রূৎ ও বোয়সের পরিচয়

১. বৈৎলেহমে একজন ধনী বাস করত। তার নাম বোয়স। ইলীমেলক পরিবারের অন্তর্গত নয়মীর ঘনিষ্ঠ আত্মীয়স্বজনদের মধ্যে বোয়স ছিল একজন।

২. একদিন রূৎ নয়মীকে বলল, “আমি ভাবছি, মাঠে মাঠে একটু ঘুরে বেড়াই। এমনি করেই হয়তো একদিন এমন কাউকে পাব যে আমায় দয়া করবে, যে আমায় মাঠের পড়ে থাকা শস্যের দানা তুলে নিতে বলবে।”

৩. নয়মী বলল, “আচ্ছা বাছা, যাও।” রূৎ মাঠের দিকে চলে গেল। যারা সেখানে শস্য কাটছে তাদের সঙ্গে সঙ্গে ঘুরল। ক্ষেতের পড়ে থাকা শস্যগুলো সে সংগ্রহ করল। ঘটনাক্রমে এরকম একটা মাঠের মালিক ছিল বোয়স। বোয়স ছিল ইলীমেলক পরিবারের একজন।

৪. একদিন বৈৎলেহম থেকে বোয়স তার জমিতে চলে এলো। চাষীদের সে আদর ভালবাসা জানিয়ে বলল, “প্রভু তোমাদের সহায় হোন !” চাষীরাও বলল, “প্রভু আপনার মঙ্গল করুন!”

৫. বোয়সের একজন ভৃত্য চাষীদের কাজের তদারকি করছিল। রূতকে দেখতে পেয়ে বোয়স ভৃত্যকে জিজ্ঞাসা করল, “এ কাদের মেয়ে ?”

৬. ভৃত্যটি বলল, “মেয়েটি একজন মোয়াবী। সে নয়মীর সঙ্গে মোয়াব থেকে এসেছে।”

৭. আজ খুব ভোরবেলা সে আমার কাছে আসে অনুমতি চাইতে যাতে চাষীদের পিছু পিছু ঘুরে মাঠ থেকে সে শস্য কুড়িয়ে নিতে পারে। সেই সকাল থেকে সে এই মাঠে রয়েছে। ঐ তো ওখানে তার বাড়ী।”

৮. বোয়স তখন রূতকে বলল, “শোনো মেয়ে, তুমি এই ক্ষেতেই থেকে যাও এবং তোমার জন্য শস্য কুড়িয়ে নিও। অন্য কোথাও আর তোমাকে যেতে হবে না ৷ আমার ক্ষেতের দাসীদের সঙ্গে সঙ্গে তুমি ঘুরবে।

৯. কোন কোন জমিতে তারা যাচ্ছে দেখবে, তাদের সঙ্গে থাকবে। যুবকদের আমি সাবধান করে দিচ্ছি, তারা যেন তোমায় বিরক্ত না করে। পিপাসা পেলে আমার লোকেরা যে মগ ব্যবহার করে তুমিও তা ব্যবহার করতে পারো। বুঝলে?”

১০. রূৎ মাথা নীচু করে শ্রদ্ধা জানাল। সে বোয়সকে বলল, “আমার মতো একজন সামান্য মেয়েকেও আপনি লক্ষ্য করেছেন, এতে আমি খুবই অবাক হয়ে গেছি ! যদিও আমি একজন অপরিচিত কিন্তু তবুও আপনি আমার প্রতি কত সদয়।”

১১. বোয়স উত্তর দিল, “তোমার শাশুড়ি নয়মীকে তুমি কি রকম সেবা করেছ আমি সবই জানি। আমি জানি তোমার স্বামী মারা গেলেও তুমি তাকে কত সাহায্য করেছ। আর আমি এও জানি মাতাপিতা, নিজের দেশ সবকিছু ছেড়ে তুমি এখানে চলে এসেছ। এদেশের কাউকেই তুমি চেন না, তা সত্ত্বেও নয়মীর সঙ্গে তুমি এদেশে এসেছ।

১২. তোমার সৎ কাজের জন্য প্রভু তোমায় পুরস্কার দেবেন। তুমি যা কিছু করেছ তার জন্য প্রভু, ইস্রায়েলের ঈশ্বর তোমাকে সম্পূর্ণভাবে পুরস্কৃত করবেন। তুমি সুরক্ষার জন্য তাঁর কাছে এসেছো, সুতরাং তিনি তোমাকে রক্ষা করবেন।”

১৩. রূৎ বলল, “আপনি আমাকে খুবই দয়৷ করেছেন। আমি তো একজন দাসী মাত্র, তাও আপনার দাসীদের মধ্যে কারও সমান নই। তবুও আপনি কত দরদের কথা বলেছেন, আমায় সান্ত্বনা দিয়েছেন।”

১৪. দুপুরের খাওয়ার সময় বোয়স রূতকে বলল, “এদিকে এসো ! আমাদের রুটি থেকে তুমিও কয়েকট৷ খাও। সিরকায় তোমার রুটি ডুবিয়ে নাও।” রূৎ চাষীদের পাশে বসে গেল। বোয়স তাকে সেঁকা শস্য দিল। রূৎ পেট ভরে খেল। কিছু খাবার পড়ে রইলো।

১৫. খাবার পর রূৎ আবার কাজে মেতে উঠলো। বোয়স ভৃত্যদের বলল, “শস্যের গাদার পাশ থেকেও রূতকে দানা কুড়িয়ে নিতে দিও। ওকে বাধা দিও না।

১৬. কিছু দানা ভর৷ শীষ তার জন্যে ফেলে দিয়ে তার কাজটা বরং আরও সহজ করে দিও। হ্যাঁ তাকে শস্য কুড়োতে দিও, বাধা দিও না।”

নয়মী বোয়সের সম্বন্ধে শুনল

১৭. সন্ধ্যে পর্যন্ত রূৎ মাঠে কাজকর্ম করত। কাজের পর ভুষি থেকে শস্যদান৷ বেছে আলাদা করে রাখত। সে প্রায় ১/২ বুশেল বার্লি পেত।

১৮. সে ঐ শস্যগুলি নিয়ে শহরে তার শাশুড়ীর কাছে যেত। তাছাড়া তাকে পাতের বাড়তি খাবারটাবারও খেতে দিত।

১৯. শাশুড়ী তাকে জিজ্ঞাসা করল, “এইসব শস্য কোত্থেকে পেলে? তুমি কোথায় কাজ করো? তোমার প্রতি যে সদয় হয়েছিল তার কল্যাণ হোক।” তখন রূৎ কার কাছে কাজ করছে বলল। সে বলল, “যার কাছে কাজ করছি তার নাম বোয়স।” নয়মী পুত্রবধূকে বলল, “প্রভু তার মঙ্গল করুন। কি জীবিত, কি মৃত সকলের প্রতিই তাঁর দয়ার শেষ নেই।”

২০. তারপর সে রূতকে বলল, “বোয়স আমাদের আত্মীয়দের একজন। বোয়স আমাদের রক্ষাকর্তা।”

২১. রূৎ বলল, “বোয়স আমাকে ফিরে আসতে বলেছে। বলেছে কাজ করে যেতে। বোয়স বলেছে ফসল কাটার কাজ শেষ হওয়া অবধি আমি যেন তার ভৃত্যদের সঙ্গে ভালভাবে কাজকর্ম করি।”

২২. নয়মী উত্তর দিল, “বোয়সের ভৃত্য দাসীদের সঙ্গে কাজ করাটা তোমার পক্ষে ভাল। অন্য কোনো ক্ষেতে কাজ করলে হয়তো কোনো ছেলে তোমার গায়ে হাত দিত।”

২৩. অতএব রূৎ বোয়সের দাসীদের বার্লি এবং গম কাটার সময় পর্যন্ত থেকে গেল। শাশুড়ীর সঙ্গে রূৎ থেকে গেল।

error: Content is protected !!