হ্যাঁ, বলান যায়, নার্কো টেস্টের মতোই কথা বলান যায়। তবে মনে রাখতে হবে—সম্মোহিত ব্যক্তি সহযোগিতা করে বলেই সম্মোহন করা যায়। সহযোগিতা না পেলে সম্মোহন করা অসম্ভব। কেউ একমনে সাজেশন না শুনলে সে সম্মোহিত হবে না ।

নার্কো টেস্টের বেলায় ওষুধ শরীরে ইনজেক্ট করা হয়। ফলে আচ্ছন্ন অবস্থায় আনার জন্য ওষুধের মাত্রা প্রয়োজনে বাড়িয়ে দেওয়া হয়।

সম্মোহন করে যাকে কথা বলাতে চাই, প্রয়োজনে তাকে মানসিকভাবে দুর্বল করেও সম্মোহন করা যেতে পারে। এ বিষয়ে ‘পর্ব : চার’-এ বিস্তৃত আলোচনা করেছি।

অনেক তাত্ত্বিক আলোচনার পরিবর্তে বরং একটা ঘটনার উল্লেখ করছি।

এগারো বছরের ঝঝকে চোখের চট্টপটে ছেলে অমিতকে (প্রয়োজনের তাগিদে নামটা পাল্টালাম) ঘিরে ৬ মার্চ ১৯৮৯ থেকে ঘটে চলেছিল কতকগুলো অদ্ভুত ভুতুড়ে ঘটনা ৷

অমিত গুপ্ত কলকাতার এক অতি বিখ্যাত স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। থাকে উত্তর কলকাতায়। কয়েক পুরুষ ধরে কলকাতাবাসী। নিজেদের বাড়ি। বনেদী পরিবার। বাপ- ঠাকুরদার খেলার সাজ-সরঞ্জামের ব্যবসা। এক নামে খেলার জগতের সকলেই দোকান ও দোকানের মালিককে চেনেন।

অমিতকে ঘিরে ভুতুড়ে রহস্যের কাণ্ডটা জানতে পারি ১৫ মার্চ। ‘আজকাল’ পত্রিকার দপ্তরে গিয়েছিলাম। যেতেই আমার হাতে একটা চিঠি তুলে দিলেন পূষণ গুপ্ত। চিঠিটাই এখানে তুলে দিচ্ছি।

 

শ্রী অশোক দাশগুপ্ত সমীপেষু,

সম্পাদক, আজকাল পত্রিকা,

সবিনয় নিবেদন,

আমার পুত্র… (নামটা দিলাম না)… স্কুলের পঞ্চম শ্রেণির ছাত্র। তাকে কেন্দ্র করে কিছু অলৌকিক (?) কাণ্ড ঘটে চলেছে—যা আমার স্ত্রীর বয়ানে লিপিবদ্ধ। বয়ানটি আপনার দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য সঙ্গে দিলাম। ঘটনাগুলোকে আমার যুক্তিবাদী মন মেনে নিতে পারছে না। আবার তাকে অস্বীকার করে সত্য প্রতিষ্ঠা করাও আমার পক্ষে সম্ভব হচ্ছে না। বাড়িতে এ নিয়ে স্বাভাবিক কারণেই অশান্তি। এই পরিস্থিতিতে আমি ও আমার স্ত্রী যুক্তিবাদী শ্রী প্রবীর ঘোষের শরণাপন্ন হতে চাই। এ বিষয়ে আপনার অনুমতি ও সাহায্য আমার পরিবারে শান্তি আনবে বলেই আমার বিশ্বাস। আপনার ও প্রবীরবাবুর সাহায্য পেলে আমি কৃতজ্ঞ থাকবো। নমস্কার ।

ঠিকানা…                                           স্বাক্ষর…

 

আমাদের সুবিধের জন্য ধরে নিচ্ছি অমিতের বাবার নাম সুদীপ, মা অনিতা। অনিতার তিন পৃষ্ঠার বয়ান পড়ে যা জানতে পারলাম, তার সংক্ষিপ্তসার—৬ থেকে ৯ মার্চ চারদিন রাত ৮টা থেকে ৯টার মধ্যে ভিতরের উঠোনে, দরজার ঠিক সামনেই দেখা যেতে লাগল কিছুটা করে জল পড়ে থাকছে। ১০ তারিখ রাত ৮টা নাগাদ ঘরের আলো নিভিয়ে পর্দা সরিয়ে খাটে বসেছিলেন অমিতের মা অনিতা ও বাবা সুদীপ। সামান্য সময়ের জন্য নিজেরা কথা বলতে বলতে বাইরে নজর রাখতে ভুলে গিয়েছিলেন। যখন বারান্দায় চোখ পড়ল তখন ওঁরা বিস্ময়ের সঙ্গে দেখলেন উঠোনে পড়ে আছে কিছুটা পায়খানা। ১১ তারিখ সকাল ৯টা থেকেই শুরু হল ভূতের তীব্র অত্যাচার। অমিতের ঠাকুমা পুজো করছিলেন। হঠাৎ ভিতরের উঠোনে চোখ পড়তেই দেখলেন উঠোনে এক গাদা জল। তারপর থেকে সারা দিন রাতে প্রায় চল্লিশবার জল পড়ে থাকতে দেখা গেছে বিভিন্ন ঘরে, বিছানায়, টেলিভিশনের ওপরে। এই শুরু, এরপর প্রতিটি দিনই সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলতেই থাকে ভূতের তাণ্ডব ।

অনিতার জবানবন্দিতে, “চেয়ারে বসে অমিত পড়ছে, পাশেই বিছানা। কলমের ঢাকনাটা তুলতে বিছানার দিকে হাত বাড়াতেই দেখা গেল, বিছানা থেকে কলের জলের মতো জল পড়ে অমিতের জামা-প্যান্ট ভিজিয়ে দিল।”

অমিতদের ঠিক পাশেই অমিতের মামার বাড়ি। ভূতের হাত থেকে বাঁচাতে অমিতকে মামার বাড়িতে রাখা হয়। সেখানেও ভূত অমিতকে রেহাই দেয়নি। সেখানেও শুরু হয় ভূতের উপদ্রব। নানা জায়গায় রহস্যজনকভাবে জলের আবির্ভাব হতে থাকে। অমিত বাথরুমে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করেছে সবে, হঠাৎ ওর মাথার উপর কে যেন হুড়হুড় করে জল ঢেলে দিল। অথচ বাথরুমের একটি মাত্র জানলাও তখন খোলা ছিল না।

এরপর অমিতকে আবার নিজের বাড়িতেই ফিরিয়ে আনা হয়। বাড়িতে অনবরত চলতেই থাকে ভূতের জল নিয়ে নানা রহস্যময় খেলা। সেদিনই রাত সাড়ে সাতটা থেকে আটটা নাগাদ গৃহশিক্ষক অমিতকে পড়াচ্ছিলেন। গৃহশিক্ষকের সামনেই অমিতের চেয়ারে হঠাৎ একগাদা জলের আবির্ভাব। সেই রাতেই বাড়ির ও পাড়ার লোকজন অমিতদের ভিতরের উঠোনে দাঁড়িয়ে জল-ভূতের বিষয় নিয়ে আলোচনা করছিলেন। ইতোমধ্যে বাড়িতে দু’জন তান্ত্রিক দিয়ে তন্ত্র-মন্ত্র পুজো হয়েছে। এক ব্রাহ্মণ আট ঘন্টা ধরে যজ্ঞও করেছেন ভূত তাড়াতে। খরচ হয়েছে প্রচুর, কিন্তু কাজ হয়নি কিছুই। এই আলোচনায় সুদীপবাবু জানান, বাড়িটাই বিক্রি করে দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এতদিনের বাস তুলে চলে যাবেন, সিদ্ধান্তটা প্রতিবেশীদের পছন্দ হয়নি। কয়েকজন শেষ চেষ্টা হিসেবে প্রবীর ঘোষের সাহায্য নেওয়ার কথা জানান। অমিত আলোচনা শুনছিল। ও শারীরিকভাবে কিছুটা অস্বস্তি অনুভব করছিল। ঘটনাটা সুদীপবাবুর নজরে পড়ে। অমিতকে এক মগ জল এগিয়ে দিয়ে বলেন, “শরীর খারাপ লাগছে? চোখে মুখে জলের ছিটে দে, ভালো লাগবে।” অমিত জলের ছিটে দিয়ে সবে ঘুরেছে, অমনি কে যেন ওর মাথায় ওপর ঝপ্‌ঝপ্ করে জল ঢেলে দিল। সারা শরীর ভিজে একশা অবাক কাণ্ড ! অথচ ওপরেও কেউ ছিলেন না। সেই মুহূর্তে সুদীপ ও অনিতা একমত হলেন–আর নয়, প্রবীরবাবু যদি কিছু করতে পারেন ভালো, নতুবা যে কোনো দামে বাড়িটা বিক্রি করে অন্য কোথাও একটা ফ্ল্যাটই নয় কিনে নেবেন। উপস্থিত প্রত্যেকেই ঘটনার আকস্মিকতায় হতচকিত হয়ে পড়েছিলেন। সুদীপ, অনিতার মতামতের বিরোধিতা করতে একজনও এগিয়ে এলেন না।

সুদীপের চিঠি ও অনিতার লিপিবদ্ধ বয়ান পড়ে ঠিক করলাম আজ এবং এখনই অমিতদের বাড়ি যাব। ‘আজকাল’-এর গাড়িতেই বেড়িয়ে পড়লাম। সঙ্গী হলেন দুই চিত্র- সাংবাদিক ভাস্কর পাল, অশোক চন্দ এবং আমার দেহরক্ষী বঙ্কিম বৈরাগী।

অমিত, ওর মা, বাবা, জেঠু, ঠাকুমা, দাদু ও কিছু পাড়া-প্রতিবেশীদের সঙ্গে কথা বললাম। ওদের ধারণা, ঘটনাগুলোর পিছনে রয়েছে ভূতের হাত। গতকাল গীতা ও চণ্ডীপাঠ করে গেছেন হাওড়ার দুই পণ্ডিত। তাতে অবস্থার কিছুই পরিবর্তন ঘটেনি। ভূতের আক্রমণ সমানে চলেছে। দেখলাম দু-বাড়ির জল-পড়া চেয়ার, বিছানা, মেঝে, টেলিভিশন, উঠোন, এমনকি মামার বাড়ির বাথরুমটি পর্যন্ত। বাথরুমের চার দেওয়াল, ছাদ ও দরজা জানালা দেখে নিশ্চিত হলাম, বন্ধ বাথরুমে বাইরে থেকে জল ছুড়ে দেওয়া অসম্ভব। অতএব?

ঠিক করলাম অমিতকে সম্মোহিত করব। তার আগে অমিতের সঙ্গে এটা-ওটা নিয়ে গল্প শুরু করে দিলাম। অমিত আমার নাম শুনেছে। আমার সম্বন্ধে অনেক খবর জানে। এও জানতে পারলাম আমার ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ বইটি পড়ে ফেলেছে। গল্পের বই পড়তে ভালোবাসে, বিশেষ করে গোয়েন্দা কাহিনি ও অ্যাডভেঞ্চার। নিজেও অ্যাডভেঞ্চার করতে ভালোবাসে।

আমিও আমার ওই বয়েসের গল্প শোনাচ্ছিলাম। কেমনভাবে মায়ের চোখ এড়িয়ে গল্পের বই পড়তে নানা ধরনের পরিকল্পনা করতাম, মা কেমন সব সময় ‘পড়-পড়’ করে আমার পিছনে টিক্ টিক্ করে লেগে থাকতেন, সেই সব গল্প। পরীক্ষার রেজাল্ট তেমন জুতসই হত না, আর তাই নিয়ে মা এমন বকাঝকা করতেন যে কি বলবো। একবার মাকে খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলাম। মা মারছিলেন, আমি হঠাৎ একটা চিৎকার করে এমন নেতিয়ে পড়েছিলাম যে মা ভেবেছিলেন মারতে মারতে আমাকে বুঝিবা মেরেই ফেলেছেন। তখন মা’র সেকি কান্না।

আমরা দুজনে গল্প করছিলাম। শ্রোতা আমার তিন সঙ্গী। ইতোমধ্যে ছবি তোলার কাজও চলছিল। যখন বুঝলাম আমাদের দুজনের মধ্যে একটা বন্ধুত্বের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে তখন বলাম, “সম্মোহন তো আমার বইয়ে পড়েছ, নিজের চোখে কখনো দেখেছ?”

অমিত লাফিঠে উঠলো, “আমাকে সম্মোহন করবে?”

সম্মোহন দেখতে রাজি হয়ে অমিত নিজের মনের দুর্বলতা প্রকাশ করতেই বললাম, “বেশ তো, তুমি বিছানাতে শুয়ে পড়।” অমিত শুয়ে পড়লো। বললাম, “এক মনে আমার কথাগুলো শোন।” আমি মনোবিজ্ঞানের ভাষায় ‘suggestion’ দিচ্ছিলাম, সহজ কথায় বলতে পারি, ওর মস্তিষ্ককোষে কিছু ধারণা সঞ্চার করছিলাম। মিনিট পাঁচ-সাতের মধ্যে অমিত সম্মোহিত হল। ঘরে দর্শক বলতে আমার তিন সঙ্গী। সম্মোহিত অমিত আমার বিভিন্ন প্রশ্নের উত্তর দিচ্ছিল। আমার বিশ্বস্ত টেপ-রেকর্ডারটা অমিতের বালিশের পাশে শুয়ে এক মনে নিজের কর্তব্য পালন করে যাচ্ছিল। প্রশ্নগুলোর কয়েকটা নমুনা এখানে তুলে

আমি–কে তোমাকে সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন?

অমিত—বাবা।

আমি—জেঠু ভালোবাসেন?

দিচ্ছি।

অমিত—হুঁ ৷

আমি–ঠাকুমা

অমিত—হুঁ ।

আমি — দাদু? অমিত—হুঁ । আমি—মা?

অমিত—মাও ভালোবাসে, তবে খুব বকে, খুব মারে।

আমি–তোমার স্কুলের রেজাল্ট কেমন হচ্ছে?

অমিত—মোটামুটি।

আমি–আগে আরো ভালো হতো?

অমিত—হ্যাঁ ।

আমি–তোমার মা যে এত বকেন, মারেন, তোমার রাগ হয় না?

অমিত—হয়।

আমি—প্রতিশোধ নিতে ইচ্ছে হয় না?

অমিত—হয়।

আমি—আমার মতো দুষ্টুমি করে মাকে ভয় পাইয়া দাও না কেন?

অমিত—তাই তো দিচ্ছি।

আমি—কেমন করে?

অমিত—জল ভূত তৈরি করে।

আমি—জল লুকিয়ে রাখছ কোথায়?

অমিত—বেলুনে।

আমি—আর ফাটাচ্ছো বুঝি সেপটিপিন দিয়ে?

অমিত—ঠিক ধরেছেন।

আমি—বেলুন লুকোতে শিখলে কী করে? তুমি তো দেখছি দারুন ম্যাজিসিয়ান।

অমিত আমাদের স্কুলে সাইন্স ক্লাব আছে। সিনিয়ার স্টুডেন্টরা অলৌকিক-বাবাদের বুজরুকি ফাঁস করে দেখায় বিভিন্ন জায়গায়, নানা অনুষ্ঠানে। ওদের কাছ থেকে আমরা জুনিয়র স্টুডেন্টরাও অনেক খেলা শিখেছি।

জল ভূতের রহস্য ফাঁস হওয়ার পরেও একটু কাজ বাকি ছিল। ছেলেটিকে সাময়িকভাবে তার মানসিক বিষণ্ণতা থেকে ফিরিয়ে এনেছিলাম। অনিতাকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছিলাম—স্নেহশীল মায়ের সন্তানের ভবিষ্যৎ গড়ার ব্যাপারে অতি উৎকণ্ঠা বা অতি আগ্রহের ফল সব সময় ভালো হয় না, যেমনটি হয়নি অমিতের ক্ষেত্রে।

সুদীপ ও অনিতার কাছে জল-ভূতের রহস্য উন্মোচন করে বুঝিয়েছিলাম, কেন অমিত এমনটা করল, তার কারণগুলো। স্থায়ীভাবে অমিতকে স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরিয়ে আনতে অমিতের প্রয়োজন মায়ের সহানুভূতি, ভালবাসা ।

সেইসঙ্গে সুদীপ ও অনিতাকে বলেছিলাম, জল ভূতের রহস্যের কথা তাঁরা যে জেনে ফেলেছেন, এ কথা যেন অমিতকে জানতে না দেন, কারো কাছেই যেন অমিতের এই দুষ্টুমির বিষয়ে মুখ খুলে অমিতকে তীব্র সমালোচনার মুখে ঠেলে না দেন ।

অমিতের মা, বাবার অনুরোধেই ‘আজকাল’-এর পাতায় জল ভূতের রহস্য প্রকাশ করা হয় নি। কারণ পত্রিকার প্রতিবেদনে অমিতের নাম গোপন করা সম্ভব ছিল না। অমিতের নাম প্রকাশ করে ওকে মানসিক চাপের মধ্যে ফেলাও ছিল একান্তই অমানবিক ।

 

ঘটনা দুই

আরো একটা সত্যি ঘটনা আপনাদের সামনে তুলে দিচ্ছি, শুধু পাত্র-পাত্রীদের নাম গোপন করে।

১২ জানুয়ারি ‘৯০-এর সন্ধ্যায় আমাদের সমিতির এক সদস্য মৈনাক খবর দিলেন সত্য গাঙ্গুলীর বাড়িতে কয়েকদিন ধরে অদ্ভুত সব ভুতুড়ে ব্যাপার ঘটে চলেছে। সত্য গতকাল রাতে মৈনাকের সঙ্গে দেখা করে এই বিপদ থেকে উদ্ধারের জন্য আমার সাহায্য প্রার্থনা করেন।

সত্য এক বিখ্যাত মনোরোগ চিকিৎসকেরই ভাইপো, আমার সঙ্গে তেমন কোনো পূৰ্ব পরিচয় না থাকলেও ওই মনোরোগ চিকিৎসক আমার পরিচিত ও শ্রদ্ধেয়।

ঘটনার যে বিবরণ মৈনাকের কাছ থেকে শুনলাম তা হল এইরকম—

ঘরে কোথাও কিছু নেই হঠাৎ এসে জিনিস-পত্তর পড়ছে। হঠাৎ হঠাৎ সবার সামনে থেকে জিনিসপত্র অদৃশ্য হয়ে যাচ্ছে। বাড়ির অনেকেরই পোশাকে হঠাৎই দেখা যাচ্ছে কিছুটা অংশ খাবলা দিয়ে কাটা। ঘটনাগুলোর শুরু গত মঙ্গলবার অর্থাৎ ৯ তারিখ থেকে।

পরিবারের সকলেই শিক্ষিত এবং মার্কসবাদী হিসেবে সুপরিচিত। গতকাল রাতে বাড়ির কাজের মেয়ে রেণু হঠাৎ চেতনা হারিয়ে বাড়ি থেকে বেরিয়ে যাচ্ছিল। সত্যর বউদি দেখে দৌড়ে গিয়ে পিঠে একটা চড় মারতে মেয়েটি চেতনা ফিরে পায়। তারপরই কেমন যেন একটা ঘরের মধ্যে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে। সত্য ওঁদের পারিবারিক চিকিৎসককে ডেকে পাঠান। প্রতিষ্ঠিত ওই চিকিৎসকই নাকি সত্যকে বলেন, ‘এটা ঠিক আমার কেস নয়, আপনি বরং প্রবীরদাকে ডাকুন।’ তারপরই সত্য আমাকে আনার জন্য মৈনাকের স্মরণাপন্ন হন।

সে রাতেই গেলাম সত্যদের বাড়িতে। সঙ্গে নিলাম মৈনাক, রঘু ও পিনাকীকে। সত্যরা থাকেন দোতলায় ।

বাড়ির প্রত্যেকের সঙ্গে কথা বললাম। বাড়িতে থাকেন সত্য, দাদা নিত্য, বউদি মালা, ভাই চিত্ত, দুই বোন রেখা ও ছন্দা, মা অলকা ও কাজের মেয়ে রেণু।

মার বয়েস ৬৫-র কাছাকাছি। ভুতুড়ে কাণ্ডের বিষয়ে অনেক কিছুই বললেন। স্পষ্টতই জানালেন, ‘না, কারুর দুষ্টুমি বা কেউ মানসিক রোগে নিজের অজান্তে এইসব ঘটনা ঘটাচ্ছে বলে বিশ্বাস করি না।’ জানালেন, নিজের চোখে দেখেছেন ঠোঙায় রেখে দেওয়া জয়নগরের মোয়ার মধ্য থেকে মুহূর্তে একটা মোয়াকে অদৃশ্য হতে। সেই মোয়াই আবার ফিরে এসেছে সকলের চোখের সামনে শূন্য থেকে। গত পরশু ওঁরা পরিবারের অনেকে টেলিভিশন দেখছিলেন, হঠাৎই ছাদ থেকে আমাদের সকলের চোখের সামনে মোয়াটা এসে পড়লো। মোয়াটার কিছুটা অংশ দেখলে বুঝতে অসুবিধে হয় না, ধারালো দাঁত দিয়ে মোয়াটা কাটা হয়েছে।

আজই সন্ধ্যায় ঘটে যাওয়া ঘটনার যা বর্ণনা দিলেন, সে আরো আকর্ষণীয়। ঘরে টেলিভিশন দেখছিলেন অলকা, ছন্দা, চিত্ত, রেণু ও মালা। হঠাৎই রেণুর হাত থেকে লোহার বালাটা নিজে থেকে খুলে এসে পড়লো মেঝেতে। লোহার বালাটা কালই রেণুকে পরানো হয়েছিল ভূতের হাত থেকে বাঁচাতে। এই ঘটনা দেখার পর প্রত্যেকেই এতই ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন যে চার মহিলাই চিত্তর পৈতে ধরে বসেছিলেন এবং পৈতে ধরেই চিত্ত করছিলেন গায়ত্রী জপ। আজই তিনবার রেণুর কানের দুল আপনা থেকে খুলে পড়ে গিয়েছে।

বউদি মালা জানালেন অনেক ঘটনা। তার মধ্যে আকর্ষণীয় হল, বাথরুম বন্ধ করে স্নান করছেন, হঠাৎ মাথার উপর এসে পড়লো কিছু ব্যবহৃত চায়ের পাতা ও ডিমের খোসা। কাল সন্ধ্যায় দরজা ভেজিয়ে দিয়ে ছেলেকে পড়াচ্ছিলেন, হঠাৎ একটা কিছু এসে প্রচণ্ড জোরে তাঁর পিঠে আছড়ে পড়লো। তাকিয়ে দেখেন শ্যাম্পুর শিশি। শিশিটা থাকে বাইরের বারান্দার র‍্যাকে। সেখান থেকে কী করে বন্ধ ঘরে এটা এসে আছড়ে পড়লো তার যুক্তিগ্রাহ্য কোনো ব্যাখ্যা তিনি পাননি ।

রেখার বয়স পঁচিশের কাছাকাছি। তিনিও অনেক ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে জানালেন । তার মধ্যে আমার কাছে যেটা আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল, সেটা হল, রান্নাঘরে আটা মেখে রেখেছেন, উঠে দাঁড়িয়েছেন গ্যাসটা জ্বালিয়ে চাটুটা চাপাবেন বলে, হঠাৎ দেখলেন আটার তালটা নিজের থেকে ছিটকে এসে পড়লো রান্নাঘরের দেওয়ালে। না, সে সময় রান্নাঘরে আর কেউই ছিলেন না। রান্নাঘরের বাইরে, কিছুটা তফাতে বারান্দায় বসে কাঁচা-আনাজ কাটছিল রেণু। না, রেণুর পক্ষে কোনো ভাবেই নাকি রেখার চোখ এড়িয়ে রান্নাঘরে ঢুকে আটা ছুড়ে মারা সম্ভব ছিল না। এ ছাড়া আরো একটা ঘটনা ঘটতে দেখেছেন রেখা। সেখানে রেখা ছাড়া রেণু কেন, কারোরই উপস্থিতি ছিল না।

এবারো ঘটনাস্থল রান্নাঘর। গ্যাসের টেবিলের ওপর একটা ঠোঙায় রাখা ছিল কয়েকটা বিস্কুট। হঠাৎ চোখের সামনে টোঙার মুখ খুলে গেল। একটা বিস্কুট ঠোঙা থেকে বেরিয়ে এসে শূন্যে ঝুলতে ঝুলতে রান্নাঘরের জানালার শিক গলে বেরিয়ে গেল।

ছন্দার বয়স বছর ষোল। ওর দেখা ঘটনাগুলোর মধ্যে যে ঘটনাটা আমাকে সবচেয়ে বেশি টেনেছিল, সেটা আজই সন্ধ্যায় ঘটেছে। রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইছিল হারমোনিয়াম বাজিয়ে । হারমোনিয়ামের উপর ছিল কয়েকটা স্বরবিতান। ঘরে আর কেউ নেই। হঠাৎ লোডশেডিং। সেই মুহূর্তে তার গায়ের উপর আছড়ে পড়লো হারমোনিয়ামের উপর রাখা স্বরবিতানগুলো। আতঙ্কে ছন্দা চেঁচিয়ে উঠলো, ‘কে-রে?” অমনি গালের উপর এসে পড়লো একটা বিশাল চড়।

রেণুর বয়স বছর ষোল। ওর কাছ থেকে শোনা ঘটনাগুলোর মধ্যে যে ঘটনাগুলো আকর্ষণীয় মনে হয়েছিল সেগুলো হল, নিজের হাতের থেকে লোহার চুড়ি একটু একটু করে বেরিয়ে আসছে—দেখেছে, কানের দুল হঠাৎ অদৃশ্য হয়েছে—অনুভব করেছে। গত পরশু একসময় জামা পাল্টাতে গিয়ে দেখে অন্তর্বাসের বাম স্তনবৃত্তের কাছটা গোল করে কাটা। অথচ অন্তর্বাসটা পরার সময়ও ছিল গোটা

রেখার এক বান্ধবী গীতা থাকেন, মধ্যমগ্রামে। রেখাদের সঙ্গে সম্পর্ক পরিবারের একজনের মতোই। মাসের অর্ধেক দিনই কাটে রেখাদের বাড়িতে। গীতার সঙ্গেও কথা বলেছিলাম। তিনি গত পরশুর একটা ঘটনা বললেন। একটা ‘দেশ’ সাপ্তাহিক পত্রিকা পড়েছিল মেঝেতে। হঠাৎ দেশ পত্রিকা মেঝেতে চলতে শুরু করলো। থামল অন্তত হাত চারেক গিয়ে। না, হাওয়ায় উড়ে যাওয়ার কোনো প্রশ্নই আসে না। শীতের সন্ধ্যা। ঘরের প্রতিটি জানলা বন্ধ, বাইরের প্রকৃতি স্তব্ধ। ঘরে ফ্যানও চলছিল না। গত কালকের ঘটনাও কম রোমাঞ্চকর নয়। কাল সন্ধ্যায় ঘরে ঢুকে আলো জ্বালতেই দেখতে পেলেন একটা ধোঁয়ার কুণ্ডলী ঘরের মেঝেতে তৈরি হতে শুরু করলো। আতঙ্কিত চোখে দেখলেন কুণ্ডলীটা একটা বেড়াল হয়ে গিয়ে ঘরে থেকে বেরিয়ে গেল।

ভূতের একটা বৈশিষ্ট্য ছিল কাপড় কাটা, বাড়ির প্রায় সকলেরই পোশাক, গরম- পোশাক ভূতের কোপে পড়ে কাটা পড়েছে। আমি গোটা চল্লিশেক পোশাক পরীক্ষা করেছি। প্রত্যেকটাই প্রায় এক স্কোয়ার ইঞ্চির মতো জায়গা নিয়ে ধারালো কিছু দিয়ে গোল বা ডিম্বাকৃতিতে কাটা। কাটাগুলোরও একটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য লক্ষ্য করলাম। ব্লাউজ, ক্লোক, টপ্ মেয়েদের কামিজের স্তনবৃন্তের কাছে কাটা। চিত্তের পাজামার লিঙ্গস্থানের কাছে কাটা, তবে এই কাটাটা একটু বড়-চার স্কোয়ার ইঞ্চির মতো জায়গা জুড়ে।

ওঁদের সঙ্গেই কথা বলে জানতে পারলাম গীতা গতকাল সকালে সত্য ও রেখাকে নিয়ে গিয়েছিলেন তাঁর গুরুদেবের কাছে। গুরুদেব জানিয়েছেন—বাড়িওয়ালা এক তান্ত্রিকের সাহায্যে ওঁদের পিছনে ভূত লেলিয়ে দিয়েছে। ভূত তাড়ানো যাবে। তবে যাগযজ্ঞের খরচ খুব একটা কম হবে না। এই বিষয়ে কথা বলার জন্য মা ও বড়দাকে নিয়ে আগামী শনিবার যেতে বলেছেন। বাড়িওয়ালা এ বাড়িতে থাকেন না। থাকেন বৃহত্তর কলকাতার দক্ষিণ প্রান্তে। আর এ বাড়িটা বৃহত্তর কলকাতার উত্তর প্রান্তে, দমদমে।

বাড়ির তিন ছেলের সঙ্গে কথা বলে জানলাম, তাঁরা প্রত্যেকেই অনেক ভুতুড়ে ঘটনার সাক্ষী। কিন্তু প্রতিটি ক্ষেত্রেই ঘটনাগুলো ঘটার সময় তাঁরা ছাড়াও বাড়ির কেউ না কেউ সেখানে উপস্থিত ছিল বা ছিলেন।

পুরো বিষয়টা নিয়ে ভালোমতো আবার নাড়াচাড়া করলে দেখতে পাচ্ছি, পাঁচজন মহিলা স্পষ্টতই দাবি করছেন, তাঁরা এক বা একাধিক ভুতুড়ে ব্যাপার ঘটতে দেখেছেন। ঘটনাগুলো ঘটার সময় আর কেউই সেখানে ছিলেন না। অর্থাৎ কি না, বাস্তবিকই ভুতুড়ে ঘটনা।

এবার এঁদের কথাগুলোর ভিত্তিত্তে আমি সিদ্ধান্তে পৌঁছলাম। এঁদের মধ্যে সম্ভবত একজন ইচ্ছে করে অথবা নিজের অজান্তে ঘটনাগুলো ঘটাচ্ছেন। বাকি চারজন আন্তরিকভাবেই বিশ্বাস করে নিয়েছেন—এ বাড়িতে ভূতের আবির্ভাব ঘটেছে। এই একান্ত বিশ্বাস থেকে তাঁরা হয়তো ধোঁয়ার কুণ্ডলী জাতীয় কিছু দেখেছেন। ‘দেশ’ সাপ্তাহিক যেন নড়েছে বলে মনে করেছেন। কিন্তু প্রায় ক্ষেত্রেই নিজেকেই ভুতুড়ে ঘটনার একক প্রত্যক্ষদর্শী বলে জাহির করার লোভে কাল্পনিক গপ্পো ফেঁদেছেন। সাধারণভাবে মানুষের কোনো বিশেষ ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে জাহির করার মধ্য দিয়ে লোকেদের কাছে গুরুত্ব পাওয়ার একটা লোভ থাকে। এক্ষেত্রে সম্ভবত তেমনই কিছু ঘটেছে।

অবশ্য এমনটাও অসম্ভব নয়, শুরুতে একজন মস্তিষ্ক কোষের বিশৃঙ্খলার দরুন নিজের অজান্তে ভুতুড়ে সব কাণ্ড-কারখানা ঘটিয়ে বেড়াচ্ছিলেন এবং এই মানসিক রোগই সংক্রামিত হয়েছে আরো এক বা একাধিক মহিলার মধ্যে।

উপায় একটা আছে, তবে সময়সাপেক্ষ। যে পাঁচজন মহিলা এককভাবে ভুতুড়ে কাণ্ডের দর্শক ছিলেন বলে দাবি করছে ও করছেন তাঁদের প্রত্যেককে দিয়ে সত্যি বলানো

নিত্য ও সত্যকে বললাম, “আপনারা সহযোগিতা করলে আজ থেকেই কাজ শুরু করতে পারি। তবে আজই ভূতের অত্যাচার বন্ধ হবে, এমন কথা বলছি না। মালা, রেখা, ছন্দা, রেণু ও গীতাকে সম্মোহন করে বাস্তবিকই ভুতুড়ে ব্যাপারগুলো কীভাবে ঘটছে সেটা জেনে নিতে চাই। আশা রাখি, অবশ্যই আসল সত্যটুকুক ওঁদের কাছ থেকেই জেনে নিতে পারব। কী করে ঘটছে জানতে পারলে, ঘটনাগুলো ভবিষ্যতে আর যেন না ঘটে সে ব্যবস্থা গ্রহণ করা কঠিন হবে না। আজ আমি একজন সম্মোহন করবো। এমন হতে পারে বাকি চারজনকে সম্মোহন করতে আরো চারটে দিন আমাকে আসতে হবে।”

প্রথম যাকে সম্মোহন করার জন্য বেছে নিলাম, সে রেণু। রেণুর গায়ের রঙ মাজা, মোটামুটি দেখতে, সুন্দর স্বাস্থ্যের অধিকারী, রেণুকে সম্মোহন করতে রেণুর সহযোগিতাই সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন। রেণুর অনুমতি নিয়েই ঘরে রাখলাম আমাদের সমিতির সদস্য মৈনাক, রঘু ও পিনাকীকে। উদ্দেশ্য, ওদের অভিজ্ঞতা বৃদ্ধি এবং সাক্ষী রাখা ।

রেণুকে বললাম, সম্মোহন দেখেছ?

রেণু—শুনেছি ম্যাজিশিয়ানরা সম্মোহন করে ম্যাজিক দেখায়। আমি একটা কয়েনকে হাত সাফাই করে দুই-তিন-চার করে বাড়াতে শুরু করতেই বুঝলাম রেণুকে এবার সম্মোহন করা যাবে। ওকে বললাম, এবার বিছানায় শুয়ে চোখ বুজে একমনে আমার কথা শুনতে থাক। তারপর দারুণ মজার একটা ম্যাজিক দেখাবো।

রেণুকে একটা বিছানায় শুইয়ে দিয়ে সাজেশন দিতে লাগলাম বা ওর চিন্তায় ধারণা সঞ্চার করতে লাগলাম। শুরু করেছিলাম এই বলে, “তোমার ঘুম আসছে। একটু একটু করে চোখের পতাগুলো ভারি হয়ে আসছে। ঘুম আসছে।” পরে সম্মোহন নিয়ে বিস্তৃত আলোচনায় যাব, তাই এখানে সম্মোহন বিষয়ে আলোচনায় গেলাম না। একসময় রেণুর বন্ধ চোখের পাতার দিকে তাকিয়ে বুঝলাম ও এখন সম্মোহিত। চোখের পাতার নিচে মণি দুটো এখন স্থির।

টেপ-রেকর্ডারটা চালু করে দিলাম। শুরু করলাম প্রশ্ন। উত্তর দিয়ে যাচ্ছিল রেণু। ঘুম ঘুম অবস্থায় জড়িয়ে কথা বলছিল।

আমি–তোমাকে বাড়ির সকলে ভালোবাসে? নাকি কেউ কেউ তোমাকে মোটেই পছন্দ

করে না?

রেণু—বাড়ির সকলেই ভালোবাসে।

আমি–আমি তোমাকে একটা করে নাম বলছি, তুমি বলে যাবে তারা ভালোবাসে কি না? দিদা?

রেণু—ভালোবাসে । আমি—নিত্যদা?

রেণু—ভালোবাসে।

আমি–বউদি?

রেণু উত্তর না দিয়ে চুপ করে রইল। আবার জিজ্ঞেস করলাম—বউদি? রেণু—হ্যাঁ, ভালোইবাসে ৷

বুঝলাম, রেণু বউদিকে তেমন পছন্দ করে না ।

আমি—রেখাদি?

রেণু—ভালোবাসে ।

আমি—ছন্দা?

রেণু—ভালোবাসে।

আমি—চিত্তদা?

রেণু—চিত্তদা, চিত্তদা, চিত্তদা, সুজাতাকে ভালোবাসে ৷

আমি—তুমি চিত্তদাকে ভালোবাস?

রেণু—হ্যাঁ ।

আমি—তুমি চিত্তদাকে খুব ভালোবাস?

রেণু—হ্যাঁ ।

আমি—তুমি চিত্তদার পাজামাটার ওইরকম জায়গাটা কাটলে কেন?

রেণু—বেশ করেছি।

আমি—বেশ মজাই হয়েছে। চিত্তদার উপর একচোট শোধ তুলে নিয়েছ। তুমি কী দিয়ে ওদের সব জামা-কাপড়গুলো কেটেছো? ব্লেড দিয়ে?

রেণু—না, কাঁচি দিয়ে ।

আমি—ওরা কেউ তোমাকে সন্দেহ করেনি?

রেণু—না ।

আমি—তুমি আজ সন্ধ্যায় লোডশেডিং-এর সময় ছন্দাকে চড় মেরেছিলে?

রেণু—হ্যাঁ ।

আমি—তুমিই মোয়া সরিয়ে পরে খাওয়া মোয়াটা ফেলেছিলে?

রেণু—হ্যাঁ ।

আমি—মাখা আটা রান্না ঘরের দেওয়ালে কে ছুড়েছিল?

রেণু—আমি ।

আমিবাথরুমে বউদির মাথায় চায়ের পাতা ছুড়ে মেরেছিলে?

রেণু—না ।

আমি—তবে, কী করে বন্ধ বাথরুমে বউদির মাথায় চায়ের পাতা পড়লো ?

রেণু—আমার মনে হয় বউদি নিজেই করেছে। ও খুব মিথ্যেবাদী

আমি—আর বউদিকে শ্যাম্পুর কৌটো ছুড়ে মারা?

রেণু—ওটা আমিই করেছিলাম।

আমি–বউদি বলছিলেন ঘর বন্ধ ছিল।

রেণু—মিথ্যে কথা।

আমি—তোমার হাত থেকে লোহার চুড়ি একটু একটু করে নিজে থেকেই বেরিয়ে আসছিল, অনেকে নাকি দেখেছেন? ব্যাপারটা কী বলতো।

রেণু—আমিই চুড়িটা খুলে মেঝেতে ফেলে দিয়ে বলেছিলাম—আরে আরে চুড়িটা নিজে থেকেই হাত থেকে খুলে বেরিয়ে এলো। ওরা সকলেই টিভি দেখছিল। আমার কথায় মেঝের দিকে তাকায়। চুড়ি পড়ে থাকতে দেখে সকলেই খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিল।

আমি—ওদের ভয় দেখাতে তোমার ভালো লাগছে?

রেণু—মজা লাগছে ।

রেণুর সঙ্গে অনেক কথাই হয়েছিল। বুঝতে অসুবিধে হয়নি চিত্তকে ওর ভালো লাগে । চিত্তকে ঘিরে ও অনেক কথাই বলেছিল, যার কতটা সত্যি কতটা মিথ্যে সেটা শুধু চিত্ত ও রেণুই জানে। তবে এটুকু বুঝতে অসুবিধে হয়নি রেণুর অতৃপ্ত প্রেম, তার অবদমিত যৌন আবেগ মস্তিষ্ককোষের মধ্যে যে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করেছিল, তারই পরিণতিতে বিভিন্নজনের এবং নিজের পোশাকের যৌনস্থান ঢাকা পড়ার জায়গাগুলোয় কাঁচি চালিয়েছিল।

এটুকু জানান বোধহয় অপ্রাসঙ্গিক হবে না, রেণুকে বলেছিলাম, আর এমনটা করলে ওকে পুলিশে দেব। রেণুকে সামাল দিতেই ভুতুড়ে ব্যাপার-স্যাপার বন্ধ হয়ে যায়। এই একই সঙ্গে আরো জানাই, ওই পরিবারের যাঁরা এককভাবে ভূতদর্শী ছিলেন, তাঁরাও পরবর্তী পর্যায়ে আমার সাথে কথা বলতে গিয়ে আগের ভূত দেখার দাবিগুলোকে হয় এড়িয়ে যেতে সচেষ্ট হয়েছেন, নয় স্বীকার করেছেন বলার সময় কিছু রঙ চড়িয়ে ফেলেছিলেন।

চিত্তর সঙ্গে আলাদা করে কথা বলেছিলাম। জানিয়ে ছিলাম, রেণু সমস্ত বলেছে। সব কথাই টেপে ধরা আছে। তুমি আর এক বারের জন্যেও রেণুর সঙ্গে প্রেম-প্রেম খেলো না। রেণু তোমার-সুজাতার ব্যাপারটা জানে। তাইতেই তোমার ওপর শোধ তুলতেই ভুতুড়ে ব্যাপারগুলো ঘটাচ্ছিল। রেণু কথা দিয়েছে তুমি ওকে নিয়ে খেলা না করলে ও আর ভুতুড়ে কাণ্ড ঘটাবে না।

পর্ব- একঃ উঠে আসা নানা প্রশ্ন

অধ্যায়ঃ এক

♦ সম্মোহন

অধ্যায়ঃ দুই

♦ জন্তুদের সম্মোহন করা ব্যাপারটা কি?

অধ্যায়ঃ তিন

♦ ফোটো-সম্মোহন কি সম্ভব?

অধ্যায়ঃ চার

♦ গণ-সম্মোহনের সাহায্যে কি ট্রেন ভ্যানিশ করা যায়?

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সম্মোহন করে পূর্বজন্মে নিয়ে যাওয়া যায়?

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ জন্মান্তর ও সম্মোহন

অধ্যায়ঃ সাত

♦ সম্মোহন ও নার্কো টেস্ট

অধ্যায়ঃ আট

♦ সম্মোহন করে কথা বলানো যায় ?

অধ্যায়ঃ নয়

♦ প্ল্যানচেটে যে আত্মা আনা হয়, তা কি স্বসম্মোহন বা সম্মোহনের প্রতিক্রিয়া ?

পর্ব- দুইঃ সম্মোহনের ইতিহাস ও নানা মানসিক রোগ

অধ্যায়ঃ এক

♦ সম্মোহনের বিজ্ঞান হয়ে ওঠার ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ মনোরোগ, সম্মোহন জানতে মগজের কাজ জানা জরুরি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ মানসিক রোগের রকমফের

অধ্যায়ঃ চার

♦ Hysterical neurosis – Conversion type

অধ্যায়ঃ চার

♦ সাইকোসিস (Psychosis) উন্মাদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ দেহ-মনজনিত অসুখ (Psycho-somatic disorder)

পর্ব- তিনঃ মনোবিদ ও মনোরোগ চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি

অধ্যায়ঃ এক

♦ মনোবিদ (Psychologist) ) মনোরোগ চিকিৎসক (Phychiatrist)

অধ্যায়ঃ দুই

♦ প্রধান কয়েকটি সাইকোথেরাপি নিয়ে আলোচনায় যাব

অধ্যায়ঃ তিন

♦ টেনশন

অধ্যায়ঃ চার

♦ রিল্যাকসেশান পদ্ধতি

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যৌনতা এবং যৌন-সমস্যা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব

পর্ব- চারঃ বিভিন্ন রোগের সম্মোহনের সাজেশন পদ্ধতি

অধ্যায়ঃ এক

♦ সম্মোহন চিকিৎসা এবং…

অধ্যায়ঃ দুই

♦ রোগীকে সাজেশন দেওয়ার পদ্ধতি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ রকমারি রোগ, রকমারি সাজেশন

অধ্যায়ঃ চার

♦ প্রাচীন আমল থেকেই মানসিক রোগ মানেই অশুভ শক্তির কালো হাত

“সম্মোহনের A to Z” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!