শ্লোকঃ ১১

অফলাকাঙ্ক্ষিভিযজ্ঞো বিধিদিষ্টো য ইজ্যতে ।

যষ্টব্যমেবেতি মনঃ সমাধায় স সাত্ত্বিকঃ ॥ ১১ ॥

অফলাকাক্ষিভিঃ—ফলের আকাঙ্ক্ষা রহিত ব্যক্তিগণ কর্তৃক; যজ্ঞঃ যজ্ঞ; বিধিদিষ্টঃ শাস্ত্রের বিধি অনুসারে, যঃ– যে, ইজ্যতে – অনুষ্ঠিত হয়; যষ্টাম্—অনুষ্ঠান করা কর্তব্য; এব—অবশ্যই; ইতি—এভাবেই; মনঃ— মনকে; সমাধায় — একাগ্র করে; সঃ—তা; সাত্ত্বিকঃ—সাত্ত্বিক।

গীতার গান

অফলাকাঙ্ক্ষী যে যজ্ঞ বিধিমত হয় ৷

কর্তব্য যে মনে করে সাত্ত্বিকী সে কয় ॥

অনুবাদঃ ফলের আকাঙ্ক্ষা রহিত ব্যক্তিগণ কর্তৃক শাস্ত্রের বিধি অনুসারে, অনুষ্ঠান করা কর্তব্য এভাবেই মনকে একাগ্র করে যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়, তা সাত্ত্বিক ।

তাৎপর্যঃ সাধারণত মানুষ কোন ফলের আকাঙ্ক্ষা করে যজ্ঞ অনুষ্ঠান করে। কিন্তু এখানে বলা হয়েছে যে, কোনও রকম ফলের আকাঙ্ক্ষা না করে যজ্ঞ অনুষ্ঠান করা উচিত। কর্তব্যবোধে আমাদের যজ্ঞ করা উচিত। মন্দির ও গির্জাগুলিতে যেভাবে সমস্ত আচার অনুষ্ঠান করা হয়, তা সাধারণত অনুষ্ঠিত হয় জড়-জাগতিক লাভের উদ্দেশ্যে। কিন্তু তা সাত্ত্বিক ভাবাপন্ন নয়। কর্তব্যবোধে মানুষের মন্দিরে বা গির্জায় যাওয়া উচিত এবং পরম পুরুষোত্তম ভগবানকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা, পুষ্পাঞ্জলি নিবেদন করা ও নৈবেদ্য নিবেদন করা উচিত। সকলেই মনে করে যে, কেবল ভগবানের আরতি করার জন্য মন্দিরে গিয়ে কোন লাভ নেই। কিন্তু অর্থ লাভের জন্য ভগবানের উপাসনার কথা শাস্ত্রে অনুমোদিত হয়নি। ভগবানের শ্রীবিগ্রহকে শ্রদ্ধাঞ্জলি নিবেদন করার জন্যই সেখানে যাওয়া উচিত। তার ফলে মানুষ সত্ত্বগুণে অধিষ্ঠিত হয়। প্রতিটি সভ্য মানুষের কর্তব্য হচ্ছে শাস্ত্রের নির্দেশ পালন করা এবং পরম পুরুষোত্তম ভগবানকে শ্রদ্ধা নিবেদন করা।

শ্লোকঃ ১২

অভিসন্ধায় তু ফলং দম্ভার্থমপি চৈব যৎ ।

ইজ্যতে ভরতশ্রেষ্ঠ তং যজ্ঞং বিদ্ধি রাজসম্‌ ॥ ১২ ৷৷

অভিসন্ধায় – কামনা করে; তু– কিন্তু; ফলম্ – ফল; দত্ত — দম্ভ; অর্থম্ — প্রকাশের জন্য; অপি—ও; চ–এবং; এব—অবশ্যই, যৎ- যে যজ্ঞ, ইজ্যতে অনুষ্ঠিত হয়; ভরতশ্রেষ্ঠ— হে ভরতশ্রেষ্ঠ; তথ্― তাকে; যজ্ঞম্— যজ্ঞ: বিদ্ধি— জানবে; রাজসম্— রাজসিক।

গীতার গান

মূলে অভিসন্ধি যার আকাঙ্ক্ষা ফলেতে ।

রাজসিক যজ্ঞ হয় দম্ভের সহিতে ॥

অনুবাদঃ হে ভরতশ্রেষ্ঠ। কিন্তু ফল কামনা করে দত্ত প্রকাশের জন্য যে যজ্ঞ অনুষ্ঠিত হয়, তাকে রাজসিক যজ্ঞ বলে জানবে।

তাৎপর্যঃ কখনও কখনও স্বৰ্গলোক প্রাপ্তির জন্য অথবা কোন জাগতিক লাভের উদ্দেশ্য নিয়ে যজ্ঞ ও বৈদিক আচার অনুষ্ঠান করা হয়। এই ধরনের যজ্ঞ বা আচার অনুষ্ঠান রাজসিক বলে গণ্য করা হয়।

শ্লোকঃ ১৩

বিধিহীনমসৃষ্টান্নং মন্ত্রহীনমদক্ষিণম ।

শ্রদ্ধাবিরহিতং যজ্ঞং তামসং পরিচক্ষতে ॥ ১৩ ৷৷

বিধিহীনম্—শাস্ত্রবিধি বর্জিত, অদৃষ্টান্নম্ – প্রসাদান্ন বিতরণবিহীন; মন্ত্রহীনম্—বৈদিক মন্ত্রহীন; অদক্ষিণম্—দক্ষিণা রহিত, শ্রদ্ধাবিরহিতম্—শ্রদ্ধাহীন; যজ্ঞম্—যজ্ঞকে; তামসম্—তামসিক; পরিচক্ষতে বলা হয়।

গীতার গান

বিধি অন্নহীন নাই মন্ত্ৰ বা দক্ষিণা ৷

শ্রদ্ধাহীন যজ্ঞ সেই তমসা আচ্ছন্না ॥

অনুবাদঃ শাস্ত্রবিধি বৰ্জিত, প্রসাদান্ন বিতরণহীন, মন্ত্রহীন, দক্ষিণাবিহীন ও শ্রদ্ধারহিত যজ্ঞকে তামসিক যজ্ঞ বলা হয়।

তাৎপর্যঃ তমোগুণে শ্রদ্ধা হচ্ছে প্রকৃতপক্ষে অশ্রদ্ধা। কখনও কখনও মানুষ টাকা-পয়সা লাভের আশায় কোন কোন দেব-দেবীর পূজা করে থাকে এবং তারপর শাস্ত্র- নির্দেশের সম্পূর্ণ অবহেলা করে নানা রকম আমোদ-প্রমোদে সমস্ত অর্থ ব্যয় করে। এই ধরনের আড়ম্বরপূর্ণ লোকদেখানো ধর্ম অনুষ্ঠানকে কৃত্রিম বলে অভিহিত করা হয়। এই সমস্তই হচ্ছে তামসিক। তার ফলে আসুরিক মনোভাবের উদয় হয় এবং মানব-সমাজের তাতে কোন মঙ্গল সাধিত হয় না ।

error: Content is protected !!