অশেষ দাতা ও অসীম দয়ালু আল্লাহ্ তা’আলার নামে আরম্ভ করিতেছি। অনন্ত প্রশংসা সেই চিরন্তন প্রভুর যাঁহার ‘হও’ বলায় আমরা অস্তিত্ববান হই আর ‘নাই’ বলার সাথ সাথে বিলীন হইয়া যাই। অশেষ প্রশংসা সেই রহমানুর রহীমের যিনি কলমের সাহায্যে আমাদিগকে শিখাইলেন আর অজানাকে জানাইয়া আঁধারপুরী হইতে আলোর জগতে পৌঁছাইয়া দিলেন। অজস্র দরূদ ও সালাম সেই মহান রাসূল (সাঃ) ও তাঁহার আল-আসহাবের উপর যাঁহার অস্তিত্বের বদৌলতে আমাদের অস্তিত্বের উদ্ভব আর যাঁহার হিদায়াত ও শাফাআত আমাদের ইহ ও পরকালের নাজাতের একমাত্র পূর্বশর্ত। ওগো পরওয়ারদেগার। আমার কাজকে সহজ কর আর তাহা সুসম্পন্ন করার তাওফীক দান কর।

প্রারম্ভেই আমি অকপটে স্বীকার করিতেছি যে, তাফসীর ইব্‌ন কাছীর অনুবাদ করার যথাযথ যোগ্যতা আমার নাই। তথাপি আল্লাহ্র রহমত ও বুযুর্গানের দোআর উপর ভরসা করিয়া এরূপ দুঃসাহসিক কাজে এই জন্য হাত দিয়াছি যে, সুদীর্ঘ সাত শতাব্দী ধরিয়া বাংলা ভাষাভাষী ভ্রাতাভগ্নীগণ বিশ্বের শ্রেষ্ঠতম নির্ভরযোগ্য তাফসীরের অশেষ জ্ঞান ও অফুরন্ত কল্যাণ হইতে বঞ্চিত রহিয়াছে। বস্তুত, এতকালের সুযোগ্য মনীষীদের অবহেলা ও ঔদাসীন্যজনিত এই বঞ্চনার বেদনা লইয়া আমি ছাত্র জীবন হইতেই এই মহান দায়িত্বটি পালনের স্বপ্ন দেখিয়া আসিতেছিলাম।

অবশেষে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের মহাপরিচালক জনাব এ. জেড. এম. শামসুল আলম সাহেব আমার এই সম্পর্কিত প্রকল্পটি সোৎসাহে গ্রহণ করিয়া আমারই স্কন্ধে ইহার সার্বিক দায়িত্ব ন্যস্ত করেন। অগত্যা আমি ১৯৮১ সালে উহা শুরু করার পরই বিভিন্ন কাজে জড়াইয়া পড়িলাম। অতঃপর ১৯৮৬ সালে উহা হইতে নিজকে মুক্ত করিলাম এবং অনুবাদ কার্যে মনোযোগ দিলাম । তাহারই ফলশ্রুতিতে মার্চ ২০০৩ সালে আল্লাহ্র ফযলে তাফসীরে ইবন কাছীরের একাদশ খণ্ডে প্রকাশিত হইয়া সমাপ্ত হইল।

প্রথম খণ্ডে আমি সূরা ফাতিহাসহ আলিফ লাম পারার তাফসীর সন্নিবেশিত করিয়াছি। পরন্তু প্রচলিত রীতি অনুসরণ করিয়া আমি মুসান্নিফ (রঃ)-এর সর্বশেষে সংযোজিত ‘ফাযায়েলুল কুরআন’ অধ্যায়টি অনূদিত গ্রন্থের শুরুতেই সংযোজন করিয়াছি। উহাও একটি স্বতন্ত্র গ্রন্থ বিধায় আমি উহার স্বতন্ত্র পৃষ্ঠা সংখ্যা প্রদান করিয়াছি। অনূদিত এই গ্রন্থটির নাম মূলত ‘তরজমাতুত তাফসীরে ইব্‌ন কাছীর’। কিন্তু সংক্ষেপণ ও সঙ্গতির জন্য আমি শুধু ‘তাফসীরে ইব্‌ন কাছীর’ নাম দিয়াছি।

বলাবাহুল্য, আমার শাস্ত্রজ্ঞান নগণ্য, ভাষাজ্ঞান সীমিত ও লেখনী বড়ই দুর্বল। এত অক্ষমতা লইয়া আল্লাহ্র উপর ভরসা করিয়া যতটুকু করিলাম তাহা সহৃদয় উলামায়ে কিরাম ও সুধীমণ্ডলীর সার্বিক সহায়তার আশায়ই প্রকাশ করিতে সাহসী হইলাম। তাঁহারা আমার অজ্ঞতার ক্ষেত্রে জ্ঞান দান করিবেন, ভাষার ত্রুটি সংশোধন করিবেন ও লেখনীর দুর্বলতা ধরাইয়া দিবেন, ইহাই আমার ঐকান্তিক কামনা। উহার বিনিময়ে আমি চিরকাল তাঁহাদের কৃতজ্ঞতাপাশে আবদ্ধ থাকিব।

প্রথম খণ্ডের তৃতীয় সংস্করণ প্রকাশিত হইতেছে জানিয়া খুবই খুশি হইলাম। সম্পূর্ণ নির্ভুল ও নিখুঁত করার ইচ্ছা থাকা সত্ত্বেও কিছু মুদ্রণ প্রমাদ থাকিতে পারে। অনুবাদের ক্ষেত্রেও দুই একটি অসতর্কতাজনিত ভুল থাকিতে পারে। তাহা সহৃদয় পাঠকবর্গ জানাইলে আশা করি, ইনশাআল্লাহ্ পরবর্তী সংস্করণে এইসব ত্রুটি সংশোধিত হইবে। এতবড় গ্রন্থের ত্রুটি বিচ্যুতিটুকু সহৃদয় পাঠকবৃন্দ ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখিবেন বলিয়া আমার দৃঢ় আস্থা রহিয়াছে।

এই বিরাট অনুবাদকার্যে আমি গওহর ডাংগার এককালের কৃতি ছাত্র ও বর্তমানে শিক্ষকতারত মাওলানা মাজহারুল হকের পরোক্ষ সহযোগিতা কৃতজ্ঞতার সহিত স্মরণ করিতেছি। তেমনি ইহার প্রকাশনাসংশ্লিষ্ট বিভিন্ন সহযোগিতার জন্য অনুবাদ বিভাগের মাওলানা ফরীদউদ্দীন মাসউদ ও জনাব আবুল বাশার আখন্দ এবং প্রকাশনা বিভাগের জনাব আবু সাঈদ মুহাম্মদ ওমর আলী ও হাফেজ মঈনুল ইসলামের কাছে আমি বিশেষভাবে ঋণী। তৃতীয় সংস্করণের প্রুফ সংশোধন করেছেন জনাব মুহাম্মদ আবু তাহের সিদ্দিকী। আল্লাহ্ পাক তাহাদের সকলের ইহ ও পরকালীন কল্যাণ দান করুন, ইহাই আমার ঐকান্তিক প্রার্থনা।

পরিশেষে আমি এতটুকুই বলিতে চাই, এই গ্রন্থের যাহাকিছু কৃতিত্ব তাহার সবটুকু প্রশংসা আল্লাহ্ রব্বুল আলামীনের প্রাপ্য আর যাহাকিছু অকৃতিত্ব তাহার সবটুকু নিন্দার একমাত্র প্রাপক আমিই। এই অধম বান্দার পারলৌকিক মুক্তির জন্য আল্লাহ্ গফুরুর রহীম এই নগন্য কাজটিকে বাহানা হিসাবে কবুল করুন, ইহাই আমার একমাত্র মুনাজাত। আমীন- ইয়া রাব্বাল আলামীন !

আহকার

আখতার ফারুক

error: Content is protected !!