শমুয়েল বৈৎলেহমে গেল
১. প্রভু শমূয়েলকে বললেন, “শৌলের জন্য আর কতদিন তুমি দুঃখবোধ করবে? শৌলকে আমি ইস্রায়েলের রাজা হিসাবে অস্বীকার করেছি একথা তোমাকে বলবার পরও তুমি ওর জন্যে দুঃখ করছ। শিঙায় তেল ভর্তি করে বৈৎলেহেমে যাও। তোমাকে আমি একজনের কাছে পাঠাচ্ছি। তার নাম যিশয় ও বৈৎলেহমেই থাকে। তারই একজন পুত্রকে আমি নতুন রাজ। হিসাবে মনোনীত করেছি।”
২. তখন শমুয়েল বলল, “আমি যদি যাই তবে শৌল জানতে পারবে। তখন সে আমায় হত্যা করতে চাইবে।” প্রভু বললেন, “তুমি বৈৎলেহমে যাও। সঙ্গে একটা বাছুরকে নিও। তুমি বলবে, ‘আমি প্রভুর কাছে একে বলি দিতে এসেছি।’
৩. যিশয়কে এই বলি দেখতে আমন্ত্রণ জানাবে। তারপর কি করবে আমি বলে দেব। যাকে আমি দেখিয়ে দেব তার মাথায় জলপাই তেল ঢেলে দিও।”
৪. প্রভুর কথামতে৷ শমূয়েল যা যা করার করল। সে বৈৎলেহমে চলে গেল। সেখানকার প্রবীণরা ভয়ে কাঁপতে কাপতে এল। শমূয়েলের সঙ্গে দেখা করে তারা বলল, “আপনি কি শান্তির ভাব নিয়ে এসেছেন?”
৫. শমুয়েল জবাব দিল, “হ্যাঁ, আমি শান্তির ভাব নিয়েই এসেছি। আমি প্রভুর কাছে একট৷ বলি দিতে এসেছি। তোমরা তৈরী হও। আমার সঙ্গে বলিদানে এসো।” শমূয়েল যিশয় আর তার পুত্রদের প্রস্তুত করে বলিদানের অনুষ্ঠান দেখবার জন্য ডেকে আনল।
৬. যিশয় তার পুত্রদের নিয়ে পৌঁছলে শমূয়েল ইলীয়াবকে দেখতে পেল। শমূয়েল ভাবল, “এই সেই যাকে প্রভু বিশেষভাবে পছন্দ করেছেন।”
৭. কিন্তু প্রভু শমূয়েলকে বললেন, “ইলীয়াব লম্বা আর সুন্দর দেখতে হলেও এভাবে ব্যাপারটা দেখো না। লোকে যেভাবে কোন জিনিস দেখে বিচার করে ঈশ্বর সেভাবে করেন না। লোকেরা মানুষের বাইরের রূপটাই দেখে, কিন্তু ঈশ্বর দেখেন তার অন্তরের রূপ। সেদিক থেকে ইলীয়াব উপযুক্ত লোক নয়।”
৮. তখন যিশয় তার দ্বিতীয় পত্র অবীনাদবকে ডাকলো। অবীনাদব শমূয়েলের পাশ দিয়ে হেঁটে গেল। শমূয়েল বলল, “না একেও প্রভু মনোনীত করেন নি।”
৯. একথা শুনে যিশয় শম্মকে শমূয়েলের পাশে আসতে বলল। শমূয়েল বলল, “না এও চলবে না।”
১০. যিশয় শমূয়েলকে তার সাত পুত্রকে দেখাল। শমূয়েল বলল, “প্রভু এদের একজনকেও মনোনীত করেন নি।”
১১. শমূয়েল বলল, “তোমার পুত্র বলতে এরাই কি সব?” যিশয় বলল, “না আমার আরেকটা পুত্র আছে। সে সবচেয়ে ছোট, কিন্তু সে এখন মেষ চরাচ্ছে।” শমুয়েল বলল, “তাকে ডেকে নিয়ে এসো। সে না আসা পর্যন্ত আমরা কেউ খেতে বসব না ।”
১২. যিশয় একজনকে পাঠালো তার ছোট ছেলেটিকে ডেকে আনতে। তার ছোট ছেলেটি দেখতে ভাল, রক্তবর্ণের যুবক। প্রভু শমূয়েলকে বলল, “এই তো সেই ছেলে। ওঠো, একে অভিষেক করা৷”
১৩. শমুয়েল তেল ভর্তি শিঙাটা নিয়ে যিশয়ের সব চেয়ে ছোট ছেলেটার মাথায় ঢেলে দিল। তার ভাইয়েরা এই ঘটনা দেখল। সেদিন থেকেই প্রভুর আত্মা মহাশক্তিতে দায়ূদের ওপর এল। এরপর শমূয়েল রামায় ফিরে এল।
একটি দুষ্ট আত্মা শৌলকে বিরক্ত করল
১৪. প্রভুর আত্মা শৌলকে ছেড়ে চলে গেলেন। তখন শৌলের কাছে প্রভু এক দুষ্ট আত্মা পাঠালেন। এর ফলে তিনি বেশ মুশকিলে পড়লেন।
১৫. শৌলের ভৃত্যের তাঁকে বলল, “ঈশ্বরের কাছ থেকে এক দুষ্ট আত্মা এসে আপনাকে উদ্বিগ্ন করছে।”
১৬. যদি আপনি আদেশ করেন তাহলে একজন বীণা বাজিয়েকে খুঁজে আনি। প্রভুর কাছ থেকে দুষ্ট আত্মা এলে সে বীণা বাজাবে। তখন আপনি বেশ ভালে৷ বোধ করবেন।”
১৭. শৌল বললেন, “তাহলে একজন ভালো বাজিয়েকে আমার কাছে নিয়ে এসো।”
১৮. একজন ভৃত্য বলল, “যিশয় নামে এক ব্যক্তি আছেন যিনি বৈৎলেহমে বাস করেন। আমি যিশয়ের পুত্রকে দেখেছি সে বীণা বাজাতে জানে। সে সাহসী এবং যুদ্ধ করতেও জানে। সে চতুর, দেখতেও সুন্দর। স্বয়ং প্রভু তার সহায়।”
১৯. তাই শৌল যিশয়ের কাছে কয়েকজন দূত পাঠাল। তারা যিশয়কে বলল, “তোমার দায়ূদ নামে একজন পুত্র আছে, সে তোমার মেষদের দেখাশোনা করে। ওকে আমাদের কাছে ডেকে আনো।”
২০. যিশয় শৌলের জন্য কিছু উপহার জোগাড় করলো। যিশয় একট৷ গাধা, কিছু রুটি, এক বোতল দ্রাক্ষারস আর একটা কচি ছাগল দায়ূদের হাতে করে শৌলের কাছে পাঠালো।
২১. দায়ূদ শৌলের সামনে গিয়ে দাঁড়ালে শৌল দায়ূদকে খুব ভালবেসে ফেললেন। দায়ূদ শৌলের সহকারী হয়ে শৌলের অস্ত্র বইতে লাগল।
২২. শৌল যিশয়ের কাছে খবর পাঠিয়ে জানিয়ে দিলেন, “দায়ূদ এখানেই থাকুক, আমার কাজকর্ম করুক। আমার ওকে খুব ভাল লেগেছে।
২৩. যখনই ঈশ্বর হতে শৌলের ওপর দুষ্ট আত্মা আসত, তখন দায়ূদ বীণা তুলে নিয়ে বাজাতেন। সঙ্গে সঙ্গে দুষ্ট আত্মা শৌলকে ছেড়ে যেত, আর তিনি আরাম বোধ করতেন।”