দায়ূদ সম্পর্কে অহীথোফলের উপদেশ

১. অহীথোফল অবশালোমকে বলল, “আমাকে ১২,০০০ লোক বেছে নিতে দাও। আজ রাতেই আমি দায়ূদকে তাড়া করব।

২. যখন সে ক্লান্ত ও দুর্বল হয়ে যাবে তখন আমি তাকে ধরব। আমি তাকে ভীত ও আতঙ্কিত করে তুলব। তার সব লোকেরা দৌড়ে পালিয়ে যাবে। কিন্তু আমি শুধু রাজ। দায়ূদকেই হত্য৷ করব।

৩. তারপর আমি সব লোককে তোমার কাছে ফিরিয়ে নিয়ে আসব। যদি দায়ূদ মারা যায়, তাহলে সব লোকের৷ শান্তিতে ফিরে আসবে।” 

৪. অবশালোম এবং ইস্রায়েলের সব নেতার কাছেই এই প্রস্তাব ভাল বলে মনে হল।

৫. কিন্তু অবশালোম বলল, “এখন আমি অৰ্কীয় হুশয়কে ডাকি। সে কি বলে তাও আমি শুনতে চাই।”

হুশয় অহীথোফলের প্রস্তাব পণ্ড করে দিল

৬. হুশয় অবশালোমের কাছে এল। অবশালোম হুশয়কে “অহীথোফল এই পরামর্শ দিয়েছে। আমরা কি এটাই অনুসরণ করব? তা যদি না হয় তাহলে বল কি করা উচিৎ?”

৭. হুশয় অবশালোমকে বলল, “অহীথোফলের উপদেশ এই সময়ে উপযোগী নয়।” 

৮. হুশয় আরও বলল, “তুমি জানো যে তোমার পিতা এবং তার লোকেরা খুবই শক্তিশালী। বাচ্চা কেড়ে নিলে বুনো ভাল্লুক যেমন হিংস্র হয়ে ওঠে ওরাও তেমনিই ভয়ঙ্কর। তোমার পিতা একজন দক্ষ যোদ্ধা। তিনি কখনও সারারাত ওই লোকেদের সঙ্গে থাকবেন না।

৯. সম্ভবতঃ তিনি কোন গুহা বা অন্য কোথাও ইতিমধ্যে লুকিয়ে পড়েছেন। যদি তোমার পিতা তোমার লোকেদের আগে আক্রমণ করে, লোকে এই সংবাদ জানতে পারবে। এবং তারা ভাববে, ‘অবশালোমের লোকেরা হেরে যাচ্ছে !’

১০. তখন সিংহের মত সাহসী যোদ্ধারাও ভীত ও আতঙ্কিত হবে। কেন? কারণ গোট৷ ইস্রায়েল এই কথা জানে যে তোমার পিতা শক্তিশালী যোদ্ধা এবং তাঁর লোকেরা অত্যন্ত সাহসী।

১১. আমার প্রস্তাব হল এইঃ তুমি অবশ্যই দান থেকে বের-শেবা পর্যন্ত সব ইস্রায়েলীয়দের একসঙ্গে জড়ো করবে। সমুদ্রে যেমন অগুনতি বালি থাকে সেরকমই সেখানে অনেক লোক হবে। তারপর, তুমি নিজে অবশ্যই যুদ্ধে যাবে।

১২. দায়ূদ যেখানে লুকিয়ে আছে সেখানেই আমরা তাকে ধরব। অগণিত সৈন্যসহ আমরা দায়ূদকে আক্রমণ করব। ভূমিকে ঢেকে দেওয়া অসংখ্য শিশির কণার মত আমরা ওদের ঢেকে দেব। আমরা দায়ূদ এবং তাঁর লোকেদের হত্যা করব। কাউকে জীবিত ছাড়া হবে না।

১৩. যদি দায়ূদ নগরের ভিতরে পালিয়ে যান সকল ইস্রায়েলীয় মিলে দড়ি দিয়ে আমরা নগরের প্রাচীর ভেঙ্গে দেব। তাদের সবাইকে আমরা উপত্যকায় টেনে নামাব। নগরের একটা ছোট্ট পাথর পর্যন্ত আমরা রাখতে দেব না।”

১৪. অবশালোম এবং সকল ইস্রায়েলীয় বলল, “অৰ্কীয় হূশয়ের উপদেশ অহীথোফলের উপদেশের চেয়ে ভাল।” তারা একথা বলল কারণ তা ছিল প্রভুর পরিকল্পনা। অবশালোমকে শাস্তি দেবার জন্য প্রভু অহীথোফলের সৎ উপদেশকে বিফল করার ফন্দি এঁটেছিলেন।

হুশয় দায়ূদকে একটি সাবধানবাণী পাঠাল

১৫. ঐসব কথা হুশয় সাদোক এবং অবীয়াথর এই দুই যাজকদের বলল। অহীথোফল অবশালোম এবং ইস্রায়েলের নেতাদের যে পরামর্শ দিয়েছে হুশয় তাও বলল। হুশয় নিজে যা যা পরামর্শ দিয়েছিল তাও তাদের বলল। হুশয় বলেছিল,

১৬. খুব শীঘ্র দায়ূদকে এই খবর দাও। তাঁকে বল, যেখান দিয়ে নদী পার হয়ে লোকে মরুভূমিতে ঢোকে তিনি যেন সেখানে আজ রাতে না থাকেন। তাকে এখুনি যদন নদী পার হয়ে যেতে বল। যদি তিনি নদী পার হয়ে চলে যান তবে রাজা এবং তাঁর লোকেরা ধরা পড়বে না।”

১৭. যাজকের দুই পুত্র যোনাথন এবং অহীমাস ঐন- রোগেলে অপেক্ষা করছিল। তারা চাইত না কেউ যেন  তাদের শহরে প্রবেশ করতে দেখুক। শুধুমাত্র এক দাসী এসে তাদের সব খবরাখবর দিয়ে যেত। তারপর যোনাথন এবং অহীমাস রাজা দায়ূদের কাছে গিয়ে সব কথা বলত।

১৮. কিন্তু এক বালক যোনাথন এবং অহীমাসকে দেখে ফেলল। এই ঘটনা অবশালোমকে বলার জন্য বালকটি ছুটে চলে গেল। যোনাথন এবং অহীমাসও তাড়াতাড়ি দৌড়ে পালাল এবং বহুরীমে এক লোকের বাড়ীতে এসে উপস্থিত হল। লোকটার বাড়ীর বাইরের প্রাঙ্গণে একট কুয়ো ছিল। যোনাথন এবং অহীমাস সেই কুয়োতে নেমে গেল।

১৯. সেই লোকটির স্ত্রী কুয়োর ওপর একটা আচ্ছাদন রেখে দিল। তারপর সে সেই কুয়োর ওপর গমের বীজ বিছিয়ে দিল, তাই সেটি শস্যের স্তূপের মতই দেখতে লাগছিল। তাই লোকেরা জানতে পারল না যে যোনাথন এবং অহীমাস তার মধ্যে লুকিয়ে রয়েছে। 

২০. অবশালোমের ভৃত্যরা সেই বাড়ীতে এসে সেই মহিলাকে জিজ্ঞাসা করল, “অহীমাস এবং যোনাথন কোথায়?”  মহিলা অবশালোমের ভৃত্যদের বললো, “ইতিমধ্যেই তারা নদী পার হয়ে গেছে।”  তখন অবশালোমের ভৃত্যরা যোনাথন ও অহীমাসের সন্ধানে চলে গেল। কিন্তু তারা তাকে খুঁজে পেল না। অতঃপর অবশালোমের ভৃত্যরা জেরুশালেমে ফিরে এল।

২১. অবশালোমের ভৃত্যরা চলে যাওয়ার পর, যোনাথন ও অহীমাস কুয়ো থেকে বাইরে বেরিয়ে এল। তারা রাজা দায়ূদের কাছে গেল এবং দায়ূদকে বললো, “খুব তাড়াতাড়ি নদী পার হয়ে চলে যান। অহীথোফল আপনার বিরুদ্ধে এই সব ষড়যন্ত্র করেছে।”

২২. তখন দায়ূদ এবং তাঁর লোকেরা যদ্দন নদী পার হয়ে গেল। সূর্যোদয়ের আগেই দায়ূদের সব লোকেরা যদন নদী পার হয়ে গেল।

অহীথোফল আত্মহত্যা করল

২৩. অহীথোফল দেখল যে তার উপদেশ ইস্রায়েলীয়রা গ্রহণ করেনি। সে তার গাধার পিঠে জিন চড়িয়ে তার নিজের নগরে ফিরে এল। তার পরিবারের যথাবিহিত ব্যবস্থা করে সে গলায় দড়ি দিল। অহীথোফল মারা গেলে লোকেরা তাকে তার পিতার কবরেই কবর দিল।

অবশালোম যৰ্দ্দন নদী পার হল

২৪. দায়ূদ মহনয়িমে এলেন। অবশালোম এবং তার সঙ্গে যে সব ইস্রায়েলীয়রা ছিল তারা যৰ্দ্দন নদী পার হয়ে গেল।

২৫. অবশালোম অমাসাকে তার সৈন্যদলের অধিনায়করূপে নিযুক্ত করল। অমাসা যোয়াবের জায়গা নিল। অমাসা ছিল যিথ্র, একজন ইস্মায়েলীয়* ছেলে। অমাসার মায়ের নাম অবীগল। সে সরূয়ার বোন নাহশের মেয়ে। সরূয়া ছিল যোয়াবের মা।

২৬. অবশালোম এবং ইস্রায়েলীয়রা গিলিয়দে তাঁবু ফেলে অবস্থান করল।

শোবি, মাখীর এবং বল্লিয়

২৭. দায়ূদ মহনয়িমে এলেন। শোবি, মাখীর এবং বসিল্লয় সেইখানেই ছিল। শোবি অম্মোনদের রব্ব৷ শহরের নাহশের পুত্র। মাখীর হল লোদবার নিবাসী অম্মীয়েলের পুত্র। আর বসিলয় গিলিয়দের, রোগলীমের থেকে এসেছিল।

২৮-২৯. সেই তিনজন লোক বলল, “মরুভূমিতে যে লোকেরা রয়েছে তারা ক্লান্ত, ক্ষুধার্ত এবং তৃষ্ণার্ত।” তাই তারা দায়ূদের জন্য এবং তাঁর সঙ্গে যে লোকেরা ছিল তাদের জন্য অনেক কিছু জিনিস এনেছিল। তারা বিছানা, এবং অন্যান্য পাত্রাদি এনেছিল। এছাড়াও তারা গম, যব, ময়দা, ভাজা শস্য, বীন, শাক, শুকনো বীজ, মধু, মাখন, মেষ এবং পনীর এনেছিল।

error: Content is protected !!