“চিত্তায়ত্তং নৃণাঃ শুক্র শুক্রায়ত্তং চ জীবিতম্।

তস্মাচ্ছুক্রং মনশ্চৈব রক্ষণীয়ং প্রযত্নঃ।।”

অর্থাৎ, “মানুষের জীবন শুক্রের অধীন। শুক্র ক্ষয় হলেই জীবন

ক্ষয়। অতএব সাধক যত্ন সহকারে শুক্র রক্ষা করবে।”

শুক্র সম্পর্কে এমন যোগ-শিক্ষা বিজ্ঞান

বিরোধী এবং অবশ্যই অশিক্ষা।

আমি এমন অনেক পুরুষের সমস্যার কথা শুনেছি, যাঁরা বিবাহিত, কিন্তু মিলনে অক্ষম। লিঙ্গে স্ফীতি বা দৃঢ়তা আসে না। এই ধরনের অক্ষমতার পিছনে নানা

কারণ থাকতে পারে। তার জন্য নানা প্রশ্ন করতে হয়। যেমন : –

(১) সমস্যাটা বিয়ের আগেই ছিল? নাকি বিয়ের পর হয়েছে?

(২) স্ত্রীর সঙ্গে বয়সের পার্থক্য কেমন?

(৩) স্ত্রীর সঙ্গে মানসিক সম্পর্ক কেমন?

(৪) স্ত্রীকে পছন্দ করেন কি না?

(৫) স্ত্রীর তুলনায় নিজেকে ছোট মাপের মানুষ মনে করেন কি না ? (৬) সমকামী ছিলেন বা আছেন কি না?

(৭) অজাচারে লিপ্ত আছেন কি না?

(৮) নারী-পুরুষের মিলন বিষয়ে কোনও ঘৃণা আছে কি না? (৯) ড্রাগে আসক্ত কি না?

(১০) কিডনির কোনও অসুখ আছে কি না?

(১১) ব্লাড সুগারের পেসেন্ট কি না?

(১২) হস্তমৈথুন বা স্বপ্নদোষ বিষয়ে রোগীর ধারণা?

(১৩) বীর্যপাতে শরীর ক্ষয়—এ’কথায় বিশ্বাস করেন কি না?

প্রায় সকলেরই উত্তর—তাঁরা বিশ্বাস করেন হস্তমৈথুনে, স্বপ্নদোষে অথবা কোনওভাবে বীর্যক্ষয় হওয়া মানেই শরীর-স্বাস্থ্য-স্মৃতি নষ্ট হওয়া। এসবই তাঁরা জেনেছেন স্বামীজীদের লেখা যোগের কোনও বই পড়ে, অথবা স্কুলের টিচার বা জিমের ইনস্ট্রাকটারের কাছ থেকে। আমাদের সময়েও ব্যায়াম সমিতির ইনস্ট্রাকটররাও এমন সব বিজ্ঞান-বিরোধী হিজিবিজি উপদেশ দিতেন। আমরাও এক সময় ভাবতাম—সত্যিই বুঝি চল্লিশ দিনে এক ফোঁটা বীর্য তৈরি হয়।

এইসব সাময়িকভাবে পুরুষত্বহীন রোগীদের বোঝাতে হয়েছে, স্বামীজীদের বীর্য সম্পর্কে বক্তব্য সম্পূর্ণ বিজ্ঞান-বিরোধী।

হস্তমৈথুন বা স্বপ্নদোষ যৌবনের স্বাভাবিক ঘটনা, যেমন স্বাভাবিক

ঘটনা বিবাহিত জীবনে গড়ে ওঠা যৌন সম্পর্ক।

বীর্যপাতের কিছুক্ষণের মধ্যেই বীর্যভাণ্ড

আপনা থেকেই পূর্ণ হয়ে যায়।

অতি মাত্রায় হস্তমৈথুন থেকে যৌন-বিকার আসতে পারে। পরিমিতি রেখে যৌন মিলন যেমন মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিরই প্রকাশ, তেমন স্বমৈথুনও মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিরই অঙ্গ।

মেয়েদের মধ্যেও হস্তমৈথুন বা স্বমৈথুন সহজাত প্রবৃত্তির-ই প্রকাশ। যা স্বাভাবিক তাই সুন্দর। পরিবর্তে একে অস্বাভাবিক, নোংরা ব্যাপার, গোপন করার ব্যাপার, চেপে রাখার বিষয় বলে যাঁরা মনে করেন, তাঁরা শুধু মূর্খ নয়, মানুষের সহজাত প্রবৃত্তিকে চাপতে শিখিয়ে মানসিক রোগী তৈরির অপরাধেও অপরাধী। এইসব বিকৃতকাম ভণ্ডদের আমরা যতদিন পুজো করবো, ততদিন এই জাতির অগ্রগামীতার কথা চিন্তা করাও বোকামি।

error: Content is protected !!