প্রায় বাইশ বছর পূর্বের রোপিত আমার এক পাতার শিশু বৃক্ষটি এখন বেশ বড়সড় হয়েছে, শাখা-প্রশাখা ও পাতা-পল্লব প্রচুর জন্মেছে। কিন্তু ফলন্ত হল না এখনো। আজ পর্যন্ত কোন মানুষকে তার ফলের এক ফোঁটা রসও আস্বাদন করতে দিতে পারি নাই। তাই মনে অতিশয় বেদনা।
“সত্যের সন্ধান” এর এক পাতার পান্ডুলিপি খানা এখন দু-শ পাতার ঊর্ধ্বে উঠেছে। (১) কিন্তু প্রকাশ করা সম্ভব হচ্ছে না কারণ আমার অর্থাভাব। সে অভাব কিছুটা পূরণ করার জন্য এগিয়ে আসলেন মহানুভব অধ্যাপক শরফুদ্দিন রেজা হাই সাহেব। তিনি পুস্তক খানা প্রকাশের জন্য স্বেচ্ছাকৃত ভাবে আমাকে এক হাজার টাকা সাহায্য দানের প্রতিশ্রুতি দিলেন (২৪/৩/৭৯)। মাননীয় হাই সাহেবের সাহায্যের উপর ভ্রসা রেখে পুস্তক খানা প্রকাশ করতে মনস্থ করলাম।
১০ই শ্রাবণ, ১৩৭৯। “সত্যের সন্ধান” পুস্তক খানা ছাপাতে দেওয়ার জন্য বরিশাল গেলাম এবং অধ্যাপক মোঃ শামসুল হক সাহেব ও অধ্যাপক বাকের আলী সাহেবকে ডেকে আনলাম আল আমিন প্রেসে। তাঁরা আমার পক্ষ হয়ে প্রেস কর্তৃপক্ষ মোঃ আঃ জব্বার মিঞা ও মোঃ সেকান্দার আলী মিঞার সাথে আলাপ আলোচনা করে নিম্নলিখিত হিসাব অনুযায়ী সং ১০০.০০ টাকা নগদ দিয়ে “সত্যের সন্ধান” বই খানা ছাপতে অর্ডার লিখিয়ে দিলেন।
(খরচ)
(১) কাগজ — ৭০০.০০
(২) মলাটের কাগজ ও ছাপা — ৬০.০০
(৩) ছাপা খরচ — ৪০০.০০
(৪) বাইন্ডিং — ১০০.০০
মোট টাকা ১২৬০.০০
প্রেসের কর্তৃপক্ষের সাথে চুক্তি থাকে যে, আগামী ডিসেম্বর (অগ্রহায়ণ) মাসের মধ্যে বইয়ের ছাপা কাজ সমাধা করে দিবেন। কিন্তু নানা অজুহাত দেখিয়ে তাঁরা এতই শৈথিল্য করতে লাগলেন যে, মাঘ মাসের প্রথম ভাগেও ছাপা কাজ শুরুই করলেন না।
১৯শে মাঘ, ১৩৭৯। বেলা ১২টায় আমি প্রেসে গেলে প্রেসের ম্যানেজার সেকান্দার আলী মিঞা আমাকে বললেন যে, আজ আমার বইয়ের ছাপা কাজ শুরু করা হবে। সুতরাং কিছু আনুষ্ঠানিকতার প্রয়োজন। আমি সহর্ষে সম্মতি জানিয়ে তাঁকে বললাম- আপনার ও কর্মচারীবৃন্দের অভিরুচি মত অনুষ্ঠানের আয়োজন করুন। ব্যয় ভার সব আমার। আমি কলেজে গিয়ে অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদের সাহেব ও অধ্যাপক মোঃ শামসুল হক সাহেবকে নিমন্ত্রণ জানালাম এবং কলেজ ছুটির পর তাঁদের নিয়ে প্রেসে আসলাম। “সত্যের সন্ধান” পুস্তকের “মূল কথা” এ লিখিত “অজানাকে জানার স্পৃহা মানুষের চিরন্তন” এই ব্যাপারটি কম্পোজ করে ছাপিয়ে আমাদের সামনে দেওয়া হলে সবাই উহা সানন্দে পাঠ করলাম। অতঃপর চা-মিষ্টি ভোজনান্তে ছাপা কাজের অনুষ্ঠান পর্ব শেষ করলাম। নিরানন্দ মনের এক কোনে আজ কিছু আনন্দ নিয়ে রাত্রে বাড়িতে এলাম।
বইয়ের ছাপা কাজ শুরু হলে কি হবে, প্রেসে অন্যান্য কাজ যথেষ্ট হচ্ছে কিন্তু আমার কাজ হচ্ছে না। আমার কাজে এতই গড়িমসি চলতে লাগল যে, ৩০শে চৈত্র পর্যন্ত ছাপা হল মাত্র ৮টি ফরমা (আট পেজী)। ওদিকে জিনিস পত্র মূল্য হু হু করে অস্বাভাবিক রূপে বৃদ্ধি পেয়ে গেল। একদা প্রেসের ম্যানেজার সাহেব বললেন- “কাগজ, কালি, টাইপ ইত্যাদির মূল্য বাড়ছে; ঘর ভাড়া, লাইট ভাড়া সবই বাড়ছে এবং বাড়াতে বাড়াতে হচ্ছে কর্মচারীর বেতনও। সুতরাং এখন আপনার সাবেক বরাদ্দে আর কাজ করা যাবে না। তিনি নূতন করে একটা হিসাব দিলেন।
(১) কাগজ — ১৭০০.০০
(২) ছাপা খরচ — ৯২০.০০
(৩) কভারের কাগজ — ৫০.০০
(৪) কভার ছাপা — ২০.০০
(৫) বাঁধাই — ৬০০.০০
(অতিরিক্ত) ব্লক-ডিজেইন — ২১৫.০০
মোট টাকা = ৩৫০৫.০০
ভিখারীর আত্মকাহিনী- প্রথম খন্ড
♦ চর পূর্বাভাস ও জন্ম (১১৫৮-১৩০৭)
♦ উচ্চ শিক্ষার প্রচেষ্টা (১৩৩৫)
ভিখারীর আত্মকাহিনী- দ্বিতীয় খন্ড
♦ মোসলেম সমিতিঃ স্কুল প্রতিষ্ঠা ও শিক্ষকতা (১৩৩৬-১৩৪১)
♦ ইঞ্জিনিয়ারিং শিখার উদ্যোগ ও মাতৃবিয়োগ (১৩৩৯)
♦ ভিখারীর আত্মকাহিনী- তৃতীয় খন্ড
♦ বরিশাল পাবলিক লাইব্রেরীর শিক্ষা
♦ অধ্যাপক কাজী গোলাম কাদিরের সান্নিধ্যে
♦ ভিখারীর আত্মকাহিনী- পঞ্চম খন্ড
“আরজ আলী মাতুব্বর” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ