দায়ূদ ও তাঁর সঙ্গীরা হিরোণে গেলেন
১. পরে দায়ূদ প্রভুর কাছ থেকে উপদেশ চাইলেন। দায়ূদ জিজ্ঞাসা করলেন, “আমি কি যিহুদার শহরগুলির কোন একটির বিরুদ্ধে যুদ্ধ করব?” প্রভু দায়ূদকে বললেন, “হ্যাঁ৷” দায়ূদ জিজ্ঞাস৷ করলেন, “আমি কোথায় যাব?” প্রভু বললেন, “হিরোণে।”
২. তখন দায়ূদ এবং তার দুই স্ত্রী হিরোণে রওনা হলেন। (তাঁর স্ত্রীরা ছিলেন ষিষিয়েলের অহীনোয়ম এবং কর্ম্মিলের নাবলের বিধবা পত্নী অবীগল।)
৩. দায়ূদ তাঁর সঙ্গীগণ এবং তাদের পরিবারকেও সঙ্গে নিলেন। তারা প্রত্যেকে হিরোণ এবং নিকটবর্তী শহরগুলিতে বসবাস করতে লাগল।
দায়ূদ যাবেশের লোকেদের ধন্যবাদ দিলেন
৪. যিহূদার লোকেরা হিরোণে এসে দায়ূদকে যিহূদার রাজারূপে অভিষিক্ত করল। তারপর তারা দায়ূদকে বলল, “যাবেশ গিলিয়দের লোকেরা শৌলকে কবর দিয়েছে।”
৫. দায়ূদ যাবেশ গিলিয়দের লোকেদের কাছে বার্তাবাহক পাঠালেন। বার্তাবাহকেরা যাবেশের লোকদের বলল, “প্রভু তোমাদের আশীর্বাদ করুন কেননা তোমরা তোমাদের গুরু শৌলের ছাই কবর দিয়ে তার প্রতি দয়া দেখিয়েছ।
৬. প্রভু তোমাদের প্রতি ন্যায়সঙ্গত আচরণ করবেন এবং সদয় হবেন। আমিও তোমাদের প্রতি সদয় হব।
৭. ‘এখন তোমরা শক্তিশালী ও সাহসী হও। তোমাদের মনিব শৌল নিহত হয়েছেন। কিন্তু যিহুদার পরিবারগোষ্ঠী আমাকে তাদের রাজারূপে অভিষিক্ত করেছে।”
ঈশ্ববোশৎ রাজা হলেন
৮. ধনেরের পুত্র অনের শৌলের সৈন্যবাহিনীর সেনাপতি ছিলেন। অনের শৌলের পুত্র ঈশ্ববোশৎকে মহনয়িমে নিয়ে গেলেন এবং
৯. তাকে গিলিয়দ, অশূরীয়, যিষিয়েল, ইফ্রয়িম, বিন্যামীন এবং সারা ইস্রায়েলের রাজা করে দিলেন।
১০. ঈশ্ববোশৎ শৌলের পুত্র ছিলেন। যখন তিনি ইস্রায়েলের শাসনভার নেন, তখন তাঁর বয়স ৪০ বছর। তিনি ইস্রায়েলে দুবছর রাজত্ব করেছিলেন। কিন্তু যিহুদার পরিবারগোষ্ঠী দায়ূদকে অনুসরণ করল।
১১. দায়ূদ ছিলেন হিরোণের রাজা। দায়ূদ যিহুদার পরিবারগোষ্ঠীর ওপর সাতবছর ছ’মাস শাসনকার্য চালিয়েছিলেন।
একটি মারাত্মক লড়াই
১২. নেরের পুত্র অবনের এবং শৌলের পুত্র ঈশ্ববোশতের কিছু আধিকারিকগণ মহনয়িম থেকে গিবিয়োনে গেল।
১৩. সরূয়ার পুত্র যোয়াব এবং দায়ূদের আধিকারিকরাও গিবিয়োনে গেল। গিবিয়োনের এক পুকুরের কাছে তাদের দেখা হল। পুকুরের একদিকে অনেরের দল এবং অন্যদিকে যোয়াবের দল বসল।
১৪. অবনের যোয়াবকে বলল, “আমাদের তরুণ যোদ্ধারা উঠে দাঁড়াক এবং তাদের মধ্যে একট৷ লড়াই হয়ে যাক।” যোয়াব বলল, “নিশ্চয়ই, লড়াই হোক।”
১৫. তখন তরুণ যোদ্ধারা উঠে দাঁড়াল। দুই দেশই, লড়াইয়ের জন্য তাদের কত লোকজন আছে তা গুনে নিল। তারা বিন্যামীনের পরিবারগোষ্ঠী থেকে শৌলের পুত্র ঈশ্ববোশতের পক্ষে লড়াইয়ের জন্যে বারো জনকে বেছে নিলো। অন্যদিকে যোয়াবের দল দায়ূদের আধিকারিকদের মধ্যে থেকে বারো জনকে বেছে নিল।
১৬. তাদের প্রত্যেকে প্রত্যেকের প্রতিপক্ষের মাথা আঁকড়ে ধরে তাদের তরবারি দিয়ে পাশে ঢুকিয়ে দিল, তাই তারা একসঙ্গে মাটিতে পড়ে গেল। এই জন্য এই জায়গাকে বলা হয় “ছুরিকা ভূমি।” এটা গিবিয়োনের একটা জায়গা।
অনের আসাহেলকে হত্যা করল
১৭. সেই লড়াই একট৷ ভয়ঙ্কর যুদ্ধের রূপ নিয়েছিল এবং দায়ূদের লোকজন সেদিন অবনের এবং ইস্রায়েলীয়দের হারিয়ে দিয়েছিল।
১৮. সরূয়ার তিন পুত্র ছিলঃ যোয়াব, অবীশয় এবং অসাহেল। অসাহেল খুব দ্রুত দৌড়াতে পারত। সে বন্য হরিণের মতই দ্রুতগামী ছিল।
১৯. অসাহেল সোজা অনেরের দিকে দৌড়ে গেল এবং তাকে তাড়া করল।
২০. অবনের পিছনে তাকিয়ে তাকে জিজ্ঞাসা করল, “তুমিই কি অসাহেল?” অসাহেল বললেন, “হ্যাঁ, আমিই অসাহেল।
২১. অবনের অসাহেলকে আঘাত করতে চায় নি। তাই, অনের অসাহেলকে বলল, “আমাকে তাড়া কর না। বরং একজন তরুণ সৈনিককে তাড়া কর। খুব সহজেই তুমি তার বর্মটি তোমার জন্য পেয়ে যেতে পারে।।” কিন্তু অসাহেল অনেরকে তাড়া করা থেকে ক্ষান্ত হল না।
২২. অবনের আবার অসাহেলকে বলল, “দাঁড়াও; না হলে আমি তোমাকে হত্যা করতে বাধ্য হব। তাহলে কেমন করে আমি আবার তোমার ভাই যোয়াবের মুখের দিকে তাকাবো?”
২৩. কিন্তু অসাহেল অনেরকে তাড়া করা থেকে ক্ষান্ত হল না। তখন অবনের তার বর্শার গোড়ার দিকটা অসাহেলের পেটে ঢুকিয়ে দিল। বর্শা তার পেটে ঢুকে এফোঁড় ওফোঁড় হয়ে গেল এবং সেখানেই অসাহেলের মৃত্যু হল।
যোয়াব এবং অবীশয় অনেরকে তাড়া করলো
অসাহেলের দেহ মাটিতে পড়ে রইলো। সেই রাস্তা দিয়ে যারা ছুটে যাচ্ছিল তারা সবাই অসাহেলকে দেখার জন্যে দাঁড়িয়ে পড়লো।
২৪. কিন্তু যোয়াব এবং অবীশয় অবনেরকে তাড়া করতে লাগল। যখন তারা অন্মা পাহাড়ের কাছে এলো তখন সূর্য অস্ত যেতে বসেছে। (গিবিয়োন মরুভূমির দিকে যেতে গীহের সামনেই ছিল অম্মা পাহাড়।)
২৫. পর্বতের চূড়ায়, বিন্যামীনের পরিবারগোষ্ঠীর লোকেরা অনেরের চারদিকে একত্রিত হল।
২৬. অবনের চিৎকার করে যোয়াবকে বলল, “আমরা কি চিরদিন লড়াই করে একে অপরকে হত্যা করে যাবো? তুমি খুব ভালো করেই জানো যে এর পরিণাম হবে শুধুই দুঃখ। এইসব লোকেদের বল তারা যেন তাদের নিজের ভাইকে তাড়া না করে।”
২৭. তখন যোয়াব বলল, “এ কথা বলে তুমি খুব ভালো করলে। যদি তুমি কিছু না বলতে, এইসব লোকেরা সকাল পর্যন্ত তাদের ভাইকে তাড়া করতে থাকত। এটা ঈশ্বর যেমন আছেন এ কথা যেমন সত্য তেমনি সত্য।”
২৮. তখন যোয়াব একটি শিঙা বাজাল এবং তার লোকেরা ইস্রায়েলীয়দের পেছনে তাড়া করা বন্ধ করল। তারা ইস্রায়েলীয়দের বিরুদ্ধে আর লড়াই করার চেষ্টাও করল না।
২৯. অবননের এবং তার অনুগামীরা সারারাত ধরে যৰ্দ্দন উপত্যকায় হেঁটে যৰ্দ্দন নদী পার হল এবং পরদিন সারা দিন হেঁটে মহনয়িমে উপস্থিত হল।
৩০. যোয়াব অনেরকে তাড়া করা থেকে বিরত হল ও ফিরে গেল। যোয়াব তার লোকেদের জড়ো করল এবং জানতে পারল যে অসাহেল সহ দায়ূদের ১৯ জন আধিকারিকরা নিখোঁজ ।
৩১. কিন্তু দায়ূদের আধিকারিকরা, অনেরের দল থেকে বিন্যামীনের পরিবারের ৩৬০ জনকে হত্যা করেছিল। দায়ূদের আধিকারিকরা অসাহেলকে নিয়ে গিয়ে বৈৎলেহেমে তার পিতার কবরে কবর দিলো। যোয়াব এবং তার সঙ্গীরা সারারাত ধরে হেঁটে চলল। যখন তারা হিরোণে পৌঁছালো তখন সকালের সূর্য সবে উঠছে।