হান্নার ধন্যবাদ জ্ঞাপন
১. হান্না বললঃ “প্রভুতেই আমার হৃদয় খুশী ! আমি আমার ঈশ্বরে শক্তিশালী ! তাই আমি আমার শত্রু দেখে হাসি। আমি তোমার প্রদত্ত পরিত্রাণে খুবই আনন্দিত !
২. প্রভুর মত পবিত্র আর কোন ঈশ্বর নেই। তুমি ছাড়া আর কোন ঈশ্বর নেই। আমাদের ঈশ্বরের মত আর কোন শিলা নেই ।
৩. আর দম্ভ কোর না। গর্বের শব্দ যেন উচ্চারিত না হয় কারণ প্রভু ঈশ্বর সবই জানেন। ঈশ্বরই লোকেদের চালনা ও বিচার করেন।
৪. বলবান সৈন্যের ধনু ভেঙ্গে যায় এবং দুর্বল লোক শক্তিশালী হয়।
৫. অতীতে যাদের প্রচুর খাদ্য ছিল এখন তাদের একমুঠো খাদ্যের জন্য কঠিন সংগ্রাম করতে হবে। কিন্তু অতীতে যারা ক্ষুধার্ত ছিল তাদের এখন প্রচুর খাদ্য আছে। যে নারী ছিল বন্ধ্যা তার এখন সাতটি সন্তান। কিন্তু যে নারীর বহু সন্তান ছিল এখন সে দুঃখী। কারণ তার সন্তানেরা চলে গেছে।
৬. প্রভুই মারেন ও বাঁচান, প্রভুই কবরে শায়িত করেন ও উর্দ্ধে তুলেন।
৭. প্রভুই কাউকে গরীব করেন, আবার কাউকে ধনে ভরেন। কাউকে নম্র করেন, আবার কাউকে সম্মান দেন।
৮. প্রভু ধূলি থেকে দরিদ্রদের তোলেন এবং তিনি দুঃখ হরণ করে নেন। তিনি তাদের গুরুত্বপূর্ণ করে তোলেন এবং তাদের রাজকুমারদের সঙ্গে বসান ও তাদের সম্মানীয় আসন দেন। প্রভু হচ্ছেন সেই জন যিনি সমগ্র বিশ্ব সৃষ্টি করেছেন এবং সমগ্র বিশ্ব যাঁর অধিকারভুক্ত।
৯. প্রভু তাঁর পবিত্র লোকেদের হোঁচট খাওয়া থেকে রক্ষা করেন। দুষ্ট লোকেরা অন্ধকারে ধ্বংস হয়ে যাবে। তাদের ক্ষমতা তাদের বিজয়ী করতে পারে না।
১০. প্রভু তাঁর শত্রুদের ধ্বংস করেন। তিনি তাদের বিরুদ্ধে স্বর্গে বজ্রনির্ঘোষ ঘটাবেন। প্রভু দূরের দেশগুলিরও বিচার করবেন। তিনি তাঁর রাজাকে ক্ষমতা দেবেন এবং তাঁর অভিষিক্ত রাজাকে শক্তিশালী করবেন।”
১১. ইল্কানা সপরিবারে তার নিজের দেশ রামায় ফিরে এলো। কিন্তু ছেলেটি শীলোয় থেকে গেল। সেখানে সে যাজক এলির তত্ত্বাবধানে প্রভুর সেবা করেছিল।
এলির দুষ্ট সন্তানগণ
১২. এলির পুত্রেরা ছিল খুব মন্দ, তারা প্রভুকে মানতো না।
১৩. এমনকি লোকেদের সাথে যাজকদের কিরূপ আচার ব্যবহার করা উচিৎ সেই নিয়ে তারা বিন্দুমাত্র মাথা ঘামাতো না। যাজকদের এইসব কাজ করণীয় ছিলঃ লোকে যখন কোন উৎসর্গ আনবে তখন যাজকদের সেই উৎসর্গের মাংস একট৷ গরম জলের পাত্রে রাখতে হবে। তারপর যাজকের ভৃত্য একটা বিশেষ ধরণের তিন মুখো কাঁটা চামচ আনবে।
১৪. যাজকের ভৃত্যকে সেই পাত্র থেকে কিছুট৷ মাংস তুলে নেবার জন্য কাঁটাটা ব্যবহার করতে হবে। সেই কাঁটায় যতটুকু মাংস উঠত যাজক শুধু সেই মাংসটুকুই পেত। যেসব ইস্রায়েলীয়রা শীলোতে বলি আনত তাদের সকলের প্রতি যাজকদের এই কাজটা করতে হত।
১৫. কিন্তু এলির পুত্ররা তা করত না। বেদীর ওপর চর্বি পোড়ানোর আগেই তাদের ভৃত্য ভক্তদের বলত, “যাজককে কিছু মাংস দাও, সেটা ঝলসানো হবে। সে সেদ্ধ মাংস নেবে না ।”
১৬. যদি ভক্ত বলত, “আগে চর্বিটা পোড়াই, তারপর যা চাও দিচ্ছি।” তার উত্তরে ভৃত্য বলত, “না, এক্ষুনি মাংস দাও। না দিলে আমি তোমাদের কাছ থেকে কেড়ে নেবো !”
১৭. এভাবে হনি ও পীনহস প্রভুর জন্য দেওয়া বলিকে অসম্মান করত। সন্দেহ নেই প্রভুর বিরুদ্ধে এটা ছিল খুবই মারাত্মক পাপ
১৮. কিন্তু শয়েল প্রভুর সেবা করত। সেই তরুণ সহকারী, যাজকের বিশেষ ধরণের জামা এফোদ পরত।
১৯. প্রতি বছর শমূয়েলের মা একটা ছোট পোশাক তৈরী করত এবং সেটা তার জন্য শীলোয় নিয়ে যেত। সে স্বামীর সাথে সেখানে প্রতি বছর বলি দিতে যেত।
২০. ইল্কানা আর তার স্ত্রীকে এলি আশীর্বাদ করে বলত, “প্রভু তোমাকে হান্নার মাধ্যমে আরও সন্তান দিক। এরাই হান্নার মানত করা ছেলের জায়গা নেবে।” ইল্কানা তার স্ত্রীকে নিয়ে বাড়ী ফিরে গেল।
২১. প্রভু হান্নার উপর সন্তুষ্ট হয়েছিলেন। হান্নার তিনটি ছেলে, দুটি মেয়ে হল। এদিকে শমূয়েল তো প্রভুর সেবা করতে করতেই পবিত্র স্থানে বড় হয়ে উঠছিল।
দুষ্ট সন্তানদের সামলাতে এলি ব্যর্থ হল
২২. এলি বেশ বৃদ্ধ হয়ে গিয়েছিলো। শীলোতে সমস্ত ইস্রায়েলের প্রতি পুত্ররা কি করত সে সম্বন্ধে সে প্রায়ই শুনতে পেত। এলি এও শুনেছিল যে সমাগম তাঁবুর প্রবেশদ্বারে যে সব স্ত্রী লোকেরা সেবা করত তাদের সঙ্গে তার পুত্রেরা শুয়ে রাত কাটিয়েছিল।
২৩. এলি তার পুত্রদের বলল, “লোকেরা তোমাদের সম্বন্ধে নানা কথা আমায় বলছে। কেন তোমরা এত বাজে কাজ করছ?
২৪. শোন বাছারা, এরকম অন্যায় কাজ কোরো না। প্রভুর লোকেরা তোমাদের নিন্দে করছেন।
২৫. মানুষ যদি মানুষের কাছে পাপ করে ঈশ্বর তাকে ক্ষমা করতে পারেন, কিন্তু প্রভুর বিরুদ্ধে পাপ করলে কে তাকে রক্ষা করবে?” কিন্তু পুত্রেরা কেউ তাকে গ্রাহ্য করল না। তাই প্রভু তাদের শেষ করবেন বলে স্থির করলেন।
২৬. অন্যদিকে শমূয়েল বড় হতে লাগল। সে ঈশ্বর এবং লোকেদের কাছে আনন্দদায়ক ছিল।
এলির পরিবার সম্পর্কে ভয়ঙ্কর ভবিষ্যৎবাণী
২৭. ঈশ্বর একজন লোককে এলির কাছে পাঠালেন। লোকটি এলিকে বলল, “প্রভু এই কথাগুলি বলেছেন, ‘তোমার পূর্বপুরুষেরা ছিল ফরৌণ কূলের ক্রীতদাস, কিন্তু তাদের কাছে আমি দেখ৷ দিয়েছিলাম।
২৮. ইস্রায়েলের সমস্ত পরিবারগোষ্ঠীর ভেতর থেকে আমার যাজকসমূহ হবার জন্য আমি তোমার পরিবারকে নির্বাচিত করেছিলাম। আমার বেদীতে বলি উৎসর্গ দেবার জন্য তোমাদের মনোনীত করেছিলাম। তারাই ধুপ জ্বালাবে, তারাই পরবে এফোদ। আমি এইজন্যই তাদের নির্বাচন করেছিলাম। আমিই তোমাদের পরিবারগোষ্ঠীকে অধিকার দিয়েছি যেন তারাই ইস্রায়েলীয়দের দেওয়া বলির মাংস পায়।
২৯. তাহলে কেন তোমরা এইসব বলি এবং নৈবেদ্যকে সম্মান করবে না? তুমি আমার চেয়েও তোমার পুত্রদের বেশী সম্মান দিয়ে থাক। আমার লোক, ইস্রায়েলীয়রা আমাকে উৎসর্গীকৃত করবার জন্য যে মাংস নিয়ে আসে তার থেকে সব চেয়ে ভালো অংশগুলি খেয়ে তোমরা মোটা হয়ে যাচ্ছো।’
৩০. ইস্রায়েলের প্রভু ঈশ্বর প্রতিশ্রুতি দিয়েছিলেন যে তোমার পিতার পরিবারের লোকেরা তাঁকে চিরকাল সেবা করবে। কিন্তু আজ প্রভু এই কথা বলছেন, ‘না, তা আর কখনও হবে না। আমি তাদেরই সম্মান করব যারা আমাকে সম্মান করবে। আর যারা আমায় সম্মান করতে অস্বীকার করবে, তাদের অমঙ্গল হবে।
৩১. সেই সময় আসছে যেদিন আমি তোমাদের সমস্ত উত্তরপুরুষদের বিনাশ করব। তোমার ঘরে কেউই বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত বাঁচবে না।
৩২. ইস্রায়েলে ভাল জিনিস ঘটবে, কিন্তু খারাপ জিনিসগুলি তোমরা তোমাদের বাড়ীতে ঘটতে দেখবে। তোমার ঘরে কেউ বৃদ্ধ বয়স পর্যন্ত বাঁচবে না।
৩৩. একজন মানুষকে আমি বাঁচাব। সেই আমার বেদীতে যাজকের কাজ করবে। সে দীর্ঘজীবী হবে। যতদিন পর্যন্ত তার দৃষ্টিশক্তি থাকবে, শরীরে শক্তি থাকবে ততদিন সে বেঁচে থাকবে। তোমার উত্তরপুরুষরা তরবারির কোপে মরবে।
৩৪. আমি তোমাকে এমন একটি চিহ্ন দেখাব যাতে বুঝতে পারবে যে এইসব কথা সত্য। একই দিনে তোমার দুই পুত্র হফনি আর পীনহস মারা যাবে।
৩৫. নিজের জন্য আমি একজন বিশ্বস্ত যাজক মনোনীত করব। সে আমার কথা শুনবে এবং আমি যা চাই তাই করবে। আমি তার পরিবারকে শক্তিশালী করব। আমার মনোনীত রাজার সামনে এই যাজক সর্বদা আমার সেবা করবে।
৩৬. তারপর তোমার পরিবারের যারা বেঁচে থাকবে তারা এই যাজকের কাছে এসে মাথ৷ নীচু করে দাঁড়াবে। তারা কয়েক টুকরো রূপো অথবা একটুকরো রুটির জন্য ভিক্ষে চাইবে। তারা বলবে, “আমাকে দয়া করে একট৷ যাজকের কাজ দাও যাতে দু মুঠো খেতে পারি।