অংশ উনি নিজেই খেয়ে নেবেন। খাবার তিন দিন পরে কম করে ৬টি, বেশী ১১টা স্বর্ণমুদ্রা পাকস্থলী বা অন্ননালীর কোন অংশে নিজেই সৃষ্টি হবে। চতুর্থ দিনে কোন সুযোগ্য Surgenকে দিয়ে operation করে বের করা যাবে, বা প্রত্যেকদিন পায়খানা পরীক্ষা করতে হবে ৩০ দিন পর্যন্ত। ঐ সময়ের মধ্যে ২৫ নঃ পঃ আকৃতিতে স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া যাবে।

দক্ষিণা—৫০০ পশ্চিমবঙ্গ মুখ্যমন্ত্রীর তহবিলে স্বেচ্ছাদান করে রসিদ সঙ্গে আনতে হবে। বিভূতি খাওয়ানো উপাচার্যের ইচ্ছাধীন। পত্রে আলাপ করে পরীক্ষার দিন ধার্য করতে পারেন। আপনি নিজে পরীক্ষা করে সন্তুষ্ট হলেই প্রচার করবেন, নতুবা নয়।’

চিঠিটা আমাদের সমিতির অনেকেই পড়ে সাঁইবাবার নামের সঙ্গে জড়িত এমন একটা প্রতিষ্ঠানকে কোণঠাসা করার সুযোগ পেয়ে উত্তেজিত হলেন। তাঁরা চাইলেন আমি বিভূতি খেয়ে ওঁদের বুজরুকির ভাণ্ডাফোড় করি। কিন্তু আমার মনে হল—আপাতদৃষ্টিতে উপাচার্যের চ্যালেঞ্জটা যতটা বোকাবোকা ও নিরীহ মনে হচ্ছে, বাস্তব চিত্র ঠিক তার বিপরীত। এই নিরীহ চ্যালেঞ্জের মধ্যেই লুকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর রকমের বিপজ্জনক হয়ে ওঠার সমস্ত রকম সম্ভাবনা।

‘শিক্ষা আশ্রম ইন্টারন্যাশনাল’-এর উপাচার্যকে আগস্টের শেষ সপ্তাহে চিঠি পাঠিয়ে জানালা—

আপনি যে অলৌকিক একটি বিষয় নিয়ে আমাকে সত্যানুসন্ধানের সুযোগ দিচ্ছেন তার জন্য ধন্যবাদ। এই অলৌকিক ঘটনা প্রমাণিত হলে সাঁইবাবার অলৌকিক ক্ষমতাও প্রমাণিত হবে। কিন্তু পাশাপাশি এও সত্যি—আপনি ব্যর্থ হলে ব্যর্থতার দায় বর্তাবে কেবলমাত্র আপনার উপর। আপনি কৃতকার্য হলে সাফল্যের ক্রিমটুকু খাবেন সাঁইবাবা। এই ব্যাপারটা আমাদের পছন্দ নয়। আপনার ব্যর্থতার দায় সাঁইবাবা নেবেন কি না, জানতে উৎসুক হয়ে রইলাম। সাঁইবাবার নির্দেশমতো বা জ্ঞাতসারেই এই চ্যালেঞ্জ আপনি করেছেন—এটা ধরে নিতেই পারি। কারণ তাঁকে না জানিয়ে তাঁর সম্মান নিয়ে চ্যালেঞ্জ জানানোর দুঃসাহস নিশ্চয়ই আপনার হত না। এমন অবস্থায় পরবর্তী পর্বে লিখিতভাবে জানিয়ে দেবেন, এই চ্যালেঞ্জ সাঁইবাবার নির্দেশ অনুসারে/জ্ঞাতসারে হচ্ছে।

বিভূতিতে বিষ নেই—নিশ্চিত করতে খানিকটা বিভূতি খাবেন জানিয়েছেন। সন্দেহ নিরসনের জন্য আপনার এই সৎ চেষ্টাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছি। কিন্তু তার পরও যুক্তির খাতিরে বলতেই হচ্ছে—এতে সন্দেহ নিরসন হয় না। কারণ প্রায় সমস্ত বিষেরই প্রতিষেধক বিজ্ঞানের জানা। যুক্তির খাতিরে আমরা যদি ধরে নিই, আপনি বিভূতিতে বিষ মেশাবেন, তবে বিষটির প্রতিষেধক আপনার জানার সুযোগ থাকছে। এই অবস্থায় আপনি বিষক্রিয়া বন্ধ করতে প্রতিষেধক ব্যবহারের সুযোগ পাচ্ছেন। আমি আজানা বিষ খেয়ে ফেললে মৃত্যুই অনিবার্য হয়ে উঠবে। তিন দিনের মধ্যে আমি মারা গেলে পেটে সোনার টাকা তৈরি হওয়ার প্রশ্নই থাকবে না।

এই মৃত্যুর জন্য আপনাকে দায়ী বলে নিশ্চিতভাবে প্রমাণ করা সম্ভব নয়। কারণ আমি যে বিভূতি খেয়েই মারা গেছি—তার প্রমাণ কী ? আমি যে মৃত্যুর আগে অন্য কিছু খাওয়ার সময় বিষ গ্রহণ করিনি, তার প্রমাণ কী? খাবারে বিষ মিশে যেতে পারে, কেউ শত্রুতা করে বিষ খাওয়াতে পারে, এমনকি নিজেই কোনও কারণে বিষ খেতে পারি।

এই অবস্থায় আপনার আন্তরিক প্রচেষ্টাকে সার্থক করে তুলতে কয়েকটি সুনির্দিষ্ট প্রস্তাব রাখছিঃ-

১) যে কোন প্রাণীকে বিভূতি খাইয়েই যদি তিন দিন পরে পেটে সোনার টাকা তৈরি করে অলৌকিকত্ব প্রমাণ করা যায়, তবে আমাকে নিয়ে আর টানাটানি কেন? পরীক্ষার জন্য ছাগল টাগল কিছুকে বেছে নেওয়া যেতে পারে।

২) ছাগলটিকে আগের রাতেই আপনার আশ্রমে নিয়ে আসব আমরা। উদ্দেশ্য বিভূতি খাওয়ার আগে পর্যন্ত ছাগলটি যে সম্পূর্ণ খালি পেটে আছে, সে বিষয়ে নিশ্চিন্ত করা।

৩) সঙ্গে নিয়ে আসবো পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর ত্রাণ তহবিলে জমা দেওয়া ৫০০ টাকার রসিদ।

৪) ছাগলটিকে বিভূতি খাওয়াবার পর ছাগলটি আমাদের, আপনাদের ও ইচ্ছুক সাংবাদিকদের পাহারায় থাকবে। উদ্দেশ্য—আপনারা যাতে কোনওভাবে ছাগলটিকে স্বর্ণমুদ্রা খাওয়াতে না পারেন ।

৫) ছাগলটিকে বটপাতা, কাঁঠালপাতা জাতীয় খাবার খাওয়ানো হবে। খাবারের জোগান দেবেন আপনারা। উদ্দেশ্য যাতে খাদ্যে বিষক্রিয়ায় মারা গেলে আপনাদেরকে দায়ী হিসেবে চিহ্নিত করা যায়।

৬) তিন দিন পর ছাগলটির পেটে এক্স-রে দেখা হবে সোনার টাকা তৈরি হয়েছে কি না ৭) টাকা তৈরি হলে সাঁইবিভূতির অলৌকিক ক্ষমতা প্রমাণিত হবে। আমি পরাজয় মেনে নিয়ে আপনার হাতে প্রণামী হিসেবে তুলে দেব পঞ্চাশ হাজার টাকা ।

৮) ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি এই অলৌকিক দেখার পর সঙ্গত কারণেই আর অলৌকিকত্বের বিরোধিতা না করে সত্য প্রচার করবে এবং আমাদের সমিতির সদস্যরা প্রত্যেকে সাঁইবাবার কাছে দীক্ষা নেবে।

আপনার তরফ থেকে পেটে টাকা তৈরির বিষয়ে অন্য কোনও গভীর পরিকল্পনা না থাকলে, এবং বাস্তবিকই বিভূতির অলৌকিক ক্ষমতায় আপনি প্রত্যয়ী হলে আমার এই প্রস্তাবগুলো নিশ্চয়ই করবেন। প্রস্তাব গৃহীত হওয়ার পর আমরা ডিসেম্বরের দ্বিতীয় সপ্তাহে একটি প্রেস কনফারেন্স করে বিষয়টা সাংবাদিকদের জানাব। তারপর জানুয়ারির প্রথম সপ্তাহে আমরা পরীক্ষার দিন ধার্য করে সাংবাদিকদেরও এই সত্যানুসন্ধানে অংশ নিতে আহ্বান জানাব ।

এই পরীক্ষায় আপনি কৃতকার্য হলে তা আমার পরাজয় হবে না; হবে সত্যকে খুঁজে পাওয়া। আপনার ইতিবাচক চিঠির প্রত্যাশায় রইলাম।

উত্তর পেলাম সেপ্টেম্বরে। অগ্নিকা উপাচার্যের পক্ষে আমাকে জানালেন—আপনার অমানবিক চিঠিটা পেয়েছি। আপনি শুধু অমানবিকই নন, ভীতু। আপনি নিজে প্রাণভয়ে ভীত হয়ে মৃত্যুর ঝুঁকির দিকে ঠেলে দিতে চাইছেন অবলা, নিরীহ একটি প্রাণীকে। একটি ছাগল বা মুরগির প্রাণ কি প্রাণ নয়? তাদের প্রাণ কি মানুষের প্রাণের চেয়ে কম মূল্যবান? আপনার ভয়ংকর নিষ্ঠুরতা আমাদের ব্যথিত করেছে।

অলৌকিকতার প্রমাণ চাইতে হলে আপনাকেই বিভূতি খেতে হবে। আপনার কোনও পরিবর্ত চলবে না। আপনি এতে রাজি থাকলে প্রেস কনফারেন্সে হাজির থাকতে আমরা রাজি। ১১ ডিসেম্বর ১৯৮৮ রবিবার প্রেস কনফারেন্স করব ঠিক হলো। প্রেস কনফারেন্স প্রেস ক্লাবে না করে ময়দান টেন্টে করব ঠিক করলাম। ময়দান টেন্টটা ডাঃ কিরণকুমার শীলের। উনি কিছু দিন ধরে আমাদের সমিতিকে ব্যবহারের জন্য তাঁবুটা দিতে চাইছিলেন। ঠিক হল, সেদিন-ই তাঁবুর একটি প্রতীক চাবি ডাঃ শীল আমাদের সমিতিকে তুলে দেবেন।

প্রেস কনফারেন্সকে নিরপেক্ষ ও সার্থক করে তুলতে প্রতিষ্ঠিত কয়েকজন পদার্থ-বিজ্ঞানী, রসায়ন-বিজ্ঞানী ও শল্যচিকিৎসকের সহযোগিতা প্রার্থনা করলাম। প্রত্যেকেই প্রেস কনফারেন্সে হাজির থেকে সহযোগিতা করবেন, কথা দিলেন। স্পটেই বিভূতি পরীক্ষা করার ব্যবস্থা হল । এ-বার উপাচার্যকে চিঠি দিয়ে জানালাম, নিরপেক্ষভাবে বিভূতির অলৌকিক ক্ষমতার পরীক্ষা নেওয়ার ব্যবস্থার প্রথম ধাপ হিসেবে কি কি করেছি। আরও জানালাম, (১) কনফারেন্সের দিন বিভূতি খাওয়ার শর্ত মেনে সকাল থেকেই খালি পেটে থাকব। সত্যি খালি পেটে আছি কি না যাচাই করতে উপাচার্য প্রতিনিধি পাঠাতে পারেন। (২) যে বিভূতি আমাকে খেতে হবে, তা তুলে দেওয়া হবে পরীক্ষার জন্য। পরীক্ষার ব্যবস্থা স্পটেই থাকবে। পরীক্ষায় যদি নিশ্চিত হওয়া যায় বিষ নেই বা এমন কিছু বিভূতিতে নেই যা খেলে শরীরে বড় ধরনের প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে, তবে প্রকাশ্যেই তা খাব। (৩) সেদিন থেকে তিন দিন আমি আপনার প্রতিনিধিদের নজরের সামনেই থাকব, যাতে শরীরে তৈরি একটি টাকাও কোনওভাবেই শরীর থেকে বের করে পাচার না করতে পারি। মাত্র তিনটে দিন পরেই সত্য প্রকাশিত হবে। অতএব আপনার শর্ত মেনে নিয়ে কোনও পরিবর্ত হাজির না করে হাজির থাকব। আপনি? এরপর সাংবাদিক সম্মেলনে যে কোনও একপক্ষের অনুপস্থিতি পরাজয় হিসেবেই গণ্য হবে; অজুহাত যাই হোক না কেন।

৯ ডিসেম্বর ‘আজকাল’-এ এবং ১০ ডিসেম্বর ‘গণশক্তি’-তে প্রকাশিত হল ১১ ডিসেম্বর ময়দানে হতে যাওয়া লড়াইয়ের খবর।

এসে গেল ১১ ডিসেম্বর। The Telegraph পত্রিকার প্রধাম পৃষ্ঠার ছাপায় চার কলম জুড়ে (পত্রিকার পরিভাষায় একে বলে anchor story, যা অতি গুরুত্বপূর্ণ) আমার ছবি কনফারেন্সের খবরটি ছাপা হলো। খবরটি শিরোনাম ছিল ‘Calcuttan to take on Satya Sai Baba’.

১১ ডিসেম্বর এসে গেল। সকাল হওয়ার আগেই তাঁবুতে জায়গা নিয়েছি। দুপুর থেকে তাবু লনে পড়েছে কয়েকশো চেয়ার। বিকেলে প্রেস কনফারেন্স শুরু হওয়ার অনেক আগে থেকেই হাজির কয়েকশ উৎসাহী জনতা। প্রেস কনফারেন্স শুরু হওয়ার অনেক আগেই প্রতিটি পত্র-পত্রিকা ও প্রচার-মাধ্যমের প্রতিনিধিরা টেন্ট ভরিয়েছেন। খবর শুনে এসেছেন দিল্লি, বম্বে, মাদ্রাজের বিভিন্ন পত্র-পত্রিকার সাংবাদিক। চারটেতে প্রেস কনফারেন্স শুরু করার কথা। তাই শুরু হলো। তবে তখনও উপাচার্য, তাঁর সচিব বা কোনও প্রতিনিধির দেখা নেই। মাইকে বার কয়েক আহ্বান জানানো হল, তাঁরা থাকলে যেন এগিয়ে আসেন। এগিয়ে এলেন না। সাঁইবাবার বিভূতি লীলার মতোই এও এক লীলা। নিজের বিভূতির গপ্পো প্রচার, চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দেওয়া এবং চ্যালেঞ্জ গৃহীত হওয়ার পর আপন খেয়ালে নিজেকে গুটিয়ে নেওয়া। পুরাণের কুর্ম অবতার চরিত্রটি সাঁইবাবার সম্ভবত সবচেয়ে পছন্দসই। তাই সাঁই অবতারের মধ্যেও বিপদে খোলসে মুখ লুকোবার প্রবণতা আমরা দেখতে পাচ্ছি।

সাংবাদিক ও দর্শকদের অবশ্য একঘেয়েমির কোনও অবকাশ ছিল না। ভাইস চ্যান্সেলারের সঙ্গে আমার পত্র-বিনিময়ের প্রতিলিপি তুলে দেওয়া হল সাংবাদিকদের হাতে। পরিচয় করিয়ে দেওয়া হল বিভূতি বিশ্লেষণের দায়িত্বে থাকা বিজ্ঞানীদের সঙ্গে ও আমার পেটে অপারেশনের দায়িত্ব নেওয়া চিকিৎসকদের সঙ্গে। তারপরই চ্যালেঞ্জের বিষয়টা দর্শকদের উদ্দেশে জানিয়ে ভাইস চ্যান্সেলারের প্রতিক্ষায় চুপচাপ বসে না থেকে আমরা দেখতে শুরু করলাম নানা অলৌকিক ঘটনা; তবে লৌকিক উপায়ে। সাঁইবাবার শূন্য থেকে বিভূতি আনা, ছবি থেকে মধু ও বিভূতি

ঝড়ানো, শূন্য থেকে লাড্ডু, প্যাড়া, শিবলিঙ্গ আনা—এমনি নানা ঘটনা।

উত্তেজনা হল, হাততালি হল, হল অনেক কিছুই; কিন্তু যা হল না তা হল সাঁইবিভূতির অক্ষমতা হাতে-নাতে প্রমাণ করা। তবে সেদিন প্রকাশ্যে ঘোষণা রেখেছিলাম—সাঁইভক্ত উপাচার্য আমার কাছে যে চ্যালেঞ্জ হাজির করেছিলেন, তা ছিল শাঁখের করাত। চ্যালেঞ্জ নিলে মৃত্যু। না নিলে পরাজয়। বিভূতি পরীক্ষার ব্যবস্থা করতেই সাঁইভক্তদের পিছিয়ে যাওয়া এই ধারণাকেই দৃঢ়বদ্ধ করে। এঁদের আড়ালের অবতারটিকে অর্থাৎ স্বয়ং সাঁইবাবাকে এবার পাল্টা চ্যালেঞ্জ জানাচ্ছি আমরা। প্রকাশ্যে নিরপেক্ষ স্থানে আপনার যে কোনও তথাকথিত অলৌকিক ক্ষমতা দেখাবার চেষ্টা করুন, আমরা প্রমাণ করে দেবই—যা দেখালেন তা অলৌকিক ক্ষমতা নয়, বুজরুকি।

১৯৮৪-র মার্চ-এপ্রিল-মে মাসে পরপর তিনটে চিঠি দিয়েছিলাম সাঁইবাবাকে। তাঁর বিভূতি সৃষ্টির ক্ষমতা বিষয়ে সত্যানুসন্ধান চালাবার অনুমতি ও সহযোগিতা প্রার্থনা করেছিলাম। তিনি পরিবর্তে যে চ্যালেঞ্জ শিক্ষা আশ্রম ইন্টারন্যাশনাল-এর উপাচার্যের মাধ্যমে ছুড়েছিলেন—তাই আজ বুমেরাং হয়ে ফিরে গেছে।

পরের দিন শুধু কলকাতা থেকে প্রকাশিত পত্রিকাগুলোতে নয়, তামাম ভারতের বহু পত্রিকাতেই বিশাল গুরুত্বের সঙ্গে খবরটি প্রকাশিত হয়েছিল। অনেক পত্রিকাতেই খবরের সঙ্গে ছিল ছবি। সঙ্গে আরও দুটি চ্যালেঞ্জের খবরও প্রকাশিত হয়েছিল। সেই দুটিও ওই প্রেস কনফারেন্সেই হওয়ার কথা ছিল হয়নি। উপাচার্যের মতই আমাকে চ্যালেঞ্জ জানিয়েছিলেন এক জ্যোতিষী নরেন্দ্র মাহাতো এবং আমরা চ্যালেঞ্জ জানিয়ে ছিলাম সেই সময়কার বিশাল আলোড়ন সৃষ্টিকারী ডাইনি সম্রাজ্ঞী ঈপ্সিতা রায়চক্রবর্তীকে। দু-জনেই বে-হাজির ছিলেন। সরাসরি পরাজয় থেকে বে-হাজিরা থাকা অনেক বুদ্ধিমানের কাজ বিবেচনায় বে-হাজির ছিলেন কি না, এটা অবশ্য জেনে ওঠা হয়নি। তবে এমন সম্ভাবনাই প্রবল ।

নরেন্দ্র ও ঈপ্সিতার মত দুই কীর্তিমান ও কীর্তিমতির কথা এই বইতে টনলাম না, ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ গ্রন্থে এই বিষয়ে লেখা হয়েছে বলে।

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!