শ্লোকঃ ২৪

তস্মাদ্‌ ওঁ ইত্যুদাহৃত্য যজ্ঞদানতপঃক্রিয়াঃ ।

প্রবর্তন্তে বিধানোক্তাঃ সততং ব্ৰহ্মবাদিনাম্ ॥ ২৪ ॥

তস্মাৎ—সেই হেতু, ওঁ-ওঁ-কার; ইতি—এই শব্দ; উদাহৃত্য—উচ্চারণ করে; যজ্ঞ-যজ্ঞ, দান—দান; তপঃ– তপস্যা; ক্রিয়াঃ– ক্রিয়াসমূহ, প্রবর্তন্তে — অনুষ্ঠিত হয়; বিধানোক্তাঃশাস্ত্রের বিধান অনুসারে: সততম—সর্বদাই; ব্রহ্মবাদিনাম- ব্রহ্মবাদীদের।

গীতার গান

সেজন্য ব্রাহ্মণগণ ‘ওম্’ উচ্চারণে ।

যজ্ঞাদি বিধান করে ব্রহ্ম আচরণে ॥

অনুবাদঃ সেই হেতু ব্রহ্মবাদীদের যজ্ঞ, দান, তপস্যা ও ক্রিয়াসমূহ সর্বদাই ওঁ এই শব্দ উচ্চারণ করে শাস্ত্রের বিধান অনুসারে অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে।

তাৎপর্যঃ ওঁ তদ্বিষ্ণোঃ পরমং পদম্ (ঋক্ বেদ ১/২২/২০)। শ্রীবিষ্ণুর শ্রীচরণ-কমল হচ্ছে পরা ভক্তির পরম আশ্রয়। পরম পুরুষোত্তম ভগবানের উদ্দেশো অনুষ্ঠিত কর্ম হচ্ছে সমস্ত কর্মের সার্থকতা।

শ্লোকঃ ২৫

তদিত্যনভিসন্ধায় ফলং যজ্ঞতপঃক্রিয়াঃ ।

দানক্রিয়াশ্চ বিবিধাঃ ক্রিয়ন্তে মোক্ষকাঙ্ক্ষিভিঃ ॥ ২৫ ৷৷

তৎ ইতি—’তৎ’ এই শব্দ; অনভিসন্ধায় — আকাঙ্ক্ষা না করে; ফলম্ — ফলের; যজ্ঞ – যজ্ঞ, তপঃ—তপস্যা; ক্রিয়াঃ – ক্রিয়া; দান-দান; ক্রিয়াঃ– ক্রিয়া; চ–3; বিবিধাঃ নানাবিধ; ক্রিয়ন্তে — অনুষ্ঠিত হয়; মোক্ষকা স্পিডি – মুক্তিকামীদের দ্বারা ।

গীতার গান

অতএব যজ্ঞ দান তপস্যার ফল ।

অন্যাভিলাষ নহে ভক্তির কারণ ॥

মোক্ষাকাঙ্ক্ষী সেজন্য যজ্ঞ দান করে ।

সেই সে যজ্ঞাদি ফল বিদিত সংসারে ॥

অনুবাদঃ মুক্তিকামীরা ফলের আকাঙ্ক্ষা না করে ‘তৎ’ এই শব্দ উচ্চারণ পূর্বক নানা প্রকার যজ্ঞ, তপস্যা, দান আদি কর্মের অনুষ্ঠান করেন।

তাৎপর্যঃ চিন্ময় স্তরে উন্নীত হতে হলে জড়-জাগতিক লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে কোন কর্ম করা উচিত নয়। চিন্ময় জগৎ ভগবৎ-ধামে ফিরে যাওয়ার পরম উদ্দেশ্য নিয়ে সমস্ত কর্ম করা উচিত।

শ্লোকঃ ২৬-২৭

সদ্ভাবে সাধুভাবে চ সদিত্যেত‍ৎ প্রযুজ্যতে ।

প্রশস্তে কর্মণি তথা সচ্ছব্দঃ পার্থ যুজ্যতে ।। ২৬ ।।

যজ্ঞে তপসি দানে চ স্থিতিঃ সদিতি চোচ্যতে ।

কর্ম চৈব তদর্থীয়ং সদিত্যেবাভিধীয়তে ।। ২৭ ।।

সদ্ভাবে—ব্রহ্মের ভাব অবলম্বন করে; সাধুভাবে— ভাঙর ভাব অবলম্বন করে; চ— সহ – সৎ শব্দ, ইতি—এভাবে, এতৎ— এই প্রযুজ্যতে—প্রযুক্ত হয়; প্রশস্তে—শুভ, কর্মণি — কর্মসমূহে, তথা— তেমনই; সচ্ছন্দঃ— ‘সৎ’ শব্দ; পার্থ- হে পৃথাপুত্র; যুজ্যতে ব্যবহৃত হয়; যজ্ঞে যজ্ঞে, তপসি — তপস্যায়; দানে— দানে, চ—ও, স্থিতিঃ—অবস্থিতি, সৎ — সৎ ইতি—এভাবে; চ–এবং উচ্যতে- উচ্চারিত হয়; কর্ম—কর্ম; চ–ও; এব— অবশ্যই; তৎ- সেই; অর্থীয়ম্—অর্থে; সৎ-সৎ; ইতি—এই; এৰ-অবশ্যই; অভিধীয়তে অভিহিত হয়।

গীতার গান

সং সে শব্দের অর্থ ব্রহ্ম ব্রহ্মপর ।

সে উদ্দেশ্যে যত কর্ম সব ব্রহ্মপর ॥

যজ্ঞ দান তপ কার্য সে উদ্দেশ্যে করে ।

লৌকিক বৈদিক কর্ম ব্রহ্ম নাম ধরে ॥

অনুবাদঃ হে পার্থ। সৎভাবে ও সাধুভাবে ‘সৎ’ এই শব্দটি প্রযুক্ত হয়। তেমনই ত কর্মসমূহে ‘সৎ’ শব্দ ব্যবহৃত হয়। যজ্ঞে, তপস্যায় ও দানে ‘সৎ’ শব্দ উচ্চারিত হয়। যেহেতু ঐ সকল কর্ম ব্রহ্মোদ্দেশক হলেই ‘সৎ’ শব্দে অভিহিত হয়।

তাৎপর্যঃ প্রশস্তে কর্মণি কথাগুলির অর্থ এই যে, বৈদিক শাস্ত্রে নানা রকম পবিত্রকারক কাজকর্ম করার নির্দেশ দেওয়া আছে, যা শৈশবে পিতামাতার তত্ত্বাবধানে থেকে শুরু করে জীবনের অন্তিম সময় পর্যন্ত পালন করা উচিত। জীবনের পরম সিদ্ধি লাভ করার উদ্দেশ্যে এই সমস্ত পত্রিকারক কর্তব্যগুলি অনুষ্ঠান করা হয়। এই সমস্ত কাজকর্মে ওঁ তৎ সৎ মন্ত্র উচ্চারণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সভাবে ও সাধুভাবে শব্দগুলি দিব্য অবস্থাদি নির্দেশ করে। কৃষ্ণভাবনাময় কাজকর্মকে বলা হয় সত্ত্ব এবং যিনি কৃষ্ণভাবনাময় কর্ম সম্বন্ধে সম্পূর্ণ সচেতন, তাঁকে বলা হয় ‘সাধু’। শ্রীমদ্ভাগবতে (৩/২৫/২৫) বলা হয়েছে যে, সাধুসঙ্গ করার ফলে অপ্রাকৃত বিষয়বস্তু সম্বন্ধে স্পষ্টভাবে অবগত হওয়া যায়। এই সম্পর্কে শ্রীমদ্ভাগবতে যে কথাগুলি ব্যবহৃত হয়েছে, তা হচ্ছে সতাং প্রসঙ্গাৎ। সাধুসঙ্গ ব্যতীত দিব্যজ্ঞান লাভ করা সম্ভব নয়। যখন দীক্ষা বা উপবীত দান করা হয়, তখন ওঁ তৎ সৎ শব্দগুলি উচ্চারণ করা হয়। তেমনই, সব রকম যজ্ঞানুষ্ঠানের বিষয় হচ্ছে পরমতত্ত্ব অর্থাৎ ওঁ তৎ সৎ। তদর্থীয়ম্ শব্দটি আরও বোঝাচ্ছে, পরম তত্ত্বের প্রতিনিধিত্ব করে এমন যে কোন কিছুর প্রতি সেবা নিবেদন, যেমন রান্না করা ও মন্দিরে সহায়তা করা অথবা ভগবানের মহিমা প্রচারের উদ্দেশ্যে অন্য যে কোন রকম কাজকর্ম। সমস্ত কর্মকে পবিত্র করে তোলার উদ্দেশ্যে ওঁ তৎ সৎ শব্দগুলি বহুভাবে ব্যবহৃত হয় এবং সব কিছুকে সম্যকভাবে পরিপূর্ণ করে তোলে।

error: Content is protected !!