তান্ত্রিক মোবাইলবাবা ও এক ভক্ত

১৬ অক্টোবর, রবিবার, ২০০৫ :

কাল পুরুলিয়া জেলা সম্মেলন ছিল সিঁদুরপুর গ্রামে। আজ সকালে আমরা সদলবলে এসে উঠেছি পুরুলিয়া শহরের একটি হোটেলে। আমরা মানে, সঞ্জয়, অনাবিল, রানা, সুমিত্রা ও আমি।

হোটেলের রুমে টিভি চালিয়ে ‘স্টার আনন্দ’ চ্যানেল দিতেই চমকে উঠলাম। ‘মোবাইল বাবা’ নামের এক অলৌকিকের কারবারিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে। অভিযোগ—অনিমেষ ধীবর নামের এক কিশোরকে রেল লাইনের তলায় হাত দিতে প্ররোচিত করা। অনিমেষের ডান হাতের রেখায় নাকি মৃত্যুযোগ ছিল। তাই ডান হাত কব্জি থেকে কেটে ফেলার উপদেশ দিয়েছিল মোবাইল বাবা ।

চকে ওঠার কারণ, আমাদের সমিতির বর্ধমান শাখা যখন মোবাইল বাবার মতো দুর্ধর্ষ এক শক্তিমান ও নিষ্ঠুর ধর্মগুরুর বিরুদ্ধে গোপনে তথ্য সংগ্রহ করছে, ঠিক তখন-ই খবরটা এল। সঞ্জয় পেশায় সাংবাদিক ও যুক্তিবাদী সমিতির সংযুক্ত সম্পাদক। থাকে বর্ধমানে। আমাদের এক ঝাঁক প্রশ্নের উত্তরে সঞ্জয় জানাল, মোবাইল বাবার আসল নাম জগদ্বন্ধু বা জগবন্ধু লোহার।

বয়স বছর পঁয়তাল্লিশ। ছোট খাটো চেহারা। গায়ের রঙ কালো। মাথায় লম্বা লম্বা জটা। ওর আস্তানা বর্ধমান জেলার কাঁকসা থানায় তেলিপাড়ায়। এক টুকরো হাড় নিয়েই মোবাইল বাবার কেরামতি। হাড়ের টুকরোকে মোবাইল ফোনের মতো ব্যবহার করে। এই ফোনে অবশ্য শুধুই মা কালীর সঙ্গে কথা বলা যায়। কিন্তু যে কেউ মায়ের সঙ্গে কথা বলতে পারে না। বলতে পারে শুধু জগবন্ধু লোহার। ওই জন্যেই ওর নাম হয়েছে ‘মোবাইল বাবা’।

কাঁকসা এলাকায় মোবাইল বাবার বিশাল দাপট। ওর ভয়ে দূর-দূর গ্রামের কেউ মুখ খুলতে চায় না। মোবাইল বাবার দাবি—যে কোনও রোগ-বালাই দূর করতে পারে, নিঃসন্তানকে সন্তান দিতে পারে।

মোবাইল বাবার ভয়ে ‘বাঘে গোরুতে এক ঘাটে জল খায়’। ওর ক্ষমতার হাত বিশাল লম্বা । শাসক দলের তা-বড় নেতাদের সঙ্গে ওর ঘনিষ্ঠতা। কয়লা ও লোহার ছাঁট মাফিয়াদের সঙ্গে

হাতকাটা অনিমেষ

বহুত দোস্তি। পুলিশ তো এমন আদমি পেলে বহুত খুশি। ওদের কথা—‘ফেল কড়ি মাখ তেল, কেউ কি আমার পর?’ এখানেও একটা চক্র কাজ করছে।

হোটেলে বসেই আমরা একটা পরিকল্পনা ছকে নিলাম। ঠিক হল, লড়াইয়ের মূল দায়িত্ব থাকবে সঞ্জয়ের উপর। সঞ্জয়কে সহযোগিতা করবে অনাবিল। বর্ধমান শাখার ছেলেদের প্রয়োজন মতো সহযোগিতা চাওয়া হবে। কাজোড়া, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শাখার সাহায্য নেওয়া হবে প্রয়োজন মতো। লড়াইটা আদৌ ছোট হবে না। সম্মিলিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে সম্মিলিত লড়াই চালাতে হবে।

অনাবিল ও সঞ্জয় নতুন একটা তথ্য জানাল। মোবাইল বাবা রাজনীতি ভালোই বোঝে। তেলিপাড়ার গরিব মানুষদের দরকারে অর্থ সাহায্য করে। বাইরের ভক্তদের পকেট কেটে স্থানীয় মানুষদের দান করে ‘রবিন হুড’ ইমেজ তৈরি করেছে।

আমরা প্রত্যেকেই এখন চার্জড। আর সময় নষ্ট না করে অনিমেষের ঘটনার সুযোগ নিয়ে দ্রুত ‘অপারেশন মোবাইল বাবা’ শেষ করতে হবে।

পিনাকী লাহার সঙ্গে মোবাইলে যোগাযোগ করা হল। ও পত্রিকা অফিসেই ছিল। তাই কাজটা আরও সহজ হল। পিনাকী ‘সংবাদ’ দৈনিক পত্রিকার সাংবাদিক এবং যুক্তিবাদী সমিতির বর্ধমান শাখার একজন কর্মকর্তা। ওকে বললাম, কাঁকসা থানায় ফোন করে অনিমেষের ঘটনাটা নিয়ে ওদের বক্তব্য কী জেনে আমাকে ফোন কর।

মিনিট দশেক পরেই পিনাকীর ফোন। জানাল, পুলিশ বলেছে, রক্তাক্ত অবস্থায় অনিমেষ পানাগড়ের একটা নার্সিংহোমে আসে। নার্সিংহোম ওকে ভর্তি না করে দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে পাঠিয়ে দেয়। অনিমেষ কিছুটা সুস্থ হলে সব জানা যাবে। তবে ওর তরফ থেকে একটা অভিযোগ এসেছে, মোবাইল বাবা ওর হাতের কব্জি কেটে নিয়েছে। অভিযোগ কতটা সত্যি, কতটা মিথ্যে, তদন্ত না করে বলতে পারছে না বলে জানিয়েছে কাঁকসা থানা।

সঞ্জয় আর অনাবিল চট্‌পট্ বেরিয়ে পড়ল। সঞ্জয় যাবে দুর্গাপুর কোর্টে। অনাবিল দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে।

রাত আটটা নাগাদ আমাদের হাওড়া যাওয়ার ট্রেন। তাই হোটেলেই অপেক্ষা করতে হল। এর মধ্যে অনাবিলের ফোন। জানাল, অনিমেষের সঙ্গে দেখা হয়েছে। কথা তেমন হয়নি। ডান হাতের কনুই থেকে ব্যান্ডেজ বাঁধা। আচ্ছন্ন অবস্থায় রয়েছে। এইটুকু বলেছে—আমার কিছুই মনে নেই। জ্ঞান ফিরতে দেখি পানাগড়ের এক নার্সিংহোমের কাছে পড়ে আছি।

সঞ্জয় খবর দিল, দুর্গাপুর কোর্ট থেকে অন্তর্বর্তী জামিনে ছাড়া পেয়ে গেছে মোবাইল বাবা সরকারি আইনজীবী অসিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে এ নিয়ে কথা হয়েছে। তিনি জানিয়েছেন, পুলিশ অভিযুক্তের বিরুদ্ধে ৪২০ ও ৩২৬ ধারায় অভিযোগ আনলেও তারা আসামিকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেপাজতে নেওয়ার কোনও আবেদন করেনি। তাই আসামির জামিনের বিরোধিতা করার কোনও সুযোগ ছিল না আমার।

সব শুনে বললাম, “কয়েকটা বিষয়ে খবর নে। (এক) অনিমেষের পরিবারের সদস্য কত জন, (দুই) পরিবারের আয়, নিজের আয়, (তিন) সম্প্রতি অনিমেষের চারিত্রিক কোনও পরিবর্তন বন্ধুরা লক্ষ্য করেছিল কিনা? (চার) অনিমেষ কব্জিকাটা নিয়ে কী বলছে? (পাঁচ) অনিমেষের চিকিৎসকের সঙ্গে কথা বল, (ছয়) বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার পীযূষ পাণ্ডের সঙ্গে কথা বল। জানতে চা, কেন পুলিশ মোবাইল বাবাকে কাস্টডিতে নিতে চাইল না? (সাত) পুলিশ মোবাইল বাবাকে জামিন পেতে সাহায্য করেছে তাদের হেফাজতে নিতে না চেয়ে। মনে হয় অতীতে কোনও একটা কেসে ধরা পড়ার পর পুলিশের সঙ্গে বাবাজির দোস্তি হয়েছে। একটু নেড়ে চেড়ে দেখলেই পুরোনো কেসটার হদিশ পেয়ে যাবি। (আট) মোবাইল বাবার আখড়ার আসল মধু কোথায় খোঁজ নে। মন্ত্রে সন্তান দেয় ব্যাপারটাই পুরোপুরি মিথ্যে। বায়োলজিকাল ফাদার হতে টাকাওয়ালা থেকে ক্ষমতাওয়ালা অনেকেরই আসার কথা। দেখ তারা কারা। (নয়) ঘটনাটার ব্যাপক প্রচার চাই। নইলে রাজনীতি-ধর্ম-পুলিশ-গুণ্ডাদের সম্মিলিত শক্তির বিরুদ্ধে লড়াই জেতা প্রায় অসম্ভব। সব মিডিয়াই যাতে খবরটা প্রচারে আনে সে বিষয়ে নজর দিস। পাবলিকের নজর টানতে বড় রকম হইচই বাঁধা। তবেই পারবি মোবাইল বাবার চক্রের বিরুদ্ধে ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে। বাবাজির সহায়ক শক্তি যখন মাফিয়া-পুলিশ-রাজনীতিক, তখন তোর সহায়ক শক্তিগুলোকে এক কর। ধর্মের দোহাই দিয়ে পুলিশ থেকে রিজিনীতিক, কেউই মোবাইল বাবার বিরুদ্ধে যাবে না।

১৭ অক্টোবর, সোমবার, ২০০৫ :

দুপুর ১২টা নাগাদ সঞ্জয়ের প্রথম ফোন পেলাম। এই দিন মোট তিনবার ফোন করেছিল সঞ্জয়। ও যা জানিয়েছিল, তা হল, অনিমেষের মা-বাবা অনেক বছর আগেই মারা গেছেন। অনিমেষের নিজের বাড়ি আছে। একা মানুষ, তাই কাকার বাড়িতেই খায়। এক মাত্র দিদি থাকেন

মোবাইলবাবার মন্দির

আসানসোলে। অনিমেষ মাছের ব্যাবসা করে। মাসিক আয় এক থেকে দেড় লাখ টাকা। বন্ধুদের কথায়, বছর তিনেক হল অনিমেষ ওই মোবাইল বাবার আশ্রমে যাচ্ছিল। চ্যবনপ্রাশের মতো একটা করে শিশি প্রায়ই আনত আশ্রম থেকে। সব সময় কেমন যেন নেশায় নিস্তেজ হয়ে থাকত। শিশিতে মাদক থাকত বলে বন্ধুদের অনুমান। বন্ধুদের সঙ্গে মেলামেশা কমিয়ে দিয়েছিল।

সঞ্জয় আরও বলল, “গতকালই অনিমেষকে বর্ধমান জেলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। কাঁকসা পুলিশ বলেছে, অনিমেষ তার বয়ানে জানিয়েছে, ডান হাতের রেখার যে কাড়া ছিল, সেটাকে বিদায় করতেই মোবাইল বাবার পরামর্শে চলন্ত ট্রেনের চাকার নিচে ডান হাত বাড়িয়ে দেয়। পুলিশ আরও জানিয়েছে রাজবাঁধ ও পানাগড় স্টেশনের মাঝে চার নম্বর রেল গেটের কাছে লাইনে হাত রেখেছিল অনিমেষ। আজ পুলিশ স্পটে গিয়ে রক্তের দাগ দেখতে পেয়েছে। অনাবিলকে পাঠিয়েছিলাম ওই স্পটে। অনাবিল জানিয়েছে, তন্নতন্ন করে খুঁজেও ও কোনও রক্তের চিহ্ন দেখতে পায়নি।

“দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের ডা. রাজা সাহার সঙ্গে কথা বলেছি। তাঁর কথায়, এটা ট্রেনে কাটার কেস নয়। যে পরিমাণ রক্তপাত হচ্ছিল, ট্রেনে কাটা পড়লে তা হওয়ার কথা নয়। ট্রেনের প্রচণ্ড চাপে রক্ত বের হবার পথগুলো প্রায় বন্ধ হয়ে যায় ৷

“বর্ধমান মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হসপিটালের ডেপুটি সুপার মঞ্জুর মুর্শেদের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। ডা. মুর্শেদ জানালেন, অনিমেষ তাঁকে বলেছে, মোবাইল বাবা কয়েকবারই জানিয়েছিল, ডান হাতে ফাঁড়ার রেখা আছে। সামনে নিশ্চিত মৃত্যু। ফাঁড়া কাটাতে হলে ডান হাতের কব্জি থেকে কেটে বাদ দিতে হবে। গত শনিবার ও মোবাইল বাবার আশ্রমে যায়। মোবাইল বাবা মুড়ি খেতে দেয়। তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ে। তখন মোবাইল বাবা একটা ভোজালি দিয়ে হাত কেটে নেয়৷

“ইনজুরি দেখে ডা. মুর্শেদের ধারণা, কব্জি ধারালো কোনও অস্ত্র দিয়ে কাটা। ট্রেনের চাকায় কাটা পড়লে কব্জির কাছের মাংসের তত্ত্বগুলোর চেহারা অন্যরকম হত। ট্রেনে কাটা পড়লে ওর মাথায়ও মারাত্মক চোটের চিহ্ন থাকত ।

সঞ্জয় পরের বার ফোনে বলল, “অনিমেষের সঙ্গে কথা বলেছি। ও বলছে, মোবাইল বাবার আশ্রমে মুড়ি খেয়ে খুব ঘুম পেতে থাকে। ওই আশ্রমেই মোবাইল বাবা ওর কব্জি কেটে নেয় ও জ্ঞান হারায়। জ্ঞান ফিরতে দেখে ডান হাতে ব্যান্ডেজ বাঁধা। জানতে পারে দুর্গাপুর হাসপাতালের বেডে শুয়ে আছে।”

সঞ্জয় জানাল, “বর্ধমান জেলার পুলিশ সুপার পীযূষ পাণ্ডের সঙ্গে আমার কথা হয়েছে। তাঁকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, পুলিশ কেন মোবাইল বাবাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিজেদের হেফাজতে নেবার আবেদন করেনি কোর্টে? উত্তরে পীযূষবাবু বলেছেন, কাকে নিজেদের হেফাজতে নেওয়া প্রয়োজন, সেটা তদন্তকারী পুলিশ অফিসারই সবচেয়ে ভালো বোঝেন । তিনি নিশ্চয়ই বুঝেছিলেন হেফাজতে নেওয়ার প্রয়োজন নেই।

‘পীযূষবাবুকে জানালাম, প্রয়াগপুরের মানুষদের অভিযোগ, পুলিশ ঘুষ খেয়ে জামিনের বিরোধিতা করেনি।

“উত্তরে পীযূষবাবু জানিয়েছেন, সম্পূর্ণ মিথ্যে অভিযোগ। আমরা কোর্টে মোবাইল বাবার জামিনের বিরোধিতা করেছিলাম।

“বললাম, আপনি একটু আগেই কিন্তু আমার কাছে সাফাই দিলেন—কেন পুলিশ জামিনের বিরোধিতা করে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য হেপাজতে নেওয়ার আবেদন করেননি।

“উত্তর না দিয়ে লাইন কেটে দিয়েছেন পীযূষবাবু। প্রবীরদা তোমার অনুমান ঠিক। বছর দেড়-দুই আগে এক মহিলাকে ধর্ষণের অভিযোগে মোবাইল বাবাকে গ্রেপ্তার করেছিল পুলিশ। তারপর পুলিশকে ম্যানেজ করে জামিন পেয়ে যায়। স্থানীয় মানুষের ধারণা সেই সময় থেকেই পুলিশের সঙ্গে ওর দোস্তি বেড়েছে।

“মোবাইল বাবার আখড়া তেলিপাড়ায়। তেলিপাড়ার কিছু মানুষ আমাকে গোপনে খবর দিয়েছে মোবাইল বাবা সি পি এম-এর খুবই ঘনিষ্ঠ। স্থানীয় গ্রাম পঞ্চায়েত সদস্য সি পি এম-এর অমল লোহার জানালেন, মোবাইল বাবা আমাদের সমর্থক মাত্র। আমরা অবশ্য ওকে বারবারই সতর্ক করেছি, বলেছি অসামাজিক কাজকর্ম বন্ধ করতে।

“স্থানীয় তৃণমূল কংগ্রেস নেতা কীর্তি পাল জানালেন সিপিএম-এর শেল্টারেই মোবাইল বাবার এত মস্তানি। বছরখানেক আগে সিপিএম-এর জাঠায় অংশ নেওয়া ক্যাডার ও লিডারদের খাওয়ার ব্যবস্থা করেছিল মোবাইল বাবা।

“কীর্তি পালের বক্তব্য অমল পালকে জানাতে তিনি বললেন, পার্টির কোনও অনুষ্ঠানে সাহায্য চাইলে সাধুবাবা সাধ্যমতো সাহায্য করেন। কিন্তু তার মানে এই নয় যে সাহায্য পাই বলে তার অপকর্মকে পার্টি সমর্থন করবে।

“সিপিএম-এর কাঁকসা জোনাল কমিটির সম্পাদক বীরেশ্বর মণ্ডল জানালেন, ‘পার্টি’ মোবাইল বাবার কোনও অপকর্মকে সমর্থন করে না। মানুষ যদি শান্তি পেতে মোবাইল বাবার কাছে যায়, তাতে আমরা তো বাধা দিতে পারি না। মানুষের ধর্মীয় আবেগকে তো আমরা আঘাত দিতে পারি না ।

“মোবাইল বাবার ছেলে নারায়ণ লোহারের সঙ্গে কথা হয়েছে। বয়স ১৮-২০ হবে। রগচটা। আমাকে জানিয়েছে, হ্যাঁ, আমরা সিপিএম করি। সেটা কোনও বেআইনি কাজ?

“সব মিডিয়াকেই খবরগুলো দিচ্ছি। তারাও খবর সংগ্রহ করে আমাকে জানাচ্ছে। অনেকেই জানতে চাইছেন—প্রবীর ঘোষ আসছেন কি না? কবে আসছ? এখনও অনেক জট আছে। তুমি দু-চার দিনের মধ্যে অবশ্যই চলে এস। মিডিয়াগুলো ভালো কভার করছে। ওদের জানিয়েছি, আগামী কয়েক দিনের মধ্যে যুক্তিবাদী সমিতি ও হিউম্যানিস্টস অ্যাসোসিয়েশন মোবাইল বাবার আখড়ায় যাবে। মন্ত্র-তন্ত্রের নামে বুজরুকির বিরুদ্ধে ওই অঞ্চলে ব্যাপক প্রচার অভিযান চালাবে।”

সঞ্জয় আরও জানাল, “ওদিকে অভিযোগ উঠেছে, মোবাইল বাবার পেটোয়া মাফিয়ারা সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধিদের হুঁশিয়ারি দিয়েছে, বাবাজির ব্যাপারে নাক গলালে ফল ভালো হবে না।”

১৮ অক্টোবর, মঙ্গলবার, ২০০৫ :

আজ যুক্তিবাদী সমিতি ও হিউম্যানিস্টস অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যরা কী করলেন? জানতে ১৯ অক্টোবর ‘দৈনিক স্টেটসম্যান’ এবং মধ্যবঙ্গের জনপ্রিয় দৈনিক পত্রিকা ‘সংবাদ’-এ চোখ বোলালেই চলবে।

এদিকে মঙ্গলবার আহত অনিমেষের এক বন্ধু অভিযোগ করেছেন, মোবাইল বাবার এই ঘটনায় তাঁর পেটোয়া কিছু গুণ্ডা রীতিমতো শাসাচ্ছে এলাকার মানুষকে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ওই বন্ধু বলেছে, কয়েকজন মধুচক্রের পাণ্ডাকে এখন দিনভর দেখা যাচ্ছে মোবাইল বাবার কাছে। অন্যদিকে, অভিযোগ উঠেছে, সংবাদমাধ্যমের ওপরেও বেজায় চটেছেন মোবাইল বাবা। এক বেসরকারি টিভি চ্যানেলের ক্যামেরাম্যানকে এ ব্যাপারে নাক না গলাতে হুঁশিয়ারিও দিয়েছেন মোবাইল বাবা।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমানঃ অনিমেষ ধীবরের হাত কেটে নেওয়ায় অভিযুক্ত জগদ্বন্ধু লোহার ওরফে ‘মোবাইল বাবা’কে পুলিশি হেফাজতে না-নেওয়ায় অপরাধীর সঙ্গে পুলিশের আঁতাত প্রমাণিত হয়ে গিয়েছে বলে দাবি জানিয়ে বুধবার বর্ধমানের পুলিশ সুপার পীযূষ পাণ্ডের কাছে স্মারকলিপি জমা দিয়েছে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি। সমিতির জোনাল কমিটির সম্পাদক ও যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জয় কর্মকার ও অনাবিল সেনগুপ্তের অভিযোগ, এই ধরনের বুজরুকদের বিরুদ্ধে টানা আন্দোলনে পুলিশের সাহায্য দূর-অস্ত, উল্টে অসহযোগিতা এবং দুর্ব্যবহারই পাচ্ছেন তাঁরা। পুলিশ সুপার অভিযোগ খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন।

স্মারকলিপিতে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি এবং হিউম্যানিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশন জানিয়েছে, মঙ্গলবার সংগঠনের সদস্যেরা বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি অনিমেষের সঙ্গে দেখা করলে সে তাঁদের জানায়, মোবাইল বাবার আশ্রমে বেশ কয়েক বছর ধরে তার যাওয়া-আসা ছিল। মোবাইল বাবা নানা অছিলায় তার কাছ থেকে ৯০ হাজার থেকে ১ লক্ষ টাকার মতো নিয়েছে বলে তার কাছ থেকে জানতে পারেন সমিতির সদস্যেরা। ভাগ্য-পাল্টানোর নাম করে তার ডান হাত কাটতে বলে মোবাইল বাবা। অনিমেষ হাত কাটতে রাজি না হলে তাকে মাদক জাতীয় কিছু খাইয়ে মাথার পিছনে আঘাত করা হয়। এর ফলে অজ্ঞান হয়ে যায় অনিমেষ। জ্ঞান ফিরে দেখে তার ডান হাত কাটা।

বুধবার বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির প্রতিনিধি দলটির সঙ্গে দেখা করে অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায় অবশ্য আশ্বাস দেন ঘটনার তদন্ত চলছে এবং যথাসময়ে মোবাইল বাবার বিরুদ্ধে চার্জশিট দেবে পুলিশ।

হাসপাতালের শয্যায় শুয়েই সোমবার অনিমেষ পুলিশকে জানিয়েছিল, নিজেই সে রেললাইনে চলন্ত ট্রেনের নিচে হাত রেখেছিল। তাঁর বলে দেওয়া জায়গায় অর্থাৎ পানাগড় ও রাজবাঁধ স্টেশনের মাঝে ৪ নম্বর রেলগেটের রেললাইনে রক্তের ছোপও পেয়েছে পুলিশ। যুক্তিবাদী সমিতির কাছে দেওয়া অনিমেষের বিবৃতির পর প্রশ্ন উঠেছে, তাহলে কি ভয় পেয়ে পুলিশকে নিজেই হাত কাটার কথা বলেছে অনিমেষ? না কি সত্যিই সে মানসিক ভারসাম্যহীন? তবে তা পরীক্ষার জন্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ মানসিক চিকিৎসকদের না ডাকায় এই বিষয়ে কোনও মন্তব্যও পাওয়া যায়নি।

বুধবার বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির পক্ষে আরও অভিযোগ করা হয়েছে, মোবাইল বাবার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার পরই তাদের ফোনে হুমকি দেওয়া শুরু হয়েছে।

সমিতির অভিযোগ, মোবাইল বাবার সঙ্গে পুলিশের আঁতাত থাকার ফলেই গ্রেফতার হওয়ার পরের দিনই তার জামিন মিলেছে। পুলিশ অভিযুক্তকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য আদালতের কাছে আবেদনও জানায়নি। জেলার পুলিশ সুপার অবশ্য আগেও মোবাইল বাবার জামিনে ছাড়া পাওয়া সম্পর্কে পুলিশি নিষ্ক্রিয়তার অভিযোগ সরাসরি অস্বীকার করেছিলেন। তিনি বলেছিলেন, “আমরা মোবাইল বাবার জামিনের আবেদনের বিরোধিতাই করেছিলাম আদালতে।”

আজকালের প্রতিবেদনঃ বর্ধমান, ১৯ অক্টোবর : কাঁকসা থানার পিয়ারিগঞ্জের মা সিদ্ধেশ্বরী মন্দিরের তান্ত্রিক জগন্নাথ লোহার ওরফে মোবাইল-বাবার কীর্তিকলাপের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামার পরিপ্রেক্ষিতে টেলিফোনে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হল ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি এবং হিউম্যানিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের দুই জেলা সম্পাদক সঞ্জয় কর্মকার ও অনাবিল সেনগুপ্তকে। বুধবার বেলা ১২টা নাগাদ তাদের মোবাইল বাবার বিরোধিতা না করার জন্য হুমকি দেওয়া হয়। বলা হয়, মোবাইল বাবার বিরুদ্ধে আন্দোলনে নামলে তাঁদের খুন করা হবে। সঞ্জয় কর্মকার ও অনাবিল সেনগুপ্ত তাঁদের মোবাইল ফোনে দেখেন, বর্ধমান শহরের ০৩৪২-২৫৫১৯০২ নম্বর টেলিফোন থেকে এই উড়ো ফোনটি এসেছিল। বিষয়টি তাঁরা বর্ধমানের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার রবীন্দ্রনাথ মুখোপাধ্যায়কে লিখিতভাবে জানান। পুলিশ তদন্তে নেমেছে। অন্যদিকে বর্ধমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ডেপুটি সুপার ডা. মঞ্জুর মুর্শেদ জনান, অনিমেষ এখন সুস্থ হয়ে উঠেছে। ওর বিপদ কেটে গেছে।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমান, ২৩ অক্টোবর : কাঁকসা থানার পিয়ারিগঞ্জের মোবাইল বাবার বিরুদ্ধে জোরদার জনমত তৈরির ডাক দেওয়ার পরে পরেই এবার যুক্তিবাদী সমিতি এবং হিউম্যানিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশনের সদস্যদের খুনের হুমকি দেওয়া হয়। এই ঘটনায় চাঞ্চল্য দেখা দিয়েছে। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির বর্ধমান শাখার সম্পাদক অনাবিল সেনগুপ্ত জানিয়েছেন, বুধবার তিনি জেলা পুলিশ সুপারের কাছে সি পি এম সমর্থক জগদ্বন্ধু লোহার ওরফে মোবাইল বাবার বিরুদ্ধে অভিযোগ জমা দিতে যান। এই সময় সঞ্জয় কর্মকার এবং অনাবিল সেনগুপ্তর মোবাইলে ফোনে আসে। অশ্রাব্য ভাষায় গালিগালাজের পর তাদের বলা হয়, “তোরা কোথায় হাত দিয়েছিস জানিস না। তোদের দু’জনকে একেবারে শেষ করে দেব।” এই ঘটনায় সঞ্জয়বাবুরা বর্ধমান থানায় প্রাণনাশের হুমকি আসা ফোন নম্বর দিয়ে লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। সঞ্জয় কর্মকাররা জানান, মোবাইল বাবা এই অপরাধের পরও খোলা পরিবেশে ঘুরে বেড়াচ্ছে পুলিশ প্রশাসন এবং বর্তমান শাসকদলের মদতেই। সঞ্জয়বাবুরা জেলা পুলিশ সুপারের কাছে দেওয়া অভিযোগে জানান, মোবাইল বাবার এই ঘটনা থেকে আরও একবার প্রমাণ হয়ে গেল প্রগতিশীল, মার্কসবাদী সরকারের রাজ্যে রমরমিয়ে চলছে বুজরুকি। প্রমাণ হয়ে গেল অপরাধী ও পুলিশের আঁতাত। সঞ্জয়বাবুরা জানান, বিজ্ঞানের যুগে এই ধরনের বুজরুকির বিরুদ্ধে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতি ও হিউম্যানিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশন লড়াই করার ক্ষেত্রে পুলিশ প্রশাসনের সাহায্য পাওয়ার জায়গায় চূড়ান্ত অসহযোগিতা মিলছে

২৪ অক্টোবর, সোমবার, ২০০৫

প্রয়াগপুরে সকাল ১০টায় পৌঁছলাম। জায়গাটা পানাগড়ের কাছে। জনা কুড়ি স্থানীয় তরুণ হাজির। হাজির বহু মিডিয়া। আমাদের সমিতির বর্ধমান, কাজোড়া, বাঁকুড়া ও পুরুলিয়া শাখার অনেককেই দেখতে পেলাম।

স্থানীয় তরুণরা আমাদের নিয়ে গেলেন ‘যুবতরঙ্গ’ ক্লাবের ঘরে। নতুন তৈরি দোতলা ক্লাব বিল্ডিং। ওখানে আলাপ হল আলি, রিপন খান, বাপী ধীবর; রঞ্জিত ধীবরের সঙ্গে। কাছেই একটা মাঠে মাইকে প্রচার চলছে—প্রবীর ঘোষ এসে পড়েছেন। একটু পরেই শুরু হবে…

সুবীর, কুট্টি ও রানার উপর অনুষ্ঠান চালাবার দায়িত্ব দিলাম। আমরা কিছুক্ষণের মধ্যেই মোবাইল বাবার ঘাঁটি ঘুরে এসে অনুষ্ঠানে যোগ দেব।

ঠিক হল, আমার সাথি হিসেবে যাবে সঞ্জয় ও অনাবিল। দু’জনেই তুখোড় বুদ্ধিমান ও সাহসী তরুণ। আমরা মোবাইল বাবার আস্তানা চিনি না। আস্তানা দেখাবে কে? সমস্যা এখানেই। একজনকে অনেক বুঝিয়ে-সুঝিয়ে সাহস দিয়ে আমাদের গাড়িতে তুলতেই এক ঘণ্টা কেটে গেল। আমাদের গাড়িকে অনুসরণ করল সাংবাদিক ও চিত্রসাংবাদিকদের মোটরবাইক।

মোবাইল বাবাকে মন্দিরে না পেয়ে গেলাম বাড়িতে। ছেলে নারায়ণ ও স্ত্রী পুষ্পরানি বাড়িতেই ছিলেন। মোবাইল বাবা বহু পোড়-খাওয়া মানুষ। কখন ‘হালুম’ করবে, কখন ‘মিউ’ খুব ভালো বোঝে। আমার সব কথাই শুনছে, বুঝছে, মাথা ঠাণ্ডা রেখে মাঝে মধ্যে ‘মিউ’ করছে। ছবি উঠছে। একগাদা ডিজিটাল ক্যামেরায় মুভি উঠছে। বাবাজি এক সময় মোলায়েম করে স্বীকার করল, মায়ের নির্দেশ মতো মন্ত্রপূত ফুল-বেলপাতা দেন। মায়ের কৃপায় তাইতেই যে কোনও অসুখ ভালো হয় ৷

— নিঃসন্তান মহিলা সন্তান চাইলে কী করেন?

—মা’কে জানাই। তারপর মা যেমন নির্দেশ দেন তেমন করি। তাইতেই সন্তান হয়। —কী করেন? শারীরিকভাবে মিলিত হন?

নারায়ণ চিৎকার করে আমার কাছে এগিয়ে এল। বলল, না…একটা বাজে কথা বললে এখানেই শেষ করে দেব ।

নারায়ণের পিঠে আস্তে আস্তে চাপড় দিয়ে বললাম, তোমার বাবার কাছ থেকে কিছুই শিখতে পারনি। সাক্ষী রেখে খুন করে, বোকাতে। এখানে এতগুলো লোক আর ক্যামেরার সামনে তুমি আমাকে খুন করলে সেটা হবে বোকামো। তোমাকে ফাঁসি থেকে মন্ত্রপূত ফুল-বেলপাতা কিন্তু বাঁচাতে পারবে না, সে তো তুমি ভালোই জানো। আত্মরক্ষার জন্য তোমাকে মেরে ফেললে আমার কিন্তু কিছুই হবে না।

নারায়ণ দ্রুত চোখ বোলাল সঞ্জয় ও অনাবিলের দিকে। দু’জনেরই ডান হাত প্যান্টের পকেটে। ওদের দুজনের বডি ল্যাঙ্গুয়েজ দেখে নারায়ণ ঠাণ্ডা।

মা পুষ্পরানি অবস্থা সামাল দিতে ছেলেকে জোরালো ধমক দিলেন। তারপর আমাকে বললেন, বিশ্বাস করুন, মন্ত্রপূত ফুল-বেলপাতাতেই গৰ্ভ হয়।

পুষ্পরানিকে বললাম, তাহলে একটা কাজ করুন, পাঁচজন মহিলাকে সাংবাদিক সম্মেলন ডেকে হাজির করব। আপনার স্বামী ফুল-বেলপাতা দিয়ে তাঁদের গর্ভবতী করতে পারলে তাঁকে দেব ২০ লক্ষ টাকা। সেই সঙ্গে যুক্তিবাদী সমিতি তাদের সমস্ত রকম কাজকর্ম বন্ধ করে দেবে।

এবার মোবাইল বাবার উদ্দেশে বললাম, কি বাবাজি, চ্যালেঞ্জটা নেবেন? আপনি যখন মন্ত্রে একটা গোটা মানুষ তৈরি করতে পারেন, তখন মানুষের একটা অঙ্গ তৈরি করা তো আপনার ‘বাঁয়ে হাত-কা খেল’। অনিমেষের কাটা হাত আবার তৈরি করে দিন বাবা। আপনি পারলে ২০ লক্ষ টাকা প্রণামী দেব।

বাবার তখন ফাঁদে পড়া অবস্থা। অনাবিল আর সঞ্জয়কে দেখিয়ে বললাম, আপনি ওদের খুন করার হুমকি দিয়ে ফোন করিয়েছেন। আপনি সত্যিই যদি অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী হন, তবে ওদের খুন করতে গুণ্ডা লাগাবেন কেন? এই আপনার সামনে ওরা দাঁড়িয়ে আছে, আপনার মন্ত্র-বলে ওদের মেরে ফেলুন। আপনার অলৌকিক ক্ষমতা দেখতে চাই। দেখাতে না পারলে ধরে নেব—আপনি একজন বুজরুক

বাবাজি চুপ। বউ পুষ্পরানি সাংবাদিকদের সামনে চেঁচাতে লাগলেন, ও মন্তরেই সন্তান তৈরি করে। প্রবীর ঘোষ লোকটা পায়ে পা-দিয়ে ঝগড়া লাগাতে চাইছে। যার বিশ্বাস আছে, আসবে, যার বিশ্বাস নেই, সে আসবে না। ধর্মীয় ব্যাপারে জোরাজুরি করতে যাবেন না।

আ-ই-বা-স? ও যে সি পি এমের কাঁকসা জোনাল কমিটির সম্পাদক বীরেশ্বর মণ্ডলের কথাগুলোই ‘লাইন বাই লাইন’ বলে গেল! বীরেশ্বরবাবুও বলেছেন, ধর্মীয় ব্যাপারে কোনও জোরাজুরি চলে না। কেউ যদি মোবাইল বাবার কাছে সমস্যা সমাধানের জন্য আসেন তবে সেটা তাঁর ব্যক্তিগত বিশ্বাস ও আবেগের ব্যাপার।

সত্যি, এরা মার্কসবাদকে বুজরুকদের সমর্থনে কী সুন্দর ভাবে কাজে লাগাচ্ছেন।

ছেলে নারায়ণ এই সময় আবার চেঁচামেচি শুরু করল, আমরা সি পি এম করি। আমাদের একগাছা …ল ও ছিঁড়তে পারবে না। মানে মানে কেটে পড়।

কেটে না পড়লে কী হবে, তার একটা স্যামপেল দেখতে পেলাম। হঠাৎ এক যুবক ধাঁ-করে একটা ছুরি বের করে সিনেমার কায়দায় সাংবাদিক ও আমাদের সামনে ঘুরিয়ে ঘুরিয়ে বলল, “বাবা বললে, যে কোনও লোকের জান নিয়ে নিতে পারি” নিজের নাম জানাল আত্মারাম সরকার। বসুধা গ্রামের বাসিন্দা প্রেমে ব্যর্থ হয়ে বাবার শ্রীচরণে আশ্রয় নিয়েছে। অকপটে জানালেন, অবৈধ পেট্রল ও ডিজেলের ব্যাবসা আছে। অনিমেষকে চেনেন। দেখে মনে হল— আত্মা নেশার ঘোরে আছে।

একগাদা টিভি ক্যামেরা ও সাংবাদিকদের সামনে ইন্টারভিউ দিয়ে দৌড়লাম অনিমেষ ধীবরের গ্রামে। ইন্টারভিউতে কী বললাম? বললাম, এখন রাজনীতির ভিত্তি হয়ে দাঁড়িয়েছে ধর্ম। তাই ধর্মের নামে অন্যায়-দুর্নীতি-ধর্ষণ-হত্যা করে পার পাওয়া যাচ্ছে সহজেই। মোবাইল বাবার দুর্নীতি-ধর্ষণ নিয়ে শাসক দল আওয়াজ তুলতে নারাজ। তাদের ‘পশ্চিমবঙ্গ বিজ্ঞান মঞ্চ’ রয়েছে। কিন্তু বিজ্ঞান মঞ্চ অনিমেষের ব্যাপারে, মন্ত্রে সন্তান উৎপাদনের নামে ধর্ষণের ব্যাপারে আশ্চর্য রকম নীরব। প্রতারণা করে, মিথ্যে আশ্বাস দিয়ে মিলনে বাধ্য করা আইনের চোখে ধর্ষণ। পার্টির এই নীরবতার পক্ষে যুক্তি—‘আমরা ধর্মীয় ভাবাবেগকে তো আঘাত করতে পারি না।’ আর তাই পশ্চিমবঙ্গে ডাইনি হত্যা নিয়ে পার্টি আইনের পক্ষ নেয় না। আইন যেহেতু আদিবাসীদের ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করতে পারে, তাই ওদের বেআইনি কাজকে কখনও নীরব সমর্থন জানিয়ে, কখনও বা বেআইনি কাজে অংশ নিয়ে ভোট কুড়োবার রাজনীতি করে।

আমাদের দেশে একটা আইন আছে, ‘দ্যা ড্রাগস অ্যান্ড কসমেটিকস অ্যাক্ট, ১৯৪০’। এই আইন বিভিন্ন সময়ে সংশোধন করা হয়েছে। আইনটিতে ‘ড্রাগ’ বা ‘ওষুধ’ সংজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। মানুষ বা পশুর দেহে রোগের উপশম বা প্রতিষেধক হিসেবে ব্যবহৃত হয় এমন সমস্ত কিছুই ‘ড্রাগ’। মন্ত্র, তাবিজ, যজ্ঞ ইত্যাদির দ্বারা রোগ মুক্তির কথা বললে, মন্ত্র, যজ্ঞ ইত্যাদিও ‘ড্রাগ’ বলে বিবেচিত হবে।

ড্রাগের ক্ষেত্রে ‘ড্রাগ লাইসেন্স’ নেওয়া বাধ্যতামূলক। বিনা ড্রাগ লাইসেন্সে এইসব ড্রাগ বিক্রি বা ড্রাগের প্রচার শাস্তিযোগ্য অপরাধ। শাস্তির পরিমাণ কমপক্ষে ৫ বছরের জেল থেকে আজীবন জেল। সঙ্গে জরিমানা ।

আইন আছে। কিন্তু প্রয়োগ নেই। সেই এক অক্ষম যুক্তি—জ্যোতিষী-তান্ত্রিকদের বিরুদ্ধে এইসব আইন প্রয়োগ করার অর্থ মানুষের বিশ্বাস ও ধর্মীয় ভাবাবেগকে আঘাত করা।

ভোট-লোভী সিপিএম সাধারণ মানুষের চেতনাকে উন্নত করার চেষ্টা না করে নিজেদের চেতনাকে সাধারণ মানুষের চেতনার লেভেলে নামিয়ে নিয়ে আসতে চাইছে।

আমাদের সমিতি মানুষের চেতনাকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার যে প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, তা একদিন জনজাগরণের রূপ নেবেই, প্রতিবাদী রূপ নেবেই। এই স্বপ্ন দেখি বলেই আমরা ‘ঘরের খেয়ে বনের মোষ’ তাড়াতে যেখানে মানুষ সেখানেই হাজির হচ্ছি।

ইন্টারভিউ শেষ করে অনিমেষের গ্রামে যখন পৌঁছালাম তখন ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ কুসংস্কার বিরোধী অনুষ্ঠান দারুণ জমে গেছে। মাঠে অন্তত দেড় হাজার মানুষ। এখানে জানালাম মোবাইল বাবার সঙ্গে আমার কথোপকথন। স্থানীয় মানুষ ভয়ের পরিবেশ ছিন্ন করে যে উদ্দীপনা দেখালেন, তাতে আপ্লুত হলাম। পুরুষ থেকে মহিলারা যেভাবে মোবাইল বাবার কুর্কীতির বিরুদ্ধে সোচ্চার হলেন, তাকে জনজাগরণ বললে একটুও ভুল হবে না। এই গণজাগরণ রাজনীতিক ও পুলিশদের বিরুদ্ধেও স্পষ্ট সাবধানবাণী পৌঁছে দিল।

নিজস্ব সংবাদদাতা, বর্ধমানঃ কাঁকসা থানা এলাকার প্রয়াগপুরের কিশোর অনিমেষ ধীবরের ডান হাত কেটে ফেলার ঘটনায় ‘মোবাইল বাবা’র ইন্ধন দেওয়ার ব্যাপারে নিশ্চিত পুলিশ। অনিমেষকে যে সেদিন মাদক খাওয়ানো হয়েছিল সে কথা স্পষ্ট জানিয়েছেন বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান ওমপ্রকাশ সিংহ। তবে কোথায়, কী ভাবে অনিমেষের হাত কাটা গিয়েছে সে রহস্যের কিনারার জাল এখনও খোলেনি।

১৫ অক্টোবর রাতে কব্জি থেকে ডান হাত কাটা অবস্থায় অনিমেষকে উদ্ধার করে নার্সিংহোমে ভর্তি করানো হয়। এখন সে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি। ওই হাসপাতালেই অনিমেষ পুলিশকে জানিয়েছিল, সে স্বেচ্ছায় ট্রেনের চাকার নিচে হাত দিয়েছিল। পুলিশ রাজবাঁধ ও পানাগড় স্টেশনের মাঝে চার নম্বর রেলগেটের কাছে রক্তের ছোপও পায়। সেটা অনিমেষেরই রক্ত কি না, নিশ্চিত হতে পুলিশ ফরেনসিক পরীক্ষার ব্যবস্থা করে।

রবিবার দুর্গাপুরের সি আই কিশোর সিংহের নেতৃত্বে পুলিশের একটি দল কাঁকসা থানার তিলিপাড়া গ্রামে জগদ্বন্ধু লোহার ওরফে ‘মোবাইল বাবা’র আখড়ায় যান। ‘মোবাইল বাবা’ ছাড়াও ওই আখড়ার অন্য বাসিন্দা এবং গ্রামবাসীদের জিজ্ঞাসাবাদ করে পুলিশ। সোমবার জেলার পুলিশ সুপার পীযূষ পাণ্ডে বলেন,“এখনও পর্যন্ত তদন্তে যেটকু জানা গিয়েছে তাতে হাতকাটা কাণ্ডে অনিমেষকে প্ররোচিত করেছিল ওই সাধু। মাদক খাইয়ে অজ্ঞান করে ওই সাধু বা তার লোকেরা যে অনিমেষকে রেল লাইনের কাছে নিয়ে যায়নি, সেটাও স্পষ্ট।” তবে অনিমেষ নিজেই হাত কেটেছে সে প্রশ্নের জবাবে পুলিশ সুপার বলেন, “ঘটনার তদন্ত চলছে। কী ভাবে হাত কাটা গিয়েছে তা এখনই বলা সম্ভব নয়।”

ঘটনার তদন্তে নির্দিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ তথ্য জুগিয়েছেন বর্ধমান মেডিক্যালের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান ওমপ্রকাশ সিংহ। অনিমেষকে পরপর দু’দিন পরীক্ষা করেছেন হাসপাতালের মানসিক রোগ বিভাগের চিকিৎসকেরা। সোমবার ওমপ্রকাশবাবু বলেন, “অনিমেষ মোটেই মানসিক রুগি নয়। সাধুটি ওর হাতে অকালমৃত্যুর রেখা থাকার কথা বলায় সে ভয় পেয়েছিল।” তিনি আরও বলেন, “ঘটনার দিন অনিমেষকে ‘ফেনসাইক্লিডিন’ জাতীয় কোনও মাদক খাওয়ানো হয়েছিল। ওই মাদকের প্রভাবে কারও শরীরে আঘাতের অনুভূতি লুপ্ত হয়ে যায়।” অনিমেষ আগেই চিকিৎসক ও সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছিল, ঘটনার দিন তাকে মাদক খাইয়ে অজ্ঞান করেছিল ওই ‘সাধু’।

এ দিকে সোমবার তিলিপাড়ার আখড়ায় গিয়ে ‘মোবাইল বাবা’কে জিজ্ঞাসাবাদ করে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির সদস্যরা। পরে তাঁরা প্রয়াগপুরে কুসংস্কার বিরোধী অনুষ্ঠান করে। তবে এ দিনও নিজেকে নির্দোষ বলে দাবি করে জগদ্বন্ধু লোহার ওরফে ‘মোবাইল বাবা’।

এবার আমাদের লক্ষ্য পানাগড়ের ৪ নম্বর রেলগেট। আমাদের গাড়ির সঙ্গী এখন বেশ কিছু মোটরবাইক। তাতে সওয়ার সাংবাদিক বন্ধুরা এবং অনিমেষের বন্ধুরা ।

আমরা অপেক্ষা করছিলাম একটা ট্রেন আসার। দূর থেকে ট্রেন দেখতে পেয়েই বললাম, আপনারা ভালো করে লক্ষ্য করুন। ইঞ্জিনের তলার দিকে একটা শক্ত গ্রিল থাকে। একে বলে ‘কাউক্যাচার’। গোরু চরতে চরতে চলন্ত ট্রেনের সামনে এসে পড়লে ধাক্কা খাবে ওই গ্রিলে। ফলে ছিটকে যাবে গোরু। রেললাইন ও ইঞ্জিন থাকবে সুরক্ষিত। গোরু ধরার জন্য এই গ্রিল তৈরি বলে এর নাম ‘কাউক্যাচার’। ট্রেনটা আসা থেকে চলে যাওয়ার মুহূর্তটা লক্ষ্য করুন। মুভিতে ছবি উঠছিল। ট্রেনটা চলে যেতে লাইনের পাশে বসে এবং শুয়ে দেখলাম, ডান হাত লাইনে রাখলে মাথাটা কোথায় থাকে। বললাম, মাথাটা কাউক্যাচারের ধাক্কায় ছিটকে বেরিয়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু কেন যায়নি? কারণ ও রেল লাইনে ডান হাতটি রাখেনি ।

চার নম্বর গেটের গেটম্যান আমাদের কথা শুনছিলেন। বললেন, আপনি যা বললেন তা একদম ঠিক।

পুলিশ এখানে রক্তের দাগের কথা বললেও একই সময়ে হাজির হয়েও অনাবিল কিন্তু রক্তের কোনও দাগ দেখেনি ।

ডা. মঞ্জুর মুর্শেদ বর্ধমান মেডিকেল কলেজ ও হসপিটালের ডেপুটি সুপার। তিনি জানিয়েছেন, কাটাটা কোনও ভাবেই রেলের নয়। তাহলে হাত থেকে রক্তপাত হত অতি সামান্য। যে পরিমাণ রক্তপাত হয়েছে তাতে আমার ধারণা কোনও ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা হয়েছে।

যেসব তথ্য আমাদের কাছে আছে, তাতেই আমরা এই সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারি যে হাতটা কেউ ধারালো অস্ত্র দিয়েই কেটেছে।

অনিমেষের ডান হাত কাটা পড়লে অনিমেষ অনেকটাই পরনির্ভর হয়ে পড়বে। তাতে কার লাভ? আপাতত মোবাইল বাবা ছাড়া আর কারও নাম তো উঠে আসছে না। এমন একটা সোনার ডিম পাড়া হাঁস বাবার হাতের মুঠোয় পেলে আর কী চাই! মাস গেলে মোটা টাকা আয়ের একটা বোকাসোক্স নেশুড়ে কিশোর মোবাইল বাবার উপর যত নির্ভরশীল হবে, ততই বাবার নিংড়ে নিতে সুবিধে হবে।

৪ নম্বর গেটের কাজ শেষ করে দুর্গাপুর কোর্টে অসিত মুখোপাধ্যায়ের সঙ্গে দেখা করলাম। নতুন কিছু তথ্য পেলাম না। দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালের ডা. রাজা সাহাকে ধরলাম। ডা. সাহা সেই একই কথা জানালেন, অনিমেষের ইনজুরি থেকে যে পরিমাণে রক্ত পড়ছিল, ট্রেনে কাটা গেলে তা অসম্ভব ।

দৌড়ালাম কাঁকসা থানায়। সাংবাদিকরাও সঙ্গী। ও সি তাপস পাল জানালেন, অনিমেষ তার বয়ানে বলেছে—মোবাইল বাবার উপদেশ মতো ফাড়া কাটাতে ট্রেনের চাকার তলায় হাত রেখেছিল। মাদক খাইয়ে অজ্ঞান করে অনিমেষকে ওই সাধু যে রেললাইনের কাছে নিয়ে যায়নি সেটা আমাদের তদন্তে ধরা পড়েছে। সাধু অনিমেষকে ফাঁড়ার কথা বলে কিছুটা হলেও প্ররোচিত করেছিল।

ও.সি-কে জিজ্ঞেস করলাম, দুর্গাপুর ও বর্ধমান হসপিটাল থেকে মেডিক্যাল রিপোর্ট পেয়েছেন? রিপোর্টে কী বলা হয়েছে—হাতটা রেলে কাটা? নাকি ধারালো অস্ত্র দিয়ে কাটা? —মেডিক্যাল রিপোর্ট পেয়েছি। তদন্ত চলছে, সুতরাং এই অবস্থায় এর চেয়ে বেশি বলতে পারব না। এর বেশি জানতে হলে এস পি-র সঙ্গে কথা বলুন ।

আবার দৌড়ালাম। এবার লক্ষ্য বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হসপিটাল। ডেপুটি সুপার ডা. মঞ্জুর মুর্শেদকে ফোনে ধরলাম। বললাম, আমি দুর্গাপুর থেকে আপনার কাছে যাচ্ছি, রাস্তায় আছি। না পৌঁছানো পর্যন্ত প্লিজ থাকবেন।

হসপিটালে পৌঁছেই দেখা করলাম ডা. মুর্শেদের সঙ্গে। ওঁর কাছে যা-যা জানতে পারলাম তা ওরই ভাষায় এইরকম : ― (এক) মেডিক্যাল রিপোর্ট তৈরি রয়েছে। ১৫ তারিখে হাত কেটেছে। আজ ২৪ তারিখ। এর মধ্যে পুলিশ যোগাযোগই করল না। অথচ এই অবস্থায়, অর্থাৎ কেস যখন কোর্টে উঠেছে, তখন মেডিক্যাল রিপোর্ট খুবই জরুরি। (দুই) হাত রেলে কাটেনি । ধারালো অস্ত্র নিয়ে কাটা হয়েছে। (তিন) অনিমেষ কোনও মানসিক রুগি নয় যে অতি আবেগে রেল লাইনে হাত দেবে। আমাদের হসপিটালের মানসিক রোগ বিভাগের প্রধান ডা. ওমপ্রকাশ সিংহ অনিমেষকে পর পর দু’দিন দীর্ঘ পরীক্ষা করে জানিয়েছেন—ও মোটেই মানসিক রুগি নয়। (চার) অনিমেষের ইউরিন পরীক্ষা করে মাদক গ্রহণের প্রমাণ পাওয়া গেছে। ‘ফেনসাইক্লিডিন’ জাতীয় কোনও মাদক খাওয়ানো হয়েছিল। এই মাদকের প্রভাবে শরীরে কোনও আঘাত করলে তা অনুভূত হয় না। (পাঁচ) ১৭ অক্টোবর অনিমেষ আমাকে বলেছে, “বিকেলে মোবাইল বাবা আমাকে ওষুধ খাওয়ালে আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়ি। তখন ও আমাকে একটা ঝোপের কাছে নিয়ে গিয়ে ভোজালি দিয়ে আমার হাত কেটে নেয়।” (ছয়) অনিমেষের দেওয়া এই স্টেটমেন্ট আমি পুলিশকে জানাবার সুযোগই পাইনি। পুলিশ মেডিক্যাল রিপোর্ট নিতে এলে নিশ্চয়ই জানাতাম। (সাত) পুলিশের গা ছাড়া ভাব থেকে সন্দেহ হচ্ছে ওরা মোবাইল বাবাকে বাঁচাবার চেষ্টা করছে। (আট) পুলিশ অনিমেষের স্টেটমেন্ট নিতে এই কলেজে আসছে, কিন্তু মেডিক্যাল রিপোর্টটা নিচ্ছে না।

অনিমেষ রয়েছে এই ওয়ার্ডেরই সি বি এস মেল ওয়ার্ডের বেডে। ওর সঙ্গে দেখা করলাম। ও এখন অনেকটা সুস্থ। অনাবিল ও সঞ্জয় অনিমেষের সঙ্গে আমার পরিচয় করিয়ে দিল। এটা সেটা নিয়ে কথা হল। নতুন তথ্য উঠে এল না। এবার আসল প্রশ্নে এলাম, “তোমাকে কি মোবাইল বাবা তন্ত্র শেখাতেন ?”

—“হ্যাঁ”। অনেকটা কিন্তু কিন্তু করে শেষ পর্যন্ত বলেই ফেলল।

—“নারী-পুরুষের মিলন ছাড়া তো তন্ত্রে সিদ্ধিলাভ করা যায় না। তুমি মিলিত হওয়ার জন্য আশ্রমে মহিলা কোথায় পেতে?”

—“সন্তান হচ্ছে না, এমন অনেক লোকই সঙ্গে বউ নিয়ে মোবাইল বাবার কৃপা পেতে আসত। তাদেরই কোনও কোনও বউকে পুত্রেষ্টি যজ্ঞের নাম করে রেখে দিত। রাতে বউটিকে কোনও ওষুধ খাইয়ে আমার কাছে দিয়ে বলত, তুই শিব, ও শক্তি। মনের আনন্দে দু’জনে মিলিত হ।”

—“তুমি ছাড়া আর কেউ কি বাবার কছে তন্ত্র শিখতে আসত?’

–“সরকারি অফিসার, পুলিশ অফিসার, মাফিয়ারও তন্ত্র শিখতে আসত। তারাও ভৈরবী হিসেবে অন্যের বউকে পেত।”

-“পুলিশকে এসব বলেছ ?

—“বলিনি। বলে লাভ নেই। পুলিশ বেডে এসে আমাকে হুমকি দিয়ে গেছে শিখিয়ে দিয়ে গেছে—আমি যেন বলি নিজেই ট্রেনের তলায় হাত দিয়েছিলাম।”

অনিমেষকে আশ্বাস দিলাম। বললাম, কোনও ভয় না করে সত্যিটা সাংবাদিকদের জানাও ৷ যুক্তিবাদী সমিতি ও হিউম্যানিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশন তোমার পাশে আছে ও থাকবে।

অনিমেষকে ঘিরে অনিমেষের প্রতিবেশী, যুক্তিবাদী সমিতি, হিউম্যানিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশন ও সংবাদ মাধ্যমগুলো সম্মিলিত এই লড়াই চালু রাখল। আমাদের বিরুদ্ধে ধর্ম-রাজনীতি-পুলিশ-প্রশাসন সম্মিলিত লড়াইতে নেমেছে। ‘সত্যের জয় হবে-ই—এমন বোকা বোকা ধারণা নিয়ে বসে থাকলে সত্য পরাজিত হবেই। দুর্নীতির এই আপন দেশে এখন এটাই চলছে। সত্যকে জয়যুক্ত করতে সুশীল সমাজ থেকে নাগরিক সমাজের বহু শ্রেণীর, বহু পেশার মানুষকে অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে শামিল করতেই হবে। সেই শামিল করার চেষ্টার শুরুর দিকের কাজ করছি আমরা, সম্মিলিতভাবে আমরা।

তপন রায়, দুর্গাপুর, ২৪ অক্টোবর (সংবাদ) : জ্ঞানবিজ্ঞানের সামান্যতম আলো ছুঁতে পারেনি কাঁকসার মোবাইল বাবা ওরফে মোবাইল সাধু ওরফে জগন্নাথ লোহার এবং তার পরিবারের মধ্যে। এমনকী মোবাইল সাধুর দ্বাদশ শ্রেণীতে পড়া ছেলের মধ্যে দেখা গেল বুজরুকি চিন্তাভাবনার ধারক হিসাবে। মোবাইল বাবা এবং তাঁর কি পুষ্পরানি জোর গলায় জানিয়ে দিল, ঠাকুরের ফুল, বেলপাতা দিয়ে নিঃসন্তান মহিলাকে সন্তানদান করা সম্ভব। এর জন্য চিকিৎসাবিজ্ঞানের কোনো প্রয়োজন নেই। অথচ পুলিশ রেকর্ড বলছে, নিঃসন্তানকে সন্তানদান করতে গিয়ে মোবাইল সাধু ব্যভিচারে লিপ্ত হয়ে তাকে জেল খাটতে হয়েছে। তাতে অবশ্য মোবাইল সাধু বা তার পরিবারের কোনও আক্ষেপ নেই। কারণ বুজরুকি ব্যবসা করেই রাখাল বালক থেকে ধনী মোবাইল সাধুর উত্তরণ ঘটেছে জগন্নাথ লোহারের। বেড়েছে এলাকার প্রতিপত্তি।

বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে ভক্তেরা আসেন দূর-দূরান্ত থেকে। তাদের পয়সায় হয়েছে পাকা দোতলা বাড়ি, স্কুটার ১০-১২ বিঘা জমি, বহু নগদ টাকার মালিক, পাকা মন্দির। মোবাইল সাধুর কুপরামর্শে কাঁকসার প্রয়াগপুরের অনিমেষ ধীবর ডানহাতের পাঞ্জা খুইয়ে এখন বর্ধমান সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। নিজের অকালমৃত্যু থেকে বাঁচার তাগিদে অনিমেষ মোবাইল সাধুর পরামর্শে রেলের চাকার নিচে নিজের ডান হাতের কবজি মা কালীর উদ্দেশ্যে নিবেদন করেছে অনিমেষ, এই বক্তব্য মানতে নারাজ দুর্গাপুর এবং বর্ধমানের চিকিৎসকেরা।

পুলিশও বিষয়টি তদন্ত করে দেখেছে। চিকিৎসকদের প্রাথমিক অনুমান ধারালো অস্ত্র দিয়ে হাত কাটা হয়েছে। এদিকে আজ তেলিপাড়াতে মোবাইল সাধুর আখড়াতে সাতসকালে গিয়ে হাজির হন যুক্তিবাদী সমিতির সাধারণ সম্পাদক প্রবীর ঘোষ, হিউম্যানিস্ট অ্যাসোসিয়েশনের যুগ্ম সম্পাদক অনাবিল সেনগুপ্ত, যুক্তিবাদী সমিতির যুগ্ম সম্পাদক সঞ্জয় কর্মকারসহ এক দঙ্গল যুক্তিবাদী সমিতির সদস্য। সঙ্গে ছিলেন সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা ।

মোবাইল সাধু এবং তাঁর স্ত্রী পুষ্পরানি লোহার যুক্তিবাদী সমিতির সদস্যদের প্রশ্নবাণে জর্জরিত হয়ে বলে, ভক্তেরা ফল পায় বলে এখানে আসে। মায়ের ফুল, বেলপাতা দিয়ে নিঃসন্তানকে সন্তানদান করা যায় বলে মোবাইল দম্পতি জানায়। এর জন্য কোনও চিকিৎসা বিজ্ঞানের প্রয়োজন নেই। প্রয়োজন নেই, কোনও শারীরিক মিলনের। কেন মোবাইল সাধুর ব্যভিচারের জন্য তাকে জেল খাটতে হয়েছে, এই প্রশ্নের জবাবে মোবাইল সাধু বলে, পুলিশ আমাকে ফাঁসিয়ে দিয়েছে।

আজকালের প্রতিবেদনঃ দুর্গাপুর, ২৪ অক্টোবর — মূলত প্রশাসনের গাফিলতিতেই বাড়বাড়ন্ত কাঁকসার মোবাইল বাবার। আজ দুপুরে ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির ৩০ জন সদস্য মোবাইল বাবা ওরফে জগবন্ধু লোহারের তিলিপাড়ার আশ্রমে গিয়ে হানা দেন। গত সপ্তাহে এই আশ্রমেই কাঁকসার প্রয়াগপুরের কিশোর অনিমেষ ধীবরের ডান হাতের কব্জি কেটে নেওয়ায় মোবাইল বাবাকে পুলিশ গ্রেপ্তার করলেও, পরেরদিন সে জামিনে মুক্তি পায়। যুক্তিবাদী সমিতির সর্বভারতীয় সম্পাদক প্রবীর ঘোষ বলেন, গত ১৪ বছর ধরে খেতমজুর এই জগবন্ধু তার আখড়ায় প্রশাসনের মা তেই রম্ভর আমারবই.কম রমরমা ব্যবসা চালিয়েছে।

পেতে তাকে লক্ষাধিক টাকা খরচ করতে হয়েছে। মোবাইল বাবা তন্ত্র-শেখানোর নামে অনিমেষকে বহু সন্তানহীন মহিলার সঙ্গে মিলনের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন বলে তাঁর অভিযোগের ভিত্তিতে যুক্তিবাদী সমিতি মঙ্গলবার পুলিশ সুপারকে স্মারকলিপি দিয়েছেন ।

মঙ্গলবার জেলার পুলিশ সুপার পীযূষ পান্ডে জানিয়েছেন, অনিমেষ ধীবরের হাত কাটার পরেই কাঁকসা থানার পুলিশ মোবাইল বাবাকে গ্রেফতার করেছিল। তিনি জামিনে মুক্ত আছেন। আইন আইনের পথেই চলেছে। পুলিশি তদন্ত চলছে, প্রয়োজন হলেই মোবাইল বাবাকে আবারও গ্রেফতার করে আদালতে পেশ করা হবে বলে জানিয়েছেন পুলিশ সুপার।

ভারতীয় যুক্তিবাদী সমিতির আরও অভিযোগ, মোবাইল বাবার আশ্রয়ে আত্মারাম সরকার নামে মানসিক বিকারগ্রস্ত এক সশস্ত্র যুবক রয়েছে। সোমবারই আশ্রমে ওই যুবক তাঁদেরকে খুন করার হুমকি দিয়েছে। মোবাইল বাবার আশ্রম থেকে সশস্ত্র এই যুবককে অবিলম্বে গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছে যুক্তিবাদী সমিতি।

 

২৭ অক্টোবর, বৃহস্পতিবার, ২০০৫ :

* দুর্গাপুরের মাননীয় বিচারপতি শ্রীস্বদেশরঞ্জন রায়ের আদালতে ‘মোবাইল বাবা’র কেসটি ওঠে।

* বিচারপতি পুলিশের ভূমিকায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তিনি বলেন, পুলিশের তদন্তকারী অফিসার ঠিকমতো তাঁর কর্তব্য পালন করছেন না।

* রিপোর্টে লেখা আছে—এক ব্যক্তি পুলিশকে জানিয়েছেন যে তাঁর সামনে মোবাইল বাবা অনিমেষের হাত কেটেছে।

* রিপোর্টে এও লেখা আছে—অনিমেষ তাদের জানিয়েছে সে স্বেচ্ছায় ট্রেনের চাকার তলায় তার হাত রেখেছিল।

* রিপোর্টে উল্লেখ নেই যে, রাজবাঁধ ও পানাগড়ের মাঝামাঝি ৪ নম্বর গেটের কাছে রেললাইনের পাশে রক্তের দাগ দেখতে পায়। রক্ত ফরেনসিক টেস্টের জন্য পাঠানো হয়েছে—এমন কথাও রিপোর্টে নেই! কেন নেই? তবে কি পুলিশ রক্তের কোনও দাগই দেখতে পায়নি? সুতরাং ফরেনসিক পরীক্ষার জন্য রক্ত-পাঠানোর স্টোরিটাও বানানো ?

* বিচারপতি ভর্ৎসনা করেন তদন্তকারী পুলিশ অফিসারকে। মেডিক্যাল রিপোর্ট হিসেবে নার্সিংহোমের চিকিৎসকের অভিমত আদালতে পেশ করেছেন, যাতে ট্রেনে হাত কাটা গেছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে। বিচারক অসন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, নার্সিংহোমের রিপোর্ট বিভ্রান্তিকর ও অস্পষ্ট। পুলিশের দেওয়া রিপোর্টে বলা হয়েছে অনিমেষ পানাগড়ের একটি নার্সিংহোমে প্ৰথম যায় ১৫ অক্টোবর। সেদিনই দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। ১৭ অক্টোবর তাকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এই দুই সরকারি হাসপাতালে অপারেশন ও চিকিৎসা হওয়া সত্ত্বেও দুই হাসপাতালের ডাক্তারদের মতামত রিপোর্টে কেন পেশ করা হয়নি? প্রশ্ন তোলেন বিচারক। তিনি সরকারি হাসপাতালের রিপোর্ট দেখতে চান।

সরকারি আইনজীবী অমলেন্দু ভট্টাচার্য আদালতকে জানান পুলিশ এখনও দুর্গাপুর মহকুমা হাসপাতাল ও বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজের মতামত সংগ্রহ করে উঠতে পারেনি।

* আজও মোবাইল বাবাকে হেফাজতে নেওয়ার জন্য পুলিশ কোনও আবেদন জানায়নি।

পুলিশ কি জনগণের বন্ধু? নাকি বিত্তশালীর বন্ধু? ইতিমধ্যেই সেই প্রশ্ন উঠেছে।

 

১৯ নভেম্বর, শনিবার, ২০০৫ :

মোবাইল বাবা পুলিশ-প্রশাসন-রাজনৈতিক দলের সম্মিলিত দুর্নীতির বিরুদ্ধে ‘গণকনভেনশন অনুষ্ঠিত হয় বর্ধমানের বোরহাটের ধর্মশালায় ।

যুক্তিবাদী সমিতি, হিউম্যানিস্টস্ অ্যাসোসিয়েশন, গণকন্ঠ লিটল ম্যাগাজিন লাইব্রেরি ও সমাজসেবা সমিতি, বস্তুবাদী, শিশুমন, ক্যাসিওপিয়া, বিন্দুবিসর্গ, গণকন্ঠ বিজ্ঞান মঞ্চ, ছাত্র-যুব ঐক্য কমিটি, সংগ্রামী নাগরিক মঞ্চ, গণসংগ্রাম মঞ্চ প্রভৃতি ১৫টি গণসংগঠন এই গণকনভেনশনে যোগদান করেন ।

 

২৬ নভেম্বর, শনিবার, ২০০৫ :

অনিমেষের বন্ধুরা ফোনে খবর দিল কাজোড়া শাখার রাণাকে যে কাঁকসা থানার পুলিশ অনিমেষকে ধরে থানায় নিয়ে গেছে। রাত তখন ১১টা। রাণা আমাকে জানাল, কুট্টির নেতৃত্বে জনা কুড়ি ছেলে একটা লরি করে থানায় যেতে তৈরি আছে। অনিমেষকে কেস উইথড্র করার জন্য নিশ্চয়ই চাপ দেবে। আমাদের ছেলেরা থানা ঘেরাও করে রাখবে— পুলিশের পরিকল্পনা ব্যর্থ করে দিতে। অবাক হলাম। কাজোড়া থেকে কাঁকসা ৫০-৬০ কিলোমিটারের পথ। এই আট ডিগ্রি টেম্পারেচারে এতটা পথ লরিতে! বললাম, তোদের যেতে হবে না। আমি সাংবাদিক বন্ধুদের বিষয়টা জানাচ্ছি।

চন্দ্রকান্ত তেওয়ারিঃ বর্ধমান, ১ ডিসেম্বর— বর্ধমানের কাঁকসায় বিতর্কিত সাধু মোবাইল বাবা প্রয়াগপুর গ্রামের একটি মন্দিরে অনিমেষ ধীবরের ডান হাতের কব্জি কেটে নেওয়ার বিষয়টিকে পুলিশ ধামাচাপা দিতে চাইছে বলে অভিযোগ উঠেছে। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী সমিতির বর্ধমান জেলা সম্পাদক সঞ্জয় কর্মকারকে লিখিতভাবে অনিমেষ জানিয়েছেন, মোবাইল বাবা ওরফে জগবন্ধু লোহারের প্ররোচনায় পা-দিয়েই তাঁর এই দুর্গতি। অনিমেষের জবানবন্দি থেকে পরিষ্কার, মোবাইল বাবার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলা হতেই, অপরাধ চাপা দিতে কাঁকসা পুলিশ মামলা ঘুরিয়ে দিতে তৎপর। কারণ দুর্গাপুর মহকুমার অনেক পুলিশকর্তার সঙ্গে মোবাইল বাবার গোপন যোগাযোগ রয়েছে। কাঁকসা থানার ওসি তাপস পাল ও তাঁর ভক্ত। ভাগ্য পরিবর্তনের আশ্বাস দিয়ে এই মোবাইল বাবা অনিমেষের কাছ থেকে কয়েক লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। অনিমেষের অভিযোগ, গত ২৬ নভেম্বর রাতে কাঁকসা থানার পুলিশ তাঁকে বাড়ি থেকে থানায় নিয়ে গিয়ে মামলা প্রত্যাহার ও জবানবন্দি পাল্টে দেওয়ার জন্য অধিক রাত পর্যন্ত চাপ দেয়। পুলিশের বক্তব্য, অনিমেষের কব্জি কেটে নেওয়ার পেছনে মোবাইল বাবার কোনও হাত নেই। সে নিজেই রেল লাইনে হাত কেটে বিষয়টি জল ঘোলা করছে।

 

৭ ডিসেম্বর, বুধবার, ২০০৫,

মোবাইল বাবাকে ঘিরে গড়ে ওঠা ভয়াবহ দুষ্টচক্রের বিরুদ্ধে একটি অভিযোগপত্র বর্ধমান জেলাশাসকের হাতে তুলে দেওয়া হয় সংগ্রামী যুক্তমঞ্চের তরফ থেকে। তাতে পরিশেষে ছিল—আমাদের এটাই দেখার মোবাইল বাবারা আর কতদিন সমাজের বুকে মোবাইল হয়ে থাকবে?

♦ কিছু কথা

প্রথম খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস

অধ্যায়ঃ দুই

♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !

অধ্যায়ঃ তিন

♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…

অধ্যায়ঃ চার

♦ মেঠাইবাবার রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ হাড় ভাঙ্গার দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ কাকদ্বীপের দৈব-পুকুর

অধ্যায়ঃ সাত

♦ আগরপাড়ায় ‘ভূতুরে’ আগুন

অধ্যায়ঃ আট

♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা

অধ্যায়ঃ নয়

♦ কামধেনু নিয়ে ধর্মব্যবসা

অধ্যায়ঃ দশ

♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !

অধ্যায়ঃ বারো

♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ চলো যাই ফকিরবাড়ি

অধ্যায়ঃ চোদ্দ

♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !

অধ্যায়ঃ পনেরো

♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !

অধ্যায়ঃ ষোলো

♦ জলাতঙ্ক ও দৈব-চিকিৎসা

অধ্যায়ঃ সতেরো

♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন

দ্বিতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ পক্ষিতীর্থমের অমর পাখি

অধ্যায়ঃ তিন

♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !

অধ্যায়ঃ চার

♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ পাথর যখন কথা বলে

অধ্যায়ঃ আট

♦ ফাঁদে পড়ে জ্যোতিষী শ্রীঘরে

অধ্যায়ঃ নয়

♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…

অধ্যায়ঃ দশ

♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও

অধ্যায়ঃ এগারো

♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর

অধ্যায়ঃ বারো

♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা

অধ্যায়ঃ তেরো

♦ নিমপীঠের গুগি মা

তৃতীয় খন্ড

♦ কিছু কথা

অধ্যায়ঃ এক

♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ

অধ্যায়ঃ দুই

♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন

চতুর্থ খন্ড

অধ্যায়ঃ এক

♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা

অধ্যায়ঃ দুই

♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা

অধ্যায়ঃ তিন

♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল

অধ্যায়ঃ চার

♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ

অধ্যায়ঃ পাঁচ

♦ যিশুর মূর্তি থেকে রক্তপাত

অধ্যায়ঃ ছয়

♦ সত্য সাঁই-এর সত্যি-মিথ্যে

অধ্যায়ঃ সাত

♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি

অধ্যায়ঃ আট

♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন

অধ্যায়ঃ নয়

♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’

অধ্যায়ঃ দশ

♦ জাতিস্মরঃ রাজেশ কুমার

♦ অলৌকিক শক্তিধরদের প্রতি চ্যালেঞ্জ

“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ

⇒ মন্তব্য করুন⇐

error: Content is protected !!