যোয়াব দায়ূদকে ভর্ৎসনা করল

১. লোকেরা যোয়াবকে এসে সংবাদ দিয়ে বলল, “রাজা দায়ূদ অবশালোমের জন্য দুঃখে ভেঙ্গে পড়েছেন এবং কাঁদছেন।”

২. সেদিন দায়ূদের সৈন্যরা যুদ্ধে জয়ী হয়েছিল। কিন্তু সেই জয় তাদের সকলের কাছে একটা বিষাদের দিন হয়ে উঠেছিল। তা বিষন্নতার দিন ছিল কারণ লোকেরা জানতে পারল, “রাজা তার পুত্রের জন্য শোকমগ্ন।”

৩. লোকেরা বিমর্ষ হয়ে সেই শহরে এল। তারা যুদ্ধে যারা পরাজিত হয়েছে এবং লজ্জায় যারা ছুটে পালিয়ে গেছে সেই লোকেদের মত ব্যবহার করল।

৪. রাজা তাঁর মুখ ঢেকে রেখেছিলেন। তিনি উচ্চস্বরে কাঁদছিলেন, “অবশালোম, অবশালোম, হায় পুত্র, পুত্র আমার !”

৫. যোয়াব রাজার প্রাসাদে গেল। সে রাজাকে বলল, “আপনি আপনার প্রত্যেকটি আধিকারিকদের অবমাননা করছেন। দেখুন ঐ আধিকারিকরা আজ আপনার প্রাণ বাঁচিয়েছে। তাঁরা আপনার ছেলে-মেয়ে, স্ত্রী এবং দাসীদেরও প্রাণ বাঁচিয়েছে।

৬. যারা আপনাকে ঘৃণা করে তাদের আপনি ভালবাসেন এবং যারা আপনাকে ভালবাসে তাদের আপনি ঘৃণা করেন। আপনি আজ পরিষ্কার করে বুঝিয়ে দিলেন যে আপনার আধিকারিক এবং অন্যান্য লোকেরা আপনার কাছে একান্তই অর্থহীন। আমি বুঝতে পারছি আমরা সকলে মারা গিয়ে অবশালোম বেঁচে থাকলে আপনি প্রকৃতই সুখী হতেন।

৭. এখন উঠুন, আপনার আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলুন। ওদের উৎসাহিত করুন। আমি প্রভুর নামে শপথ করে বলছি, যদি আপনি এখনই বাইরে গিয়ে এই কাজ না করেন, আজ রাতে আপনার সঙ্গে একজন লোককেও পাবেন না। এবং তা যদি হয় তাহলে শৈশবকাল থেকে আপনি যে সব সমস্যায় পড়েছেন, এটা হবে তাদের তুলনায় কঠিনতম সমস্যা।”

৮. তখন রাজা গিয়ে নগরীর প্রবেশ পথে বসলেন। রাজা যে নগরদ্বারের বাইরে এসেছেন এই খবর ছড়িয়ে পড়ল। তাই লোকেরা তাঁর সঙ্গে দেখা করতে এল।

দায়ূদ পুনরায় রাজা হলেন

ইস্রায়েলীয়রা যারা অবশালোমকে অনুসরণ করছিল তারা সকলে দৌড়ে পালিয়ে যে যার বাড়ী চলে গেল।

৯.  প্রত্যেক পরিবারগোষ্ঠীর প্রত্যেকটি লোক নিজেদের মধ্যে কলহ শুরু করে দিল। তারা বলল, “রাজা দায়ূদ আমাদের পলেষ্টীয় এবং অন্যান্য শত্রুদের থেকে বাঁচিয়েছেন। দায়ূদ অবশালোমের হাত থেকে পালিয়ে গেছেন।

১০. তাই আমরা অবশালোমকে আমাদের শাসক রূপে বেছে নিয়েছিলাম। কিন্তু এখন অবশালোম মারা গেছে। সে যুদ্ধে হত হয়েছে। তাই দায়ূদকেই আমরা আবার রাজা হিসেবে গ্রহণ করব।”

১১. রাজা দায়ূদ সাদোক এবং অবিয়াথর এই দুই যাজককে বার্তা পাঠালেন। দায়ূদ বললেন, “যিহুদার নেতাদের সঙ্গে কথা বল। তাদের বল, ‘রাজা দায়ূদকে তাঁর প্রাসাদে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে তোমরা সব চেয়ে শেষ পরিবারগোষ্ঠী কেন? দেখ, সারা ইস্রায়েলের লোক রাজা দায়ূদকে তাঁর স্বস্থানে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে বলাবলি করছে।

১২.  তোমরা আমার ভাই, তোমরাই আমার পরিবার। তবে রাজাকে স্বস্থানে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কেন তোমরা পিছিয়ে থাকা পরিবার হবে?’

১৩. অমাসাকে গিয়ে বল, ‘তুমি আমার পরিবারের একজন। যদি আমি তোমাকে যোয়াবের জায়গায় আমার সৈনিকদের সেনাপতি না করি, তবে ঈশ্বর যেন আমায় শাস্তি দেন।

১৪.  দায়ূদ যিহুদার সব লোকের হৃদয় স্পর্শ করলেন এবং তারা সকলে একাত্ম হয়ে সম্মতি জানাল। যিহুদার লোকেরা রাজার কাছে বার্তা পাঠাল। তারা বলল, “আপনি এবং আপনার সব আধিকারিকরা ফিরে আসুন।”

১৫. রাজা দায়ূদ যৰ্দ্দন নদীর কাছে এলেন। যিহুদার লোকেরা রাজার সঙ্গে দেখা করার জন্য এবং তাঁকে যৰ্দ্দন নদী পার করে নিয়ে যাবার জন্য গিলে এসে উপস্থিত হল।

শিমিয়ি দায়ূদের কাছে ক্ষমা চাইল

১৬. গেরার পুত্র শিমিয়ি বিন্যামীনের পরিবারের একজন। সে বহুরীমে বাস করত। দায়ূদের সঙ্গে দেখা করার জন্য সে তাড়াতাড়ি এল। সে যিহুদার লোকেদের সঙ্গে এল।

১৭. শিমিয়ির সঙ্গে বিন্যামীনের পরিবারগোষ্ঠী থেকে আরও ১,০০০ জন লোক এসেছিল, শৌলের পরিবারের দাস সীবঃও এসেছিলে।। সীবঃ তার ১৫ জন পুত্র এবং ২০ জন ভৃত্যকে সঙ্গে এনেছিল। এই সব লোক রাজা দায়ূদের সঙ্গে দেখা করার জন্য তাড়াতাড়ি যদ্দন নদীর তীরে এসে উপস্থিত হল।

১৮. রাজার পরিবারকে যিহুদায় ফিরিয়ে আনার জন্য লোকেরা সাহায্য করতে নদীর ওপারে চলে গেল। রাজা যা যা বললেন লোকেরা তাই করল। যখন রাজা নদী পার হচ্ছেন তখন গেরার পুত্র শিমিয়ি তার সঙ্গে দেখ৷ করতে এল। শিমিয়ি এসে রাজাকে প্রণাম করল।

১৯. শিমিয়ি রাজাকে বলল, “হে আমার প্রভু, আমি যা ভুল করেছি তা নিয়ে ভাববেন না। হে রাজা, যখন আপনি জেরুশালেম ছেড়ে চলে গিয়েছিলেন তখন আপনার সঙ্গে যে যে খারাপ আচরণ করেছি ত৷ আর মনে রাখবেন না।

২০.  আপনি জানেন আমি পাপ করেছি। সেই জন্যই যোষেফের পরিবার থেকে আমিই প্রথম আপনার সঙ্গে দেখা করতে এসেছি।”

২১. কিন্তু সরূয়ার পুত্র অবীশয় বলল, “আমরা শিমিয়িকে অবশ্যই হত্যা করব কারণ প্রভুর দ্বারা অভিষিক্ত রাজাকে সে অভিশাপ দিয়েছিল।”

২২. দায়ূদ বললেন, “সরূয়ার পুত্র, তোমার কি ব্যাপার বলত, যে তুমি আমার বিরুদ্ধাচরণ করছ? ইস্রায়েলে কাউকে মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হবে না। আজ আমি জানি যে আমি সমগ্র ইস্রায়েলের রাজা।”

২৩. তখন রাজা শিমিয়িকে বললেন, “তোমাকে হত্যা করা হবে না।” রাজা শিমিয়ির কাছে প্রতিজ্ঞা করলেন যে তিনি নিজে শিমিয়িকে হত্যা করবেন না।*

মফীবোশৎ দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে গেল

২৪. শৌলের বড় নাতি মফীবোশৎ রাজা দায়ূদের সঙ্গে দেখা করতে এল। রাজা জেরুশালেম ত্যাগ করা থেকে নিশ্চিন্তে ফিরে আসা পর্যন্ত মফীবোশৎ তার পায়ের যত্ন নেয় নি, দাড়ি কামায়নি এমনকি কাপড়ও ধোয় নি।

২৫.  মফীবোশৎ যখন জেরুশালেমে রাজার সঙ্গে দেখা করল তখন রাজা বললেন, “যখন আমি জেরুশালেম থেকে চলে গেলাম তখন তুমি আমার সঙ্গে গেলে না কেন?”

২৬. মফীবোশৎ উত্তর দিল, “হে আমার মনিব, আমার দাস আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। আমি পঙ্গু তাই আমি আমার দাস সীবঃকে বলেছিলাম, ‘আমার গাধার পিঠে একটা জিন পরিয়ে দাও। আমি তাতে চড়ে রাজার সঙ্গে যাব।

২৭. ”কিন্তু আমার দাস আমার সঙ্গে প্রতারণা করেছে। সে একাই আপনার কাছে এসেছে এবং আমার সম্পর্কে আপনার কাছে নিন্দাবাদ করেছে। হে আমার প্রভু, আপনি ঈশ্বরের দূতের মত। যা ভালো মনে হয় আপনি তাই করুন।

২৮. আপনি আমার দাদুর পরিবারের সব লোককেই মেরে ফেলতে পারতেন। কিন্তু আপনি তা করেন নি। বরং আপনি আমাকে তাদের সঙ্গে স্থান দিয়েছেন যারা আপনার সঙ্গে একাসনে বসে আহার করে। অতএব কোন বিষয়েই রাজার কাছে কোন অভিযোগ করার অধিকার আমার নেই।”

২৯. রাজা মফীবোশতকে বললেন, “তোমার সমস্যা সম্পর্কে আর বেশী কিছু বল না। আমি স্থির করছিঃ  তুমি এবং সীবঃ জমি ভাগ করে নেবে।”

৩০. মফীবোশৎ রাজাকে বললেন, “হে আমার রাজা, হে প্রভু, আপনি যে নির্বিঘ্নে ঘরে ফিরে এসেছেন এই আমার কাছে যথেষ্ট। জমি সীবঃকেই নিতে দিন।”

দায়ুদ বর্সিপ্লয়কে তাঁর সঙ্গে যেতে বললেন

৩১. বর্সিপ্লয় গিলিয়দীয় রোগলীম থেকে ফিরে এল। সে দায়ূদের সঙ্গে যৰ্দ্দন নদীর ধার পর্যন্ত এল। সে নদীর অপর পার পর্যন্ত রাজাকে পাহারা দিয়ে নিয়ে যাবে।

৩২. বর্সিপ্লয় অত্যন্ত বৃদ্ধ ছিল। তার বয়স ৮০ বছর। দায়ূদ যখন মহনয়িমে ছিলেন তখন সে তাকে খাবার এবং অন্যান্য দ্রব্যাদি দিয়েছিল। বর্সিপ্লয় এই সব করতে পেরেছিল কারণ সে বেশ ধনী ব্যক্তি ছিল।

৩৩. দায়ূদ বর্সিপ্লয়কে বললেন, “আমার সঙ্গে নদীর অন্য পাড়ে এস। যদি তুমি আমার সঙ্গে জেরুশালেমে থাক আমি তোমার বিষয়ে যত্ন নেব।”

৩৪. কিন্তু বর্সিপ্লয় রাজাকে বলল, “আপনি কি জানেন আমার বয়স কত?

৩৫. আমার বয়স ৮০ বছর। আমি যথেষ্ট বৃদ্ধ, তাই ভাল-মন্দ কোনটাই বলা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। এমনকি আমার পান-আহারের স্বাদ কি তা বলাও আমার পক্ষে অসম্ভব। নারী বা পুরুষের গানের সুরও আমি আর শুনতে পাই না। কেন আপনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে গিয়ে সমস্যায় পড়তে চাইছেন?

৩৬. আপনি আমাকে যা যা দিতে চান তার কিছুরই আমার প্রয়োজন নেই। আমি আপনার সঙ্গে যদ্দন নদী পার হয়ে যাব।

৩৭. দয়া করে আমাকে বাড়ী ফিরে যেতে দিন। তাহলে আমি আমার নিজের শহরে মরতে পারব এবং আমার মাতা-পিতার কবরেই সমাধিপ্রাপ্ত হতে পারব। হে আমার মনিব এবং রাজা, কিম্হম আপনার ভৃত্য হতে পারে। তাকে আপনার সঙ্গে যেতে দিন তার সঙ্গে আপনি যেমন খুশি ব্যবহার করবেন।”

৩৮. রাজা উত্তর দিলেন, “কিমহম আমার সঙ্গে ফিরে যাবে। তোমার জন্য আমি ওর প্রতি সদয় হব। তুমি যা বলবে তোমার জন্য আমি তাই করব।”

দায়ূদ ঘরে ফিরে গেলেন

৩৯. রাজা বর্সিপ্লয়কে চুমু খেলেন এবং আশীর্বাদ করলেন। বর্সিপ্লয় ঘরে ফিরে গেল। রাজা এবং তাঁর সব লোক নদী পার হয়ে গেল।

৪০. রাজা নদী পার হয়ে গিলে গেলেন। কিম্‌হম তাঁর সঙ্গে গেল। যিহুদার সব লোক এবং ইস্রায়েলের অর্ধেক লোক দায়ূদকে নদী পার করে নিয়ে গেল ।

ইস্রায়েলীয়দের সঙ্গে যিহুদার লোকেরা তর্ক করল

৪১. সব ইস্রায়েলীয় রাজার কাছে এল। তারা রাজাকে বলল, “আমাদের যিহূদাবাসী ভাইরা কেন আপনাকে চুরি করে আনল এবং আপনার লোকজন সহ আপনার পরিবারের সকলকে যদ্দন নদী পার করিয়ে নিয়ে এল। কেন?”

৪২. যিহুদার সব লোক ইস্রায়েলীয়দের উত্তর দিল, “কারণ রাজা আমাদের নিকট আত্মীয়। রাজার ব্যাপারে কেন তোমরা আমাদের প্রতি ক্রুদ্ধ হচ্ছ? আমরা রাজার পয়সায় কিছু খাই নি। রাজা আমাদের কোন উপহারও দেন নি।”

৪৩. ইস্রায়েলীয়রা উত্তর দিলো, “রাজার ওপর আমাদের এক দশমাংশের অধিকার আছে। তাই রাজার প্রতি তোমাদের থেকে আমাদের দাবী বেশী। কিন্তু তোমরা আমাদের দাবী উপেক্ষা করছ। কেন? আমরাই তারা যারা প্রথম আমাদের রাজাকে ফিরিয়ে আনবার কথা জিজ্ঞাসা করেছিলাম।” কিন্তু যিহুদার লোকেরা ইস্রায়েলীয়দের খুব কর্কশভাবে উত্তর দিল। তারা, ইস্রায়েলীয়রা যা বলেছিল তার চেয়েও বেশী কর্কশ ছিল।

error: Content is protected !!