ইস্রায়েল ও যিহুদার মধ্যে যুদ্ধ হল
১. শৌলের পরিবার ও দায়ূদের পরিবারের মধ্যে বেশ কিছুদিন ধরে যুদ্ধ চলেছিল। দায়ূদ এম ই আরো শক্তিশালী হয়ে উঠছিলেন এবং শৌলের পরিবার ক্রমশঃই দুর্বল হয়ে পড়েছিল।
হিরোণে দায়ূদের ছয় সন্তানের জন্ম হল
২. দায়ূদের এইসব সন্তান হিরোণে জন্মগ্রহণ করেছিল। প্রথম সন্তান ছিল অম্লোন। অম্লোনের মা ছিলেন যিষিয়েলের অহীনোয়ম।
৩. দ্বিতীয় সন্তান ছিল কিলাব। কিলাবের মা অবীগল ছিলেন কৰ্ম্মিলীয় নাবলের বিধবা পত্নী। তৃতীয় সন্তানের নাম অবশালোম। অবশালোমের মা ছিলেন গশূর রাজ্যের রাজা তন্ময়ের কন্যা মাখা।
৪. চতুর্থ সন্তান আদোনিয়। আদোনিয়ের মা ছিলেন হগীত। পঞ্চম সন্তান শফটিয়। শফটিয়ের মায়ের নাম অবীটল।
৫. ষষ্ঠ সন্তানের নাম যিত্রিয়ম। যিত্রিয়মের মা ছিলেন দায়ূদের স্ত্রী ইগ্লাা। দায়ূদের এই কটি সন্তান হিরোণে জন্মেছিলো।
অবনের দায়ূদের সঙ্গে যোগ দেবার সিদ্ধান্ত নিল
৬. শৌল এবং দায়ূদের পরিবারের মধ্যে যখন যুদ্ধ চলছিল তখন শৌলের সৈন্যবাহিনীতে অবনের ক্রমশঃই শক্তিশালী হয়ে উঠছিল।
৭. রিসপা নামে শৌলের এক দাসী ছিল। রিসপা ছিল অয়ার কন্যা। ঈশবোশৎ অনেরকে বলল, “আমার পিতার দাসীর সঙ্গে তুমি কেন যৌনসম্পর্ক করলে?”
৮. ঈশবোশতের কথায় অবনের ভীষণভাবে রেগে গেলেন। অনের বলল, “আমি শৌল এবং তার পরিবারের প্রতি বরাবরই অনুগত। আমি তোমাকে দায়ূদের হাতে তুলে দিই নি। দায়ূদকে তোমার উপর জয়ী হতে দিই নি। যিহুদার অধিকারভুক্ত আমি বিশ্বাসঘাতক নই। কিন্তু এখন তুমি বলছো যে আমি এই অপকর্ম করেছি।
৯-১০. আমি প্রতিজ্ঞা করছি ঈশ্বর যা বলেছেন তা নিশ্চিতভাবে ঘটবে। প্রভু বলেছেন শৌলের পরিবার থেকে রাজ্য ছিনিয়ে নিয়ে তিনি দায়ূদকে দেবেন। প্রভু দায়ূদকেই যিহুদা এবং ইস্রায়েলের রাজা করবেন। তিনি দান থেকে বের-শেবা পর্যন্ত শাসন করবেন। আমার মনে হয় তা ঘটাতে আমি যদি তৎপর না হই ঈশ্বর আমায় শাস্তি দেবেন।”
১১. ঈশ্ববোশৎ অনেরকে আর কিছু বলতে পারলেন না। ঈশ্ববোশৎ তাকে খুব ভয় পেত।
১২. অবনের দায়ূদকে বার্তাবাহক পাঠাল। অনের বলল, “এই দেশ কার শাসন করা উচিৎ বলে আপনি মনে করেন? আপনি আমার সঙ্গে চুক্তি করুন। আমি আপনাকে ইস্রায়েলের সমস্ত লোকের শাসক হতে সাহায্য করবো।”
১৩. দায়ূদ উত্তরে জানালেন, “বেশ ! আমি আপনার সঙ্গে চুক্তি করব। কিন্তু আমি আপনাকে একটা কথা জিজ্ঞাসা করতে চাইঃ যতক্ষণ পর্যন্ত আপনি শৌলের কন্যা মীখলকে আমার কাছে আনতে না পারবেন ততক্ষণ পর্যন্ত আমি আপনার সঙ্গে দেখা করব না।”
দায়ূদ তার স্ত্রী মীখলকে ফিরে পেলেন
১৪. দায়ূদ শৌলের পুত্র ঈশ্ববোশতের কাছে বার্তাবাহক পাঠালেন। দায়ূদ বললেন, “আমার স্ত্রী মীখলকে ফেরত দিন। সে আমার কাছে স্ত্রী হিসেবে প্রতিশ্রুত। তাকে পাবার জন্যে আমি ১০০ পলেষ্টীয় শিশ্নের দাম দিয়েছি।”
১৫. তখন ঈশ্ববোশৎ সেই লোকটিকে লয়িশের পুত্র পটিয়েল নামক এক লোকের কাছ থেকে মীখলকে নিয়ে যেতে বলল।
১৬. মীখলের স্বামী পটিয়েল মীখলের সঙ্গে গেল। বহুরীমে যাবার সময় পটিয়েল মীখলের পিছু পিছু যাচ্ছিল এবং কাঁদছিল। কিন্তু অনের পটিয়েলকে বলল, “বাড়ী ফিরে যাও।” তখন পল্টিয়েল বাড়ী ফিরে গেল।
অনের দায়ূদকে সাহায্য করার প্রতিশ্রুতি দিল
১৭. অবনের ইস্রায়েলের নেতাদের কাছে এই বার্তা দিল। সে বলল, “দীর্ঘদিন ধরে তোমরা দায়ূদকে তোমাদের রাজা হিসেবে চেয়ে আসছ।
১৮. এখন তা সম্পাদন কর। প্রভু দায়ূদ সম্পর্কে বলার সময় বললেন, ‘আমি আমার ইস্রায়েলীয় লোকেদের পলেষ্টীয় এবং অন্যান্য শত্রুদের হাত থেকে রক্ষা করব। আমি দায়ূদের মাধ্যমে এটা করাবো।”
১৯. এসব কথা অবনের দায়ূদকে হিরোণে বলেছিল। এসব কথা সে বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠীর লোকেদের কাছেও বলেছিল। অবনের যা বলেছিল সেগুলো বিন্যামীন পরিবারগোষ্ঠী এবং ইস্রায়েলের সব লোকেদের কাছে ভাল লেগেছিল।
২০. তখন অবনের হিব্রোণে দায়ূদের কাছে চলে এল। অবনের তার সঙ্গে ২০ জন লোক এনেছিল। অবনের এবং অবনেরের সঙ্গে যারা এসেছিল তাদের জন্য দায়ূদ একটি ভোজ দিয়েছিলেন।
২১. অবনের দায়ূদকে বলল, “হে আমার মনিব এবং রাজা, আমাকে যেতে দিন এবং সব ইস্রায়েলীয়কে আপনার কাছে আনতে দিন। তারা আপনার সঙ্গে চুক্তি করবে। যেমনটি আপনি চেয়েছিলেন যে আপনি সারা ইস্রায়েলের উপর রাজত্ব করবেন।” তখন দায়ূদ অনেরকে যেতে দিলেন। অনের শান্তিতে চলে গেলেন।
অনেরের মৃত্যু
২২. যোয়াব এবং দায়ূদের আধিকারিকরা যুদ্ধ থেকে ফিরে এল। তারা শত্রুদের কাছ থেকে বহু মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে এনেছিল। দায়ূদ সবেমাত্র অবনেরকে শান্তিতে পাঠিয়ে দিয়েছেন, তাই অবনের দায়ূদের সঙ্গে হিরোণে ছিলেন না।
২৩. যোয়াব তার সৈন্যসামন্ত সহ হিরোণে এসে পৌঁছল। সৈন্যরা যোয়াবকে বলল, “নেরের পুত্র অনের রাজা দায়ূদের কাছে এসেছিল। রাজা দায়ূদ অবনেরকে শান্তিতে যেতে দিয়েছেন।”
২৪. যোয়াব রাজাকে বলল, “এ আপনি কি করেছেন? অবনের আপনার কাছে এলো আর আপনি তাকে আঘাত না করেই ছেড়ে দিলেন। কেন?
২৫. আপনি কি জানেন অবনের নেরের পুত্র? সে আপনার সঙ্গে চালাকি করতে এসেছিল এবং আপনি কি কি করছেন সেই সমস্ত বিষয়ে সে শিখতে এসেছিল।”
২৬. যোয়াব দায়ূদের কাছ থেকে ফিরে গেল এবং সিরা কুয়োর কাছে অনেরের কাছে বার্তাবাহকদের পাঠালো। বার্তাবাহক অবনেরকে ফিরিয়ে নিয়ে এল। দায়ূদ এসবের কিছুই জানতে পারলেন না।
২৭. অবনের যখন হিব্রোণে এল, তখন যোয়াব তার সঙ্গে কথা বলতে চায় এইভাবে তাকে প্রবেশ পথের মাঝখানে একধারে নিয়ে গেল। সেখানে অবনেরের পেটে ছুরিকাঘাত করল এবং অনের মারা গেল। অনের যোয়াবের ভাই অসাহেলকে হত্যা করেছিল তাই যোয়াব অবনেরকে হত্যা করল।
দায়ূদ অনেরের জন্য কাঁদলেন
২৮. পরে দায়ূদ এই খবর শুনলেন। দায়ুদ বললেন, “নেরের পুত্র অনেরের মৃত্যুর ব্যাপারে আমি এবং আমার রাজ্য একেবারে নির্দোষ। প্রভু তা নিশ্চয়ই জানেন।
২৯. যোয়াব এবং তার পরিবার এর জন্য দায়ী এবং এই পরিবারগুলিকেই দোষ দেওয়া হবে। তাদের পরিবারের ওপর বহু সঙ্কট নেমে আসুক। এই পরিবারের লোকেরা কুষ্ঠরোগে আক্রান্ত হবে, পঙ্গু হবে, যুদ্ধে মারা যাবে এবং ওদের খাদ্যাভাব হবে।”
৩০. যোয়াব এবং তার ভাই অবীশয় অনেরকে হত্যা করলো কারণ অবনের তাদের ভাই অসাহেলকে গিবিয়োনের যুদ্ধে হত্যা করেছিল।
৩১-৩২. দায়ূদ, যোয়াব এবং তার লোকেদের বললেন, “তোমাদের জামাকাপড় ছিঁড়ে ফেল এবং শোক প্রকাশ পায় এমন জামাকাপড় পর। অবনেরের জন্য কাঁদ।” তারা অনেরকে হিরোণে কবর দিল। দায়ূদও অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়াতে গেলেন। রাজা দায়ূদ এবং অন্যান্য সব লোক অনেরের অন্ত্যেষ্টিতে কাঁদলেন।
৩৩. রাজা দায়ূদ অবনেরের অন্ত্যেষ্টি ক্রিয়াতে এই শোকগীতি গাইলেনঃ “অনের কি কয়েকজন দুষ্ট অপরাধীদের মত মারা গেল?
৩৪. অবনের, তোমার হাত বাঁধা ছিল না। তোমার পায়ে কোন শিকল ছিল না। না, অবনের, মন্দ লোকের তোমাকে হত্যা করেছে।” প্রত্যেকে আবার অবনেরের জন্য কাঁদল।
৩৫. সারাদিন ধরে লোকেরা এসে দায়ূদকে কিছু খাবার জন্য উৎসাহ দিল। কিন্তু দায়ূদ একট৷ বিশেষ প্রতিজ্ঞা করেছিলেন। তিনি বললেন, “হে আমার ঈশ্বর, যদি আমি সূর্য ডোবার আগে রুটি বা অন্য কিছু খাই তবে তুমি আমাকে শাস্তি দিও এবং বহু সমস্যার মধ্যে ফেলো।”
৩৬. এরপর কি ঘটলো তা সব লোকেরা দেখল এবং রাজা দায়ূদ যা করেছিলেন তাতে সবাই খুব খুশী হল।
৩৭. যিহুদা এবং ইস্রায়েলের সমস্ত লোক বুঝতে পারলো যে রাজা দায়ূদ নেরের পুত্র অনেরকে হত্যার আদেশ দেন নি।
৩৮. রাজা দায়ূদ তাঁর আধিকারিকদের বললেন, “তোমরা কি জানো যে একজন অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ নেত৷ আজ ইস্রায়েলে মারা গেছে।
৩৯. যে দিন আমি রাজা হিসেবে অভিষিক্ত হয়েছি এ ঘটনা ঠিক সেই দিনই ঘটেছে। সরূয়ার এই সব সন্তান আমাকে বহু অসুবিধায় ফেলেছে। আমি আশা করি যে শাস্তি তাদের প্রাপ্য, প্রভু ওদের তা দেবেন।”