দায়ূদ তাঁর সৈন্য গণনার সিদ্ধান্ত নিলেন
১.প্রভু ইস্রায়েলের বিরুদ্ধে আবার ক্রুদ্ধ হলেন। প্রভু দায়ূদকে ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে প্ররোচিত করলেন। দায়ূদ বললেন, “যাও, গিয়ে ইস্রায়েল এবং যিহুদার লোকসংখ্যা গণনা কর।”
২. রাজা দায়ূদ তাঁর সেনাপতি যোয়াবকে বললেন, “যাও, দান থেকে বের্-শেবা পর্যন্ত লোকসংখ্যা গণনা৷করে এসো। তাহলে আমি জানতে পারব সেখানে কত লোকজন আছে।”
৩. যোয়াব রাজাকে বললেন, “ঠিক কতসংখ্যক লোক আছে তাতে কিছু এসে যায় না। প্রভু, আপনার ঈশ্বর যেন তার ১০০ গুণ বেশী লোকজন আপনাকে দেন। এই ঘটনাগুলি যেন আপনি নিজের চোখে ঘটতে দেখেন। কিন্তু কেন আপনি এই গণনার কাজ করতে চাইছেন?”
৪. রাজা দায়ূদ বেশ দৃঢ়তার সঙ্গে তাঁর সেনাপতিদের এবং যোয়াবকে লোকগণনার হুকুম দিলেন। তখন যোয়াব এবং সেনাপতি রাজার কাছ থেকে চলে গেল এবং লোকগণনার কাজ করতে লাগল।
৫. তারা যদ্দন নদী পার হয়ে গেল। অরোয়ের নামক স্থানে তারা ঘাঁটি গাড়লো। তাদের ঘাঁটি শহরের ডানদিকে অবস্থিত ছিল। (এই শহরটি যাসেরের পথে যেতে গাদ উপত্যকার মধ্যে অবস্থিত ছিল।)
৬. তারপর তারা পূর্বদিকে গিয়ে তহতীম-হশি দেশের দিকে গিলিয়দে এল। তারপর তারা উত্তরদিকে দান-যান হয়ে সীদোন পর্যন্ত গেল।
৭. তারা সোরদুর্গেও গিয়েছিল। তারা হিব্বীয় ও কনানীয়দের প্রত্যেকটি শহরে গিয়েছিল দক্ষিণ দিকে তারা যিহুদার দক্ষিণস্থ বের্-শেবা পর্যন্ত গিয়েছিল।
৮. গোটা দেশে যেতে তাদের ৯ মাস ২০ দিন সময় লেগেছিলো। তারা ৯ মাস ২০ দিন পরে জেরুশালেমে ফিরে এসেছিল।
৯. যোয়াব রাজার হাতে লোকসংখ্যার তালিক৷ তুলে দিল। তরবারি ব্যবহার করতে পারে এমন লোকের সংখ্য৷ ইস্রায়েলে ছিল ৮,০০,০০০ এবং যিহুদার লোকসংখ্যা ছিলো ৫,০০,০০০ জন।
প্রভু দায়ূদকে শাস্তি দিলেন
১০. লোকসংখ্যা গণনার পর দায়ূদ লজ্জিত হলেন। দায়ূদ প্রভুকে বললেন, “আমি যা করেছি তাতে আমার মস্ত বড় পাপ হয়েছে। হে প্রভু, মিনতি করি, আপনি আমার পাপ ক্ষমা করে দিন। আমি সত্যি বোকার মত কাজ করেছি।”
১১. দায়ূদ যখন সকালে ঘুম থেকে উঠলেন, তখন দায়ূদের ভাববাদী গাদের কাছে প্রভুর বাক্য নেমে এল।
১২. প্রভু গাদকে বললেন, “যাও গিয়ে দায়ূদকে বল, ‘প্রভু এই কথাই বললেনঃ আমি তোমাকে তিনটি বিষয় দিচ্ছি। তুমি পছন্দ কর কোনটা আমি তোমার প্রতি বরাদ্দ করব।”
১৩. গাদ দায়ূদের কাছে এসে বলল, “তিনটি বিষয়ের মধ্যে থেকে একটা বেছে নাওঃ
1.তোমার রাজ্যে সাত বছরের দুর্ভিক্ষ।
2.তোমার শত্রুরা তিনমাস ধরে তোমায় তাড়া করবে।
3.তোমার দেশে তিন দিনের মহামারী আসবে।
এ বিষয়ে চিন্তা করে, তিনটের মধ্যে একট৷ বিষয় বেছে নাও। তোমার কোনট৷ পছন্দ হল সে সম্পর্কে আমি প্রভুকে বলব। প্রভু আমাকে তোমার কাছে পাঠিয়েছেন।”
১৪. দায়ূদ গাদকে বললেন, “আমি সত্যিই খুব সমস্যায় পড়েছি। কিন্তু প্রভু সত্যি বড় ক্ষমাশীল। সুতরাং প্রভুই আমাদের শাস্তি দিন। আমার শাস্তি যেন লোকেদের কাছ থেকে না আসে।”
১৫. অতএব প্রভু ইস্রায়েলে একটি মহামারী পাঠালেন। এই মহামারী সকালে শুরু হল এবং মনোনীত সময় পর্যন্ত চলল। দান থেকে বের্-শেবা পর্যন্ত সারা ইস্রায়েলের ৭০,০০০ লোক মারা গেল।
১৬. দেবদূত জেরুশালেমকে ধ্বংস করার জন্য তাঁর বাহু ওপরে ওঠালেন। ঈশ্বর শাস্তির ব্যাপারে তাঁর মন পরিবর্তন করলেন। যে দূত ধ্বংস করছিলেন, প্রভু তাঁকে বললেন, “অনেক হয়েছে। তোমাদের হাত গুটিয়ে নাও।” সেই সময় তাঁরা যিষীয় অরৌণার খামারের কাছে ছিলেন।
দায়ূদ অরৌণার শস্য মাড়ানোর জমি কিনলেন
১৭. যে দূত লোকেদের হত্যা করছিল দায়ূদ তাকে দেখলেন। দায়ূদ প্রভুর সঙ্গে কথা বললেন। দায়ূদ বললেন, “আমি পাপ করেছি। আমি গর্হিত কাজ করেছি। আমি ওদের যা করতে বলেছি এই সব লোক তাই করেছে। তারা বাধ্য মেষের মত আমায় অনুসরণ করেছে। তারা কোন ভুল করেনি। দয়া করে আপনার শাস্তি আমাকে এবং আমার পিতার পরিবারকে দিন।”
১৮. সেই দিন গাদ দায়ূদের কাছে এল। গাদ দায়ূদকে বলল, “যাও, যিবৃষীয় অরৌণার শস্য মাড়ানোর জমিতে প্রভুর জন্য একটি বেদী তৈরী কর।”
১৯. যেমন গাদ তাকে বলল সেইমত দায়ূদ করল। প্রভু যা চান দায়ূদ ঠিক তাই করল। দায়ূদ অরৌণার সঙ্গে দেখা করতে গেলেন।
২০. অরৌণা দেখলো যে রাজা দায়ূদ এবং তাঁর আধিকারিকরা তার সঙ্গে দেখা করতে আসছে। অরৌণা বাইরে বেরিয়ে গিয়ে মাথা নত করে প্রণাম করল।
২১. অরৌণা বলল, “আমার গুরু এবং রাজা কেন আমার কাছে এসেছেন?” দায়ূদ উত্তর দিলেন, “আমি তোমার কাছ থেকে খামার বাড়ীটি কিনতে এসেছি। তারপর আমি প্রভুর জন্য একট৷ বেদী বানাব। তাহলে এই মহামারী বন্ধ হয়ে যাবে।”
২২. অরৌণা দায়ূদকে বলল, “হে আমার গুরু এবং রাজা, ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে উৎসর্গ হিসেবে আপনি যা খুশী তাই নিতে পারেন। এখানে হোমবলির জন্য কিছু গরু এবং কাঠের জন্য এই ধান ঝাড়াইয়ের পাটাতন এবং বাঁকগুলোও দিয়ে দিচ্ছি।
২৩. হে রাজা, এই সব আমি আপনাকে দিয়ে দিচ্ছি !” অরৌণা রাজাকে আরও বলল, “প্রভু, আপনার ঈশ্বর যেন আপনার প্রতি প্রসন্ন হন।”
২৪. কিন্তু রাজা অরৌণাকে বললেন, “না ! আমি তোমাকে এই জমির দাম দিয়ে দেব। আমি আমার প্রভু ঈশ্বরকে হোমবলি উৎসর্গ করব না যার জন্য আমি কোন অর্থ দিইনি।” তখন দায়ূদ ৫০শেকল রূপোর বিনিময়ে সেই ঢেঁকিটা এবং গরুগুলো কিনে নিলেন। তারপর দায়ূদ প্রভুর উদ্দেশ্যে সেখানে এক বেদী নির্মাণ করলেন। তিনি তার ওপরে হোমবলি এবং মঙ্গলার্থক বলি উৎসর্গ করলেন। সারা দেশের জন্য দায়ূদের প্রার্থনায় প্রভু সাড়া দিলেন। প্রভু সেই মহামারীকে ইস্রায়েলে থামিয়ে দিলেন।