শ্রীকৃষ্ণ যে অর্জুনকে ‘বিশ্বদর্শন’ করিয়েছিলেন –তা কি সম্মোহন ছিল? হিটলার যে একটা গোটা জাতিকে হিস্টিরিক করে তুলেছিলন? তাঁর একান্ত বাধ্য করে তুলেছিলেন? তাকে কি হিটলারের সম্মোহন শক্তি বলা যায়? রজনীশ কি তার চোখ ও কথা দিয়ে মানুষকে সম্মোহন করে রাখতেন? আমরা যে অভিনয় দেখতে দেখতে হাঁসি, ক্রুদ্ধ হই, উত্তেজিত হই, তাকে কি ইভিনেতার সম্মোহনী শক্তি বলবো? মহরমে বা চরকে ভক্তরা যে নিজেদের শরীরকে কষ্ট দেয়, কিন্তু কষ্ট অনুভব করে না –এর কারণ কি ওরা কি সেই সময় আত্মসম্মোহিত থাকে? ম্যানড্রেকের কমিকসে যেমন থাকে ভিলেনগুলি করতে গিয়ে দেখে হাতের রাইফেল বিষাক্ত সাপ হয়ে গেছে ইত্যাদি –সম্মোহনে এমন কিছু কি সত্যিই করা সম্ভব? জাদুকর কি সম্মোহন করে জাদু দেখান?
পি.সি. সরকারের আগেও এমনি ঘড়ির কাঁটা পিছিয়ে দেওয়ার গণসম্মোহনের আষাঢ়ে গল্প আরও অনেক জাদুকরকে ঘিরে বিভিন্ন সময়ে চালু ছিল। এইসব জাদুকররা হলেন রাজা বোস, জাদুকর গণপতি, রয়-দি-মিসটিক। পৃথিবীতে যাকে নিয়ে আষঢ়ে গল্পটির শুরু। তিনি হলেন এক মার্কিন জাদুকর হাওয়ার্ড থার্সটন। জাদুকররা মাঝে মধ্যে কেন, কোন সময়েই সম্মোহনের সাহায্যে জাদু দেখান না। শূন্যে মানুষ ভাসিয়ে রাখতে, একটা ডান্ডার উপর মানুষকে ঝুলিয়ে রাখতে, করাতে দেহ দু’টুকরো করার খেলা, দেখাতে বা অন্য কোন খেলায় জাদুকর চোখ বড় বড় করে দু’হাতের আঙ্গুল নেড়ে নেড়ে, যে সম্মোহন (?) করেন, সেটা আদৌ সম্মোহন নয়। অভিনয়। জাদুকরের সঙ্গিনী বা সঙ্গী সম্মোহিত হওয়ার অভিনয় করেন। তারপর যা দেখানো হয়, তা সম্পূর্ণি কৌশলে দেখান। এইসব জাদুর পেছনে সম্মোহনের কোন ভূমিকাই নেই। জাদুকরদের এই অভিনয় বা প্রতারণামূলক সম্মোহন কয়েক প্রজন্ম ধরে দেখতে দেখতে দর্শকরা ‘সম্মোহন’ সম্বন্ধে ভুল ধারণা একটু একটু করে নিজের মনের মধ্যে গড়ে তুলেছেন।
কোন জাদুকর যখন জাদু দেখান, তখন সে’সবই নিছক কৌশলে, কোন অলৌকিক ক্ষমতায়। প্রতিটি জাদুকরই সেকথা মঞ্চে ও মঞ্চের বাইরে স্বীকারও করেন। কিন্তু কেউ যদি তেমনটা না করে কোনও কোন জাদু দেখাতে গিয়ে দাবী করে –এটা এবার দেখাচ্ছেন মন্ত্রশক্তিতে, ঈশ্বরের কৃপায় বা ভূতকে কাজে লাগিয়ে, তবে তা হবে সত্য-লঙ্ঘন, প্রতারণা। এবং এ’ক্ষেত্রে যুক্তিবাদী প্রতিটি মানুষের উচিৎ এমন এক ভ্রান্ত ধারণাকে ভেঙ্গে দিয়ে প্রকৃত সত্যকে তুলে ধরা। ঠিক একইভাবে উচিৎ।
অভিনয়কে সম্মোহন বলে মানুষকে প্রতারণার যে ঘটনা সুদীর্ঘকাল ধরে জাদু জগতে ঘটেই চলেছে, তাকে বন্ধ করা।
সম্মোহন বা মস্তিষ্কের ধারণা সঞ্চারের মধ্য দিয়ে বাস্তবিকই যা হয় তারই একটা সীমাবদ্ধতা আছে। সেই সীমাবদ্ধতাকে, সেই সত্যকে মানুষের কাছে পৌঁছে দেওয়ার স্বার্থেই এইসব ‘না-সম্মোহন’কে ‘সম্মোহন’ বলে চালানোর বুজরুকির বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো দরকার।
পি.সি. সরকার (জুনিয়র) –এর অমৃতসর এক্সপ্রেস ভ্যানিশ কি আদৌ কোন কৌশলে দেখানো সম্ভব? ওই ব্যাপারটার পিছনে কি গণসম্মোহন কাক করেনি? এ-জাতীয় অনেক প্রশ্নের মুখোমুখি হতে হয় আমাকে এবং যুক্তিবাদী সমিতি’কে। উত্তরে প্রত্যেককেই যা জানিয়েছি, তা আবারও জানাচ্ছি –
ট্রেন ভ্যানিশের ম্যাজিকে না ছিল অমৃতসর এক্সপ্রেস, না একজন দর্শকও দেখেছিল ট্রেনটাকে ভ্যানিশ হতে। ম্যাজিকটা আদৌ দেখানোই হয়নি। গোটা ম্যাজিকটার ভিত্তি ছিল মিথ্যে প্রচার।
পুরো ঘটনাটা বিস্তৃতভাবে লেখা হয়েছে ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ বইটির চতুর্থ খন্ডে, উৎসাহী পাঠক-পাঠিকারা পড়ে নিতে পারেন।
জাদুকর ম্যানড্রেকের কাহিনীতে যেসব সম্মোহন শক্তির কথা আপনারা কমিক্সের বইতে পড়েন, সে’সব নেহাতই ‘গুল-গপ্পো’। অথচ অনবরত ওসব কাহিনী পড়তে পড়তে অনেকেই ভাবে, সম্মোহনের সাহায্যে সত্যিই বোধহয় এমনটাও গঠানো সম্ভব। মজার কথা কি জানেন, বছর কয়েক আগে ‘আনন্দমেলা’র পুজো সংখ্যায় সমরেশ মজুমদার ম্যান্ড্রেকের গল্পে প্রভাবিত হয়ে তাঁর উপন্যাসে ‘ম্যানড্রেকি সম্মোহন’ হাজির করেছিলেন। এমনকি ‘সন্দেশ’ পত্রিকার অগ্রহায়ণ ১৪০২ (ডিসেম্বর, ১৯৯৫) সংখ্যায় সত্যজিৎ রায়ের অপ্রকাশিত নতুন যে ফেলুদা-উপন্যাস ‘ইন্দ্রজাল রহস্য’ প্রকাশিত হয়েছে, তাতেও দেখা যাচ্ছে সূর্যকুমার নামে এক জাদুকর লালমোহনবাবুকে মঞ্চে ডেকে এনে তাঁকে সম্মোহন করে পেন্সিল খাওয়াচ্ছেন অথচ সম্মোহিত লালমোহনবাবু ভাবছেন তিনি চকোলেট খাচ্ছেন। বাস্তবে এমনটি ঘটে না, এবং সবই হল ম্যানড্রেকি গল্পের প্রভাবের ফল বা জাদুকরদের মিথ্যে সম্মোহনের ফল।
অনেকে এমনও ভাবে, সম্মোহন করতে পারে এমন লোকের কাছে যাওয়া দস্তুরমতো বিপজ্জনক। ওরা সম্মোহিত করে চুরি খুন-খারাপি –সবই করিয়ে নিতে পারে। এ’সবই সম্মোহন সম্বন্ধে না জানার ফল।
“অলৌকিক নয়,লৌকিক- ১ম খন্ড ” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ
১. অধ্যায়ঃ এক
১.৩ যুক্তিবাদী, মুক্তচিন্তার সেইসব মানুষ
২. অধ্যায়ঃ দুই
২.১ কুসংস্কারের বিরুদ্ধে বিজ্ঞান
২.২ শাসক শ্রেণির স্বার্থে কুসংস্কার পুষ্ট হচ্ছে
৩. অধ্যায়ঃ তিন
৩.২ বিখ্যাত মহারাজের শূন্যে ভাসা
৩.৩ ব্ল্যাক আর্ট ছাড়া সাধিকার শূন্যে ভাসা
৩.৪ লাঠিতে হাতকে বিশ্রাম দিয়ে শূন্যে ভাসা
৩.৫ বেদে-বেদেনীদের শূন্যে ভাসা
৩.৭ সাঁই বাবাঃ সাঁইবাবার অলৌকিক ঘড়ি-রহস্য
৩.১১ শূন্য থেকে হার আনলেন ও হার মানলেন সাঁই
৩.১২ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর!
৩.১৬ যে সাধকরা একই সময়ে একাধিক স্থানে হাজির ছিলেন
৩.১৭ অতিন্দ্রীয় ক্ষমতার তান্ত্রিক ও সন্ন্যাসীরা
৩.২০ অবতারদের নিজদেহে রোগ গ্রহণ
৩.২৬ বকনা গরুর অলৌকিক দুধ ও মেহবেব আলি
৩.২৭ বাবা তারক ভোলার মন্দির ও শ্রীশ্রীবাসুদেব
৩.২৮ যোগে বৃষ্টি আনলেন শিববাল যোগী
৩.২৯ চন্দননগরে সাধুর মৃতকে প্রাণ-দান
৩.৩০ ভগবান শ্রীসদানন্দ দেবঠাকুর
৪. অধ্যায়ঃ চার
৫. অধ্যায় পাঁচ
৬. অধ্যায়ঃ ছয়
৬.১ হিস্টিরিয়া, গণ-হিস্টিরিয়া, আত্ম-সম্মোহন, নির্দেশ
৭. অধ্যায়ঃ সাত
৭.২ সম্মোহনে আত্মা এলো ‘সানন্দা’য়
৭.৩ সম্মোহন নিয়ে নানা ভুল ধারণা
৮. অধ্যায়ঃ আট
৮.১ Illusion (ভ্রান্ত অনুভূতি)
৮.২ Hallucination (অলীক বিশ্বাস)
৮.৩ Delusion মোহ, অন্ধ ভ্রান্ত ধারণা
৯. অধ্যায়ঃ নয়
৯.২ ধর্মের নামে লোক ঠকাবার উপদেশ কৌটিল্যের অর্থশাস্ত্রে
৯.৩ সোমনাথ মন্দিরের অলৌকিক রহস্য
৯.৪ প্রাচীন মিশরের ধর্মস্থান রহস্য
৯.৫ কলকাতায় জীবন্ত শীতলাদেবী ও মা দুর্গা
৯.৭ খেজুরতলার মাটি সারায় যত রোগ
৯.১৩ বার্মুডা ট্র্যাঙ্গেল রহস্য
১০. অধ্যায়ঃ দশ
১১. অধ্যায়ঃ এগারো
১১.২ ডুবোজাহাজে টেলিপ্যাথির পরীক্ষা
১১.৩ টেলিপ্যাথির সাহায্যে নোটের নম্বর বলা
১১.৪ টেলিফোনে টেলিপ্যাথিঃ আয়োজক লন্ডনের ‘সানডে মিরর’
১১.৭ টেলিফোন টেলিপ্যাথির আর এক আকর্ষণীয় ঘটনা
১১.৮ এমিল উদ্যা ও রবেয়ার উদ্যা’র টেলিপ্যাথি
১১.৯ অতীন্দ্রিয় ইউরি গেলারকে নিয়ে ‘নেচার’ (Nature)-এর রিপোর্ট
১১.১০ আই আই টি-তে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও
১১.১১ তবু প্রমাণ করা যায় তেলিপ্যাথি আছে
১২. অধ্যায়ঃ বার
১২.২ নায়াগ্রা জলপ্রপাত ভেঙ্গে পড়ার ভবিষ্যদ্বাণী
১৩. অধ্যায়ঃ তের
১৩.২ সাধু-সন্ন্যাসীদের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৩.৩ ইউরি গেলারের অতীন্দ্রিয় দৃষ্টি
১৪. অধ্যায়ঃ চোদ্দ
১৪.২ মানসিক শক্তিতে রেলগাড়ি থামানো
১৪.৪ স্টীমার বন্ধ করেছিলেন পি.সি. সরকার
১৪.৬ লিফট ও কেবল-কার দাঁড় করিয়েছিলেন ইউরি গেলার
১৪.৭ মানসিক শক্তি দিয়ে গেলারের চামচ বাঁকানো
১৪.৯ ‘নিউ সায়েন্টিস্ট’ –এর পরীক্ষায় ইউরি এলেন না
১৫. অধ্যায়ঃ পনের
১৬. অধ্যায়ঃ ষোল
১৬.১ অধ্যায়ঃ ভাববাদ বনাম যুক্তিবাদ বা বস্তুবাদ
১৬.২ মুক্ত চিন্তার বিরোধী ‘মনু সংহিতা’
১৬.৩ আধ্যাত্মবাদ ও যুক্তিবাদের চোখের আত্মা
১৬.৪ আত্মা, পরলোক ও জন্মান্তর বিষয়ে স্বামী অভেদানন্দ
১৬.৫ স্বামী বিবেকানন্দের চোখে আত্মা
১৬.৬ আত্মা নিয়ে আরও কিছু বিশিষ্ট ভাববাদীর মত
১৬.৭ আত্মা প্রসঙ্গে চার্বাক বা লোকায়ত দর্শন
১৭. অধ্যায়ঃ সতের
১৭.১ জাতিস্মররা হয় মানসিক রোগী, নয় প্রতারক
১৮. অধ্যায়ঃ আঠারো
১৮.১ জাতিস্মর তদন্ত-১: দোলনচাঁপা
১৮.২ জাতিস্মর তদন্ত ২: জ্ঞানতিলক
১৮.৩ জাতিস্মর তদন্ত ৩: ফ্রান্সিস পুনর্জন্ম
১৮.৪ জাতিস্মর তদন্ত ৪: সুনীল দত্ত সাক্সেনা
১৮.৬ জাতিস্মর তদন্ত ৬: কলকাতায় জাতিস্মর
১৯. অধ্যায়ঃ ঊনিশ
১৯.২ উনিশ শতকের দুই সেরা মিডিয়া ও দুই জাদুকর
১৯.৩ প্ল্যানচেটের ওপর আঘাত হেনেছিল যে বই
১৯.৪ স্বামী অভেদানন্দ ও প্রেত-বৈঠক
১৯.৫ বন্ধনমুক্তির খেলায় ভারতীয় জাদুকর
১৯.৬ রবীন্দ্রনাথের প্ল্যানচেট-চর্চা
২০. অধ্যায়ঃ বিশ