শ্রীকৃষ্ণ যে অর্জুনকে ‘বিশ্বদর্শন’ করিয়েছিলেন—তা কি সম্মোহন ছিল? হিটলার যে একটা গোটা জাতিকে হিষ্টিরিক করে তুলেছিলেন জাতিকে তাঁর একান্ত বাধ্য করে তুলেছিলেন, তাকে কি হিটলারের সম্মোহন শক্তি বলা যায়? রজনীশ কি তার চোখ ও কথা দিয়ে মানুষকে সম্মোহন করে রাখতেন? আমরা যে অভিনয় দেখতে দেখতে হাসি, কাঁদি, ক্রুদ্ধ হই, উত্তেজিত হই, তাকে কি অভিনেতার সম্মোহনী শক্তি বলবো? মহরমে বা চরকে ভক্তরা যে নিজেদের শরীরকে কষ্ট দেয় কিন্তু কষ্ট অনুভব করে না—এর কারণ কি সেই সময় তারা আত্মসম্মোহিত থাকে?
শ্রীকৃষ্ণ-অর্জুন মহাভারতের দুটি চরিত্র। দুটি চরিত্র-ই কাল্পনিক। সুতরাং বিশ্বদর্শনের গল্পটা সরিয়ে রেখে বাকি ঘটনাগুলো সম্পর্কে বলতে পারি—হ্যাঁ প্রত্যেকটি ঘটনাই সম্মোহন বা আত্মসম্মোহনের উদাহরণ।
যিশু ছিলেন ভবঘুরে মানুষ। গরিব ঝুপড়িবাসী রোগীদের মাথায় পরম স্নেহে হাত বুলিয়ে দিতেন। হাত বুলিয়ে দিতেন তাদের সারা শরীরে। মানসিকভাবে রোগীদের উপসর্গের অনেকটাই কমে যেত। যেমন সহানুভূতিসম্পন্ন সুন্দর ব্যবহার করা ডাক্তার ঘরে ঢুকলেই রোগী অনেকটাই সুস্থ মনে করে—তেমনটা। এতো জেনে বা না জেনে সম্মোহন ।
নবী মুহাম্মদ ইসলাম ধর্মের প্রচারের জন্য তাঁর অনুগামীদের বলেছিলেন, নামাজ পড়বে, রোজা রাখবে ও জিহাদে প্রয়োজনে জীবন উৎসর্গ করবে। ‘জিহাদ’ হল অমুসলমানদের বিরুদ্ধে ধর্মান্তরিত করার জন্য সহিংস আক্রমণ। জিহাদে প্রাণ গেলে সে সরাসরি বেহেস্তে যাবে। তার জন্য অপেক্ষা করবে সুন্দরী চিরযৌবনা যুবতী থেকে আরো নানা ভোগের সামগ্রী। তাঁর অনুরাগীরা সম্মোহিত হয়ে এসবে বিশ্বাস করেছিলেন।
প্রাচীনযুগে ভারত, চীন ও গ্রিসে সভ্যতার আদিপর্বে ধর্মগুরুরা সাধারণ নাগরিক থেকে রাজা-মন্ত্রী- সেনানায়ক-আমলাদের ভয় ও ভক্তি আদায় করেছিল। তখন চিকিৎসক ছিলেন ধর্মগুরুরা। তাঁরাই মন্ত্র-তন্ত্র -পুজো- জাদুবিদ্যা ইত্যাদি মিশিয়ে চিকিৎসা করতেন। অথর্ব বেদে সম্মোহনের উল্লেখ দেখতে পাই। মহাভারতেও সম্মোহনের প্রয়োগের উল্লেখ আছে।
প্রাচীনযুগে সম্মোহনের যে মর্যাদা ছিল মধ্যযুগে সেই মর্যাদা হারিয়ে সম্মোহন হয়ে দাঁড়ায় ‘ব্ল্যাক-ম্যাজিক’ বা ডাকিনীবিদ্যা। কাপালিকা বা তান্ত্রিকরা ইচ্ছে করলেই তাদের সম্মোহন শক্তির দ্বারা ক্ষতি করতে পারে, এমন একটা ভ্রান্ত ধারণার বশে আজো অনেকেই এদের সযত্নে এড়িয়ে চলেন।
সম্মোহনের নানা মত মত
‘সম্মোহন’-এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘হিপনোটিজম্’ (Hypnotism)। ‘হিপনোটিজম্’ কথাটি আবার এসেছে ‘হিপনোসিস্’ (Hypnosis) কথা থেকে। ‘হিপনোসিস্’ কথার অর্থ ‘ঘুম’। স্বাভাবিক ঘুমের সঙ্গে অনেক সাদৃশ্য থাকলেও ‘সম্মোহন ঘুম’ আর ‘স্বাভাবিক ঘুম’ এক নয়, কারণ অ-সাদৃশ্যও কম নয়। তবে এটা বলা যায়, সম্মোহন জেগে থাকা ঘুমের একটা অন্তর্বর্তী অবস্থা
আধ্যাত্মিকতাবাদ ও জাদুবিদ্যার কবল থেকে মনোবিজ্ঞানকে মুক্ত করে বিজ্ঞানের পর্যায়ে উন্নত করতে প্রচুর বাধার মুখে পড়তে হয়েছিল। সম্মোহনের ক্ষেত্রে এই বাধা ছিল আরো বহুগুণ বেশি। কারণ, এখানে রয়েছে অন্ধ বিশ্বাস ও কুসংস্কার।
ডা. ফ্রাঞ্জ আন্তন মেসমার (Dr. Franz Anton Mesmer)
আধুনিক যুগের সম্মোহনের সূচনা করেন জার্মান চিকিৎসক ডা. মেসমার। জন্ম ১৭৩৪ সালে। কৈশোর ও যৌবনে জ্যোতিষশাস্ত্র নিয়ে পড়াশোনা করেছিলেন। তিনি বিশ্বাস করতেন মানুষের শরীর ও মনের ওপর গ্রহ-নক্ষত্র এবং চুম্বকের প্রভাব আছে। হিস্টিরিয়া, ভর হওয়া রোগীদের সংখ্যা সে-সময় যথেষ্টই ছিল। মেসমার এইসব রোগীদের সাজেশন দিতেন অর্থাৎ তাঁদের মনে ধারণা সঞ্চার করতেন, “তাঁরা ভালো হয়ে উঠছেন’। পাশাপাশি শরীরে নানা আকারের চুম্বক বসিয়ে দিতেন। মেসমার বলতেন, বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে এক ধরনের তরল পদার্থ প্রবাহিত হয়ে চলেছে। এই পদার্থ মানবদেহেও প্রবাহিত হচ্ছে। ডা. মেসমার এই প্রবাহের নাম দিয়েছিলেন animal magnatism। মানুষের দেহে এই প্রবাহে কোনো ধরনের ভারসাম্যের অভাব হলে অসুখ হয়। প্রবাহের ভারসাম্য ঠিক করে দিলেই রোগ সেরে যায়।
ডা. মেসমার তাদেরই চিকিৎসা করতেন যারা মানসিক রোগী। মানসিক রোগীকে আরাম করে চেয়ারে বসার ব্যবস্থা করতেন। শরীরের কোনো কোনো অংশে বেঁধে দিতেন চুম্বকের টুকরো। ঘর থাকতো আলো-আঁধারে ঢাকা। রোগী যে চেয়ারে বসতেন, তাঁর উল্টো দিকের একটা আরাম চেয়ারে বসতেন মেসমার। মেসমার রোগী বা রোগিণীর হাঁটুতে হাঁটু ঠেকিয়ে বসতেন। রোগীকে সাজেশন দিতেন রিল্যাকসেশনের। তারপর একসময় সাজেশন দিতেন—তোমার ভালো লাগছে। শরীরের অসুবিধে এখন নেই। ভালো আছো…ভালো থাকবে ইত্যাদি। এই সময় মেসমারের আঙুলগুলো রোগীণির শরীরের নানা অংশে বোলাতেন।
হিস্টিরিয়া রোগিণীর সংখ্যা সে যুগ থেকে এ যুগে পুরুষদের চেয়ে অনেক বেশি। সুতরাং মেসমারের কাছে রোগীর চেয়ে রোগিণি আসতেন অনেক বেশি। এবং এঁদের বেশির ভাগই ছিলেন অভিজাত সম্প্রদায়ের তরুণী। ফলে নিন্দুকেরা মেসমারের নিন্দে করার সুযোগ পেয়েছিল। তবে এও সত্যি – মেসমার কিছু মানসিক রোগী ও রোগিণীকে সুস্থ করে তুলেছিলেন। তাদের অনেকেই মানসিক কারণে শারীরিক অসুখে ভুগতেন। মেসমার কথার জাদুতে তাদের প্রগাঢ় বিশ্বাস অর্জন করেছিলেন। ফলে তারা মেসমারের সাজেশনে সুস্থ হয়ে উঠতেন।
ডা. মেসমারের বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠল, তিনি প্রতারণা করছেন। ডা. মেসমার চলে আসেন প্যারিসে। সময়টা ছিল ১৭৭৮ সাল। এই সময় প্যারিসে তখন বিদ্বজনের পাশাপাশি রমরমা ছিল জ্যোতিষী থেকে ব্ল্যাক ম্যাজিকের। এমন এক বিচিত্র সময়ে বিচিত্র চিকিৎসার জমজমাট ব্যবসা খুলে বসলেন বিশাল ধনী ডা. মেসমার। এখানে তিনি গ্রুপ থেরাপি বা গণসম্মোহন করতে লাগলেন। এক একটা গ্রুপে পনেরো থেকে কুড়িজন রোগী-রোগিণী থাকতেন। বড় একটা হলঘরে রোগীরা হাত ধরাধরি করে গোল হয়ে দাঁড়াতেন, ঘরের মেঝে ছিল পুরু গদিতে মোড়া। দেওয়াল মোড়া বড় বড় আয়নায়, ঘরের মাঝখানে একটা বড় গামলায় চুম্বক ডুবিয়ে রাখা হতো। গামলার জলের থেকে মাথা উঁচু করে থাকত কয়েকটা ধাতুর রড। রডের সঙ্গে জড়ান থাকত পনের-কুড়িটা ধাতুর তার।
সেই তার ছোঁয়ানো হতো রোগীদের শরীরের বিভিন্ন অঙ্গে। এই গণসম্মোহন চলাকালীন সুন্দর মিউজিক বাজানো হত হালকা সুরে। ডা. মেসমার সাজেশন দিতে থাকেন। এই সম্মোহন চিকিৎসার নাম ছিল ‘মেসমারিজম’।
ডা. মেসমারের জনপ্রিয়তার প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসকরা নিজেদের ও বিজ্ঞানের বিপদ দেখতে পেলেন। তাঁরা রাজা ষোড়শ লুইয়ের কাছে দরবার করলেন। রাজা ১৭৮৪ সালে একটা কমিশন তৈরি করলেন। এঁদের উপর দায়িত্ব দিলেন ডা. মেসমারের প্রাণী-চুম্বকত্বের তত্ত্বের সত্যতা নির্ধারণ করতে। কমিশন পর্যবেক্ষণের পর ডা. মেসমারের তত্ত্ব বাতিল করে দেন। কমিশন বলেন, বহু ধরনের রোগ আছে, যা শরীরের প্রতিরোধ ব্যবস্থার ফলে আপনা-আপনি সেরে যায়। আর সেরেছে সেই সব শারীরিক রোগ যা মানসিক কারণে সৃষ্টি হয়েছিল। এগুলো সেরে ওঠার পিছনে ছিল ডা. মেসমারের প্রতি অন্ধ বিশ্বাস। এঁরা কেউই প্রাণী-চুম্বকত্বের কারণে সুস্থ হয়নি। আর কিছু রোগী সুস্থ হয়েছেন ডা. মেসমারের সাজেশন দেওয়ার ক্ষমতায় বা রোগীদের মনে ধারণা সঞ্চারের কারণে।
কমিশন তৈরি হয়েছিল তিনজন বিখ্যাত বিজ্ঞানীকে নিয়ে। তাঁরা হলেন বেঞ্জামিন ফ্রাঙ্কলিন (কমিশনের চেয়ারম্যান) এবং আন্তন ল্যাভয়েসিয়র এবং ডা. গিলোটিন (যিনি গিলোটিন-এর স্রষ্টা)। ওঁরা পরিষ্কার সাদা জলকে চুম্বক ডোবান জল বলে তাতে ডোবান ধাতুর দণ্ড থেকে ধাতুর তার নিয়ে রোগীদের ছুঁইয়ে সাজেশন দিতেই রোগীদের মধ্যে অনেকেই জ্ঞান হারিয়ে ছিলেন। এ-সবই ছিল রোগীদের মধ্যে সঞ্চারিত ধারণার ফল।
ডা. জন এলিসন (John Ellitson )
জন্ম ১৭৯১ সালে ইংলন্ডে। পেশাগতভাবে তিনি ছিলেন মেডিসিনের অধ্যাপক। এই সময় তিনি বহু মৃগীরোগী (epilepsy), হিস্টিরিয়া রোগী, মানসিক কারণে হাঁপানি, মানসিক কারণে তোতলা ও শরীরের কোনো অঙ্গের অসারতার রোগীকে সম্মোহন করে সাজেশন দিয়ে সারিয়ে তোলেন ।
তিনি মনে করতেন, সাইকোসোমাটিক ডিজিজের ক্ষেত্রে সম্মোহন খুবই কার্যকর। এমনকি যে কোনো রোগের বেলাতেই রোগীর মানসিক শক্তি জোগাতে সম্মোহন তুলনাহীন।
জেমস্ ব্রেইড্ (James Braid )
‘মেসমারিজম’-এর অবৈজ্ঞানিক অংশকে বাদ দিয়ে, ওই তত্ত্বের ‘সাজেশন’ বা ‘রোগীর উপর ধারণা সঞ্চার’ বিষয়টিকে মনোবিজ্ঞানের ভিত্তির উপর প্রতিষ্ঠা করেন জেমস্ ব্রেইড। তাঁর হাত ধরেই
সম্মোহন বিদ্যা আধুনিক যুগে পা রাখে ।
ব্রেইডের জন্ম ১৭৯৫ সালে স্কটল্যান্ডে। তিনি ছিলেন একজন বিশিষ্ট শল্যচিকিৎসক।
১৮৪১ সালের ঘটনা। ফ্রান্সের একজন মেসমারিজম নিয়ে একটা প্রদর্শনীর ব্যবস্থা প্রদর্শনীতে করেন। মেসমারিজম-এ সাজেশনের কার্যকর ভূমিকা দেখে ব্ৰেইড বিষয়টা নিয়ে গভীরভাবে আগ্রহী হন ।
দীর্ঘ পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়ে তিনি কিছু সিদ্ধান্তে হাজির হন। তিনি মেসমারের magnetic fluid (বিশ্বব্রহ্মাণ্ড জুড়ে প্রবাহিত তরল চুম্বক তত্ত্ব) বাতিল করে দেন ১৮৪৭ সালে। তিনি বলেন, গভীর মনোসংযোগ অবস্থায় কোনো ব্যক্তি ‘সাজেশন’ শুনতে থাকলে তার মধ্যে শারীরিকগত ও আচরণগত কিছু পরিবর্তন ঘটে।
এই সাজেশন পদ্ধতির সাহায্যে গভীর মনোসংযোগকারী আধাঘুম- আধাজরগরণের এক অবস্থায় চলে যায়। এই পদ্ধতিকে আমরা Mesmorism না বলে Hypnotism (হিপনোটিজম) বলব। মেসমারের নামে যে তত্ত্ব রয়েছে, তাতে কিছু ভুল ও কিছু ঠিক তত্ত্ব আছে। ভুল তত্ত্বকে ছেঁটে ফেলতে হলে শব্দটাকেও বাতিল করতে হয়।
মেসমার রোগীকে যে সাজেশন দিলেন তার কার্যকারিতা সম্বন্ধে তিনি জেনে বা না জেনেই সাজেশন দিতেন। আর সাজেশনের চেয়ে অনেক বেশি যে বিষয়ে গুরুত্ব দিতেন, সেই চুম্বক ছিল একেবারেই ভূমিকাহীন।
সাজেশনে রোগীদের যে আধাঘুম- আধাজাগরণ অবস্থা তৈরি হয় তাকে ‘ঘুম’ বা হিপানোসিস-ই বলব। ‘হিপানোসিস’ একটা গ্রিক শব্দ যার মানে ‘ঘুম’। এসবই বললেন ব্ৰেইড ।
ডা. জেমস ব্রেইড-এর মতেঃ
* সম্মোহিত অবস্থায় আনার জন্য সাজেশন দেওয়ার ফলে মস্তিষ্কের স্নায়ুকোষে এক ধরনের পরিবর্তন আসে। একে বলতে পারি মানসিক পরিবর্তন। এই পরিবর্তন সাধারণ ঘুমে দেখা যায় না।
* অপারেশনের আগে রোগীকে যদি সাজেশন দেওয়া হয় যে তার শরীরের ওই বিশেষ অংশ অবশ হয়ে গেছে, ব্যথা-যন্ত্রণা হচ্ছে না—তবে অনেক সময়ই দেখা যায় শরীরের ওই অংশ অবশ হয়ে গেছে। এই অবস্থায় অপারেশন করলে রোগী ব্যথা অনুভব করে না অথবা খুব সামান্য ব্যথা অনুভব করে।
* রিল্যাকসেশন-এর সাজেশন দিয়ে একজন মানুষের নাড়ির স্পন্দন বা ব্লাডপ্রেশার কন্ট্রোল করা যায়।
* হিস্টিরিয়াসহ বিভিন্ন স্নায়ুরোগ সম্মোহনের সাহায্যে সারিয়ে তোলা যায় ।
* মানসিক কারণে শরীরের নানা ধরনের রোগ যথা কোনো অঙ্গের অবশতা, যন্ত্রণা ইত্যাদি সারিয়ে তোলা যায় ।
জাঁ মার্টিন সার্কো (Jahn Martin Charcot )
ডা. ব্রেইড-এর সঙ্গে এক নিশ্বাসে আর একজন স্নায়ুরোগ চিকিৎসকের নাম করতে হয়, তিনি হলেন ডা. জাঁ মার্টিন সার্কো। এইজন্য ডা. ব্রেইডের সঙ্গে শার্কোর নাম উচ্চারণের দাবি রাখে, কারণ তাঁর কাছে স্নায়ুরোগ বিষয়ে হাতে-কলমে শিখতে হাজির হয়েছিলেন ডা. বার্নহিম, ডা. পিয়ারে জ্যানে, ডা. সসমান্ড ফ্রয়েড-এর মতো বিখ্যাত স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞরা।
ডা. শার্কোর জন্ম ১৮২৫ সালে। তিনি প্যারিসের একটি হাসপাতালে ও নিজের ক্লিনিকে চিকিৎসা করতেন। দূরদূরান্তের স্নায়ুরোগীরা আসতেন। তাঁদের মধ্যে বেশকিছু মৃগীরোগী (epilepsy) ও বায়ুরোগী বা মূর্ছারোগীও (hysteria) থাকতেন। সম্মোহনের সাহায্যে এঁদের ভালো করে তোলার চেষ্টা হত। মৃগীরোগী বা এপিলেপসি রোগীরা সম্মোহনে আরোগ্য লাভ করত না। এপিলেপসি রোগের আক্রমণ আরম্ভ হয় কোনোরকম আভাস না দিয়ে। সাধারণভাবে রোগীর সব মাংসপেশী শক্ত হয়ে যায় এই সময় রোগীর জ্ঞান থাকে না। যেহেতু মৃগী বা এপিলেপসি রোগী রোগ আক্রমণের শুরুতেই জ্ঞান হারায়, তাই আক্রান্ত অবস্থায় তাকে সাজেশন দেওয়া যায় না ।
হিস্টিরিয়া হয় সাধারণভাবে অবদমিত মানসিক অবস্থা থেকে, উৎকণ্ঠা থেকে, পাপবোধ থেকে, যৌন- অবদমন থেকে ইত্যাদি। ভূতে ভর, ঈশ্বরে ভরও সাধারণত হিস্টিরিয়া রোগ থেকে হয়। হিস্টিরিয়া রোগের ক্ষেত্রে সম্মোহন করে রোগীর মনে ধারণা সঞ্চার করে অর্থাৎ সাজেশন পাঠিয়ে যথেষ্ট ভালো ফল পাওয়া যায়। দাঁতে দাঁত চেপে হিস্টিরিয়া রোগীরা যে মূর্ছা যায়, তাতেও কিন্তু রোগী জ্ঞান হারায় না। দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য অবচেতনভাবে অজ্ঞানের অভিনয় করে।
একসময় শার্কো দেখলেন, হিস্টিরিয়া রোগীরা এপিলেপসি রোগীদের সঙ্গে একসাথে থাকার ফলে দাঁতে দাঁত চাপায় অভ্যস্ত হয়েছে। এটা যে অনেক সময় লোক দেখানো ব্যাপার–সেটাও অনুভব করেন।
তবে একটা ভুল কিন্তু শার্কোর মধ্যে ছিল। তিনি ও তাঁর ছাত্রদের অনেকেই সাজেশনের পাশাপাশি চুম্বকের ব্যবহারে বিশ্বাস ছিলেন।
শার্কোর তিন বিখ্যাত চিকিৎসক ছাত্র ডা. জ্যানে, ডা. বার্নহিম এবং ডা. ফ্রয়েডসহ আরো কিছু ছাত্র তাঁর চুম্বকতত্ত্বকে বিজ্ঞান বিরোধী বলে ঘোষণা করে সাজেশনের কার্যকর ভূমিকাকে গ্রহণ করলেন ।
১৮৯৩ সালে শার্কোর মৃত্যু হয়। স্নায়ুরোগে শার্কোর সম্মোহন চিকিৎসার অবদান আজো চিকিৎসা বিজ্ঞান স্বীকার করে।
ডা. এ লিউবোল্ট (Dr. A. Lieubeault)
ডা. এ লিউবোন্ট ছিলেন জনপ্রিয় হিপনোথেরাপিস্ট। তাঁর কাজের ক্ষেত্র ছিল ফ্রান্সের ন্যান্সিতে। তিনি কয়েক হাজার মানসিক রোগীকে রোগমুক্ত করে প্রমাণ করেন রোগ সারিয়ে তোলার ব্যাপারে সাজেশনের ভূমিকা অসাধারণ।
তাঁর সম্মোহন চিকিৎসার সাফল্যের কথা শুনে ডা. বার্নহিম ন্যান্সিতে এসে হাজির হন। লিউবোল্ড-এর অসাধারণ চিকিৎসা পদ্ধতি ও সাফল্য দেখে তাঁর ঘনিষ্ঠ বন্ধু হয়ে পড়েন। এবং একসঙ্গে চিকিৎসা শুরু করেন।
ডা. এইচ বাৰ্নহিম (Dr. H. Bernheim )
ডা. বার্নহিম ডা. শার্কোর কাছে গিয়েছিলেন সম্মোহন চিকিৎসা বিষয়ে ভালোমতো জানতে। ডা. লিউবোল্টের সম্মোহন চিকিৎসার অসাধারণ সাফল্যের কথা শুনে তাঁর এক রোগীকে নিয়ে যান ডা. লিউবোল্টের কাছে। এই রোগী বাতের জন্য অঙ্গ অবক্ষতায় ভুগছিলেন। ডা. বার্নহিম রোগীকে ছ’মাস চিকিৎসা করেন কিন্তু সারিয়ে তুলতে ব্যর্থ হন। ডা. লিউবোন্টকে রোগীর বর্ণনা দিয়ে তাঁর সঙ্গে রোগী নিয়ে সাক্ষাতের ইচ্ছে প্রকাশ করেন। ডা. লিউবোন্টের সম্মতি নিয়ে
রোগীসহ ন্যান্সিতে আসেন। লিউবোন্ট সম্মোহন ডা. চিকিৎসার সাহায্যে কিছুদিনের মধ্যেই রোগীকে সুস্থ করে তোলেন।
মুগ্ধ বার্নহিম জুটি বাঁধেন লিউবোল্টের সঙ্গে লিউবোন্ট ও বার্নহিম দুজনে মিলে ৩০ হাজার রোগীকে সম্মোহনের সাহায্যে সুস্থ করে তুলেছিলেন। রোগীদের কেসহিস্ট্রি লিখে রাখতেন ডা. বার্নহিম ১৮৮৪ সালে ডা. বার্নহিমের লেখা একটি বই প্রকাশিত হল। নামঃ The La Suggestion, বাংলা শব্দার্থ করে বলতে পারি ‘সাজেশন দেওয়ার আইন’। ১৯৮৬ সালেই আরো একটি বই প্রকাশিত হল। নামঃ Therapeutic Suggestive’; লেখক ডা. বার্নহিম।
এই গ্রন্থ দুটিতে সম্মোহন চিকিৎসা বিষয়ে তাঁদের বাস্তব অভিজ্ঞতার বর্ণনা আছে। গ্রন্থ দুটি চিকিৎসা জগতে আলোড়ন তুলেছিল।
গ্রন্থ দুটি প্রকাশের ফলশ্রুতিতে ১৯৯১ সালে ‘ব্রিটিশ মেডিক্যাল অ্যাসোসিয়েশন’ কিছু বিশিষ্ট চিকিৎসকদের নিয়ে একটা কমিশন তৈরি করে। কমিশনের দায়িত্ব দেওয়া হয়— সম্মোহনের উপর অনুসন্ধান চালিয়ে দেখা চিকিৎসা ক্ষেত্রে সম্মোহনের কার্যকারিতা কতটা । কমিশন তাঁদের পেশ করা রিপোর্টে জানানঃ
* সম্মোহন ইন্দ্রিয়কে প্রভাবিত করে।
* সম্মোহনের দ্বারা শারীরিক ও মানসিক পরিবর্তন ঘটানো সম্ভব।
* শারীরক পরিবর্তনের মধ্যে রয়েছে শ্বাস-প্রশ্বাসের ক্রিয়াকে দ্রুততর বা শ্লথগতির করা। মনে প্রশান্তি আনা অর্থাৎ রিলাক্স করায়। নাড়ির গতিতে পরিবর্তন আনতে সক্ষম। শরীরের কোনো অংশে অসাড়তা আনে, অসাড় অংশে সাড় আনে। অনিদ্রা রোগীকে সাজেশন দিয়ে ঘুম পাড়ান যায়। ব্যথা দূর করে ইত্যাদি। ইচ্ছাশক্তি ও ব্যক্তিত্ব বাড়ে।
* নেশা দূর করতে সাহায্য করে।
* যে কোনো রোগীকেই মানসিক শক্তি জোগায় ।
* সম্মোহন চিকিৎসার ভূমিকাকে স্বীকার করছে কমিশন।
আরো অনেক নতুন নতুন তত্ত্ব নিয়ে এলেন মেতেল, জিমসেন, ভেরওর্ন এবং বেকটেরেফ। ভেরওর্ন বললেন, সম্মোহন হল অতি জাগ্রত অবস্থা অর্থাৎ এই অবস্থায় মানুষের মস্তিষ্ক থাকে সবচেয়ে সজাগ। বেকটেরেফ বললেন—সম্মোহন হল স্বাভাবিক ঘুমেরই রকমফের।
এলেন ফ্রান্সের এক বিখ্যাত মনোবিদ পিয়ারে জ্যানেট (Piarey Janet)। তিনি মানুষের সচেতন মনের (Conscious) এবং অবচেতন মনের (Sub-conscious) স্তরের কথা বললেন। এলেন ভিয়েনার এক বিখ্যাত চিকিৎসক যোসেফ ব্রুয়ার (Dr. Joseph Breuer)। তিনি রোগীকে সম্মোহনের সাহায্যে অতীত জীবনে (পূর্বজন্মে নয়) নিয়ে যেতে সমর্থ হন। ফলে অতীতের কোন্ বিশেষ ঘটনা মানসিক রোগ বা সাইকোসোমটিক রোগের কারণ—তা খুঁজে বের করা সহজ হল।
ড. সিগমান্ড ফ্রয়েড (Dr. Sigmund Freud )
ফ্রয়েড হাজির হলেন তাঁর সাইকো-অ্যানালিটিক তত্ত্ব নিয়ে। ডা. সিগমান্ড জন্মেছিলেন ১৮৫৬ সালে। মৃত্যু ১৯৩৯ সালে। ফ্রয়েড ছিলেন স্নায়ুরোগ বিশেষজ্ঞ। তাঁর চিকিৎসা জীবনের একটা সময়ে সম্মোহন বিষয়ে আগ্রহ হারান।
১৯৮৮তে সম্মোহনের সাজেশন ও থেরাপির উপর একটা বই লেখেন। বইটিতে শার্কো, বার্নহিম এবং লিউবোল্ট-এর সম্মোহন তত্ত্ব নিয়ে আলোচনা আছে।
ফ্রয়েডের মতে সম্মোহনকারী ও সম্মোহিতের মধ্যে ‘সম্পর্ক’ বা ‘raport’ গড়ে ওঠাটা অত্যন্ত জরুরি। যিনি সম্মোহন করবেন তাঁর যেমন নিজের সম্মোহন করার ক্ষমতার উপর দৃঢ় বিশ্বাস থাকাটা দরকার। তেমনই রোগীরও সম্মোহনকারীর উপর আস্থা অর্জন করাটাও খুবই দরকার।
ফ্রয়েড বেশ কয়েকটা বছর বিভিন্ন স্নায়ুরোগীদের উপর সম্মোহন চিকিৎসা চালান। তিনি নানা মানসিক সমস্যা থেকে উত্তরণের জন্য সম্মোহনের সাহায্য নিতেন। সম্মোহন চিকিৎসার ক্ষেত্রে অনেক সময়ই তিনি ব্যর্থ হয়েছেন। সম্ভবত নিজের সম্মোহন করার ক্ষমতার উপর তিনি পুরোপুরি আস্থাশীল ছিলেন না তাই এই ব্যর্থতা। একসময় ফ্রয়েড নিজেকে সম্মোহন চিকিৎসা থেকে সরিয়ে আনেন !
ফ্রয়েড মনে করতেন, সম্মোহিত অবস্থায় মানুষ তার মনে চাপা পড়ে থাকা অনেক ইচ্ছে, ঘটনার কথা মনে করতে পারে, যা সজাগ অবস্থায় মনে আনতে পারে না। নানা প্রশ্ন করেও সেই অচেতন গোপন স্তরের খবর জানা যায় না। ফ্রয়েড এই অচেতন স্তরের নাম দিলেন ‘The Unconscious’ বা ‘অচেতন’ স্তর। ফ্রয়েড সিদ্ধান্তে পৌছলেন, স্বপ্ন-ই অচেতন মনের হদিশ দিতে পারে।
আমাদের সহজাত প্রবৃত্তিগুলোর মধ্যে একটি হল যৌনতা। ফ্রয়েডের মতে আমরা সকলেই কামনার দ্বারা কর্মপ্রেরণা পাচ্ছি। এবং একইসঙ্গে সমাজে নিজের সম্মানকে বাঁচাতে এইসব কামচিন্তাকে গোপন করে রাখি। এই যে সম্মান রাখতে গোপন করার চেষ্টা——–একে বলে ‘ইগো’ (ego) বা অহং। এই ইগোর সঙ্গে যৌনপ্রবৃত্তির লড়াই চিরন্তন চলছে। শৈশবে মা-বাবার প্রতি ছেলে ও মেয়ের কামনা থাকে। একে বলে ‘ঈডিপাস কমপ্লেক্স’। – এসবই ফ্রয়েডের চিন্তা-ভাবনা তত্ত্ব।
ইগোরও আবার স্তরবিন্যাস করেছিলেন ফ্রয়েড। ইগো, সুপারইগো, ইদ্। তাঁর তত্ত্বে সংযোজিত হয়েছিল ‘Libido’ শব্দটি, যার অর্থ ‘কামশক্তি’। ফ্রয়েড মনে করতেন, কর্মোদ্যোগের পিছনে থাকে যৌনাকামনা বা কামশক্তি। এই শক্তি কখনো কাজ করে অচেতন মনে, কখনো বা সচেতন মনে।
ফ্রয়েড তাঁর লিবিডোতত্ত্ব হাজির করেছেন স্বপ্নে। তাঁর মতে স্বপ্নে আমরা যা দেখি তার মধ্যে বহু ক্ষেত্রেই থাকে লিঙ্গ ও যোনি। ছাতি, লাঠি, কলা, কলম, ছুরি, ছোরা, সাপ, বানমাছ ইত্যাদিরা সবই লিঙ্গের প্রতীক। আর বাক্স, কাবার্ড, গলি, নৌকো, জাহাজ—সবই যোনির প্রতীক। আপেল, নাসপাতি, কমলালেবু ইত্যাদি গোল ধরনের ফল স্তনের প্রতীক। স্বপ্ন মানেই অবদমিত ইচ্ছের অভিব্যক্তি। জমিতে লাঙল দেওয়ার স্বপ্ন, বীজবপন ইত্যাদিকে অজাচার প্রবৃত্তির ইচ্ছের প্রতিফলন বলে মনে করতেন ফ্রয়েড।
ফ্রয়েড এই যৌনসর্বস্ব তত্ত্বের জন্যেই কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের মধ্যে পর্ণ পড়ার উত্তেজনা ছড়িয়ে তিনি একসময় খুবই জনপ্রিয় হয়েছিলেন। বিশেষ করে দর্শন বা ফিলজফির ছাত্র-ছাত্রীদের কাছে ফ্রয়েডের লিবিডো তত্ত্ব এতটাই জনপ্রিয় হয়েছিল যে ছাত্র-ছাত্রীদের বন্ধুরাও নিষিদ্ধ যৌনরসে ডুব দিতে ওইসব লেখা পড়তেন।
মানুষের মন নিয়ে যতই নতুন নতুন গবেষণা ও অগ্রগতি হতে লাগল, ততই ফ্রয়েডের তত্ত্বগুলো গুরুত্ব হারাতে লাগল। ১৯৫০ নাগাদ মাথা থেকে উত্তেজনা বা টেনশন দূর করার ট্রাংকিউলাইজার ও বিষণ্ণতা দূর করার অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ওষুধের সাফল্য প্রমাণিত হল। মানুষের মনের ভিত্তিভূমি যে মস্তিষ্ক তা যেমন প্রমাণিত হল, তেমনই প্রমাণিত হল মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের উত্তেজনা ও নিস্তেজনা মনকে প্রভাবিত করে। আরো গবেষণায় উঠে এলো সামাজিক ও অর্থনৈতিক পরিবেশ মানসিক অবস্থাকে প্রভাবিত করে। যতই সময় এগোতে লাগল ততই ফ্রয়েডের যৌনতাসর্বস্ব লিবিডোতত্ত্ব বাতিল হতে লাগল।
ইভান পেত্রভিচ পাভলভ ( Ivan Petroviech Pavlov)
পাভলভের জন্ম রাশিয়ায় ১৮৪৯ সালে। ছিলেন বিশিষ্ট শারীরবিদ (Physiologist) । ১৮৮৩ সালে ‘ডক্টর অফ মেডিসিন’ হন। ১৯০৪ সালে শারীরবিজ্ঞান বিভাগে নোবেল প্রাইজ পান। তাঁর সহকর্মী ও সমকালীন বিজ্ঞানীদের অনেকেই তাঁর conditional reflex (শর্তাধীন প্রতিফলন) তত্ত্ব নিয়ে উপহাস করতেন।
আপনারা অনেকেই সাপের খেলা দেখেছেন। সাপুড়েরা এক ধরনের শিকড় বের করে বলে, শিকড় ধরে থাকলে গন্ধে সাপ সেই ঘরে ঢোকে না। শিকড়টির কার্যকারিতা প্রমাণ করতে হাতের মুঠোয় সাপের গলাটা ধরে তার নাকের দিকে শিকড়টা নিয়ে যেতেই সাপ দ্রুত হাতের মুঠোয় মুখ ঢুকিয়ে দিতে তৎপর হয়।
এই ঘটনার পিছনেও আছে ‘কনডিশনড্ রিফ্লেক্স’। সাপুড়ে বেশ কিছুদিন ধরে তার পোষা সাপের মধ্যে এই ‘কনডিশনড্ রিফ্লেক্স’ তৈরি করেছে। শিকড়ের সাইজের একটা লোহার টুকরোকে গরম করে সাপের নাকে ঠেকাতেই সাপ ব্যথা পেয়েছে এবং বাঁচতে
পালাতে চেয়েছে। শিকড়টি নাকের কাছে আনলেই গরম ছ্যাকা খাওয়ার ভয় কাজ করছে তার মধ্যে। বারবার ছ্যাঁকা দিয়ে সাপের চেতনায় ঢুকিয়ে দিয়েছে একটা শর্ত—‘ছ্যাঁকা লাগবে’। আর সেই শর্তেল প্রতিফলনেই সাপ পালাতে চাইছে। এই ঘটনার সঙ্গে শিকড়টির ওষুধিগুণের কোনো সম্পর্ক নেই।
পাভলভ তাঁর পরীক্ষা চালিয়ে ছিলেন কুকুরদের ওপর। একটি কুকুরকে খাবার দেওয়ার সময় ঘণ্টা বাজান হল। খাবার দেখেই কুকুরটির জিভ থেকে লালা ঝরতে থাকে। কিছুদিন এমন চলার পর কুকুরটিকে খাবার না দিয়ে শুধু ঘণ্টা বাজানোতেই কুকুরটির জিভ থেকে লাল ঝরতে লাগল।
বিভিন্ন কুকুরের ওপর পরীক্ষা চালিয়ে দেখলেন, সবার বেলায় একই ধরনের ঘটনা ঘটছে। অর্থাৎ বিশেষ condition-এ বা বিশেষ শর্তে তার একই ধরনের reflex হয়। শারীরবৃত্তের এই তত্ত্বই পাভলভের মহান আবিষ্কার। পাভলভের মতে রিফ্লেক্স দু- ধরনের বলা যায়। একটা রিফ্লেক্স কাজ করে শরীরে, অন্যটি মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষে।
পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type
আইভান পাভলভের ( Ivan Pavlov) মনোবিজ্ঞান-তত্ত্বে আস্থাশীলেরা মনে করেন, মস্তিষ্ক-স্নায়ুকোষের বিশেষ কয়েকটা ‘ছক’ বা ‘টাইপ’ আছে।
এই ছক বা ‘টাইপ’ বুঝতে গেলে আগে বুঝতে হবে মস্তিষ্ককোষের স্নায়ুক্রিয়ার ‘ধর্ম” । স্নায়ুক্রিয়ার ধর্ম বা বৈশিষ্ট্য তিনটি। (১) শক্তি (strength), (২) গতিময়তা (mobility) ও (৩) ভারসাম্য (balance) ।
‘শক্তি’ হল মস্তিষ্ক-স্নায়ুকোষের সহ্য করার ক্ষমতা। মাফিয়া ডন আবু সালেম আর বেলেঘাটার স্টেশনারি দোকানের কর্মী জীতেনের মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের সহ্য ক্ষমতা সমান নয়। টাডা কোর্ট, সি বি আই, ঘণ্টার পর ঘণ্টা জেরার পরও আবু সালেমের মস্তিষ্ক— স্নায়ুকোষ সতেজ, একই রকম কর্মক্ষম।
আর জীতেন? পোলিও রোগী। শান্ত, সরল তার দোকানের উল্টোদিকের এক প্রাসাদ বাসিনীর এক তরফা প্রেমে পড়লো। মেয়েটি ব্যবসা করেন। আর মাস গেলে আয় তিরিশ থেকে চল্লিশ হাজার। মাঝে-মধ্যে এটা-সেটা কিনতে জীতেনের দোকানে আসেন। জীতেনের পোলিও রোগ এবং সুন্দর ব্যবহারের কারণে জীতেনের প্রতি করুণা ও সহানুভূতি আছে। জীতেনকে জীতুদা বলে সম্বোধন করেন। ভালো ব্যবহার করেন। এই করুণাকেই ভালবাসা বলে ধরে নিল জীতেন। জীতেনের মাস মাইনে সাতশো’। থাকে খালপাড়ের বস্তিতে। প্রেমের কথা মেয়েটিকে জানাতে পারেনি কোনোদিন। কিন্তু ওর দৃঢ় বিশ্বাস মেয়েটি ওকে ভালোবাসে। জীতেন এখন মানসিক রোগী। বিষয়টা এভাবে বিশ্লেষণ করা যায়—
জীতেনের দুর্বল টাইপের মস্তিষ্ক। সহ্য ক্ষমতা খুবই-ই দুর্বল। ফলে তার মস্তিষ্ক- স্নায়ুকোষে বিশৃঙ্খলা দেখা দিয়েছে। সাদা-মাটা কথায় পাগল।
‘গতিময়তা’ হল মস্তিষ্ক কোষের সেই গুণ, যা থাকলে একটি মানুষ দ্রুত একটি থেকে আরো একটি বিষয়ে মনোযোগ করতে পারে। এ দেশের রাজনীতিকদের দিকে তাকান। এদের বেশিরভাগ-ই একইসঙ্গে সাংসদ, বিধায়ক অথবা মন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন। পাবলিক রিলেশন, ক্যাডার রিলেশন, মাসলম্যানদের সঙ্গে যোগাযোগ, তোলা আদায়ের ভাগ নেওয়া, ক্যাডারদের খুশি রাখতে স্কুল- কলেজ হাসপাতালে অ্যাডমিশনের ব্যবস্থা করেন। খেলার জগতে কোনো দিন পা না রেখেও খেলার সর্বময় কর্তা হতে হয়। স্টেডিয়ামে মাঝেমধ্যে ফাংশন করতে হয়। মুম্বাই-চেন্নাই-কলকাতার সিনেমার স্টার-মেগাস্টার ও গায়ক-গায়িকা নাচক -নাচিকাদের ধরে আনতে হয়। এমনি হাজারো ঝক্কি-ঝামেলা সামলে বই লেখেন, নাটক করেন ইত্যাদি, ইত্যাদি। এঁদের মস্তিষ্ক কোষের গতিময়তা সাধারণ মানুষদের তুলনায় অনেক বেশি। বড় ব্যবসায়ী, শিল্পপতি, বহুজাতিক সংস্থার বড় এক্সিকিউটিভ থেকে দাউদ, তেলগির মতো অপরাধ জগতের বাদশাদেরও মস্তিষ্ককোষের গতিময়তা খুব-ই বেশি ।
সব মস্তিষ্কের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা সমান নয়। কেউ আবেগে গা ভাসান, উত্তেজনায় মাত্রাবোধ হারান, দুঃখে ভেঙে পড়েন, নিস্তেজনার শিকার হয়ে পড়েন। একমাত্র সন্তানের মৃত্যুতে বা প্রেমে ব্যর্থতায় মানসিক ভারসাম্য হারানো মানুষের সংখ্যা কম নয়। আবার আনন্দের আতিশয্যে আবেগতাড়িত মানুষ ও আমরা দেখেছি। দেশের ফুটবল টিমের জয়ে হিতাহিত জ্ঞানশূন্য হয়ে সমর্থকরা এলোপাথাড়ি গুলি চালিয়েছে, দুরন্ত বেগে মোটর চালিয়ে উল্লাস প্রকাশ করেছে। ওদের আনন্দের আতিশয্যে মরেছে বহু মানুষ। ওদের সবার-ই মস্তিষ্কের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা কম।
শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধীর স্বপ্ন ছিল পুত্র সঞ্জয়কে নিয়ে। তাঁকেই দেশের প্রধানমন্ত্রিত্বের গদিতে বসাবার চিন্তায় যখন মশগুল, তখন-ই সঞ্জয়ের মৃত্যু হল। এত বড় আঘাতের পরও শ্রীমতি গান্ধী শ্রীমতি গান্ধী-ই ছিলেন। তাঁর মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের ভারসাম্য বজায় রাখার ক্ষমতা ছিল অসম্ভব রকমের বেশি।
মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষের এই তিন ‘ধর্ম’ বা বৈশিষ্ট্যের মিশ্রণে তৈরি হয় বিভিন্ন টাইপ বা ছকের। এই টাইপ বা ছককে প্রধান চারটি ভাগে ভাগ করেছেন প্যাভলভ। (১) মেলানকলিক ( Melancholic), (২) কোলেরিক (Choleric), (৩) ফ্লোগমাটিক (Phlegmatic) ও ( 8 ) সাংগুইন (Sanguine) ।
১. মেলানকলিক বা বিষাদগ্রস্ত টাইপঃ ব্যাঙ্কের কেরানি বিনোদবাবু। ঘষটে স্কুল ফাইনাল পাস করতেই কাকা ব্যাঙ্কে কেরানি পদে ঢুকিয়ে দিয়েছিলেন। কাজে প্রচুর ভুল করেন। চুরি না করলে ব্যাঙ্কের চাকরি যায় না। বিনোদবাবুরও যায়নি। ভালো মাইনে। ব্যাঙ্ক লোনে বাড়ি করেছেন। বিয়ে করেছেন। সংসার বলতে বউ আর ছেলে। ব্যাঙ্ক কো- অপারিটিভে বাড়ি না করলেই ভালো হতো—এটা প্রতিদিনই মনে হয় বিনোদবাবুর। অফিসে যাঁদের কাছে অবজ্ঞার পাত্র হয়ে থাকতে হয়, অফিসের পর বাড়ি ফিরে আবার তাঁদের মুখ- ই দেখতে হয়। মনটা সব সময় বিষণ্ন। বাড়ি থেকে অফিস, অফিস থেকে বাড়ি—সব সময় মন খারাপ ।
কেমন আছেন? জিজ্ঞেস করলে একটাই উত্তর, ‘আর…চলছে, জিনিসপত্রের যা দাম? বাড়িতে অসুখ-বিসুখ লেগেই আছে। ভালো আর কোথায়? ভালো থাকার উপায় আছে?’ লাগাতার বিষণ্নতা এসেছে অফিসের কাজে আত্মবিশ্বাসের সভাব থেকে। প্যারেন্টস মিটিং-এ ডাক পড়লে কী করবেন, কী বলবেন ঠিক করতে না পেরে ছেলের সহপাঠীদের মা-বাবার কাছে দৌড়ে বেড়ান। ক্লাসটিচারের রুমে ঢোকার আগে অন্তত একবার টয়লেটে ঢুকতেই হয়। পরিবেশের সামান্য চাপেই বিনোদ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। ফলে সহকর্মীদের কাছে বিনোদ খোরাক’।
বিনোদ ‘মেলানকলিক’ টাইপের একটি উদাহরণ। ছা-পোষা আত্মবিশ্বাসহীন, মধ্যবিত্ত মানসিকতার মানুষদের মধ্যে এই ধরনের টাইপ বেশি দেখা যায়।
২. কোলেরিক বা অসহিষ্ণু টাইপঃ এরা অতিমাত্রায় উৎসাহী, অতিমাত্রায় আত্মবিশ্বাসী, অসহিষ্ণু, প্রাণশক্তি টগবগ করে ফুটছে। অস্থিরমতি, অসংযত, হঠকারি, ডিক্টেটর মানসিকতা থেকে বে-হিসেবি ঝুঁকি নিতে পারে। উচ্চাকাঙ্ক্ষা প্রবল। হিটলার থেকে ইন্দিরা গান্ধী কোলেরিক টাইপের সুন্দর উদাহরণ।
৩. ফ্ল্যেগমাটিকঃ ফ্লোগমাটিক বা শান্ত ধীর টাইপের মানুষরা অচঞ্চল, অধ্যবসায়ী, আঘাত সহ্য করতে পারেন উদাসীনতার সঙ্গে। এঁরা অক্লান্ত পরিশ্রমে ধীর-স্থির। ভেবে চিন্তে কাজ করেন। গভীর গবেষণায় আন্তরিকতার সঙ্গে দীর্ঘকাল লেগে থাকতে পারেন। বিফল হলেও ভেঙে পড়েন না। নতুন করে আবার কাজে মনোসংযোগ করেন। গবেষক, দার্শনিক ও চিন্তাবিদরা এই টাইপের স্নায়ুতন্ত্রের অধিকারী।
৪. সাংগুইনঃ ‘সাংগুইন’ বা ‘প্রত্যয়ী’ টাইপ মানুষরা একইসঙ্গে অনেক ধরনের কাজে মন বসাতে পারেন। দ্রুত এক বিষয় থেকে আর একটি বিষয়ে গভীরভাবে মনোসংযোগ করতে পারেন। রেগে গেলেও বাইরে প্রকাশ করেন না। আনন্দে সংযম থাকতে পারেন। দ্রুত বিচার করার ও সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষমতা রাখেন। এইসব গুণের সমাহার সাধারণভাবে একজন প্রতিষ্ঠিত রাজনীতিকদের মধ্যে থাকে।
মস্তিষ্কের বিশেষ ধর্মের এই যে চারটি শ্রেণি বিভাজন বা টাইপ বিভাজন করেছিলেন পাভলভ, তাকে চূড়ান্ত বা অভ্রান্ত ধরে নিয়ে ভুল হবে।
কুড়ি বছর আগে ‘অলৌকিক নয়, বিভাজনের পক্ষে মত পোষণ করেছিলাম, হবে—একজন যুক্তিবাদী সর্বশেষ সংগৃহীত তথ্যের ভিত্তিতে কোনো মত প্রকাশ করেন। পরবর্তীকালে ঈশ্বরের অস্তিত্ব, জ্যোতিষশাস্ত্রের অভ্রান্ততা অথবা ঘোড়ার ডিমের অস্তিত্বও তো প্রমাণ হতে পারে, এমন নির্বোধ ভাবনার দ্বারা পরিচালিত হন না ।
লৌকিক’ গ্রন্থের প্রথম খণ্ডে পাভলভের এমন সেটাকে সর্বশেষ তত্ত্ব ধরে নিয়ে। মনে রাখতে
একসময় ফ্রয়েডের তত্ত্ব বিশ্বকে প্রচণ্ডভাবে নাড়া দিয়েছিল। কিন্তু আজ সিগমন্ড ফ্রয়েড (Sigmund Freud)-এর অতি যৌনতা (Pan-sexualism) তত্ত্ব বাতিল হয়ে গেছে। ফ্রয়েডের তত্ত্ব এখন স্থান পেয়েছে মনোবিজ্ঞানে নয়, মনোবিজ্ঞানের ইতিহাসে।
সর্বশেষ পাওয়া তত্ত্ব ও তথ্যের ভিত্তিতে এটা বলতেই পারি—পাভলভের করা মস্তিষ্ক- স্নায়ুকোষের ‘টাইপ’ অনুসারে এক একটা মানুষকে এক একটা খোপে ঢুকিয়ে দিলে ভুল হওয়ার যথেষ্ট সম্ভাবনা থেকে যায়। কারণ (১) মানুষের জীবনের উত্থান-পতন, পরিবর্তিত পরিবেশ সবই তার ‘টাইপ’ বা ছক পাল্টে দিতে পারে। (২) এক একটি ঘটনাও মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষকে সাময়িকভাবে পাল্টে দিতে পারে, যাতে আপনার ‘টাইপ’ ক্যালকুলেশন ভুল হবে। ২০০৪ এর নভেম্বরে ভারত-দক্ষিণ আফ্রিকার এক দিনের ক্রিকেট ম্যাচের কথা ভাবুন। সৌরভ টিম থেকে বাদ। দল নির্বাচক থেকে কোচ সবাই মনে করছেন সৌরভের বর্তমান ফর্ম খারাপ। বাঙালিদের আবেগ সেই বাস্তবতা মানতে নারাজ। ফলে তারা নির্ভেজাল সৌরভ প্রেমে ও বাঙালি প্রেমে মাতোয়ারা হলেন। খাঁটি বাঙালিত্ব তাঁদের খাঁটি সাম্প্রদায়িক করে তুললো। ভারতীয় দলকে হারাতে কোমর বেঁধে নেমে পড়লেন পিচ নির্মাণের দায়িত্বে থাকা মানুষটি থেকে সিনেমা স্টার, মন্ত্রী থেকে দর্শক ‘বিশুদ্ধ’ বাঙালিরা। ভারতীয় ক্রিকেট দলের বিরুদ্ধে গলা ফাটালেন, ভারতীয় ক্রিকেটার-এর দিকে জুতো দেখালেন। এঁরা কারা? ‘কোলেরিক’ টাইপের ‘অসহিষ্ণু’ ‘অসংযত’ মানুষ। (৩) পাভলভ যে সময় মানুষের মস্তিষ্ক-স্নায়ুকোষকে চারটি টাইপে ভাগ করেছিলেন, সময়টা সেখানে আটকে নেই। যে সমাজে যত বেশি জটিলতা দেখা দেবে, ততই আরো বহু ও বিচিত্র সব টাইপের উদ্ভব হতে থাকবে। (৪) মানসিকতা, আচরণ, ব্যক্তিত্ব পান্টাতে অনেকেই ‘বিহেভিয়ারাল থেরাপি’ (Behavioural Theraphy, ‘গ্রুপ থেরাপি’ (Group Therapy), ব্যক্তিত্ব তৈরির ক্লাসে ভর্তি হচ্ছেন, কেউবা যাচ্ছেন ম্যারিটাল কাউন্সেলিং সেশনে। এরপর আর টাইপের অচলায়তনে আস্থা রাখি কী করে।
আধুনিক মনোবিজ্ঞান মনে করে, মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষকে কখনই নির্দিষ্ট কোনো ছকে (type) বাঁধা যায় না। মন গতিশীল। যার জীবনে উত্থান-পতন বেশি, তার মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষও সেই পরিবেশের সঙ্গে মানিয়ে নিতে চেষ্টা করে। অর্থাৎ তথাকথিত ‘ছক’ বা ‘type’ বদলাতে থাকে।
পাভলভপন্থীরা দ্বিধাহীনভাবে মনে করেন মনোরোগবিদ্যার সঙ্কট সমাধান বস্তুবাদীদের reflex-তত্ত্ব ও পাভলভের শর্তাধীন (conditioned reflex) – তত্ত্বের চর্চা ছাড়া হতে পারে না। ফ্রয়েডীয় তত্ত্ব দিয়ে কোনো ওষুধের ক্রিয়াকলাপের ব্যাখ্যা চলে না—যেসব ওষুধ মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষকে উত্তেজিত বা নিস্তেজিত করে।
বিশ শতকের মাঝামাঝি সময়ে যখন মনের রোগের বিভিন্ন ওষুধ উন্নত দেশগুলোতে ব্যবহৃত হতে শুরু করল, তখন ওষুধের ক্রিয়াকলাপ ব্যাখ্যার জন্য পাভলভ অথবা ফ্রয়েডের তত্ত্বের কোনো প্রয়োজন হয় না। মাথা ঠাণ্ডা রাখতে ট্রাংকিউলাইজার এবং মন খারাপ দূর করে মনকে চনমনে রাখতে অ্যান্টিডিপ্রেস্যান্ট ওষুধের সাফল্য এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠা করে।
পর্ব- একঃ উঠে আসা নানা প্রশ্ন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
♦ জন্তুদের সম্মোহন করা ব্যাপারটা কি?
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ গণ-সম্মোহনের সাহায্যে কি ট্রেন ভ্যানিশ করা যায়?
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ সম্মোহন করে পূর্বজন্মে নিয়ে যাওয়া যায়?
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
♦ প্ল্যানচেটে যে আত্মা আনা হয়, তা কি স্বসম্মোহন বা সম্মোহনের প্রতিক্রিয়া ?
পর্ব- দুইঃ সম্মোহনের ইতিহাস ও নানা মানসিক রোগ
অধ্যায়ঃ এক
♦ সম্মোহনের বিজ্ঞান হয়ে ওঠার ইতিহাস
অধ্যায়ঃ দুই
♦ মনোরোগ, সম্মোহন জানতে মগজের কাজ জানা জরুরি
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
♦ Hysterical neurosis – Conversion type
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ দেহ-মনজনিত অসুখ (Psycho-somatic disorder)
পর্ব- তিনঃ মনোবিদ ও মনোরোগ চিকিৎসার বিভিন্ন পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ এক
♦ মনোবিদ (Psychologist) ) মনোরোগ চিকিৎসক (Phychiatrist)
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রধান কয়েকটি সাইকোথেরাপি নিয়ে আলোচনায় যাব
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
পর্ব- চারঃ বিভিন্ন রোগের সম্মোহনের সাজেশন পদ্ধতি
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
“সম্মোহনের A to Z” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ