রিল্যাক্সেশন, মেডিশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক বাংলাদেশে বাইবেলের পর কোন্ বইয়ের বিক্রি সবচেয়ে বেশি? বাংলাদেশের শিক্ষিত-সমাজ এক সুরে বলবেন, মহাজাতক-এর লেখা ‘কোয়ান্টাম মেথড’। বইটির মূল বিষয় রিল্যাক্সেশন বা মেডিটেশন ও মনের নিয়ন্ত্রণ। এই উপমহাদেশে তাঁর চেয়ে জনপ্রিয় মেডিটেশনের শিক্ষক কেউ নয়। তিনি বাংলাদেশের ‘যোগ-
ফাউণ্ডেশন’-এর সর্বোচ্চ পদাধিকারী। মুসলিম দুনিয়ার যোগের শেষ কথা বইটির ব্যাক কভারে লিখেছেন, সাফল্যের জাদুকাঠি ‘কোয়ান্টাম মেথড’। বাংলা ভাষায়, বাংলার মানুষের উপযোগী আত্ম-উন্নয়নের প্রথম পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি কোয়ান্টাম মেথড। মনের যে অসীম শক্তিকে কাজে লাগিয়ে হাজার হাজার বছর ধরে প্রাচ্যের সাধকরা মানুষকে নিরাময় করেছেন, বিপদমুক্ত করেছেন, সাফল্যের পথে নিয়ে গেছেন, সেই জাদুকাঠি এখন আপনার নাগালে। আপনিও অনায়াসে এই জাদুকাঠি দিয়ে পেশাগত ও বৈষয়িক সাফল্য সৃষ্টি, রোগ নিরাময় ও অভূতপূর্ব মানসিক প্রশান্তি অর্জন করতে পারেন। দৃশ্যমান সব কিছুর পেছনে প্রকৃতির যে নেপথ্য স্পন্দন ও নিয়ম কাজ করছে, তাকে নিজের ও মানবতার কল্যাণে সক্রিয় করে তোলার ক্ষমতা অর্জন করে আপনি হতে পারেন বিত্তবান, খ্যাতিমান ও বরণীয়।
যদিও বইটির মূল বিষয় দুটি। (এক) রিল্যাক্সেশন বা মেডিটেশন, (দুই) মনের নিয়ন্ত্রণ
কে এই মহাজাতক ?
বইটিতে তাঁর পরিচয় দেওয়া হয়েছে…
বরেণ্য ভবিষ্যৎদ্রষ্টা মহাজাতক। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমানের মর্মান্তিক মৃত্যু, ইন্দিরা গান্ধীর মৃত্যু, রাজীব গান্ধীর মৃত্যু, মহাশূন্যযান চ্যালেঞ্জের দুর্ঘটনা, সোভিয়েত ইউনিয়নে সমাজতন্ত্রের পতন, নব্বই-এ বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থান ও গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার সূচনা, পুননির্বাচনে প্রেসিডেন্ট জর্জ বুশের ভরাডুবিসহ অসংখ্য নির্ভুল ভবিষ্যদ্বাণীর মাধ্যমে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে এক অনন্য মর্যাদার আসনে আসীন হয়েছেন।
(ভাই মহাজাতক, আপনি এত বড় ভবিষ্যদ্বক্তা, সত্যি জানতাম না। একটা বিশেষ অনুরোধ বাংলাদেশের মাননীয়া বেগম জিয়া ও শেখ হাসিনার আগাম মৃত্যুদিনটা যদি ঘোষণা করে দেন, তাহলে আপনার দাবির সারবস্তু বুঝতে পারবো। আপনি তো আবার ইন্টারন্যাশনাল ভবিষ্যদ্বক্তা, দয়া করে যদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিং, প্রাক্তন প্রধানমন্ত্রী অটলবিহারী বাজপেয়ী ও শ্রীমতী সোনিয়া গান্ধীর মৃত্যুদিন আগাম ঘোষণা করেন, তাহলে আমরা মিলিয়ে নিতে পারি ।
দুষ্টু লোকেরা বলেন ঘটনাটা ঘটে যাওয়ার পর আপনারা নাকি ছোটখাটো পত্রিকায় ভবিষ্যদ্ববাণী করছেন বলে লেখেন, ঘটনার আগের একটা তারিখ দিয়ে ৷ আশা করি আপনি ঐ ধরনের প্রতারক নন। আমাদের সত্যানুসন্ধানে সহযোগিতা করবেন।)
জ্যোতিষ বিজ্ঞান, যোগ, মেডিটেশন, প্রাকৃতিক নিরাময় তথা অতীন্দ্রিয় বিজ্ঞানের প্রতিটি শাখায় রয়েছে তাঁর স্বচ্ছন্দ বিচরণ। (উ…ফ… ! আপনি প্লিস আমাদের একটা অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা দেখান। আজ পর্যন্ত যতজন অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা দাবি করেছে, পরীক্ষা করে দেখেছি সব ব্যাটাই প্রতারক। আপনার অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা দেখার আশায় রইলাম ভাই মহাজাতক।) এই বিষয়গুলোর উপর তিনি লিখে আসছেন গত দুই যুগ ধরে। দৈনিক ইত্তেফাকে নিয়মিত রাশিফল ও বর্ষশুরুতে ভবিষ্যদ্বাণী লিখে আসছেন ১৯৭৭ সাল থেকে।
শহীদ আল বোখারী কর্মজীন শুরু করে সাংবাদিক হিসেবে। সাইকিক কনসালটেন্ট হিসেবে সার্বক্ষণেক কাজ শুরু করার আগে তিনি ছিলেন দেশের প্রাচীনতম দৈনিক আজাদের বার্তা সম্পাদক। ১৯৮৩ সাল থেকে জ্যোতিষ বিজ্ঞানের পাশাপাশি যোগ ও মেডিটেশনকে জনপ্রিয় করে তোলার জন্যে স্থাপন করেন যোগ মেডিটেশন কেন্দ্র পরে এই প্রচেষ্টাকে আরও সংহত করার জন্যে প্রতিষ্ঠা করেন ‘যোগ ফাউণ্ডেশন’। তিনি মেডিটেশন ও মননিয়ন্ত্রণের সহজ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতি ‘কোয়ান্টাম মেথড’-এর উদ্ভাবক ও সফল প্রশিক্ষক।
মহাজাতকের দেওয়া (wisdom) থেকে কিছু নির্যাস
■ মন কি? মনের শক্তির উৎস কোথায় ? এক কথায় এর জবাব দেয়া মুশকিল । কারণ মনকে ধরা যায় না, ছোঁয়া যায় না। আজ পর্যন্ত কোন বিজ্ঞানী মনকে ধরতে বা ছুঁতে পারেননি বা কোন ল্যাবরেটরিতে টেস্ট টিউবে ভরে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালাতে পারেননি। তবে মনের কার্যপ্রণালী সম্পর্কে আদি যুগের সাধকরা যেমন সচেতন ছিলেন, তেমনি বর্তমান যুগের মনোবিজ্ঞানীরাও সচেতন। হাজার বছরের পর্যবেক্ষণ-পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর তাঁরা একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হয়েছেন, তা হলো, মন মানুষের সকল শক্তির উৎস। মনের এই শক্তি-রহস্যকে যথাযথভাবে উপলব্ধি করতে পারলেই এই শক্তিকে আমরা পুরোপুরি কাজে লাগাতে পারব। (কোয়ান্টাম মেথড, পৃষ্ঠা ১১)
(মস্তিষ্কে স্নায়ুকোষের কাজকর্মের ফল-ই হলো ‘মন’, ‘চিন্তা’ বা ‘চেতনা’। তাকে নিয়ে এক রহস্য তৈরির রহস্যটা ঠিক বোঝা গেল না?)
■ চেতনা অবিনশ্বর। (পৃষ্ঠা ১২)
(আজকালকার সেভেন-এইটের ছাত্ররাও জানে, মন বা চেতনার উৎপত্তি মস্তিষ্ক স্নায়ুকোষ থেকে। মস্তিষ্ক মারা গেলে ‘মন’ বা ‘চেতনা’রও মৃত্যু ঘটে। চেতনাকে অবিনশ্বর বলা মূর্খতা, সত্য থেকে মুখ ফিরিয়ে রাখা।
■ আমরা আগেই দেখেছি ব্রেন এই কাজগুলো সুচারু রূপে করতে পারছে। দেহের অভ্যন্তরে প্রতিটি অংশের সাথে সংযোগ এবং বাইরের জগতের সাথে যোগাযোগ রাখছে। পঞ্চ ইন্দ্রিয় কখনও কখনও ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের মাধ্যমে ব্রেন পায় বাইরের তথ্য আর ভেতরের তথ্য সংগৃহীত হয় রিসিপটর (Internal receptors)-এর মাধ্যমে। (পৃষ্ঠা ২৩)
(ষষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অস্তিত্ব বিজ্ঞানের দরবারে আজ পর্যন্ত প্রমাণিত হয়নি। বিভিন্ন সময়ে বহু ‘পরামনোবিজ্ঞানী’ বা ‘প্যারাসাইকোলজিস্টরা [যাঁরা আসলে বিজ্ঞান বিরোধী] তথাকথিত ৬ষ্ঠ ইন্দ্রিয়ের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে গেছেন। কিন্তু পারেননি, অথবা তার সেই ক্ষমতার পিছনে ছিল প্রতারণা বা কৌশল। এই বিষয়ে বিস্তৃত জানতে পড়তে পারেন আমার লেখা ‘অলৌকিক নয়, লৌকিক’ ১ম খণ্ড। যোগী মহাজাতক কি প্রকাশ্যে তাঁর ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় শক্তির প্রমাণ দিতে রাজি আছেন? ষষ্ঠ শক্তির প্রমাণ হিসেবে অন্য কারুকে হাজির করলেও চলবে।)
■ মনকে নিয়ন্ত্রণ ও মনের শক্তিকে সৃজনশীলভাবে কাজে লাগিয়ে অলৌকিক শক্তির অধিকারী হওয়ার প্রচেষ্টা নতুন নয়। সভ্যতার উষালগ্ন থেকেই জ্ঞানীরা এই প্রচেষ্টা চালিয়ে এসেছেন। মনকে নিয়ন্ত্রণ করে সাধু, সন্ত, আওলিয়া, দরবেশে পরিণত হওয়ার প্রক্রিয়া রয়েছে। (পৃষ্ঠা ৩৫)
(অলৌকিক ক্ষমতা দেখার আগ্রহ নিয়ে অপেক্ষায় রইলাম। যদি দেখার সুযোগ করে দেন, বাধিত হবো।)
■ আমাদের ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় দ্বারা অন্যের চিন্তার তরঙ্গ ধরতে পারি। কারণ প্রতিটি ব্রেন-ই হচ্ছে চিন্তার ট্রান্সমিটার ও রিসিভার ।
(পরামনোবিজ্ঞানীদের তুরুপের তাস হলো ‘টেলিপ্যাথি’, যার সাহায্যে তাঁদের অলৌকিক বিশ্বাসকে তাঁরা বিজ্ঞানের লেবেল এঁটে বার বারই চালাবার চেষ্টা করে চলেছেন।
পরামনোবিজ্ঞানীদের ধারণায় চিন্তার সময় মস্তিষ্ক থেকে রেডিও ওয়েভের মতো এক ধরনের তরঙ্গ তার প্রেরক যন্ত্রের সাহায্যে প্রবাহিত হতে থাকে। দূরের কোনও লোকের পক্ষে তার মস্তিষ্কের গ্রাহক যন্ত্রের সাহায্যে এই তরঙ্গকে ধরে প্রেরকের চিন্তার হদিস পাওয়া কঠিন হলেও অসম্ভব বা অবাস্তব নয় ।
পরামনোবিজ্ঞানীরা এই ধরনের কোনও চিন্তা তরঙ্গের অস্তিত্ব প্রমাণ করতে পারেননি, যেমনটি প্রমাণ করা যায় শব্দ বা আলোক তরঙ্গের ক্ষেত্রে। শব্দ বা আলোক তরঙ্গ নির্দিষ্ট কম্পাঙ্ক, গতি ও মাত্রায় চারিদিকে ছড়িয়ে পড়ে, এটা প্রমাণিত। রেডিও এবং টেলিভিশন এই শব্দ তরঙ্গ ও আলোক তরঙ্গকে ধরে শব্দ ও দৃশ্যকে আমাদের সামনে হাজির করে। যেহেতু ‘চিন্তা তরঙ্গ’ বলে কোনও কিছুর অস্তিত্ব শুধু কল্পনাতেই রয়ে গেছে, বাস্তবে প্রমাণিত হয়নি, তাই এই অস্তিত্বহীন চিন্তা তরঙ্গকে ধরা নেহাতই অবাস্তব কল্পনা মাত্র।
বিজ্ঞান স্বীকার করে ও জানে শব্দ শক্তি বা আলোক শক্তির মতো ‘চিন্তা’ কোনও শক্তি নয়। ‘চিন্তা’স্নায়ু ক্রিয়ারই একটি ফল। টেলিপ্যাথির কোনও ঘটনা আজ পর্যন্ত ঘটেছে বলে বিজ্ঞানসম্মতভাবে প্রমাণিত হয়নি। অতএব শুধুমাত্র অন্ধ বিশ্বাসের কাছে আত্মসমর্পণ করে এবং অন্যের কথায় ও ধারণায় আস্থা স্থাপন করে টেলিপ্যাথির অস্তিত্বকে মেনে নেওয়া কোনও বিজ্ঞানমনস্কদের পক্ষেই আদৌ সম্ভব নয়।
রিল্যাক্সেশন বা শিথিলায়ন ও মেডিটেশন
রিল্যাক্সেশন (শিথিলায়ন) মন নিয়ন্ত্রণ ও পরিকল্পিত মেডিটেশনের প্রথম স্তর। এটি একটি মনের ইতিবাচক অবস্থা যা চর্চা ছাড়া খুব কম মানুষ অর্জন করেছেন। পুরোপুরি কৌশল আয়ত্ত করা মন নিয়ন্ত্রণের পথে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ। এক কথায় বলা যায় সঠিক রিল্যাক্সেশন বা শিথিলায়ন মন নিয়ন্ত্রণের চাবিকাঠি। রিল্যাক্সেশনের উপকারি দিকগুলি হল এই :
১. রিল্যাক্সেশনের সময় শরীরের কার্যক্রম মনিটর ও নিয়ন্ত্রণ করার দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি লাভ করে। মন অপ্রয়োজনীয় শারীরিক কাজ নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব থেকে মুক্তি পাওয়ায়, প্রকৃতির সূক্ষ্ম স্পন্দন অনুভব করার ক্ষমতা অর্জন করে। নিঝুম ও নিস্তব্ধ পরিবেশে যেমন একটা মৃদু শব্দও আমরা শুনে ফেলি, তেমনি মন যখন শিথিল ও শান্ত থাকে, তখন প্রকৃতির সূক্ষ্ম স্পন্দন অনুভব করে ।
২. আমরা প্রায়শই শুনে থাকি অন্ধদের মাঝে একটা ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কাজ করে। এ কথার মধ্যে অবশ্যই সত্যতা রয়েছে। (ইন্দ্রিয় পাঁচটি। যোগী মহাজাতক, ষষ্ঠ ইন্দ্রিয় কোথা থেকে হাজির করলেন? অজ্ঞতা থেকে? নাকি লোক ঠকাতে?) ৩. শিথিলায়ন ধ্যানাবস্থার সৃষ্টি করে।
৪. রিল্যাক্সেশন করলে রক্তচাপ ঠিক থাকে। শরীর ভালো থাকে।
৫. নিয়ন্ত্রিত গভীর শিথিলায়নের ফলে চেতনা লাভ করে স্ফটিকের মতো স্বচ্ছ রূপ এবং তখন মনছবি (Mental image) অনেকক্ষণ ধরে রাখা যায়। সাইকিক বা অতীন্দ্রিয় প্রক্রিয়ায় চেতনার স্বচ্ছতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। (উ…ফ… আবার সেই অতীন্দ্রিয় গুলগপ্পো। ভাই এত কথার কি আছে অতীন্দ্রিয় ক্ষমতা আমাদের দেখালেই তো ল্যাটা চুকে যায় ।
৬. রিল্যাক্সেশন আর মেডিটেশনের সাইকিক বা অতীন্দ্রিয় ক্ষমতার অধিকারী হওয়ার পক্ষে খুব জরুরী।
রিল্যাক্সেশন বা শিথিলায়নের প্রক্রিয়া
১. একটি নিরিবিলি ঘর বেছে নিন। এই সময় কেউ যেন বিরক্ত না করে। টেলিফোন বন্ধ রাখুন। গায়ের পোশাক ঢিলে করে নিন। ঘরে হাল্কা আলো রাখুন।
২. শক্ত বিছানায় অথবা মেঝেতে মাদুর বা পাতলা কার্পেট বিছিয়ে শুয়ে পড়ুন। এভাবে শুতে অসুবিধা হলে মাথার নিচে বালিশ দিতে পারেন। বিছানা যত শক্ত হবে তত ভালো হবে। শোয়ার সময় দু হাত থাকবে দেহের দুপাশে। হাতের তালু থাকবে উপরের দিকে। দু পায়ের মাঝখানে অন্তত চার আঙুল ফাঁক থাকবে। বসেও অনুশীলন করতে পারবেন। সুখাসন বা পদ্মাসন। অথবা চেয়ারে আরাম করে বসলেও চলবে। হাতের আঙুল থাকবে হাঁটুর দিকে।
৩. চোখ বন্ধ করবেন, ভুরু কোঁচকাবেন না ।
৪. লম্বা দম নিন। ধীরে ধীরে দম ছাড়ুন। দম নেবেন বুক ফুলিয়ে নয়, পেট ফুলিয়ে। দম ছাড়ার সময় পেট যেন চুপসে যায়। ১, ২, ৩ এভাবে ছয় থেকে দশ বার দম নিন এবং ছাড়ুন। দম নাক দিয়েই নেবেন এবং মুখ দিয়ে ছাড়বেন।
৫. আপনার চোখ বন্ধ আছে। এক মুহূর্তের জন্য মনের চোখে নজর বুলিয়ে নিন। মাথার থেকে পায়ের তালু পর্যন্ত। এবার প্রথম ১০ সেকেণ্ড মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন সেখানে রক্ত চলাচল বাড়ছে। সেখানে একটু গরম গরম লাগছে বা একটু শিরশির করছে। এরপর অনুভব করবেন তালুর পেশী শিথিল হয়ে আসছে। ভারি হয়ে যাচ্ছে। একইভাবে আপনি পর্যায়ক্রমে কপাল, চোখ ও চোখের পাতা, ঠোট ও জিহ্বা, চোয়াল, মুখমণ্ডল, গলা, ঘাড়, কাঁধ, ডান হাত, বাম হাত, বুক, পিঠ, মেরুদণ্ড, পেট, কোমর, নিতম্ব, ঊরু, হাঁটু, পা, গোড়ালি ও পায়ের পাতায় মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করুন। প্রতিটি অঙ্গে ১০ সেকেণ্ড করে মনোযোগ নিক্ষেপ করুন। মনের চোখ দিয়ে নির্দিষ্ট অঙ্গ অবলোকন করুন। অবলোকনের সাথে সাথে অনুভব করবেন প্রতিটি অঙ্গে রক্ত চলাচল বেড়ে যাচ্ছে। পেশী শিথিল ও ভারী হয়ে আসছে। আপনি যখন মাথা থেকে পায়ের নিচে নামতে থাকবেন, তখন অনুভব করবেন যে বরফ গলা পানি যেমন বরফের গা বেয়ে নিচের দিকে নামে, তেমনি রিল্যাক্সেশন বা শিথিলতা স্রোতের মত আপনার গা বেয়ে মাথা থেকে পায়ের দিকে নেমে যাচ্ছে।
৬. ভাবুন আপনার অঙ্গ শিথিল ও নিষ্প্রাণ হয়ে আসছে। মনোযোগ কেন্দ্ৰীভূত করুন দমের ওপর। বাতাস কিভাবে নাক দিয়ে ঢুকছে তা অনুভব ও মনের চোখে অবলোকন করুন। এরপর অনুভব করুন আপনার শরীর ভারী লাগতে শুরু করেছে।
৭. কাঁধ, বুক, নিতম্ব, হাত, পায়ের ওজন বেড়ে গেছে, অনুভব করুন। অনুভব করুন আপনি জড় পদার্থে পরিণত হচ্ছেন ভাবতে থাকুন আপনি বালুকণা হয়ে যাচ্ছেন।
৮. অনুভব করুন শরীরের প্রতি অঙ্গ থেকে বালুকণা ঝরে পড়তে শুরু করছে। আপনি পরিণত হচ্ছেন এক বালুর স্তূপে।
৯. আপনি এখন সূক্ষ্ম বালুকণার স্তূপ। অনুভব করুন উত্তর দিকে থেকে ঠাণ্ডা বাতাস আসছে। বাতাসের বেগ আস্তে আস্তে বাড়ছে। বাতাস ঝড়ের রূপ নিচ্ছে আর ঝড় আপনার শরীরের অবশিষ্টাংশ হিসেবে যে বালুকণাগুলো রয়েছে তা উড়িয়ে নিয়ে চারদিকে ছড়িয়ে দিচ্ছে। আপনার শরীর বলতে আর কিছুই নেই। আপনি এখন পরিপূর্ণরূপে শিথিল। শিথিলায়নের গভীর স্তরে পৌঁছে গেছেন আপনি।
১০. মনে মনে বলুন, ‘গভীর থেকে গভীরে পৌঁছে যাচ্ছি আমি।’ ১৯ থেকে ০ পর্যন্ত উচ্চারণ করুন। এবার মনে মনে বলুন, ‘আমি পৌঁছে গেছি মনের বাড়িতে।’ আর অনুভব করুন এক অনাবিল প্রশান্তি।
১১. আপনি উপভোগ করছেন ফুলের গন্ধ, পাখির কলতান, ঝরণার তরঙ্গ, যা দেখতে পান খুঁটিয়ে দেখুন, তারপর বাড়ির ড্রয়িংরুমে আরাম করে বসুন।
১২. মনে মনে বলতে থাকুন এখন আমার থেকে আমার স্মৃতিশক্তি বাড়বে। আমার টেনশন কমবে। আত্মবিশ্বাস ও সাহস বাড়বে। আমার মনোযোগ বাড়বে। আমার শরীর এখন সুস্থ ও সবল।
১৩. এবার জেগে ওঠার পালা। প্রথমে একটা লম্বা দম নিন। মনে মনে বা আওয়াজ করে বলুন, ‘০ থেকে ৭ পর্যন্ত গুণে আমি চোখ মেলে তাকাব। আমি পুরোপুরি জেগে উঠব। পূর্ণ সচেতন অবস্থায় শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি চাঙ্গা হয়ে উঠব। এবার গণনা শুরু করুন। ০, ১। অনুভব করুন উড়ে যাওয়া বালুকণাগুলো চারপাশ থেকে এসে আপনার শরীর গঠন করছে। ২,৩ ৷ লম্বা দম নিন। অনুভব করুন বালুকণাগুলো প্রাণবন্ত জৈবকোষে পরিণত হয়েছে। ৪, ৫। আবার ওম্বা দম নিন। মনে মনে বা জোরে জোরে, বলুন, ‘৭ পর্যন্ত গুণে আমি চোখ মেলে তাকাব, আম পুরোপুরি জেগে উঠব, আমার মাথা, ঘাড়, কাঁধ বা শরীরে কোন ব্যথা বা অস্বস্তি থাকবে না। পূর্ণ সচেতন অবস্থায় শারীরিক ও মানসিকভাবে পুরোপুরি সুস্থ, সবল ও চাঙ্গা অনুভব করব। ৬,৭ । এবার চোখ মেলুন । মাথা ও ঘাড় নাড়ুন। পা টান টান করুন। হাত নাড়াচাড়া করুন। আস্তে আস্তে উঠে বসুন বা দাঁড়ান। জোরে বলুন, ‘বেশ ভাল লাগছে। শরীর মন বেশ চাঙ্গা হয়ে উঠেছে।
রিল্যাক্সেশন বা শিথিলায়নের ১৩টি ধাপ
অনুশীলনীর পর্যায়ক্রমে যাতে মনে রাখতে পারেন সে জন্যে শিথিলায়নের ১৩টি ধাপের সারসংক্ষেপ নিচে দেয়া হলোঃ
১. পারিপার্শ্বিক প্রস্তুতি।
২. আরামে বসা বা শোয়া।
৩. চোখ বোজা ।
৪. বিশেষ পদ্ধতিতে ৪/৫ মিনিট নাক দিয়ে দম নেয়া ও মুখ দিয়ে ছাড়া। ৫. মনোযোগ কেন্দ্রীভূত করে শরীরের পেশীগুলো শিথিল করা।
৬. ধীর লয়ে দম নেয়া ও দমের প্রতি মনোযোগ দেয়া।
৭. শরীর ভারী লাগতে লাগতে জড় পদার্থে পরিণত হওয়া।
৮. বালুকণার স্তূপে পরিণত হওয়া।
৯. ঠাণ্ডা ঝড়ে বালুর স্তুপ উড়ে নিশ্চিহ্ন হয়ে মনের বাড়ি যান।
১০. মনের বাড়িতে পৌঁছাবার জন্যে ১৯ থেকে ০ পর্যন্ত কাউন্ট ডাউন করা। ১১. মনের বাড়ির পারিপার্শ্বিকতায় হারিয়ে আনন্দ উপভোগ।
১২. ড্রইং রুমে বসে আত্ম-উন্নয়নের জন্যে অটোসাজেশন দেয়া ।
১৩. ০ থেকে ৭ পর্যন্ত গুণে জেগে উঠে পরিপূর্ণ সুস্থ ও চাঙ্গ অনুভব করা।
প্রথম পর্বঃ মনের নিয়ন্ত্রণ
অধ্যায়ঃ এক
♦ বুদ্ধি, স্মৃতি, প্রতিভা নিয়ে বিভ্রান্তি বেচে খাচ্ছে অনেকে
অধ্যায়ঃ দুই
♦ প্রচুর পড়েন মানে-ই মস্তিষ্কচর্চা করেন?
অধ্যায়ঃ তিন
♦ স্মৃতি-শক্তি ও প্রতিভা এক নয়
অধ্যায়ঃ চার
♦ জ্ঞান (wisdom) ও শিক্ষা (education) এক নয়
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ মস্তিষ্ক ও তার কিছু বৈশিষ্ট্য
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ পাভলভ-তত্ত্বে মস্তিষ্কের ‘ছক’ বা type
অধ্যায়ঃ সাত
অধ্যায়ঃ আট
♦ সময়ের সঙ্গে সঙ্গে কত কিছু পাল্টে যায়
অধ্যায়ঃ নয়
♦ অলজাইমারস সৃষ্টিশীল মেধায় ভয়ঙ্কর অসুখ
অধ্যায়ঃ দশ
অধ্যায়ঃ এগারো
♦ জিন বা বংশগতি-ই ঠিক করে মেধা-বুদ্ধি?
অধ্যায়ঃ বারো
♦ বংশগতি গবেষণা ও স্নায়ুবিজ্ঞানের অগ্রগতি
অধ্যায়ঃ তেরো
♦ মানবগুণ বিকাশে পরিবেশের প্রভাব
অধ্যায়ঃ চোদ্দ
অধ্যায়ঃ পনেরো
♦ মগজধোলাই-এর প্রয়োজনীয়তা বেড়েই চলেছে
দ্বিতীয় পর্বঃ ধ্যাণ-যোগ-সমাধি মেডিটেশন
অধ্যায়ঃ এক
অধ্যায়ঃ দুই
অধ্যায়ঃ তিন
অধ্যায়ঃ চার
অধ্যায়ঃ পাঁচ
♦ ‘রজনীশ’ এক শিক্ষিত যোগী, বিতর্কিত নাম
অধ্যায়ঃ ছয়
♦ স্বামী রামদেবঃ সন্ন্যাসী, সর্বযোগসিদ্ধ যোগী, যোগচিকিৎসক !
অধ্যায়ঃ সাত
♦ শ্রীমাতাজী নির্মলা দেবীর সহজযোগ
অধ্যায়ঃ আট
♦ রিল্যাক্সেশন, মেডিটেশন নিয়ে বাংলাদেশের যোগী মহাজাতক
অধ্যায়ঃ নয়
♦ ‘যোগ’ মস্তিষ্ক-চর্চা বিরোধী এক স্থবীর তত্ত্ব
অধ্যায়ঃ দশ
♦ ‘মেডিটেশন’, ‘রিলাক্সেশন’, বা ‘স্বসম্মোহন’
অধ্যায়ঃ এগারো
“মনের নিয়ন্ত্রণ যোগ-মেডিটেশন” বই সম্পর্কিত আপনার মন্তব্যঃ