যোয়াব দায়ূদের কাছে এক জন জ্ঞানী মহিলাকে পাঠালেন

১. সরূয়ার পুত্র যোয়াব জানতেন যে রাজা দায়ূদ প্রচণ্ডভাবে অবশালোমের অভাব বোধ করছেন।

২. যোয়াব তকোয়েতে সেখান থেকে একজন জ্ঞানী মহিলাকে আনতে আদেশ দিয়ে বার্তাবাহকদের পাঠালেন। যোয়াব সেই জ্ঞানী মহিলাকে বললেন, “প্রচণ্ড দুঃখের ভান কর এবং বিমর্ষ লাগে এমন জামাকাপড় পর। একদম সাজ-গোজ করো না। এমন নিপুণ অভিনয় করবে যেন দেখে মনে হয়, তুমি দীর্ঘদিন ধরে কাঁদছ।

৩. রাজার কাছে যাও এবং তাকে ঠিক এ কথাগুলোই বলবে যা আমি তোমায় শিখিয়ে দিচ্ছি।” তারপর যোয়াব, সেই জ্ঞানী মহিলাটিকে কি কি বলতে হবে তা বলে দিলেন।

৪. তখন তকোয়ের সেই মহিলা রাজার সঙ্গে কথা বলল। মাটির দিকে মাথা নত করে সে বললো, “রাজা, দয়া করে আমায় বাঁচান !”

৫. রাজা দায়ূদ তাকে বললেন, “তোমার সমস্যা কি?” মহিলা বলল, “আমি একজন বিধবা। আমার স্বামী মারা গেছে।

৬. আমার দুটি পুত্র ছিল। তারা মাঠে লড়াই করছিল। তাদের বাধা দেবার মত কেউ ছিল না। আমার এক পুত্র আর এক পুত্রকে হত্যা করেছে।

৭. এখন গোট৷ পরিবার আমার বিরুদ্ধে। তারা আমাকে বলল, ‘সেই পুত্রকে নিয়ে এসো যে তার ভাইকে মেরেছে- আমরাও তাকে মেরে ফেলবো। কেন? কারণ সে তার ভাইকে হত্যা করেছে।’ আমার আগুনের শেষ স্ফুলিঙ্গের মত যদি ওরা আমার পুত্রকে মেরে ফেলে তাহলে সেই আগুন জ্বলে শেষ হয়ে যাবে। সেই একমাত্র জীবিত সন্তান যে তার পিতার সম্পত্তির উত্তরাধিকারী হবে। অন্যথায়, আমার স্বামীর সম্পত্তি ভুল হাতে পড়বে এবং তার নাম সেই জমি থেকে মুছে যাবে।”

৮. তখন রাজা সেই মহিলাকে বললেন, “বাড়ী চলে যাও, আমি তোমার বিষয়গুলি দেখব।”

৯. তকোয়ের মহিলা রাজাকে বলল, “আমার মনিব এবং রাজা, সব দোষ আমার ওপর এবং আমার পরিবারের ওপর আসুক। আপনি এবং আপনার রাজত্ব নির্দোষ হোক।”

১০. রাজা দায়ূদ বললেন, “কেউ যদি তোমাকে খারাপ কিছু বলে, তাকে আমার কাছে নিয়ে এসো। সে দ্বিতীয়বার তোমাকে জ্বালাতন করবে না।”

১১. মহিলা বলল, “আপনার প্রভু ঈশ্বরের নামে শপথ করে বলুন যে আপনি সেই সব লোকেদের বাধা দেবেন। তারা আমার পুত্রকে তার ভাইকে হত্যা করার জন্য শাস্তি দিতে চাইছে। আপনি শপথ করুন যে ঐ লোকেদের আপনি আমার পুত্রকে হত্যা করতে দেবেন না । ” দায়ূদ বললেন, “অস্তিত্বময় প্রভুর নামে শপথ নিয়ে বলছি, কেউ তোমার পুত্রের ক্ষতি করতে পারবে না। এমনকি তার মাথার একট৷ চুলও মাটিতে পড়বে না।”

১২. মহিলা বলল, “হে আমার মনিব এবং রাজা, আপনাকে আর কয়েকটা কথা বলতে দিন।” রাজা বললেন, “বল।”

১৩. তারপর সেই মহিলা বলল, “কেন আপনি ঈশ্বরের লোকেদের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছিলেন? হ্যাঁ, যখন আপনি এই ধরণের কথাবার্তা বলেন তখন আপনি বুঝিয়ে দেন যে আপনি অপরাধী। কেন? কারণ যে সন্তানকে আপনি ঘর থেকে বেরিয়ে যেতে বাধ্য করেছেন, তাকে আপনি ঘরে ফিরিয়ে আনেন নি।

১৪. আমরা প্রত্যেকেই একদিন না একদিন মরব। আমরা প্রত্যেকেই মাটিতে ফেলে দেওয়া জলের মত হব। সেই জলকে কেউই পুনরায় মাটি থেকে তুলে আনতে পারে না। আপনি জানেন ঈশ্বর মানুষকে ক্ষমা করেন। যারা নিরাপত্তার জন্য পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়, ঈশ্বর তাদের জন্য পরিকল্পনা করেছিলেন। ঈশ্বর তাঁর কাছ থেকে পালিয়ে যাবার জন্য কাউকে বাধ্য করেন না।

১৫. হে আমার মনিব এবং রাজা এই কথাই আমি আপনাকে বলতে এসেছি। কেন? কারণ লোকেরা আমাকে ভয় পাইয়ে দিয়েছে। আমি নিজেকেই বললাম, ‘আমি রাজার সঙ্গে কথা বলব। হয়তো রাজা আমাকে সাহায্য করতে পারবেন।

১৬. রাজা আমার কথা শুনবেন এবং যারা আমাকে ও আমার পুত্রকে মেরে ফেলতে চাইছে তাদের হাত থেকে আমাদের রক্ষা করবেন। ঈশ্বর আমাদের যা দিয়েছিলেন, সেই লোকটি ত৷ পাওয়৷ থেকে আমাদের বঞ্চিত করতে চায়।

১৭. আমি জানি আমার মনিব রাজার কথা আমাকে স্বস্তি দেবে, কারণ আপনি ঈশ্বরের দূতের মত। আপনি ভাল এবং মন্দ দুটো বিষয়েই অবগত আছেন এবং প্রভু, আপনার ঈশ্বর আপনার সঙ্গেই উপস্থিত আছেন।”

১৮. রাজা দায়ূদ প্রত্যুত্তরে সেই মহিলাকে বললেন, “আমি যে প্রশ্ন করব তুমি অবশ্যই তার উত্তর দেবে।” মহিলাটি বলল, “হে গুরু, আমার রাজা, আপনার প্রশ্ন করুন।”

১৯. রাজা দায়ূদ জিজ্ঞাসা করলেন, “যোয়াব কি তোমাকে এই সব কথা বলতে বলেছে?” মহিলা উত্তর দিল, “আপনার দিব্যি হে আমার মনিব রাজা, আপনি ঠিকই বলেছেন। আপনার আধিকারিক যোয়াবই আমাকে এই সব কথা আপনাকে বলতে বলেছে। 

২০. যোয়াব এই কাজগুলি করেছে যাতে আপনি এই ঘটনাগুলিকে অন্যভাবে দেখতে পান। হে আমার মনিব, আপনি ঈশ্বরের দূতের মতই জ্ঞানী। এই পৃথিবীতে যা যা ঘটে আপনি তার সবই জানেন।”

অবশালোম জেরুশালেমে ফিরে এল

২১. রাজা যোয়াবকে বললেন, “দেখ, আমি যা প্রতিজ্ঞা করেছি, আমি তাই করব। তরুণ অবশালোমকে ফিরিয়ে নিয়ে এস।”

২২. যোয়াব নত হলেন এবং রাজা দায়ূদকে আশীর্বাদ করলো। তিনি রাজাকে বললেন, “আজ আমি জানতে পারলাম আপনি আমার প্রতি প্রসন্ন, কারণ আমি যা চেয়েছিলাম আপনি তাই করেছেন।”

২৩. তারপর যোয়াব উঠে পড়লেন এবং গশূরে গিয়ে অবশালোমকে জেরুশালেমে নিয়ে এলেন।

২৪. কিন্তু রাজা দায়ূদ বললেন, “অবশালোম তার নিজের বাড়ীতে ফিরে যেতে পারে। সে আমার সঙ্গে দেখা করতে পারবে না।” তখন অবশালোম নিজের বাড়ীতে ফিরে গেল। অবশালোম রাজার কাছে দেখা করতে যেতে পারল না।

২৫. লোকে অবশালোমের সৌন্দর্যের প্রশংসা করত। অবশালোমের মত সুদর্শন গোটা ইস্রায়েলে কেউ ছিল না ৷ পা থেকে মাথা পর্যন্ত অবশালোমের কোথাও কোন খুঁত ছিল না।

২৬. বছরের শেষে অবশালোম তার মাথা থেকে চুল কেটে ফেলত এবং সেই চুল ওজন করত। সেই চুল ওজনে প্রায় আড়াই সেরের মত হত। ”অবশালোমের তিনটি পুত্র এবং একটি কন্যা ছিল। তার কন্যার নাম ছিল তামর। তামর অতীব সুন্দরী ছিল।

অবশালোম যোয়াবকে তার সঙ্গে দেখা করতে বাধ্য করল

২৮. অবশালোম পুরো দু বছর জেরুশালেমে ছিল। এই সময়ে রাজা দায়ূদের সঙ্গে তার দেখা করার অনুমতি ছিল না।

২৯. অবশালোম যোয়াবের কাছে বার্তাবাহক পাঠালো। বার্তাবাহক যোয়াবকে বললো অবশালোমকে রাজার কাছে পাঠাতে। কিন্তু যোয়াব অবশালোমের কাছে এলেন না। দ্বিতীয়বার অবশালোম খবর পাঠাল। এবারও যোয়াব এলেন না।

৩০. তখন অবশালোম তার ভৃত্যদের বলল, “দেখ, আমার জমির পাশেই যোয়াবের জমি। সে তার ক্ষেতে যব ফলিয়েছে। তোমরা গিয়ে আগুন ধরিয়ে দাও।” তখন অবশালোমের ভৃত্যরা গিয়ে যোয়াবের জমিতে আগুন ধরিয়ে দিল।

৩১. যোয়াব অবশালোমের বাড়ী এলেন। যোয়াব অবশালোমকে বললেন, “কেন তোমার ভৃত্যরা আমার জমিতে আগুন দিয়েছে ?”

৩২. অবশালোম যোয়াবকে বললো, “আমি তোমাকে একটা খবর পাঠিয়েছিলাম, এখানে আসতে বলেছিলাম। আমি তোমাকে রাজার কাছে পাঠাতে চেয়েছিলাম। আমি চেয়েছিলাম তুমি তাঁকে জিজ্ঞাসা কর কেন তিনি আমাকে গশূর থেকে ঘরে ফিরে আসতে বলেছিলেন। যেহেতু আমার তাঁর সঙ্গে দেখা করার অনুমতি নেই, কাজেই আমার পক্ষে সেখানে থেকে যাওয়াই ভাল হোত। এখন আমাকে রাজার সঙ্গে দেখা করতে দাও। যদি আমি কোন অন্যায় করে থাকি, তবে তিনি আমায় হত্যা করতে পারেন !”

রাজা দায়ূদের সঙ্গে অবশালোম দেখা করলেন

৩৩. যোয়াব রাজার কাছে এসে অবশালোমের সব কথা বললেন। রাজা অবশালোমকে ডেকে পাঠালেন। অবশালোম রাজার কাছে এলো। রাজার সামনে এসে অবশালোম মাটিতে নত হয়ে রাজাকে প্রণাম করল এবং রাজা অবশালোমকে চুম্বন করলেন।

error: Content is protected !!