কিয়ীলায় দায়ূদ

১. লোকেরা দায়ূদকে বলল, “দেখুন, পলেষ্টীয় কিয়ীলার বিরুদ্ধে যুদ্ধ করছে। তারা ফসল ঝাড়াইয়ের জায়গা থেকে সব ফসল লুঠপাট করে নিচ্ছে।”

২. দায়ূদ প্রভুকে জিজ্ঞেস করলেন, “আমি কি পলেষ্টীয়দের সঙ্গে লড়াই করব?” প্রভু উত্তর দিলেন, “হ্য৷ কিয়ীলাকে বাঁচাও। পলেষ্টীয়দের আক্রমণ কর।”

৩. এদিকে দায়ূদের লোকেরা দায়ূদকে বলল, “শুনুন, আমরা যিহুদায় থাকতেই বেশ ভয় পাচ্ছি। তাহলে চিন্তা করুন পলেষ্টীয় সৈন্যদের সঙ্গে মুখোমুখি লড়াইতে আমরা আরও কতখানি ভয় পেতে পারি।”

৪. দায়ূদ আবার প্রভুকে জিজ্ঞেস করলো। প্রভু বললেন, “কিয়ীলায় চলে যাও। আমি তোমাকে পলেষ্টীয়দের হারাতে সাহায্য করব।” 

৫. তাই সঙ্গীদের নিয়ে দায়ূদ কিয়ীলায় গেলেন। তাঁর সঙ্গীরা পলেষ্টীয়দের সঙ্গে যুদ্ধ করল। যুদ্ধে তারা পলেষ্টীয়দের হারিয়ে তাদের গরু, মোষ সব দখল করে নিল। এভাবেই দায়ূদ কিয়ালার লোকেদের বাঁচালেন।

৬. (যখন অবিয়াথর দায়ূদের কাছে গিয়েছিলেন, তখন তিনি তাঁর সঙ্গে একটা এফোদ নিয়েছিলেন।)

৭. লোকেরা শৌলকে বলল, “দায়ূদ এখন কিয়ীলায় আছে।” শৌল বললেন, “ঈশ্বর দায়ূদকে আমার হাতেই দিয়েছেন। দায়ূদ নিজের জালেই নিজেকে জড়িয়েছে। সে এমন একটা শহরে গেল যেখানে অনেক ফটক এবং ফটক বন্ধ করার অনেক খিল আছে।”

৮. শৌল তাঁর সব সৈন্যদের যুদ্ধ করার জন্য ডাকলেন। তারা দায়ূদ ও তাঁর লোকেদের আক্রমণ করার জন্য কিয়ীলায় যাবার জন্য প্রস্তুত হলো।

৯. শৌলের এই মতলব দায়ূদ জানতে পারলেন। তিনি যাজক অবিয়াথরকে বললেন, “এইখানে সেই এফোদ আনো।”

১০. দায়ূদ প্রার্থনা করলো, “হে প্রভু ইস্রায়েলের ঈশ্বর, আমি শুনেছি শৌল আমার জন্যে কিয়ীলায় এসে শহর ধ্বংস করার মতলব করেছে।

১১. শৌল কি কিয়ীলায় আসবে? কিয়ীলায় লোকেরা কি ওর হাতে আমায় তুলে দেবে? হে প্রভু ঈস্রায়েলের ঈশ্বর, আমি আপনার সেবক। দয়া করে আমায় বলুন ! ” প্রভু বললেন, “শৌল আসবে।”

১২. আবার দায়ূদ জিজ্ঞেস করলো, “কিয়ীলার লোকেরা কি আমায় এবং আমার লোকেদের শৌলের হাতে ধরিয়ে দেবে?” প্রভু বললেন, “হ্যাঁ ধরিয়ে দেবে।”

১৩. তখন দায়ূদ সঙ্গীদের নিয়ে কিয়ীলা ছেড়ে চলে গেলেন। দায়ূদের সঙ্গে ছিল ৬০০ জন পুরুষ। তারা বিভিন্ন জায়গায় চলে গেল। শৌল জানতে পারলেন দায়ূদ কিয়ীলা থেকে চলে গেছেন। তাই তিনি আর ওখানে গেলেন না ।

শৌল দ্বারা দায়ুদের পশ্চাদ্ধাবন

১৪. দায়ূদ মরুভূমিতে গিয়ে সেখানকার উঁচু পাঁচিল ঘেরা দুর্গ নগরে কিছুকাল থেকে গেলেন। তিনি সীফ মরুভূমির পাহাড়ী দেশেও থাকলেন। প্রতিদিন শৌল দায়ূদদের খোঁজ করতেন ; কিন্তু প্রভু শৌলের হাতে দায়ূদকে সঁপে দিলেন না ৷

১৫. সীফ মরুভূমির হোরেশে দায়ূদ গেলেন। শৌল তাকে হত্যা করতে আসছেন বলে তিনি বেশ ভয় পেয়ে গিয়েছিলেন।

১৬. কিন্তু শৌলের পুত্র যোনাথন হোরেশে দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে গেল। যোনাথন দায়ূদকে ঈশ্বরের ওপর বিশ্বাস রাখতে সাহায্য করেছিলো।

১৭. যোনাথন দায়ূদকে বলল, “ভয় পেও না। আমার পিতা শৌল তোমাকে মারবে না। তুমি হবে ইস্রায়েলের রাজা। আমি হব তোমার দ্বিতীয় জন। এমনকি আমার পিতাও সেটা জানে।”

১৮. যোনাথন এবং দায়ূদ দুজনে প্রভুর সামনে এক চুক্তি করলো। তারপর যোনাথন ঘরে ফিরে গেলো। দায়ূদ হোরেশে থেকে গেলেন।

সীফের বাসিন্দারা শৌলকে দায়ূদের কথা বলে দিল

১৯. সীফের বাসিন্দারা শৌলের সঙ্গে দেখা করতে গিবিয়ায় এল। তারা শৌলকে বলল, “দায়ূদ আমাদের দেশেই লুকিয়ে আছে। দায়ূদ যেশিমোনের দক্ষিণে হখীলা পাহাড়ের ওপর হোরেশের দুর্গে রয়েছেন।

২০. সুতরাং হে রাজন, যে কোন দিন আপনি আমাদের এখানে চলে আসুন। দাদকে আপনার হাতে ধরিয়ে দেওয়৷ আমাদের কর্তব্য।”

২১. শৌল বললেন, “তোমরা আমাকে সাহায্য করেছ। প্রভু তোমাদের মঙ্গল করুন।

২২. যাও, দায়ূদ সম্বন্ধে আরও খোঁজখবর করো। দেখ, কোথায় সে রয়েছে, কে কে দায়ূদকে সেখানে দেখেছে।’ শৌল ভাবলেন, ‘দায়ূদ চালাক ও চতুর তাই হয়তো আমার সঙ্গে চালাকি করতে চাইছে।’ শৌল বললেন,

২৩. দায়ূদের লুকোনোর সমস্ত জায়গা খুঁজে বের করো। তারপর ফিরে এসে আমাকে সমস্ত জানাও। জানার পর আমি তোমাদের সঙ্গে যাব। দায়ূদ এখানে থাকলে আমি তাকে খুঁজে বের করবই। যিহুদায় বাড়ী বাড়ী খোঁজ করলেও ওকে আমি পেয়ে যাব।”

২৪. সীফের বাসিন্দারা সীফে ফিরে গেল। পরে শৌল গুহা থেকে বেরিয়ে এসে চেঁচিয়ে শৌলকে ডাকলেন, সেখানে গেলেন। “হে রাজা, হে মনিব।” দায়ূদ আর তাঁর লোকেরা থাকতেন মায়োন মরুভূমিতে। জায়গাটা ছিল যেশিমোনের দক্ষিণে।

২৫. শৌল তাঁর লোকেদের নিয়ে দায়ূদের খোঁজ করতে লাগলেন। কিন্তু এখানে লোকেরা দায়ূদকে সাবধান করে দিল যে শৌল তাঁকে খুঁজছে। দায়ূদ যখন এটা শুনলেন তিনি মায়োন মরুভূমির ‘রক’ অঞ্চলে চলে গেলেন। এ খবর শৌলের কাছে পৌঁছে গেল। শৌল সেখানে দায়ূদকে ধরতে ছুটলেন।

২৬. একই পাহাড়ের একদিকে শৌল আর উল্টোদিকে দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীরা। দায়ূদ শৌলের কাছ থেকে পালিয়ে যাবার জন্য তীব্রবেগে ছুটছিলেন। শৌলও দায়ূদকে ধরবার জন্য সৈন্যদের নিয়ে পাহাড়ের চারিদিক ঘিরে ফেললেন।

২৭. সেই সময় শৌলের কাছে একজন দূত এসে বলল, “শিগগির এসো, পলেষ্টীয়রা আমাদের আক্রমণ করতে আসছে।’

২৮. তখন শৌল দায়ূদের পিছু নেওয়া বন্ধ করলেন। তিনি পলেষ্টীয়দের সঙ্গে লড়াই করতে গেলেন। সেই কারণে লোকেরা ঐ জায়গার নাম দিয়েছিল ‘পিছল শিলা।’

২৯. দায়ূদ মায়োন মরুভূমি থেকে চলে গেলেন সুরক্ষিত দুর্গ নগরগুলোয়। সেগুলি ঐন্-গদীর কাছাকাছি অবস্থিত।

error: Content is protected !!