আজকের শহর জীবনে পরিবর্তন ঘটে যাচ্ছে লক্ষ্যণীয়ভাবে। শহরের বস্তি এলাকার পরিবর্তন গতি প্রায় স্থির। মধ্য-মধ্যবিত্ত, উচ্চ-মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তদের সাংস্কৃতিক চেতনা পাল্টে যাচ্ছে দ্রুত। অর্থাৎ মূল্যবোধ পাল্টে যাচ্ছে। সমাজে যত জটিলতা দেখা দিচ্ছে, ততই চিন্তায় জটিলতা বাড়ছে। শিশু থেকে বৃদ্ধদের নিয়ে নানা মানসিক সমস্যা তৈরি হচ্ছে। সমস্যা আছে মানে, সমাধানও আছে। সমাধান আপনার-ই হাতে। অথবা সমস্যা সমাধানের জন্য বিশেষজ্ঞ মনোবিদ্, কাউন্সেলারের সাহায্য নিন নির্দ্বিধায় ।
আমাদের কুশিক্ষা, আমাদের ভুল জানা, আমাদের অশিক্ষা এই অবস্থার জন্য দায়ি ।
আমরা প্রিয়জনকে মনোবিদের কাছে নিয়ে যেতে চাই না।
নিয়ে গেলেও বিষয়টা গোপন রাখি। এ এক অদ্ভুত
বোকা-অহং বোধ, বোকা জড়তা।
পাশ্চাত্যের অবস্থাটা উল্টো। ওঁরা নিজেরা যখনই মনে করে মনোবিদের সাহায্য নিলে ভালো হয়, তখন-ই সাহায্য নেন।
আমরা কেন পিছিয়ে থাকবো। অগ্রগমণ-ই সভ্যতা।
মস্তিষ্ককে শতায়ু করতে ঘুমের ভূমিকা বিশাল
মস্তিষ্ককে দীর্ঘকালের জন্য কর্মশীল ও চিন্তাশীল রাখতে যথেষ্ট ঘুমের প্রয়োজন। ঘুম নিয়ে বিজ্ঞান যতটা এগিয়েছে আমাদের শিক্ষিতদের জ্ঞান ততটাই পিছিয়ে আছে।
একজন সুস্থ পূর্ণবয়স্ক মানুষের দিনে গড়ে ৮ ঘণ্টা ঘুমের প্রয়োজন। এই ঘুম রাতে একটানা হতে হবে, এমন নয়। রাতে ৬ ঘণ্টা, দুপুরে ২ ঘণ্টা হলে কোনও ক্ষতি বৃদ্ধি নেই।
কিছু প্রচলিত ধারণা চালু আছে, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী ২৪ ঘণ্টায় ৪-৫ ঘণ্টা ঘুমোতেন। আমেরিকার প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি রুজভেল্ট ১২ ঘণ্টা ঘুমোতেন। আবার চার্চিল সুযোগ পেলেই যেখানে সেখানে ১৫-২০ মিনিট ঘুমিয়ে নিতেন।
শ্রীমতি গান্ধী নাকি প্রতিদিন শবাসনে রিলাক্সেশন নিতেন। এই রিলাক্সেশন এক বা দু-বারে ঘণ্টা দু’য়ের জন্য নাকি হতো। রিলাকসেশন আধা ঘুম, আধা জাগরণের-ই একটা অবস্থা। এই অবস্থায় স্নায়ুকোষের বড় অংশই বিশ্রাম পায়। ‘বড়অংশ’ বলার কারণ তখনও কিছু মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষ জেগে থাকে বলেই আমরা ঘুমের মধ্যে মল বা মূত্র ত্যাগ করে ফেলি না। জোরে ডাকলে শুনতে পাই এবং ঘুম ভাঙে।
প্রচুর শারীরিক পরিশ্রম যাঁরা করেন, তাঁরা শুলেই ঘুমিয়ে পড়েন, এমন একটা প্রচলিত ধারণা আছে। কিন্তু যাঁরা একই সঙ্গে প্রচুর শারীরিক ও মানসিক শ্রম করেন, তাঁরা শুলেই ঘুমিয়ে পড়বেন, এই তত্ত্ব খাটে না। কিছু দেশনেতারা এর প্রমাণ। তাঁরা দিনে দপ্তর সামলাচ্ছেন, দিন থেকে রাত—প্রকল্প উদবোধন, শিল্পপতিদের সঙ্গে মিটিং, নানা অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দিয়ে বেড়াচ্ছেন। কখনও রাত দুপুরে মন্ত্রী সভার মিটিংয়ে যোগ দিচ্ছেন। মিটিং ভোর অবধি চলছে। বিদেশ যেতে হচ্ছে হরদম। রাত দশটায় প্লেনে উঠলেন। ১০ ঘণ্টার পথ। সকাল ৮ টায় পৌছবার কথা। পৌঁছলেন যখন, তখন স্থানীয় সময় রাত ১১টা। মন্ত্রীর হিসেব গেল গোলমাল হয়ে। এর ফলে তাঁদের ‘বায়োলজিক্যাল ক্লক’ যায় বিগড়ে। ফলে ভালো ঘুম হয় না, কোষ্ঠকাঠিন্য দেখা দেয়। শরীরে নানা অস্বস্তি দেখা দেয় ।
অনেকের আবার দুপুরে পেট ভরে ভাত খাওয়ার পর ঘুম পায়। কার্য-কারণ সম্পর্ক অবশ্য একটা আছে-ভাতের সঙ্গে ঘুমের। ভাতে রয়েছে প্রায় শতকরা ৭৫ ভাগ কার্বোহাইড্রেট। হজমের সময় এই কার্বোহাইড্রেটের কিছুটা অংশ গেঁজে ওঠে। ফলে কিছুটা পরিমাণে ইথাইল অ্যালকোহল তৈরি হয়। ঘুম পায় ৷ পান্তাভাত গেঁজে ওঠে বেশি। খেলে ঘুম পায়ও বেশি।
ভাতঘুম কাটাতে ও রাতে ভালো ঘুম আনতে দুপুরে ভাত খাওয়া বন্ধ করুন। রাতে ভাত খাওয়া চালু করুন।
অনেকের আবার মদ না খেলে ঘুম আসে না। ভালো ঘুম, ভালো মেজাজ ও সারা দিনের শ্রম ঝেড়ে ফেলতে এক থেকে দু পেগ মদ্যপান চলতে পারে। মাত্রা ছাড়ালে পরদিন সকালেও মাথা ধরা, মাথা ভার থাকবে, যাকে বলে ‘হ্যাং ওভার’।
গ্রীষ্মপ্রধান অঞ্চলের অধিবাসী হলে রাতে শোবার আগে আরাম করে স্নান করুন। শীতের রাতেও সামান্য গরম জলে স্নান করে নিন। ভালো ঘুমে সাহায্য করবে।
হালকা আলো অথবা অন্ধকার, আরামদায়ক বিছানা, সুন্দর হালকা গন্ধ, লো ভলিউমে রাগ সংগীতে সেতার-সরোদের মতো বাজনা শোনা—এসবই ঘুম আনার ভালো অনুসঙ্গ হতে পারে।
অনেক সময়ই শারীরিক মিলন উপভোগ্য ও আনন্দময় হলে দু’জনেই উত্তেজনা শেষের আবেশ ও ক্লান্তিতে দ্রুত সুখ-নিন্দা দেন।
অভাবনীয়ভাবে এসে পড়া বিপদ, ভয়, দুশ্চিন্তা, প্রিয়জনের অকালমৃত্যুর শোক, হঠাৎ চাকরি যাওয়া, ব্যবসায় বিশাল ক্ষতি, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার সময় গ্রাস করা সম্প্রদায়গত ভয়, নানা ধরনের শারীরিক অসুখে, মানসিক অসুখে, মেনোপজের পর, অথবা পড়াশুনোর চাপ স্বাভাবিক ঘুম কেড়ে নিতে পারে বিঘ্ন।
অফিসের চিন্তা বা নোংরা চিন্তা বিছানায় শুয়ে করবেন না। তাতে ঘুমে ঘটবেই। ঘুম দেয় মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষকে বিশ্রাম, যে বিশ্রাম দীর্ঘকাল কর্মক্ষম রাখার জন্য অত্যন্ত প্রয়োজন। বিছানায় শুয়ে আছেন অনেকক্ষণ। ঘুম আসছে না। টেপ চালিয়ে লো ভল্যুমে গান শুনুন, বই পড়ুন। ঘুম আসবে, প্রয়োজনে ঘুম আনতে ঘুমের ওষুধ নিন। ঘুমহীন থাকার চেয়ে ঘুমের ওষুধ নিয়ে ঘুম অনেক ভালো। তবে ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া ঘুমের ওষুধ খাবেন না। হিপনোটিক গ্রুপের ড্রাগ, ট্রাঙ্কুইলাইজার অ্যান্টিহিস্টামিনিক ইত্যাদি গ্রুপের ড্রাগ খেলেও ঘুম আসে। কোন্ ড্রাগ নিলে আপনি পার্শ্বপ্রতিক্রিয়ার শিকার হবেন না, তা আপনার নিজস্ব বা পারিবারিক ডাক্তারের কাছ থেকে জেনে নিন।
মস্তিষ্কের পিনিয়াল গ্রন্থি থেকে মেলাটোনিন নামের হরমোন নিঃসরণ করে, যা ঘুম আনতে সাহায্য করে। বয়স যতই বাড়তে থাকে, ততই মেলাটোনিনের নিঃসরণ কমতে থাকে। এই নিঃসরণ আবার বাড়াতে বাজারে পাওয়া যায় ‘মেলাটোনিন ট্যাবলেট।’ পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াহীন এই ওষুধ পাশ্চাত্যের বাজারে ডাক্তারের প্রেসক্রিপসন ছাড়াই বিক্রি হয়। স্মৃতিকে দীর্ঘজীবী করতে মস্তিষ্ককে প্রয়োজনীয় বিশ্রাম দিন ঘুমিয়ে।
প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ
অধ্যায়ঃ এক
♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?
অধ্যায়ঃ তিন
♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়
অধ্যায়ঃ নয়
♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?
অধ্যায়ঃ বারো
♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি
অধ্যায়ঃ তেরো
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
অধ্যায়ঃ পনেরো
♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে
দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ ‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !
অধ্যায়ঃ সাত
♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ
অধ্যায়ঃ আট
♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক
অধ্যায়ঃ নয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’
অধ্যায়ঃ এগারো
“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ