শ্লোকঃ ১৭
শ্রদ্ধয়া পরয়া তপ্তং তপস্তৎ ত্রিবিধং নরৈঃ ।
অফলাকাক্ষ্মিভির্যুক্তেঃ সাত্ত্বিকং পরিচক্ষতে ৷৷ ১৭ ৷৷
শ্রদ্ধয়া-শ্রদ্ধা সহকারে; পরয়া—পরন; তপ্তন—অনুষ্ঠিত, তপঃ – তপস্যা; তৎ- তা; ত্রিবিধম্ – ত্রিবিধ; নরৈঃ— মানুষের দ্বারা, অফলাকাঙ্ক্ষিভিঃ – ফলাকাঙ্ক্ষা রহিত; যুক্তৈঃ—যুক্ত; সাত্ত্বিকম্—সাত্ত্বিক; পরিচক্ষতে—বলা হয়।
গীতার গান
ত্রিবিধ তপস্যা যদি পরাশ্রদ্ধাযুক্ত ।
ফলাকাঙ্ক্ষা যদি নহে সাত্ত্বিকী সে উক্ত ॥
অনুবাদঃ ফলাকাঙ্ক্ষা রহিত মানুষের দ্বারা পরম শ্রদ্ধা সহকারে অনুষ্ঠিত ত্রিবিধ তপস্যাকে সাত্ত্বিক তপস্যা বলা হয়।
শ্লোকঃ ১৮
সৎকারমানপূজার্থং তপো দন্তেন চৈব যৎ ।
ক্রিয়তে তদিহ প্রোক্তং রাজসং চলমধ্রুবম্ ॥ ১৮ ॥
সৎকার—শ্রদ্ধা; মান-সম্মান : পূজার্থম্—পূজা লাভের আশায়, তপঃ – তপস্যা; দন্তেন-দম্ভ সহকারে; চ—ও; এব— অবশ্যই; যৎ – যে; ক্রিয়তে — অনুষ্ঠিত হয়, তৎ—তাকে, ইহ—এই জগতে, প্রোক্তম্—বলা হয়; রাজসম্—রাজসিক; চলম্— অনিত্য, অবম্ অনিশ্চিত।
গীতার গান
লাভ পূজা সম্মানের জন্য দত্তের সহিত ।
যে তপস্যা সাধে লোক তাহা রাজসিক ।।
সে তপস্যার যে ফল তাহা অনিশ্চিত ৷
অন্তবৎ তার ফল হয় শাস্ত্রেতে বিদিত ।।
অনুবাদঃ শ্রদ্ধা, সম্মান ও পূজা লাভের আশায় দত্ত সহকারে যে তপস্যা করা হয়, তাকেই এই জগতে অনিত্য ও অনিশ্চিত রাজসিক তপস্যা বলা হয়।
তাৎপর্যঃ অনেক সময় তপশ্চর্যার আচরণ করা হয় মানুষকে আকৃষ্ট করবার জন্য এবং অন্যের কাছ থেকে সম্মান, শ্রদ্ধা ও পূজা লাভের জন্য। রাজসিক মানুষেরা তাদের অধস্তনদের কাছ থেকে পূজা আদায়ের বন্দোবস্ত করে, তাদের দিয়ে পা ধোয়ায় এবং সম্পদ দান করতে বাধ্য করায়। তপশ্চর্যার আচরণের দ্বারা এই ধরনের কৃত্রিম শ্রদ্ধাঞ্জলির ব্যবস্থা রাজসিক এবং তার ফল ক্ষণস্থায়ী। তা কিছু দিনের জন্য কেবল থাকে, কিন্তু স্থায়ী হয় না।
শ্লোকঃ ১৯
মূঢ়গ্রাহেণাত্মনো যৎ পীড়য়া ক্রিয়তে তপঃ ।
পরস্যোৎসাদনার্থং বা তত্ত্বামসমুদাহৃতম্ ॥ ১৯ ॥
মূঢ় — মূঢ়; গ্রাহেণ —আগ্রহের দ্বারা; আত্মনঃ – নিজের, যৎ – যে, পীড়য়া— পীড়ার দ্বারা; ক্রিয়তে—অনুষ্ঠিত হয়: তপঃ- তপস্যা, পরস্য – অপরের উৎসাদনার্থ— বিনাশের জন্য; বা—অথবা; তৎ—তাকে; তামসম্— তামসিক; উদাহৃতম্ বলা হয়।
গীতার গান
মূঢ়বুদ্ধি যারা তপে আত্মপীড়া দেয় ।
অপরের বিনাশার্থ যে তপস্যা করয় ।।
তামসী সে সব যত তপস্যা বহুল ৷
অলীক তাহার নাম নহে শাস্ত্ৰ অনুকূল ।।
অনুবাদঃ মূঢ়োচিত আগ্রহের দ্বারা নিজেকে পীড়া দিয়ে অথবা অপরের বিনাশের জন্য যে তপস্যা করা হয়, তাকে তামসিক তপস্যা বলা হয়।
তাৎপর্যঃ নির্বোধ তপশ্চর্যার অনেক দৃষ্টান্ত রয়েছে। যেমন হিরণ্যকশিপু, যে অমরত্ব লাভ করে দেবতাদের হত্যা করবার জন্য তপস্যা করেছিল। সে ব্রহ্মার কাছে এই সব প্রার্থনা করে, কিন্তু পরিণামে পরম পুরুষোত্তম ভগবানের হাতে সে নিহত হয়। অসম্ভব কোন কিছু লাভের আশায় যে তপস্যা করা হয়, তা অবশ্যই তামসিক।