যিহুদায় দুর্ভিক্ষ
১. বহুকাল আগে বিচারকদের* রাজত্বকালে একবার বেশ পারাপ সময় এসেছিল। সেই সময় এ দেশে খাদ্যাভাব দেখা দিয়েছিল। ইলীমেলক নামে একজন লোক যিহুদার বৈৎলেহম থেকে চলে গিয়েছিল। সে স্ত্রী ও দুই পুত্রকে নিয়ে পাহাড়ি দেশ মোয়াবে চলে গিয়েছিল।
২. তার স্ত্রীর নাম ছিল নয়মী আর দুই পুত্রের নাম মহলোন ও কিলিয়োন। এরা সব বৈৎলেহমের ইফ্রাথীয় পরিবারের। এরা পাহাড়ি দেশ মোয়াবে বসবাস করতে লাগল।
৩. তারপর একদিন নয়মীর স্বামী ইলীমেলক মারা গেল। নয়মী আর তার দুই পুত্র থেকে গেল।
৪. উভয় পুত্রেরই মোয়াব দেশের কন্যাদের সঙ্গে বিয়ে হয়েছিল। একজনের স্ত্রীর নাম অর্পা, আরেকজনের নাম রূৎ। তারা দশ বছর মোয়াবে বাস করেছিল।
৫. মহলোন এবং কিলিয়োন মারা গেল। স্বামী আর পুত্রদের হারিয়ে নয়মী একাই পড়ে রইল।
নয়মী দেশে ফিরে গেল
৬. পাহাড়ি দেশ মোয়াবে থাকার সময় নয়মী শুনল প্রভু তাঁর লোকেদের সাহায্য করেছিলেন। তিনি যিহুদার লোকেদের খাদ্য দিয়েছিলেন শুনে নয়মী ঠিক করলো, মোয়াব ছেড়ে সে দেশে ফিরে যাবে। তার পুত্রবধূরাও তার সঙ্গে যেতে চাইল।
৭. তারা সে দেশ ছেড়ে পায়ে হেঁটে যিহুদায় ফিরে আসার জন্য রওনা হল।
৮. নয়মী তার পুত্রবধূদের বলল, “তোমরা দুজনেই দেশে মায়ের কাছে চলে যাও। আমার সঙ্গে আর আমার পুত্রদের সঙ্গে তোমরা খুবই ভাল ব্যবহার করে এসেছো। তাই আমি প্রভুর কাছে প্রার্থনা করি তিনিও যেন তোমাদের প্রতি সদয় হন।
৯. আমি আরও প্রার্থনা করি, তিনি যেন তোমাদের স্বামী আর সুন্দর একটি সুখের ঘরের ব্যবস্থা করে দেন।” এই বলে নয়মী তাদের চুম্বন করলো। তারা কাঁদতে লাগল।
১০. পুত্রবধূর৷ বলল, “কিন্তু আমরা আপনার সঙ্গে আপনার পরিবারেই যেতে চাই।”
১১. নয়মী বলল, “না, মেয়েরা, তোমরা তোমাদের বাড়ীতেই ফিরে যাও। আমার সঙ্গে গিয়ে কি হবে?” আমি তো তোমাদের কোনো উপকার করতে পারব না। আমার কোনে৷ পুত্র নেই যে তোমাদের বিয়ে করবে।
১২. যাও, ঘরে ফিরে যাও। আমি আর এই বৃদ্ধ বয়সে বর জোটাতে পারবো না। এমনকি নতুন করে বিয়ে করার কথা ভাবলেও আমি তোমাদের উপকার করতে পারব না। ধরো রাত্রেই আমি গর্ভবতীহলাম, ধরো আমার দু-দুটো পুত্রও হয়ে গেল, কিন্তু তাতেও কোনো লাভ হবে না।
১৩. যতদিন না তারা বিয়ের যোগ্য হচ্ছে ততদিন তোমাদের অপেক্ষা করতে হবে। কিন্তু আমি তোমাদের এত দীর্ঘ সময় অপেক্ষা করতে বলতে পারি না। সত্যিই এসব ভাবলে মনে কষ্ট হয়। এমনিতেই আমি যথেষ্ট দুঃখিত। কারণ প্রভু আমার বিরুদ্ধে অনেক কিছু করেছেন।
১৪. এই কথা শুনে তারা আবার কান্নাকাটি শুরু করল। তারপর একসময় অর্পা নয়মীকে চুম্বন করে বিদায় নিল। কিন্তু রূৎ তাকে জড়িয়ে ধরেই থেকে গেল।
১৫. নয়মী বলল, “তোমার বড়জা নিজের লোকের কাছে এবং তার নিজের দেবতাদের কাছে চলে গেল।” তোমারও তাই করা উচিৎ।”
১৬. রূৎ বলল, “আমাকে তুমি তাড়িয়ে দিয়ো না মা ! আমাকে দেশে ফিরে যেতে তুমি জোর কর না। আমি তোমার কাছেই থাকবো। তুমি যেখানে যাবে, আমিও সেখানে যাব। তুমি যেখানে শোবে, আমি সেখানেই শোব। যারা তোমার নিজের লোক, তারা আমারও নিজের লোক। তোমার ঈশ্বর হবেন আমারও ঈশ্বর ।
১৭. তোমার মৃত্যু যেখানে, আমারও মৃত্যু সেখানে। সেখানেই হবে আমার কবর। এই আমার প্রতিশ্রুতি। যদি আমি আমার প্রতিশ্রুতি না রাখি, প্ৰভু আমায় শাস্তি দেবেন। একমাত্র মৃত্যু ছাড়া কেউ আমাকে তোমার কাছ থেকে সরিয়ে নিতে পারবে না।”
ঘরে ফেরা
১৮. নয়মী বুঝলো রূৎ ভীষণভাবে তার সঙ্গে যেতে ইচ্ছুক। সে আর রূতকে কিছু বলল না। “নয়মী আর রূৎ বেরিয়ে পড়ল। যেতে যেতে তারা এসে পড়ল বৈৎলেহমে। বৈৎলেহমে পা দিতেই সেখানকার লোকেরা তাদের দেখে উত্তেজিত হয়ে উঠলো। তারা বলল, “এই কি নয়মী?”
২০. নয়মী তাদের বলল, “তোমরা আমাকে নয়মী বলে ডেকো না। আমাকে তোমরা মারা বলেই ডাকো। এই নামেই তোমরা আমাকে ডাকবে, কারণ সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমার জীবন দুঃখে ভরে দিয়েছেন।
২১. যখন চলে গিয়েছিলাম তখন যা চেয়েছি সবই পেয়েছিলাম। কিন্তু আজ প্রভু আমার জন্যে নিজের দেশ ছাড়া আর কিছুই দেন নি। প্রভু আমায় শুধু দুঃখই দিয়েছেন। তাই কেন তোমরা আমাকে ‘সুখী’ বলে ডাকবে? সর্বশক্তিমান ঈশ্বর আমায় অশেষ কষ্ট দিয়েছেন।”
২২. এইভাবে নয়মী ও তার মোয়াবীয়া পুত্রবধূ রূৎ পাহাড়ি দেশ মোয়াব থেকে ফিরে এল। এই দুজন নারী যখন বৈৎলেহমে এল তখন সেখানে বার্লি শস্য তোলার পালা শুরু হয়েছে।