শ্লোকঃ ২৮

অশ্রদ্ধয়া হুতং দত্তং তপস্তপ্তং কৃতং চ ‍যৎ ।

অসদিত্যুচ্যতে পার্থ ন চ তৎ প্ৰেত্য নো ইহ ॥ ২৮ ॥

অশ্রদ্ধয়া — অশ্রদ্ধা সহকারে হুম্ হোম; দত্তম্—দান: তপঃ—তপস্যা; তপ্তম্— অনুষ্ঠিত; কৃতম্—করা হয়; চ–ও; যৎ-যা, অসৎ – সৎ নয়; ইতি – এভাবে; উচ্যতে বলা হয়; পার্থ- হে পৃথাপুত্র; ন–না ও তৎ- সে সমস্ত ক্রিয়া; প্রেত্য— পরলোকে, নো—না; ইহ ইহলোকে।

গীতার গান

সে শ্রদ্ধা বিনা যাহা কর্ম কৃত হয় ৷

অসৎ কর্ম তার নাম শাস্ত্রেতে নির্ণয় ॥

অসৎ কর্ম শুদ্ধ নহে ইহ পরকালে ।

শাস্ত্রবিধি পরিত্যাগে সেই ফল ফলে ॥

অনুবাদঃ অশ্রদ্ধা সহকারে হোম, দান বা তপস্যা যা কিছু অনুষ্ঠিত হয়, তাকে বলা হয় ‘অসৎ’। সেই সমস্ত ক্রিয়া ইহলোকে ও পরলোকে ফলদায়ক হয় না।

তাৎপর্যঃ পারমার্থিক উদ্দেশ্য রহিত যা কিছুই করা হয়, তা যজ্ঞ হোক, দান হোক বা তপস্যাই হোক, তা সবই নিরর্থক। তাই এই শ্লোকটিতে ঘোষণা করা হয়েছে যে, সেই সমস্ত কর্ম জঘন্য। সব কিছুই কৃষ্ণভাবনায় ভাবিত হয়ে পরব্রহ্মের জন্য করা উচিত। এই বিশ্বাস না থাকলে এবং যথার্থ পথপ্রদর্শক না থাকলে কখনই কোন ফল লাভ হবে না। সমস্ত বৈদিক শাস্ত্রে পরম-তত্ত্বের প্রতি বিশ্বাস পরায়ণ হওয়ার উপদেশ দেওয়া হয়েছে। সমস্ত বৈদিক শাস্ত্র নির্দেশাদি অনুসরণের চরম লক্ষ্য হচ্ছে পরমেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে জানা। এই নীতি অনুসরণ না করলে কেউই সাফল্য লাভ করতে পারে না। তাই সদগুরুর তত্ত্বাবধানে থেকে প্রথম থেকেই কৃষ্ণভাবনাময় ভক্তিযোগের অনুশীলন করাই হচ্ছে শ্রেষ্ঠ পন্থা। সব কিছু সাফল্যমণ্ডিত করে তোলার এটিই হচ্ছে পন্থা।

বদ্ধ অবস্থায় মানুষ দেব-দেবী, ভূত-প্রেত, অথবা কুবের আদি যক্ষদের পূজা করার প্রতি আসক্ত থাকে। রজ ও তমোগুণ থেকে সত্ত্বগুণ শ্রেয়। কিন্তু যিনি প্রত্যক্ষভাবে কৃষ্ণভাবনা গ্রহণ করেছেন, তিনি এই ছড়া প্রকৃতির তিনটি গুণেরই অতীত। যদিও ক্রমান্বয়ে উন্নতি সাধন করার পন্থা রয়েছে, তবুও যদি কেউ শুদ্ধ ভক্তের সঙ্গ লাভ করার ফলে সরাসরিভাবে কৃষ্ণভাবনা গ্রহণ করতে পারেন, সেটিই হচ্ছে সর্বশ্রেষ্ঠ পন্থা এবং এই অধ্যায়ে সেটিই অনুমোদিত হয়েছে। এভাবেই জীবন সার্থক করতে হলে, সর্ব প্রথমে সদগুরুর পাদপদ্মে আশ্রয় গ্রহণ করতে হবে এবং তাঁর পরিচালনায় প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হবে। তখন পরম তত্ত্বের প্রতি বিশ্বাসের উদয় হবে। কালক্রমে সেই বিশ্বাস যখন পূর্ণতা প্রাপ্ত হয়, তখন তাকে বলা হয় ভগবৎ-প্রেম। এই প্রেমই হচ্ছে জীবসমূহের পরম লক্ষ্য। তাই, সরাসরিভাবে কৃষ্ণভাবনা গ্রহণ করা উচিত। সেটিই হচ্ছে সপ্তদশ অধ্যায়ের বক্তব্য ।

ভক্তিবেদান্ত কহে শ্রীগীতার গান ।

শুনে যদি শুদ্ধ ভক্ত কৃষ্ণগত প্ৰাণ ॥-

ইতি— ‘শ্রদ্ধালয়-বিভাগ-যোগ’ নামক শ্রীমগবদ্গীতার সপ্তদশ অধ্যায়ের ভক্তিবেদান্ত তাৎপর্য সমাপ্ত।

error: Content is protected !!