খবরটা পেলাম ২২ অক্টোবর ২০০২। খবরটা দিলেন ই টি ভি’র সাংবাদিক দীপালি মিত্র। “প্রবীর দা, শুনেছেন, চেতলা রোডে’র একটা বাড়ির মাটির লক্ষ্মীপ্রতিমা আপনা-আপনি কালী হয়ে গেছেন ?”
“কালী হয়ে গেছেন মানে? প্যাঁচা কি শিব হয়ে গেছেন? আর লক্ষ্মী জিভ বের করে দিগম্বরী ?”
“না তা নয়। তবে দুধে আলতা রং-এর লক্ষ্মীর মূর্তিটি না কী কালো হয়ে গেছে। আপনাকে আমাদের সঙ্গে একটু যেতে হবে।”
বললাম, “আজ তো যেতে পারছি না বোন। আজই আমি মালদায় রওনা হব। ওখান থেকে দিনাজপুর। অতএব মাপ করো।”
“কিছু অসুবিধে হবে না আপনার। আপনাকে বাড়ি থেকে তুলে নিচ্ছি।”
এড়াবার শেষ চেষ্টা করেও এড়াতে পারলাম না। তবু সময় যতটা সম্ভব বাঁচাতে বললাম, “আমি চান করেই রেডি হয়ে বেরোচ্ছি। আপনাদের দেবীনিবাস পর্যন্ত আসতে হবে না। লেকটাউন ভি আই পি রোডের মোড়ে আমার গাড়ি থাকবে।”
লেকটাউন থেকে ই টি ভি’র গাড়িতে সওয়ার হলাম। সাংবাদিক দীপালি পাঁচ ফুট ছ’ইঞ্চির ঝকঝকে চেহারার তরুণী। সঙ্গে তরুণ ক্যামেরাম্যান অরিৎ বোস ও একজন লাইটম্যান। দীপালি জানতে চাইছিলেন, ঘটনাটা শোনার পর আমার কী মনে হচ্ছে? কীভাবে লক্ষ্মীর দুধে-আলতা রং কালো হল? ওরা কি রাতারাতি মূর্তিকে কালো রং করে দিয়েছে?
বললাম, “দেখিইনি, অতএব আন্দাজে কী বলি বল? আগে যাই। দেখি, তারপর মতামত দেব।”
ছোট্ট করে ‘হোমওয়ার্ক’ সেরে নিলাম। ই টি ভি নিউজ টিম যাবে তাদের মতো। ওঁরা ছবি তোলা, ইন্টারভিউ নেওয়ার কাজ শুরু করে দেবেন। আমি ঢুকব মিনিট পাঁচ-দশ পরে।
চেতলা ব্রিজের কাছে ‘লক্ষ্মী-কালী’র খবর জিজ্ঞেস করতেই রাস্তা বাতলে দিলেন স্থানীয় মানুষ। যত এগোচ্ছি, লোকের ভিড় বাড়ছে। প্রত্যেকেরই গন্তব্য পথই যে একই, বুঝতে অসুবিধে হল না। দ্রুত পায়ে চলা উত্তেজিত মানুষরাই আমাদের পথ চিনিয়ে দিচ্ছিলেন।
৮৫ নম্বর চেতলা রোড আর মিনিট চারেকের পথ—এটা শুনে গাড়ি থামিয়ে আমি নেমে পড়লাম একা। আমার পরনে কালচে-নীল জিনসের পাঞ্জাবি। ঝুল প্রায় গোড়ালি পর্যন্ত । গলায় রুদ্রাক্ষের মালা। কপালে গোলা সিঁদুরের লম্বা টিপ। প্যান্টের রংও কালচে নীল। গাড়ি এগোল দীপালি, অরিৎদের নিয়ে।
৮৫ নম্বর চেতলা রোডে যখন পৌঁছলাম তখন বাড়ির সামনে কয়েকশো নারী পুরুষের ভিড়। এলাকাটা ঘিঞ্জি, নিম্নবিত্তদের বাস। লাইন সামলাতে জনা কুড়ি পঁচিশ কিশোর ও যুবক নেমে পড়েছে। অনেকের হাতে-ই ডান্ডা, মুখে চিৎকার। ওরা লাইন ছাড়া কাউকেই ‘লক্ষ্মী-কালী’র বাসার দিকে এগোতে দিচ্ছে না।
কব্জিতে ১৪ ক্যারেট গোল্ডের রিস্টওয়াচ, গলায় ঝোলানো মোবাইল, চোখে গোল্ড-প্লেটেড চশমা পরিহিত ‘তান্ত্রিক’ আমি ভলেন্টিয়ারদের মুখোমুখি হলাম। আমার শরীরী ভাষা যা বোঝাতে চাইছিল, তা বোঝাতে পেরেছিল। আমাকে সসম্ভ্রমে লক্ষ্মী-কালীর কাছে নিয়ে যাওয়ার দায়িত্ব পেতে কাড়াকাড়ি লেগে গিয়েছিল বললে একটুও বাড়াবাড়ি করা হবে না।
একটা দশ বাই দশ ঘর। ঘরে এক কোণে হাত-খানেক লম্বা লক্ষ্মী-মূর্তি। মুখের রঙ কালো। ঘট-ফুল-মালা-চাঁদমালা – ধানের শিষের ভিড় মায়ের অন্যান্য অঙ্গ ঢেকে রেখেছে। ঘর তো নয়, যেন অফিস টাইমের ট্রেন কম্পার্টমেন্ট। মা লক্ষ্মীর সামনে একটা বড় কাঁসার থালা। তাতে উপছে পড়ছে খুচরো কয়েন, পাঁচ থেকে একশো টাকার নোট ।
রবিবার সন্ধ্যায় লক্ষ্মীপুজো হয়ে গেছে। সোমবার মূর্তির বিসর্জন দেবার কথা। অভাবনীয় কারণে বিসর্জন হয়নি। বরং আজও পুজো চলছে। রবিবারের পুরোহিত তানু চক্রবর্তী পুজো করছিলেন। তবে এখন লক্ষ্মীভাবে নয়, কালী হিসেবেই পুজো করছেন। ভিতরে ই টি ভি’র ক্যামেরা তখন ছবি তুলছে। শুনলাম, ঘণ্টা দু’য়েক আগে ‘খাস খবর’ ছবি তুলে গেছে। আলফা, আকাশবার্তাও নাকি এসেছিল। দৈনিক কাগজের মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, হিন্দি কোনও পত্রিকাই নাকি বাকি নেই। সব্বাই ঘুরে গেছে।
দীপালির প্রশ্নের জবাবে গৃহকর্তা দীপ ঘোষ জানালেন, গত শুক্রবার বেহালার ১৪ নম্বর বাস স্ট্যান্ডের সামনে থেকে মূর্তিটা কিনে এনেছেন। অনেক মূর্তিই ওখানে বিক্রি হয়েছিল। এই তল্লাটের মানুষরাই কিনেছেন। একই মাটি, একই রঙে তৈরি মূর্তি। কিন্তু আর কারও বাড়ির মূর্তি পুজোর পর, প্রাণ প্রতিষ্ঠার পর নিজে থেকে কালী হয়ে গেছে—আমরা শুনিনি। আপনারা সাংবাদিক, আর কোথাও এমনটা ঘটলে নিশ্চয়ই খবর পেতেন। পেয়েছেন কি?”
দীপ সুন্দর গুছিয়ে কথা বলেন। হয় তো বেশ কিছু সাংবাদিকদের সাক্ষাৎকার দিতে দিতে বেশ তৈরি হয়ে গেছেন। দীপ রঙিন মাছের ব্যবসায়ী। পাশেই আর একটা আট বাই দশ ঘরে থাকেন দীপের দাদা সুদীপ। দু’জনেই জানালেন, এখন কালীমূর্তি হিসেবেই পুজো হচ্ছে। ঠাকুরের ইচ্ছে মেনেই হচ্ছে। পুরোহিত তানু চক্রবর্তীও মনে করেন—ঠাকুরের অপার লীলা। তিনি রং পালটে নির্দেশ দিয়েছেন কালীরূপে পুজো পেতে চান। প্রণামী ভালো-ই পড়ছে। প্রতি দু-এক ঘণ্টার মধ্যেই থালা উপচে পড়ছে। থালা ফাঁকা করে আবার রাখছে মা’য়ের কাছে। পরিবার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিয়েছে—জাগ্ৰত মা কালীকে বিসর্জন দেবেন না। প্রণামীর টাকাতেই মা’য়ের নিত্য সেবা হবে। মন্দির গড়ে তোলা হবে। পাড়ার ছেলেদের হাতেই ছেড়ে দেওয়া হবে ভক্তদের দেখাশোনার ভার। বিনিময়ে মা’র প্রণামী থেকে তাদের দেখভালের দায়িত্ব নেওয়া হবে।
স্বীকার করতেই হবে, পরিকল্পনায় মুনসিয়ানার ছাপ আছে তবে নতুনত্ব নেই। সব উপাসনা ধর্ম ব্যবসায়ীরা এভাবেই দিয়ে থুয়ে খায়। কালীঘাট থেকে দক্ষিণেশ্বর, চাকলা থেকে কচুয়া — সর্বত্র একই নিয়ম। ওসব জায়গায় হিস্সা বা তোলা নেন রাজনীতিকরাও। চেতলার দেবী লক্ষ্মী- কালী তীর্থক্ষেত্রেও এসবের কোনও ব্যতিক্রম হবে না।
পুরোহিত তানু চক্রবর্তীকে বললাম, “বাবা তোমার দ্বারা হবে না। মন এক জায়গায়, মন্ত্ৰ এক জায়গায়। মন না লাগিয়ে তোতা পাখির মতো মন্ত্র আউড়ে কিছুই হবে না। সরে এসো।
আমার মা’কে একটু দেখি।
আমার কথা শুনে তানু চক্রবর্তী মন্ত্র পড়া থামিয়ে দিয়ে সসংকোচে সরে বসলেন। আমি লক্ষ্মী মূর্তির কাছে বসলাম। মিনিটখানেক কি মিনিট দুয়েক মূর্তির দিকে তাকিয়ে রইলাম। তারপর ফুলের মালা, ফুলের স্তূপ, চাঁদ মালার ঘেরাটোপ থেকে মা’কে উদ্ধার করলাম। লক্ষ্মী-কালীর মূর্তি থেকে এ’সব যখন সরাচ্ছিলাম, তখন দীপের মা আমাকে বাধা দিতে কিছু বলতে যাচ্ছিলেন। সঙ্গে সঙ্গে তাঁকে থামিয়ে দিয়ে প্রচণ্ড বিরক্তির সঙ্গে বলেছিলাম, “আঃ চু-প।” উনি চুপ করে গিয়েছিলেন। এক ঘর দর্শক সব্বাই চুপ ।
এখন লক্ষ্মী-কালীর গলা ও বাঁ হাত দেখা যাচ্ছে। একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ করলাম। গলায় ও হাতে কেউ যেন তুলি দিয়ে কালচে রঙ বুলিয়ে দিয়েছে। গলা ও হাতের যে অংশে তুলির পোচ লাগেনি, সেই অংশগুলোর রঙ দুধে-আলতা। তবে কি গোটা ব্যাপারটাই মোটা দাগের কারচুপি? অত্যন্ত সহজ-সরল চুরি? কালো রঙ তুলিতে নিয়ে লাগিয়ে দেওয়া হয়েছে? হতেই পারে! আর এ’দিকে সব মিডিয়া কঠিন কঠিন কারণের কথা ভেবে ভেবে ক্লান্ত হয়ে পড়ছে— হতেই পারে?
ই টি ভি’র লাইটম্যানকে বললাম, “ভাই, আলোটা খুব কাছ থেকে মায়ের উপর ফোকাস করো। অরিৎকে বললাম, “আপনি মায়ের ছবি তুলতে থাকুন। পরে বুঝবেন, যা তুললেন, তা এক বিরল ঘটনা। ‘
আগে থেকেই আমার সঙ্গে ই টি ভি টিমের বোঝাপড়া ছিল, ঘরে ঢোকার পর আমার নির্দেশমতো কাজ করে যাবেন ওরা। অতএব লাইটম্যান মূর্তির ওপর আলো ফেলেই রইলেন। অরিৎ ছবি তুলতে লাগলেন।
আলোর ফোকাসিং আর ছবি তোলা শুরু হল। ছবি তোলা শুরু হবার ১৫ সেকেন্ডের মধ্যে আমার ডান হাতের একটা আঙুল ঠাকুরের গালে রাখলাম। আমি যতক্ষণ না ছবি তোলা বন্ধ করতে বললাম, ততক্ষণ ছবি উঠছিল। মিনিট দশেক ছবি তোলার পর আমার মনে হল, মা লক্ষ্মী-কালী আরও গভীর কালো বর্ণ ধারণ করেছেন। অরিৎকে বললাম, “আমি মা’য়ের গাল থেকে এবার আঙুল সরাচ্ছি। ক্লোজ আপে ছবিটা তুলুন।”
আঙুলটা সরাতেই অবাক কাণ্ড! আঙুলের আড়ালে থাকা গালের অংশ হালকা কালো, বাকি গালে কে যেন আর এক পোচ গভীর কালি বুলিয়ে দিয়ে গেছে। আঙুলের আড়ালের কল্যাণে দু-অংশের পার্থক্য অত্যন্ত স্পষ্ট। হাতের ও গলার কালো রং আরও কালো হয়েছে। গোলাপি অংশ গোলাপি-ই রয়ে গেছে।
আমার যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে। এ’বার মুখ খোলার পালা। আমি ইশারা করতে দীপালি হাতের ‘বুম’টা আমার মুখের কাছে ধরে জিজ্ঞেস করলেন, “সব দেখে আপনার কী মনে হল ?”
পকেটের রুমাল দিয়ে কপালের গোলা সিঁদুর মুছে ফেলে বললাম, “মূর্তির গায়ে সিলভার নাইট্রেট কোটিং লাগানো হয়েছে। টিভি’র তীব্র আলো ও তাপ মূর্তির গায়ে ফেলতেই সিলভার নাইট্রেট বিজ্ঞানের নিয়ম মেনেই আরও বেশি করে কালো হয়েছে। সিলভার নাইট্রেট ব্যবহার করে এক ধরনের রোদ-চশমা তৈরি হয়। স্বচ্ছ কাচ রোদে কালো হয়ে যায়। তবে এই ধরনের রোদ চশমা তৈরির সময় আরও অনেক জটিল প্রক্রিয়া থাকে। যার দরুন রোদে না থাকলে চশমার কাচ আবার স্বচ্ছ হয়ে যায়। ওই বিশেষ রোদ চশমার কাছে এভাবে তীব্র আলো ফেললে একই ভাবে কালো হয়।”
আমার চোখের চশমাটা খুলে চশমার এক দিকের কাচের সামান্য অংশ দু’আঙুলে চেপে লাইটম্যানকে চশমার উপর আলো ফেলতে বললাম। ফেললেন। মিনিট পাঁচেক পরে আঙুলের আড়াল সরাতেই দেখা গেল—সেই একই ম্যাজিক। কাচের ঢেকে রাখা অংশ স্বচ্ছ। বাকি কাচ কালো ।
দীপালি প্রশ্ন করলেন, “আপনি আগেই সন্দেহ করেছিলেন যে একটা গোলমাল আছে?” বললাম, “আমাকে যা দেখছেন, আমি তা নই। আমি তান্ত্রিক নই। ভারতীয় বিজ্ঞান ও যুক্তিবাদী
সমিতি, যার চালু নাম ‘যুক্তিবাদী সমিতি’, আমি তার সাধারণ সম্পাদক। এসেছিলাম খোলা মনে সত্যানুসন্ধানে। সত্য খুঁজে পেয়েছি। আপনাদের হাতে-কলমে প্রমাণ করে দেখালাম যে, লক্ষ্মীর গায়ের রং কালো হয়ে যাওয়ার মধ্যে কোনও ঈশ্বর মাহাত্ম্য নেই। হাজার হাজার মানুষের শ্রদ্ধা, ভক্তি ও বিশ্বাসকে নিয়ে কোনও প্রতারক ছেলে-খেলা করছে। কিছু তরুণ সব কাজ ফেলে ভক্তদের ভিড় সামলানোর দায়িত্ব পালন করছিল—মহৎ কাজ ভেবে। এইসব ছেলেদের ভালোমানুষির সুযোগ নিয়ে তাদের ধাপ্পা দেওয়া হয়েছে। দীপবাবুর উচিত এই ধাপ্পা এখুনি বন্ধ করা। মূর্তিটি বিসর্জন দেওয়া।”
পিন্ পড়লে তার শব্দ শোনা যায়, এমন অবস্থায় আমার বক্তব্য শেষ করলাম। লক্ষ্মী কালী’ নিয়ে যে প্রবল ধর্মীয় আবেগের হাওয়া উঠেছিল- তার অনেকটাই যে কেড়ে নিতে পেরেছি, বুঝতে অসুবিধে হল না। এও বুঝেছি আমার নামটা কারও কারও কাছে অপরিচিত নয়। দীপ ঘোষের কাছেও নয়।
স্তব্ধতা ভেঙে জড়তা নিয়ে ক্ষীণ প্রতিবাদ করলেন দীপ ঘোষের মা। তিনি অগোছালো ভাবে যা বললেন, তার মোদ্দা অর্থ হল—আমার কথা মেনে ঠাকুর বিসর্জন দেবেন না। দীপ প্রতারণা করেনি। সারা রাত ধরে নিজের চোখে ঠাকুরের রং পালটাতে দেখেছেন। আমি যা বলেছি, তা দিয়ে ঠাকুরের রং পালটানো যায়—এ’কথায় অবিশ্বাস করছেন না। কিন্তু ঠাকুরের কৃপায় যে রং পালটায়নি, এটা কি আমি প্রমাণ করতে পারব?
মা’র কথায় দীপ ও সুদীপ যেন কিছুটা জোর পেলেন। মা’র কথারই প্রতিধ্বনি শোনা গেল তাঁদের মুখে।
আমি এবার সাফ জানালাম, “চেতলাতেই ন্যাশনাল টেস্ট হাউজ রয়েছে। মূর্তির গায়ের কালচে রং-এর একটু চেঁচে সেখানে আমরা দিয়ে আসি চলুন। আমি যাব, আপনাদের পরিবারের দু-একজন যাবেন। তরুণ স্বেচ্ছাসেবক ভাইদের মধ্যে থেকে দু-তিনজন যাবেন। ই টি ভি-র টিম যাবে। সেখানে টেস্ট করতে দিলে আমাদের প্রত্যেকের কাছে স্পষ্ট হয়ে যাবে—সত্যিটা কী? অথবা ফরেনসিক ল্যাবে পরীক্ষা করালেও আমরা সত্যিটা জানতে পারব।”
আমার প্রস্তাব ঘরে পা রাখা ও উঁকি-ঝুঁকি মারা কিশোর-যুবকদের খুবই মনে ধরল। দীপ পরিবার যেন আমার প্রস্তাবে রাজি হয়ে যান, তার জন্যে চাপ সৃষ্টি করল।
বুজরুকির সংকটে ঘোষ পরিবার এককাট্টা হয়ে আমাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ালেন। আলাদা আলাদা হাঁড়িকে এক করল অর্থলোভ।
ওঁদের তর্ক-বিতর্কের মধ্যেই আমি ও ই টি ভি’র টিম ঘর থেকে বের হলাম। স্থানীয় যুবকদের ইচ্ছেকে মর্যাদা দিতে ওই বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে টি ভি ক্যামেরার সামনে দাঁড়িয়ে ঘোষণা করলাম—দীপ ঘোষ পরিবার মূর্তির গায়ের রং পরীক্ষা করলে সিলভার নাইট্রেটের উপস্থিতি পাওয়া যাবে-ই।
সিলভার নাইট্রেট না পাওয়া গেলে যুক্তিবাদী সমিতির পক্ষ থেকে দীপ ঘোষের পরিবারের হাতে তুলে দেব ২০ লক্ষ টাকা। যুক্তিবাদী সমিতি ভেঙে দেব।
সে’দিন সন্ধে থেকেই ই টিভি নিউজ অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে কয়েক বার প্রচার করল খবরটি। ধর্মের নামে বুজরুকির খবর চ্যালেঞ্জসহ সন্ধে থেকেই ঘণ্টায় ঘণ্টায় যে ভাবে ই টি ভি নিউজে প্রচারিত হতে থাকে, তাতে নড়েচড়ে বসে নিউ আলিপুর থানা। সে রাতেই দীপ ঘোষকে ডেকে পাঠানো হয় থানায়। পরের দিন-ই বাসার দরজায় দীপ ঘোষ নোটিস টাঙিয়ে দেন—’দৰ্শন বন্ধ’।
একটা বুজরুকি ব্যাবসা শুরুতেই বন্ধ করা গিয়েছিল প্রচার মাধ্যম ও স্থানীয় সৎ মানুষদের সহযোগিতায়। অত্যন্ত গুরুত্বের সঙ্গে খবরটি প্রচারিত হয়েছিল ‘দ্য টাইমস অফ ইন্ডিয়া’, ‘আজকাল’-সহ আরও কিছু দৈনিকে।
প্রথম খন্ড
অধ্যায়ঃ এক
♦ মার্কিন গডম্যান মরিস সেরুলোঃ একটি ইতিহাস
অধ্যায়ঃ দুই
♦ যোগী-জ্যোতিষী হরেকৃষ্ণবাবা !
অধ্যায়ঃ তিন
♦ পঞ্চাশ বছর আগের বালক ব্রহ্মচারী এবং…
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
♦ প্রদীপ আগরওয়ালের সম্মোহনে ‘পূর্বজন্মে’ যাত্রা
অধ্যায়ঃ নয়
অধ্যায়ঃ দশ
♦ বরানগরের হানাবাড়িঃ গ্রেপ্তার মানুষ- ভূত
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ এফিডেভিট করে ডাক্তারের প্রশংসাপত্র নিয়ে ওঝাগিরি !
অধ্যায়ঃ বারো
♦ ‘গ্যারান্টি চিকিৎসা’র নামে হত্যাকারীর ভূমিকায় সর্পবিদ হীরেন রায়
অধ্যায়ঃ তেরো
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
♦ সাঁইবাবার চ্যালেঞ্জঃ পেটে হবে মোহর !
অধ্যায়ঃ পনেরো
♦ হুজুর সাইদাবাদীঃ মন্তরে সন্তান লাভ !
অধ্যায়ঃ ষোলো
অধ্যায়ঃ সতেরো
♦ বিশ্বাসের ব্যবসায়ীরা ও নপুংসক আইন
দ্বিতীয় খন্ড
অধ্যায়ঃ এক
♦ খেজুর তলার মাটি সারায় সব রোগ
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !
অধ্যায়ঃ চার
♦ নাকালের দৈব-পুকুরঃ হুজুগের সুনামী
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ সায়েব যখন রেইকি করে রাঘব বোয়াল চামচা ঘোরে
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ লক্ষ্মীমূর্তি কালি হলেন আপন খেয়ালে
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
অধ্যায়ঃ নয়
♦ বিশ্বের বিস্ময় অলৌকিক মাতা জয়া গাংগুলী’র বিস্ময়কর পরাজয় এবং…
অধ্যায়ঃ দশ
♦ আই আই টিতে টেলিপ্যাথি দেখালেন দীপক রাও
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ জন্ডিস সারাবার পীঠস্থান ইছাপুর
অধ্যায়ঃ বারো
♦ মালপাড়ার পেশা দাঁতের পোকা বের করা
অধ্যায়ঃ তেরো
তৃতীয় খন্ড
অধ্যায়ঃ এক
♦ ওঝার ঝাড়ফুঁক আর টেরিজার লকেটে মণিহার রোগমুক্তিঃ কুসংস্কারের দু’পিঠ
অধ্যায়ঃ দুই
♦ ‘মেমারিম্যান’ বিশ্বরূপ-এর একটি বিশুদ্ধ প্রতারণা
অধ্যায়ঃ তিন
♦ কোটিপতি জ্যোতিষী গ্রেপ্তার হলেন
চতুর্থ খন্ড
অধ্যায়ঃ এক
♦ কিস্যা অক্টোপাস পল বিশ্বকাপ ফুটবলের ভবিষ্যৎ বক্তা
অধ্যায়ঃ দুই
♦ কিস্যা জ্যোতিষী বেজান দারওয়ালা
অধ্যায়ঃ তিন
♦ সাধারণ নির্বাচন ২০০৯ নিয়ে সব জ্যোতিষী ফেল
অধ্যায়ঃ চার
♦ মা শীতলার পায়ের ছাপ পুকুরঘাটেঃ রহস্যভেদ
অধ্যায়ঃ পাঁচ
অধ্যায়ঃ ছয়
অধ্যায়ঃ সাত
♦ অলৌকিক উপায়ে সন্তান দেন ডা. বারসি
অধ্যায়ঃ আট
♦ জ্যোতিষীর বাড়িতে অলৌকিক আগুন
অধ্যায়ঃ নয়
♦ সম্মিলিত দুর্নীতির ফসল ‘মোবাইলবাবা’
অধ্যায়ঃ দশ
“যুক্তিবাদীর চ্যালেঞ্জাররা” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ